×
বক্ষমাণ নিবন্ধে মর্মস্পর্শী কয়েকটি নিগৃহ নারীর জীবনযন্ত্রণার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাদের প্রতি আমাদের করণীয় কী, কেন আমরা এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখব তাও তুলে ধরা হয়েছে। সাথে সাথে আমাদের দেশে নারীদরদী! দাবীদার লোকদের কিছু চিত্র তুলের ধরার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।

    অসহায় নারীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন

    [ বাংলা – Bengali – بنغالي ]

    আলী হাসান তৈয়ব

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    2012 - 1433

    ﴿ تعالوا نساعد النسوة ذوات الحاجة ﴾

    « باللغة البنغالية »

    علي حسن طيب

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    2012 - 1433

    অসহায় নারীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন

    (ক)

    সালাতুল মাগরিব আদায় করে বাসায় ফেরার পথে মুক্তাদের ঘরের সামনে মানুষের ভিড় দেখে থমকে গেলাম। এগিয়ে গিয়ে যা শুনলাম তাতে আমার আক্কেল গুড়ুম। দাদার বয়েসী মুক্তার বাবা নাকি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন ! মুক্তার মায়ের চিৎকার শুনে লোকজন এসে দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করে। মেয়ের বয়েসী স্ত্রীর কথায় অতিষ্ঠ হয়ে নাকি তিনি আত্মহত্যা করতে গিয়েছেন। বউ তার কাছে শুধু টাকা চায়। বাড়িভাড়া দেয়ার জন্য আজ সে খুব চেঁচামেচি করছিল। উপস্থিত লোকদের সামনে নির্লজ্জভাবে জানালেন আরও কিছু নির্জলা মিথ্যে কথা। সেখানে অবশ্য তার কথায় গলার মতো কেউ ছিল না।

    মুক্তাদের ঘর লাগোয়া দালানের দোতলা ফ্ল্যাটে ওঠার পর প্রায়ই দেখি ওই মুরুব্বিকে মুক্তাদের ঘরে যেতে-আসতে। ভেবেছিলাম মুরুব্বি হয়তো মুক্তার নানা হবেন। কিন্তু ভুল ভাঙ্গিয়ে দিলেন আমার সহধর্মিণী। তিনি নাকি মহিলার স্বামী। পক্ষান্তরে মুরুব্বির বয়স যেখানে অন্যূন ষাট সেখানে মুক্তার মা’র বয়স হবে পঁচিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে! যে কেউ মুক্তাকে নাতনি আর তার মাকে ভাববে তার মেয়ে হিসেবে। মুরুব্বি তার মেয়ের বয়েসী স্ত্রীকে প্রায়ই গালাগাল করেন। হাতও তুলেন বৈ কি। এসব শুনেই স্ত্রীকে বলেছিলাম বিয়ে কিভাবে হলো সে ইতিহাস জেনে নিতে। আমি অফিসে গেলে মুক্তার মাকে প্রায়ই ঘরে ডেকে আমার স্ত্রী ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করেন। সাধ্যমত এটা সেটা দিয়ে সাহায্য করেন। তিনিই জানালেন মুক্তার মায়ের বেদনাবিধুর জীবনেতিহাস।

    মুক্তার মায়েরা ছিলেন এক ভাই একবোন। বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। একা একা তাদের মা লালন-পালনের কাজ করতে না পারায় ছেলেটি আয় রোজগার শুরু করেন। সেই ভাইটিই এতিম বোনের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। প্রায় দ্বিগুণ বয়েসী এই লোকটি তার ভাইকে প্রায় বশ করে ফেলেছিলেন। তাছাড়া অসহায় বোনকে কোনো মত বিদায় করার জন্য তিনিও ছিলেন উদগ্রীব। ফলে বিধবা মা এবং খোদ বোনটি সম্মত না হলেও একরকম জোর করেই বিয়ে দেন এই বয়স্ক লোকটির সঙ্গে। বিয়ের পর যখন ভাইয়ের চোখের পর্দা সরে যায়, তখন বুঝতে পারেন বোনের কী ক্ষতিই না তিনি করেছেন।

