×
আল্লাহর রাসূলের প্রতি দরূদ-সালামের তাৎপর্য এতে আল্লাহর রাসূলের প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতির বিবরণ রয়েছে।

আল্লাহর রাসূলের প্রতি দরূদ-সালামের তাৎপর্য

الأصول في الصلاة والسلام على الرسول

প্রণয়নে:

ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ

تأليف

الدكتور/ محمد مرتضى بن عائش محمد

2015 - 1436

جميع الحقوق محفوظة للمؤلف

الطبعة الأولى عام 1436هـ - 2015 م

প্রথম সংস্করণ

সন 1436 হিজরী {2015 খ্রিস্টাব্দ }

সর্বস্বত্ব গ্রন্থকার কর্তৃক সংরক্ষিত

الناشر

قسم دعوة وتوعية الجاليات

المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة في الرياض المملكة العربية السعودية

প্রকাশনায়:

দাওয়া ও প্রবাসী শিক্ষা বিভাগ

রাবওয়া দাওয়া, এরশাদ ও প্রবাসীদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানদান কার্য়ালয়, রিয়াদ, সৌদি আরব

بسم الله الرحمن الرحيم

অনন্ত করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে

ভূমিকা

الحمد لله رب العالمين, والصلاة والسلام على خاتم الأنبياء والمرسلين, وعلى آله وأصحابه, وأتباعه, أما بعد:

অর্থ: সকল প্রশংসা সব জগতের সত্য প্রভু আল্লাহর জন্য, এবং শেষ নাবী ও রাসূল, তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ ও তাঁর অনুসরণকারীগণের জন্য অতিশয় সম্মান ও শান্তি অবতীর্ণ হোক।

অতঃপর বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সঠিক ঈমান ও সত্য ভালোবাসা এবং অতিশয় সম্মানের সহিত বেশি বেশি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করার মহামর্যাদা রয়েছে। তাই এই মহামর্যাদা লাভ করার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতির বিষয়টিকে পবিত্র কুরআন এবং নির্ভরযোগ্য হাদীসের আলোকে অতি সংক্ষেপে এই বইটির মধ্যে সম্মানিত মুসলিম সমাজের জন্য পেশ করলাম।

আমি মহান আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করি, তিনি যেন এই বইটিকে তাঁর অনুগ্রহে ও কৃপায় কবুল করেন এবং মুসলিম সমাজের জন্য কল্যাণদায়ক করেন ।

এই বইয়ের মধ্যে পবিত্র কুরআনের আয়াতের অথবা নির্ভরযোগ্য হাদীসের বাংলা তরজমা বা অনুবাদ সঠিক পন্থায় করার চেষ্টা করেছি। তাই এখানে অনুবাদের পদ্ধতির বিষয়ে একটি কথা বলতে চায়;আর তা হলো এই যে,

অনুবাদের পদ্ধতি

এই বইয়ের মধ্যে পবিত্র কুরআনের আয়াতের অথবা নির্ভরযোগ্য হাদীসের বাংলা তরজমা বা অনুবাদ পদ্ধতি একটু আলাদা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; কেননা অত্র বইটিতে আরবি ভাষার ভাবার্থের অনুবাদ বাংলা ভাষার ভাবার্থের দ্বারা করা হয়েছে। তাই কোনো সম্মানিত পাঠকের মনে অনুবাদ সম্পর্কে কোনো প্রকার সংশয় জেগে উঠলে, ওলামায়ে ইসলামের বিশদ বিবরণ বা ব্যাখ্যা আরবী ভাষায় একটু গভীরতার সহিত দেখে নিলে সর্ব প্রকার সংশয় দূর হয়ে যাবে। এবং এই বইয়ের বাংলা অনুবাদ নির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত হবে বলেই আশা করি ইনশা আল্লাহ। তবে এই বইটির দোষ-ত্রুটি, অসম্পূর্ণতা এবং মুদ্রণ প্রমাদ প্রভৃতি একেবারেই নেই, এই দাবি আমি করছি না। তাই এই বিষয়ে যে কোনো গঠনমূলক প্রস্তাব এবং মতামত আমার নিকটে সাদরে গৃহীত হবে ইনশা আল্লাহ।

সবশেষে কৃতজ্ঞতা স্বীকারের কথা:

