হজ ও কুরবানীর বিকল্পের নসীহত : এক অসঙ্গত দাবী
ক্যাটাগরিসমূহ
উৎস
Full Description
হজ ও কুরবানীর বিকল্পের নসীহত : এক অসঙ্গত দাবী
[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]
আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
2012 - 1434
تساؤلات حول الحج والأضحية
« باللغة البنغالية »
علي حسن طيب
مراجعة: د/ محمد منظور إلهي
2012 - 1434
হজ ও কুরবানীর বিকল্পের নসীহত : এক অসঙ্গত দাবী
শিক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দানের এ যুগে অশিক্ষিত লোকের সংখ্যা সন্তোষজনকহারে কমে আসছে। তবে পাশাপাশি অসন্তোষজনক হারে কমছে সুজন কিংবা সজ্জনের সংখ্যা। আগে মানুষ ভুল করত না জেনে। এখন মানুষ ভুল শুধু জেনেই করে না; উপরন্তু নিজের থেকে তাকে জায়েয করার ফতওয়াও জারি করে! একইভাবে মানুষ আগে অনেক ভালো থেকে বঞ্চিত হত অজ্ঞতা বা না জানার কারণে। আর এখন তারা জেনে বুঝে শুধু ওই ভালোকে উপেক্ষাই করছেন না। ভালোকে এড়িয়ে যাওয়া এবং মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে ভালো সম্পাদন না করার পক্ষে বিস্তর আপাত সুন্দর যুক্তিও তুলে ধরছেন!
গত বছর হজের আগে বাংলাদেশের একটি অনলাইন সংবাদপত্রে হজে না গিয়ে জনসেবার অনুপম নজির গড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের ঘটনা পড়ে আপ্লুত হয়েছিলাম। পরে শুনলাম ঘটনার লেখক একজন স্বঘোষিত নাস্তিক। ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে ‘নেক সুরতে’ ধোঁকা দেবার উদ্দেশ্যে নিজের উর্বর মস্তিষ্ক ও সরস কলম থেকে তার ওই লেখা প্রসবিত হয়েছিল। এ বছর কুরবানীর ঈদের আমেজ শেষ হবার আগেই আরেক অনলাইন পত্রিকার ব্লগে এমনই ছদ্মবেশি মানব শয়তানের দেখা মিলল। যার ‘নেক সুরতে’ ধোঁকা দেবার পদ্ধতি দেখে খোদ শয়তানও তাজ্জব না হয়ে পারে না। শয়তানও বুঝি সেদিন লজ্জায় মুখ লুকিয়েছিল।
লেখাটির শিরোনাম পড়ে লেখকের দুরভিসন্ধি বুঝতে সাধারণ মুসলিমেরও বেগ পাবার কথা নয়। ‘কোরবানির খরচ ২০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে জনগণের কল্যাণে কী কী করা যেত?’ যে দেশে হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। মুষ্টিমেয় ব্যক্তি ব্যাংক থেকে লুটে নেয় ২০ হাজার কোটি টাকা। এক শেয়ারবাজার থেকেই যে দেশে ২০ হাজার কোটির বেশি টাকা লুট হয়, সে দেশে ফরয-ওয়াজিব পালনে বিশ্বাসী মানুষের খরচ করা অর্থের অঙ্ক নিয়ে পেরেশানি দেখে বুঝতে কারও অসুবিধে হবার কথা নয় লোকটি শুধু জ্ঞান পাপীই নন; তিনি একজন বিবেক প্রতিবন্ধীও বটে।
যে দেশে শীর্ণ দেহে রোদে পুড়ে ঘর্মাক্ত হয়ে কামানো হতদরিদ্র রিকশাওয়ালার টাকা ছিনতাই হলে তার প্রতিকার হয় না, দেশের সর্বোচ্চ পদে বসা কোনো কোনো ব্যক্তি অনাথ ও নিঃস্ব লোকদের জন্য আসা টাকা, ত্রাণের টিন, বস্ত্র বা খাদ্য মেরে দেন, সে দেশে গরিবদের সহযোগিতার নামে আল্লাহর ইবাদত বাদ দেয়ার মতলবি নসিহত বড়ই বেসুরো শোনায়।