    প্রবীণ লোকটির স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে জানার পর তারা মুক্তার মাকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেন। বিধবা মা বলেন, তোর ভাইয়ে ভাত না দিলে আমি প্রয়োজনে মানুষের বাড়িতে কাজ করে তোকে খাওয়াব। তবুও তুই ওই প্রতারক লোকটির ঘরে যাসনে মা। অচিরেই তার পেটে মুক্তা চলে আসে। বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করেও তারা সফল হন নি। মুক্তার বাবা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ ছিলেন। তিনি বলেন, সন্তান হলে আমি ওকে নিয়ে ঢাকায় যাব। ওখানে গেলে সে সতীনের সঙ্গে সুখেই সংসার করতে পারবে।

    প্রতারকের কথা কখনো সত্য হবার নয়। যা হবার তাই হলো। সুদূর নীলফামারী থেকে ঢাকায় এলে তাকে সতীনের ঘরে আশ্রয় নিতে হলো। হতে হলো সতীনের পরোক্ষ চাকর। বুড়ো কোনো খরচা দিতে চায় না। তাই তাকেও লাগিয়ে দিল এক বাড়িতে ঝিয়ের কাজে। তদুপরি চুন থেকে নুন খসলেই চলে শারীরিক নির্যাতন। বাধ্য হয়েই তাকে ও বাড়ি ছাড়তে হলো। যে বাড়িতে কাজ করতেন সে বাড়ির গৃহিণী এবং প্রতিবেশিদের পরামর্শে তিনি একটি কুঁড়ে ঘরে আশ্রয় নেন।

    মুক্তার মা এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এখানে তাকে ভাড়া দিতে হয় পাঁচ শ টাকা। ক’দিন পরপর বুড়ো স্বামী এখানে এসে স্বামীর অধিকারে থাকেন ঠিকই, কিন্তু খরচাদি কিছুই দেন না। এখন মুক্তার লেখাপড়ার বয়স হয়েছে। তার খরচও টানতে হচ্ছে এই অসহায় মাকে। পাঁচ বছরের মেয়েটি সারাদিন একা একা ঘরে বসে খেলা করে। এ বাড়ি ও বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। দুপুরে কাজ করে যা একটু খাবার নিয়ে আসেন তা-ই মা-ঝিয়ে ভাগ করে খান।

    স্বামীর প্রতি মহিলার আর কত ধৈর্য দেখাবেন। খরচাদি দেবার নাম নাই। ক’দিন পর এসেই স্ত্রীকে মারধর আর অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এবার তাই মুক্তার মা বলেন, আমার খরচ দেন না, আপনার নিষ্পাপ শিশুটিরও না, অন্তত ঘর ভাড়ার পাঁচ শ টাকা দেন। আমি আর পারছি নে। আমার ওপর দয়া করুন। এসব কথার সূত্রে কথা কাটাকাটি করেই তিনি গিয়েছিলেন এই বয়সে গলায় ফাঁস দিতে !

    (খ)

    আমার বর্তমান মহল্লার শেষ মাথায় রয়েছে কয়েকটি ছাপড়া ঘর। তার একটিতে ভাড়া থাকে রাশেদের মা। সাত বছরের রাশেদ তার বড় ছেলে। ওকে রেখে পালিয়েছে তার বাবা। তারপর জীবনের তাগিদে তিনি আবার বিয়ে করেন একজনকে। তার ঔরসে জন্ম নেয় তিনটি সন্তান। তারপর সেও গিয়ে বিয়ে করে আরেকজনকে। চার চারটি সন্তান নিয়ে ঘর ভাড়া করে থাকতে তাই রাশেদের মাকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। তিন বাড়িতে সারাদিন ঝিয়ের কাজ করে কোনো রকম দিন গুজরান করেন। আর সাত বছরের শিশু বড় ভাই রাশেদকে সারাদিন দেখি জীর্ণকায় আট মাসের কনিষ্ঠ ভাইটিকে কাঁধে নিয়ে পথে ঘোরাফেরা করতে।

    একদিন ডেকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, মা কাজ করে মানুষের বাড়িতে। অতএব তাকেই পালন করতে হচ্ছে ছোট ভাইটিকে। হররোজ সুজি রান্না করে ফিডার দিয়ে খাওয়ায়। সময় মতো ঘুম পাড়িয়ে দেয়। গোসল করায়। কাপড় পরায়। তার সঙ্গে খেলা করে। অথচ ওরই এখন খেলা করার পাড়ার অন্য শিশুদের সঙ্গে। শীতের মধ্যেও দেখেছি অনেক সময় সকাল গড়িয়ে দুপুর না আসতেই কঙ্কালসার ভাইটিকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছে, অথচ পরনে শীতের কাপড় নেই। নাক দিয়ে সর্দি গড়িয়ে পড়ছে আবার ওকে নিয়েই রিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

