সদকার গুরুত্ব ও ফযিলত
ক্যাটাগরিসমূহ
উৎস
Full Description
সম্পাদক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
আল্লাহ তা'আলা সব মানুষকে ধনী ও সম্পদশালী বানিয়ে দেন নি। আসলে বিত্তশালীরা বিত্তহীনদের সাথে কেমন আচরণ করে আল্লাহ তা'আলা তা দেখতে চান।
বাস্তবতার আলোকে বলতে হয় আজ বিশ্বের বহু মুসলিম আল্লাহর বিধান যথার্থভাবে পালন করছে না। মুসলিম সমাজ যদি যাকাত, সদকা প্রদানে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন করত তবে সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজ আজকের মত দারিদ্র্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হত না।
صدقةُ - সদাকাতুন, আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ হচ্ছে- দান। আর এ দান প্রধানত: দুই প্রকার,
এক. ওয়াজিব যা বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক। যেমন,
(ক) নিসাবের মালিক (শরী'আত নির্ধারিত নির্দিষ্ট পরিমাণ মালের মালিক) হলে প্রতি বছর অর্থের যাকাত ও শস্যাদির ওশর প্রদান করা।
এ শ্রেণীর দানগুলো সাধারণতঃ একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই প্রদান করতে হয়। যথা সঞ্চিত অর্থের উপর যখন এক বছর পূর্ণ হবে তখন তাতে যাকাত ফরয হবে এবং তা থেকে নির্ধারিত হারে যাকাত দিতে হবে। আর উৎপাদিত শস্যাদি মাড়াই শেষে যখন ঘরে উঠবে, তখন তা থেকে ওশর বের করতে হবে। উল্লেখ্য, শস্যাদির ক্ষেত্রে বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়। তাই এ ওশর প্রদান শস্য মাড়াই করার সংখ্যা ভেদে বছরে একাধিকবারও হতে পারে। যেমন ইরি ধানের মৌসুম শেষে যদি আমন ধানও নিসাব পরিমাণ হয়, তবে তা থেকেও একই বছরে পুনরায় ওশর দেয়া অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে ইরি ধানের ওশর দেয়া হয়েছে বলে আমনের ওশর দেয়া থেকে বিরত থাকা চলবে না। অন্যথায় ওশর অনাদায়ের শাস্তি বরণ ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। লক্ষণীয় যে এ জাতীয় বাধ্যতামূলক দান, সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য নয়। কেবল বিত্তশালী ও ধনীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
(খ) সামর্থ্য থাকলে - ইমামদের কারো কারো মতে - প্রতি বছর কুরবানী করা।
(গ) রমযানে সাওম পালন শেষে ফিতরা প্রদান করা।
(ঘ) নযর বা মানত পূর্ণ করা।
শেষোক্ত দুই প্রকার দান কেবলমাত্র বিত্তশালীই নয় বরং ধনী দরিদ্র সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য এবং এগুলোও পূর্বোক্ত দানের ন্যায় একটা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রদান করতে হয়। ফিতরা ঈদুল ফিতরের সালাতের পূর্বে এবং মানত তার সময়সীমার মধ্যেই পূর্ণ করা জরুরি। অন্যথায় তা যথাযথভাবে আদায় বলে গণ্য হবে না। তাই সংশ্লিষ্ট সকলের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
দুই. নফল সদকা যা বাধ্যতামূলক নয় তবে অনেক সাওয়াবের কাজ। এ দ্বিতীয় প্রকারের দান নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সৎপথে ব্যয় করা। যেমন: মসজিদ, মাদরাসা, গরীব, এতীম, কাঙ্গাল, ভিক্ষুকদের মাঝে সাধ্যমত দান করা; এছাড়াও আত্মীয়, অনাত্মীয়, মুসাফির, বিপন্ন ও ঋণগ্রস্তকে সাহায্য করা ইত্যাদি। এ জাতীয় দানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্বোক্ত দানের ন্যায় সময়ের কোনো বাধ্যবধকতা নেই। স্থান, কাল, পাত্র ও প্রয়োজনভেদে কম বেশি করা যেতে পারে। দানের রকমও পরিবর্তন হতে পারে। মোটকথা অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার দানকারীর থাকে। তাছাড়া দিবারাত্রির যে কোনো সময়, যে কোনো স্থানে এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে এ দান করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং দাতা তার ইচ্ছা ও সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো সময় নেক পথে দান করে উপকৃত হতে পারেন।
সেই সাথে সকলকে স্মরণ রাখতে হবে যে, সর্ব প্রকার দানই কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হতে হবে, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। অন্যথায় সব দানই বিফলে যাবে এবং তার জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। তখন শত আফসোস করেও কোনো লাভ হবে না।
স্মরণযোগ্য যে, বৈধ উপার্জন থেকে নেক নিয়তে প্রদত্ত সর্ব প্রকার দান-খয়রাতই নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। তাই দান-খয়রাত কবুল হবার বিপরীত সব চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান ধারণা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা প্রতিটি দ্বীনদার ও সচেতন মুসলমানের পবিত্র দায়িত্ব। আর এ লক্ষ্য অর্জনে আল্লাহ আমাদেরকে সম্মুখপানে অগ্রসর হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!
