×
আল্লাহর ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা, রাসূলের বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা, আল্লাহর কোন আয়াত ও নিদর্শনের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা কুফরী। বক্ষমান প্রবন্ধে এ বিষয়টি কুরআন ও হাদীসের আলোকে আলোচনা করা হয়েছে।

    দীনের প্রতি বিদ্রূপ ও তার পবিত্রতাহানি করার হুকুম

    حكم الاستهزاء بالدين والاستهانة بحرماته

    <بنغالي>

    ড. সালেহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান

    د. صالح بن فوزان الفوزان

    —™

    অনুবাদক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: د/ محمد منظور إلهي

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    দীনের প্রতি বিদ্রূপ ও তার পবিত্রতাহানি করার হুকুম

    দীনের প্রতি বিদ্রূপকারী মুরতাদ হয়ে যায় এবং পুরোপুরি দীন ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    ﴿ قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ ﴾ [التوبة: ٦٥، ٦٦]

    “বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর নিদর্শনাবলীর সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছল-ছুতা দেখিয়ো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফুরী করেছ।" [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৫-৬৬]

    এ আয়াত প্রমাণ বহন করে যে, আল্লাহর সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা কুফুরী, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা কুফুরী। অতএব যে ব্যক্তি এ বিষয়গুলোর কোনো একটির প্রতি বিদ্রূপ করে, সে সবগুলোর প্রতি বিদ্রূপকারী হিসাবে গণ্য হবে। আর সে যুগের মুনাফিকদের পক্ষ থেকে যা ঘটেছিল তা এই যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণের প্রতি বিদ্রূপ করত। তখনই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। অতএব এ বিষয়গুলোর প্রতি বিদ্রূপ করা একটি অন্যটির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সুতরাং যারা আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি ঠাট্টা করে এবং আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত মৃত লোকদের কাছে দোয়া করাকে বড় মনে করে, যখন তাদেরকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করা হয় এবং শির্ক থেকে নিষেধ করা হয়, তখন তারা তৎ প্রতি বিদ্রূপ করতে থাকে। যেমন, আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    ﴿وَإِذَا رَأَوۡكَ إِن يَتَّخِذُونَكَ إِلَّا هُزُوًا أَهَٰذَا ٱلَّذِي بَعَثَ ٱللَّهُ رَسُولًا ٤١ إِن كَادَ لَيُضِلُّنَا عَنۡ ءَالِهَتِنَا لَوۡلَآ أَن صَبَرۡنَا عَلَيۡهَاۚ﴾ [الفرقان: ٤٠، ٤١]

    “তারা যখন আপনাকে দেখে তখন আপনাকে কেবল বিদ্রূপের পাত্ররূপে গ্রহণ করে এবং বলে এই কি সে- যাকে আল্লাহ রাসূল করে প্রেরণ করেছেন? সে তো আমাদেরকে আমাদের উপাস্যদের কাছ থেকে দূরে সরিয়েই দিত, যদি আমরা তাদেরকে আঁকড়ে ধরে না থাকতাম।" [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৪০-৪১]

    তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাদেরকে শির্ক থেকে নিষেধ করেছিলেন, তারা তাঁকে বিদ্রূপ করতে থাকে। প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত মুশরিকগণ নবীগণের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে আসছে এবং যখনই তাঁরা তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন তাঁদেরকে তারা নির্বোধ, ভ্রষ্ট ও পাগল বলে অভিহিত করে। কেননা তাদের অন্তরে রয়েছে শির্কের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। অনুরূপভাবে দেখা যায় যে, মুশরিকদের সাথে যাদের সাদৃশ্য রয়েছে, যখনই তারা কাউকে তাওহীদের প্রতি আহ্বান করতে দেখে, নিজেদের অন্তরে শির্ক থাকায় তারা তৎপ্রতি বিদ্রূপ করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    ﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ﴾ [البقرة: ١٦٥]

    “আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এমনও রয়েছে যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যান্যদেরকে তাঁর সমকক্ষ স্থির করে। আল্লাহকে ভালোবাসার মতোই তারা তাদেরকে ভালোবাসে।" [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৫]

