অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে রোযার ভূমিকা
ক্যাটাগরিসমূহ
উৎস
Full Description
অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সাওমের ভূমিকা
মুহাম্মাদ শাহিদুল ইসলাম
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
دور الصيام في حفظ المجتمع من الجرائم
(باللغة البنغالية)
محمد شهيد الإسلام
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা............
সাওমের উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তা বান্দার জন্য ঢালস্বরূপ। বান্দাকে গুনাহ ও অবাধ্যতা থেকে হিফাযত করে, সাথে সাথে তা সমাজকেও অপরাধমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। এ প্রবন্ধে সহীহ হাদীসের আলোকে সাওমের এ মহান তাৎপর্যটি তুলে ধরা হয়েছে।
অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সাওমের ভূমিকা
সিয়ামের এক মাসকালীন প্রশিক্ষণমূলক অবদান অত্যন্ত সূক্ষ্ণ, ব্যাপক ও গভীর। সিয়াম মানব মনের যাবতীয় কু-প্রবৃত্তির ওপর শক্ত লাগাম লাগিয়ে দেয় এবং সাওম পালনকারীকে যাবতীয় নাফরমানীর কাজকর্ম থেকে বিরত রাখে। অপরাধ (Crime)[1] যে ধরনের ও যে প্রকৃতিরই হোক তা নফসের খাহেশ, কামনা, বাসনা, লোভ ও লালসা থেকেই উৎসারিত হয়। আর তার গোড়াতে তিনটি প্রবল শক্তি-উৎস নিহিত থাকে। প্রথম লোভ-লালসার শক্তি; দ্বিতীয় যৌনস্পৃহা ও কু-প্রবৃত্তি এবং তৃতীয় হচ্ছে অহমিকতা-দাম্ভিকতাবোধ। সিয়ামের প্রশিক্ষণমূলক প্রভাব রয়েছে এই তিনটি শক্তি-উৎসের ওপর।[2]
এক্ষেত্রে সাওম বিভিন্নভাবে অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য যে সমস্ত গুণ, প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন করার প্রয়োজন তন্মধ্যে তাকওয়া, আত্মসংযম, ক্ষুধা ও পিপাসার নিয়ন্ত্রন, যৌন কর্মের নিয়ন্ত্রন, অশ্লীলতা ও অনার্থক কাজকর্ম বর্জন, সুশৃঙ্খল প্রবৃত্তি, সত্য বলার প্রবণতা, ধৈর্য চর্চা প্রভৃতি অন্যতম। পবিত্র এ সিয়াম এগুলোর প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের বাস্তব কসরত। মানুষ যাতে এসব গুণ লালন করতে পারে, একটি মাস ধরে সিয়াম মূলত তারই বিজ্ঞান-সম্মত ব্যবস্থা নিয়েছে। অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, এই সমস্ত গুণ সৃষ্টি ও প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে সিয়ামের যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ সে সম্পর্কে এখানে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো:
তাকওয়া
তাকওয়া[3] আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ ভয়, ভীতি, শঙ্কা, ডর, আতঙ্ক, আশঙ্কা। কুরআনুল কারীমে এ শব্দটি ১৫ বার ব্যবহৃত হয়েছে।
তাকওয়ার ফযীলত সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদীসের সংখ্যা অনেক। আল্লাহ্ তা‘আলা হিদায়াত, রহমত, ইলম ও রিজা জান্নাতীদের এই মাকাম চতুষ্টয়কে তিনটি আয়াতে খাওফকারীরে জন্য নির্দিষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। খাওফের ফযীলতের জন্য এটাই যথেষ্ট। হিদায়াত ও রহমত সম্পর্কে আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে:
﴿هُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلَّذِينَ هُمۡ لِرَبِّهِمۡ يَرۡهَبُونَ ١٥٤ ﴾ [الاعراف: ١٥٤]
“...হিদায়াত ও রহমত তাদের জন্য যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৪] অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ ثَمَرَٰتٖ مُّخۡتَلِفًا أَلۡوَٰنُهَاۚ وَمِنَ ٱلۡجِبَالِ جُدَدُۢ بِيضٞ وَحُمۡرٞ مُّخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٞ ٢٧ وَمِنَ ٱلنَّاسِ وَٱلدَّوَآبِّ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ مُخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهُۥ كَذَٰلِكَۗ إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ٢٨ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ يَرۡجُونَ تِجَٰرَةٗ لَّن تَبُورَ ٢٩ لِيُوَفِّيَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ غَفُورٞ شَكُورٞ ٣٠ وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ هُوَ ٱلۡحَقُّ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِعِبَادِهِۦ لَخَبِيرُۢ بَصِيرٞ ٣١ ثُمَّ أَوۡرَثۡنَا ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَيۡنَا مِنۡ عِبَادِنَاۖ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ وَمِنۡهُم مُّقۡتَصِدٞ وَمِنۡهُمۡ سَابِقُۢ بِٱلۡخَيۡرَٰتِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡكَبِيرُ ٣٢ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٣٣ وَقَالُواْ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِيٓ أَذۡهَبَ عَنَّا ٱلۡحَزَنَۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٞ شَكُورٌ ٣٤ ٱلَّذِيٓ أَحَلَّنَا دَارَ ٱلۡمُقَامَةِ مِن فَضۡلِهِۦ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٞ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٞ ٣٥﴾ [فاطر: ٢٧، ٣٥]
“তুমি কি দেখ নি যে, আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তা দিয়ে আমরা বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উৎপাদন করি আর পাহাড়ে রয়েছে নানা বর্ণের শুভ্র ও লাল পথ এবং (কিছু) মিশকালো। আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে তিনি তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী। আর আমি যে কিতাবটি তোমার কাছে ওহী করেছি তা সত্য, এটা তার পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সম্যক অবহিত, সর্বদ্রষ্টা। অতঃপর আমরা এ কিতাবটির উত্তরাধিকারী করেছি আমাদের বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমরা মনোনীত করেছি। তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী। আবার তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহা অনুগ্রহ। চিরস্থায়ী জান্নাত, এতে তারা প্রবেশ করবে। যেখানে তাদেরকে স্বর্ণের চুড়ি ও মুক্তা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের। আর তারা বলবে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী’। ‘যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী নিবাসে স্থান দিয়েছেন, যেখানে কোনো কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং যেখানে কোন ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করে না।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৭-৩৫]
এ মর্মে হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করায়? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান মানুষকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস? একটি মুখ ও অপরটি লজ্জাস্থান।[4]
আল্লাহর প্রতি ভয়ের দু’টি অবস্থান রয়েছে।
এক. আল্লাহ তা‘আলার আযাবকে ভয় করা। দুই. তাঁর সত্ত্বাকে ভয় করা। দ্বিতীয় প্রকার খাওফ তাদের হয়, যারা ইলম ও অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী। প্রথম প্রকার খাওফ সাধারণ মানুষের হয়, যা কেবল জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাস স্থাপন এবং এগুলোকে ইবাদত ও নাফরমানীর প্রতিফল বিশ্বাস করার কারণে সৃষ্টি হয়। এ খাওফ অনবধানতা ও ঈমানের দুর্বলতার কারনে দুর্বল হয়ে পড়ে। কিয়ামতের আতঙ্ক চিন্তা করলে এবং আখিরাতের বিভিন্ন কথা স্মরণ করলে এই অনবধানতা দূরীভূত হয়ে যায়। এছাড়া খাওফকারীদেরকে দেখলে এবং তাদের কাছে বসলেও এ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
দুই. আল্লাহর সত্তাকে ভয় করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে পড়া এবং তাঁর ও বান্দার মাঝখানে অন্তরাল সৃষ্টি আশঙ্কা করা। যুন্নুন মিসরী রহ. বলেন: আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদের ভয়ের তুলনায় জাহান্নামের ভয় সমুদ্রের তুলনায় এক ফোঁটা পানির মতোই। এ খাওফ আলিমগণের হয়। সেমতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ ثَمَرَٰتٖ مُّخۡتَلِفًا أَلۡوَٰنُهَاۚ وَمِنَ ٱلۡجِبَالِ جُدَدُۢ بِيضٞ وَحُمۡرٞ مُّخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٞ ٢٧ وَمِنَ ٱلنَّاسِ وَٱلدَّوَآبِّ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ مُخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهُۥ كَذَٰلِكَۗ إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ٢٨﴾ [فاطر: ٢٧، ٢٨]
