×
এ নিবন্ধে তাকওয়ার ইহাকালীন ও পরকালীন গুরুত্বপূর্ণ কতক উপকারিতার বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

    তাকওয়ার উপকারিতা

    [ বাংলা – Bengali – بنغالي ]

    মুহাম্মদ ইব্‌ন সালেহ আল-উসাইমীন

    অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

    সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    2011 - 1432

    ﴿ فوائد التقوى ﴾

    « باللغة البنغالية »

    محمد بن صالح العثيمين

    ترجمة: ثناء الله نذير أحمد

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    2011 - 1432

    তাকওয়ার উপকারিতা

    ‎তাকওয়া এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আল্লাহ তা‘আলা যার অসিয়ত তার পূর্বাপর সকল বান্দাকে করেছেন ও তা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

    ﴿وَلَقَدۡ وَصَّيۡنَا ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ وَإِيَّاكُمۡ أَنِ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ وَإِن تَكۡفُرُواْ فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَنِيًّا حَمِيدٗا ١٣١ ﴾ [النساء: ١٣١]

    “আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা ‎আল্লাহকে ভয় কর। আর যদি কুফরী কর তাহলে আসমানসমূহে যা আছে এবং যা আছে জমিনে সব আল্লাহরই। আর ‎আল্লাহ অভাবহীন, প্রশংসিত।” [সূরা নিসা: (১৩১)]

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার উম্মতকে তাকওয়া গ্রহণ করার ‎নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে:‎

    فعن أبي أمامة صُدى بن عجلان الباهلي قال: سمعت رسول الله يخطب في حجة الوداع فقال: {اتقوا ربكم وصلّوا خمسكم، وصوموا شهركم، وأدّوا زكاة أموالكم، وأطيعوا أمراءكم، تدخلوا جنة ربكم}.

    আবু উমামা সুদাই ইব্‌ন আজলান আল-বাহেলী বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিদায়ী হজে খুতবা ‎দিতে শুনেছি। তিনি বলেন: “তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অর্জন কর, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় কর, তোমাদের ‎রমযানে সিয়াম পালন কর, তোমাদের সম্পদের যাকাত আদায় কর, তোমরা তোমাদের নেতাদের অনুসরণ কর, অতঃপর তোমরা তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ কর।” অনুরূপভাবে তিনি যখন কাউকে যুদ্ধাভিযানের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করতেন, তাকে তিনি বিশেষভাবে নিজের ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া গ্রহণ করা ও মুসলিমদের ব্যাপারে কল্যাণ ‎কামনা করার অসিয়ত করতেন।‎

    আমাদের আদর্শ পূর্ব পুরুষগণ তাদের চিঠি-পত্র, বয়ান-বক্তৃতা ও মৃত্যুর সময় তাকওয়ার অসিয়ত করতেন। ওমর ‎ইবনে আব্দুল আযীয তার ছেলে আব্দুল্লাহকে লেখেন: “অতঃপর... আমি তোমাকে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার অসিয়ত ‎করছি, যার সাথে তোমাকে অবশ্যই সাক্ষাত করতে হবে, তিনি ব্যতীত তোমার কোন আশ্রয় নেই, তিনিই দুনিয়া-‎আখেরাতের মালিক।”

    আরেক বুজুর্গ তার এক দীনি ভাইকে লেখেন: “অতঃপর... আমি তোমাকে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার ‎নির্দেশ দিচ্ছি, যিনি তোমার গোপনের সাথী, প্রকাশ্যের পর্যবেক্ষক, অতএব রাত-দিনের প্রতি মুহূর্তে তুমি তাঁর কথা তোমার অন্তরে রাখ। তিনি তোমার যত কাছে এবং তোমার ওপর তার যে পরিমাণ ক্ষমতা রয়েছে, সে পরিমাণ তুমি তাকে ভয় কর। জেনে ‎‎রেখ, তুমি তার সামনেই আছ, তার কর্তৃত্ব থেকে বের হয়ে কারো কর্তৃত্ব যাওয়ার তোমার কোন সুযোগ নেই, তার রাজত্ব থেকে মুক্ত হয়ে কারো রাজত্বে যেতে পারবে না, সুতরাং তার ব্যাপারে তুমি খুব সতর্ক থাক এবং তাকে খুব ভয় কর। ওয়াস্‌সালাম।

    তাকওয়ার অর্থ: বান্দা যে জিনিসকে ভয় করে তার থেকে বাঁচা ও তার থেকে আড়াল হওয়ার ঢাল গ্রহণ করার নাম তাকওয়া।

    আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার অর্থ: বান্দা যে জিনিসকে ভয় করে, যেমন আল্লাহর গোস্বা, শাস্তি ও অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচা ও তার থেকে সুরক্ষার জন্য আল্লাহর আনুগত্য করা ও তার নাফরমানি থেকে বিরত থাকা।

    প্রিয় পাঠক, তাকওয়ার অর্থ আরো স্পষ্ট করার জন্য আমাদের মনীষীদের কিছু সংজ্ঞা আপনার সামনে পেশ ‎করছি:

    ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু তাকওয়া অর্জনকারী মুত্তাকীর সংজ্ঞায় বলেছেন: “মুত্তাকী তারা, যারা আল্লাহ ও তার শাস্তিকে ভয় করে।”

    তালক ইবনে হাবীব বলেছেন: “তাকওয়ার অর্থ: আল্লাহর নির্দেশমতো তুমি তার আনুগত্য কর ও তার ‎সাওয়াবের আশা রাখ এবং তার নির্দেশমতো তার নাফরমানী ত্যাগ কর ও তার শাস্তিকে ভয় কর।”

    ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর নিম্নের বাণী:

    ﴿ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ ١٠٢ ﴾ [ال عمران: ١٠٢]

    “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ‎ভয়।” প্রসঙ্গে বলেন: তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য করা তার নাফরমানী না করা, আল্লাহকে স্মরণ করা তাকে না ভুলা, তার ‎‎শোকর আদায় করা তার কুফরী না করা।”‎

