×
জনৈক প্রশ্নকারী কোনো এক জুমু‘আর খুৎবায় বলেন: খতিব সাহেব ‘কালেমা’ প্রসঙ্গে খুৎবা প্রদান করেন। তিনি বলেন: কালেমার বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। আলেমগণ নয়টি অথবা তার সমপরিমাণ কতক শর্ত উল্লেখ করেছেন। আপনি কি এ সংক্রান্ত কোনো বিষয় জানেন? জানলে উল্লেখ করুন? আমি আপনার কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ থাকব -ইনশাআল্লাহ। এ ফতোয়ায় তার উত্তর প্রদান করা হয়েছে।

    কালেমা শাহাদাতের শর্তসমূহ

    شروط قبول الشهادتين

    < بنغالي- Bengal - বাঙালি>

    ইসলাম কিউ, এ

    موقع الإسلام سؤال وجواب

    —™

    অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: ثناء الله نذير أحمد

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    কালেমা শাহাদাতের শর্তসমূহ

    প্রশ্ন: আমার প্রশ্ন হচ্ছে কোনো এক জুমু'আর খুৎবা প্রসঙ্গে। খতিব সাহেব 'কালেমা' প্রসঙ্গে খুৎবা প্রদান করেন। তিনি বলেন: কালেমার বেশ কিছু শর্ত রয়েছে, আলেমগণ নয়টি অথবা তার সমপরিমাণ কতক শর্ত উল্লেখ করেছেন। তিনি তার কয়েকটি উল্লেখ করেন। যেমন, ইলম, ইয়াকীন ইত্যাদি। আপনি এ সংক্রান্ত কোনো বিষয় জানেন? জানলে অন্যান্য শর্তসমূহ উল্লেখ করুন। আমি আপনার কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ থাকব -ইনশাআল্লাহ।

    উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ।

    আপনার হয়তো কালেমা দ্বারা উদ্দেশ্য কালেমায়ে তাওহীদ অর্থাৎ لا إله إلا الله محمد رسول الله এবং খতিব সাহেবের উদ্দেশ্যও তাই। এ কালেমার অপর নাম কালেমায়ে শাহাদাত, তার একাধিক শর্ত রয়েছে। যেমন,

    প্রথম শর্ত. ইলম বা জ্ঞান। অর্থাৎ 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক অর্থের ইলম হাসিল করা। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

    ﴿ فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ ١٩ ﴾ [محمد : ١٩]

    “অতএব, জেনে রেখো, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই"[সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯]

    অপর আয়াতে তিনি বলেন:

    ﴿ إِلَّا مَن شَهِدَ بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٨٦ ﴾ [الزخرف: ٨٦]

    “তবে তারা ছাড়া যারা জেনে-শুনে সত্য সাক্ষ্য দেয়"[সূরা আয-যুখরূফ, আয়াত: ৮৬]

    এখানে সত্য সাক্ষ্য দ্বারা উদ্দেশ্য 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ'। আর জেনে-শুনে অর্থ লা-ইলাহা ইল্লাল্লার অর্থের জ্ঞান হাসিল করা। সহীহ গ্রন্থে উসমান রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    «مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، دَخَلَ الْجَنَّةَ».

    “যে এমতাবস্থায় মারা গেল যে, সে জানে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে"[1] অতএব মুসলিম হওয়ার জন্য লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর অর্থ জানা জরুরি।

    দ্বিতীয় শর্ত: ইয়াকীন থাকা অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর অর্থের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা, শুধু ধারণা যথেষ্ট নয়। আর সন্দেহপূর্ণ জ্ঞানের তো কোনো মূল্যই নেই। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

    ﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ١٥ ﴾ [الحجرات: ١٥]

    “মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করে নি"[সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৫]

    এ আয়াতে আল্লাহ ঈমানের জন্য সন্দেহ না থাকা শর্তারোপ করেছেন। কারণ, সন্দেহ পোষণকারী মুনাফিক, মুমিন নয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ 'আনহু থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، "لَا يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ، فَيُحْجَبَ عَنِ الْجَنَّةِ»

    “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। কোনো বান্দা সন্দেহ ব্যতীত এ দু'টি সাক্ষ্যসহ আল্লাহর সাক্ষাত করবে, আর তাকে জান্নাত থেকে দূরে রাখা হবে -এরূপ হবে না"[2]

    তৃতীয় শর্ত: কবুল করা অর্থাৎ কালেমার অর্থ ও দাবিকে বিনা বাক্যব্যয়ে গ্রহণ করে নেওয়া। আল্লাহ তা'আলা কালেমা কবুলকারীদের সম্পর্কে বলেন:

    ﴿ إِلَّا عِبَادَ ٱللَّهِ ٱلۡمُخۡلَصِينَ ٤٠ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ رِزۡقٞ مَّعۡلُومٞ ٤١ فَوَٰكِهُ وَهُم مُّكۡرَمُونَ ٤٢ فِي جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ ٤٣ ﴾ [الصافات : ٤٠، ٤٣]