    মাঝেমধ্যে ওদের মা এসে দেখে যায় ওরা কী করছে। পেটের দায়ে মানুষের বাড়িতে কাজে বাধ্য হলেও মায়ের মন তো ঠিকই পড়ে থাকে শিশু দু’টির কাছে। চিন্তা করতে অবাক হয়ে যাই এমন কয়েকটি নিষ্পাপ সন্তান রেখে কীভাবে একজন বাবা অন্য মেয়ের পেছনে ঘুরে বেড়ায়। নিজের রক্তের এমন মানবেতর অবস্থা দেখেও তার পাষাণ হৃদয় গলে না !

    (গ)

    এর আগে আমি ছিলাম আরেক মহল্লায়। যে দোতলা ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতাম তার পাশেই ছিল লিজাদের ছাপড়া ঘর। তিন ঘরে তিনটি দরিদ্র পরিবার ভাড়া থাকত। লিজাদের জীবনটাই ওদের মধ্যে ছিল সবচে কষ্টের। লিজার মা’র বাড়ি রংপুরের মঙ্গা কবলিত হতদরিদ্র পরিবারে। তার বিয়ে হয়েছিল ময়মনসিংহের এক অর্থলোভীর সঙ্গে। সকালে ঘুম ভাঙার পর জানালার গ্লাস সরিয়ে মাঝেমধ্যেই আমার স্ত্রী দেখাতেন লিজার মা’র দুঃখ-কষ্টের নমুনা। তিন পরিবারের জন্য বরাদ্দ ছিল এক চুলা। তাই সাতসকালে সেখানে ছেলে-মেয়ের জন্য দ্রুত রান্না করে প্রাণপণে ছুটেন চেরাগ আলী হুইল পাউডার ফাক্টরিতে। দশ বারো ঘন্টা ডিউটি করে বেতন পান মাত্র আঠার শ' টাকা। ঘর ভাড়া দিয়ে দু’টি সন্তান নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন যোগাতেই যা যথেষ্ট নয়। অগত্যা বাধ্য হয়ে তার কিশোর ছেলেটিকেও কাজে নামতে হয়েছে পড়ালেখা বাদ দিয়ে।

    মেয়েটি পড়ে ব্র্যাক স্কুলে, যেখানে অক্ষর আর বিনোদন জ্ঞানই পায় অগ্রাধিকার। সঙ্গত কারণেই দু’বেলা শুধু ভাতটুকুও রান্না করতে চায় না সে। কর্মক্লান্ত মা বাড়িতে এসে রান্না করলেই তবে পেটে কিছু চালান করতে পারেন। অথচ এ বয়সে গরীবের মেয়েরা দিব্যি এ কাজ করে যায়। ছেলেটি ওর সম্পূর্ণ উল্টো। কাজের ফাঁকে সে এক ওয়াক্ত নামাজও ছাড়ে না। আজান হলে তাকে ঘরে বন্দি রাখা সম্ভব হয় না। ওয়েল্ডিং মেশিনের দোকানে কাজ করত। একদিন নামাজে একটু দেরি হওয়ায় নামকা ওয়াস্তে বেতনের চাকরিটিও যায় চলে।

    এলাকার মুসল্লী ভাইয়েরা তাকে একটি দর্জির দোকানে ঢুকিয়ে দেন। এটা তার জন্য শাপে বর হয়েছে। এখন সে টেইলারিংয়ের কাজ শিখছে। আগে শিখছে পাঞ্চাবি বানানোর কাজ। টুপ-পাঞ্জাবি পরা একহারা গড়নের কিশোরটিকে ব্যতিব্যস্ত হয়ে যেতে-আসতে দেখলে নির্ঘাত মনে হবে সে মাদরাসা থেকে বাসায় আসছে বা আহার সেরে সেখানে ফিরছে। অবনত মস্তকে সরল ভঙ্গিতে তার পথচলা দেখলে ঠিক কিতাবে পড়া আদর্শ কোনো ‘তালিবুল ইলম’ বলেই ভ্রম হতে পারে। দুখীনি মাকে সাহায্য করতে তার প্রাণান্ত চেষ্টা যে কোনো চিন্তাশীল মানুষকে ছুঁয়ে যায়।