আমার সম্মানিতা স্ত্রী উম্মে আহমাদ সালীমা খাতুন বিনতে শাইখ হুমায়ন বিশ্বাস এর কথা এখানে উল্লেখ করা উচিত মনে করছি;যেহেতু তিনি এই বইটির মুদ্রণ দোষ-ত্রুটি ঠিক করার বিষয়ে আমাকে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন। তাই আমি তাঁকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা পেশ করার বিষয়টি ভুলতে পারলাম না। মহান আল্লাহ তাঁকে তাঁর এই সাহায্য ও সহযোগিতার উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।

প্রণয়নকারী

ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ

তাং 25/5/1436 হিজরী {16/3/2015 খ্রিস্টাব্দ}

[email protected]

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদকে অতিশয় ভালোবাসা অনিবার্য

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]কে সকল মানুষ অপেক্ষা বেশি ভালোবাসা অপরিহার্য। তাই এই বিষয়ে এখানে একটি হাদীস উল্লেখ করা হলো:

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ النَّبيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ".

(صحيح البخاري, رقم الحديث 15, وصحيح مسلم, رقم الحديث 70 - (44), واللفظ للبخاري).

অর্থ:আনাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]বলেছেন:“তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকটে তার পিতা, সন্তানসন্ততি এবং আরো অন্য সকল মানুষ অপেক্ষা অধিকতর প্রিয় না হবো”

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 15 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 70 -(44), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জীবনের বাসনা এবং মনের প্রবৃত্তির উপর আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঠিক আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়া অপরিহার্য। কেননা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অধিকার সকল মানুষের অধিকারের ঊর্ধ্বে। তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে অতিশয় শ্রদ্ধাসহকারে একান্তভাবে ভালোবাসা এবং তাঁর অনুসরণ করা অপরিহার্য।

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদকে অতিশয় সম্মান করা অপরিহার্য

আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]এর অতিশয় সম্মান করা অপরিহার্য। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:

(إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا. لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ).

(سورة الفتح, الآية 8 و جزء من الآية 9 ).

ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ!আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি মানুষের কর্মের অবস্থা ব্যক্তকারীরূপে, প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তিকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদানকারীরূপে এবং প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা প্রত্যাখ্যানকারীকে জাহান্নামের কষ্ট হতে সতর্ককারীরূপে। যাতে তোমরা হে প্রকৃত ইসলামের অনুগামীগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি সঠিক পন্থায় ঈমান স্থাপন করতে পারো এবং আল্লাহর রাসূলের সঠিকভাবে সাহায্য ও অতিশয় সম্মান রক্ষা করতে পারো”

(সূরা আল ফাতহ, আয়াত নং 8 এবং 9 )

এই আয়াতটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তির অন্তরে আল্লাহর রাসূলের প্রকৃত সম্মান নেই, সে ব্যক্তির অন্তরে প্রকৃত ঈমান নেই।

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদকে অতিশয় সম্মান করার নিয়ম -পদ্ধতি

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]কে অতিশয় তাজিম করার উদ্দেশ্যে এবং তাঁকে অতিশয় সম্মান দেখানোর উদ্দেশ্যে তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা উচিত। কেননা এই বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে থেকে এখানে কতকগুলি হাদীস উল্লেখ করা হলো।

عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " مَنْ صَلَّى عَليَّ وَاحِدَةً, صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرًا".

(صحيح مسلم, رقم الحديث 70 -(408), ).

অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার জন্য আল্লাহর নিকটে একবার মাত্র দরূদ পাঠ করবে বা সম্মান প্রার্থনা করবে, সে ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ দশবার রহমত ও কল্যাণ অবতীর্ণ করবেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 70 -(408) ]।

এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]কে ভালোবাসা ও সম্মান করার নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হলো: তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা। এবং তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করার বিষয়টি হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের রহমত ও কল্যাণ লাভ করার একটি বড়ো উপাদান।

وَعَنْ أَنَسٍ بْنَ مَالِكٍ رَضِى اللهُ عَنْهُ, قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلاَةً وَاحِدَةً, صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ, وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيئَاتٍ, وَرُفِعَتْ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ".

(سنن النسائي, رقم الحديث 1297, وقد صححه الألباني).

