কল্যাণের পথ প্রদর্শন ও হেদায়াতের দিকে আহ্বানের ফজিলত
ক্যাটাগরিসমূহ
Full Description
কল্যাণের পথ প্রদর্শন ও হিদায়াতের দিকে আহ্বানের ফযীলত
فضل الدلالة على الخير والدعوة إلى الهدى
<بنغالي>
আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
عبد الله شهيد عبد الرحمن
সম্পাদক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
مراجعة: د/ محمد منظور إلهي
কল্যাণের পথ প্রদর্শন ও হিদায়াতের দিকে আহ্বানের ফযীলত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱدۡعُ إِلَىٰ رَبِّكَۖ ﴾ [القصص: ٨٧]
“তোমার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান আহ্বান কর।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৮৭]
﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ ﴾ [النحل: ١٢٥]
“তুমি তোমর রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান কর।” [সূরা আন-নাহলো, আয়াত: ১২৫]
﴿ ۘ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ﴾ [المائدة: ٢]
“সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। অন্যায় ও সীমা লঙ্ঘনে সহযোগিতা করো না।” [সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ২]
﴿ وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ ﴾ [ال عمران: ١٠٤]
“আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪]
আয়াতসমূহ থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. আল্লাহ তা‘আলার পথে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া একটি নবুওয়াতী কাজ।
দুই. আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে।
তিন. হিকমত শব্দের অর্থ হলো, প্রতিটি বস্তু ও ব্যক্তিকে তার উপযুক্ত স্থানে রাখা। হিকমতের আরেকটি অর্থ হলো সুন্নাহ।
চার. হিকমতের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়ার অর্থ হলো: যুক্তি, প্রমাণ ও স্থান কাল পাত্র অনুযায়ী উপযুক্ত কথার মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা। যুগ চাহিদা অনুযায়ী যে পদ্ধতি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য, দাওয়াত দানের ক্ষেত্রে সে পদ্ধতি অবলম্বন করা হলো হিকমত। এমনিভাবে যে পদ্ধতি বা কথা মানুষের মনে ঘৃণা বা নেতিবাচক দৃষ্টিভংগি সৃষ্টি করে, সে পদ্ধতি অবলম্বন হিকমতের পরিপন্থী।
পাঁচ. সকল সৎকর্মে ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে অপরকে সহযোগিতা করা ফরয করা হয়েছে। এমনিভাবে পাপাচার ও শরী‘আতের সীমা লংঘনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ছয়. মুসলিম সমাজে সর্বদা এমন একটি দল থাকা আবশ্যিক যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে।
সাত. যারা মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করে তারা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম।
হাদীস- ১.
আবু মাসউদ উকবা ইবন আমর আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلهُ مثلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ»
“যে ব্যক্তি কোনো কল্যাণের পথ প্রদর্শন করবে সে ততটা সাওয়াব লাভ করবে যতটা সাওয়াব কাজটি সম্পাদনকারী পাবে।”[1]
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. আবু মাসউদ উকবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী একজান সাহাবী। ইসলামের জন্য যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার সুযোগটা সাহাবায়ে কেরাম ও আমাদের পূর্ববর্তীদের কাছে একটি গৌরবের বিষয় ছিল। তাই তার নামের শেষে আল-বদরী শব্দ ব্যবহার করেছেন অনেক বর্ণনাকারী।
দুই. কল্যাণ ও নেক আমলের দিকে পথ দেখানো একটি ফযীলতপূর্ণ কাজ। যার পথ নির্দেশনার ফলে যারা এ কল্যাণকর কাজটি সম্পাদন করবে তার সাওয়াবও সে পাবে। এতে কিন্তু সম্পাদনকারীর সাওয়াব কোনো অংশে কম করা হবে না।
হাদীস- ২.