মজার ব্যাপার হলো লেখক শুধু নিম্ন রুচির নামধারী মুসলিমই নন; লেখার গদ্যভাষাও তাঁর নিম্ন মানের। বেখাপ্পা শিরোনামের পর ভূমিকায় যা লিখেছেন তাতেও তার কোনো প্রজ্ঞা বা প্রাজ্ঞতার পরিচয় মেলে না। যেমন তিনি সেখানে লিখেছেন, ‘প্রতি বছরই কোরবানি ঈদের সময় হজ্ব ও কোরবানিকে ঘিরে মুসলমানদের মধ্যে প্রচন্ড উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করে। আল্লাহকে খুশি করতে বিভিন্নজন বিভিন্ন দামের পশু কোরবানি দেন। সামর্থ্যবানেরা হজ্বে যান। কোরবানি ও হজ্বকে ঘিরে যে অর্থ ব্যয় হয় তা দিয়ে দেশের ও দেশের জনগণের কল্যাণে আর কি কি করা যেতে পারত তা নিয়েই এই লেখা।’
এমন খাপছাড়া শুরুর পর তিনি টাকার অংকের একটি হিসাব-পরিসংখ্যান দিতে চেষ্টা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘প্রথমেই দেখে নেই কোরবানি ঈদ ও হজ্বকে ঘিরে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। যদিও এ সংক্রান্ত কোন সঠিক হিসাব হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি বা বেসরকারিভাবে এ নিয়ে কোন পরিসংখ্যান পাইনি। আনুমানিক একটা হিসেবে দিয়েছেন এনবিআর এর সাবেক মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তার দেয়া আনুমানিক হিসেবকে ধরেই আলোচনা করব।
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদের মতে, ১। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৭৬ জন হজে গেছেন। প্রতিজনে গড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয় নির্বাহ করলে এ খাতে মোট অর্থব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
২। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৭৮ লাখ গরু ও খাসি কোরবানি হয়েছিল। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ধারণা এবার ৩০ লাখ গরু ও ৫৫ লাখ খাসি কোরবানি করা হবে। গরুপ্রতি গড় মূল্য ৩০ হাজার টাকা দাম ধরলে এ ৩০ লাখ গরু বাবদ লেনদেন হবে ৯ হাজার কোটি টাকা এবং ৫৫ লাখ খাসি (গড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে) ৮২৫ কোটি টাকা অর্থাৎ পশু কোরবানিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে।
৩। ২০ লাখ গরু আমদানির জন্য বাংলাদেশের শুল্ক-রাজস্ব (গরুপ্রতি ৫০০ টাকা হিসাবে) ১০০ কোটি টাকা অর্জিত হওয়ার কথা।
৪। চামড়া সংগ্রহ-সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকরণে ১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ব্যবসা জড়িত। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বিশেষ ঋণ দেয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রদান করে ৮০-১০০ কোটি টাকা।
৫। গোশ রান্নার কাজে ব্যবহূত মসলা বাবদ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে এ সময়ে। মসলার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ঈদ উদযাপনের ব্যয় ব্যবস্থাপনাকে বেচাইন পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করায়। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে শুধু মিয়ানমার থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার মসলা অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে দেশে।
৬। ঈদ উপলক্ষে পরিবহন ব্যবস্থায় বা ব্যবসায় ব্যাপক কর্মতত্পরতা বেড়ে যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঈদে পরিবহন খাতে সাকুল্যে ২ হাজার কোটি টাকার বাড়তি ব্যবসা বা লেনদেন হয়।