    লিজার মা এত কষ্ট করে খেয়ে-না খেয়ে সংসার চালান আর যৎকিঞ্চিত টাকা সঞ্চয় করেন মেয়ের জন্য। যখনই কিছু সঞ্চয় গড়ে ওঠে তখনই তার স্বামী কোত্থেকে যেন ইলিশের ঘ্রাণ পাওয়া বিড়ালের মতো সন্তর্পনে হাজির হন লিজাদের ডেরায়। কোমল প্রাণ স্ত্রী কঠোর হতে চেয়েও পারেন না তাকে ফিরিয়ে দিতে। এক ঘরেই কিভাবে যেন কিশোর বয়েসী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকেন তারা। দু’চারদিন স্বামীর দাবি নিয়ে থেকে খেয়ে তৃপ্ত হয়ে ছলে-বলে-কৌশলে স্ত্রীর সম্বলটুকু হাতিয়ে নিয়ে চলে যায় আরেক বউয়ের কাছে।

    (ঘ)

    বাজার থেকে ফিরে বাসার দরজায় একজন মহিলা ভিক্ষুককে দেখতে পেলাম আহার করতে। পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকতেই সহধর্মিনী বললেন দরজা খুলে মেয়েটিকে একটু পরখ করো। যাকে মহিলা ভেবেছিলাম তিনি আসলে তরুণী। তার বাঁ হাত নেই। ডান হাতে আট মাসের মেয়ে কোলে নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষে করেন। বাচ্চাটির জন্মের মাস খানেক আগে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার বাবা। মহিলা নিজেও আজন্ম এতিম। তাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা যান। বাবা মারা যান আরও আগে। সহৃদয় ফুফাতো ভাই তাকে লালন-পালন করেন। অতপর তিনিই তাকে বিয়ে করেন। কথাগুলো শুনে হৃদয় কেঁদে উঠলেও তেমন কিছু করতে পারলাম না। আমি কিছু আর নিজস্ব তহবিল থেকে স্ত্রী কিছু দিয়ে তাকে বিদায় দিলাম।

    তারপর এক পক্ষ চলে গেলেও অকালে বিধবা হওয়া এ অসহায় মায়ের কথা মন থেকে মুছতে পারছিলাম না। স্ত্রীর অবস্থাও তথৈবচ। অসহায়ের প্রতি তার মমতা মাঝেমধ্যে আমাকেও ছুঁয়ে যায়। যে মহল্লায়ই বাসা নেই তার কাছে এমন অসহায় মেয়েদের আনাগোনা দেখি। এ জন্যই মেয়েটি মাত্র সেদিনের পরিচয়ে ওকে ভোলে নি। গতকাল তিনি আবার এসেছিলেন। দু’দিন আগে ভিক্ষে করতে গিয়ে বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি ভাঙ্গার সময় বাচ্চাটি তার হাত থেকে পড়ে যায়। নিষ্পাপ মায়াভরা চেহারার শিশুটি মাথায় আঘাত পায়। আঘাতে ভেঙ্গে যায় তার কচি হাতখানি। দুঃখের এখানেই শেষ নয়। বাচ্চাকে নিয়ে সরকারি হাসপাতালে গেলে সেখান থেকে বলা হয় ১৪শ টাকা লাগবে। এ ছাড়া ওর ট্রিটমেন্ট শুরু করা যাবে না। নিরুপায় হয়ে মা তাই অসুস্থ বাচ্চাটিকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি এক সহৃদয় মহিলার কাছে রেখে এসেছেন আমার সহধর্মিনীর কাছে।

    (ঙ)

    এই লেখাটি যখন প্রস্তুত করছি, তখনই দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে এ বিষয়ে ছবিসহ একটি মর্মস্পর্শী ঘটনা চোখে পড়ল। নিচে হুবহু ওই সংবাদ তুলে ধরছি। (সূত্র প্রথম আলো অনলাইন, ০৮/০৪/২০১২)

    ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কাছে হার মানলেন এক মা। মা মালেকা বেগম মাত্র পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে নবজাতক আমেনাকে দিয়ে দেন। নিঃসন্তান প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী নার্গিস মেয়েটিকে দত্তক নেন। ২৮ দিনের শিশুসন্তানকে নার্গিসের কাছে দিয়ে দেন মা মালেকা। কিন্তু এই মায়ের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে একটি দালালচক্র জড়িয়ে দেয় মামলায়। দালালচক্রের ফাঁদে পড়ে মালেকা বেগম নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে রাজধানীর তুরাগ থানায় অভিযোগ করেন। গত বুধবার শিশু আমেনার দত্তক মা নার্গিস ও মা মালেকা মহানগর হাকিম হাসিবুল হকের আদালতে হাজির হন। আদালতের জিজ্ঞাসায় মা মালেকা বলেন, ‘স্যার, সাত-আট মাস আগে আমার স্বামী ওবায়দুর রহমান তাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমাকে কোনো ভরণপোষণ দেয় না। ১০ মাস ১০ দিন এই বাচ্চাকে পেটে ধরেছি। কোন মা চায় তার সন্তানকে বেচে দিতে? নার্গিস আপার কোনো সন্তানাদি নাই। আমার বাচ্চাকে মানুষ করবে বলে চায়। স্যার, আমি পেটের দায়ে আমার শিশুসন্তানকে দিয়ে দিছি। আমি তো মা। আমার সন্তান ভালোভাবে মানুষ হোক, এইটা চাই।’

    বিচারক বলেন, ‘তাহলে থানায় অভিযোগ করলেন কেন?’ এ সময় মালেকা বেগম বলেন, ‘এই বইনের কোনো দোষ নাই, স্যার।’
    আদালত আবার বলেন, ‘আপনি মা। এখন বলুন, এই শিশুসন্তান কার কাছে থাকবে। তা আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ উত্তরে মালেকা বলেন, ‘স্যার, আপনারা জ্ঞানীগুণী মানুষ, আপনেরা যা ভালো বোঝেন তা-ই করেন।’

    বিচারক বলেন, ‘এই সন্তানের তো মায়ের দুধের প্রয়োজন আছে, তা জানেন কি?’ ‘হ স্যার, জানি। তয় এক কাজ করেন, তার পাশে থাইকা আমরা দুইজনে মানুষ করি। আমি কোনো দিন ওই সন্তানকে চাইব না। ও বোনের মাইয়া। দালালের ফাঁদে পইড়া আমি এই অভিযোগ করছিলাম। বেশি টেহা পাব বইলা। এমুন ভুল আর ওইব না স্যার।’

    বিচারক নার্গিস বেগমকে বলেন, ‘যেহেতু সন্তানের বয়স ২৮ দিন, মায়ের দুধের প্রয়োজন রয়েছে।’ আদালতের আদেশে বলা হয়, মালেকা বেগম শিশুসন্তানকে লালনপালন করার জন্য নার্গিস বেগমের কাছে দেন। এ বিষয়ে একটি হলফনামাও সম্পাদন করে দেন মালেকা। কিন্তু মাতৃত্ববোধের তাড়নায় মেয়েকে ফিরে পেতে চান এবং থানায় অভিযোগ করেন। তবে বিচারকের কাছে মেয়ে লালনপালন করার জন্য নার্গিসকে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। আদালতকে বলেন, ‘আমার বুকে দুধ আছে। তাহলে বাচ্চাটা একটু বড় হবার পর আফাকে দেই, স্যার।’ দরিদ্র মালেকা কোথায় রাখবেন— এমন প্রশ্নের উদ্ভব হলে মালেকা বলেন, ‘স্যার, নার্গিস আপার বাসার পাশে বাসা নিমু। দুইজনেই মানুষ করুম।’ আদালত মায়ের জিম্মায় শিশুকন্যা আমেনাকে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
    মালেকা বেগম প্রতিবেদককে বলেন, ‘সন্তান দিয়ে দিছি। নিজে খাতি পাই না। স্বামীও চইলা গেছে। সন্তান মানুষ করমু কেমনে। আর বইনের সন্তান নাই। তাই এই বইনেরে দিয়া দিছি।’ নার্গিস বলেন, ‘মালেকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সন্তানকে নিই নি। মা হওয়ার ইচ্ছা পূরণের জন্য তাঁর কাছে এই সন্তান ভিক্ষা চেয়েছি।’

