যিলহজ মাসের ১ম দশ দিন, ঈদ, কুরবানি ও ঈদ পরবর্তী দিনসমূহ
ক্যাটাগরিসমূহ
Full Description
- ভূমিকা
- ইবাদতের মৌসুমগুলো আমরা কীভাবে গ্রহণ করব?
- কুরবানি কাকে বলে?
- কুরবানির ফযীলত
- মৃত ব্যক্তির পক্ষে কুরবানি
- আইয়ামুত তাশরীক এর ফযীলত:
যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন, ঈদ, কুরবানি ও আইয়ামে তাশরীকের দিনসমূহ
জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
عشر ذي الحجة، الأضحية، عيد الأضحى وأيام التشريق
(باللغة البنغالية)
ذاكر الله أبو الخير
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
সূটিপত্র
ভূমিকা.... 4
ইবাদতের মৌসুমগুলো আমরা কীভাবে গ্রহণ করব?. 7
যিলহজ মাসের ১ম দশ দিনের ফযীলত... 9
এ দিনগুলোতে যেসব আমল করা মোস্তাহাব.. 13
১. তাওবা... 13
২. ফরয ও নফল সালাতগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করা... 15
৩. সিয়াম পালন করা: 18
৪. হজ ও উমরা করা... 19
৫. আল্লাহর যিকির করা... 21
৬. তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ.. 23
৭. 'আরাফার দিন সাওম পালন করা... 24
৮. কুরবানির দিন তথা দশ তারিখের আমল.. 25
৯. কুরবানি করা... 27
কুরবানি কাকে বলে?. 28
কুরবানির হুকুম.. 30
কুরবানির ফযীলত... 34
কুরবানির শর্তাবলি.... 35
কুরবানির ওয়াক্ত বা সময়.. 39
মৃত ব্যক্তির পক্ষে কুরবানি... 45
অংশীদারির ভিত্তিতে কুরবানি করা কুরবানি... 48
কুরবানি দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেন.. 50
কুরবানির পশু যবেহ করার নিয়মাবলি.... 53
যবেহ করার সময় যে সকল বিষয় লক্ষণীয়.. 54
কুরবানির গোশত কারা খেতে পারবেন.. 58
আইয়ামুত-তাশরীক ও তার করণীয়.. 61
আইয়ামুত তাশরীক এর ফযীলত... 62
আইয়ামুত তাশরীকে করণীয়.. 65
ঈদুল আজহার বিধান.. 67
ঈদের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কিছু আদব ও আহকাম.. 68
এ দিনগুলোতে সাধারণ ঘটে যাওয়া কিছু বিদ'আত ও ভুল ভ্রান্তি থেকে সকলের সতর্ক থাকা জরুরী 78
মুসলিম ভাইদের প্রতি আহ্বান.. 81
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা.............
এটি যিলহজ মাসের ১ম দশদিনের ফযীলত ও আমল এবং কুরবানী ও কুরবানী পরবর্তী তিন সম্পর্কে একটি মূল্যবান রিসালা এতে এ দিনগুলোর করণীয় ও ফযীলত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে।
ভূমিকা
إِنَّ الْحَمْدُ للهِ ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ ، وَنَعُـوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا ، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا ، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ ، وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلاَ هَادِيَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ
নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তার কাছেই সাহায্য চাই, তার নিকটই ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্টতা ও আমাদের কর্মসমূহের ক্ষতি থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হিদায়াত দেওয়ার কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার ওপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবীদের ওপর এবং যারা কিয়ামত অবধি কল্যাণের সাথে তাদের অনুসরণ করেন তাদের ওপর।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় বান্দাদের প্রতি অধিক দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি তার বান্দাদের যে কোনো উপায়ে ক্ষমা করতে ও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে পছন্দ করেন। এ কারণেই আল্লাহ বান্দাদের জন্য বিভিন্ন আমলের বিনিময় অগণিত অসংখ্য পুরস্কার ঘোষণা করেন। বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ তাদের আমল করার সুযোগ দিয়ে তাদের নাজাতের ব্যবস্থা করেন। যেমন, আল্লাহ তা'আলা রমজান মাসকে স্বীয় বান্দাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের মাস হিসেবে নির্বাচন করেছেন। আবার রমজান মাসের শেষ দশ দিনকে আরও বেশি গুরুত্ব দেন। আবার শেষ দশ দিনের মধ্যে এমন একটি রাত রেখেছেন যে রাতের ইবাদত হাজার রাতের ইবাদতের চেয়ে উত্তম বলে ঘোষণা দেন। রমযন মাসের সাওম পালন কারাকে জাহান্নাম থেকে বাচার ডালস্বরূপ বলা হয়েছে এবং আশুরার সাওম পালন করলে এক বছরের গুনাহ মাপের ঘোষণা দিয়েছেন এবং 'আরাফার দিবসের সাওম পালন করলে পূর্বের ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফের ঘোষণা দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ দেখিয়ে তাদের কোনো না কোনো উপায়ে জান্নাত লাভের পথকে সহজ করেছেন। যাতে বান্দাগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হন। এ ধরনের একটি মৌসুম হলো যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন ও তার পরবর্তী তাশরীকের দিনসমূহ। আল্লাহ তা'আলার অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি নেককার বান্দাদের জন্য এ মৌসুমে স্বীয় বান্দাদের জন্য নেক আমল করার সুযোগ করে দিয়েছেন এবং দিনগুলোতে যে কোনো ধরনের নেক আমল করা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ সুযোগটি একজন বান্দার দীর্ঘ জীবনে বারবার আসে আর যায়। সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি যে আল্লাহর দেওয়া সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ধন্য হতে পারে। আর দুর্ভোগ ও হতাশা তাদের জন্য এ সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারে নি। নিজের ইহকাল ও পরকালের জীবনের জন্য কোনো কিছুই উপার্জন করতে পারে নি।
ইবাদতের মৌসুমগুলো আমরা কীভাবে গ্রহণ করব?
প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে, ইবাদতের মৌসুমগুলোতে বেশি বেশি তাওবা করা। গুনাহ ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা। কারণ, গুনাহ মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রাখে। গুনাহ ব্যক্তির অন্তর ও আল্লাহর মাঝে বাধার সৃষ্টি করে। বান্দার আরও উচিৎ শুভদিনগুলোতে কল্যাণকর কাজ ও এমন সব আমলে নিয়োজিত থাকা, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে সহায়ক হয়। যে আল্লাহর পথে চেষ্টা-মুজাহাদা করবে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য হিদায়াতের সব পথ খুলে দিবেন। তিনি বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ ٦٩﴾ [العنكبوت: ٦٩]
“আর যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমরা অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব"। [সূরা আল-'আনকাবূত, আয়াত: ৬৯]
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣]
“আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে"। [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৩৩]
হে মুসলিম ভাই, এ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর জন্য সজাগ থাকুন, তার প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ রাখুন, তা যেন কোনোভাবেই আপনার থেকে অবহেলায় অতিবাহিত না হয়। অন্যথায় আপনি এমন দিন লজ্জিত হবেন, যে দিনের লজ্জা আপনার কোনো কাজে আসবে না। কারণ, দুনিয়া ছায়ার ন্যায়; এর কোনো স্থায়িত্ব নেই। আজ আমরা আমাদের স্বীয় কর্মস্থলে অবস্থান করছি আগামীকাল অবস্থান নাও করতে পারি। আমাকে সব সময় এ চিন্তা করতে হবে, প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশের দিবসে, আমার গন্তব্য কোথায় হবে, জান্নাত নাকি জাহান্নাম। এ জন্য তোমাকে এ দুনিয়া থেকে আমলের পুঁজি সঞ্চয় করতে হবে। তাদের মত হয়ো না যারা নিজের জন্য যা কল্যাণ সে সম্পর্কে অমনোযোগী। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ نَسُواْ ٱللَّهَ فَأَنسَىٰهُمۡ أَنفُسَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ١٩﴾ [الحشر: ١٩]
“তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছিলেন; আর তারাই হলো ফাসিক"। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১৯]
তুমি তাদের মতো হও, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبٗا وَرَهَبٗاۖ وَكَانُواْ لَنَا خَٰشِعِينَ ٩٠﴾ [الانبياء: ٩٠]
“তারা সৎ কাজে প্রতিযোগিতা করত। আর আমাকে আশা ও ভীতিসহ ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী"। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৯০]
যিলহজ মাসের ১ম দশ দিনের ফযীলত:
১. যিলহজ মাসের ১ম মাসের প্রথম দশদিন আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরকালের পুঁজি সঞ্চয় করা যেতে পারে। এ দিনগুলো গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَٱلۡفَجۡرِ ١ وَلَيَالٍ عَشۡرٖ ٢﴾ [الفجر: ١، ٢]
“কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের"। [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ১-২] ইবন কাসীর রহ. বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যিলহজ মাসের দশ দিন।
২. আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ ٢٨﴾ [الحج : ٢٨]
“যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যা রিযিক হিসেবে দান করেছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে"। [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ২৮]
এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলতে কোনো দিনগুলোকে বুঝানো হয়েছে সে সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহ. বলেন,
“ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা বলেছেন: “নির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন"। বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ما من أيام العمل الصالح فيهن أحب إلى الله من هذه الأيام العشر، فقالوا يا رسول الله، ولا الجهاد في سبيل الله ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم-: ولا الجهاد في سبيل الله، إلا رجل خرج بنفسه وماله فلم يرجع من ذلك بشيء.
“যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মতো অধিক প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোনো আমল নেই। তারা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি তার চেয়ে প্রিয় নয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তির কথা আলাদা যে তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়ে গেল অতঃপর তার প্রাণ ও সম্পদের কিছুই ফিরে এলো না"।[1]
৪. ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট কোনো দিন অধিক প্রিয় নয়, আর না তাতে আমল করা, এ দিনের তুলনায়। সুতরাং তাতে তোমরা বেশি করে তাহলীল, তাকবীর ও তাহমীদ পাঠ কর।[2]
৫. সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ.-এর অভ্যাস ছিল, যিনি পূর্বে বর্ণিত ইবন আব্বাসের হাদীস বর্ণনা করেছেন: যখন যিলহজ মাসরে ১ম দশ দিন প্রবেশ করত, তখন তিনি খুব মুজাহাদা করতেন, যেন তার ওপর তিনি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন।[3]
৬. ইবন হাজার রহ. বলেছেন: যিলহজ মাসের দশ দিনের ফযীলতের তাৎপর্যের ক্ষেত্রে যা স্পষ্ট, তা হচ্ছে এখানে মূল ইবাদতগুলোর সমন্বয় ঘটছে। অর্থাৎ সালাত, সিয়াম, সদকা ও হজ, যা অন্যান্য সময় আদায় করা হয় না।[4]
৭. উলামায়ে কেরাম বলেছেন: যিলহজ মাসের ১ম দশদিন সর্বোত্তম দিন, আর রমযান মাসের শেষ দশ রাত, সব চেয়ে উত্তম রাত।
এ দিনগুলোতে যেসব আমল করা মোস্তাহাব:
১. তাওবা: তাওবা অর্থ ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা। আল্লাহ তা'আলার নাফরমানি থেকে ফিরে আসা, আল্লাহর হুকুমের পাবন্দি করার ওপর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা এবং অতীতের কৃত কর্মের ওপর অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তা ছেড়ে দেওয়া এবং ভবিষ্যতে আর কখনো আল্লাহর নাফরমানি না করা ও তার হুকুমের অবাধ্য না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা। এ দিন গুলোতে তাওবা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَئَِّاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ يَوۡمَ لَا يُخۡزِي ٱللَّهُ ٱلنَّبِيَّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَهُۥۖ نُورُهُمۡ يَسۡعَىٰ بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَبِأَيۡمَٰنِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَتۡمِمۡ لَنَا نُورَنَا وَٱغۡفِرۡ لَنَآۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٨ ﴾ [التحريم: ٨]
“হে মোমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর-বিশুদ্ধ তাওবা; সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দিবেন এবং তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সে দিন আল্লাহ লজ্জা দিবেন না নবীকে এবং তার মুমিন সঙ্গীদেরকে, তাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে ও দক্ষিণ পার্শ্বে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান"। [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৮]
২. ফরয ও নফল সালাতগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করা: অর্থাৎ ফরয ও ওয়াজিবসমূহ সময়-মত সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে আদায় করা, যেভাবে আদায় করেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সকল ইবাদতসমূহ তার সুন্নাত, মোস্তাহাব ও আদব সহকারে আদায় করা। ফরয সালাতগুলো সময় মত সম্পাদন করা, বেশি বেশি করে নফল সালাত আদায় করা। যেহেতু এগুলোই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার সর্বোত্তম মাধ্যম। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«عَلَيْكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ لِلَّهِ، فَإِنَّكَ لَا تَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةً، إِلَّا رَفَعَكَ اللهُ بِهَا دَرَجَةً، وَحَطَّ عَنْكَ بِهَا خَطِيئَةً»
“তুমি বেশি বেশি সাজদা কর, কারণ তুমি এমন যে কোনো সাজদাই কর না কেন তার কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করবেন"।[5] এটা সব সময়রে জন্য প্রযোজ্য। নিয়মিত ফরয ও ওয়াজিবসমূহ আদায়ে যতœবান হওয়া- অর্থাৎ ফরয ও ওয়াজিবসমূহ সময়-মত সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে আদায় করা। যেভাবে আদায় করেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সকল ইবাদতসমূহ তাঁর সুন্নাত, মোস্তাহাব ও আদব সহকারে আদায় করা। হাদীসে এসেছে:
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তা'আলা বলেন,
«من عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب، وما تقرب إلي عبدي بشيء أحب إلي مما افترضته عليه، وما يزال عبدي يتقرب إلي بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها، وإن سألني لأعطينه، ولئن استعاذ بي لأعيذنه ، وما ترددت عن شيء أنا فاعله ترددي عن نفس المؤمن ، يكره الموت وأنا أكره مساءته».
“যে ব্যক্তি আমার কোনো ওয়ালীর সঙ্গে শত্রুতা রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরয ইবাদতের চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারাই সর্বদা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই, আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে আমার কাছে কোনো কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দিই। আমি যে কোনো কাজ করতে চাইলে তাতে কোনো রকম দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ হরণে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে অথচ আমি তার প্রতি কষ্টদায়ক বস্তু দিতে অপছন্দ করি"।[6]
৩. সিয়াম পালন করা: যিলহজ মাসরে প্রথম দশ দিনের সিয়াম পালন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। যেহেতু অন্যান্য নেক আমলরে মধ্যে সিয়ামও অন্যতম, তাই এ দিনগুলোতে খুব যত্নসহকারে সিয়াম পালন করা।
হাফসা রাদিয়াল্লাহু 'আনহা থেকে বর্ণিত,
«أربع لم يكن يدعهن النبي- صلى الله عليه وسلم-: صيام عاشوراء، والعشر، وثلاثة أيام من كل شهر والركعتين قبل الغداة».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেন নি। সেগুলো হলো: আশুরার সাওম, যিলহজের দশ দিনের সাওম, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের সাওম, ও জোহরের পূর্বের দুই রাকাত সালাত"।[7]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«ما من عبد يصوم يوماً في سبيل الله إلا باعد الله بذلك اليوم وجهه عن النار سبعين خريفاً»
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন সাওম পালন করবে, একদিনের সাওমের বিনিময় তার চেহারাকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর খারিফ দূরে রাখবে"[8]।
৪. হজ ও উমরা করা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতের জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। এ দু'টি ইবাদতে রয়েছে পাপের কুফল থেকে আত্মার পবিত্রতা, যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রিয় ও সম্মানিত হতে পারে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من حج فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته أمه»
“যে ব্যক্তি হজ করেছে, তাতে কোনো অশ্লীল আচরণ করে নি ও কোনো পাপে লিপ্ত হয় নি সে সে দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে গেল, যে দিন তার মাতা তাকে প্রসব করেছে"।[9]
হাদীসে আরও এসেছে: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجـنة».
“এক উমরা থেকে অন্য উমরাকে তার মধ্যবর্তী পাপসমূহের কাফ্ফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আর কলুষযুক্ত হজের পুরস্কার হলো জান্নাত"।[10]
৫. আল্লাহর যিকির করা: এ দিনসমূহে অন্যান্য আমলের মাঝে যিকিরের এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, যেমন হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ما من أيام أعظم عند الله ولا أحب إليه من العمل فيهن من هذه العشر، فأكثروا فيهن من التهليل والتكبير والتحميد ».
