<ul><li><a href="#t1"><span dir="ltr">সময়</span><span dir="ltr"> :</span>
<span dir="ltr">সে</span> <span dir="ltr">তো</span> <span dir="ltr">জীবন</span></a>
<ul>
<li><a href="#t2">সময়:
সে তো জীবন</a>
</li>
<li><a href="#t3">সময় কী
? </a>
</li>
<li><a href="#t4">সময়ের নিজস্ব বক্তব্য : </a>
</li>
<li><a href="#t5">কুরআন ও হাদীসের আলোকে সময় : </a>
</li>
<li><a href="#t6">হাদীসের আলোকে সময় :</a>
</li>
<li><a href="#t7">সময়ই জীবন :</a>
</li>
<li><a href="#t8">আগামীকাল শব্দটি মস্তবর ধোকা:</a>
<ul>
<li><a href="#t9">মুসলিম মহামনীষীদের সময়ের মূল্যায়ন: </a>
</li>
<li><a href="#t10">১. মারুফ কারখী রহ. : </a>
</li>
<li><a href="#t11">২. দাউদ তায়ী রহ. : </a>
</li>
<li><a href="#t12">৩. মুহাম্মদ ইবনে ইসাঈল বুখারী রহ. :</a>
</li>
<li><a href="#t13">৪. নাহুবিদ খলীল রহ. </a>
</li>
<li><a href="#t14">৫. ইমাম মুহাম্মদ রহ. : </a>
</li>
<li><a href="#t15">অমুসলিম মনীষীদের সময়ের মূল্যায়ন: </a>
</li>
<li><a href="#t16">সময়ের আচলেই সুপ্ত আছে জাতীয় উন্নতির গূঢ় রহস্য:</a>
</li>
<li><a href="#t17">সময়ের অপচয় আত্মহত্যার নামান্তর : </a>
<ul>
<li><a href="#t18">সময় সংরক্ষণের কতিপয় মূলনীতি: </a>
</li>
<li><a href="#t19">১. রুটিন : </a>
</li>
<li><a href="#t20">২. সুস্থতা: </a>
</li>
<li><a href="#t21">৩. আত্মসমালোচনা: </a>
</li>
<li><a href="#t22">উপসংহার: </a>
</li>
</ul></li>
</ul></li>
</ul></li>
</ul><div class="ltr start"><div class="ltr start"><h1 class="rtl center" id="p1"><a id="t1" class="anchor"> </a><a href="#t1"><span dir="ltr">সময়</span><span dir="ltr"> :</span>
<span dir="ltr">সে</span> <span dir="ltr">তো</span> <span dir="ltr">জীবন</span></a></h1><p class="ltr center" id="p23">চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ</p><p class="ltr center" id="p24">সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান</p><span class="ltr start"><br class="ltr start"></span><p class="ltr center" id="p25"><span dir="rtl">﴿الوقت هو الحياة﴾</span></p><p class="ltr center" id="p26"><span dir="rtl">أبو الكلام أزاد </span></p><p class="rtl center" id="p27">مراجعة : عبد الله شهيد عبد الرحمن</p><b class="ltr start"><i class="ltr start"><span class="ltr start"><br class="ltr start"></span></i></b><h2 class="ltr center" id="p2"><a id="t2" class="anchor"> </a><a href="#t2">সময়:
সে তো জীবন</a></h2><p class="ltr justify" id="p28">Time and tide wait for none. সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য
অপেক্ষা করে না। বাক্যটি
ক্ষুদ্র হলেও ব্যাপক অর্থবোধক। এটি একটি বাস্তব সত্য। মানুষ এতে খুঁজে পায় তার
জীবনের মূল্য। এ বাক্যটি মানব জীবনে কেবল আগ্রহ-উদ্দীপনা ও প্রেরণা জাগায় শুধু
তা-ই নয়, বরং এটি একজন মানুষকে দান করে নতুন জীবন। সময়ই তার জীবন। এর সঠিক
ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ জান্নাতের সুউচ্চ আসনে পৌঁছতে পারে। অপরদিকে এর প্রতি
অবহেলা করে সে নিক্ষিপ্ত হয় জাহান্নামের অতল দেশে। তাই সময়ের মূলতত্ত্ব ও গুরুত্ব
সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করছি। </p><h2 class="ltr start" id="p3"><a id="t3" class="anchor"> </a><a href="#t3">সময় কী
? </a></h2><p class="ltr justify" id="p29">বড় বড় দার্শনিক ও
বিজ্ঞানীরা সময়ের মূলতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা-<span class="c6">পর্যলোচনা করেছেন। বিখ্যাত দার্শনিক আবুল
আলা বলেন:</span> কাল বলতে আমরা মাত্র তিনটি দিনই বুঝি। গতকাল, আজ ও আগামীকাল। কিন্তু আজ
বলতে আমাদের নিকট কিছু আছে কী? এ তো অতীত ও ভবিষ্যতের সংযোগস্থল, যার কোন
স্থায়ীত্ব নেই। এর গতি এত দ্রুত যে, একে মোটেও আয়ত্বে রাখা যায় না। অতীতকাল তো পূর্ব থেকেই হাত ছাড়া, আর