    প্রিয় পাঠক, আপনি আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার ব্রত গ্রহণ করুন। মনে রাখুন তিনিই একমাত্র ভয় ও সম্মানের পাত্র। তাকে ‎আপনার অন্তরের মণি কোঠায় বড়ত্বের মর্যাদায় আসীন করুন। নিম্নে আমরা তাকওয়ার কতক ইহকাল ও আখেরাতের উপকারিতা উল্লেখ করছি, যা আমাদের মুসলিম ভাইদেরকে তাকওয়া অর্জনে আগ্রহী করবে ও জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাদেরকে তাকওয়া গ্রহণে উৎসাহ দেবে। আল্লাহ সহায়।

    প্রথমত: তাকওয়ার ইহকালীন উপকারিতা:‎

    ১. তাকওয়ার ফলে পার্থিব জগতে আল্লাহ মানুষের কাজগুলো সহজ করে দেন, তারা তাদের জরুরী প্রয়োজন সহজে সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مِنۡ أَمۡرِهِۦ يُسۡرٗا ٤ ﴾ [الطلاق: ٤] وقال تعالى: ﴿ فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥ وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡيُسۡرَىٰ ٧ ﴾ [الليل: ٥، ٧]

    “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সূরা তালাক: (৪)] তিনি আরো বলেন: “সুতরাং ‎‎যে দান করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা ‎সুগম করে দেব।” [সূরা লাইল: (৫-৭)]

    ২. তাকওয়া পার্থিব জগতে মানুষকে শয়তানের সব অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ إِذَا مَسَّهُمۡ طَٰٓئِفٞ مِّنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم مُّبۡصِرُونَ ٢٠١ ﴾ [الاعراف: ٢٠٠]

    “নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা ‎আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়।” [সূরা আরাফ: (২০১)]

    ৩. দুনিয়াবাসীর তাকওয়ার ফলে আসমান ও যমিনের বরকত উন্মুক্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ ٩٦ ﴾ [الاعراف: ٩٥]

    “আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমিন ‎‎থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম।” [সূরা আরাফ: (৯৬)]‎

    ৪. বান্দা তাকওয়ার ফলে হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করতে সক্ষম হয় ও তা বুঝার তাওফিক লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা ‎বলেন:

    ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن تَتَّقُواْ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّكُمۡ فُرۡقَانٗا ٢٩ ﴾ [الانفال: ٢٩]

    وقال تعالى: ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَءَامِنُواْ بِرَسُولِهِۦ يُؤۡتِكُمۡ كِفۡلَيۡنِ مِن رَّحۡمَتِهِۦ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ نُورٗا تَمۡشُونَ بِهِۦ ٢٨ ﴾ [الحديد: ٢٨]

    হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান প্রদান করবেন।” [সূরা ফুরকান: ‎‎(২৯)] ফুরকান অর্থ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যা পার্থক্য করার জ্ঞান। তিনি আরো বলেন: “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তিনি স্বীয় ‎রহমতে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেবেন, আর তোমাদেরকে নূর দেবেন যার সাহায্যে তোমরা চলতে পারবে।” [সূরা ‎হাদীদ: (২৮)]‎

    ৫. তাকওয়া অর্জনকারী মুত্তাকী ব্যক্তি তার তাকওয়ার ফলে কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি পায় এবং এমন জায়গা থেকে রিযক লাভ ‎করে, যা তার কল্পনার ঊর্ধ্বে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ٣ ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]

    “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন ‎যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” সূরা তালাক: (২-৩)

    ৬. তাকওয়ার দ্বারা পার্থিব জগতে বান্দা আল্লাহর বন্ধুত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়। কারণ তিনি মুত্তাকীদের বন্ধু ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ إِنۡ أَوۡلِيَآؤُهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُتَّقُونَ ٣٤ ﴾ [الأنفال: ٣٤] وقال تعالى: ﴿ وَإِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۖ وَٱللَّهُ وَلِيُّ ٱلۡمُتَّقِينَ ١٩ ﴾ [الجاثية: ١٩]

    “তার অভিভাবক (বন্ধু) তো শুধু মুত্তাকীগণ।” [সূরা আনফাল: (৩৪)] তিনি আরো বলেন: “আর নিশ্চয় যালিমরা মূলত একে ‎অপরের বন্ধু এবং আল্লাহ মুত্তাকীদের বন্ধু।” [সূরা জাসিয়া: (১৯)]‎

    ৭. পার্থিব জগতে মুত্তাকী তাকওয়ার ফলে কাফেরদের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَإِن تَصۡبِرُواْ وَتَتَّقُواْ لَا يَضُرُّكُمۡ كَيۡدُهُمۡ شَيۡ‍ًٔاۗ ١٢٠ ﴾ [ال عمران: ١٢٠]

    “আর যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করবে না।” [সূরা ‎আলে ইমরান: (১২০)]‎

    ৮. তাকওয়ার ফলে মুসিবত ও দুশমনের মোকাবিলার মুহূর্তে আসমান থেকে সাহায্য অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ ‎তা‘আলা বলেন:

    ﴿وَلَقَدۡ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدۡرٖ وَأَنتُمۡ أَذِلَّةٞۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٢٣ إِذۡ تَقُولُ لِلۡمُؤۡمِنِينَ أَلَن يَكۡفِيَكُمۡ أَن يُمِدَّكُمۡ رَبُّكُم بِثَلَٰثَةِ ءَالَٰفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُنزَلِينَ ١٢٤ بَلَىٰٓۚ إِن تَصۡبِرُواْ وَتَتَّقُواْ وَيَأۡتُوكُم مِّن فَوۡرِهِمۡ هَٰذَا يُمۡدِدۡكُمۡ رَبُّكُم بِخَمۡسَةِ ءَالَٰفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُسَوِّمِينَ ١٢٥﴾ [ال عمران: ١٢٣، ١٢٥]