অর্থ: আনাস বিন মালেক [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার জন্য আল্লাহর নিকটে একবার মাত্র দরূদ পাঠ করবে বা সম্মান প্রার্থনা করবে, মহান আল্লাহ তার প্রতি দশটি রহমত ও কল্যাণ অবতীর্ণ করবেন, তার দশটি পাপ ক্ষমা করে দিবেন এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন”

[সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1297 আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন]।

এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ বা তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে সম্মান প্রার্থনা করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট থেকে করুণা, ক্ষমা এবং উচ্চ মর্যাদা লাভ করা যায়। তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর সাহাবীগণকে যে পদ্ধতিতে তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করার নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন, সেই পদ্ধতিতেই তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করা উচিত। তাই তাঁর প্রতি সালাত বা দরূদ পাঠ করার উত্তম নিয়ম ও পদ্ধতি হলো নিম্নরূপ:

"اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ ".

(صحيح البخاري, رقم الحديث 3370, وصحيح مسلم, رقم الحديث 66 - (406), واللفظ للبخاري).

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত।

হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3370 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 66 -(406), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি আল্লাহর সালাত বা দরূদ এর অর্থ:

معنى صلاة الله على الرسول: تعظيم الله للرسول, وثناؤه عليه.

এর অর্থ হলো: আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]কে অতিশয় সম্মানিত ও গৌরবান্বিত করা।

এবং

معنى اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ: اَللَّهُمَّ عَظِّمْهُ في الدنيا والآخرة بما يليق به.

এর অর্থ হলো: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে তাঁর উপযুক্ত সম্মান দুনিয়াতে এবং পরকালে প্রদান করুন।

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]এর প্রতি সালাত বা দরূদ পাঠ করার নিয়ম বা পদ্ধতি আরো কতকগুলি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদীসগুলির মধ্যে থেকে এখানে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো:

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِى اللهُ عَنْهُ, قَالَ: قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ, هَذَا السَّلاَمُ عَلَيْكَ؛ فَكَيْفَ نُصَلِّيْ؟ قَالَ: "قُوْلُوا: اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ, كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ, وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ, وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ, كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَآلِ إِبْرَاهِيْمَ ".

(صحيح البخاري, رقم الحديث 6358).

অর্থ: আবু সাঈদ আলখুদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি সালাম পেশ করার পদ্ধতি তো আমাদের জানা আছে। আর তা হলো:

السَّلاَمُ عَلَيْكَ

অর্থ: “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”। বলে আপনার প্রতি সালাম পেশ করি।

কিন্তু আমরা কি পদ্ধতিতে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করবো? (তথা আমরা কি পদ্ধতিতে আপনার জন্য আল্লাহর নিকটে অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবো?) তখন তিনি বললেন যে, তোমরা এই পদ্ধতিতে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে। (তথা তোমরা এই পদ্ধতিতে আমার জন্য আল্লাহর নিকটে অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে):

"الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ, كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ, وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ, وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ, كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَآلِ إِبْرَاهِيْمَ ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আপনার অনুগত প্রিয়পাত্র ও রাসূল মুহাম্মাদকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীমকে সম্মানিত করেছেন।

হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6358]

وَعَنْ أَبِيْ حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِي اللهُ عَنْهُ, أَنَّهُمْ قَالُوْا: يَا رَسُولَ اللهِ, كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ؟ فَقَاَل رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "قُوْلُوا: اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَتِهِ, كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ, وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَتِهِ, كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ؛ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ".

(صحيح البخاري, رقم الحديث 3369, وصحيح مسلم, رقم الحديث 69 - (407), واللفظ للبخاري).

অর্থ: আবু হুমাইদ আসসায়েদী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি পদ্ধতিতে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করবো? (তথা আমরা কি পদ্ধতিতে আপনার জন্য আল্লাহর নিকটে অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবো?) তখন তিনি বললেন যে, তোমরা এই পদ্ধতিতে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে। (তথা আমার জন্য আল্লাহর নিকটে অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে):

"اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَتِهِ, كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ, وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَتِهِ, كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ؛ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর সন্তানদেরকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে আপনি ইবরাহীমের পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে সম্মানিত করেছেন।

হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর সন্তানদেরকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীমের পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3369 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 69 -(407), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

وَعَنْ زَيْدِ بْنِ خَارِجَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: أَنَا سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؛ فَقَالَ: "صَلُّوْا عَلَيَّ وَاجْتَهِدُوْا فِي الدُّعَآءِ وَقُوْلُوْا: اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ".

(سنن النسائي, رقم الحديث 1292, وصححه الألباني).