ভবিষ্যতের কোন নিশ্চয়তা নেই। অতএব, মানুষ কিভাবে কাজ করবে? তাকে যে জীবনে অনেক বড়
হতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে শত সহস্র বাঁধা-বিঘ্ন পেরিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্য পানে। তাই জীবনের
প্রতিটি মুহুর্ত কাজে লাগানো অত্যাবশ্যক। </p><h2 class="ltr start" id="p4"><a id="t4" class="anchor"> </a><a href="#t4">সময়ের নিজস্ব বক্তব্য : </a></h2><p class="ltr justify" id="p30">আল্লামা সুয়ূতী রহ.
<span class="c1">“জামউল জাওয়ামে”</span> নামক গ্রন্থে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন,<span class="c6"> রাসূলে কারিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:</span> প্রতিনিয়ত সূর্যোদয়ের সাথে সাথে “দিন” এই বলে ঘোষণা করতে
থাকে যে, যদি কেউ কোন ভাল কাজ করতে চায়, তাহলে যেন সে তা করে নেয়। কেননা আমি
কিন্তু আর ফিরে আসবো না। আমি ধনী-দরিদ্র, ফকির-মিসকীন, রাজা-প্রজা সকলের জন্য
সমান। আমি বড় নিষ্ঠুর। আমি কারো প্রতি সদয় ব্যবহার করতে শিখিনি। তবে আমার সাথে যে
সদ্ব্যবহার করবে সে কখনও বঞ্চিত হবে না। </p><h2 class="ltr start" id="p5"><a id="t5" class="anchor"> </a><a href="#t5">কুরআন ও হাদীসের আলোকে সময় : </a></h2><p class="ltr justify" id="p31">পৃথিবীর শুরু লগ্ন
থেকেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র সবকিছুকে একটি নির্দিষ্ট
নিয়মে পরিচালনা করে আসছেন। সূর্য প্রতিনিয়ত একটি নির্দিষ্ট সময়ে উদিত হয়। আবার
নির্দিষ্ট সময়ে অস্ত যায়। সময়ের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে
একাধিক স্থানে দিবা-রাত্রির কসম করেছেন। কোথাও সকালের, কোথাও চাশতের সময়ের, আরার
কোথাও আসরের সময়ের। শরীয়তের প্রতিটি হুকুম আহকামের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেও দেখতে
পাই, ইসলাম প্রতিটি কাজের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। নামাজ, রোজা,
হজ ,<span class="c6">যাকাত ইত্যাদি বড় বড় আহকাম ছাড়াও অধিকাংশ বিষয়সমূহ সময়ের মালায় গাঁথা। এরশাদ
হচ্ছে :</span> </p><p class="rtl justify" id="p32">إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى
الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا ﴿103﴾</p><p class="ltr justify" id="p33">নিশ্চয় নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফরজ করা
হয়েছে। <span class="c2">(সূরা নিসা : ১০৩)</span></p><h2 class="ltr start" id="p6"><a id="t6" class="anchor"> </a><a href="#t6">হাদীসের আলোকে সময় :</a></h2><p class="ltr justify" id="p34">সময়ের মর্যাদা,
জীবনের গুরুত্ব, উহার অনুভূতি ও গঠনমূলক জীবন গড়ার প্রতি নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময় বিচিত্র ভঙ্গিমায় ইঙ্গিত করেছেন। প্রসিদ্ধ
গ্রন্থকার আবু দাউদ রহ. স্বীয় কিতাবে ৪৮০০ <span class="c2">(চার হাজার আটশত)</span> হাদীস লিপিবদ্ধ
করেছেন। তা থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রমাণস্বরূপ চারটি হাদিস
নির্বাচন করেছেন। তার মধ্যে একটি এই, </p><p class="rtl justify" id="p35">من حسن إسلام المرء تركه ما لا يعنيه</p><p class="ltr justify" id="p36">কোন ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক বিষয় পরিত্যাগ করা। </p><p class="ltr justify" id="p37">অন্য এক হাদীসে
এরশাদ হচ্ছে -</p><p class="rtl justify" id="p38">اغتنم خمساً قبل خمس، حياتك قبل موتك،
وشبابك قبل هرمك، وصحتك قبل مرضك، وغناك قبل فقرك، فراغك قبل شغلك.</p><p class="ltr justify" id="p39">পাঁচটি বস্তু আসার পূর্বে পাঁচটি বস্তুকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করো। মৃত্যুতর পূর্বে
জীবনকে, বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে, অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে, দরিদ্রতার
পূর্বে সচ্ছলতাকে এবং ব্যস্ততার পূর্বে অবসরতাকে। </p><p class="ltr justify" id="p40">ইমাম বুখারী রহ.