“তুমি কি দেখ নি আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তা দিয়ে আমি বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উৎপাদন করি আর পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে নানা বর্ণের শুভ্র ও লাল পথ এবং (কিছু) মিশকালো। আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৭-২৮]
সাধারণ মুমিনও এই ভয়ের কিছু অংশ পায়; কিন্তু তাদের ভয় নিছক তাকলীদ তথা অনুকরণ হয়ে থাকে। যেমন, অবুঝ শিশু তার পিতার অনুকরণের সাপকে ভয় করে। এই ভয়ের মধ্যে অন্তদৃষ্টি থাকে না বিধায় এটা দুর্বল হয়ে থাকে এবং দ্রুত বিলীন হয়ে যায়। তবে যদি ভয়ের কারণসমূহ সর্বদা অনুধাবন করা যায় এবং তদনুযায়ী দীর্ঘদিন ইবাদত ও গুনাহ থেকে আত্মরক্ষা করা যায়, তা হলে খাওফ শক্তিশালী হয়।
মোটকথা, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে যথাযথ চিনতে সক্ষম হয়, সে আপনা-আপনিই খাওফ করতে থাকে। তার জন্য কোনো উপায় অবলম্বনের প্রয়োজন নেই। যেমন, কোনো ব্যক্তি হিংস্র জন্তুর স্বরূপ জেনে নেয়, এরপর নিজেকে তার নাগালের মধ্যে দেখতে পায়, সে আপনা-আপনিই হিংস্র জন্তুকে ভয় করতে থাকবে। এজন্য তার কোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে না।
উল্লেখ্য যারা আরিফ তথা আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানী তাদের সব সময় জীবনের অন্তিম মুহূর্ত অশুভ হওয়ার ভয়ে লেগে থাকে। এর কারণ একাধিক, যা অন্তিম মুহূর্তের পূর্বে সংঘটিত হয়। বিদ‘আত, গুনাহ ও নিফাকও এসব কারণের অন্তর্ভুক্ত। মানুষ এসব থেকে মুক্ত নয়। যদি কেউ নিজেকে নিফাক থেকে মুক্ত বলে ধারণা করে, তবে তাও এক ধরনের নিফাক। কেননা প্রসিদ্ধ উক্তি রয়েছে: যে নিফাককে ভয় করে না, সে মুনাফিক। জনৈক বুযুর্গ এক দীনদার আলেমকে বললেন: আমি নিজের জন্য নিফাকের ভয় করি। আলেম বললেন : যদি তুমি মুনাফিক হতে, তবে নিফাকের ভয় করতে না। বস্তুত নিফাকের ভয় করা সত্যিকারের ঈমানের লক্ষণ।
সারকথা, মুমিনের দৃষ্টি সর্বদা অন্তিম মুহূর্তের প্রতি থাকে তা শুভ হবে, না অশুভ। মুমিন বান্দা দু’টি ভয়ের মাঝখানে অবস্থান করে। এক. অতীত সময়। আল্লাহ তা‘আলা তাতে কী করবেন, তা সে জানে না। দুই. অনাগত সময়, যাতে আল্লাহ কী ফায়সালা দিবেন, তা তার জানা নেই। মৃত্যুর পর সন্তুষ্টি অর্জনের কোনো উপায় নেই এবং দুনিয়ার পরে জান্নাত অথবা জাহান্নাম ছাড়া কোনো ঠিকানা নেই।
এ পৃথিবীকে অপরাধমুক্ত করতে হলে তার প্রথম উপাদান হচ্ছে আল্লাহর ভয়, আরবীতে যাকে খাওফ বলে। আবার সেটাকে কেউ কেউ তাকওয়া বলেন। তাকওয়ার মহত্ব ও মহিমা অশেষ। শরঈ‘ এ অর্থ দ্বারা সহজেই বুঝা যায় যে, সত্যিকার তাকওয়াবান লোক আল্লাহর ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তু ও কাজসমূহ থেকে নিজেকে রক্ষা করবে কারণ অমান্য করলে কঠিন শাস্তি পেতে হয়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্বকে অপরাধমুক্ত করতে হলে এ তাকওয়ার কোনো বিকল্প নেই। লোক চক্ষুর অন্তরালে পুলিশী প্রহরা যেখানে নিষ্ক্রিয়, রাষ্ট্রীয় এন. এস. আই, অথবা ভি. জি. এফ. আই. বা এস এস এফ এর মতে গোয়েন্দা বাহিনী যেখানে অপারগ, স্যাটেলাইটের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেখানে অসহায়, সেখানেও আল্লাহর ভয় একজন ব্যক্তিকে অপরাধমুক্ত রাখতে পারে।
অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে তাকওয়ার কোনো বিকল্প নেই বিধায় এর অপরিসীম প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য রেখে আল্লাহ সিয়ামের মাধ্যমে তাকওয়া অনুশীলন করার ঘোষণা দেন। আর সিয়াম ফরয করার অন্তরালে এ তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হচ্ছে অন্যতম লক্ষ্য। আল্লাহ বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [البقرة: ١٨٣]
“হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩]
আল্লাহর নিকট মানুষের মর্যাদার মাপকাঠিও এ তাকওয়া। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ١٣﴾ [الحجرات: ١٣]
“তোমাদের মধ্যে সে-ই আল্লাহর নিকট বেশি মর্যাদাবান যে বেশি মুত্তাকী (তাকওয়ার অধিকারী।” [সূরা সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৩]