অর্থ: য্যায়দ বিন খারিজা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে দরূদ পাঠ করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাই তিনি উত্তর প্রদান করে আমাদেরকে বললেন: “তোমরা আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে। (তথা আমার জন্য আল্লাহর নিকটে অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে) এবং এই প্রার্থনাতে তোমরা অতিশয় তৎপর থাকবে, আর বলবে:

"اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করুন”

[সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1292। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন]।

উল্লিখিত হাদীসগুলির দ্বারা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি পেশ করা হলো। এবং তাঁর জন্য আল্লাহর নিকটে অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করার নিয়ম প্রদান করা হলো।

তবে জেনে রাখা দরকার যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি সালাত বা দরূদ পাঠ করা হলে, সেই সালাত বা দরূদ আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে প্রেরিত হয়। কেননা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে এই বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে থেকে এখানে একটি হাদীস উল্লেখ করা হলো:

عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "لاَ تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قُبُوْرًا, وَلاَ تَجْعَلُوْا قَبْرِيْ عِيْدًا، وَصَلُّوْا عَلَيَّ؛ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِيْ حَيْثُ كُنْتُمْ".

(سنن أبي داود, رقم الحديث 2042, وصححه الألباني).

অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা তোমাদের বাড়িগুলিকে কবরস্থানে পরিণত করবে না এবং আমার কবরকে তোমরা উৎসব স্থলে পরিণত করবে না। তবে হ্যাঁ! তোমরা আমার জন্য দরূদ পাঠ করবে তথা অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে। কেননা তোমরা যেখান থেকেই আমার জন্য দরূদ পাঠ করবে তথা অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে। সেখান থেকেই তা আমার কাছে পৌঁছে যাবে”

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 2042, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

উক্ত হাদীসগুলির দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন আনন্দের সহিত, ভালোবাসার সহিত এবং সম্মানের সহিত আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অধিকতর সালাত বা দরূদ প্রেরণ করে।

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অধিকতর সালাত বা দরূদ প্রেরণ করার প্রতি সব সময় সজাগ থাকা দরকার। বিশেষভাবে নামাজের মধ্যে তাশাহহোদ পাঠ করার সময়, আজান শ্রবণ শেষ করার পর, মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা বা দোয়া করার সময় এবং আরো বিভিন্ন সময়ে সালাত বা দরূদ পাঠ করা একটি উত্তম কর্ম।

আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করার নিয়ম

আল্লাহর নাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]এর প্রতি বেশি বেশি সালাম পেশ করার বিষয়টি শরীয়ত সম্মত একটি কাজ। এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় মহান আল্লাহর বাণীর দ্বারা। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন:

(إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا) , (سورة الأحزاب, الآية 56(.

ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ কে অতিশয় সম্মান করেন। এবং ফেরেশতাগণ আল্লাহর নিকটে নাবী মুহাম্মাদ এর জন্য অতিশয় সম্মান প্রার্থনা করেন। সুতরাং হে ঈমানদার মুসলিম জাতি! তোমরাও নাবী মুহাম্মাদ এর অতিশয় সম্মান করো ও তাঁর প্রতি যথাযথভাবে সালাম পেশ করো”

(সূরা আল আহযাব, আয়াত নং 56)

আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি সালাম পেশ করার বিষয়ে উক্ত আয়াতটির সাথে সাথে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেই হাদীসগুলির মধ্যে থেকে এখানে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো:

عَنْ أَبِي طَلْحَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ وَالْبُشْرَى فِي وَجْهِهِ؛ فَقُلْنَا: إِنَّا لَنَرَى الْبُشْرَى فِيْ وَجْهِكَ!؛ فَقَالَ: إِنَّهُ أَتَانِيَ الْمَلَكُ؛ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ! إِنَّ رَبَّكَ يَقُوْلُ: أَمَا يُرْضِيْكَ؟ أَنَّهُ لاَ يُصَلِّي عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ صَلَّيْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا, وَلاَ يُسَلِّمُ عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ سَلَّمْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا".

(سنن النسائي, رقم الحديث 1283, وحسنه الألباني).