রেকাক অধ্যায়ে ও ইমাম তিরমিজি রহ.<span class="c6"> যুহদ অধ্যায়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের এরশাদ উল্লেখ করেছেন :</span> দুটি নেয়ামতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ
ধোকাপ্রাপ্ত। একটি হলো সুস্থতা আর অপরটি অবসরতা। সুস্থার মর্যাদা তখনই বুঝা যায়,
যখন অসুস্থতার পাহাড় মাথায় চেপে বসে। দ্বিতীয় প্রকার নেয়ামতের কথা ঐ সকল লোকের
নিকট জিজ্ঞেস কর, যারা সামান্য সময় অবসর পাওয়ার জন্যে ব্যাকুল। আবু বকর রা.<span class="c6"> এই দুআ
করতেন:</span> হে আল্লাহ আমাদেরকে কঠিন বিপদে ঠেলে দিও না, আর পাকড়াও করো না অসতর্ক
অবস্থায়, আর আমাদেরকে অমনোযোগীদের অন্তর্ভূক্ত করবেন না। </p><p class="ltr justify" id="p41">ওমর রা.<span class="c6"> দুআ করতেন
:</span> হে মাবুদ, আমরা সময়ের বরকত ও কল্যাণময় অংশটুকু লাভের আবেদন করছি। আলী রা.<span class="c6"> বলতেন
:</span> চলমান দিনগুলো তোমাদের জন্য পুস্তিকা বা আমলনামা স্বরূপ। তাই উত্তম আমল দ্বারা
উহাকে স্থায়ী করে রাখো। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলতেন, আমি ঐ দিনটির চেয়ে অন্য
কোন বস্তুর উপর অধিক অনুতপ্ত হই না, যে দিনটি আমার জীবন থেকে হ্রাস পেল অথচ তাতে
কোন নেক আমল যোগ হলো না। </p><h2 class="ltr start" id="p7"><a id="t7" class="anchor"> </a><a href="#t7">সময়ই জীবন :</a></h2><p class="ltr justify" id="p42">আরবীতে একটি প্রবাদ
আছে - </p><p class="rtl justify" id="p43">الوقت
هو الحياة فلا تقتلوه</p><p class="ltr justify" id="p44">সময় সে তো জীবন, সুতরাং তাকে হত্যা করো না। মানুষের চিন্তা করা উচিৎ যে, এই দুনিয়ার
জীবন কি? এ তো জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে অনিশ্চিত সামান্য বিরতি। স্বর্ণ-রৌপ্য একবার
হাতছাড়া হলে আবার তা ফিরে পাওয়া সম্ভব। এমনকি পূর্বের তুলনায় অধিক পাওয়াও সম্ভব।
কিস্তু যে মুহূর্তটুকু একবার অতিবাহিত হয়ে যায়, তা কি কোন অবস্থায় কোন মূল্যে ফিরে
আসে? অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে চিন্তা করুন সময় কি স্বর্ণ থেকে অধিক মূল্যবান নয়? নয়
কি হীরকের চেয়ে অধিক দামী? ইহা কি দুনিয়ার সকল বস্তু থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়?</p><h2 class="ltr start" id="p8"><a id="t8" class="anchor"> </a><a href="#t8">আগামীকাল শব্দটি মস্তবর ধোকা:</a></h2><p class="ltr justify" id="p45">মানুষ সময় নষ্ট করে
অনুতপ্ত হতো। কিন্তু এখানে তাকে একটি বিষয় অনুতপ্ত হতে দেয় না। তা হলো <span class="c1">“আগামীকাল”। এ শব্দটি উচ্চারণ করার চেয়ে
বড় অপরাধ, নির্ভীকতা, অসতর্কতা ও বোকামী আর কিছুই নেই। একটি লোকের জীবন অকার্যকর ও
নষ্ট হওয়ার জন্য এই একটি শব্দই যথেষ্ট। সময় একবার মরে গেলে পরবর্তীতে তার কবরের
উপর অশ্রুবর্ষণ ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। দুনিয়ার সকল মানুষ মিলে আর্তনাদ করলেও