এছাড়া কোরবানিকৃত পশুর সরবরাহ ও কেনাবেচার শুমার এবং পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায় চাঁদা, টোল, বকশিশ, চোরাকারবার, ফড়িয়া, দালাল, হাসিল, পশুর হাট ইজারা, বাঁশ-খুঁটির ব্যবসা, পশুর খাবার, পশু কোরবানি ও মাংস বানানো— এমনকি পশুর সাজগোজ বাবদও বিপুল অর্থ হাতবদল হয়। অর্থাৎ অর্থনীতিতে ফর্মাল-ইনফর্মাল ওয়েতে আর্থিক লেনদেন বা মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায় এ সময়ে। (সূত্র : দৈনিক বণিক বার্তা)।’
এই হলো তার কুরবানী ও হজ উপলক্ষে খরচ হওয়া ২০ হাজার কোটি টাকার আনুমানিক হিসাব। লেখকের ভাষায়, ‘তাহলে বাংলাদেশে কোরবানি ও হজ্বের মোট আর্থিক মূল্য দাঁড়াচ্ছে, ১৯ হাজার ১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে আরো যেসব আনুসাঙ্গিক খরচ আছে তা অনুমান করে ধরলে মোট আর্থিক মূল্য ২০ হাজার কোটি টাকা পার করে যাবে।’
মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি যখন নেতিবাচক হয় তখন সে কত ইতিবাচক বিষয়কেই না নেতিবাচক দেখে! বাংলা প্রবাদে যেমন বলা হয়ে থাকে ‘যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা’। এনবিআর এর সাবেক মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদের গবেষণামূলক নিবন্ধে তিনি খোদ এই পরিসংখ্যানকে ইতিবাচক হিসেবে আলোচনা করেছেন। তাঁর লেখার শিরোনামটিই দেখুন, ‘মৌসুমের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ায়’। অথচ ব্লগার ড. আবদুল মজিদের তথ্যগুলোকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। মূল লেখক নিজে কুরবানী ও হজ সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক বলে আখ্যায়িত করেছেন। নিজের লেখা শুরু করেছেন তিনি খুবই ইতিবাচক ও ঈমানদারী ভাষায়, ‘হজরত ইব্রাহিমের (আ.) নিজের প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর রাহে কোরবানির সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার, এর স্মরণে ঈদুল আজহার উত্সব পালন করে মুসলিম সম্প্রদায়। এ উত্সবকে ভারত উপমহাদেশে ‘বকরি ঈদ’ এবং ব্যবহারিক অর্থে ‘কোরবানির ঈদ’ও বলা হয়। বকরি ঈদ বলার কারণ, এ ঈদে খাসি কোরবানি করা হয়। আবার ‘বাকারা’ বা গরু কোরবানির ঈদ হিসেবেও ভাবা হয় একে। আরবি পরিভাষায় এ ঈদকে বলা হয় ‘ঈদুল আজহা’ বা আত্মত্যাগ কিংবা উত্সর্গের উত্সব। সুতরাং ঈদুল আজহার তাত্পর্যগত বৈশিষ্ট্য বিচারে এ উত্সব পালনে গরু বা পালিত পশু খোদার সন্তুষ্টি লাভে উত্সর্গ অথবা কোরবানি করা হয়। হজ পালনের প্রসঙ্গটিও স্বতঃসিদ্ধভাবে এ উত্সবের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এ উত্সব হজ পালন ও পশু কোরবানিসূত্রে সমাজ-অর্থনীতিতে বিশেষ তাত্পর্য এবং কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘উত্সবের সব আয়োজন-আপ্যায়নের মর্মবাণীই হলো সামাজিক সমতা-সখ্য বৃদ্ধি এবং সম্পদ, সুযোগ ও সৌভাগ্যকে বণ্টন ব্যবস্থার মধ্যে আনা, ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে যা নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। আত্মশুদ্ধির জন্য উত্সর্গ বা সংহার প্রকৃত প্রস্তাবে খোদাভীতি ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের উপায় হিসেবে জীবে প্রেম বা দয়া ও সেবার প্রেরণাদায়ক হিসেবে প্রতিভাত হয়।’
