×
বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে ফরয সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত করার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

    পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত

    الدعاء الجماعي بعد الصلوات المكتوبة

    <بنغالي>

    আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

    عبد الله شهيد عبد الرحمن

    —™

    সম্পাদক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

    مراجعة: د/ محمد منظور إلهي

    পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত

    আমাদের দেশে বলতে গেলে ভারতীয় উপমহাদেশে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দো‘আ-মুনাজাতের প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে এখন কিছু আলোচনা পেশ করছি।

    পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত শেষে দো‘আ কবুল হওয়ার কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত।

    তাহলে এ নিয়ে বিতর্ক কেন? আসলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দো‘আ নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হলো এর পদ্ধতি নিয়ে। যে পদ্ধতিতে দো‘আ করা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এভাবে দো‘আ করেছিলেন কি না? তাই আমি এখানে আলোচনা করব সেই দো‘আ-মুনাজাত নিয়ে যার মধ্যে নিম্নোক্ত সবকটি শর্ত বিদ্যমান:

    এক. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দো‘আ করা।

    দুই. সেই দো‘আ-মুনাজাত জামা‘আতের সাথে করা।

    তিন. প্রতিদিন প্রতি ফরয সালাত শেষে দো‘আ-মুনাজাত করা।

    এ শর্তাবলি বিশিষ্ট দো‘আ-মুনাজাত কতটুকু সুন্নতসম্মত সেটাই এ অধ্যায়ের মূল আলোচ্য বিষয়।

    পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত আদায়ের পর প্রচলিত মুনাজাত করা না করার ব্যাপারে আমাদের দেশের লোকদের সাধারণতঃ তিন ভাগে বিভক্ত দেখা যায়।

    এক. যারা সালাম ফিরানোর পর বসে বসে কিছুক্ষণ বিভিন্ন যিকির-আযকার আদায় করেন যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

    দুই. যারা সালাম ফিরানোর পর কোনো যিকির-আযকার না করে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান সুন্নত সালাত আদায়ের জন্য।

    তিন. যারা সালাম ফিরানোর পর সর্বদা ইমাম সাহেবের সাথে একত্রে মুনাজাত করেন। মুনাজাত শেষ হওয়ার পর সুন্নত সালাত আদায় করেন।

    আর এ তিন ধরনের লোকদেরই এ সকল আমলের সমর্থনে কোনো না কোনো দলীল প্রমাণ রয়েছে।

    প্রথম দলের প্রমাণ:

    প্রথম দলের দলিল-প্রমাণ স্পষ্ট। তাহলো বুখারী ও মুসলিমসহ বহু হাদীসের কিতাবে সালাতের পর যিকির-আযকার অধ্যায়ে বিভিন্ন যিকিরের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম আমল করেছেন। অনেক ইমাম ও উলামায়ে কেরাম এ যিকির-আযকার সম্পর্কে স্বতন্ত্র পুস্তক সংকলন করেছেন।

    দ্বিতীয় দলের প্রমাণ:

    দ্বিতীয় দলের প্রমাণ হলো এই হাদীসটি: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ لَمْ يَقْعُدْ إِلَّا مِقْدَارَ مَا يَقُولُ: «اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ»

    “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন তখন ‘আল্লাহুম্মা আনতাসসালাম ওয়ামিনকাসসালাম তাবারাকতা ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম’ পড়তে যতটুকু সময় লাগে তার চেয়ে বেশি সময় বসতেন না।”[1]

    তারা এ হাদীস দ্বারা বুঝে নিয়েছেন যে, এ যিকিরটুকু আদায় করতে যতটুকু সময় লাগে এর চেয়ে বেশি বসা ঠিক নয়। তাই তাড়াতাড়ি সুন্নত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যেতে হবে।

    আসলে এ হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন তা সঠিক নয়।

    হাদীসটির ব্যাখ্যা হলো, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু ইমাম ছিলেন তাই তিনি সালাম ফিরানোর পর এতটুকু সময় মাত্র কেবলামুখী হয়ে বসতেন এরপর তিনি মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। আর তিনি যে প্রত্যেক ফরয সালাতের পর মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসতেন তা বহু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।[2]

    সুতরাং এ হাদীস দ্বারা কখনো প্রমাণিত হয় না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে এ দো‘আটুকু পড়ে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যেতেন সুন্নত সালাত আদায়ের জন্য।

    ফরয সালাত আদায়ের পর যিকির, তাসবীহ, তাহলীল বর্জন করে তাড়াতাড়ি সুন্নত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া মোটেও সুন্নত নয়। বরং সুন্নত হলো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যিকির, দো‘আ, তাসবীহ, তাহলীল সাধ্য মত আদায় করে তারপর সুন্নত আদায় করা।