সে সময় আর ফিরে আসবে না। তাই মানুষকে “আজ”</span> শব্দের দিকে ফিরে আসতে হবে। আজই করছি বলে দৃঢ় সংকল্প করতে হবে।
জ্ঞানীদের রেজিষ্ট্রিতে আগামীকাল বলতে কোন শব্দ নেই। </p><b class="ltr start"><span class="ltr start"><br class="ltr start"></span></b><h3 class="ltr start" id="p9"><a id="t9" class="anchor"> </a><a href="#t9">মুসলিম মহামনীষীদের সময়ের মূল্যায়ন: </a></h3><p class="ltr justify" id="p46">ইতিহাসের পাতাকে
যারা অলংকৃত করেছেন, হয়ে আছেন যারা স্বরণীয় ও বরণীয়, তারা সকলেই সময়ের মূল্য হাড়ে
হাড়ে উপলব্ধি করেছেন। প্রবন্ধের এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে তাদের সকলের কথা উল্লেখ করা
সম্ভব নয়। এখানে মাত্র কয়েকজন মনীষীর আলোচনা করাই যথেষ্ট মনে করছি, বুদ্ধিমানদের
জন্য ইশারাই যথেষ্ট। </p><h3 class="ltr start" id="p10"><a id="t10" class="anchor"> </a><a href="#t10">১. মারুফ কারখী রহ.<span class="c6"> :</span> </a></h3><p class="ltr justify" id="p47">একবার তার দরবারে
কিছু লোকজন এসে দীর্ঘক্ষণ বিলম্ব করল। বিরক্ত হয়ে তিনি বললেন, সূর্য চালনাকারী
ফেরেশতা কখনও ক্লান্ত হন না। অতএব, বল দেখি তোমরা কখন উঠবে?</p><h3 class="ltr start" id="p11"><a id="t11" class="anchor"> </a><a href="#t11">২. দাউদ তায়ী রহ.<span class="c6"> :</span> </a></h3><p class="ltr justify" id="p48">তিনি রুটির
পরিবর্তে ছাতু খেতেন। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রুটি চিবানো ও ছাতু খাওয়ার
মধ্যে এই পরিমাণ সময়ের ব্যবধান, যাতে ৫০ টি আয়াত তেলাওয়াত করা যায়। </p><h3 class="ltr start" id="p12"><a id="t12" class="anchor"> </a><a href="#t12">৩. মুহাম্মদ ইবনে ইসাঈল বুখারী রহ.<span class="c6"> :</span></a></h3><p class="ltr justify" id="p49">হাদীস শাস্ত্রের ইমাম
বুখারী রহ. ধরাপৃষ্ঠে আগমন করে যখন চোখ খুললেন, তখন সর্বত্র ইসলামী জ্ঞানের চর্চা
চলছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জমানা এই মাত্র শেষ হল,<span class="c6">
সাহাবায়ে কেরামের সংশ্রবে লালিত মহাপুরুষগণ তখনও জীবিত ছিলেন। জ্ঞানের পিপাসা নিয়ে
সফরের লাঠি হস্তে ধারণ করে রওয়ানা হলেন তৎকালীন মুহাদ্দিসগণের নিকট বিভিন্ন শহরে।
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত হিসাব করে করে কাজে লাগিয়েছেন। কখনো কারো গীবত করেননি।
তিনি বলেন :</span> স্মৃতিশক্তি বর্ধনের একমাত্র মাধ্যম হলো -অটল, অবিচল ও একাগ্রতার সাথে
পড়াশুনায় নমোনিবেশ করা। তিনি এক লক্ষ সহীহ হাদীস ও দুই লক্ষ গাইরে সহীহ হাদীস
মুখস্ত করেছেন। </p><h3 class="ltr start" id="p13"><a id="t13" class="anchor"> </a><a href="#t13">৪. নাহুবিদ খলীল রহ. </a></h3><p class="ltr justify" id="p50">তিনি ছিলেন ইলমে
আরুযের প্রবর্তক। তিনি বলতেন, আমার নিকট সর্বাপেক্ষা অসহ্যকর ঐ সময়টুকু, যে সময়
আমি খাওয়া দাওয়া করি। </p><h3 class="ltr start" id="p14"><a id="t14" class="anchor"> </a><a href="#t14">৫. ইমাম মুহাম্মদ রহ.<span class="c6"> :</span> </a></h3><p class="ltr justify" id="p51">তিনি তার ইলমী