অর্থ: আবু তালহা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] একদা আনন্দময় চেহারাসহ আগমন করলেন। তাই আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার চেহারায় আনন্দের নিদর্শন উপলব্ধি করছি! সুতরাং তিনি বললেন: “আমার কাছে এক্ষনিই একজন ফেরেশতা এসেছিলেন এবং এই কথা বলে গেলেন: হে মুহাম্মাদ! আপনার পালনকর্তা বলেছেন: আপনি কি এতে সন্তুষ্ট নন যে, আপনার জন্য যে ব্যক্তি দরূদ পাঠ করবে (তথা আল্লাহর নিকটে আপনার জন্য অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে) তার প্রতি আমি দশটি রহমত ও বরকত বা কল্যাণ অবতীর্ণ করবো। এবং যে ব্যক্তি আপনার প্রতি সালাম পেশ করবে, তার প্রতি আমি দশবার শান্তি অবতীর্ণ করব।

(সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1283, আল্লামাহ নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন )।

এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সম্মানার্থে তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করা ( অর্থাৎ অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করা ) এবং বেশি বেশি সালাম পেশ করা শরীয়ত সম্মত একটি বিধান বা নিয়ম।

সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করবে, সে ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ শান্তি অবতীর্ণ করবেন। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি দরূদ পাঠ করবে (অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে) তার প্রতি মহান আল্লাহ রহমত ও বরকত বা কল্যাণ অবতীর্ণ করবেন।

وعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعٌوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِيْنَ فيِ الْأرْضِ يُبَلِّغُونِيْ مِنْ أُمَّتِي السَّلاَمَ ".

(سنن النسائي, رقم الحديث 1282, وصححه الألباني).

অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে এমন কতকগুলি ভ্রমণকারী ফেরেশতামণ্ডলী নির্ধারিত রয়েছেন, যাঁরা আমার প্রতি আমার উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে দেন”

(সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1282, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন) ।

এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সম্মানার্থে মহান আল্লাহ সকল মুসলিম নর-নারীর সালাম তাঁর নিকটে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কতকগুলি ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। তাই আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি সালাম পেশ করা উচিত। কেননা এই কর্মটি হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের একটি বিধান।

আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করার কতকগুলি সময় ও স্থান নির্ধারিত রয়েছে, যেমন:-মাসজিদে প্রবেশ করার সময় এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়। এবং এই বিষয়ে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে থেকে এখানে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো:

عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛ فَلْيُسَلِّمْ علَى النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وليقُلْ: اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ؛ فَلْيَقُلْ: اَللَّهمَّ إنِّيْ أَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ".

(سنن ابن ماجه, رقم الحديث 772, وسنن أبي داود, رقم الحديث 465, واللفظ لابن ماجه, وصححه الألباني).

অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:

তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:

"اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”

আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন যেন সে এই দোয়াটি পাঠ করে:

"اَللَّهمَّ إنِّيْ أَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি”

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 772 এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 465 । তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

وَعَنْ فَاطِمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهاَ قَالَتْ: كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ المَسْجِدَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: "رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ"، وَإِذَا خَرَجَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: "رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ".

(جامع الترمذي, رقم الحديث 314, وسنن ابن ماجه, رقم الحديث 773, واللفظ للترمذي, وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه: حسن, وصححه الألباني).

অর্থ: “ফাতেমা বিনতু মুহাম্মাদ [রাদিয়াল্লাহু আনহা] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মাসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন:

"رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ".

অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”

আর আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মাসজিদ থেকে বের হতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন:

" رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ".

অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”

[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 314 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 773, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন]।

وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَن ّرَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, قَالَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, وَلْيَقُلْ: اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ؛ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, وَلْيَقُلْ: اَللَّهُمَّ اعْصِمْنـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرَّجـيْمِ".

(سنن ابن ماجه, رقم الحديث 773, وسنن أبي داود, رقم الحديث 465, واللفظ لابن ماجه, وصححه الألباني).

অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:

তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:

"اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”

আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন যেন সে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:

"اَللَّهمَّ اعْصِمْنـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرَّجـيْمِ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত ও অভিশপ্ত শয়তান হতে রক্ষা করুন”

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 773 এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 465 । তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

