×
পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী। পৃথিবী বক্ষে মানুষের জীবনপরিসর কেবলই ঈমান ও আমলের পরীক্ষার উদ্দেশে প্রদত্ত। মানুষকে তাই খুব হিসেবী হতে হবে সময় যাপনে। আকীদা ও আমলের যথার্থ অনুশীলনের মাধ্যমে জীবনকে করে তুলতে হবে অর্থবহ, আল্লাহর মাগফিরাত ও পরকালীন শাশ্বত জান্নাতের উপযোগী। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে।

    কে তুমি?

    চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    من أنت؟

    (باللغة البنغالية)

    أبو الكلام أزاد أنوار الله

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    সংক্ষিপ্ত বর্ণনা.............

    পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী। পৃথিবী বক্ষে মানুষের জীবনপরিসর কেবলই ঈমান ও আমলের পরীক্ষার উদ্দেশে প্রদত্ত। মানুষকে তাই খুব হিসেবী হতে হবে সময় যাপনে। আকীদা ও আমলের যথার্থ অনুশীলনের মাধ্যমে জীবনকে করে তুলতে হবে অর্থবহ, আল্লাহর মাগফিরাত ও পরকালীন শাশ্বত জান্নাতের উপযোগী। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে।

    কে তুমি?

    হে ইনসান! অল্প সময়ের ব্যবধানেই তোমার অস্তিত্ব এই ধরাপৃষ্ঠে। কয়েকদিন পূর্বে দুনিয়ার বুকে তোমার সত্তা বলতে কিছুই ছিলো না। তুমি ছিলে কল্পনাতীত। সমাজে কত ঘটনা ঘটত; কিন্তু তুমি কি তার কোনো খবর রাখতে? না, রাখতে না। কারণ, তখনো হয়তবা তোমার বাবা-মা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নি। তাই তো আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿هَلۡ أَتَىٰ عَلَى ٱلۡإِنسَٰنِ حِينٞ مِّنَ ٱلدَّهۡرِ لَمۡ يَكُن شَيۡ‍ٔٗا مَّذۡكُورًا ١﴾ [الدهر: ١]

    “মানুষের ওপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে, যখন সে উল্লেখযোগ্য কোনো বস্তুই ছিলে না।” [সূরা আদ-দাহর, আয়াত: ১]

    এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের দৃষ্টি এক নিগূঢ় তত্ত্বের দিকে আকৃষ্ট করেছেন। মানুষ যদি সামান্য জ্ঞান-বুদ্ধিরও অধিকারী হয় এবং এই তত্ত্ব সম্পর্কে কিছুটা চিন্তা-ভাবনা করে তবে একদিকে নিজের স্বরূপ তার কাছে উদ্ভাসিত হবে এবং অপর দিকে স্রষ্টার অস্তিত্ব, তার জ্ঞান ও অপার শক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করা ছাড়া তার গত্যন্তর থাকবে না।

    হে ভাই! তুমি কেন গর্ব করছ? তুমি তো বীর্যরূপে বাবার ঔরশ থেকে মায়ের গর্ভে সঞ্চালিত হয়েছ। অতঃপর প্রথমে রক্তপিণ্ড, পরে মাংসপিণ্ড আকার ধারণ করে মানবরূপী কায়াতে পরিণত হয়েছ। তুমি কি জান সেখানে তুমি কী খেয়েছ? খেয়েছ মায়ের দেহের অপ্রয়োজনীয় ও পরিত্যক্ত পদার্থ। ভূমিষ্ট হওয়ার পর চিনতে না তুমি ডান-বাম, চিনতে না বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব। খেতে জানতে না। খাইয়ে দিতে হত অপরকে। আজ তুমি বড় বুদ্ধিমান হয়ে বসেছ; তাই না? আল্লাহর হুকুম আহকামের পরোয়া করছ না। তুমি কি মনে করছ তোমার এ শক্তি চিরস্থায়ী? তোমার যৌবনে কখনো ভাটা পড়বে না? চেয়ে দেখ ফির‘আউনের দিকে কোথায় তার রাজত্ব? কারুনের মাল-সম্পদ কি তাকে আল্লাহর ‘আযাব থেকে রক্ষা করতে পেরেছে? তোমার জীবন ক্ষুদ্র হলে কী হবে; তোমাকে পাড়ি দিতে হবে জীবন নৌকার প্রতিটি ঘাটি। তুমি যে সৃষ্টি সেরা মাখলুক। শুধু তা-ই নও, তুমি নবীকূল শিরমনি সরওয়ারে কায়েনাত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠ উম্মদের দলভুক্ত। ভয় নেই, এগুতে থাকো। তোমার পূর্বে আর কেউ কি জান্নাতে যেতে পারবে? না, কখনো না। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করার সৌভাগ্য লাভ করবে।