    “আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় ‎কর, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে। স্মরণ কর, যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট ‎নয় যে, তোমাদের রব তোমাদেরকে তিন হাজার নাযিলকৃত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন’? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধর ‎এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, আর তারা হঠাৎ তোমাদের মুখোমুখি এসে যায়, তবে তোমাদের রব পাঁচ হাজার চি‎হ্নিত ‎‎ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন।” [সূরা আলে ইমরান: (১২৩-১২৫)] সাহায্য ও শক্তিবৃদ্ধির ঘোষণা একটি সুসংবাদ, যার ফলে অন্তর প্রশান্ত হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যের ঘোষণার কারণে নিজেদের মনোবল বাড়ে ও শক্তি সঞ্চয় হয়। এরপর আল্লাহ বলেন:

    ﴿ وَمَا جَعَلَهُ ٱللَّهُ إِلَّا بُشۡرَىٰ لَكُمۡ وَلِتَطۡمَئِنَّ قُلُوبُكُم بِهِۦۗ وَمَا ٱلنَّصۡرُ إِلَّا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَكِيمِ ١٢٦ ﴾ [ال عمران: ١٢٦]

    “আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তা কেবল সুসংবাদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন এবং যাতে তোমাদের অন্তরসমূহ এর দ্বারা প্রশান্ত ‎হয়। আর সাহায্য কেবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে।” [সূরা আলে ইমরান: (১২৬)]‎

    ৯. তাকওয়ার ফলে আল্লাহর বান্দাগণ মুসিবত ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিরাপত্তা লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ٢ ﴾ [المائ‍دة: ٢] وقال تعالى في قصة مريم: ﴿ فَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرٗا سَوِيّٗا ١٧ قَالَتۡ إِنِّيٓ أَعُوذُ بِٱلرَّحۡمَٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيّٗا ١٨ ﴾ [مريم: ١٧، ١٨]

    “সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না।” [‎সূরা মায়েদা: (২)] মারইয়াম আলাইহিস সালামের ঘটনায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তখন আমি তার নিকট আমার রূহ (জিবরীল)কে প্রেরণ ‎করলাম। অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করল। মারইয়াম বলল, ‘আমি তোমার থেকে পরম করুণাময়ের ‎আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তুমি মুত্তাকী হও।” [সূরা মারইয়াম: (১৭-১৮)]‎

    ১০. তাকওয়া অর্জনকারী প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢ ﴾ [الحج: ٣٢]

    “এটাই হল আল্লাহর বিধান; যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই।” [সূরা ‎হাজ্জ: (৩২)]‎

    ১১. তাকওয়ার ফলে আমল বিশুদ্ধ হয় ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে এবং পাপ মোচন হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ ٧١ ﴾ [الأحزاب: ٧٠، ٧١]

    “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ ‎করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে ‎অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল।” [সূরা আহযাব: (৭০-৭১)]‎

    ১২. মুত্তাকী তার তাকওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আদব প্রদর্শনে সক্ষম হয়, অর্থাৎ তার সামনে তার আওয়াজ অনুচ্চ থাকে। জীবিত অবস্থায় তো বটেই, মৃত্যুর পরও তার নির্দেশ অতিক্রম করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصۡوَٰتَهُمۡ عِندَ رَسُولِ ٱللَّهِ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱمۡتَحَنَ ٱللَّهُ قُلُوبَهُمۡ لِلتَّقۡوَىٰۚ ٣ ﴾ [الحجرات: ٣]

    “নিশ্চয় যারা আল্লাহর রাসূলের নিকট নিজদের আওয়াজ অবনমিত করে, আল্লাহ তাদেরই অন্তরগুলোকে তাকওয়ার জন্য ‎বাছাই করেছেন।” [সূরা হুজুরাত: (৩)]‎

    ১৩. তাকওয়ার দ্বারা আল্লাহর মহব্বত লাভ হয়। এ মহব্বত যেমন দুনিয়াতে লাভ হয়, অনুরূপ আখেরাতেও লাভ হবে। ‎হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন:

    «ما تقرّب إليّ عبدٌ بشيء بأفضل مما افترضته عليه، ولا يزال عبدي يتقرّب إليّ بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها، ولئن سألني لأعطينه، ولئن استعاذ بي لأعيذنه»

    “আমি বান্দার উপর যা ফরয করেছি, তার চেয়ে উত্তম জিনিসের মাধ্যমে কোন বান্দা আমার নৈকট্য অর্জন করতে ‎পারেনি। বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, এক সময় আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে ‎মহব্বত করি, তখন আমি তার কর্ণে পরিণত হই, যে কর্ণ দিয়ে সে শ্রবণ করে, তার দৃষ্ট শক্তিতে পরিণত হই, যা দিয়ে ‎‎সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যা দিয়ে সে পাকড়াও করে এবং তার পায়ে পরিণত হই যা দিয়ে সে চলে।[1] সে ‎যদি আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তাকে অবশ্যই দেব এবং সে যদি আমার ওসিলায় আশ্রয় প্রার্থনা করে আমি তাকে ‎অবশ্যই আশ্রয় প্রদান করব।” [বুখারী: ৬৫০২]

    আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ بَلَىٰۚ مَنۡ أَوۡفَىٰ بِعَهۡدِهِۦ وَٱتَّقَىٰ فَإِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَّقِينَ ٧٦ ﴾ [ال عمران: ٧٦]

    ‘হ্যাঁ, অবশ্যই যে নিজ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন ‎করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।” [সূরা আলে ইমরান: (৭৬)]‎

    ১৪. তাকওয়ার ফলে ইলম ও জ্ঞান অর্জন হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱللَّهُۗ ٢٨٢ ﴾ [البقرة: ٢٨٢]

    “আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দেবেন।” [সূরা বাকারা: (২৮২)]‎

    ১৫. আল্লাহর অনুগ্রহে ইসলামের হিদায়েত লাভ করার পর কেউ যদি পূর্ণ তাকওয়া অবলম্বন করে, তাহলে তার দ্বীনের সঠিক বুঝ অর্জন হয় ও সে পথভ্রষ্টতা থেকে সুরক্ষা পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٥٣ ﴾ [الانعام: ١٥٣]