“এ দশ দিনে (নেক) আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে অধিক প্রিয় ও মহান আর কোনো আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাকবীর (আল্লাহু আকবার) তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি করে আদায় কর"।[11] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ ٢٨﴾ [الحج : ٢٨]
“যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যা রিযিক হিসেবে দান করেছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে"। [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ২৮]
অধিকাংশ আলেম বলেছেন: এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলতে যিলহজের প্রথম দশ দিনকে নির্দেশ করা হয়েছে। এ সময়ে আল্লাহর বান্দাগণ বেশি বেশি করে আল্লাহর প্রশংসা করেন, তার পবিত্রতা বর্ণনা করেন, তার নি'আমতের শুকরিয়া আদায় করেন, কুরবানির পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করে থাকেন।
হাদীসে আছে চারটি বাক্য আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। ১- সুবহানাল্লাহ, ২- আলহামদুলিল্লাহ, ৩- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ৪- আল্লাহু আকবর। এ দিনগুলোতে এ যিকিরগুলো করা যেতে পারে।
৬. তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ: এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মহত্ত্ব ঘোষণার উদ্দেশ্যে তাকবীর পাঠ করা সুন্নাত। এ তাকবীর প্রকাশ্যে ও উচ্চস্বরে মসজিদ, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, বাজারসহ সর্বত্র উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা হবে। তবে মেয়েরা নিম্নস্বরে তাকবীর পাঠ করবে। তাকবীর হলো:
اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لَاإِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الحَمْدُ
আব্দুল্লাহ ইবন উমার ও আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা যিলহজ মাসের প্রথম দশকে বাজারে যেতেন ও তাকবীর পাঠ করতেন, লোকজনও তাদের অনুসরণ করে তাকবীর পাঠ করতেন। অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই দুই প্রিয় সাহাবী লোকজনকে তাকবীর পাঠের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন।[12]
ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন: ইবন উমার ও আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ দশদিন তাকবীর বলতে বলতে বাজারের জন্য বের হতেন, মানুষেরাও তাদের দেখে দেখে তাকবীর বলত। তিনি আরও বলেছেন, ইবন উমার মিনায় তার তাবুতে তাকবীর বলতেন, মসজিদের লোকেরা শুনত, অতঃপর তারা তাকবীর বলত এবং বাজারের লোকেরাও তাদের সাথে তাকবীর বলত। এক পর্যায়ে পুরো মিনা তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠত।
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ দিনগুলোতে মিনায় তাকবীর বলতেন, প্রত্যেক সালাতের পর, বিছানায়, তাঁবুতে মজলিসে ও চলার পথে সশব্দে তাকবীর বলা মোস্তাহাব। যেহেতু উমার, ইবন উমার ও আবূ হুরায়রা সশব্দে তাকবীর বলেছেন।
৭. 'আরাফার দিন সাওম পালন করা: হজ পালনকারী ছাড়া অন্যদের জন্য 'আরাফার দিন সাওম পালন করা। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে 'আরাফার দিনের রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
«احتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده».
“আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, এটি পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছররে গুনাহর কাফ্ফারা হবে"।[13]
৮. কুরবানির দিন তথা দশ তারিখের আমল:
কুরবানির দিনের ফযীলত
[১] এ দিনের একটি নাম হলো ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। যে দিনে হাজীগণ তাদের পশু যবেহ করে হজকে পূর্ণ করেন। হাদীসে এসেছে: ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত,
«أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يوم النحر: [أي يوم هذا]؟ قالوا: يوم النحر، قال: «هذا يوم الحج الأكبر».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন দিন? সাহাবীগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহার বা কুরবানির দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এটা হলো ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন"।[14]
[২] কুরবানির দিনটি হলো বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন কুরত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن أعظم الأيام عند الله تبارك وتعالى: يوم النحر ثم يوم القر»
“আল্লাহর নিকট দিবসসমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হলো কুরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন"।[15]
এ দিনগুলোর ব্যাপারে অনেক মুসলিমই গাফেল, অথচ অনেক আলেমের মতে নিঃর্শতভাবে এ দিনগুলো উত্তম, এমনকি 'আরাফার দিন থেকেও। ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেছেন: আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন, নহরের দিন। আর তাই হলো হাজ্জে আকবারের দিন। যেমন, সুনানে আবূ দাঊদে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় দিন হলো নহরের দিন, অতঃপর মিনায় অবস্থানের দিন। অর্থাৎ এগারতম দিন। কেউ কেউ বলেছেন: 'আরাফার দিন তার থেকে উত্তম। কারণ, সে দিনের সিয়াম দুই বছরের গুনাহের কাফ্ফারা। আল্লাহ 'আরাফার দিন যে পরিমাণ লোক জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন, তা অন্য কোনো দিন করেন না। আরও এ জন্যও যে, আল্লাহ তা'আলা সে দিন বান্দার নিকটবর্তী হন এবং 'আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন। তবে প্রথম বক্তব্যই সঠিক, কারণ হাদীস তারই প্রমাণ বহন করে, এর বিরোধী কিছু নেই। যাই হোক, উত্তম হয় 'আরাফার দিন নতুবা মিনার দিন, হাজী বা বাড়িতে অবস্থানকারী সবার উচিৎ সে দিনের ফযীলত অর্জন করা এবং তার মুহুর্তগুলো থেকে উপকৃত হওয়া।
৯. কুরবানি করা:
কুরবানি কাকে বলে?
কুরবানি বলা হয় ঈদুল আজহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের লক্ষে যবেহ করা।
ইসলামি শরী'আতে এটি ইবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কুরআন, হাদীস ও মুসলিম উম্মাহ'র ঐক্যমত্য দ্বারা প্রমাণিত। যেমন কুরআন মজীদে এসেছে:
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ ﴾ [الكوثر: ٢]
“তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও (পশু) নাহর (কুরবানি) কর।" [সূরা আল-কাউসার, আয়াত: ২]
﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣﴾ [الانعام: ١٦٢، ١٦٣]
“বলুন, আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের রব আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোনো শরীক নেই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।" [সূরা আল-আন'আম, আয়াত: ১৬২, ১৬৩]
হাদীসে এসেছে: বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من ذبح بعد الصلاة، فقد تم نسكه، وأصاب سنة المسلمين».
“যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পর কুরবানির পশু যবেহ করল তার কুরবানি পরিপূর্ণ হলো ও সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল"।[16]
«ضحى النبي صلى الله عليه وسلم بكبشين أملحين، ذبحهما بيده، وسمى وكبر، ووضع رجله على صفاحهما».
“আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে দু'টি সাদা কালো বর্ণের দুম্বা কুরবানি করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর বলেছেন। তিনি পা দিয়ে দুটো কাঁধের পাশ চেপে রাখেন।[17] তবে বুখারীতে 'সাদা-কালো' শব্দের পূর্বে 'শিং ওয়ালা' কথাটি উল্লেখ আছে।
কুরবানির হুকুম:
কুরবানির হুকুম কী? ওয়াজিব না সুন্নত? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে এবং তাদের দুটো মত রয়েছে।
প্রথম মত: কুরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবূ হানিফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে, তারাও ওয়াজিব বলেছেন।
দ্বিতীয় মত: কুরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটি অধিকাংশ আলেমের মত এবং ইমাম মালেক ও শাফেঈ রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন: সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কুরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ। যদি কোনো জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কুরবানি পরিত্যাগ করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা কুরবানি হলো ইসলামের একটি শি'য়ার বা মহান নিদর্শন।
যারা কুরবানি ওয়াজিব বলেন তাদের দলীল:
[এক] আল্লাহ তা'আলা নির্দেশ দিয়েছেন:
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢﴾ [الكوثر: ٢]
“তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং (পশু) কুরবানি কর।" [সূরা আল-কাউসার, আয়াত: ২] আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব।
[দুই] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من وجد سعة ولم يضح، فلا يقربن مصلانا».
“যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে"[18]
যারা কুরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদীস একটি সতর্কবাণী। তাই কুরবানি ওয়াজিব।
[তিন] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يا أيها الناس: إن على كل أهل بيت في كل عام أضحية».
“হে মানব সকল! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হলো প্রতি বছর কুরবানি দেওয়া"।[19]
আর যারা কুরবানি দেওয়া সুন্নাত বলেন তাদের দলীল হচ্ছে:
[এক] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا رأيتم هلال ذي الحجة، وأراد أحدكم أن يضحي، فليمسك عن شعره وأظفاره، حتى يضحي ».