    “অবশ্য আল্লাহর মনোনীত বান্দাগণ ছাড়া; তাদের জন্য থাকবে নির্ধারিত রিযিক, নি'আমতভরা জান্নাতে ফলমূল। আর তারা হবে সম্মানিত"[সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৪০-৪৩]

    অপর আয়াতে তিনি বলেন:

    ﴿ مَن جَآءَ بِٱلۡحَسَنَةِ فَلَهُۥ خَيۡرٞ مِّنۡهَا وَهُم مِّن فَزَعٖ يَوۡمَئِذٍ ءَامِنُونَ ٨٩ ﴾ [النمل: ٨٩]

    “যে ব্যক্তি সৎ কাজ নিয়ে আসবে তার জন্য থাকবে তা থেকে উত্তম প্রতিদান এবং সেদিনের ভীতিকর অবস্থা থেকে তারা নিরাপদ থাকবে"[সূরা আন-নামল, আয়াত: ৮৯]

    আবু মূসা রাদিয়াল্লাহ 'আনহু থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    «مَثَلُ مَا بَعَثَنِي اللَّهُ بِهِ مِنَ الْهُدَى وَالْعِلْمِ، كَمَثَلِ الْغَيْثِ الْكَثِيرِ أَصَابَ أَرْضًا فَكَانَ مِنْهَا نَقِيَّةٌ قَبِلَتِ الْمَاءَ، فَأَنْبَتَتِ الْكَلَأَ وَالْعُشْبَ الْكَثِيرَ، وَكَانَتْ مِنْهَا أَجَادِبُ أَمْسَكَتِ الْمَاءَ، فَنَفَعَ اللَّهُ بِهَا النَّاسَ فَشَرِبُوا وَسَقَوْا وَزَرَعُوا، وَأَصَابَتْ مِنْهَا طَائِفَةً أُخْرَى إِنَّمَا هِيَ قِيعَانٌ لَا تُمْسِكُ مَاءً وَلَا تُنْبِتُ كَلَأً، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ فِي دِينِ اللَّهِ وَنَفَعَهُ مَا بَعَثَنِي اللَّهُ بِهِ فَعَلِمَ وَعَلَّمَ، وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأْسًا وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللَّهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ»

    “আল্লাহ আমাকে যে হিদায়াত ও ইলমসহ পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ মুষলধারে বৃষ্টির ন্যায়, যা কোনো জমিনে বর্ষিত হয়েছে। তাতে কিছু উর্বর জমি ছিল, যা পানি গ্রহণ করেছে, ফলে তৃণলতা ও প্রচুর ঘাস জন্মিয়েছে। তাতে কিছু ছিল শক্ত জমি, যা পানি আটকে রেখেছে, আল্লাহ তার দ্বারা মানুষদের উপকৃত করেছেন, ফলে তারা পান করেছে, পশুদের পান করিয়েছে ও সেচ কার্য আঞ্জাম দিয়েছে। আর সে পানি জমির অপর অংশে পতিত হয়েছে, যা ছিল পাথরী জমি, যা পানি আটকে রাখে নি, কোনো তৃণলতাও জন্মায় নি। এটাই উদাহরণ তার, যে দীনের ইলম অর্জন করল, আল্লাহ আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তার দ্বারা তিনি তাকে উপকৃত করলেন, ফলে সে জ্ঞানার্জন করল ও অন্যকে শিখাল এবং তার উদাহরণ, যে তার প্রতি মাথা তুলে তাকায় নি ও আল্লাহর হিদায়াত গ্রহণ করে নি, যা দিয়ে আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে"[3]

    চতুর্থ শর্ত: ইনকিয়াদ করা অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর দাবি বিনা বাক্যে মেনে নেওয়া। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

    ﴿وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُۥ ٥٤ ﴾ [الزمر: ٥٣]

    “আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তার নিকট আত্মসমর্পণ কর"[সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২২]

    অপর আয়াতে তিনি বলেন:

    ﴿وَمَنۡ أَحۡسَنُ دِينٗا مِّمَّنۡ أَسۡلَمَ وَجۡهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ ١٢٥ ﴾ [النساء : ١٢٥]

    “আর দীনের ব্যাপারে তার তুলনায় কে উত্তম, যে মুহসিন অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিজেকে পূর্ণসমর্পণ করল"[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৫]

    অপর আয়াতে তিনি বলেন:

    ﴿وَمَن يُسۡلِمۡ وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ وَإِلَى ٱللَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٢٢ ﴾ [لقمان: ٢٢]

    “আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ ও বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর কাছে নিজকে সমর্পণ করে, সে তো শক্ত রশি আঁকড়ে ধরে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই কাছে"[সূরা লুকমান, আয়াত: ২২]