একাগ্রতার কারণে নিজের পোশাকের কোন খবর থাকত না। পরিবারের লোকজন ময়লা কাপড় ধৌত করে
দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোন খবর থাকত না। একাগ্রতার কারণে কখনো কখনো সালামের জবাব
দেওয়ার পরিবর্তে দোয়া করে দিতেন। তার সাথে দুনিয়াবি কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। ঘরে একটি
মোরগ ছিল, সেটির ডাকে পড়ালেখায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয় বলে তিনি সেটিকে ধরে জবাই করে
দিলেন। </p><p class="ltr justify" id="p52">একই দিন নাহুবিদ
কাসায়ী ও ইমাম মুহাম্মদ রহ.<span class="c6"> এর ইন্তেকাল হলে বাদশা হারুনুর রশীদ বললেন :</span> <span class="c1">“আজ ভাষা ও ফিকাহ শাস্ত্র দাফন
করে ফেললাম”</span>। </p><p class="ltr justify" id="p53">শাইখুল হাদীস যাকারিয়া
রহ. দীর্ঘদিন ধরে মাত্র এক বেলা খানা খেতেন।</p><p class="ltr justify" id="p54">মাওলানা এজাজ আলী
রহ. ক্লাশ শুরু হওয়ার ৫/১০ মিনিট পূর্বে কামরা থেকে বের হয়ে যেতেন। আল্লামা আনোয়ার
শাহ কাশমিরি রহ. মুমূর্ষ অবস্থায়ও কিতাব অধ্যায়ন করতেন। এ সকল মনীষীগণ সময়
সংরক্ষণের উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। </p><h3 class="ltr start" id="p15"><a id="t15" class="anchor"> </a><a href="#t15">অমুসলিম মনীষীদের সময়ের মূল্যায়ন: </a></h3><p class="ltr justify" id="p55">পৃথিবীর বুকে যারা
বড় হয়েছেন, তারা সময়ের সদ্ব্যবহার করতে জানতেন। বিদ্যাসাগর, আশুতোশ, রবীন্দ্রনাথ,
আব্রাহাম লিংকন প্রমূখ মনীষীগণ সময়ের প্রতি একটুও অবহেলা করতেন না বলেই জীবনে
অফুরন্ত কর্ম-কীর্তির স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন। </p><p class="ltr justify" id="p56">ষ্টিফেনসন ইঞ্জিনে
কয়লা দিতেন আর অংক কষতেন। </p><p class="ltr justify" id="p57">ওয়াট দোকানে বসে
বেচাকেনা করতেন আর রসায়ন শাস্র ও জার্মানী ভাষা শিক্ষা করতেন। সময়ের অপব্যবহার
করতেন না বলেই তিনি উভয় বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। </p><p class="ltr justify" id="p58">ওয়াশিংটনের
সেক্রেটারী একবার কিছু সময় দেরি করে এসে এই বলে ওজর পেশ করলেন যে,<span class="c6"> আমার ঘড়ি স্লো ছিল।
ওয়াশিংটন বললেন:</span> হয়ত তুমি ঘড়ি পরিবর্তন করবে, নতুবা আমি সেক্রেটারী পরিবর্তন করব। </p><p class="ltr justify" id="p59">ফিসাগোরিসের নিকট
জিজ্ঞেস করা হলো সময় কি? উত্তরে তিনি বললেন: সময়ই এ দুনিয়ার আত্মা। </p><h3 class="ltr start" id="p16"><a id="t16" class="anchor"> </a><a href="#t16">সময়ের আচলেই সুপ্ত আছে জাতীয় উন্নতির গূঢ় রহস্য:</a></h3><p class="ltr justify" id="p60">সময় ব্যক্তি ও
জাতির প্রধান পুজি, সময়ের সদ্ব্যবহার করেই একটি জাতি উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছতে
পারে। অধুনা পাশ্চাত্য জ্ঞান ও বিজ্ঞানের চুঁড়ায় আরোহন করেছে বলে সারা দুনিয়ার