    সচেতন পাঠক মাত্রেই জানেন আমাদের সমাজে এমন রাশেদ, লিজা ও মুক্তার মায়েদের অভাব নেই। প্রতিটি জনপদেই এমন অসহায় নারীর শত দুঃখগাঁথা গুমরে মরছে। কজনের কথাই বা মিডিয়ায় আসে। দুয়েকজনের মর্মস্পর্শী কাহিনী যখন প্রকাশ হয়, তখনই নড়ে-চড়ে বসে দেশের মানুষ। এই দুখী নারীদের ন্যায় দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বিদেশী মদদপুষ্ট এনজিওর সংখ্যাও হাতে গোনার মতো নয়। গরীবদের নিয়ে ব্যবসা করার মতো বিবেক প্রতিবন্ধী অনেক মেধাবী রয়েছেন এ দেশে। গরীবদের নাম ভাঙিয়ে এমপি, মন্ত্রী থেকে নিয়ে অনেক কিছু হওয়া যায়। আঙুল ফুলে কলা গাছ এমনকি বিশ্বজনীন স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল বিজয়ের দৃষ্টান্তও বর্তমান। কিন্তু তাতে রাশেদ, লিজা আর মুক্তার মায়েদের ভাগ্যের হেরফের হয় না। তারা যা ছিল তাই থেকে যায়। সমাজে নারী নির্যাতনের সংখ্যা বাড়ছে বৈ কমছে না। অসহায় নারীর হাহাকার থামছে না। অশিক্ষা-কুশিক্ষাও কাঙ্ক্ষিত হারে কমছে না। তাহলে এতগুলো এনজিও, নারী অধিকার সংগঠন কী করছে? দাতারাই বা তাদের পেছনে অর্থ ঢেলে যাচ্ছে কেন?

    সেটাই আমাদের চিন্তার বিষয়। দাতারা সত্যিই কী চান তাও তর্ক সাপেক্ষ। কিন্তু চিন্তা করলে দেখি, এনজিওগুলো কিছু করুক না করুক মেয়েদের রাস্তায় নামাতে পেরেছে। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে লড়াইয়ে দাঁড় করিয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে। আর যে কাজটি তারা সবচে সফলভাবে করেছে তা হলো নারী অধিকারের ধুয়া তুলে ইসলামী এমনকি খোদ কুরআনী অনেক বিধানের বিরুদ্ধে সুকৌশলে সরলপ্রাণ মুসলিম নর-নারীকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। এ জন্যই নারী উন্নয়ন নীতিমালায় ‘সিডও’ সনদের সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রকারান্তরে কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া হয়েছে। সাধারণ শিক্ষিতদের মধ্যে ইসলামের প্রভাব ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিথিল করে দিয়েছে। অপরিহার্য বিধান পর্দাকে উপেক্ষা এমনকি কটাক্ষ করাকেও সহনীয় করে তুলেছে। তাই দেখা যায় ক’দিন পরপরই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের একটি দেশের নানা প্রান্তের স্কুল-কলেজে ক্ষমার অযোগ্য পন্থায় নারীর অবশ্য পালনীয় এ ফরজ পালনে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে।

    বাংলাদেশে যে কয়টি বায়বীয় ব্যবসা রমরমা তার অন্যতম হলো নারী অধিকার রক্ষা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি নামের বাণিজ্য। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী প্রভৃতি নানা সম্মানজনক পেশার মতো ইদানীং নারী অধিকারকর্মী পেশাটিও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ইসলামের আদর্শবিচ্যুত একটি সমাজে যা হয় আমাদের সমাজে তার সবটুকুই বিদ্যমান। হাজার ‘নাই’ -এর মধ্যে সমাজে ইনসাফ ও সাম্য নাই। ধনী-গরীবের বৈষম্যের মতো নারীর প্রতিও বৈষম্য এখানে স্বাভাবিক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। পশ্চিমের মানসসন্তান অধিকাংশ মিডিয়া ও নারীবাদীরা এমনভাবে ঢাকঢোল পেটায় যেন ধর্মই নারী নির্যাতনের প্রধান হাতিয়ার। ধর্মই বৈষম্যের চাবিকাঠি।