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«منْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ منْ تَبِعَهُ لا ينْقُصُ ذلِكَ مِنْ أُجُورِهِم شَيْئاً ، ومَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لا ينقُصُ ذلكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئاً»
“যে ব্যক্তি সত্য-সঠিক পথের দিকে আহ্বান করবে, যারা এ পথ অনুসরণ করবে তাদের সাওয়াবের পরিমাণ সাওয়াব আহবানকারী পাবে। এতে তাদের সাওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথের দিকে আহ্বান করবে, যারা এ পথের অনুসরণ করবে সে তাদের সমপরিমাণ পপের অংশীদার হবে। এতে তাদের পাপ থেকে কিছু কমানো হবে না।”[2]
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. আল্লাহ তা‘আলার পথে মানুষকে দাওয়াত দানের বিশাল ফযীলত প্রমাণিত হলো।
দুই. যিনি দাওয়াত দেবেন তিনি তার দাওয়াতে সাড়াদানকারী ব্যক্তিবর্গের আমলের সমপরিমাণ সাওয়াব পেতে থাকবেন। কিন্তু এতে কারো প্রাপ্য সাওয়াব কম করা হবে না। এমনিভাবে যারা অসৎ কর্মের দিকে মানুষকে আহ্বান করবে বা অসৎ কর্মের ব্যবস্থা করে দেবে তাহলে এ অসৎ কর্মটি যারা সম্পাদন করবে তাদের সমপরিমাণ পাপ তার আমলে লেখা হবে। আর কারো পাপ থেকে কম করা হবে না। এ বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীর বাস্তবায়ন:
﴿وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّبِعُواْ سَبِيلَنَا وَلۡنَحۡمِلۡ خَطَٰيَٰكُمۡ وَمَا هُم بِحَٰمِلِينَ مِنۡ خَطَٰيَٰهُم مِّن شَيۡءٍۖ إِنَّهُمۡ لَكَٰذِبُونَ ١٢ وَلَيَحۡمِلُنَّ أَثۡقَالَهُمۡ وَأَثۡقَالٗا مَّعَ أَثۡقَالِهِمۡۖ وَلَيُسَۡٔلُنَّ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ عَمَّا كَانُواْ يَفۡتَرُونَ ١٣﴾ [العنكبوت: ١٢، ١٣]
“আর কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, ‘তোমরা আমাদের পথ অনুসরণ কর এবং যেন আমরা তোমাদের পাপ বহন করি।’ অথচ তারা তাদের পাপের কিছুই বহন করবে না। নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। আর অবশ্যই তারা বহন করবে তাদের বোঝা এবং তাদের বোঝার সাথে আরো কিছু বোঝা। আর তারা কিয়ামতের দিন অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে সে সম্পর্কে, যা তারা মিথ্যা বানাত। [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ১২, ১৩]
তিন. ভালো কাজে পথ দেখানো আর মন্দ কাজের ব্যবস্থা না করে দেওয়ার জন্য এ হাদীস আমাদের নির্দেশ দিচ্ছে।
হাদীস- ৩.