মানুষ স্বীকৃতি দেয়। এ স্বীকৃতি তারা এমনিতেই ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়নি। এর জন্য
সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে -</p><p class="rtl justify" id="p61">وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا
سَعَى <span class="c2">(سورة النجم)</span></p><p class="ltr justify" id="p62">আর মানুষ যা চেষ্টা করে, তাই সে পায়। <span class="c2">(সূরা নজম : ৩৯)</span></p><p class="ltr justify" id="p63">অমুসলিমরা সময়ের
যেভাবে মূল্যায়ন করেছে এর চেয়ে বেশি মূল্যায়ন করা উচিৎ ছিল মুসলমানদের। কিন্তু
দুঃখজনক হলেও সত্য, মুসলানরা তাদের বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা, গান-বাদ্য, মিউজিক
ইত্যাদি গর্হিত কার্যকলাপ মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরেছে। আর সময়ের মূল্যায়নের মত যে সম্পদ
তাদের কাছে রয়েছে তা কাজে লাগাচ্ছে না।</p><p class="ltr justify" id="p64">সময় আল্লাহর দেয়া
আমানত। যে জাতি সময়ের মূল্য বুঝে না, মূল্যবান সময়কে হেলায় উড়িয়ে দেয় সে জাতির
ধ্বংস অনিবার্য। সময়ের মূল্যয়ান মুসলমানদের ধর্মীয় দায়িত্ব। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত
মুসলমানদের শান, মর্যাদা ও বড়ত্ব সাড়া দুনিয়াকে ছেয়ে রেখেছিল। উন্নতির চরম শিখরে
আরোহিত ছিল মুসলমান জাতি। ব্যক্তিগত জীবন থেকে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত সর্বজন
স্বীকৃত একটি মত এই ছিল, যে কাজটি অনর্থক, চাই সেটি যতই বিস্ময়কর হোক না কেন সেটি
জীবনের পূর্ণতা বয়ে আনতে পারে না। বরং তা ঠেলে দেয় ধ্বংসের মুখে। </p><h3 class="ltr start" id="p17"><a id="t17" class="anchor"> </a><a href="#t17">সময়ের অপচয় আত্মহত্যার নামান্তর : </a></h3><p class="ltr justify" id="p65">সময় নষ্ট করা এক
প্রকার আত্মহত্যা। তবে পার্থক্য এতটুকু যে, আত্মহত্যা মানুষকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত
করে দেয়। আর সময়ের অপব্যবহার একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জীবিত ব্যক্তিকে মৃত
বানিয়ে রাখে। যে মিনিট, ঘন্টা ও দিনটি অনর্থক নষ্ট হয়ে যায়, যদি মানুষ তার হিসাব
করত, তাহলে উহার সমষ্টি হয়ে দাড়াত - মাস, বছর ও যুগ । </p><p class="ltr justify" id="p66">যদি কাউকে বলা হয়
যে, তোমার জীবনের ৫/১০ বছর হ্রাস করা হলো, তাহলে নিশ্চিত সে ব্যাবুল ও মর্মাহত
হবে, কিন্তু তার জীবনের একটি বিরাট অংশ যে অকারণে নষ্ট করছে, তার প্রতি সে একটুও
ভ্রুক্ষেপ করছে না। </p><p class="ltr justify" id="p67">মাত্র পাঁচ মিনিট
দেরি হওয়ার কারণে নেপালিয়নের মত অজেয় সেনাপতিকেও পরাজিত হতে হয়েছে। যথা সময়ে
কর্তব্য আদায় না করায় ব্যর্থতার বোঝা বহন করতে হয়েছিল। </p><p class="ltr justify" id="p68">তুমি খুশি থাক আর
চিন্তিত থাক, কষ্ট ও পেরেশিন থেকে বাঁচার একমাত্র মাধ্যম হলো ব্যস্ত থাকা। সামান্য