    “আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা ‎‎তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া ‎অবলম্বন কর।” সূরা আনআম: (১৫৩)

    ১৬. তাকওয়া দ্বারা আল্লাহর রহমত লাভ হয়। এ রহমত যেরূপ দুনিয়াতে লাভ হবে, অনুরূপ আখেরাতেও লাভ হবে। আল্লাহ ‎তা‘আলা বলেন:

    ﴿وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بِ‍َٔايَٰتِنَا يُؤۡمِنُونَ ١٥٦ ﴾ [الاعراف: ١٥٥]

    “আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ‎এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে।” [সূরা আরাফ: (১৫৬)]‎

    ১৭. তাকওয়ার ফলে পার্থিব জগতে আল্লাহর সংঘ ও সাথীত্ব অর্জন হয়। বান্দার সাথে আল্লাহর সাথীত্ব দু’প্রকার। সাধারণ সাথীত্ব: এটা আল্লাহর সব বান্দার জন্য ব্যাপক, যেমন তার শুনা, দেখা ও জানা সবার জন্য সমান। তিনি সবার কাজকর্ম সমানভাবে প্রত্যক্ষ করেন, সব কিছু শুনেন ও সবার অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন। তিনি বলেন:

    ﴿ وَهُوَ مَعَكُمۡ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡۚ ٤ ﴾ [الحديد: ٤] وقال تعالى: ﴿ أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۖ مَا يَكُونُ مِن نَّجۡوَىٰ ثَلَٰثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمۡ وَلَا خَمۡسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمۡ وَلَآ أَدۡنَىٰ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكۡثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمۡ أَيۡنَ مَا كَانُواْۖ ٧ ﴾ [المجادلة: ٧]

    “আর তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথেই আছেন।” [সূরা হাদীদ: (৪)] তিনি আরো বলেন: “তুমি কি ‎লক্ষ্য করনি যে, আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন? তিন জনের কোন গোপন পরামর্শ হয় না ‎যাতে চতুর্থজন হিসেবে আল্লাহ থাকেন না, আর পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি থাকেন না। এর চেয়ে ‎কম হোক কিংবা বেশি হোক, তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন।” [সূরা মুজাদিলা: (৭)] এসব আয়াতে আল্লাহর সাথীত্ব বা সাথে থাকার অর্থ তিনি বান্দার অবস্থা জানেন, তাদের কথা শ্রবণ করেন, তাদের সবকিছু তার নিকট স্পষ্ট।

    দ্বিতীয় সাথীত্ব: এটা হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ সংঘ বা সাথীত্ব: এ সাথীত্ব আল্লাহর সাহায্য, সমর্থন ও সহায়তার অর্থ প্রদান করে। যেমন আল্লাহ ‎তা‘আলা বলেন:

    ﴿لَا تَحۡزَنۡ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَنَاۖ ٤٠﴾التوبة: ٤٠ وقال تعالى: ﴿ قَالَ لَا تَخَافَآۖ إِنَّنِي مَعَكُمَآ أَسۡمَعُ وَأَرَىٰ ٤٦ ﴾ [طه: ٤٦]

    “তুমি পেরেশান হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।” সূরা তওবা: (৪০) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে: “তিনি ‎বললেন, ‘তোমরা ভয় করো না। আমি তো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি।” সূরা ত্বহা: (৪৬) এসব আয়াতে আল্লাহ সাথে আছেন বা তার সাথীত্ব অর্থ হচ্ছে সাহায্য ও সমর্থন। আল্লাহর এ জাতীয় সাথীত্ব একমাত্র তার বিশেষ বান্দাদের সাথে খাস। যেমন তিনি বলেন:

    ﴿ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَواْ وَّٱلَّذِينَ هُم مُّحۡسِنُونَ ١٢٨ ﴾ [النحل: ١٢٨] وقال تعالى: ﴿ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلۡمُتَّقِينَ ١٩٤ ﴾ [البقرة: ١٩٤]

    “নিশ্চয় আল্লাহ ‎তাদের সাথে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল।” [সূরা নাহাল: (১২৮)] তিনি আরো বলেন: “এবং জেনে ‎রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।” [সূরা বাকারা: (১৯৪)]

    ১৮. শুভ পরিণতি বা শেষ ফল তাকওয়ার অধিকারী আল্লাহর মুত্তাকী বান্দাগণ লাভ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلتَّقۡوَىٰ ١٣٢ ﴾ [طه: ١٣٢] وقال تعالى: ﴿ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مَ‍َٔابٖ ٤٩ ﴾ [ص: ٤٩] وقال تعالى: ﴿ إِنَّ ٱلۡعَٰقِبَةَ لِلۡمُتَّقِينَ ٤٩ ﴾ [هود: ٤٩]

    “আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা ত্বহা: (১৩২)] তিনি অন্যত্র বলেন: “আর মুত্তাকীদের ‎জন্য অবশ্যই রয়েছে উত্তম নিবাস।” [সূরা সাদ: (৪৯)] তিনি আরো বলেন: “নিশ্চয় শুভ পরিণাম কেবল মুত্তাকীদের জন্য।” [‎সূরা হুদ: (৪৯)]‎

    ১৯. তাকওয়ার অধিকারী মুত্তাকীগণ পার্থিব জগতে সুসংবাদ লাভ করেন। যেমন সে ভাল স্বপ্ন দেখল অথবা মানুষের ব্যাপক মহব্বত, প্রশংসা ও সম্মান লাভ করল ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ لَهُمُ ٱلۡبُشۡرَىٰ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۚ ٦٤ ﴾ [يونس: ٦٣، ٦٤]

    “যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করত। তাদের জন্যই সুসংবাদ দুনিয়াবি জীবনে এবং আখিরাতে।” সূরা ‎ইউনুস: (৬৩-৬৪)