ব্লগারের মতো কোনো নাস্তিক যদি বিশাল অংকের আর্থিক ব্যয়ের লাভালাভ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তবে আমি তার উদ্দেশে ধর্মের যুক্তি উত্থাপন না করে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ওই এনবিআর চেয়ারম্যানের বাক্যই তুলে ধরি। তিনি লিখেন, ‘ঈদুল আজহা উদযাপনে অর্থনীতিতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ, শিল্প উত্পাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটে। এ উত্সবে প্রধানত পাঁচটি খাতে ব্যাপক আর্থিক লেনদেনসহ বহুমুখী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়, যা গোটা অর্থনীতি তথা দেশজ উত্পাদন ব্যবস্থায় শনাক্তযোগ্য প্রভাব পরিলক্ষিত হয়’।
‘উত্সবের সব আয়োজন-আপ্যায়নের মর্মবাণীই হলো সামাজিক সমতা-সখ্য বৃদ্ধি এবং সম্পদ, সুযোগ ও সৌভাগ্যকে বণ্টন ব্যবস্থার মধ্যে আনা, ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে যা নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। আত্মশুদ্ধির জন্য উত্সর্গ বা সংহার প্রকৃত প্রস্তাবে খোদাভীতি ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের উপায় হিসেবে জীবে প্রেম বা দয়া ও সেবার প্রেরণাদায়ক হিসেবে প্রতিভাত হয়। সামাজিক কল্যাণ সাধনে সংশোধিত মানব চরিত্র বলের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কোরবানির মাংস গরিব আত্মীয়স্বজন-পাড়া-প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করার যে বিধান, তার মধ্যে নিহিত রয়েছে সামাজিক সমতার মহান আদর্শ।’
তাছাড়া হজ পালন ঈদুল আযহা উত্সবের একটি বিশেষ অংশ। এটি পালনের মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশের মুসলমান সমবেত হন এক মহাসম্মিলনে। ভাষা ও বর্ণগত, দেশ ও আর্থিক অবস্থানগত ভেদাভেদ ভুলে সবার অভিন্ন মিলনক্ষেত্র কাবা শরিফে একই পোশাকে, একই ভাষায় একই, রীতি-রেওয়াজের মাধ্যমে যে ঐকতান ধ্বনিত হয়, তার চেয়ে বড় ধরনের কোনো সাম্য-মৈত্রীর সম্মেলন বিশ্বের কোথায়ও অনুষ্ঠিত হয় না। হজ পালনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন রঙ ও গোত্রের মানুষের মধ্যে এক অনির্বাচনীয় সখ্য গড়ে ওঠে। বৃহত্তর সামাজিক কল্যাণের যা অনুপম আদর্শ বলে বিবেচিত হতে পারে।
এবার আসা যাক মূল কথায়। ব্লগার এনবিআর চেয়ারম্যানের নিবন্ধে উল্লেখিত পয়েন্টগুলো তুলে ধরার পর লিখেছেন, ‘এবার আসুন, দেখি এ টাকা দিয়ে আর কি কি করা যেতে পারত’? এও এক ধরনের বালখিল্য ও হাস্যকর আবেদন। যাহোক, ব্লগারের প্রথম প্রস্তাব হলো : ‘১। দেশের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ঈদের খরচ দিয়ে দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের বাজেট নির্বাহ করা যেত। শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে অধ্যয়ন করতে পারত এক বছর।’
এর জবাবে বলতে হয়, ভালো ও নৈতিকতাসম্পন্ন ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, কুরবানীতে যে ত্যাগের শিক্ষা আর হজে যে অভেদ ও সাম্যের শিক্ষা তা বাদ দিয়ে তিনি কোন বিবেচনায় যে সে টাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ দিতে বলছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমরা যা দেখি তা হলো, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বর্তমানে লেখাপড়ার চেয়ে বেশি চর্চা হয় এর বাইরের বিষয়। তাছাড়া অধুনা গড়ে ওঠা ধর্মহীন বা ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক কিংবা আত্মভোলা শ্রেণী মূলত এসব প্রতিষ্ঠান থেকেই উঠে আসছেন। এরা নিজেদের শিকড় ভুলে নিজ জাতি ও ধর্মবিমুখ সংস্কৃতি ও মানসিকতা শুধু নিজেরা লালনই করছেন না, ভাইরাসের মতো তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন সমাজের আনাচে-কানাচে। আর শিক্ষার আলোর নামে অধিকাংশ নারীই এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছেন অন্ধকারের পুরো বা আংশিক পাঠ। তারা পরিবারের আলোকধারা থেকে বেরিয়ে নিজের অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তে হারিয়ে যাচ্ছেন অভিশাপের চোরাবালিতে।
তার দ্বিতীয় ও বাকি প্রস্তাবগুলো হলো : ‘২। আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা কারো পক্ষে প্রকাশ করা এখনও সম্ভব না হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী প্রায় দেড় কোটি। যদিও ২০০১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা ১.৬ ভাগ তথা মাত্র ১৬ লাখ। বিগত ২০০৯-১০ অর্থবছরে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতার আওতায় ৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো। এসিডদগ্ধ মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন তহবিলে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো। প্রতিবন্ধী সেবা ও সহায়ক কেন্দ্র শীর্ষক একটি নতুন কর্মসূচী গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ সরকার প্রতিবন্ধিদের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখছেন বাজেটে। সে হিসেবে কোরবানির টাকা দিয়ে কয়েক বছর প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন করা সম্ভব হতো।’
এর উত্তরে বলি, প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের প্রস্তাব অবশ্য মন্দ নয়। কিন্তু হজ ও কুরবানী না করে সেটা করার প্রস্তাব এক সমস্যা সমাধানে আরেক সমস্যা টেনে আনার নামান্তর। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বাঁচাতে ঈমানী প্রতিবন্ধী তৈরির প্রস্তাব। হজ ও কুরবানীর শিক্ষা যেখানে মানুষের মাঝে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি গড়ে তোলা এবং পরের জন্য ত্যাগ বা বিসর্জন দেয়া, সেখানে তা বাদ দিয়ে প্রতিবন্ধীদের সাহায্যের প্রস্তাব কেবল হাস্যকরই নয়, আত্মঘাতীও বটে। এই সমাজের যত লোক মানুষের জন্য নিজেদের অর্থ ব্যয় করেন, সত্যিকারার্থে তারা কোনো না কোনোভাবে ইসলামের ত্যাগের শিক্ষা থেকে প্রভাবিত হয়েই করেন। অতএব তথাকথিত ভালো কাজের নামে ইসলামের আদর্শ ও শিক্ষার চর্চা না করার নসীহত যে ব্লগারের বদ মতলবপ্রসূত তা বলাই বাহুল্য।
ব্লগারের শেষ প্যারায় চোখ বুলালেই বোঝা যায় কাকে বলে ‘কথা সত্য মতলব খারাপ’। উপসংহারে তিনি লিখেছেন, ২০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে আরো অনেক কিছুই করা যায় জনগণের কল্যাণে। কোরবানি ও হজ্বের লক্ষ্য যদি হয় আল্লাহকে খুশি করা। তাহলে কি পশু কোরবানি আর হজ্বের পরিবর্তে সেই টাকা দিয়ে যদি দরিদ্র ও অসহায় জনগণের কল্যাণ করা যায় তাহলে কোনটা আমাদের করা উচিত?’ তিনি কথাটা প্রশ্নাকারে সবশেষে ছেড়ে দিয়েছেন, যাতে কথাটা সমালোচিত হলেও অন্তত মুসলমানের অন্তরে খানিকটা দ্বিধা বা ওয়াসওয়াসার সৃষ্টি করে।