সময়ের জন্যেও অবসর না থাকা। অলসতা মানুষকে এমনিভাবে খেয়ে ফেলে যেমনিভাবে খেয়ে ফেলে
মরিচিকা লৌহ দন্ডকে। </p><p class="ltr justify" id="p69">অতএব, সময়কে কাজে
লাগিয়ে মানুষ হয়ত জ্ঞান বিজ্ঞানের উচু শিখরে আরোহন করবে, নতুবা অজ্ঞতা ও বর্বরতার
অন্ধকার তাকে কোথা হতে কোথায় নিয়ে যাবে তা টের পাওয়াও যাবে না।</p><b class="ltr start"><i class="ltr start"><span class="ltr start"><br class="ltr start"></span></i></b><h4 class="ltr start" id="p18"><a id="t18" class="anchor"> </a><a href="#t18">সময় সংরক্ষণের কতিপয় মূলনীতি: </a></h4><p class="ltr justify" id="p70">সময় মানব জীবনের
মূল্যবান পুঁজি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো মানুষ উহা যে পরিমাণ নির্ভীকতা,
নিষ্ঠুরতা ও অবহেলা করে নষ্ট করে দেয়, তার আয়ত্বাধীন অন্য কোন জিনিষ এমনিভাবে নষ্ট
করে না। এদিকে লক্ষ্য করে সময়ের সঠিক ব্যবহারের তিনটি মূলনীতি রচনা করা হল। </p><h4 class="ltr start" id="p19"><a id="t19" class="anchor"> </a><a href="#t19">১.<span class="c6"> রুটিন :</span> </a></h4><p class="ltr justify" id="p71">দিবারাত্রির
প্রতিটি কাজের জন্য একটি নিদিষ্ট সময় নির্ধারণ করার নাম রুটিন। ক্ষণিকের জীবনে
মানুষকে অনেক কাজ করতে হয়। পাড়ি দিতে হয় তাকে জীবন নৌকার প্রতিটি ঘাটি। সকল কাজ
সঠিকভাবে সম্পাদন করা তখনই সম্ভব ও সহজ হবে, যখন সে পূর্ব থেকেই একটি রুটিন তৈরি
করে নেবে। </p><p class="ltr justify" id="p72">তবে রুটিন করতে
গিয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। যে কাজ যে সময় সম্পাদন করা অধিক উপযোগী
সে কাজ তখনই করতে হবে। উদাহরণত : যে সকল কাজে উদ্যমতা ও সুস্থ মস্তিস্ক প্রয়োজন সে
সকল কাজের সময়সূচী এমন সময় রাখতে হবে, যখন মস্তিস্ক সুস্থ, সবল ও ঠান্ডা থাকে, এবং
মানব প্রকৃতিতে যৌবনতা অটুট থাকে। আর সে সময়টি হলো সকাল। প্রভাতে মানুষের
স্মৃতিশক্তি ও যোগ্যতা সজীবতায় আচ্ছন্ন থাকে। এ কারণেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উম্মতের জন্য দোয়া করেছেন -</p><p class="rtl justify" id="p73">اللهم بارك لأمتي في بكورها. <span class="c2">(رواه
الترمذي)</span></p><p class="ltr justify" id="p74">হে আল্লাহ তুমি আমার উম্মতের জন্য প্রভাতে বরকত দান কর। <span class="c2">(তিরমিজি)</span></p><p class="ltr justify" id="p75">সময়সূচী নির্ধারিত
থাকলে কোন সময় কি দায়িত্ব সে সম্পর্কে চিন্তা করে সময় নষ্ট করতে হয় না। এমনিতেই
তার স্মরণে এসে যায়। </p><h4 class="ltr start" id="p20"><a id="t20" class="anchor"> </a><a href="#t20">২.<span class="c6"> সুস্থতা:</span> </a></h4><p class="ltr justify" id="p76">সুস্থতা মানব জীবনের একটা বড় নেয়ামত। মন মস্তিস্কের সুস্থতা দেহের
সুস্থতার উপর নির্ভরশীল। দেহ ও মন আমাদের কাছে খোদাপ্রদত্ত আমানত। তাই এ আমানতের
হক আদায় করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:</p><p class="rtl justify" id="p77">إن لربك عليك حقا ، ولنفسك عليك