“তোমাদের মাঝে যে কুরবানি করতে চায়, যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কুরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোনো চুল ও নখ না কাটে।"[20]
এ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের 'যে কুরবানি করতে চায়' কথা দ্বারা বুঝে আসে এটা ওয়াজিব নয়।
[দুই] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের মাঝে যারা কুরবানি করে নি তাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করেছেন। তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেওয়া যায় যে কুরবানি ওয়াজিব নয়।
শাইখ ইবন উসাইমীন রহ. উভয় পক্ষের দলীল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন, এ সকল দলীল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয় বরং একটা অন্যটার সম্পূরক।
সারকথা হলো, যারা কুরবানিকে ওয়াজিব বলেছেন তাদের প্রমাণাদি অধিকতর শক্তিশালী। আর ইমাম ইবন তাইমিয়ার মত এটাই[21] আর বর্তমান কালের শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ উসাইমীন এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
কুরবানির ফযীলত
[ক] কুরবানি দাতা নবী ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন।
[খ] পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কুরবানি দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمۡ لِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٧﴾ [الحج : ٣٧]
“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন মুহসিনদেরকে।" [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩৭]
[গ] পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কুরবানির গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না। কুরবানি না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কুরবানি আদায় হবে না।
কুরবানির শর্তাবলি:
[১] এমন পশু দ্বারা কুরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হলো উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। এ গুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় 'বাহীমাতুল আন'আম।' যেমন, আল্লাহ বলেন,
﴿وَلِكُلِّ أُمَّةٖ جَعَلۡنَا مَنسَكٗا لِّيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۗ ٣٤ ﴾ [الحج : ٣٤]
“আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর ওপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।" [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩৪] হাদীসে এসেছে: জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تذبحوا إلا مسنة، إلا أن تعسر عليكم، فتذبحوا جذعة من الضأن».
“তোমরা অবশ্যই এক বছরের বয়সের ছাগল কুরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কুরবানি করতে পার"।[22] আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোনো জন্তু কুরবানি করেন নি ও কুরবানি করতেও বলেন নি। তাই কুরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে। ইমাম মালিক রহ.-এর মতে কুরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হলো শিং ওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের দুম্বা কুরবানি করেছেন বলে বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে এসেছে। উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কুরবানি দেওয়া যায়। যেমন, হাদীসে এসেছে: জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
«نحرنا بالحديبية مع النبي صلى الله عليه وسلم البدنة عن سبعة، والبقرة عن سبعة».
“আমরা হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানি দিয়েছি।"[23]
গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হলো কুরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হওয়া।
[২] শরী'আতের দৃষ্টিতে কুরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের।
[৩] কুরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদীসে এসেছে: বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন
«قام فينا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: «أربع لا تجوز في الأضاحي،- وفي رواية: تجزىء – العوراء البين عورها، والمريضة البين مرضها، والعرجاء البين ضلعها، والكسيرة التي لا تنقى».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন: চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানি জায়েয হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না -অন্ধ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত; যার কোনো অঙ্গ ভেঙ্গে গেছে। নাসাঈ-এর বর্ণনায় 'আহত' শব্দের স্থলে 'পাগল' উল্লেখ আছে।[24]
আবার পশুর এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কুরবানি আদায় হয় কিন্তু মাকরূহ হবে। এ সকল দোষত্রুটি যুক্ত পশু কুরবানি না করা ভাল। সে ত্রুটিগুলো হলো শিং ভাঙ্গা, কান কাটা, লেজ কাটা, ওলান কাটা, লিঙ্গ কাটা ইত্যাদি।
[৪] যে পশুটি কুরবানি করা হবে তার ওপর কুরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানাসত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কুরবানি আদায় হবে না।
কুরবানির ওয়াক্ত বা সময়:
কুরবানি নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পর্কিত একটি ইবাদত। এ সময়ের পূর্বে যেমন কুরবানি আদায় হবে না তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না।
যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কুরবানির সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকে। যদি ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে কুরবানির পশু যবেহ করা হয় তাহলে কুরবানি আদায় হবে না। যেমন, হাদীসে এসেছে: বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يخطب فقال: «إن أول ما نبدأ به من يومنا هذا، أن نصلى ثم نرجع فننحر، فمن فعل هذا فقد أصاب سنتنا، ومن نحر قبل أن يصلي فإنما هو لحم قدمه لأهله، ليس من النسك في شيء».
“আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাতে বলেছেন: এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অতঃপর সালাত থেকে ফিরে আমরা কুরবানি করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে যবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কুরবানির কিছু আদায় হলো না"।[25]
সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে কুরবানি পশু যবেহ না করে সালাতের খুতবা দু'টি শেষ হওয়ার পর যবেহ করা ভালো। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকম করেছেন। হাদীসে এসেছে: জুনদাব ইবন সুফিয়ান আল-বাজালী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন:
«صلى النبى صلى الله عليه وسلم يوم النحر، ثم خطب ثم ذبح ...»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দিন সালাত আদায় করলেন, অতঃপর খুতবা দিলেন তারপর পশু যবেহ করলেন"।[26]
জুনদুব ইবন সুফিয়ান বলেন,
«شهدت النبي صلى الله عليه وسلم يوم النحر قال: «من ذبح قبل أن يصلي فليعد مكانها أخرى، ومن لم يذبح فليذبح».
“আমি কুরবানির দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি নামাজের পূর্বে যবেহ করেছে সে যেন আবার অন্য স্থানে যবেহ করে। আর যে যবেহ করে নি সে যেন যবেহ করে"।[27]
আর কুরবানির সময় শেষ হবে যিলহজ মাসের তেরো তারিখের সূর্যাস্তের সাথে সাথে। অতএব, কুরবানির পশু যবেহ করার সময় হলো চার দিন। যিলহজ মাসের দশ, এগারো, বার ও তেরো তারিখ। এটাই ওলামায়ে কেরামের নিকট সর্বোত্তম মত হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ,
এক. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ ٢٨ ﴾ [الحج : ٢٨]
“যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে।" [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ২৮]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী রহ. বলেন, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন: 'এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে বুঝায় কুরবানির দিন ও তার পরবর্তী তিনদিন।'
অতএব, এ দিনগুলো আল্লাহ তা'আলা কুরবানির পশু যবেহ করার জন্য নির্ধারণ করেছেন।
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
كل أيام التشريق ذبح.
“আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন যবেহ করা যায়।"[28] আইয়ামে তাশরীক বলতে কুরবানির পরবর্তী তিন দিনকে বুঝায়।
তিন. কুরবানির পরবর্তী তিন দিনে সাওম পালন জায়েয নয়। এ দ্বারা বুঝে নেওয়া যায় যে এ তিন দিনে কুরবানি করা যাবে।
চার. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 'আইয়ামে তাশরীক হলো খাওয়া, পান করা ও আল্লাহর যিকির করার দিন।'
এ দ্বারা বুঝে নিতে পারি যে, যে দিনগুলো আল্লাহ খাওয়ার জন্য নির্ধারণ করেছেন সে দিনগুলোতে কুরবানির পশু যবেহ করা যেতে পারে।
পাঁচ. সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়, কুরবানির পরবর্তী তিনদিন কুরবানির পশু যবেহ করা যায়।
ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, আলী ইবন আবি তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: 'কুরবানির দিন হলো ঈদুল আজহার দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন।' অধিকাংশ ইমাম ও আলেমদের এটাই মত। যারা বলেন, কুরবানির দিন হলো মোট তিন দিন; যিলহজ মাসের দশ, এগারো ও বার তারিখ, বার তারিখের পর যবেহ করলে কুরবানি হবে না, তাদের কথার সমর্থনে কোনো প্রমাণ নেই ও মুসলিমদের ঐক্যমত্য [ইজমা'] প্রতিষ্ঠিত হয় নি।
মৃত ব্যক্তির পক্ষে কুরবানি
মূলত কুরবানির প্রচলন জীবিত ব্যক্তিদের জন্য। যেমন আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ নিজেদের পক্ষে কুরবানি করেছেন। অনেকের ধারণা কুরবানি শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য করা হবে। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। তবে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কুরবানি করা জায়েয ও একটি সাওয়াবের কাজ। কুরবানি একটি সদকা। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সদকা করা যায় তেমনি তার নামে কুরবানিও দেওয়া যায়।
যেমন, মৃত ব্যক্তির জন্য সদকার বিষয়ে হাদীসে এসেছে: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,
«رجلا أتى النبى صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله: إن أمي افتلتت نفسها ولم توصى، وأظنها لو تكلمت تصدقت، أفلها أجر إن تصدقت عنها ؟ قال: «نعم».
“এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে রাসূল! আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেন নি। আমার মনে হয় তিনি কোনো কথা বলতে পারলে অসিয়ত করে যেতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাতে কি তার সাওয়াব হবে? তিনি উত্তর দিলেন: হ্যাঁ"।[29]
মৃত ব্যক্তির জন্য এ ধরনের সদকা ও কল্যাণমূলক কাজের যেমন যথেষ্ট প্রয়োজন ও তেমনি তা তার জন্য উপকারী।
এমনিভাবে একাধিক মৃত ব্যক্তির জন্য সাওয়াব প্রেরণের উদ্দেশ্যে একটি কুরবানি করা জায়েয আছে। অবশ্য যদি কোনো কারণে মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য পূর্ণ একটি কুরবানি করতে হবে।
অনেক সময় দেখা যায়, ব্যক্তি নিজেকে বাদ দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানি করেন। এটা মোটেই ঠিক নয়। ভালো কাজ নিজেকে দিয়ে শুরু করতে হয় তারপর অন্যান্য জীবিত ও মৃত ব্যক্তির জন্য করা যেতে পারে। যেমন হাদীসে এসেছে: আয়েশা ও আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত,
«أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا أراد أن يضحي، اشترى كبشين عظيمين سمينين أقرنين أملحين موجوئين، [مخصيين] فذبح أحدهما عن أمته، لمن شهد لله بالتوحيد، وشهد له بالبلاغ، وذبح آخر عن محمد، وعن آل محمد- صلى الله عليه وسلم-».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরবানি দিতে ইচ্ছা করলেন তখন দুটো দুম্বা ক্রয় করলেন। যা ছিল বড়, হৃষ্টপুষ্ট, শিং ওয়ালা, সাদা-কালো বর্ণের এবং খাসি। একটি তিনি তার ঐ সকল উম্মতের জন্য কুরবানি করলেন; যারা আল্লাহর একত্ববাদ ও তার রাসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যটি তার নিজের ও পরিবারবর্গের জন্য কুরবানি করেছেন"।[30]
মৃত ব্যক্তি যদি তার সম্পদ থেকে কুরবানি করার অসিয়ত করে যান তবে তার জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।
অংশীদারির ভিত্তিতে কুরবানি করা কুরবানি: যাকে 'শরীকে কুরবানি দেওয়া' বলা হয়।
ভেড়া, দুম্বা, ছাগল দ্বারা এক ব্যক্তি একটা কুরবানি করতে পারবেন। আর উট, গরু, মহিষ দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে সাতটি কুরবানি করা যাবে। ইতোপূর্বে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে।
অংশীদারি ভিত্তিতে কুরবানি করার দু'টি পদ্ধতি হতে পারে:
[এক] সওয়াবের ক্ষেত্রে অংশীদার হওয়া। যেমন কয়েক জন মুসলিম মিলে একটি বকরি ক্রয় করল। অতঃপর একজনকে ঐ বকরির মালিক বানিয়ে দিল। বকরির মালিক বকরিটি কুরবানি করল। যে কজন মিলে বকরি খরিদ করেছিল সকলে সাওয়াবের অংশীদার হলো।
[দুই] মালিকানার অংশীদারির ভিত্তিতে কুরবানি। দু'জন বা ততোধিক ব্যক্তি একটি বকরি কিনে সকলেই মালিকানার অংশীদার হিসেবে কুরবানি করল। এ অবস্থায় কুরবানি শুদ্ধ হবে না। অবশ্য উট, গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি জায়েয আছে।
মনে রাখতে হবে কুরবানি হলো একটি ইবাদত ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের উপায়। তাই তা আদায় করতে হবে সময়, সংখ্যা ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে শরী'আত অনুমোদিত নিয়মাবলি অনুসরণ করে। কুরবানির উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়, শুধু মানুষের উপকার করা নয় বা শুধু সদকা [দান] নয়। কুরবানির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একটি মহান নিদর্শন তার রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা।
তাই আমরা দেখলাম কীভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোশতের বকরি ও কুরবানির বকরির মাঝে পার্থক্য নির্দেশ করলেন। তিনি বললেন যা সালাতের পূর্বে যবেহ হলো তা বকরির গোশত আর যা সালাতের পরে যবেহ হলো তা কুরবানির গোশত।
কুরবানি দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেন:
যখন কেউ কুরবানি পেশ করার ইচ্ছা করে আর যিলহজ মাস প্রবেশ করে। তার জন্য চুল, নখ অথবা চামড়ার কোনো অংশ কাটা থেকে বিরত থাকবে, যতক্ষণ না কুরবানি করবে।
হাদীসে এসেছে: উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا رأيتم هلال ذي الحجة، وأراد أحدكم أن يضحي، فليمسك عن شعره وأظفاره» . [رواه مسلم] وفي رواية له: « فلا يمس من شعره وبشره شيئا»
“তোমাদের মাঝে যে কুরবানি করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।" ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তার অন্য একটি বর্ণনায় আছে “সে যেন চুল ও চামড়া থেকে কোনো কিছু স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় আছে “কুরবানির পশু যবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে।"[31]
কুরবানি দাতার পরিবারের লোক জনের নখ, চুল ইত্যাদি কাঁটাতে কোনো সমস্যা নেই।
কোনো কুরবানি দাতা যদি তার চুল, নখ অথবা চামড়ার কোনো অংশ কেটে ফেলে তার জন্য উচিৎ তাওবা করা, পুনরাবৃত্তি না করা, তবে এ জন্য কোনো কাফফারা নেই এবং এ জন্য কুরবানিতে কোনো সমস্যা হবে না। আর যদি ভুলে অথবা না জানার কারণে অথবা অনিচ্ছাসত্বে কোনো চুল পড়ে যায়, তার কোনো গুনাহ হবে না। আর যদি সে কোনো কারণে তা করতে বাধ্য হয়, তাও তার জন্য জায়েয, এ জন্য তার কোনো কিছু প্রদান করতে হবে না। যেমন নখ ভেঙ্গে গেল, ভাঙ্গা নখ তাকে কষ্ট দিচ্ছে সে তা কর্তন করতে পারবে, তদ্রূপ কারো চুল লম্বা হয়ে চোখের উপর চলে আসছে সেও চুল কাটতে পারবে অথবা কোনো চিকিৎসার জন্যও চুল ফেলতে পারবে।
কুরবানি দাতা চুল ও নখ না কাটার নির্দেশে কি হিকমত রয়েছে এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরাম অনেক কথা বলেছেন। অনেকে বলেছেন: কুরবানি দাতা হজ করার জন্য যারা এহরাম অবস্থায় রয়েছেন তাদের আমলে যেন শরিক হতে পারেন, তাদের সাথে একাত্মতা বজায় রাখতে পারেন।
ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেছেন: 'কুরবানি দাতা চুল ও নখ বড় করে তা যেন পশু কুরবানি করার সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানি [ত্যাগ] করায় অভ্যস্ত হতে পারেন এজন্য এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।' যদি কেউ যিলহজ মাসের প্রথম দিকে কুরবানি করার ইচ্ছা না করে বরং কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর কুরবানির নিয়ত করল সে কি করবে? সে নিয়ত করার পর থেকে কুরবানির পশু যবেহ পর্যন্ত চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে।
কুরবানির পশু যবেহ করার নিয়মাবলি:
কুরবানি দাতা নিজের কুরবানির পশু নিজেই যবেহ করবেন, যদি তিনি ভালোভাবে যবেহ করতে পারেন। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে যবেহ করেছেন। আর যবেহ করা আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম। তাই প্রত্যেকের নিজের কুরবানি নিজে যবেহ করার চেষ্টা করা উচিৎ।
ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন: 'আবূ মূসা আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কুরবানির পশু যবেহ করেন।' তার এ নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত হয় মেয়েরা কুরবানির পশু যবেহ করতে পারেন। তবে কুরবানি পশু যবেহ করার দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করা জায়েয আছে। কেননা সহীহ মুসলিমের হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেষট্টিটি কুরবানির পশু নিজ হাতে যবেহ করে বাকিগুলো যবেহ করার দায়িত্ব আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অর্পণ করেছেন।
যবেহ করার সময় যে সকল বিষয় লক্ষণীয়:
[১] যা যবেহ করা হবে তার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে, তাকে আরাম দিতে হবে। যাতে সে কষ্ট না পায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। হাদীসে এসেছে: শাদ্দাদ ইবন আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن الله كتب الإحسان على كل شيء، فإذا قتلتم فأحسنوا القتل، وإذا ذبحتم، فأحسنوا الذبح، وليحد أحدكم شفرته، فليرح ذبيحته ».