ব্লগে এই লেখাটি প্রকাশের পর সেখানে অনেকেই তার সমুচিত জবাব দিয়েছেন। আরেক ব্লগার এর প্রতিবাদে স্বতন্ত্র পোস্টই দিয়েছেন। এই ব্লগারের উত্তরটিও আমার কাছে গ্রহণযোগ্য ও যথোচিত মনে হয়েছে। তিনি যা লিখেছেন তার ইষৎ সম্পাদিত আকার তুলে ধরা যাক। কারণ, এর সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা আমি খুবই প্রাসঙ্গিক ও সমীচীন ভাবছি। প্রথমেই তিনি লেখককে সম্বোধন করে লিখেছেন, লেখককে উদ্দেশ্য করে বলছি : সবার আগে একটি প্রশ্ন – আপনি কি একজন মুসলিম নাকি অমুসলিম?! যদি আপনি অমুসলিম হন তাহলে কিছু বলার নেই আপনাকে। কারণ ইসলাম সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণা থাকবে এটাই স্বভাবিক। আর অমুসলমানদের জন্য হজ বা কুরবানী কোনটাই প্রযোজ্য নয়। আর যদি নিজেকে মুসলিম দাবি করেন তাহলে কিছু প্রশ্ন না করে পারছি না। একজন মুসলিম তখনই প্রকৃতপক্ষে মুসলিম হবে যখন সে আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করবে। আপনার কি অধিকার আছে ইসলামের পাঁচটি মূল পিলারের একটি হজের যৌক্তিকতা নিয়ে কথা বলার? যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর হজকে ফরয করেছেন। হারাম টাকায় হজ করলে সে হজ আল্লাহ কখনো কবুল করেন না। হজের মাধ্যমে মুসলিমরা তাদের সব গুনাহ মাফ পাবার যে দুর্লভ সুযোগ পান তা কোনো টাকার হিসাবে পরিমাপ করতে পারবেন?! যদি আপনি বিশ্বাসী হন।
আসুন কুরবানীর বিষয়ে, এটা ঠিক যে বর্তমান সময়ে অনেক মুসলিম কুরবানীর আসল উদ্দেশ্য ভুলে গেছে। এসব লোক কোরবানীকে লোক দেখানো সস্তা অহংকার এবং প্রতিযোগিতা হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহ শুধু সেসব লোকের কুরবানী কবুল করবেন যারা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তা করবে। কুরবানীর গোশত গরীব ও আত্মীয়দের মধ্যে ভাগ করে দিতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
আসুন এখন আপনার আর্থিক থিওরি বিবেচনা করি- আপনি জনগণের কল্যাণের কথা ভাবছেন খুব ভালো কথা। কিন্তু সেটা কেন মুসলমানদের ধর্মীয় উত্সব হজের পরিবর্তে করতে হবে?! কেন আপনি দুর্নীতির কথা বলছেন না? এক বছর এর দুর্নীতির টাকা ব্যবহার করে কী কী করা যেত লিখবেন (যদি পারেন) ?! ক্যাপিটালিস্ট/পুঁজিবাদী অর্থনীতির জন্য গরীব এখন আরও গরীব হচ্ছে, ধনী এখন আর ধনী হচ্ছে। সমাজের সব স্তরে এখন অবিচার ও অসাধুতা বিরাজমান। দুটি দল গণতন্ত্রের নামে দেশকে বছরের পর বছর লুট করছে এবং অরাজকতা করছে। আসলেই কী এটা গণতন্ত্র? নাকি গণতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র?! কেন আপনারা সেসব দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিলাসী জীবন যাপনের কথা বলেন না? সারা সম্পদের পাহাড় গড়েছে মানুষের অর্থ লুট করে। এদের এসব সম্পদ জনগণের কী কী কল্যাণে ব্যবহার করা যেত ?! কেন আপনারা সম্পদের সুষম বণ্টনের কথা বলেন না? সম্পদের সুষম বণ্টন হলে একটা মানুষেরও মৌলিক চাহিদা অপূর্ণ থাকতো না।