আবুল আব্বাস সাহল ইবন সা‘দ আস-সায়েদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, খায়বর যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لأعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَداً رَجُلاً يَفْتَحُ اللَّه عَلَى يَدَيْهِ، يُحبُّ اللَّه ورسُولَهُ، وَيُحبُّهُ اللَّه وَرَسُولُهُ» فَبَاتَ النَّاسُ يَدُوكونَ لَيْلَتَهُمْ أَيُّهُمْ يُعْطَاهَا. فَلَمَّا أصبحَ النَّاسُ غَدَوْا عَلَى رسولِ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : كُلُّهُمْ يَرجُو أَنْ يُعْطَاهَا، فقال: «أَيْنَ عليُّ بنُ أَبي طالب؟» فَقيلَ: يا رسولَ اللَّه هُو يَشْتَكي عَيْنَيْه قال: «فَأَرْسِلُوا إِلَيْهِ» فَأُتِي بِهِ، فَبَصقَ رسولُ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم في عيْنيْهِ، وَدعا لَهُ، فَبَرأَ حَتَّى كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجعٌ، فأَعْطَاهُ الرَّايَةَ. فقال عليٌّ رضي اللَّه عنه: يا رسول اللَّه أُقاتِلُهمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا؟ فَقَالَ: «انْفُذْ عَلَى رِسلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحتِهِمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإِسْلامِ، وَأَخْبرْهُمْ بِمَا يجِبُ مِنْ حقِّ اللَّه تَعَالَى فِيهِ، فَواللَّه لأَنْ يَهْدِيَ اللَّه بِكَ رَجُلاً وَاحِداً خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمَ»
“অবশ্যই আমি আগামীকাল এ পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে প্রদান করব যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন। সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসেন।’’ লোকেরা অস্থিরতা ও কৌতুহলের মধ্যে রাত কাটাল, কাকে এ পতাকা অর্পণ করা হবে এ বিষয় নিয়ে। অতঃপর যখন সকালে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হলো তখন প্রত্যেকেই আশা করছিল পতাকা তাকে দেওয়া হবে। তিনি তখন বললেন, আলী ইবন আবি তালেব কোথায়?’ বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি তো চোখের অসুস্থতায় ভুগছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘তাকে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠাও।’ এরপর তাকে আনা হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চোখে থুথু দিলেন ও তার জন্য দো‘আ করলেন। তিনি তখন এমন সুস্থতা লাভ করলেন যেন তার কোনো রোগই ছিল না। এরপর তিনি তাকে পতাকা প্রদান করলেন। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! শত্রুরা আমাদের মতো মুসলিম না হওয়া পর্যন্ত আমি কি তাদের সাথে যুদ্ধ করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি তাদের এলাকায় না পৌঁছা পর্যন্ত তোমার নিয়মানুযায়ী অগ্রসর হতে থাকবে। এরপর তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেবে। আর আল্লাহ তাদের প্রতি যা কর্তব্য নির্ধারণ করেছেন তা তাদের জানিয়ে দেবে। আল্লাহর কসম! তোমার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা একজনকে সঠিক পথ দেখালে তা তোমার জন্য লাল উট অপেক্ষা উত্তম হবে।”[3]
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. খায়বর নামক স্থানটি মদীনা থেকে ১০০ মাইল উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। ৭ম হিজরী মোতাবেক ৬২৯ ইংরেজী সনে খায়বর অভিযান সংঘঠিত হয়েছিল। এ যুদ্ধটি হয়েছিল ইয়াহূদী ও মুসলিমদের মধ্যে।
দুই. থুথু দিয়ে দো‘আ করার মাধ্যমে চোখের চিকিৎসা করাটা ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজস্ব মু‘জিযা। তাই এ কাজ অন্যের জন্য প্রযোজ্য নয়।
তিন. যুদ্ধ করার ইসলামে কখনো ভূমি দখল বা সাম্রাজ্য বিস্তার করা উদ্দেশ্য ছিল না। তাই ইসলামের সৈনিকরা যুদ্ধের শুরুতে প্রতিপক্ষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করতেন। যুদ্ধের উদ্দেশ্য যদি দেশ দখল হত তাহলে মুসলিম মুজাহিদগণ প্রতিপক্ষের ওপর প্রথমই আক্রমণ করতেন।
চার. ইসলামে যুদ্ধ ও জিহাদের উদ্দেশ্য হলো মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো ও দাওয়াতের পথের বাধা অপসারণ করা। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেনাপতি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, “তোমার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা একজনকে সঠিক পথ দেখালে তা তোমার জন্য লাল উট অপেক্ষা উত্তম হবে।”
পাঁচ. অমুসলিদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার ফযীলত প্রমাণিত হলো।
হাদীস- ৪.