    অতএব, কেউ যদি আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় সৃষ্টি জগতের কোনো কিছুকে ভালোবেসে থাকে, তাহলে সে হবে মুশরিক। আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং আল্লাহর সাথে কাউকে ভালোবাসা এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা উচিৎ। এজন্য যারা কবর ও মাজারকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে তাদেরকে দেখতে পাবেন যে, তারা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকে এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তারা শাফা'আতকারীরূপে গ্রহণ করেছে, তাদের প্রতি খুবই সম্মান প্রদর্শন করে। তাদের যে কেউ আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম খেতে পারে; কিন্তু স্বীয় পীর ও শাইখের নামে মিথ্যা কসম খাওয়ার সাহস কারো নাই। এদের অনেকেই মনে করে যে, পীর ও শাইখের কাছে সাহায্য চাওয়া- চাই তা তার কবরের পাশে হোক কিংবা অন্য কোথাও, প্রত্যুষে মসজিদে আল্লাহর কাছে দো'আ চাওয়ার চেয়েও তাদের জন্য বেশি উপকারী। যারা তাদের পথ ছেড়ে তাওহীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাদের প্রতি তারা উপহাস করে। তাদের অনেকেই মসজিদ ভেঙে দরগাহ বানায় -এসব কিছুই আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি উপহাস এবং শির্কের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বই আর কিছু নয়। কবরপন্থীদের মধ্যে আজকাল এ ধরনের ঘটনা প্রচুর ঘটে থাকে।

    ঠাট্টা-বিদ্রূপ দু'ভাগে বিভক্ত:

    এক. স্পষ্ট বিদ্রূপ

    তা এমন বিদ্রূপ যে ব্যাপারে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন, তাদের এমন কথা বলা যে, 'আমাদের এ সকল ক্বারীদের ন্যায় এত বেশি পেটুক, এত বড় মিথ্যাবাদী ও যুদ্ধের সময় এত ভীরু লোক আমরা দেখি নাই।' কিংবা অনুরূপ আরো কোনো কথা যা বিদ্রূপকারীরা সাধারণতঃ বলে থাকে। যেমন, কারো এমন কথা যে, 'তোমাদের এই ধর্ম পঞ্চম ধর্ম' অথবা বলা যে, 'তোমাদের ধর্ম বানোয়াট'।

    একই ভাবে সৎকাজের আদেশ দাতা ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধকারী কাউকে দেখে উপহাসমূলক এমন কথা বলা যে, 'তোমাদের কাছে তো দীনের লোকজন এসে গেছে।' এ রকম আরো অসংখ্য কথাবার্তা যা গণনা করা কষ্টসাধ্য। এসব কথাবার্তা সে সব লোকদের কথার চেয়েও ভয়াবহ, যাদের ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল।

    দুই. অস্পষ্ট বিদ্রূপ

    এ হল এমন সমুদ্র সদৃশ যার কোনো কূল-কিনারা নেই। যেমন চোখ টেপা, জিহ্বা বের করা, ঠোঁট উল্টানো, আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াতের সময় কিংবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত পড়ার সময় অথবা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার সময় হাত দিয়ে ইশারা করা।

    অনুরূপভাবে এ ধরনের কথাও বলা যে 'মানবরচিত আইন অনুযায়ী শাসন পরিচালনা মানুষের জন্য ইসলামী আইন অনুযায়ী শাসন পরিচালনার চেয়ে উত্তম' আর যারা তাওহীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে এবং কবর পূজা ও ব্যক্তিপূজাকে বাধা দিচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে বলা যে, 'এরা মৌলবাদী' অথবা 'এরা মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়' অথবা 'এরা ওহাবী' অথবা 'এরা পঞ্চম মাজহাবের অনুসারী'। এ ধরনের আরো অনেক অনেক কথাবার্তা রয়েছে যা প্রকারন্তরে দীন ও দীনদারদের প্রতি গালি এবং বিশুদ্ধ আকীদার প্রতি বিদ্রূপ হিসেবে পরিচিত। লা হাওলা ওয়া কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

    এসব বিদ্রূপ ও উপহাসের মধ্যে রয়েছে সেই ব্যক্তির প্রতি বিদ্রূপ, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সুন্নাকে শক্ত ভাবে মেনে চলে। তারা দাঁড়ি রাখার প্রতি উপহাস করে বলে: দীন-ধর্ম তো চুলের মধ্যে নেই ইত্যাদি আরো নানা রকম বিশ্রী কথা।

    সমাপ্ত