    মজার ব্যাপার হলো, যারা এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তারাই আবার ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলামের সঙ্গে বৈষম্য করেন। পৃথিবীতে তো অনেক ধর্মই রয়েছে। সব ধর্মই তাদের লক্ষ্যবস্তু হবার কথা ছিল। কিন্তু তাদের আক্রমণের শিকার কেবল অধিকারহারা নারীর প্রকৃত অধিকার ও শান্তি নিশ্চিতকারী ধর্ম ইসলাম! সব ধর্মই তাদের আনুকূল্য পায়, ইসলামের বেলায় তারা কেবল খড়গহস্ত। ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের সমালোচনাগুলো যে সর্বৈব মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত, তা নতুন করে প্রমাণের দরকার নেই। বস্তুত নারী নির্যাতনের জন্য ইসলাম দায়ী নয় বরং ইসলাম না মানাই এর জন্য দায়ী। নারী অধিকার রক্ষা শুধু নয়, তা প্রতিষ্ঠা করতেই প্রয়োজন ইসলামী জীবনব্যবস্থা।

    তবে যে ভদ্র মহিলারা নারী অধিকারের ধ্বজা নিয়ে অহরহ ইসলামকে সমালোচনায় বিদ্ধ করেন। তাদের পরিবারের অন্দরমহলের খবর কিন্তু খুব খারাপ। না, আমি সেখানে ডাল-ভাত হওয়া ব্যভিচার বা পাপাচারের কথা বলব না। তুলতে চাইছি তারাই তাদের অধিনস্ত নারীদের কতটুকু অধিকার দেন সে প্রশ্ন। প্রকৃতপক্ষে তাদের প্রতি তারা কতটা বৈষম্যহীন? তাদের বাড়ির পুত্রবধূদের সাক্ষাৎকার নিলেই বুঝবেন দাবি আর বাস্তবতার মধ্যে ফারাক কত বেশি ! নারী নেত্রীর বাসায় কর্মরত দীনহীন ঝি আর বুয়াদের খবর নিলে দেখবেন তাদের প্রতিই চলে কত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ! তারাই সম্মান করেন না মা-শাশুড়িতুল্য অসহায় মহিলাদের! তারাই কিন্তু নিজেরা ইউরোপ-আমেরিকায় মৌজে মেতে অসহায় বাবা-মাকে মানসিক নির্যাতনের ভদ্রোচিত স্থান বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর অপব্যবস্থার আমদানীকারক।

    এখানেই ভণ্ডামির শেষ নয়। নারী অধিকার রক্ষার আন্দোলন করতে জন্ম হলেও তারা মূলত রাজনৈতিক বিষয়েই থাকেন সোচ্চার। রাশেদ-লিজা-মুক্তাদের মায়েদের নিয়ে এদের তেমন মাথা ব্যথা নেই। রোজ সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন নারী নির্যাতনের সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, কিন্তু সেগুলো তেমন নজর কাড়ে না তাদের। ওদের পক্ষে তাদের রাজপথে নামতে দেখা যায় না। দেখা যায় না ওদের পক্ষে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে। দেখা যায় কেবল ইসলামের কোন বিধানে, হাদীসের কোন ইঙ্গিত-ইশারায় নারীকে ঠকানো হয়েছে সেসব আজগুবি তত্ত্ব তালাশ করতে।

    তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও পরিচালনাবিধি পড়ে দেখুন, অসহায় নারীদের সহায়তায় তাদের ভূমিকা যৎসামান্য। এরা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে ব্যস্ত। কারণ, তাহলে আগে নিজেরা ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া যাবে। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনগুলোয় অধিষ্ঠিত তুখোড় মহিলাদের তালিকা দেখুন, তাহলেই বুঝবেন নারীর ক্ষমতায়নের মাজেজা। অন্যভাবে আগের কথাটি আবারও বলতে হয়, স্বার্থপর এই শিক্ষিতাদেরই ভাগ্য বদল হয়, নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন গ্রামের অশিক্ষিত নারীদের ভাগ্য বদল হয় না। মাত্র ক’টি টাকার জন্য নিজের ঔরসজাত সন্তানটিকে পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় একজন মা! (হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ক্ষমা করো। আমরা এদের জন্য কিছুই করতে পারছি না।)