“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব, তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে আর যখন যবেহ করবে তখনও তা সুন্দরভাবে করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা যবেহ করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি দেয়"।[32]
[২] যদি উট যবেহ করতে হয় তবে তা নহর করবে। নহর হলো উটটি তিন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে আর সম্মুখের বাম পা বাধা থাকবে। তার বুকে ছুরি চালানো হবে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন:
﴿فَٱذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَيۡهَا صَوَآفَّۖ ٣٦﴾ [الحج : ٣٦]
“সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় তাদের ওপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর।" [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩৬]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এর অর্থ হলো তিন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সামনের বাম পা বাধা থাকবে।
উট ছাড়া অন্য জন্তু হলে তা তার বাম কাতে শোয়াবে। ডান হাত দিয়ে ছুরি চালাবে। বাম হাতে জন্তুর মাথা ধরে রাখবে। মোস্তাহাব হলো যবেহকারী তার পা জন্তুটির ঘারে রাখবে। যেমন ইতোপূর্বে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত বুখারীর হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।
[৩] যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ إِن كُنتُم بَِٔايَٰتِهِۦ مُؤۡمِنِينَ ١١٨﴾ [الانعام: ١١٨]
“যার ওপর আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর।" [সূরা আল-আন'আম, আয়াত: ১১৮] যবেহ করার সময় তাকবীর বলা মোস্তাহাব। যেমন হাদীসে এসেছে: জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
«... وأتى بكبش ذبحه رسول الله صلى الله عليه وسلم بيده وقال: «بِسْمَ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللهُمَّ هَذَا عَنِّيْ وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِيْ».
“...একটি দুম্বা আনা হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে যবেহ করলেন এবং বললেন 'বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানি করতে পারে নি তাদের পক্ষ থেকে।" [33] অন্য হাদীসে এসেছে:
«ضحى رسول الله- صلى الله عليه وسلم- بكبشين أملحين أقرنين، ويسمى ويكبر».
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'টি শিং ওয়ালা ভেড়া যবেহ করলেন, তখন বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবার বললেন।"[34] যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর পাঠের পর—اللّهُمَّ هَذَا مِنْكَ وَلَكَ—[হে আল্লাহ এটা তোমার তরফ থেকে, তোমারই জন্য] বলা যেতে পারে। যার পক্ষ থেকে কুরবানি করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দো'আ করা জায়েয আছে। এ ভাবে বলা -'হে আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবুল করে নাও।' যেমন হাদীসে এসেছে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দুম্বা যবেহ করার সময় বললেন:
«بِسْمِ اللهِ، اَللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ، وَآلِ مُحَمَّدٍ، وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ»
“আল্লাহ নামে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করে নিন।"[35]
কুরবানির গোশত কারা খেতে পারবেন:
কুরবানির গোসত কুরবানি দাতা নিজে খাবেন, ফকির মিসকিনকে দান করবেন এবং আত্মীয় স্বজনদের উপহার হিসেবে দিতে পারবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿فَكُلُواْ مِنۡهَا وَأَطۡعِمُواْ ٱلۡبَآئِسَ ٱلۡفَقِيرَ ٢٨ ﴾ [الحج : ٢٨]
“অতঃপর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।" [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ২৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন:
«كلوا وأطعموا وادخروا».
“তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।"[36]
'আহার করাও' বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্তকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেওয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এর পরিমাণ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদীসে কিছু বলা হয় নি। তাই ওলামায়ে কেরাম বলেছেন: কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মোস্তাহাব।
কুরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। 'কুরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না' -বলে যে হাদীস রয়েছে তার হুকুম রহিত হয়ে গেছে। তাই যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
তবে ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ. এ বিষয়ে একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: সংরক্ষণ নিষেধ হওয়ার কারণ হলো দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষের সময় তিন দিনের বেশি কুরবানির গোশত সংরক্ষণ করা জায়েয হবে না। তখন 'সংরক্ষণ নিষেধ' সম্পর্কিত হাদীস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর যদি দুর্ভিক্ষ না থাকে তবে যতদিন ইচ্ছা কুরবানি দাতা কুরবানির গোশত সংরক্ষণ করে খেতে পারেন। তখন 'সংরক্ষণ নিষেধ রহিত হওয়া' সম্পর্কিত হাদীস অনুযায়ী আমল করা হবে।
কুরবানির পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোনো কিছু বিক্রি করা জায়েয নয়। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির গোশত দেওয়া জায়েয নয়। হাদীসে এসেছে:
«ولا يعطى في جزارتها شيئا».
“তার প্রস্তুত করণে তার থেকে কিছু দেওয়া হবে না।"[37] তবে দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে কিছু দিলে তা না-জায়েয হবে না।
আইয়ামুত-তাশরীক ও তার করণীয়:
আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয় কুরবানির পরবর্তী তিন দিনকে অর্থাৎ যিলহজ মাসের এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয়। তাশরীক শব্দের অর্থ শুকানো। মানুষ এ দিনগুলোতে গোশত শুকাতে দিয়ে থাকে বলে এ দিনগুলোর নাম 'আইয়ামুত-তাশরীক' বা 'গোশত শুকানোর দিন' নামে নামকরণ করা হয়েছে।
আইয়ামুত তাশরীক এর ফযীলত:
এ দিনগুলোর ফযীলত সম্পর্কে যে সকল বিষয় এসেছে তা নিচে আলোচনা করা হলো:
[১] এ দিনগুলো ইবাদত-বন্দেগি, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জিকির ও তার শুকরিয়া আদায়ের দিন। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ ٢٠٣﴾ [البقرة: ٢٠٣]
“তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করবে।" [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২০৩] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী রহ. বলেন, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
«الأيام المعدودات: أيام التشريق».
“নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে আইয়ামুত-তাশরীককে বুঝানো হয়েছে।" [38]
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন: ইবন আব্বাসের এ ব্যাখ্যা গ্রহণে কারো কোনো দ্বি-মত নেই। আর মূলত এ দিনগুলো হজের মওসুমে মিনাতে অবস্থানের দিন। কেননা হাদীসে এসেছে:
«...أيام منى ثلاثة: فمن تعجل في يومين فلا إثم عليه ومن تأخر فلا إثم عليه».
“মিনায় অবস্থানের দিন হলো তিন দিন। যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দু দিনে চলে আসে তবে তার কোনো পাপ নেই। আর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোনো পাপ নেই"।[39] হাদীসে এসেছে: নাবীশা হাজালী থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أيام التشريق أيام أكل وشرب وذكر الله»
“আইয়ামুত-তাশরীক হলো খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিকিরের দিন।"[40]
ইমাম ইবন রজব রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন: আইয়ামুত-তাশরীক এমন কতগুলো দিন যাতে ঈমানদারদের দেহের নি'আমত ও স্বাচ্ছন্দ্য এবং মনের নি'আমত তথা স্বাচ্ছন্দ্য একত্র করা হয়েছে। খাওয়া-দাওয়া হলো দেহের খোরাক আর আল্লাহর যিকির ও শুকরিয়া হলো হৃদয়ের খোরাক। আর এভাবেই নি'আমতের পূর্ণতা লাভ করল এ দিনসমূহে।
[২] আইয়ামুত-তাশরীকের দিনগুলো ঈদের দিন হিসেবে গণ্য। যেমন হাদীসে এসেছে: উকবাহ ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يوم عرفة، ويوم النحر، وأيام منى عيدنا أهل الإسلام، وهي أيام أكل وشرب».