ইসলাম এসব নিশ্চিত করেছে। মানুষের জন্য ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। কিন্তু ইসলামের এ ব্যবস্থা মূলত মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য। একটি ইসলামী দেশেও অমুসলিমরা তাদের নিজেদের আইন এবং রীতি অনুসারে জীবন পরিচালনায় মুক্ত। সবার অধিকার সংরক্ষণের কথা ইসলাম সবসময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে। ইসলাম সম্পর্কে বাংলাদেশে অনেক ভুল ধারণা আছে। আসুন ইসলামকে সঠিকভাবে জানি। ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে জানি। জ্ঞান অর্জন সব মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক। তাহলে এভাবে কিছু মানুষ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারবে না যারা ইসলামকে শুধু কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। কিছু লোক ধর্ম নিরপেক্ষতার আড়ালে ধর্মহীনতা প্রচার করছে। আর যদি কেউ ইসলামের সঠিক বাণী প্রচার করছেন তখন তাকেও ধর্মান্ধ বলে অবহিত করা হচ্ছে।
তাছাড়া মানুষ ব্যক্তিগতভাবে কুরবানী ও হজ করে থাকে। সরকারী টাকায় কিংবা সরকারী সম্পদ আত্মসাৎ করে নয়। ইসলামের রুকনগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হোক ইসলাম আরাতিরা সেটা চায় না। তারা এখন ব্যক্তিগত কাজেও হস্তক্ষেপ করছে।
তারা যে সরকারী সম্পদ যাচ্ছেতাই ভাবে ভোগ করছে এবং লুটপাটের মহোৎসব করছে সেদিকে খেয়াল নেই। মন্ত্রী এমপিরা প্রমোদ ভ্রমণে এয়ারকন্ডিশনড বাহনে চড়ে কোটি কোটি টাকা অপর খরচ লাগাচ্ছেন, জনগণের টাকায় সন্তান-সন্ততিদের জন্য সুখের আবাসভুমি গড়ে তুলছেন। সরকারি অর্থে আমলারা অপ্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণ করছেন। রাষ্ট্রীয় কাজে মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর সহযাত্রী হিসেবে একশ থেকে দুইশ লোকেরাও বিদেশ গেছেন জনগণের টাকায়। যদুমধুকদুরাও রাষ্ট্রীয় কাজের নামে সাধারণ, বিজনেস বা এক্সিকিউটিভ নয় সফর করছেন ভিআইপি ক্লাসে। গাড়ি কিনছেন। যখন যা মনে চাচ্ছে তা করছেন, সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য যা করা হয়, তা নিয়ে যত মাথা ব্যথা। তারা জানেন না যে এর মাধ্যমে গরীবরা একটা অংশ লাভ করে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় আনন্দঘন মূহূর্তে ঈদ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ ঈদের আনন্দ ধনী-গরীব সবার ঘরেই এর মাধ্যমে পৌঁছানো সম্ভব হয়ে থাকে। এমন অনেকে পরিবার আছে যাদের কাছে এ সময়েই গোশত ঘরে আসে।
যাদের কথা লেখক লিখেছেন সেটার ব্যয় নির্বাহ করার দায়িত্ব সবার আগে বর্তায় সরকারের ওপর। সরকার যদি তা করতে না পারে তবে ক্ষমতা তাদের হাতে দিয়ে দিক, যারা তা চালাতে পারে। ইসলামী ঈদ আনন্দে এসব ফেরেববাজির কথা না বলে, সেসব লেখকদের আমরা পরামর্শ দেব, সরকারকে যাকাত ব্যবস্থা প্রবর্তন করে জনগণের জন্য কিছু করতে পরামর্শ দিতে। কিন্তু তাঁরা তা করবেন না। আসলে তারা যদি যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি চালু করতেন। তবে দ্বীন ও ঈমান যেমন রক্ষা হতো, তেমনি সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সঠিক সমাধান হয়ে যেতো। তারা না করে মানুষের ওপর অন্যায় করে চাপিয়ে দিচ্ছে। যাকাতের কথা বললে তাদের কাছে মনে হয়, এই বুঝি ইসলাম কায়েম হয়ে গেল। এই বুঝি তাদের চুরি করার সব সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল।