উল্লিখিত হাদীসগুলির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,

1। আমাদের নাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর একটি অধিকার বা প্রাপ্য তাঁর উম্মতের উপর হলো এই যে, তাঁর উম্মতের প্রতিটি মানুষ যেন তাঁর প্রতি সালাম পেশ করে। তাই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তিকে আদেশ প্রদান করা হয়েছে যে, সে যেন আল্লাহর রাসূলের প্রতি সাধারণভাবে যে কোনো সময়ে সালাম প্রেরণ করে। কিংবা কতকগুলি নির্দিষ্ট সময়ে সালাম প্রেরণ করে যেমন:- নামাজের তাশাহহোদ পাঠের সময় এবং মাসজিদে প্রবেশ করার সময় বা মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় । এবং নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনুপস্থিতিতেও তাঁর মৃত্যুবরণ করার পর অথবা তাঁর জীবদ্দশাতেও তাঁর প্রতি সালাম পেশ করার বিধান নির্ধারিত রয়েছে। তবে এই বিধানটি শুধু মাত্র তাঁরই বৈশিষ্ট্য এবং তাঁরই জন্য প্রযোজ্য। অন্য কোনো মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয় এবং অন্য কোনো মানুষের বৈশিষ্ট্যও নয়। তাই কোনো জীবিত ব্যক্তির মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনো নির্দিষ্ট জীবিত মানুষকে তার অনুপস্থিতিতে তার প্রতি সালাম পেশ করা বৈধ নয়। শুধু মাত্র নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত রয়েছে যে, তাঁকে তাঁর উম্মতের সালাম পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। এর দ্বারা মুসলিম ব্যক্তি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে সালাম দেওয়ার মর্যাদা লাভ করে থাকে এবং তাঁর প্রতি তার এই সালাম পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। যদিও সে আল্লাহর রাসূলের জীবদ্দশাতে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য পথের দূরত্ব অতিক্রম না করে থাকে। অথবা যদিও সে তাঁর মৃত্যুবরণ করার পর তাঁর কবরের নিকটে উপস্থিত না হয়ে থাকে।

2। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অধিকতর সালাম প্রেরণ করার নিয়মটি হলো এই যে,

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ أيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ ([1]).

অর্থ: “হে নাবী আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি, আল্লাহর করুণা ও তাঁর কল্যাণ অবতীর্ণ হোক”

পাঠ করা।

অথবা

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ.

অর্থ: “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”

বলে আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা।

কিংবা

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا نَبِيَّ اللهِ.

অর্থ: “হে আল্লাহর নাবী! আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”

পাঠ করে আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা উচিত। কেননা এটাই তো হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের পবিত্র অভিবাদন পদ্ধতি।

[দেখতে পারা যায় সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3326 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 28 -(2841) এবং 132 -(2473)]।

নচেৎ

اَلسَّلاَمُ عَلَى النَّبِيِّ ([2]).

অর্থ: “আল্লাহর নাবীর প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”

উচ্চারণ করেও আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা যেতে পারে।

3। সালাম এর ভাবার্থ হলো: সকল প্রকারের অমঙ্গল এবং দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্তি, শান্তি, পরিত্রাণ এবং নিরাপত্তা প্রাপ্ত হওয়া।

4। মুসলিম ব্যক্তির সঠিক ভাবে জেনে রাখা উচিত যে, আমাদের এই সালাম ফেরেশতাগণের মাধ্যমে আমাদের নাবীর প্রতি পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। তাই মাদিনায় সফর কারী ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণের কোনো দরকার নেই। এই কারণেই সাহাবীগণ, সালাফে সালেহীন, এবং ওলামায়ে ইসলাম কোনো একজন ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণ করতেন না। কেননা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম কোন ব্যক্তির মাধ্যম ছাড়াই পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। যেমন এর পূর্বে উল্লিখিত হাদীসটির দ্বারা এই বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। সেই হাদীসটি হলো এই যে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:

"إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِيْنَ فيِ الأرْضِ يُبَلِّغُونِيْ مِنْ أُمَّتِي السَّلاَمَ ".

(سنن النسائي, رقم الحديث 1282, وصححه الألباني).

অর্থ: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে এমন কতকগুলি ভ্রমণকারী ফেরেশতামণ্ডলী নির্ধারিত রয়েছেন, যাঁরা আমার প্রতি আমার উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে দেন”

(সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1282, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন) ।

5। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ বা বৈধ নয় যে, সে সম্মিলিতভাবে, একযোগে একসুরে কোনো একটি নির্দিষ্ট পন্থায় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করবে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন সুরে, পৃথকভাবে এবং স্বতন্ত্রপদ্ধতিতে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অধিকতর সালাম প্রেরণ করবে। কেননা সম্মিলিতভাবে, একযোগে, একসুরে কোন একটি নির্দিষ্ট পন্থায় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণ করার নিয়মটি ইসলামী শরীয়ত বা বিধানের মধ্যে পাওয়া যায় না। তাই এককভাবে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি সালাম পেশ করা উচিত।

6। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণ করবে। কেননা এই পদ্ধতিতে সালাম প্রেরণ করার কোনো বিধান প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষায় পাওয়া যায় না। তাই এই পদ্ধতিটি শরিয়ত সম্মত নয়। সুতরাং যে কোন মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়ার যে কোনো দেশ বা স্থান থেকে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করতে পারবে। এতে কোনো বাধা নেই।

7। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে এমন দরূদ ও সালাম পাঠ করবে, যে সব দরূদ ও সালাম প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা সম্মত নয়। সুতরাং দরূদে তাজ, দরূদে তুনাজ্জীনা, দরূদে হাজারী ইত্যাদির শব্দগুলি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণিত হয় নি। তাই এইসব দরূদ ও সালামের পদ্ধতি বর্জন করা দরকার। কেননা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:

"مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ".

(صحيح البخاري, رقم الحديث 2697, وأيضاً: صحيح مسلم, رقم الحديث 17- (1718) ).

অর্থ: “যে ব্যক্তি আমাদের এই ইসলাম ধর্মের মধ্যে এমন কোনো নতুন বিষয় ধর্মের কর্ম হিসেবে সংযুক্ত করবে, যে বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ধর্মের অংশ নয়, তাহলে সে বিষয়টি পরিত্যাজ্য বলেই বিবেচিত হবে”

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং 2697 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 17-(1718)

8। জেনে রাখা উচিত যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর সর্বশেষ নাবী এবং রাসূল বা দূত । তিনি সকল জাতির মানবসমাজের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তাই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাঁর আনুগত্য ছাড়া আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং আল্লাহর আনুগত্যের দাবির কোনো অর্থ থাকে না। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন:

(مَنْ يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللّهَ) , (سورة النساء, جزء من الآية 80 ).

ভাবার্থের অনুবাদ: “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের আনুগত্য করতে সক্ষম হবে, সেই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর অনুগত ব্যক্তি হতে পারবে”

 (সূরা আন নিসা, আয়াত নং 80 এর অংশবিশেষ)

)قُلْ إِنْ كُنتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّهَ فَاتَّبِعُوْنِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللّهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ), (سورة آل عمران, الآية 31 ).

মহান আল্লাহ আরো বলেছেন:

ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ! তুমি বলে দাও! যদি তোমরা আল্লাহর ভালবাসা লাভ করতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ করতে থাকো, তবেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলিকে ক্ষমা করে দিবেন। যেহেতু আল্লাহ হলেন ক্ষমাবান ও দয়াবান”

 (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং 31)

وصلى الله وسلم على رسولنا محمد, وعلى آله وأصحابه, وأتباعه إلى يوم الدين, والحمد لله رب العالمين.

অর্থ: আল্লাহ আমাদের প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসরণকারীগণকে অতিশয় সম্মান ও শান্তি প্রদান করুন।

প্রণীত তারিখ 20/4/1436 হিজরী মোতাবেক 9/2/2015 খ্রিস্টাব্দ।

ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ

সমাপ্ত

সূচীপত্র

ক্রমিক

নম্বর

বিষয়

পৃষ্ঠা

1

ভূমিকা

5

2

অনুবাদের পদ্ধতি

6

3

সবশেষে কৃতজ্ঞতা স্বীকারের কথা

8

4

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদকে অতিশয় ভালোবাসা অনিবার্য

9

5

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদকে অতিশয় সম্মান করা অপরিহার্য

11

6

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদকে অতিশয় সম্মান করার পদ্ধতি

13

7

আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করার নিয়ম

25

8

সূচীপত্র

44

([1]) صحيح البخاري, رقم الحديث 835, وصحيح مسلم, رقم الحديث 55- (402), وانظر أيضا: الجامع لأحكام القرآن للعلامة أبي عبد الله محمد بن أحمد الأنصاري القرطبي, اعتنى به وصححه الشيخ هشام الأنصاري, دار عالم الكتب للطباعة والنشر والتوزيع, الرياض, المملكة العربية السعودية, طبعة عام 1423هـ - 2003م, تفسير الآية 56 من سورة الالأحزاب, ج 14, ص 234, وص 237.

([2]) انظر فتح البارئ شرح صحيح البخاري للعلامة الحافظ أحمد بن علي بن حجر العسقلاني, المكتبة العصرية, طبعة عام 1426هـ - 2005م, المجلد الثاني, شرح الحديث برقم 831, ص 1175.