“আরাফা দিবস, কুরবানির দিন ও মিনার দিনসমূহ (কুরবানি পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলাম অনুসারীদের ঈদের দিন।"[41]
[৩] এ দিনসমূহ যিলহজ মাসের প্রথম দশকের সাথে লাগানো। যে দশক খুবই ফযীলতপূর্ণ। তাই এ কারণেও এর যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে।
[৪] এ দিনগুলোতে হজের কতিপয় আমল সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এ কারণেও এ দিনগুলো ফযীলতের অধিকারী।
আইয়ামুত তাশরীকে করণীয়:
এ দিনসমূহ যেমনি ইবাদত-বন্দেগি, যিকির-আযকারের দিন তেমনি আনন্দ-ফুর্তি করার দিন। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 'আইয়ামুত-তাশরীক হলো খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহর যিকিরের দিন।'
এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেওয়া নি'আমত নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করার মাধ্যমে তার শুকরিয়া ও যিকির আদায় করা। যিকির আদায়ের কয়েকটি পদ্ধতি হাদীসে এসেছে।
[১] সালাতের পর তাকবীর পাঠ করা। এবং সালাত ছাড়াও সর্বদা তাকবীর পাঠ করা। এ তাকবীর আদায়ের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে এ দিনগুলো আল্লাহর যিকিরের দিন। আর এ যিকিরের নির্দেশ যেমন হাজীদের জন্য তেমনই যারা হজ পালনরত নন তাদের জন্যও।
[২] কুরবানি ও হজের পশু যবেহ করার সময় আল্লাহ তা'আলার নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করা।
[৩] খাওয়া-দাওয়ার শুরু ও শেষে আল্লাহ তা'আলার জিকির করা। আর এটা তো সর্বদা করার নির্দেশ রয়েছে তথাপি এ দিনগুলোতে এর গুরুত্ব বেশি দেওয়া। এমনিভাবে সকল কাজ ও সকাল-সন্ধ্যার যিকিরগুলোর প্রতি যতœবান হওয়া।
[৪] হজ পালন অবস্থায় কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহ তা'আলার তাকবীর পাঠ করা।
[৫] এ গুলো ছাড়াও যে কোনো সময় ও যে কোনো অবস্থায় আল্লাহর যিকির করা।
ঈদুল আজহার বিধান:
মুসলিম ভাই, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করছি যে, তিনি তোমাকে দীর্ঘজীবি করেছেন, যার ফলে তুমি আজকের এ দিনগুলোতে উপনীত হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য ইবাদত ও নেক আমল করার সুযোগ পেয়েছ।
ঈদ এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য এবং দীনের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। তোমার দায়িত্ব এটা গুরুত্ব ও সম্মানসহ গ্রহণ করা। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢﴾ [الحج : ٣٢]
“এটাই হলো আল্লাহর বিধান; যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে। নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই"। [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩২]
ঈদের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কিছু আদব ও আহকাম:
১. তাকবীর: 'আরাফার দিনের ফজর থেকে শুরু করে তাশরীকের দিনের শেষ পর্যন্ত, তথা যিলহজ মাসের তেরো তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবীর বলা। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ ٢٠٣﴾ [البقرة: ٢٠٣]
“আর তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিনসমূহে।" [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২০৩] তাকবীর বলার পদ্ধতি:
الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله والله أكبر، الله أكبر ولله الحمد
আল্লাহর যিকির বুলন্দ ও সর্বত্র ব্যাপক করার নিয়তে পুরুষদের জন্য মসজিদ, বাজার, বাড়িতে ও সালাতের পশ্চাতে উচ্চ স্বরে তাকবীর পাঠ করা সুন্নত।
২. কুরবানি করা: ঈদের দিন ঈদের সালাতের পর কুরবানি করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من ذبح قبل أن يصلي فليعد مكانها أخرى، ومن لم يذبح فليذبح»
“যে ব্যক্তি ঈদের আগে যবেহ করল, তার উচিৎ তার জায়গায় আরেকটি কুরবানি করা। আর যে এখনো কুরবানি করে নি, তার উচিৎ এখন কুরবানি করা।"[42]
কুরবানি করার সময় চার দিন। অর্থাৎ নহরের দিন এবং তার পরবর্তী তাশরীকের তিন দিন। যেহেতু রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«كل أيام التشريق ذبح»
“তাশরীকের দিন কুরবানির দিন"।[43]
৩. পুরুষদের জন্য গোসল করা ও সুগন্ধি মাখা: সুন্দর কাপড় পরিধান করা, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান না করা, কাপড়ের ক্ষেত্রে অপচয় না করা। দাঁড়ি না মুণ্ডানো, এটা হারাম। নারীদের জন্য ঈদগাহে যাওয়া বৈধ, তবে আতর ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার করবে। মুসলিম নারীদের জন্য কখনো শোভা পায় না যে, সে আল্লাহর ইবাদতের জন্য তাঁরই গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ধর্মীয় কোনো ইবাদতে অংশ গ্রহণ করবে। যেমন, সৌন্দর্য প্রদর্শন, সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদি করে ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া।
বস্তুত ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা মোস্তাহাব। কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। যে কারণে জুমু'আর দিন গোসল করা মোস্তাহাব সে কারণেই ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্বে গোসল করাও মোস্তাহাব। হাদীসে এসেছে: ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত,
«أنه كان يغتسل يوم الفطر قبل أن يغدوا إلى المصلى. رواه الإمام مالك في أول كتاب العيدين وقال سعيد بن المسيب سنة الفطر ثلاث: المشي إلى المصلى، والأكل قبل الخروج، والاغتسال».
“তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।[44] সায়ীদ ইবন মুসাইয়াব রহ. বলেন: ঈদুল ফিতরের সুন্নাত তিনটি: ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া, ঈদগাহের দিকে রওয়ানার পূর্বে কিছু খাওয়া, গোসল করা। এমনিভাবে সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব"।[45]
৪. কুরবানির গোস্ত ভক্ষণ করা। ঈদুল আজহার দিন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা খেতেন না, যতক্ষণ না তিনি ঈদগাহ থেকে ফিরে আসতেন, অতঃপর তিনি কুরবানি গোস্ত থেকে ভক্ষণ করতেন।
তাই সুন্নাত হলো ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা। আর ঈদুল আজহাতে ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পর কুরবানির গোশত খাওয়া সুন্নাত। হাদীসে এসেছে: বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
«كان النبي صلى الله عليه وسلم لا يخرج يوم الفطر حتى يأكل، ولا يأكل يوم الأضحى حتى يرجع، فيأكل من أضحيته».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানির গোশত খেতেন"।[46]
৫. সম্ভব হলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া: ঈদগাহতেই সালাত আদায় করা সুন্নত। তবে বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে মসজিদে পড়া বৈধ, যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পড়েছেন।
ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া উচিৎ। যাতে ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী স্থানে বসা যায় ও ভালো কাজ অতি তাড়াতাড়ি করার সাওয়াব অর্জন করা যায়, সাথে সাথে সালাতের অপেক্ষায় থাকার সাওয়াব পাওয়া যাবে। ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া হলো মোস্তাহাব। হাদীসে এসেছে: আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
من السنة أن تخرج إلى العيد ماشيا. رواه الترمذي وحسنه وقال: والعمل على هذا عند أكثر أهل العلم: يستحبون أن يخرج الرجل إلى العيد ماشيا، وأن لا يركب إلا بعذر.
“সুন্নাত হলো ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। ইমাম তিরমিযি হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন হাদীসটি হাসান। তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ আলেম এ অনুযায়ী আমল করেন। এবং তাদের মত হলো পুরুষ ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাবে, এটা মোস্তাহাব। আর গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া যানবাহনে আরোহণ করবে না।[47]
৬. মুসলিমদের সাথে সালাত আদায় করা এবং খুতবায় অংশ গ্রহণ করা: ওলামায়ে কেরামদের প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, ঈদের সালাত ওয়াজিব। এটাই ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ ﴾ [الكوثر: ٢]
“অতএব তোমরা রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং নহর কর"। [সূরা আল-কাউসার, আয়াত: ২]
উপযুক্ত কোনো কারণ ছাড়া ঈদের সালাতের ওয়াজিব রহিত হবে না। মুসলিমদের সাথে নারীরাও ঈদের সালাতে হাজির হবে। এমনকি ঋতুমতী নারী ও যুবতী মেয়েরাও। তবে ঋতুমতী নারীরা ঈদগাহ থেকে দূরে অবস্থান করবে।
৭. রাস্তা পরিবর্তন করা: এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া ও অপর রাস্তা দিয়ে ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফেরা মোস্তাহাব। যেহেতু তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম করেছেন।
আর একটি সুন্নাত হলো যে পথে ঈদগাহে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসবে। যেমন হাদীসে এসেছে: জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كان النبي إذا كان يوم العيد خالف الطريق.