    তুমি অবশ্য জান, দুনিয়াতে যার মর্যাদা সবচেয়ে বেশি তার দায়িত্বও সবচেয়ে বেশি। অতএব, মর্যাদা পেয়ে বসে থাকলে চলবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব পেয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। অতীত জীবনের সময়টুকু তো পূর্ব থেকেই হাতছাড়া, আর ভবিষ্যত জীবন তো অনিশ্চিত। তাহলে এবার কী করবে? বসে থাকলে চলবে না। আজই কার্য সম্পাদন করব বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। এদিকে আজকের দিনটি হলো অতীত ও ভবিষ্যতের সংযোগস্থল, যার কোনো স্থায়ীত্ব নেই। এর গতি অত্যন্ত প্রবল। অতএব, সময়কে কাজে লাগিয়ে এর থেকে তোমার প্রাপ্য কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করে নিতে হবে। তুমি তোমার যৌবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে অবশ্যই।

    হে বন্ধু! তুমি নিজেকে চিনতে পার নি, তুমি যে ফেরেশাতার চেয়েও উত্তম। তুমি আল্লাহর দরবারে আলোচিত ব্যক্তি। তুমি আল্লাহ তা‘আলার ফিরিশতাদের বন্ধু। তোমার বিয়োগে আসমানের দরজাসমূহ কাঁদবে। তাহলে কি তুমি দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আখেরাতের সৌভাগ্যের দিকে ধাবিত হবে না? জেনে রাখবে, আখিরাতের প্রথম ঘাটি কবর। তুমি জান, কবরে তোমার কী অবস্থা হবে? কবর প্রতিদিন চিৎকার করে বলতে থাকে: আমি পোক-মাকড়ের ঘর, আমি নির্জন বাসস্থান, এখানে ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা সবই সমান। তোমার কোনো চিহ্ন বাকি থাকবে না। তবে তুমি যদি আল্লাহর খাঁটি অলী হতে পার তাহলে তিনি হয়ত তোমাকে হিফাযত করবেন। তিনি তথায় তোমাকে জান্নাতের পোষাক পরাতে পারেন ও বিছানা বিছিয়ে দিতে পারেন। যদি সেথায় তুমি আল্লাহর নে‘আমত ভোগ করতে চাও তাহলে তোমাকে আল্লাহর হুকুম মানতে হবে ও নবীর আদর্শ মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে হবে। কোনো প্রকার বিদ‘আতের আশ্রয় নেওয়া যাবে না।

    কবর পথের যাত্রী! তুমি কি জান, কবর মাঝে তোমাকে কত কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে? আসবে দুই ফিরিশতা একযোগে, তোমাকে উঠিয়ে বসাবেন একসাথে। অতঃপর একসঙ্গে প্রশ্ন করা হবে:

    তোমার রব কে?

    সে দিন আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত আর কোনো উপায় থাকবে না। তাই চল আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন করার পথে অগ্রসর হই। এর জন্য যদি দুনিয়ার কিছু ত্যাগ করতে হয় তবুও পিছপা হওয়া যাবে না।

    এ দুনিয়া নেহায়েতই তুচ্ছ। নেই কোনো এর মূল্য। কাফের-মুশরিক সকলেই সমানভাবে ভোগ করছে। তাইতো হাদীসে এসেছে:

    «لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شَرْبَةَ مَاءٍ»

    “যদি আল্লাহর কাছে দুনিয়ার মূল্য মশার পাখার সমান হত, তাহলে কাফেরদেরকে তিনি একটু পানিও পান করাতেন না।” (তিরমিযী, হাদীস নং ২৩২০)

    ভয় নেই বন্ধু ভয় নেই। আল্লাহর রহমতের দিকে অগ্রসর হতে না হতেই তা তোমাকে স্পর্শ করবে দৌড়িয়ে। মহাপ্রলয়ে সবকিছু ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথে তোমার অস্তিত্বও কি বিলীন হয়ে যাবে? না, তুমি তো বিলীন হওয়ার মতো নও। দ্বিতীয়বার যখন সিংগায় ফূক দেওয়া হবে তখনই তোমার দণ্ডায়মান হতে হবে এক মহা পরাক্রমশালী বাদশাহ’র দরবারে। তার সামনে হিসাব দিতে হবে তিলে তিলে। সে দিন সকল মানুষ থাকবে হতভম্ব, নিরব-নিস্তব্ধ পরিস্থিতিতে সকলেই থাকবে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম কথা বলে সুপারিশ করে তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।

    তাই আসুন, প্রথমে নিজেকে চিনে মুহাম্মাদের তরীকায় আল্লাহর ইবাদত করে নিজেকে জান্নাতে যাওয়ার উপযুক্ত করে নিই। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন।