×
একজন নারী কীভাবে মাহে রমজানের দিবস-রজনী যাপন করবে, নিজ ও পরিবার-পরিজন বিষয়ে, এ পবিত্র মাসে, নারীকে কী ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হবে তার অনুপূঙ্খ বর্ণনা রয়েছে বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে।

    মুসলিম নারী রমযানের দিনগুলো কীভাবে অতিবাহিত করবে?

    كيف تقضي المرأة المسلمة يومها في رمضان؟

    < بنغالي >

    আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

    عبد الله شهيد عبد الرحمن

    —™

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    মুসলিম নারী রমযানের দিনগুলো কীভাবে অতিবাহিত করবে?

    আমরা প্রথমে নিজেদের প্রশ্ন করতে পারি যে, কেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ রমযানকে সকল মাসের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন? আল্লাহ তা‘আলা এ জন্য শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন যে, এতে রয়েছে সিয়াম, কিয়াম, লাইলাতুল কদর, আল-কুরআন নাযিল হওয়া। কাজেই যে রমযানের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চায়, সে এগুলো দিয়েই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে। এ জন্য প্রতিটি নারীর উচিৎ হলো রমযানের জন্য একটি কর্মসূচী তৈরি করা যাতে তার আমলের দিকটা শক্তিশালী হয়ে যায়। এটা শুধু তাকেই সুশৃংখল করবে না; বরং তার পুরো পরিবারটি সুশৃংখল হবে। আর এ জন্য কয়েকটি টিপ্‌স নিম্নে তুলে ধরা হলো:

    এক. রমযানের প্রথম রাতেই স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে একটি বৈঠক করুন। এ বৈঠকে রমযানের ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করুন।

    দুই. রমযান মাসে প্রতিদিন আপনি কী কী ইবাদত করবেন তার একটি তালিকা তৈরি করুন। যেমন প্রতিদিন আল-কুরআন থেকে বুঝে বুঝে কতটুকু তিলাওয়াত করবেন, কতটুকু কেরাআত শুনবেন, তারাবীহ সালাতে কতটুকু পাঠ করবেন? তার একটি পরিমাণ নির্ধারণ করে ফেলুন।

    তিন. সন্তানদের মধ্যে কে কে সাওম রাখবে, কে কে তারাবীহ পড়বে? এটা নির্ধারণ করে ফেলুন। সাওম রাখতে তাদের কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবেন তা ঠিক করে ফেলুন। যারা তারাবীহ পড়তে যাবে না তারা কী করবে? তা ঠিক করুন।

    চার. স্বামী ও সন্তানদের ই‘তিকাফ করতে উৎসাহিত করুন। খাবারে তাদের কার কী পছন্দ তা জেনে নিন।

    পাঁচ. আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে মোবাইলে আলাপ আলোচনা কমিয়ে দিন।

    ছয়. আত্মীয়তার সম্পর্কের অধিকার, মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার ইত্যাদির প্রতি খেয়াল রাখুন।

    সাত. আপনার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দৈনিক পাঠের আসর করুন। সেখানে কুরআনের আয়াত পাঠ করুন। তার শিক্ষা আলোচনা করতে পারেন। এমনিভাবে সাহরী ও ইফতারের দো‘আগুলো আলোচনা করা যেতে পারে।

    আট. ফজর সালাতের প্রতি গুরুত্ব দিন। ছোট মেয়েদের নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় করুন। সেখানে সকালের দো‘আগুলো মশক করতে পারেন। এরপর আপনি চাশতের সালাত আদায় করুন।

    এগুলো হল সাধারণ রমযানের দিনগুলোর আমল। তবে শেষ দশকের জন্য আলাদা কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করুন।