    ইমাম আহমদ আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: ‎لَهُمُ الْبُشْرَى فِي ‏الْحَياةِ الدُّنْيَا‎ এর ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এর অর্থ: “ভাল স্বপ্ন যা মুসলিম দেখে অথবা তাকে দেখানো হয়।”

    আবুযর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, কেউ কোন আমল করার পর মানুষেরা তার প্রশংসা ‎করে ও তার গুণকীর্তন গায়, (এর হুকুম কি)? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‎{تلك عاجل بشرى المؤمن}.‎ ‎এটা হচ্ছে মুমিনের নগদ সুসংবাদ।‎

    ২০. নারীরা যদি তাকওয়া অবলম্বন করে এবং কথা ও কাজে তার বাস্তবায়ন ঘটায়, তাহলে যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা তাদের ওপর লোভ করার সুযোগ ও সাহস পায় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا ٣٢ ﴾ [الاحزاب: ٣٢]

    “হে নবীÑপতিœগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) ‎‎কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।” [সূরা ‎আহযাব: (৩২)]‎

    ২১. যাদের অন্তরে তাকওয়া রয়েছে, তারা অসিয়ত ও ভাগ-বণ্টনে কারো ওপর যুলুম করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ كُتِبَ عَلَيۡكُمۡ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ إِن تَرَكَ خَيۡرًا ٱلۡوَصِيَّةُ لِلۡوَٰلِدَيۡنِ وَٱلۡأَقۡرَبِينَ بِٱلۡمَعۡرُوفِۖ حَقًّا عَلَى ٱلۡمُتَّقِينَ ١٨٠ ﴾ [البقرة: ١٨٠]

    “তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হবে, যদি সে কোন সম্পদ রেখে যায়, তবে ‎পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ন্যায়ভিত্তিক অসিয়ত করবে। এটি মুত্তাকীদের দায়িত্ব।” [সূরা বাকারা: (১৮০)]‎

    ২২. পুরুষের মধ্যে তাকওয়া থাকলে তালাক প্রাপ্ত নারী তার জরুরী খোর-পোষ ও বরণ-পোষণ লাভ করে। অর্থাৎ মুত্তাকী পুরুষেরা তাদের তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীদের ওপর শরীয়তের নির্দেশ মোতাবেক খরচ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَلِلۡمُطَلَّقَٰتِ مَتَٰعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِۖ حَقًّا عَلَى ٱلۡمُتَّقِينَ ٢٤١ ﴾ [البقرة: ٢٤١]

    “আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য থাকবে বিধি মোতাবেক ভরণ-পোষণ। (এটি) মুত্তাকীদের উপর আবশ্যক।” [সূরা বাকারা ‎‎: (২৪১)]

    ২৩. তাকওয়ার ফলে দুনিয়া ও আখেরাতের কোন প্রতিদান নষ্ট হয় না। ইউসুফ আলাইহিস সালাম তার ভাই ও পরিবারের ‎সাথে একত্র হয়ে বলেন:

    ﴿ إِنَّهُۥ مَن يَتَّقِ وَيَصۡبِرۡ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجۡرَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٩٠ ﴾ [يوسف: ٨٩]

    “নিশ্চয় যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সবর করে, তবে অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।” [সূরা ইউসুফ: (৯০)]‎

    ২৪. তাকওয়ার ফলে হিদায়েত লাভ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ الٓمٓ ١ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ﴾ [البقرة: ١، ٢]

    “আলিফ-লাম-মীম। এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়েত।” [সূরা বাকারা: (১-২)]‎

    দ্বিতীয়ত: তাকওয়ার পরকালীন উপকারিতা:‎

    ১. তাকওয়ার ফলে আখেরাতে আল্লাহর নিকট সম্মান লাভ হবে। তিনি বলেন:

    ﴿ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ ١٣ ﴾ [الحجرات: ١٣]

    “তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন।” [সূরা হুজুরাত: (১৩)]‎

    ২. তাকওয়া পরকালীন সফলতা ও কামিয়াবির চাবিকাঠি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَخۡشَ ٱللَّهَ وَيَتَّقۡهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ٥٢ ﴾ [النور: ٥٢]

    “আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই ‎কৃতকার্য।” [সূরা হুজুরাত: (৫২)]‎

    ৩. কিয়ামতের দিন তাকওয়ার ফলে আল্লাহর শাস্তি থেকে নাজাত মিলবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَإِن مِّنكُمۡ إِلَّا وَارِدُهَاۚ كَانَ عَلَىٰ رَبِّكَ حَتۡمٗا مَّقۡضِيّٗا ٧١ ثُمَّ نُنَجِّي ٱلَّذِينَ ٱتَّقَواْ وَّنَذَرُ ٱلظَّٰلِمِينَ فِيهَا جِثِيّٗا ٧٢ ﴾ [مريم: ٧١، ٧٢] وقال تعالى: ﴿ وَسَيُجَنَّبُهَا ٱلۡأَتۡقَى ١٧ ﴾ [الليل: ١٧]

    “আর তোমাদের প্রত্যেককেই তা অতিক্রম করতে হবে, এটি তোমার রবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তারপর আমি এদেরকে মুক্তি ‎‎দেব যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে। আর যালিমদেরকে আমি সেখানে রেখে দেব নতজানু অবস্থায়।” [সূরা মারইয়াম: ‎‎(৭১-৭২)] অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন: “আর তা থেকে দূরে রাখা হবে পরম মুত্তাকীকে।” [সূরা লাইল: (১৭)]‎

    ৪. তাকওয়ার ফলে আমল কবুল হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلۡمُتَّقِينَ ٢٧ ﴾ [المائ‍دة: ٢٧]

    “অন্যজন (হাবিল) বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন।” [সূরা মায়েদা: (২৭)]‎

    ৫. তাকওয়ার ফলে আখেরাতে জান্নাতের মিরাস ও উত্তরাধিকার লাভ হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ تِلۡكَ ٱلۡجَنَّةُ ٱلَّتِي نُورِثُ مِنۡ عِبَادِنَا مَن كَانَ تَقِيّٗا ٦٣ ﴾ [مريم: ٦٣]