যাকাত বা ওশর প্রসঙ্গ
زكاة (যাকাত)- এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি ও পবিত্রতা।
শরী'আতের পরিভাষায় এর অর্থ হচ্ছে, শরী'আতের নির্দেশ অনুযায়ী নিজ সম্পদের একটা নির্ধারিত অংশ গরীব প্রাপকদের মাঝে বন্টন করা এবং তার লাভালাভ হতে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা।
عُشْرٌ (ওশর)- এর অর্থ হচ্ছে, উৎপন্ন শস্যের এক দশমাংশ বন্টন করা। অর্থাৎ বৃষ্টির পানিতে ও বিনা সিঞ্চনে উৎপাদিত শস্যের দশ ভাগের এক ভাগ বা বিশ মণে দুই মণ, আর সিঞ্চনের মাধ্যমে উৎপাদিত হলে বিশ মণে এক মণ বর্ণিত নিয়মানুসারে বন্টন করে দেয়া।
উল্লেখ্য যে, হিজরী ২য় সনে সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে মদিনায় যাকাত বিস্তারিত বিবরণসহ ফরয হয়।
বলাবাহুল্য, যাকাত প্রদানের মাধ্যমে মাল বৃদ্ধি পায় ও পবিত্র হয়। পাশাপাশি কৃপণতার কলুষ-কালিমা হতে যাকাতদাতা পবিত্রতা লাভে ধন্য হয়। বস্তুত: যাকাত হচ্ছে ইসলামের ৩য় স্তম্ভ।
যেমন হাদীসে বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ».
“ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত। এক. আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রাসূল এ সাক্ষ্য দেয়া। দুই. সালাত কায়েম করা। তিন. যাকাত প্রদান করা। চার. হজ সম্পাদন করা। পাঁচ. রমযানের সাওম পালন করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮)
লক্ষ্যণীয় যে, উক্ত হাদীসে যাকাতকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৩য় স্তম্ভ বলে ঘোষণা করেছেন। তাই যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এর উপকারিতা বর্ণনা করে শেষ করার মত নয়। প্রায় জায়গাতেই সালাতের পাশাপাশি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকাত প্রদানের নির্দেশ দিয়ে সালাতের মতই গুরুত্বারোপ করেছেন। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, সালাত কায়েম করা ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। আর যাকাত আদায় করা কেবল ধনীদের জন্য ফরয। এছাড়া সালাতের হুকুম দৈনিক পাঁচবার পালনীয়। আর যাকাত প্রতি বছর মাত্র একবার আদায় করা কর্তব্য। বস্তুত: সালাত হচ্ছে ইবাদতে বদনি বা শারীরিক ইবাদত, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। আর যাকাত হচ্ছে, ইবাদতে মালী বা আর্থিক ইবাদত। যা সাধারণতঃ অর্থ ও সম্পদ ব্যয় ও দানের মাধ্যমে আদায় করতে হয়।
যাকাত প্রদানের নির্দেশ অবশ্য প্রতিপালনীয় হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আলকুরআনুল কারিমে অনেক আয়াত নাযিল করেছেন। বিশেষতঃ সালাতের নির্দেশের পরপরই যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই যাকাতের গুরুত্বকে কোনোক্রমেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আবশ্যিক বা বাধ্যতামূলক দানসমূহের মধ্যে যাকাতই হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাপকদের অভাব পূরণে প্রধানতম সহায়ক দান। তাই এখানে যাকাতের গুরুত্ব ও ফযিলত এবং যাকাত আদায় না করার পরিণতি সম্পর্কে সামান্য আলোচনা করা হলো:
সালাতের পাশাপাশি যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَمَا تُقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُم مِّنۡ خَيۡرٖ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ١١٠ ﴾ [البقرة: ١١٠]
“আর তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও। এবং নিজেদের জন্য তোমরা যে সৎকর্ম অগ্রে প্রেরণ করবে তাই তোমরা আল্লাহর নিকট পাবে"। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১১০]
যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা'আলা তার নবীকে বলেন,
﴿ خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا ١٠٣ ﴾ [التوبة: ١٠٣].