حقا ، ولأهلك عليك حقا ، فأعط
كل
ذي
حق
حقه،
<span class="c2">(رواه البخاري)</span></p><p class="ltr justify" id="p78">যেমনি তোমার উপর তোমার প্রভূর হক রয়েছে, তেমনি তোমার দেহ ও
পরিবার-পরিজনের হকও তোমার উপর রয়েছে। অতএব, প্রত্যেককে তাদের প্রাপ্য আদায় করে
দাও। </p><p class="ltr justify" id="p79">খলিফা ওমর ইবনে
আব্দুল আজিজ রহ. একবার আরাম করছিলেন। এ সময় তার এক পুত্র এসে বলল, আব্বা আপনি
শুয়ে আছেন; অথচ লোকজন আপনার অপেক্ষায় <span class="c2">(দরজায়)</span> দাড়িয়ে আছে? তিনি বললেন: হে বৎস! দেহ
আমার বাহনস্বরূপ, আমার ভয় হচ্ছে যদি মাত্রাতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেই তাহলে তা
<span class="c2">(অপারগ হয়ে)</span> বসে পড়বে। </p><p class="ltr justify" id="p80">যথা সময়ে সুষ্ঠু
সুন্দর কার্য সম্পাদন করতে হলে শারীরিক সুস্থতা সংরক্ষণের প্রতি দৃষ্টি রাখা একটি প্রকৃতিগত
বিষয়। কাজ অল্প হোক,<span class="c6"> কিন্তু তা নিয়মিত হওয়া চাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :</span> </p><p class="rtl justify" id="p81">وإن أحب
الأعمال
إلى
الله
ما
دام وإن قل، <span class="c2">(رواه البخاري)</span></p><p class="ltr justify" id="p82">আল্লাহর কাছে ঐ আমল সবচেয়ে প্রিয় যা অল্প হলেও নিয়মিত করা হয়। </p><h4 class="ltr start" id="p21"><a id="t21" class="anchor"> </a><a href="#t21">৩.<span class="c6"> আত্মসমালোচনা:</span> </a></h4><p class="ltr justify" id="p83">কি ব্যয় হলো আর কি পাওয়া গেল? কতটুকু উপার্জিত হল, আর কতটুকু
লোকসান হলো? এটা নির্ণয় করার কষ্টিপাথরের অপর নাম ইহতেসাব বা আত্মসমালোচনা। এভাবে
কড়ায় গন্ডায় হিসেব লাগালে অন্তরে অনুশোচনার সৃষ্টি হয়। এবং ভবিষ্যতে সময় নষ্ট না
করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। </p><b class="ltr start"><i class="ltr start"><span class="ltr start"><br class="ltr start"></span></i></b><h4 class="ltr start" id="p22"><a id="t22" class="anchor"> </a><a href="#t22">উপসংহার: </a></h4><p class="ltr justify" id="p84">ঘড়ি টিক টিক করে
অবিরাম গতিতে চলছে আর বলছে তোমরা তোমাদের কর্তব্য-কর্ম সম্পন্ন কর,<span class="c6"> উপকার তেমাদেরই
হবে। তাই সময়ের নিকট থেকে আমাদের পাওনা কড়ায় গন্ডায় আদায় করে নিতে হবে। এক মুহূর্ত
সময়ও যেন বৃথা ক্ষয় না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। কবি গুরু বলেছেন :</span> </p><p class="ltr justify" id="p85"><span class="c1">“কাল স্রোতে ভেসে যায় জীবন-যৌবন, ধন-মান। কিন্তু যা ভেসে
যায় না তা হলো কীর্তি”</span>। </p><p class="ltr justify" id="p86">যে সকল সনামধন্য
পুরুষগণের কীর্তি ও প্রতিভা দেখে আমরা মুগ্ধ ও অবিভূত, তাদের কীর্তি প্রতিষ্ঠার মূলে
আছে সময়ানুবর্তিতা। সময়ানুবর্তিতাই জীবনে সাফল্য লাভের চাবিকাঠি। </p><p class="ltr center" id="p87">সমাপ্ত</p></div></div>