    “সেই জান্নাত, আমি যার উত্তরাধিকারী বানাব আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে যারা মুত্তাকী।” [সূরা মারইয়াম: (৬৩)]‎

    ৬. তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য আখেরাতে জান্নাতে সুদৃঢ় প্রাসাদ থাকবে, যার উপরেও থাকবে প্রাসাদ। আল্লাহ ‎তা‘আলা বলেন:

    ﴿ لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٞ مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠ ﴾ [الزمر: ٢٠]

    “কিন্তু যারা নিজদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে কক্ষসমূহ যার উপর নির্মিত আছে আরো কক্ষ। তার নিচ দিয়ে ‎নদী প্রবাহিত। এটি আল্লাহর ওয়াদা; আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না।” [সূরা যুমার: (২০)]‎ হাদীসে এসেছে:‎

    { إن في الجنة لغرفاً يرى بطونها من ظهورها، وظهورها من بطونها } فقال أعرابي: لمن هذا يا رسول الله؟ قال: { لمن أطاب الكلام، وأطعم الطعام، وصلّى بالليل والناس نيام }.

    “নিশ্চয় জান্নাতের মধ্যে এমন কিছু প্রাসাদ রয়েছে, যার অভ্যন্তর বাহির থেকে দেখা যাবে এবং বাহির ভেতর থেকে দেখা ‎যাবে। এক বেদুঈন জিজ্ঞাসা করল: হে আল্লাহর রাসূল, এ প্রাসাদগুলো কার জন্যে হবে ? তিনি বললেন: “যে সুন্দর কথা ‎বলবে, খানা খাওয়াবে ও মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকবে, তখন সে সালাত পড়বে।‎

    ৭. মুত্তাকীগণ তাকওয়ার ফলে কিয়ামতের দিন পুনরুত্থানের মুহূর্তে, হাশরের ময়দানে, চলার পথে ও বসার ‎‎স্থানে কাফেরদের উপরে অবস্থান করবে। তারা জান্নাতের সুউচ্চ স্থানে সমাসীন হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَا وَيَسۡخَرُونَ مِنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْۘ وَٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ فَوۡقَهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ وَٱللَّهُ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٢١٢ ﴾ [البقرة: ٢١٢]

    “যারা কুফরী করেছে, দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। আর তারা মুমিনদের নিয়ে উপহাস করে। ‎আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তারা কিয়ামত দিবসে তাদের উপরে থাকবে। আর আল্লাহ যাকে চান, বেহিসাব রিযক ‎‎দান করেন।” [সূরা বাকারা: (২১২)]‎

    ৮. তাকওয়ার ফলে আখেরাতে জান্নাত লাভ হবে, কারণ জান্নাত মুত্তাকীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ‎বলেন:

    ﴿وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣] وقال تعالى: ﴿ وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَكَفَّرۡنَا عَنۡهُمۡ سَيِّ‍َٔاتِهِمۡ وَلَأَدۡخَلۡنَٰهُمۡ جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ ٦٥ ﴾ [المائ‍دة: ٦٥]

    “আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও ‎জমিনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।” [সূরা আলে ইমরান: (১৩৩)] তিনি আরো বলেন: “আর যদি ‎কিতাবিরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের থেকে পাপগুলো দূর করে দিতাম এবং ‎অবশ্যই তাদেরকে আরামদায়ক জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাতাম।” [সূরা মায়েদা: (৬৫)]‎

    ৯. আখেরাতে তাকওয়া গুনাহের কাফফারা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يُكَفِّرۡ عَنۡهُ سَيِّ‍َٔاتِهِۦ وَيُعۡظِمۡ لَهُۥٓ أَجۡرًا ٥ ﴾ [الطلاق: ٥] وقال تعالى: ﴿ وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَكَفَّرۡنَا عَنۡهُمۡ سَيِّ‍َٔاتِهِمۡ ٦٥ ﴾ [المائ‍دة: ٦٥]

    “আর যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার গুনাহসমূহ মোচন করে দেন এবং তার প্রতিদানকে মহান করে দেন।” [সূরা তালাক ‎‎: (৫)] তিনি আরো বলেন: “আর যদি কিতাবিরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের ‎‎থেকে পাপগুলো দূর করে দিতাম।” [সূরা মায়েদা: (৬৫)]

    ১০. তাকওয়ার ফলে আখেরাতে মনের চাহিদা পূরণ হবে ও চোখের শীতলতা লাভ হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ لَهُمۡ فِيهَا مَا يَشَآءُونَۚ كَذَٰلِكَ يَجۡزِي ٱللَّهُ ٱلۡمُتَّقِينَ ٣١ ﴾ [النحل: ٣١]

    “স্থায়ী জান্নাতসমূহ যাতে তারা প্রবেশ করবে, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ। তারা চাইবে, তাদের জন্য তার ‎মধ্যে তাই থাকবে। এভাবেই আল্লাহ মুত্তাকীদের প্রতিদান দেন।” [সূরা নাহাল: (৩১)] ‎

    ১১. তাকওয়ার ফলে আখেরাতে ভয় ও পেরেশানি দূর হবে এবং কিয়ামতের দিন কোন অনিষ্ট মুত্তাকীকে স্পর্শ করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা ‎বলেন:

    ﴿ وَيُنَجِّي ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ بِمَفَازَتِهِمۡ لَا يَمَسُّهُمُ ٱلسُّوٓءُ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦١ ﴾ [الزمر: ٦٠] وقال تعالى: ﴿ أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ ﴾ [يونس: ٦٢، ٦٣]

    “আর আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে তাদের সাফল্যসহ নাজাত দেবেন। কোন অমঙ্গল তাদেরকে স্পর্শ করবে না। আর তারা চিন্তিতও হবে না।” ‎তিনি আরো বলেন: “শুনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই, আর তারা পেরেশানও হবে না। যারা ঈমান এনেছে ‎এবং তাকওয়া অবলম্বন করত।” [সূরা ইউনুস: (৬২-৬৩)]‎