ইসলামী জীবন দর্শনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাকওয়ার পোশাক যে পরিধান করে তার দ্বারা কোনোরূপ অন্যায় ও অসৎকর্ম সংঘটিত হতে পারে না। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ٩٦﴾ [الاعراف: ٩٦]
“যদি সে সমস্ত জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উম্মুক্ত করে দিতাম।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৯৬]
অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাকওয়ার বিকল্প নেই। এ জন্য তাকওয়ার অনুশীলন দরকার। তাকওয়ার অনুশীলন অর্থই হচ্ছে-অপরাধমুক্ত সমাজ তৈরির জন্য এক উচ্চাঙ্গের প্রশিক্ষণ। অনেক সাওম পালনকারীর প্রাণ ক্ষুধা ও পিপাসায় ওষ্ঠাগত হয়। সে গোপনে পৃথিবীর সকল চক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে অনেক সুযোগ সুবিধা লাভ করেও ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানি ও খাদ্যের দিকে হাত বাড়ায় না। সে অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করে। তাকওয়া নামক এ অতন্দ্র প্রহরীর কারণে সিয়ামের বলিষ্ঠ ভূমিকা তা আমরা স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারি। আল্লাহ, আখেরাত, জাহান্নাম এগুলোর প্রতি যার বিশ্বাস নেই তাকে কখনো অপরাধমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। একটু সুযোগ পেলেই সে অপরাধ সংঘটিত করবে। এটাই বাস্তব। আর যদি সকলের মধ্যে তাকওয়া উজ্জীবিত থাকত তাহলে তাকওয়া সকল অপরাধ কর্ম থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে তাদেরকে বাধ্য করত। অপরাধী ও অপরাধ নির্মূলের দায়িত্বশীল উভয়কেই তাকওয়া অর্জন করা ছাড়া সমাজ অপরাধমুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।
আত্মসংযম
অপরাধ প্রবণতা সংঘটিত করার ক্ষেত্রে মানুষের আত্মসংযমের ভূমিকাও কম নয়। অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি বিরাট অন্তরায় সৃষ্টি করে। সিয়াম মানুষের আত্মসংযমের মতো বলিষ্ঠ অনুশীলনের ব্যবস্থা করে সমাজকে অপরাধমুক্ত করার প্রয়াস গ্রহণ করেছে। রমযান মাসের সাওম মানুষকে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। রমযান মাসের সাওম সাওম পালনকারীদের হাত পা মুখ ও অন্তকরণকে সংযত করে। সাওম পালনকারী ব্যক্তিদের চক্ষু, কান, জিহ্বা, হাত সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যাবতীয় গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। যেমন, চোখকে অবৈধ দৃষ্টিপাত থেকে ফিরিয়ে রাখা। এ জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৫টি বিষয়ে সাওম পালনকারীদের আত্মসংযমী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মিথ্যা না বলা, কুটনামী না করা, পশ্চাতে পরনিন্দা না করা, মিথ্য শপথ করা ও কামভাব সহকারে দৃষ্টিপাত করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “সাওম ঢালস্বরূপ। সুতরাং সাওম অবস্থায় যেন অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকে এবং অজ্ঞ মুর্খের মতো কোনো কাজ না করে। কেউ যদি তার সাথে ঝগড়া-ফ্যাসাদ করতে চায় অথবা গালি দেয় তবে সে যেন দুইবার বলে, আমি সাওম পালনকারী।”[5]
এ আলোচনা থেকে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, রমযান মাসে সাওম পালনকারী ব্যক্তির ন্যায় বছরের অন্যান্য মাসে নিজেকে আত্মসংযমী করলে অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
ক্ষুধা ও পিপাসার নিয়ন্ত্রণ
মানুষ সাধারণত দিনে রাতে তিনবার পানাহারে অভ্যস্ত-সকাল, দুপুর এবং রাতে। আর যখনই পিপাসা লাগে পান করে এবং যখনই ইচ্ছে হয় পানাহার করে। কিন্তু রমযান মাসে এ পানাহারের ওপর নিয়ন্ত্রন আরোপিত হয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র রিযিকসমূহ হালাল করেছেন এবং সকল প্রকার অপচয়-অপব্যবহারমুক্ত পানাহারকে বৈধ ঘোষণা করেছে। আল্লাহ বলেন,
﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ٣١ قُلۡ مَنۡ حَرَّمَ زِينَةَ ٱللَّهِ ٱلَّتِيٓ أَخۡرَجَ لِعِبَادِهِۦ وَٱلطَّيِّبَٰتِ مِنَ ٱلرِّزۡقِۚ قُلۡ هِيَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا خَالِصَةٗ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ ﴾ [الاعراف: ٣١، ٣٢]