    আল্লাহর নিকট নিজেকে সমর্পণ করার অর্থ আল্লাহর তাওহীদকে বিনা বাক্যে মেনে নেওয়া, আর যে মেনে নিল না ও ইহসান প্রদর্শন করল না, সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে নি।

    পশ্চম শর্ত: কালেমায় সত্যারোপ করা অর্থাৎ অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসসহ সত্য হিসেবে মুখে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করা। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

    ﴿ الٓمٓ ١ أَحَسِبَ ٱلنَّاسُ أَن يُتۡرَكُوٓاْ أَن يَقُولُوٓاْ ءَامَنَّا وَهُمۡ لَا يُفۡتَنُونَ ٢ وَلَقَدۡ فَتَنَّا ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۖ فَلَيَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْ وَلَيَعۡلَمَنَّ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٣ ﴾ [العنكبوت: ١، ٣]

    “আলিফ-লাম-মীম। মানুষ কি মনে করে যে, 'আমরা ঈমান এনেছি' বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি, ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী"[সূরা আল-'আনকাবুত, আয়াত: ১-৩]

    সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, মু'আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহ 'আনহু বলেন:

    «مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ»

    “এমন কেউ নেই যে, অন্তর থেকে সত্যসহ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল, তবে আল্লাহ অবশ্যই তার ওপর জাহান্নাম হারাম করে দিবেন"[4]

    ষষ্ট শর্ত: ইখলাস অর্থাৎ আমলকে সকল শির্ক থেকে মুক্ত রাখা ও নিষ্ঠাসহ তা বলা। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

    ﴿ أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُۚ ٣ ﴾ [الزمر: ٣]

    “জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য"[সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩]

    অপর আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন:

    ﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ ٥ ﴾ [البينة: ٥]

    “আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তারই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে"[সূরা আল-বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৫]

    সহীহ গ্রন্থে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    «أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ»

    “কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে সে ব্যক্তি, যে নিজের অন্তরের অন্তস্থল বা মন থেকে নিষ্ঠাসহ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে"[5]

    সপ্তম শর্ত: 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' কালেমাকে মহব্বত করা, তার দাবি ও অর্থকে মহব্বত করা, তার ওপর আমলকারী ও তার শর্তসমূহ যাদের মধ্যে রয়েছে তাদেরকে মহব্বত করা, এবং যারা তার উপর আমল করে না তাদেরকে অপছন্দ করা। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

    ﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ ١٦٥ ﴾ [البقرة: ١٦٥]

    “আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মতো ভালোবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর"[সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৫]

    আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসার নিদর্শন হচ্ছে বান্দা আল্লাহর পছন্দনীয় বস্তুকে প্রাধান্য দিবে, যদিও তার প্রবৃত্তি বিরোধী হয়। আল্লাহ যাদেরকে অপছন্দ করেন, তাদেরকে অপছন্দ করবে, যদিও তাদের দিকে অন্তর দাবিত হয়। যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বন্ধু, তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা এবং যারা তাদের শত্রু তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের অনুসরণ করা ও তার হিদায়েত মেনে চলা। এগুলো হচ্ছে মহব্বতের র্শত, এসব শর্ত ব্যতীত মহব্বতের দাবি শুধুই মিথ্যা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    «ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ، أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ»

    “তিনটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, সে তার দ্বারা ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে: আল্লাহ ও তার রাসূল তার নিকট অন্য সকল বস্তু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া, মানুষকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই মহব্বত করা, কুফুরী থেকে আল্লাহর মুক্তি দেওয়ার পর, তাতে ফিরে যাওয়া এমনভাবে অপছন্দ করা যেমন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দনীয়"[6]

    কেউ অষ্টম শর্ত বৃদ্ধি করে বলেছেন 'কুফর বিত তাগুত' অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করা হয়, সেগুলোর সাথে কুফুরী করা। যেমন, তাগুতকে অস্বীকার করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    «مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مِنْ دُونِ اللَّهِ، حَرُمَ مَالُهُ، وَدَمُهُ، وَحِسَابُهُ عَلَى اللَّهِ».

    “যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করা হয় সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করল, তার সম্পদ ও রক্ত হারাম এবং তার হিসাব আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত"[7]

    অতএব, সম্পদ ও জানের নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ ব্যতীত সকল উপাস্যকে অস্বীকার করা জরুরি, সে যে কেউ হোক। আল্লাহ তা'আলা ভালো জানেন।

    মুহাম্মাদ ইবন সায়িদ আল-কাহতানী রচিত 'মুখতাসারু মা'আরিজুল কবুল: (পৃ. ১১৯-১২২)

    [1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮১

    [2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০

    [3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯

    [4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৮; মুসলিম, হাদীস নং ৩৫

    [5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯

    [6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬; মুসলিম, হাদীস নং ৪৫

    [7] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