    ১২. তাকওয়ার ফলে কিয়ামতের দিন মুত্তাকীদের অভিযাত্রী দল হিসেবে (বর যাত্রীর ন্যায়) উপস্থিত করা হবে। তারা বাহনে চড়ে ‎আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, এরাই সর্বোত্তম অভিযাত্রী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ يَوۡمَ نَحۡشُرُ ٱلۡمُتَّقِينَ إِلَى ٱلرَّحۡمَٰنِ وَفۡدٗا ٨٥ ﴾ [مريم: ٨٥]

    “যেদিন পরম করুণাময়ের নিকট মুত্তাকীদেরকে সম্মানিত মেহমানরূপে সমবেত করব।” [সূরা মারইয়াম: (৮৫)]‎

    ইবনে কাসীর রহ. নুমান ইব্‌ন বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন:

    ( كنا جلوساً عند علي فقرأ هذه الآية: يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَنِ وَفْدًا.. قال: لا والله ما على أرجلهم يحشرون، ولا يحشر الوفد على أرجلهم، ولكن بنوق لم ير الخلائق مثلها، عليها رحائل من ذهب، فيركبون عليها حتى يضربوا أبواب الجنة ).

    আমরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিকট বসে ছিলাম, তিনি আমাদেরকে উপরোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করে শুনালেন। তিনি বললেন: ‎আল্লাহর শপথ, তারা তাদের পায়ে ভর করে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে না। আর অভিযাত্রীদের পায়ে হেঁটে উপস্থিত ‎করানো হয় না, বরং এক ধরণের বাহন থাকবে, অনুরূপ বাহন কেউ দেখেনি। তার উপর স্বর্ণের শিবিকা থাকবে, তার উপর ‎চড়ে তারা জান্নাতের দরোজাসমূহ অতিক্রম করবে। ‎

    ১৩. আখেরাতে মুত্তাকীদের কাছে নিয়ে আসা হবে জান্নাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَأُزۡلِفَتِ ٱلۡجَنَّةُ لِلۡمُتَّقِينَ ٩٠ ﴾ [الشعراء: ٩٠] وقال تعالى: ﴿ وَأُزۡلِفَتِ ٱلۡجَنَّةُ لِلۡمُتَّقِينَ غَيۡرَ بَعِيدٍ ٣١ ﴾ [ق: ٣١]

    “আর মুত্তাকীদের জন্য জান্নাত নিকটবর্তী করা হবে।” [সূরা শুআরা: (৯০)] তিনি আরো বলেন: “আর জান্নাতকে ‎মুত্তাকীদের অদূরে, কাছেই আনা হবে।” [সূরা ক্বাফ: (৩১)]‎

    ১৪. আখেরাতে মুত্তাকীরা তাকওয়ার কারণে পাপী ও কাফেরদের বরাবর হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ أَمۡ نَجۡعَلُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ كَٱلۡمُفۡسِدِينَ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَمۡ نَجۡعَلُ ٱلۡمُتَّقِينَ كَٱلۡفُجَّارِ ٢٨ ﴾ [ص: ٢٨]

    “যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে আমি কি তাদেরকে জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সমতুল্য গণ্য করব? নাকি আমি ‎মুত্তাকীদেরকে পাপাচারীদের সমতুল্য গণ্য করব?” [সূরা সাদ: (২৮)]‎

    ১৫. সকল বন্ধুত্ব¡ কিয়ামতের দিন শত্রুতায় পরিণত হবে, শুধু মুত্তাকীদের বন্ধুত্ব ব্যতীত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন‎‎:

    ﴿ ٱلۡأَخِلَّآءُ يَوۡمَئِذِۢ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ إِلَّا ٱلۡمُتَّقِينَ ٦٧ ﴾ [الزخرف: ٦٧]

    “সেদিন বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে, মুত্তাকীরা ছাড়া।” [সূরা যুখরুফ: (৬৭)]‎

    ১৬. আখেরাতে মুত্তাকীদের জন্য নিরাপদ স্থান, জান্নাত ও ঝর্ণাধারা থাকবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ يَلۡبَسُونَ مِن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٥٣ كَذَٰلِكَ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٥٤ يَدۡعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَٰكِهَةٍ ءَامِنِينَ ٥٥ لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلۡمَوۡتَ إِلَّا ٱلۡمَوۡتَةَ ٱلۡأُولَىٰۖ وَوَقَىٰهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ٥٦ ﴾ [الدخان: ٥١- ٥٦]

    “নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে, বাগÑবাগিচা ও ঝর্নাধারার মধ্যে, তারা পরিধান করবে পাতলা ও পুরু রেশমী বস্ত্র ‎এবং বসবে মুখোমুখী হয়ে। এরূপই ঘটবে, আর আমি তাদেরকে বিয়ে দেব ডাগর নয়না হুরদের সাথে।সেখানে তারা ‎প্রশান্তচিত্তে সকল প্রকারের ফলমূল আনতে বলবে। প্রথম মৃত্যুর পর সেখানে তারা আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। আর ‎তিনি তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন।” [সূরা দুখান: (৫১-৫৬)]‎

    ১৭. আখেরাতে মুত্তাকীদের জন্য আল্লাহর নিকট তাদের তাকওয়া অনুপাতে বিভিন্ন আসন থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَنَهَرٖ ٥٤ فِي مَقۡعَدِ صِدۡقٍ عِندَ مَلِيكٖ مُّقۡتَدِرِۢ ٥٥ ﴾ [القمر: ٥٤، ٥٥]

    “নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে বাগÑবাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে। যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহাঅধিপতির নিকটে।” [সূরা ‎কামার: (৫৪-৫৫)]‎

    ১৮. মুত্তাকীরা তাকওয়ার ফলে আখেরাতে বিভিন্ন নহরে গমন করতে পারবে। যেমন পরিচ্ছন্ন পানির নহর, সুস্বাদু দুধের নহর যার স্বাদ কখনো নষ্ট হবে না এবং মজাদার শরাব, যা পানকারীদের জন্য হবে সুপেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مِّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ وَمَغۡفِرَةٞ مِّن رَّبِّهِمۡۖ كَمَنۡ هُوَ خَٰلِدٞ فِي ٱلنَّارِ وَسُقُواْ مَآءً حَمِيمٗا فَقَطَّعَ أَمۡعَآءَهُمۡ ١٥ ﴾ [محمد: ١٥]

    “মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হল, তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝরনাধারা, ‎যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝরনাধারা। তথায় ‎তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা।” [সূরা মুহাম্মদ: (১৫)] হাদীসে এসেছে, ‎রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    { إذا سألتم الله تعالى فاسألوه الفردوس، فإنه أوسط الجنة وأعلى الجنة، ومنه تفجر أنهار الجنة، وفوقه عرش الرحمن }.