আসলে যুগে যুগে ‘নেক সুরতে’ ধোঁকা দেয়ার কাজটি করেছে বর্ণচোরা কিছু মুসলিম। কখনো মুনাফিক আর কখনো নাস্তিকের বেশে। এরা বার্ষিক ধর্মীয় উৎসব এবং ধর্মীয় সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয় ধর্মীয় চেতনায় উদ্বেল হয়ে নয়; মানুষকে ধোঁকা দিয়ে নিজের ভেতরের ‘অমানুষ’টাকে আড়াল করতে। এরা সুযোগ পেলেই ছলে-বলে-কৌশলে ইসলাম ও ইসলামের বিধিবিধান সম্পর্কে মানুষের মনে সন্দেহের বীজ বোপণ করে। মানুষের ঈমানের ভেতরে মুনাফেকী ও কপটতার চারা গেড়ে দেয়।
বর্তমান যুগে তাবৎ বিশ্বের ইহুদী ও খ্রিস্টান পরাশক্তি বুঝে গেছে এখন আর তারা ধোঁকা দিয়ে, বিদ্যা-বুদ্ধি কিংবা প্রযুক্তি ও জাগতিক উন্নতির চোখ ধাঁধানো সাফল্য দিয়ে মুসলিমকে ইসলাম ত্যাগে সফল হবে না। ইসলামের সমালোচনা করে কিংবা ইসলামের কিতাব পবিত্র কুরআনের দোষ বা খুঁত আবিষ্কারের বৃথা প্রয়াসে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা দিতে পারবে না। সেহেতু বাধ্য হয়েই তারা তাদের এসব কাজে সুকৌশলে ব্যবহার করছে মুসলিম নামধারীদের। মুসলিম দেশের পাক্কা মুসলিম নামের উচ্চ শিক্ষিতরা পশ্চিম থেকে তাদের শিক্ষা আমদানী করছে যতটা তারচে বেশি করছে তাদের অপসংস্কৃতি ও অসভ্যতা।
এদের আচরণ ও কর্মকাণ্ডে বোঝা কঠিন এদের ধর্মীয় বিশ্বাস কিংবা আত্মিক চেতনা কী। পরকাল ও আল্লাহর কুরআন সম্পর্কে এদের দৃষ্টিভঙ্গি কী। এরাই সমাজের ইসলাম পালনকারী তরুণদের দাড়ি নিয়ে কটাক্ষ করে। আল্লাহর ভয়ে কম্পমান তরুণীদের হিজাব পরা দেখলে বিদ্রুপ করে। এরা নিজেদের অধীনস্ত ও অনুজদের ধর্মীয় কাজে এবং ধর্মচর্চায় বাধার সৃষ্টি করে। এরা কোনো মুসলিমের অন্যায় দেখলে তার দায় সম্পূর্ণ ইসলামের ওপর চাপিয়ে দেন। ইসলামই যেন এদের পথের কাঁটা। ইসলামকেই তারা তাদের অন্যায় মনোবাঞ্ছা পূরণে একমাত্র অন্তরায় জ্ঞান করে।
আমাদের উচিত হবে এসব উজবুক, বর্ণচোরা শয়তানদের কথায় প্রতারিত না হওয়া। এদের সম্পর্কে শুধু নিজে সজাগ থাকাই নয়, অন্যদেরও সম্ভাব্য সব উপায়ে সতর্ক করতে হবে। কোনো তথাকথিত উন্নত জাতির অনুসরণে নয়; আমাদেরই রচনা করতে হবে আমাদের উন্নতির পথ। আমরা এ পথের নির্ভুল দিশা পেতে পারি পবিত্র কুরআন থেকে। তাই কুরআন তথা ইসলামের মৌলিক জ্ঞানে আমাদের পারঙ্গম হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। অবশ্য এও মনে রাখতে হবে, আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন অনেকেই কুরআন নিয়ে অনধিকার চর্চা করেন। নিজে যেখানে কুরআন বোঝার যোগ্যতায় উত্তীর্ণ নন, সেখানে অনুবাদ আর পড়ে অনেকে কুরআনের বিশ্লেষক, ইসলামের গবেষক সেজে নিজেকে আর নিজের সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন। তাই কুরআনের জ্ঞান আমাদের নিতে হবে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে।
আল্লাহ আমাদের ঈমান ও আমাদের কুরআন এবং আমাদের সকল মুসলিম ভাই-বোনকে নাস্তিকদের বিভ্রান্তি ও বর্ণচোরাদের অপপ্রয়াস সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকার তাওফীক দান করুন। মানবতার মুক্তির একমাত্র ও অব্যর্থ ব্যবস্থা দীনে ইসলামকে হিফাযত করুন। আর হেদায়েত দিন আত্মভোলা ও বিভ্রান্ত ওই সব মুসলিম ভাই-বোনদের আমীন।