“আর তোমরা আহার কর ও পান কর কিন্তু অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে ভালোবাসেন না। বলুন, আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের জন্য যেসব শোভার বস্তু ও বিশুদ্ধ জীবিকা সৃষ্টি করেছেন তা কে হারাম করেছে? বলুন, পার্থিব জীবনে বিশেষ করে কিয়ামতের দিনে এ সমস্ত তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১-৩২]
সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তা সবই বন্ধ থাকে। এ সময় ক্ষুধা তাকে যন্ত্রনা দেয়, পিপাসা তার বক্ষদেশ জ্বালায় যদিও তার সম্মুখে সুমিষ্ট পানীয় ও সুস্বাদু আহার্য সবই বর্তমান থাকে। আর তার জন্য আল্লাহ তা হালালও করেছেন। কিন্তু সিয়ামের এ সময় সে সেসব কিছু পান ও গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখে। যে আল্লাহ তার জন্য এসব পানাহার হালাল করে দিয়েছেন এ সময়টায় তারই আদেশে তা থেকে বিরত থেকে মানুষ এ কথাই প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণ করে দেয় যে, সে আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কিছু করে না। সে সেই কাজ করে এবং সে সময় করে, যখন আল্লাহ যা করার অনুমতি দান করেন। বছরের বারটি মাসের মধ্যে একটি মাসকাল ধরে যে নিজেকে এভাবে চালিত করতে অভ্যস্থ হয়,তার এ অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী বলে পরবর্তী এগারটি মাস সে আল্লাহর নিষিদ্ধ পানাহার ও ধন-মাল থেকে নিজেকে বিরত রাখতে খূবই সাফল্য সহকারে সক্ষম হয়। ক্ষুধা ও পিপাসা অপরাধ মূলোৎপাটনের এক উত্তম সহায়ক। পবিত্র রমযান মাসের সাওমের মাধ্যমে অনেকটা প্রমাণিত।
বৈধ যৌনকর্মের নিয়ন্ত্রণ
সমাজে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পিছনে অবৈধ যৌন উন্মাদনা অনেকাংশে দায়ী। যিনা, ব্যভিচার, সমকাম, ধর্ষণ, অপহরণ প্রভৃতি অসংখ্য অপরাধের উৎস হচ্ছে এই অবৈধ যৌন ক্ষুধা। একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সমাজের বেশিরভাগ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দার জন্য বিয়ে ও স্ত্রী সঙ্গম হালাল করেছেন। আল্লাহ বলেছেন :
﴿فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ مَثۡنَىٰ وَثُلَٰثَ وَرُبَٰعَۖ فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً﴾ [النساء: ٣]
“অতএব, তোমরা স্ত্রীরূপে গ্রহণ কর, দু’জন, তিনজন, চারজন যা তোমার ইচ্ছা। আর নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারবে না বলে ভয় হলে মাত্র একজন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩]
ফলে বান্দা দিনে রাতে যখন ইচ্ছা স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করতে ও আসল ক্ষেতে বীজ বপন করতে পারে, কোনো বাধা-নিষেধ নেই কেবল স্ত্রীর “হায়েয” অবস্থা ছাড়া। আল্লাহ বলেছেন :
﴿نِسَآؤُكُمۡ حَرۡثٞ لَّكُمۡ فَأۡتُواْ حَرۡثَكُمۡ أَنَّىٰ شِئۡتُمۡۖ وَقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُمۡۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّكُم مُّلَٰقُوهُۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢٢٣﴾ [البقرة: ٢٢٣]
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার। তোমরা তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু করিও এবং আল্লাহকে ভয় করো। আর জেনে রেখ যে, তোমরা আল্লাহর সম্মুখীন হতে যাচ্ছো এবং মুমিনগণকে সুসংবাদ দাও।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২৩]
কিন্তু রমযান মাসে এ মুসলিম ব্যক্তির জীবনে এ অবাধ স্বাধীনতা সীমিত হয়ে আসে। তখন এ কাজ কেবলমাত্র রাত্রিকালেই সম্পন্ন হতে পারে, দিনের বেলা নয়। আল্লাহ বলেন,
﴿أُحِلَّ لَكُمۡ لَيۡلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمۡۚ هُنَّ لِبَاسٞ لَّكُمۡ وَأَنتُمۡ لِبَاسٞ لَّهُنَّۗ عَلِمَ ٱللَّهُ أَنَّكُمۡ كُنتُمۡ تَخۡتَانُونَ أَنفُسَكُمۡ فَتَابَ عَلَيۡكُمۡ وَعَفَا عَنكُمۡۖ فَٱلۡـَٰٔنَ بَٰشِرُوهُنَّ وَٱبۡتَغُواْ مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمۡۚ ﴾ [البقرة: ١٨٧]
“সিয়ামের রাত্রে তোমাদের জন্য স্ত্রীসম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হয়েছেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সহিত সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৭]
এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “হে যুবকগণ! তোমাদের মধ্যকার বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহের সামর্থ্যবানদের বিয়ে করা উচিৎ। আর এটি যার জন্য অসম্ভব সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা সিয়াম যৌন ক্ষুধাকে দমন করে।”[6]
সাওম পালনকারী মুসলিম একমাসকাল ধরে দিনের বেলা স্বীয় যৌন প্রবৃত্তি চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকতে যখন সক্ষম হচ্ছে, অথচ স্ত্রী সঙ্গম তার জন্য সম্পূর্ণ হালাল-তখন স্বভাবতই আশা করা যায় যে, বছরের পরবর্তী মাসগুলোতে নিষিদ্ধ যৌন সঙ্গম থেকে সে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে অতীব যোগ্যতা সহকারে।
সুশৃঙ্খল প্রবৃত্তি
সিয়াম বল্গাহীন বৃত্তির দাসত্বকে সংযত করে। যেসব কারণে মানুষ উশৃঙ্খল হয়ে উঠে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে বল্গাহীনভাবে প্রবৃত্তির অনুসরণ ও উদরপূর্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مَلَأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنٍ. بِحَسْبِ ابْنِ آدَمَ أُكُلَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فَإِنْ كَانَ لَا مَحَالَةَ فَثُلُثٌ لِطَعَامِهِ وَثُلُثٌ لِشَرَابِهِ وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ»
“যে সব থলে ভর্তি করা হয়, তন্মধ্যে পেটের চেয়ে কোনো ব্যাগকে বনী আদম ভর্তি করে নি। বনী আদমের জন্য তো কয়েক লোকমা খাবারই যথেষ্ট যা তার পিঠকে দাঁড়ানো রাখবে। যদি এর চেয়ে বেশি খেতেই হয় তবে তিনভাগের একভাগে খাবার, আর তিনভাগের একভাগে পানীয়, বাকী তিনভাগের একভাগ খালি রাখবে নিঃশ্বাস ফেলার জন্য”[7]।
অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার কয়েকটি উৎস রয়েছে, ক্ষুধা সেগুলোর মূল উৎপাটনের এক উত্তম সহায়ক, এখানে তাও বুঝা যাচ্ছে। সিয়াম নির্ধারিত সময়ের জন্য এই ক্ষুধার অনুশীলন, যা কৃ-প্রবৃত্তিকে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
অশ্লীলতা ও অনর্থক কাজকর্ম বর্জন
আরবীতে অশ্লীলতার প্রতিশব্দ হচ্ছে, فاحش، ماجن، خليع ইত্যদি।[8] মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীমে আল্লাহ্ তা‘আলা এ শব্দটিকে فاحشة হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন :
﴿وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً ﴾ [ال عمران: ١٣٥]
“আর যারা কোন অশ্লীল কার্য করে ফেললে...।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৫]
আলোচ্য আয়াতের فَاحِشَةً শব্দ দ্বারা সাধারণতভাবে অশ্লীলতাকেই বুঝানো হয়েছে। তবে এর অর্থ দ্বারা কী উদ্দেশ্য তা স্পষ্টত বুঝা যায় তাফসীরকারকদের ব্যাখ্যার মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে ইবন জারীর আত-তাবারা রহ. বলেন, এখানে فَاحِشَةً দ্বারা সকল প্রকার গুনাহ, এমন কোনো কাজ করা যা দ্বারা নিজের আত্মার ওপর যুলুম হয়ে যায়, এমন খারাপ কাজ করা যার দ্বারা আল্লাহর আল্লার বেধে দেওয়া সীমারেখা অতিক্রম হয়ে যায়, যা দ্বারা ব্যক্তির ওপর হদ্দ জারী করা আবশ্যক হয়ে পড়ে, ব্যাভিচার করা, খরাপ কথা-বার্তা বলা এটিও অশ্লীলতার একটি অংশ। সুদ্দী রহ.-এর মতে ব্যভিচার করা। সুফিয়ান আস-সাওরী ও মানসূর রহ.-এর মতে, অন্যের ওপর যুলুম করা।[9]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, আলোচ্য আয়াতের فَاحِشَةً শব্দ দ্বারা অবাধ্যতাকে বুঝানো হয়েছে।[10]
তাফসীরে বাগাভীতে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ও মুজাহিদ রহ. فَاحِشَةً শব্দের অর্থ করেছেন : উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করা। আতা‘ রহ. বলেন : শির্ক করা এবং এমন কাজ যা আল্লাহ করতে নিষেধ করেছেন, ব্যাভিচার করা, যা কথা ও কাজের মধ্যে নিকৃষ্ট তাই অশ্লীলতা।[11]
হাদীসের বর্ণনায় অশ্লীলতা বলতে নিকৃষ্ট পদ্ধতি ও তরীকা, কথা ও কাজের নিকৃষ্টতাকে বুঝানো হয়েছে।[12]
