×
মাসজিদের সম্মান এবং আদবকায়দা রক্ষা করা অপরিহার্য

    মাসজিদের সম্মান রক্ষা করা অপরিহার্য

    ]بنغالي [বাংলা– Bengali –

    وجوب المحافظة على حرمة المساجد

    প্রণয়নে:

    ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ

    2015-1436

    প্রথম সংস্করণ

    সন 1436 হিজরী {2015 খ্রিস্টাব্দ }

    সর্বস্বত্ব গ্রন্থকার কর্তৃক সংরক্ষিত

    بسم الله الرحمن الرحيم

    অনন্ত করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে

    الحمد لله رب العالمين, والصلاة والسلام, على سيد الأنبياء والمرسلين, وعلى آله وأصحابه وأتباعه إلى يوم الدين, أما بعد:

    অর্থ: সকল প্রশংসা সব জগতের সত্য প্রভু আল্লাহর জন্য, এবং যিনি সকল নাবী ও রাসূলগণের সর্দার, তাঁর প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ ও তাঁর অনুসরণকারীগণের প্রতিও কিয়ামত পর্যন্ত সালাত ও সালাম অবতীর্ণ হোক।

    অতঃপর প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মহান আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে সকল জাতির মানব সমাজকে কল্যাণময় জীবনযাপন করার সঠিক পদ্ধতি প্রদান করার জন্য। এবং সুন্দর ও সঠিক নিয়মে আল্লাহর উপাসনা করার সঠিক পদ্ধতি প্রদান করার জন্য; তাই মাসজিদে প্রবেশ করার সঠিক পদ্ধতি জেনে রাখা দরকার; কেননা মাসজিদ হলো আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় স্থান। যেহেতু আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:

    "أَحَبُّ الْبِلاَدِ إِلَى اللَّهِ مَسَاجِدُهَا، وَأَبْغَضُ الْبِلاَدِ إِلَى اللَّهِ أَسْوَاقُهَا".

    (صحيح مسلم, رقم الحديث 288 -(671), ).

    অর্থ: “পৃথিবীর মধ্যে আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় স্থান হলো মাসজিদ। আর সবচেয়ে ঘৃণিত স্থান হলো বাজার”

    [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 288 -(671) ]।

    আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আরো বলেছেন:

    "مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّوْمَ وَالْكُرَّاثَ؛ فَلا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا؛ فَإِنَّ الْمَلائِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو آدَمَ".

    (صحيح مسلم, رقم الحديث 74 - (564), وصحيح البخاري, رقم الحديث 854 , واللفظ لمسلم).

    অর্থ: “যে ব্যক্তি কাঁচা পিঁয়াজ, রশুন ও রশুনের গাছ অথবা রশুনের মতো উগ্রগন্ধী বা দুর্গন্ধ জাতীয় কোন জিনিস খাবে, সে যেন আমাদের মাসজিদের নিকটবর্তী না হয়; কেননা ফেরেশতাগণ সেই জিনিসের দ্বারা কষ্ট পেয়ে থাকেন, যে জিনিসের দ্বারা আদম-সন্তান কষ্ট পেয়ে থাকে”।

    [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 74-(564) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 854, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

    * এই হাদীসগুলির দ্বারা জানা যায় যে:-

    1। মাসজিদের সম্মান রক্ষা করা একটি ঈমানী কর্তব্য এবং পবিত্র দায়িত্ব।

    2। পৃথিবীর মধ্যে মাসজিদ হলো আল্লাহর জিকির, ইবাদত বা উপাসনা প্রতিষ্ঠিত করার স্থান। আল্লাহর জিকির, ইবাদত বা উপাসনার মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ বিষয় হলো পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ।

    3। মাসজিদের সম্মান রক্ষা করা অপরিহার্য; তাই সমস্ত মাসজিদ পরিষ্কার এবং সুবাসিত করে রাখা ওয়াজিব। এবং অপ্রীতিকর গন্ধ ও ময়লা পোশাক পরিধান করে মাসজিদে প্রবেশ করা জায়েজ নয়।

    4। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত স্থান হলো সাধারণতঃ বাজার; কেননা সচরাচর বাজার হলো প্রতারণা, ঠকবাজি, মিথ্যা শপথ ইত্যাদির জায়গা এবং আল্লাহর জিকির থেকে বিরত থাকারও স্থান।

    5। মাসজিদকে বাজারের মত ঘৃণিত স্থান করে রাখা বৈধ নয়। তাই মহান আল্লাহ বলেছেন:

    (يَا بَنِيْ آدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ), سورة الأعراف: جزء من الآية31.

    ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আদম সন্তান! তোমরা নামাজ পড়ার জন্য মাসজিদে প্রবেশ করবে সুশোভিত হয়ে সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করে”

    (সূরা আল আরাফ, আয়াত নং 31 এর অংশবিশেষ)

    6। যে ব্যক্তির শরীরে দুর্গন্ধ রয়েছে কিংবা যে ব্যক্তির শরীরে ঘৃণিত ব্যাধি অথবা রোগ কিংবা ঘৃণিত ঘা, ক্ষত বা কুষ্ঠরোগ রয়েছে, সে ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে না। কেননা কাঁচা পিঁয়াজ, রশুন ও রশুনের গাছ অথবা রশুনের মতো উগ্রগন্ধী বা দুর্গন্ধের জিনিস খেয়ে মাসজিদে প্রবেশ করলে যেমন ফেরেশতাগণ এবং মাসজিদের মুসাল্লিগণ কষ্ট পেয়ে থাকেন, তেমন শরীরের দুর্গন্ধ, ঘৃণিত ব্যাধি অথবা রোগ কিংবা ঘৃণিত ঘা, ক্ষত বা কুষ্ঠরোগ ইত্যাদির দ্বারাও ফেরেশতাগণ এবং মাসজিদের মুসাল্লিগণ কষ্ট পেয়ে থাকেন। তাই যে ব্যক্তির শরীরে দুর্গন্ধ, ঘৃণিত ব্যাধি অথবা রোগ কিংবা ঘৃণিত ঘা, ক্ষত বা কুষ্ঠরোগ ইত্যাদি রয়েছে, সে ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে না। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সমস্ত প্রকারের ঘৃণিত ব্যাধি অথবা রোগ থেকে রক্ষা করুন।

    মাসজিদে প্রবেশ করার সময় নিম্নের কতকগুলি আদবকায়দা মনে রাখা দরকার:-

    1। মাসজিদে উপস্থিত হওয়ার সময় সুসজ্জিত হয়ে আসা উচিত।

    2। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করে দুর্গন্ধমুক্ত হয়ে মাসজিদে প্রবেশ করা অপরিহার্য।

    3। ফেরেশতাগণ এবং অন্যান্য নামাজীদেরকে দুর্গন্ধের দ্বারা কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা জরুরি।

    4। মাসজিদে প্রবেশ করার সময় পা কিংবা পায়ের মোজা অথবা বগল, মুখ, দাঁত, শরীর, শরীরের পোশাক, জামাকাপড় যেন দুর্গন্ধমুক্ত হয়। তাই শরীরে ধুমপান কিংবা ঘাম অথবা ময়লার যেন দুর্গন্ধ না থাকে তার খেয়াল রাখা অপরিহার্য।

    5। মাসজিদ হলো নামাজ পড়ার পবিত্র স্থান, এই পবিত্র স্থানে এমন পবিত্র ও সুশোভিত হয়ে উপস্থিত হওয়া উচিত, যাতে বিনয়নম্রতার সহিত নামাজ পড়া সম্ভব হয়।

    6। পরিপূর্ণরূপে সুসজ্জিত হয়ে মাসজিদে প্রবেশ করা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির একান্ত কর্তব্য। এবং এই কর্তব্য পালনে অবহেলা করা বৈধ নয়; তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর যুগে কোনো ব্যক্তির শরীর বা পোশাক থেকে কোনো প্রকারের দুর্গন্ধ প্রকাশ হলে, তাকে মাসজিদ থেকে বের করে দিয়ে আল বাকী (মাদীনা শহরের বিখ্যাত কবরস্থানের নাম) নামক জায়গাতে ছেড়ে রেখে আসা হতো। এই বিষয়ে সহীহ মুসলিমের হাদীস নং 78- (566) দেখতে পারা যায়।

    7। মাসজিদে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে অন্তর্বাস বা আন্ডারওয়্যার ও ভিতরের বস্ত্রাদি যেমন:- গেঞ্জি, ফতুয়া, বক্ষবাস, কৌপীন, জাঙ্গিয়া ইত্যাদি পরিষ্কার থাকা দরকার; তাই এই সব অন্তর্বাস প্রত্যেক দিন কমপক্ষে শুধু পানি দিয়েও ধৌত করে নেওয়া উচিত; যাতে এই সব বস্ত্রাদিতে কোনো প্রকারের দুর্গন্ধ না থাকে।

    8। মাসজিদে প্রবেশ করার সময় এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়ের দোয়া পাঠ করা উচিত। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:

    "إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛ فَلْيُسَلِّمْ علَى النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلْيَقُلْ: اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ؛ فَلْيُسَلِّمْ علَى النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلْيَقُلْ: اَللَّهمَّ اعْصِمْنِـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرََّجِـْيمِ".

    (سنن ابن ماجه, رقم الحديث 773, وسنن أبي داود, رقم الحديث 465, واللفظ لابن ماجه, وصححه الألباني).

    অর্থ: “তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করবে এবং বলবে:

    اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ

    অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার কৃপার দরজাগুলি উন্মুক্ত করে দিন”

    এবং তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন সে আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করবে এবং বলবে:

    اَللَّهمَّ اعْصِمْنِـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرََّجِـْيمِ

    অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্ষা করুন”

    9। মাসজিদে প্রবেশ করার সময় এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাত বা দরূদ পাঠ করারও বিধান রয়েছে। এই বিষয়ে জামে তিরমিযীর হাদীস নং 314 দেখতে পারা যায়। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]। মাসজিদের সম্মান রক্ষা করার বিষয়ে অনেক হাদীস রয়েছে, কিন্তু বিষয়টিকে দীর্ঘ না করে এখানেই শেষ করলাম।

    وصلى الله وسلم على نبينا محمد, وعلى آله وأصحابه, وأتباعه إلى يوم الدين, والحمد لله رب العالمين.

    অর্থ: আল্লাহ আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসরণকারীগণের প্রতি সালাত ও সালাম অবতীর্ণ করুন।

    প্রণীত তারিখ 25/4/1436 হিজরী মোতাবেক 15/2/2015 খ্রিস্টাব্দ।

    ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ

    সমাপ্ত