    শেষ দশকের রাত্রগুলোর মধ্যে আছে লাইলাতুল কদর। যা সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। এতে ইবাদত-বন্দেগী করলে তিরাশি বছর চার মাস ইবাদত বন্দেগী করার সওয়াব অর্জিত হয়। এটা এই উম্মতের একটি ফযিলত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। যখন রমযানের শেষ দশক আসত তখন তিনি রাত্রি জাগরণ করতেন। পরিবারবর্গকে জাগিয়ে দিতেন। লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন। মানে নিজ পরিবার পরিজনের সাথে মেলামেশা করা থেকে দূরে থাকতেন। তার পরিবার পরিজন, বিশেষ করে সম্মানিত স্ত্রীগণ সারা রাত ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাতেন। তাই মুসলিম বোনদের ওপর দায়িত্ব হলো, তারাও এ সুন্নাত অনুযায়ী আমল করবেন। আমরা কীভাবে নিদ্রা যেতে পারি যখন জিবরীল কদরের রাতে রহমত নিয়ে যমীনে অবতরণ করেন, ফেরেশতা নাযিল হয়? কীভাবে আমরা তখন টিভির সামনে বসে থাকি? কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা কিন্তু তা-ই করে থাকি।

    আমি আপনাকে নসীহত করি, একটি দিনের জন্য হলেও রমযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করুন। যেমনটি আমল করেছেন আমাদের জননী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা।

    আমাদের নারীদের দেখা যায় তারা এ মাসে হরেক রকম ইফতার সাজাতে ব্যস্ত। তখন তারা কীভাবে ইবাদত-বন্দেগীতে মনোনিবেশ করবে? আবার শেষ দশকে তারা কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাহলে কীভাবে তারা লাইলাতুল কদর অন্বেষন করবে? কখন ইতিকাফ করবে?

    আপনি অবশ্যই রমযানের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট তৈরি করে নেবেন। তাতে থাকবে না অপচয় বা বাহুল্য। তাহলে আপনি রমযানে খরচ নিয়ন্ত্রণ করে চলতে সক্ষম হবেন। রমযানে পরিবারের জন্য বেশী খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে বলে কথা নেই। তবে রুচিসম্মত ও স্বাস্থ্যকর খাবার অবশ্যই থাকতে হবে।

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ অত্যন্ত সাদাসিধে খাবার দিয়ে ইফতার করতেন। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে খেজুর পেল সে খেজুর দিয়ে ইফতার করবে। আর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। ইফতারে বাহুল্য ব্যবস্থা করতে গিয়ে আমরা সাওম পালন অবস্থায় দো‘আ-প্রার্থনা করার কথা ভুলে যাই। আবার জামা‘আতের সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করতে আমাদের অনেকের মধ্যে শিথিলতা পরিলক্ষিত হয়। বরং প্রথম ওয়াক্তে অনেকেই মাগরিবের সালাত আদায় করতে পারি না। পরিবারের কাজ-কর্ম করার ব্যাপারে আপনি সন্তানদের অভ্যস্ত করতে পারেন। যেমন, খানা পরিবেশন, দস্তরখান গুটানো, ঝাড়ু দেয়া, ঘর-দোর পরিস্কার করা, থালা-গ্লাস বহন ইত্যাদি কাজের নির্দেশ দিয়ে আপনি তাদের কর্মী হিসাবে তৈরি করতে পারেন। তাতে তাদের প্রশিক্ষণ হবে আর আপনার কাজের বোঝাও হাল্কা হবে। আপনি বেঁচে যাওয়া সময়টাকে ইবাদত-বন্দেগীতে কাজে লাগাতে পারবেন।

    আর সাহরী খেতে যত্নবান হবেন। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা সাহরী খাও। সাহরীতে বরকত রয়েছে।” তিনি আরো বলেছেন: “ফিরিশতাগণ সাহরী গ্রহণকারীদের জন্য দো‘আ করতে থাকে।” খেয়াল রাখবেন সাহরীর পরে সন্তানরা যেন দাঁত ব্রাশ করতে ভুলে না যায়। আর ফজরের সালাত আদায় না করে যেন ঘুমাতে না যায়।

    রমযানে টেলিভিশন দেখা বন্ধ রাখতে পারলে মঙ্গল। এতে সময় নষ্ট হয় ও আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ থেকে মন কিছুক্ষণের জন্য হলেও দূরে থাকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের ইহতেসাবের সাথে সিয়াম ও কিয়াম আদায় করার তাওফীক দান করেন। আমিন।

    সমাপ্ত