সিয়াম একজন মুসলিমকে অশ্লীল, বাজে ও অর্থহীন কথাবার্তা বলা থেকেও বিরত রাখে। এ কাজ মুসলিম ব্যক্তির জন্য সাধারণভাবেও হারাম বটে; কিন্তু রমযান মাসে এগুলোর হারাম আরো তীব্র ও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে লোক মিথ্যা কথা ও মিথ্যা আমল ত্যাগ করল না, তার খাদ্য-পানীয় পরিত্যাগ করে চলায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।”[13]
অপর হাদীসে বলা হয়েছে: “বেশ সংখ্যক সাওম পালনকারী এমন হয়ে থাকে, যাদের সাওময় ক্ষুধা পিপাসার কষ্ট সহ্য করা ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না।”[14]
কুরআনে যদিও অন্যায়ের প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকার সকলকেই দেয়া হয়েছে -যেমন বলা হয়েছে: “মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ।”[15] কিন্তু সাওম পালনকারীকে এক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ মেনে চলতে হয়। কারুর পক্ষ থেকে অন্যায় হলেই সেও তার জবাবে অন্যায় করবে এরূপ স্বাধীনতা তাকে দেওয়া হয় নি। কেউ তাকে গাল মন্দ বললে সেও অনুরূপ গাল-মন্দ তাকে শুনিয়ে দিবে, তা সাওম পালনকারীদের জন্য বাঞ্ছনীয় নয়। এরূপ অবস্থা দেখা দিলে সিয়ামই তাকে ঢালস্বরূপ আড়াল করে রাখবে। হাদীসে এ কথাই বলা হয়েছে এ ভাষায় : “সাওম (রোযা) ঢাল বিশেষ। সাওমর দিনে কারো জন্য স্ত্রী সঙ্গম করা উচিৎ নয়, উচিৎ নয় হল্লা চিৎকার ও গোলমাল করা। কেউ যদি তাকে গাল-মন্দ করে বা তার সাথে মারামারি করতে আসে, তাহলে তার বলা উচিতঃ আমি একজন সাওম পালনকারী ব্যক্তি”।[16]
সত্য বলার প্রবণতা
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মিথ্যা হচ্ছে সকল অপরাধ ও পাপের মূল। মিথ্যা বর্জন অধিকাংশ অপরাধকে নির্মূল করতে পারে। হত্যাকারী, ঘুষখোর, অপহরণকারী প্রভৃতি অপরাধী মিথ্যার প্রশ্রয় পাবে, মিথ্যা বলে তাদের এ অপরাধ ধামা চাপা দিতে পারবে, মিথার প্রতি এতটুকু আস্থা যদি না থাকত তাহলে এ জাতীয় কোনও প্রকার অপরাধই সংঘটিত হত না, তাহলে মূলত মিথ্যাই এ সব অপরাধের ইন্ধনদাতা। সিয়ামের অস্তিত্বও এই মিথ্যা কাজ ও কথা পরিত্যাগের ওপর নির্ভরশীল। হাদীসে সে সম্পর্কে জোর উক্তি বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষায়: “যে মিথ্যা কথা ও সে অনুযায়ী কাজ পরিত্যাগ করতে পারল না; অযথা খাদ্য ও পানীয় পরিহার করে তার কোনো লাভ নেই।”[17]
কর্মতৎপরতা
এভাবে একজন লোক যদি সারা মাস ধরে ক্রোধ-আক্রোশ এড়িয়ে চলার অভ্যাস করে, অন্যদের ওপর বাড়াবাড়ি করা থেকেও বিরত থাকে, তাহলে পরবর্তী এগারো মাসকাল এ অভ্যাসের শক্তি দিয়ে সকল প্রকার অবাঞ্ছিত পরিস্থিতিতে এসব এড়িয়ে চলতে সক্ষম হবে -এটাইতো আশা করা যায়। মানুষের ওপর সর্বাধিক প্রভাব ও কর্তৃত্ব খাটায় মানুষের ইচ্ছা শক্তি। সে ইচ্ছাশক্তিই যদি একমাসকাল ধরে উক্তরূপ নিয়ন্ত্রণ মেনে চলতে অভ্যস্ত হয়, তাহলে সে তার ঈমানী শক্তিকে প্রবল ও অনমনীয় ইচ্ছাশক্তির ওপর বিজয়ী করে এবং তাকে শরী‘আতের বিধানের আওতায় নিয়ন্ত্রিত রাখতে সক্ষম হবে। এ উদ্দেশ্যেই সাওমের এ সুমহান ব্যবস্থা ইসলামী শরী‘আতে গ্রহণ করা হয়েছে।
উপরোক্ত দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে যে বিষয়টি স্পষ্ট ও সর্বজন স্বীকৃত যা কুরআন-সুন্নাহ দ্বারাও সাব্যস্ত রয়েছে তা হচ্ছে, ব্যক্তির ইবাদাত-বন্দেগী দ্বারা আল্লাহর কোনো প্রকার লাভ-লোকসান নেই। বিশেষ করে সিয়াম পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি যে উপোস করার মাধ্যমে পানাহারজনিত কষ্ট স্বীকার করেন বা সাচ্ছন্দে মেনে নেন এতেও আল্লাহর কোনো লাভ নেই বরং বান্দাকে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করতে যোগ্য কর তুলতে, আল্লাহর ইবাদাতকারীরূপে তৈরি করতে, অপরাধমুক্ত সুশিল সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে সিয়ামের এ ব্যবস্থা একান্তই জরুরী চির কার্যকর এবং পরীক্ষিত বিষয়। আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী এবং তাঁর হুকুম-আহকাম বা বিধি-বিধান প্রণয়নের অন্যতম প্রধান প্রয়োজন ও উদ্দেশ্যে যে সমাজকে অপরাধ মুক্ত করণের মাধ্যমে এখানে সার্বক্ষনিক সুখ-শান্তি ও নিয়ম সৃঙ্খলা বিধান করা এ বিষয়টি অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তি মাত্রই অনুধাবন করতে পারে। তাই আমাদের জন্য এটা একান্তভাবে করণীয় যে, রমযানের সাওম ছাড়াও বছরের অন্যান্য দিনগুলোতেও সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব ইত্যাদি সাওম রাখা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা। তাহলে সাওমর জান্নাতী পরশের ছোঁয়ায় আমাদের সমাজ অবশ্যই অপরাধমুক্ত সমাজ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
পরিশেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, সাওমের মাধ্যমে মানুষের পাশবিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। আর আত্মিক শক্তি বৃদ্ধির ফলে অপরাধ প্রবণতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। সাওম পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি যখন আত্মসংযম ও নিয়ন্ত্রণের গুণাবলী অর্জনে সক্ষম হয় তখন সে সর্বপ্রকার অন্যায়-অপরাধ থেকে দূরে থাকে। আর এ অর্থেই হাদীসে সিয়াম ‘ঢাল’ রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ সাওম ব্যক্তিকে যাবতীয় পাপ থেকে বাঁচায় যেমনি ঢাল ব্যক্তিকে যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর আঘাত থেকে রক্ষা করে থাকে।
[1] অপরাধ: অপরাধ বলতে শরী‘আতের এমন আদেশ ও নিষেধ বুঝায় যা লংঘন করলে হদ অথবা তা‘যীর প্রযোজ্য হয়। আবুল হাসান আলী ইবন মুহাম্মদ ইবন হাবীব আল-মাওয়ারদী (মৃ. ৪৫০/১০৫৮), আল-আহকামুস সুলতানিয়্যা, (বৈরুত: ১৩৯৮/১৯৭৮), পৃ. ২১৯।
[2] মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম, অপরাধ প্রতিরোধে ইসলাম (ঢাকা- খায়রুন প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ জুন/১৯৯৭) পৃ. ৮৮।
[3] তাকওয়া শব্দের অর্থ আল্লাহকে ভয় করা। আভিধানিক অর্থ হলো, আত্মরক্ষা, ভীতি এবং কোনো প্রকার অনিষ্ট ও ক্ষতিকর বস্তু থেকৈ নিজেকে রক্ষা করা। আর শরী‘আতের পরিভাষায় এর অর্থ হলো আল্লাহ তায়ালার ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তু হতে দূরে থেকে ইসলাম নির্দেশিত বস্তু থেকে দূরে থেকে ইসলাম নির্দেশিত পথে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা। যে কাজ করা বা পরিত্যাগ করার কারণে আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হতে হয় তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা। আল্লাহর তরফ থেকে প্রাপ্ত করুণা, ভালোবাসা, দয়া ও অনুগ্রহ হারাবার ভয় অন্তরে সদা জেগে থাকা।
[4] তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৬২১, হাদীসটি সহীহ।
[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৬১।
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬৭৭।
[7] তিরমিযী, হাদীস নং ২৩৮০।
[8] আবূ তাহের মেসবাহ, আল-মানার [বাংলা-আরবী অভিধান], (ঢাকা : মোহাম্মাদী লাইব্রেরি, ১৯৯৮), পৃ. ৮৭।
[9] ইবন জরীর, আবূ জা‘ফার মুহাম্মদ ইব্ন জারীর আত-তাবারী, জামি‘উল বায়ান ফী তা’বীলিল কুর’আন, (দারুল ফিকর, তা.বি.), খ ৭, পৃ. ২১৭; আল-আলুসী, শিহাবুদ্দীন মাহমূদ ইব্ন ‘আব্দিল্লাহ আল-হুসাইনী, রূহুল মা‘আনী ফী তাফসীরিল কুর’আনিল ‘আজীম ওয়াস সাব‘উল মাছানী, (বৈরূত : দারুস সাদির, তা.বি.), খ ৬, পৃ. ১০৫।
[10] আব্দুল্লাহ ইবন আহমদ, তানবীরুল মিকবাস মিন তাফসীরি ইবন ‘আব্বাস, (করাচী : কাদিমী কুতুবখানা, তা.বি.), খ. ১, পৃ. ৭১; আল-খাযিন, আবুল হাসান ‘আলী ইব্ন মুহম্মাদ ইবন ইবরাহীম ‘উমার, লুবাবত তা’বীল ফী মা‘আনিয়াত তানযীল ‘তাফসীর আল-খাযিন, বৈরূত : দারুল মারিফাহ, তা.বি.), খ. ৩, পৃ. ২০১।
[11] আল-বাগাভী, আবূ মুহাম্মাদ ইবন মাসউদ মহিউস সুন্নাহ, মা‘আলিমুত তানযীল, (বৈরূত : দারু তায়্যিব, ৪র্থ সংস্করণ, ১৪১৭হি./১৯৯৭), খ. ৩, পৃ. ২২৩; ইবন জরীর আত-তাবারী, জামি‘উল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন, খ. ১২, পৃ. ৩৭৭।
[12] সহীহ বুখারী, আবূ ‘আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন ইসমা‘ঈল, আল-জামে‘উস সহীহ, (বৈরূত : দারু ইবন কাছীর, ১৪০৭হি.), খ. ৬, পৃ. ২৪৯৭।
[13] সহীহ বুখারী, কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১৭৭০।
[14] আহমদ, কিতাবু বাক্বিই মাসনাদিল মুকসিরিন, হাদীস নং ৯৩০৮।
[15] সূরা আশ-শূরা, আয়াত : ৪০।
[16] সহীহ বুখারী, কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১৭৭১।
[17] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৭০।