“তুমি তাদের সম্পদ হতে সাদাকাহ অর্থাৎ যাকাত গ্রহণ কর। যা দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে"। [সূরা আততাওবা, আয়াত : ১০৩]
যাকাত ও ওশর গ্রহণ এবং উত্তম বস্তু ব্যয়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ وَمِمَّآ أَخۡرَجۡنَا لَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِۖ وَلَا تَيَمَّمُواْ ٱلۡخَبِيثَ مِنۡهُ تُنفِقُونَ وَلَسۡتُم بَِٔاخِذِيهِ إِلَّآ أَن تُغۡمِضُواْ فِيهِۚ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ ٢٦٧ ﴾ [البقرة: ٢٦٧].
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের উপার্জন থেকে এবং আমরা যা তোমাদের জন্য ভূমি হতে উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে মনস্থ করো না, কেননা তা তোমরা কখনো গ্রহণ করবে না, তবে যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও। জেনে রেখো, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত"। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৬৭]
যাকাত ফরয হওয়া সম্বন্ধে হাদীসে পাওয়া যায় যে, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু 'আনহু যখন আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু 'আনহুকে বাহরাইন (-এর শাসনকর্তা নিযুক্ত করে) পাঠান তখন তার জন্য এ চিঠিটি লিখেন,
«بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ هَذِهِ فَرِيضَةُ الصَّدَقَةِ الَّتِي فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ وَالَّتِي أَمَرَ اللهُ بِهَا رَسُولَهُ فَمَنْ سُئِلَهَا مِنْ الْمُسْلِمِينَ عَلَى وَجْهِهَا فَلْيُعْطِهَا وَمَنْ سُئِلَ فَوْقَهَا فَلَا يُعْطِ».
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এটা ফরয সদকা বা যাকাত যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের প্রতি ফরয করে দিয়েছেন এবং যার নির্দেশ আল্লাহ তার রাসূলকে দিয়েছেন। যে কোনো মুসলমানের নিকট এটা নির্দিষ্ট নিয়মে চাওয়া হবে, সে যেন তা দিয়ে দেয়। আর যার নিকট এর অধিক চাওয়া হবে সে যেন না দেয় ..."। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৫৪)
একই বিষয়ে অপর এক হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়ায বিন জাবালকে ইয়েমেনের উদ্দেশ্যে পাঠানোর সময় বললেন,
«إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا أَهْلَ كِتَابٍ فَإِذَا جِئْتَهُمْ فَادْعُهُمْ إِلَى أَنْ يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ».
“তুমি আহলে কিতাবদের নিকট যাচ্ছ। প্রথমে তাদেরকে এ সাক্ষ্য দিতে আহবান জানাবে- আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। অতঃপর তারা যদি এটাও মেনে নেয়, তখন তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর সদকা বা যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের ধনীদের নিকট হতে গ্রহণ করে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করা হবে। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তবে সাবধান! যাকাত গ্রহণের সময় তুমি বেছে বেছে তাদের শুধু উত্তম জিনিসসমূহ নিবে না। আর বেঁচে থাকবে মাযলুমের বদ দুআ হতে। কেননা মাযলুমের বদ দুআ এবং আল্লাহর মধ্যে কোনো আড়াল নেই। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৯৬)
বাধ্যতামূলক দানসমূহের মধ্যে যাকাত বা ওশর প্রদানের হুকুম যে অবশ্য পালনীয়, তার প্রমাণে আল্লাহর পবিত্র কালাম আলকুরআনুল মাজিদের পাশাপাশি উপরের দুটি হাদীসও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। যাতে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে যাকাতের ফরযিয়াত বিবৃত হয়েছে। ফলে যাকাত ফরয হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।