×
ফাতওয়াটি নারীদের পক্ষে মাহরাম ছাড়া শুধু মেয়েদের সাথে হজ করার বিধান প্রসঙ্গে। প্রশ্নটি হলো: আমি সৌদি আরবে বসবাস করি। সেখানেই আমার কর্মস্থল। গত বছর আমি আমার দুই বান্ধবীর সাথে হজ পালন করতে যাই, আমাদের সাথে কোনো মাহরাম ছিল না। এ বিষয়ে শরী‘আতের বিধান সম্পর্কে জানতে চাই।

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    প্রশ্ন: আমি সৌদি আরব বসবাস করি। সেখানেই আমার কর্মস্থল। গত বছর আমি আমার দুই বান্ধবীর সাথে হজ পালন করতে যাই, আমাদের সাথে কোনো মাহরাম ছিল না। এ বিষয়ে শরী'আতের বিধান সম্পর্কে জানতে চাই।

    উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ

    শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আল-উসাইমীন রহ. বলেন, তোমাদের এ কাজটি হলো, মুলতঃ মাহরাম ছাড়া হজ করা। আর এটি সম্পূর্ণ হারাম ও ইসলামি শরী'আতের পরিপন্থী। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি মিম্বারের উপর খুতবা দিচ্ছিলেন, কোনো মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া সফর না করে। এ কথা শোনে একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার স্ত্রী হজে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছে, অথচ আমি অমুক যুদ্ধে আমার নাম লিখিয়েছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হজ কর। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০০৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪১)

    মাহরাম ছাড়া মেয়েদের জন্য কোনো সফর করা জায়েয নাই। আর মাহরাম বলা হয়, যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া (নসবের কারণে কিংবা অন্য কোনো অনুমোদিত উপায়ে যেমন, বিবাহ-শাদি ইত্যাদি কারণে) চিরতরে হারাম। মাহরামকে অবশ্যই জ্ঞানী ও প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। সুতরাং যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সে মাহরাম হতে পারবে না, অনুরুপভাবে পাগলও মাহরাম হতে পারবে না।

    মেয়েদের সাথে মাহরাম থাকা জরুরি হওয়ার হিকমত হলো, নারীদের হিফাযত ও তাদের নিরাপত্তা। যাতে করে যারা আল্লাহকে ভয় করে না এবং আল্লাহর বান্দাদের প্রতি দয়া করে না, তাদের সাথে কোনো ধরণের নষ্টামি করতে না পারে। তার সাথে অন্য মহিলা থাকা ও না থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বা সে নিরাপদ কি নিরাপদ নয় তাও দেখার বিষয় নয়। সুতরাং কোনো মহিলা তার পরিবারস্থ অন্য মহিলার সাথে ঘর থেকে বের হলে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায়ই থাকে, তা সত্ত্বেও তার জন্য মাহরাম ছাড়া সফর করা জায়েয নয়।

    কারণ, উপরোক্ত হাদীসে আমরা দেখলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন লোকটিকে তার স্ত্রীর সাথে হজ করার নির্দেশ দেন, তাকে জিজ্ঞাসা করেন নি তার সাথে কোনো মহিলা আছে কি না কিংবা সে নিরাপদ কি নিরাপদ না সে প্রশ করা হয় নি। যেহেতু জিজ্ঞাসা করেন নি এতে প্রমাণিত হয় যে, নিরাপত্তা থাকা না থাকার বিষয়ে কোনোই পার্থক্য নেই। এটিই বিশুদ্ধ মত।

    বর্তমানে কিছু লোক শিথিলতা প্রদর্শন করে থাকেন, তারা বলেন যেসব মহিলা মাহরাম ছাড়া বিমানে সফর করবেন, তাদের জন্য এ সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এ মত সুস্পষ্ট অনেকগুলো দলীলের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বিমানের সফরেও অন্যান্য সফরের মত নানাবিদ সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, তাকে বিমানে তুলে দেওয়ার পর, সে একা তার সাথে কোনো মাহরাম নেই। আর বিমান নির্দিষ্ট সময়ে কখনো ছাড়ে আবার কখনো ছাড়ে না; বরং দেরীতে বা একদিন বিলম্বে ছাড়ে, তখন তাকে আবার ফিরে যেতে হয়। আবার কখনো এমন হয়, যেখানে অবতরণ করার কথা ছিল, সেখানে না নেমে অন্য কোনো বিমান বন্দরে অবতরণ করে অথবা এমনও হতে পারে, যে বিমান বন্দরে অবতরণ করার কথা সেখানে অবতরণ ঠিকই করে, তবে অনেক দেরীতে করে। আবার এও হতে পারে, নির্দিষ্ট সময়ে বিমান অবতরণ করেছে কিন্তু যে তাকে রিসিভ করবে, সে কোনো কারণে (যেমন অলসতা, ঘুম, রাস্তায় ভিড় ও পথে গাড়ী নষ্ট ইত্যাদি কারণে) সময় মতো বিমান বন্দরে উপস্থিত হতে পারে নি। তখনতো সে একা, যে কোনো সমস্যায় পড়তে পারে। তারপরও যদি ধরে নেওয়া যায়, সে নির্দিষ্ট সময়ে পৌছেছে এবং তাকে রিসিভও করেছে; কিন্তু বিমানের মধ্যে সে যার পাশে বসবে সে পুরুষ সে তাকে ধোকায় ফেলতে পারে এবং তাদের উভয়ের মাঝে সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, যেমনটি বর্তমানে হয়ে থাকে।

    মোটকথা: নারীর জন্য উচিত হলো, সে আল্লাহকে ভয় করবে এবং তার অন্তরে একমাত্র আল্লাহরই ভয় থাকবে। আর তারা কখনোই চাই হজের সফর হোক অথবা অন্য কোন সফর মাহরাম ছাড়া কোথাও যেন সফর না করে, প্রাপ্ত বয়স্ক ও জ্ঞানী মাহরাম ছাড়া তার জন্য সফর করা বৈধ নয়।

    আল্লাহই ভালো জানেন।