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন।"[48] অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে আসতেন।
৮. ঈদের সুভেচ্ছা জানানো: ঈদের দিন একে অপরকে সুভেচ্ছা বিনিময় করা, যেমন বলা:
تقبل الله منا ومنكم. أو تقبل الله منا ومنكم صالح الأعمال.
অর্থ: আল্লাহ আমাদের থেকে ও তোমাদের থেকে নেক আমলসমূহ কবুল করুন। বা এ ধরনের অন্য কিছু বলা।
একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো, অভিবাদন করা মানুষের সুন্দর চরিত্রের একটি দিক। এতে খারাপ কিছু নেই, বরং এর মাধ্যমে একে অপরের জন্য কল্যাণ কামনা ও দো'আ করা যায়। পরস্পরের মাঝে বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়।
ঈদ উপলক্ষে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো শরী'আত অনুমোদিত একটি বিষয়। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন,
[ক] হাফেজ ইবন হাজার রহ. বলেছেন: 'যুবাইর ইবন নফীর থেকে সঠিক সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন:
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ
“আল্লাহ তা'আলা আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন।"
[খ] ঈদ মুবারক বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়।
[গ] প্রতি বছরই আপনারা ভালো থাকুন:
كُلُّ عَامٍ وَأَنْتُمْ بِخَيْرٍ
-বলা যায়।
এ ধরনের সকল মার্জিত বাক্যের দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। তবে প্রথমে উল্লিখিত বাক্য:
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ
-দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। কারণ, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এ বাক্য ব্যবহার করতেন ও এতে পরস্পরের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দো'আ রয়েছে। আর যদি কেউ সব বাক্যগুলো দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে চায় তাতে অসুবিধা নেই। যেমন, ঈদের দিন দেখা হলে বলবে:
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ ، كُلُّ عَامٍ وَأَنْتُمْ بِخَيْرٍ، عِيْدُكَ مُبَارَكٌ
“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার ও আপনার সৎ কর্মসমূহ কবুল করুন। সারা বছরই আপনারা সুখে থাকুন। আপনাকে বরকতময় ঈদের শুভেচ্ছা।"
এ দিনগুলোতে সাধারণ ঘটে যাওয়া কিছু বিদ'আত ও ভুল ভ্রান্তি থেকে সকলের সতর্ক থাকা জরুরী। যেমন,
১. সম্মিলিত তাকবীর বলা: এক আওয়াজে অথবা একজনের বলার পর সকলে সমস্বরে বলা থেকে বিরত থাকা।
২. ঈদের দিন হারাম-নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হওয়া: গান শোনা, ফিল্ম দেখা, বেগানা নারী-পুরুষের সাথে মেলামেশা করা ইত্যাদি পরিত্যাগ করা।
৩. কুরবানির পশু যবেহ করার পূর্বে চুল, নখ ইত্যাদি কর্তন করা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানি দাতাকে যিলহজ মাসের আরম্ভ থেকে কুরবানি করা পর্যন্ত তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
৪. ঈদের দিনে কবর যিয়ারত করা: কবর যিয়ারত করা শরী'আত সমর্থিত একটি নেক আমল। কিন্তু ঈদের দিনে কবর যিয়ারত করার কোনো বিশেষত্ব নেই। ঈদের দিন কবর যিয়ারত করাতে বিশেষ সাওয়াব আছে বলে বিশ্বাস করা বা ঈদের দিনে কবর যিয়ারতকে অভ্যাসে পরিণত করা বা একটা প্রথা বানিয়ে নেওয়া শরী'আতসম্মত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا تجعلوا قبري عيداً »...
“তোমরা আমার কবরে ঈদ উদযাপন করবে না বা ঈদের স্থান বানাবে না..."।[49]
৫. গান-বাদ্য: ঈদের দিনে এ গুনাহের কাজটাও বেশি হতে দেখা যায়। গান ও বাদ্যযন্ত্র যে শরিয়তে নিষিদ্ধ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আবার যদি হয় অশ্লীল গান তাহলে তো তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো ভিন্নমত নেই। হাদীসে এসেছে:
«قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ليكون أقواما من أمتي يستحلون الحر والحرير والخمر والمعازف».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল [বৈধ] মনে করবে।"[50]
৬. পুরুষ কর্তৃক মহিলার বেশ-ধারণ করা ও মহিলা কর্তৃক পুরুষের বেশ ধারণ:
পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ও সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষের মহিলার বেশ ধারণ ও মহিলা পুরুষের বেশ ধারণ করা হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। হাদীসে এসেছে: ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত,
«أنه لعن المتشبهات من النساء بالرجال والمتشبهين من الرجال بالنساء».
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সকল মহিলাকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে এবং ঐ সকল পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা মহিলার বেশ ধারণ করে"।[51]
৭. অপচয় ও সীমালঙ্ঘন করা: এমন খরচ করা, যার পিছনে কোনো উদ্দেশ্য নেই, যার কোনো ফায়দা নেই, আর না আছে যার কোনো উপকার। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
﴿وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ١٤١ ﴾ [الانعام: ١٤١]
“আর তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।" [সূরা আল-আন'আম, আয়াত: ১৪১]
মুসলিম ভাইদের প্রতি আহ্বান:
আপনারা উপরে বর্ণিত নেক আমল ছাড়াও অন্যান্য নেক আমলের প্রতি যত্নশীল হোন। যেমন, আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করা, একে অপরকে মহব্বত করা এবং গরীব ও ফকীরদের ওপর মেহেরবান হওয়া এবং আনন্দ উৎসবকে তাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া ইত্যাদি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি আমাদেরকে তাঁর পছন্দনীয় কথা, কাজ ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
সমাপ্ত
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬৯; তিরমিযী, হাদীস নং ৭৫৭।
[2] তাবরানী ফীল মুজামিল কাবীর।
[3] দারামী, হাদীস নং ২৫৬৪, হাসান সনদে।
[4] ফাতহুল বারী ১/২৬৩।
[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৮।
[6] বুখারী, হাদিস: ৬৫০২
[7] আহমদ: ৬/২৮৭; আবূ দাঊদ, হাদীস নং ২১০৬; নাসাঈ, হাদীস নং ২২৩৬।
[8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৪০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৩।
[9] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৫০
[10] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪৯।
[11] আহমদ, হাদীস নং ১৩২।
[12] সহীহ বুখারী, ঈদ অধ্যায়।
[13] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৩।
[14] আবূ দাউদ, হাদীস নং ১৯৪৫, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[15] আবূ দাঊদ, হাদীস নং ১৭৬৫।
[16] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১৬।
[17] সহীহ বুখারী, হাদীসস নং ৫৫৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৬৬।
[18] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৫১৬।
[19] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩১২৫।
[20] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৭।
[21] মাজমূ ফাতাওয়া ৩২/১৬২-১৬৪।
[22] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৩৬।
[23] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩১৩২।
[24] তিরমিযী, হাদীস, নং ১৫৪৬; নাসাঈ, হা্দীস নং ৪৩৭১।
[25] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬৫।
[26] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৮৫।
[27] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৬২।
[28] আহমদ, ৪/৮২।
[29] সহীহ বুখারী. হাদীস নং ১৩৩৮, ২৭৬০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৪।
[30] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৩১।
[31] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৭।
[32] সহী মুসলিম, হাদীস নং ১৯৫৫।
[33] আবূ দাঊদ, হাদীস নং ২৮১০।
[34] দারেমী, হাদীস নং ১৯৮৮।
[35] সহী মুসলিম, হাদীস নং ১৯৬৭
[36] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৬৯।
[37] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩১৭।
[38] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০।
[39] আবূ দাঊদ, হাদীস নং ১৯৪৯।
[40] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪১।
[41] আবূ দাঊদ, হাদীস নং ২৪১৩।
[42] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৬২।
[43] সহীহ হাদীস সমগ্র, হাদীস নং ২৪৬৭।
[44] মুয়াত্তা মালেক ১/১৭৭।
[45] এরওয়ায়ুল গালীল ২/১০৪।
[46] সহীহ ইবন মাজাহ, হাদীস, নং ১৪২২।
[47] তিরমিযী, হাদীস নং ৪৩৭।
[48] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৮৬।
[49] আবূ দাঊদ, হাদীস নং ২০৪২।
[50] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৯০।
[51] আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৪০৯৭।