    “তোমরা যখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, তখন জান্নাতুল ফেরদাউসের প্রার্থনা করবে। কারণ এটা মধ্যবর্তী ও সর্বোচ্চ ‎জান্নাত, সেখান থেকে নহরসমূহ প্রবাহিত। তার উপরে রয়েছে আল্লাহর আরশ।‎

    ১৯. আখেরাতে তাকওয়ার ফলে মুত্তাকীরা জান্নাতের বৃক্ষসমূহের তলদেশ দিয়ে বিচরণ করবে ও তার ছায়া উপভোগ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي ظِلَٰلٖ وَعُيُونٖ ٤١ وَفَوَٰكِهَ مِمَّا يَشۡتَهُونَ ٤٢ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيٓ‍َٔۢا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٤٣ ﴾ [المرسلات: ٤١، ٤٣]

    “নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়া ও ঝর্ণাবহুল স্থানে, আর নিজদের বাসনানুযায়ী ফলমূল-এর মধ্যে। (তাদেরকে বলা হবে) ‎‘তোমরা যে আমল করতে তার প্রতিদানস্বরূপ তৃপ্তির সাথে পানাহার কর।” [সূরা মুরসালাত: (৪১-৪৩)]‎

    فعن أنس بن مالك قال: قال رسول الله: { إن في الجنة شجرة يسير الراكب في ظلها مائة عام لا يقطعها } [البخاري].

    আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় জান্নাতে একটি বৃক্ষ রয়েছে, আরোহী যার ছায়া তলে একশত বছর ভ্রমণ করেও শেষ করতে পারবে না”[বুখারী]

    ২০. তাকওয়ার ফলে মুত্তাকীরা আখেরাতের মহাভীতির কারণে পেরেশান হবে না। তাদের সাথে ফেরেশতারা সাক্ষাত করবে। ‎আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ لَهُمُ ٱلۡبُشۡرَىٰ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۚ ٦٤ ﴾ [يونس: ٦٢- ٦٤]

    “শুনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই, আর তারা পেরেশানও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া ‎অবলম্বন করত। তাদের জন্যই সুসংবাদ দুনিয়াবি জীবনে এবং আখিরাতে।” সূরা ইউনুস: (৬২-৬৪)‎ ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন:‎ আর তাদের আখেরাতের সুসংবাদ আল্লাহর এ বাণীতে ধ্বনিত হয়েছে। তিনি বলেন:

    ﴿ لَا يَحۡزُنُهُمُ ٱلۡفَزَعُ ٱلۡأَكۡبَرُ وَتَتَلَقَّىٰهُمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ هَٰذَا يَوۡمُكُمُ ٱلَّذِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ١٠٣ ﴾ [الانبياء: ١٠٣]

    “মহাভীতি তাদেরকে পেরেশান ‎করবে না। আর ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলবে, ‘এটাই তোমাদের সেই দিন, যার ওয়াদা তোমাদেরকে ‎‎দেয়া হয়েছিল।” [সূরা আম্বিয়া: (১০৩)]‎

    ২১. আখেরাতে মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে চমৎকার ঘর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ وَلَدَارُ ٱلۡأٓخِرَةِ خَيۡرٞۚ وَلَنِعۡمَ دَارُ ٱلۡمُتَّقِينَ ٣٠ ﴾ [النحل: ٣٠]

    “আর নিশ্চয় আখিরাতের আবাস উত্তম এবং মুত্তাকীদের আবাস কতইনা উত্তম!” সূরা নাহাল: (৩০)

    ২২. আখেরাতে মুত্তাকীদের তাকওয়ার কারণে তাদের নেকি ও প্রতিদান বহুগুন বর্ধিত করা হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

    ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَءَامِنُواْ بِرَسُولِهِۦ يُؤۡتِكُمۡ كِفۡلَيۡنِ مِن رَّحۡمَتِهِۦ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ نُورٗا تَمۡشُونَ بِهِۦ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ ٢٨ ﴾ [الحديد: ٢٨] كفلين: أي أجرين.

    “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তিনি স্বীয় রহমতে তোমাদেরকে দ্বিগুণ ‎পুরস্কার দেবেন, আর তোমাদেরকে নূর দেবেন যার সাহায্যে তোমরা চলতে পারবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে ‎‎দেবেন।” সূরা হাদীদ: (২৮) এখানে كفلين অর্থ দু’টি প্রতিদান ও সাওয়াব। আল্লাহ ভাল জানেন।

    সমাপ্ত

    [1] অর্থাৎ তার কর্ণ, দৃষ্টিশক্তি, হাত ও পা আমার সন্তুষ্টির বাইরে চলে না। সে তখন শুধু আমার নির্দেশনা অনুসারেই চলে। যেভাবে সে নিজের অঙ্গসমূহের সংরক্ষণ করে সেভাবে আমি তার অঙ্গসমূহের সংরক্ষণ করি।

    এটিই হচ্ছে হাদীসের সঠিক অর্থ। এ অর্থের বাইরে অন্য কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবে না। কখনও এটা বলা যাবে না যে আল্লাহ বান্দার কোন অংশ প্রবেশ করেন, নাউযুবিল্লাহ। [সম্পাদক]