    তবে ওরা যাই করুক না কেন আমরা নিজেদের দায় এড়াতে পারি না। প্রত্যেকের কর্তব্য পাশের বাড়ির খবর নেয়া। নিজ মহল্লার অসহায় নারীদের সাহায্যে সর্বপ্রথম আমাকেই ছুটে যেতে হবে। সাধ্যের মধ্যে যতটুকু করা যায় তা করতে হবে। ওদের সাহায্যার্থে জনমত গঠন এবং ফান্ড কালেকশনের কাজও করতে হবে আমাদের। যে কোনো অসহায় বিপন্ন মানুষকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব প্রধানত ইসলামী রাষ্ট্রের। কিন্তু সমাজ যখন ইসলামী নয়, তখন আখিরাতের জবাবদিহিতা থেকে বাঁচতে আমাদেরই এ দায়িত্ব নিতে হবে আপন কাঁধে।

    আলহামদুলিল্লাহ, এখন বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের তত্ত্বাবধানে বিপন্ন মানবতার সাহায্যে নানা ইসলামী এনজিও গড়ে উঠেছে। কিন্তু যুগপৎ দুঃখ ও রহস্যজনক ব্যাপার হলো এসব এনজিও সব সময় রাষ্ট্রের পরিচালকদের কোপানলে পড়েছে। তাদের যেখানে সহযোগিতা করার কথা, সেখানে তারা পথে পথে বাধার বিন্ধাচল তৈরি করেন। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় পশ্চিমা মদদপুষ্ট বিভিন্ন এনজিও ধর্মান্তরিতকরণ জোরদার করেছে, তারা কখনো সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয় নি। অথচ আল্লাহকে খুশি করার নিয়তে পরিচালিত ইসলামী এনজিওগুলোর ব্যাপারে সব সময় নেতিবাচক মনোভাব পরিলক্ষিত হয়।

    পাশাপাশি ইসলামী এনজিওগুলোকে আরও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। শুধু মক্তব ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা নিয়েই ব্যস্ত না থেকে, সমাজের আরও কাছে ঘেঁষতে হতে হবে। মানুষের আরও কাছে পৌঁছতে হবে আপনাদের। ওরা অসহায় নারীদেরকে সুকৌশনে নানা শ্লোগানে বিভ্রান্ত করছে। এনজিওগুলো প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে খোদ মুসলিমদের ক্ষেপিয়ে তুলছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের ঈমান হরণ করছে। খ্রিস্টবাদ প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করছে। তাদের প্রতিনিধিদের রাষ্ট্র পরিচালনার নানা পর্যায়ে ঢুকিয়ে দিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করছে। এসব ব্যাপারে আমাদের ইসলামী এনজিওগুলো যথেষ্ট সচেতন নয়।

    আমি মনে করি, ইসলামই যেহেতু নারীকে সবচে বেশি অধিকার দিয়েছে, তাই ইসলামের ধারকরাই নারীদের অধিকার আদায়ে সবচে বেশি কথা বলবেন। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে তারাই সবচে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। আল্লাহর শোকর তাঁরা তা করেন এবং করছেনও। তবে এ ভূমিকাকে এখন সাংগঠনিক রূপ দিতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে ইসলামের মনোভাব তুলে ধরতে হবে। নারী নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করতে প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে ইসলামী এনজিগুলোকে নিজেদের নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও মনোযোগ প্রমাণ করতে হবে। তাহলে এমনিতেই ওরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। নারীদেরকে তারা আর মগজ ধোলাই করতে পারবে না। মিডিয়াগুলোও তাদের সুরে কথা বলে মানুষের ঈমান হরণ করতে পারবে না।

    ওরা যেখানে গরিবদের জন্য টাকা এনে নিজের পেটে চালান করে হঠাৎ ধনী হয়ে যাচ্ছে। নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। বাড়ি, গাড়ি ও সুন্দরী নারী নিশ্চিত করছে, সেখানে ওদের মোকাবিলায় আমার ভাইদেরকে অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। অন্যের টাকা আত্মসাতের প্রশ্নই তো ওঠে না, কখনো কখনো প্রয়োজনে নিজের পকেট থেকেও দিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে এসব অসহায় নারীর সেবায় এগিয়ে যাবার তাওফীক দিন। বিপন্ন মানবতা ও অসহায় বোনদের জন্য কিছু করবার, তাদের পাশে আপন হিসেবে দাঁড়াবার তাওফীক দিন। সমাজের প্রতিটি স্তরে বিদ্যমান অনৈতিকতা ও বৈষম্য প্রতিরোধে এবং অসহায় আদম কন্যাদের প্রতি নির্যাতন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবার তাওফীক দিন। আমীন। ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।