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আসলাম গোত্রের এক যুবক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জিহাদে যেতে চাই; কিন্তু প্রস্তুতি নেওয়ার মতো উপকরণ নেই। তিনি বললেন,
«ائْتِ فُلاناً فإِنه قَدْ كانَ تَجَهَّزَ فَمَرِضَ» فَأَتَاهُ فقال: إِنَّ رسولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يُقْرئُكَ السَّلامَ وَيَقُولُ: أَعْطِني الذي تجَهَّزْتَ بِهِ، فقال : يا فُلانَةُ أَعْطِيهِ الذي تجَهَّزْتُ بِهِ، ولا تحْبِسِي مِنْهُ شَيْئاً، فَواللَّه لا تَحْبِسِينَ مِنْهُ شَيْئاً فَيُبَارَكَ لَكِ فِيه»
“তুমি অমুক লোকের কাছে যাও। সে জিহাদের প্রস্তুতি নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যুবকটি তার কাছে গিয়ে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে সালাম জানিয়েছেন আর আপনি জিহাদের জন্য যে উপকরণ প্রস্ত্তত করেছেন তা আমাকে দিয়ে দিতে বলেছেন। সে ব্যক্তি বলল, হে অমুক (নিজ স্ত্রীকে সম্বোধন করে) একে আমার সব সরঞ্জামাদি দিয়ে দাও। কোনো কিছু রেখে দিও না। আল্লাহর কসম! তোমরা তা হতে কিছু রেখে না দিলে তাতে আল্লাহ আমাদের জন্য বরকত দান করবেন।”[4]
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. সাহাবায়ে কেরাম জিহাদে অংশ নিতে কত আগ্রহী ছিলেন তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো এ হাদীস। নিজের সামর্থ না থাকা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিহাদে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করতেন তাঁর সাহাবীগণ।
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকটিকে একটি ভালো কাজের দিকে পথ দেখালেন। তাকে তিনি আরেক জনের কাছে যেতে বললেন প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য।
তিন. যার কাছে গেলেন তিনিও যুবকটিকে জিহাদের উপকরণ দিয়ে ভাল কাজের পথ দেখানোর সাওয়াব অর্জন করলেন। তিনি তার স্ত্রীকে সব উপকরণ দিয়ে দেওয়ার নসীহত করে আরেকটি ভালো কাজের পথ দেখানোর মর্যাদা অর্জন করলেন। এমনিভাবে তিনি আগেই জিহাদের উপকরণ সংগ্রহ করে ভালো কাজের পথ দেখানোর মর্যাদা ও সাওয়াব অর্জন করেছেন।
চার. যে ব্যক্তি কোনো ভাল কাজ করার প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে কিন্তু কোনো বাধা-বিপত্তির কারণে তা সম্পাদন করতে না পারে তার উচিত হলো তা এমন ব্যক্তিকে অর্পণ করা, যে কাজটি সম্পাদন করতে পারবে। তাহলে উভয়ে এ কাজটি সম্পাদন করার সাওয়াব অর্জন করবে। কিন্তু কারো সাওয়াব কম হবে না।
পাঁচ. যে ব্যক্তি কোনো ভালো ও কল্যাণকর কাজের প্রস্তুতি নিয়ে তা সম্পাদন করতে সামর্থ না হয়, আল্লাহ তাকে সে কাজটি সম্পাদন করার সাওয়াব দিয়ে দেবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَن يَخۡرُجۡ مِنۢ بَيۡتِهِۦ مُهَاجِرًا إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ يُدۡرِكۡهُ ٱلۡمَوۡتُ فَقَدۡ وَقَعَ أَجۡرُهُۥ عَلَى ٱللَّهِۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٠٠﴾ [النساء: ١٠٠]
আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করার জন্য নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আন নিসা, আয়াত: ১০০)
এ আয়াতে আমরা দেখলাম, হিজরতের নিয়তে ঘর থেকে বের হয়ে হিজরত সম্পন্ন করতে না পারলেও আল্লাহ তা‘আলা তাকে হিজরত সম্পন্ন করার সাওয়াব দেবেন। সকল নেক আমল, কল্যাণকর কাজের বিষয়টিও এ রকম।
বি: দ্র: ইমাম নববী রহ. সংকলিত রিয়াদুস সালেহীন কিতাব থেকে একটি অধ্যায়ের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা।
সমাপ্ত