    তৃতীয় দলের প্রমাণ:

    তৃতীয় দল যারা ফরয সালাতের পর সম্মিলিত ভাবে (জামাআতের সাথে) মুনাজাত করেন তাদের দলিল হলো ঐ সকল হাদীস যাতে সালাত শেষে দো‘আ কবুলের কথা বলা হয়েছে এবং দো‘আ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ সকল হাদীস ছাড়া তাদের এ কাজের সমর্থনে হাদীস থেকে সরাসরি অন্য কোনো প্রমাণ নেই। এমন কোনো হাদীস তারা পেশ করতে পারবেন না যাতে দেখা যাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় শেষে সকলকে নিয়ে সর্বদা হাত তুলে মুনাজাত করেছেন।

    তারা যে সকল হাদীস প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে চান তার শিরোনাম হলো,

    الدُّعَاءُ عَقِيْبَ الصَّلَوَاتِ، اَلدُّعَاءُ دُبُرَ الصَّلَوَاتِ

    তারা মনে করে নিয়েছেন আকীবাস সালাত ও দুবুরাস সালাত অর্থ সালাম ফিরানোর পর। আসলে তা নয়। এর অর্থ হলো সালাতের শেষ অংশে। এ সকল হাদীসে সালাতের শেষ অংশে অর্থাৎ শেষ বৈঠকে দুরূদ পাঠ করার পর সালামের পূর্বে দো‘আ করার কথা বলা হয়েছে। পরিভাষায় যা দো‘আয়ে মাছুরা হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। সালাত শেষে দো‘আ কবুল সম্পর্কে যত হাদীস এসেছে তা সবগুলো দো‘আ মাছুরা সম্পর্কে। যার সময় হলো সালাম ফিরানোর পূর্বে। আর দো‘আ মাছুরা শুধু একটা নয়, অনেক। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সালাতের শেষে দো‘আ সংক্রান্ত এ সকল হাদীসে ‘বা’দাস সালাত’ বলা হয়নি। হাদীস গ্রন্থে এ সকল দো‘আকে

    اَلْأَدْعِيَاءُ دُبُرَ الصَّلَوَاتِ أو الدُّعَاءُ عَقِيْبَ الصَّلَوَاتِ

    (সালাত শেষের দো‘আ) অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দুটো বিষয়: একটা হলো সালাত শেষের দো‘আ। দ্বিতীয়টা হলো সালাত শেষের যিকির। প্রথমটির স্থান হলো সালাম ফিরানোর পূর্বে। আর দ্বিতীয়টির স্থান হলো সালাম ফিরানোর পর।

    ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ, ইবনুল কাইয়্যেম প্রমুখ উলামায়ে কেরামের মত এটাই।

    এ মতটি কুরআন ও হাদীসের আলোকে বেশি যুক্তি গ্রাহ্য। বান্দা যখন সালাতে থাকে তখন সে আল্লাহর নিকটে অবস্থান করে। দো‘আ মুনাজাতের সময় তখনই। যখন সালাতের সমাপ্তি ঘোষিত হলো তখন নয়। তখন সময় হলো আল্লাহর যিকিরের, যেমন আল্লাহ বলেন,

    ﴿فَإِذَا قَضَيۡتُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِكُمۡۚ ﴾ [النساء: ١٠٣]

    “যখন তোমরা সালাত শেষ করলে তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩]

    এ সম্পর্কিত হাদীসগুলোর ভাষা এবং সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলসমূহ গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে এ বিষয়টিই বুঝে আসে যে, সালাম ফিরানোর পরের সময়টা দো‘আ করার সময় নয়, যিকির করার সময়।

    তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয সালাতের পর কখনো কি দো‘আ করেন নি? হা করেছেন। তবে তা সম্মিলিতভাবে নয়।

    যেমন হাদীসে এসেছে, আল-বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَحْبَبْنَا أَنْ نَكُونَ عَنْ يَمِينِهِ، يُقْبِلُ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ، قَالَ: فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ »

    “আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত আদায় করতাম। আমরা তার ডান দিকে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতাম। তিনি আমাদের দিকে মুখ করতেন। আল-বারা বলেন, তখন তাকে বলতে শুনতাম, ‘‘হে আল্লাহ! আপনার শাস্তি থেকে আমাকে বাঁচান, যে দিন আপনি আপনার বান্দাদের উঠাবেন।’’[3]

    জামা‘আতের সাথে তিনি মুসল্লীদের নিয়ে দো‘আ করেছেন, এমন কোনো বর্ণনা নেই। যা আছে তা তার বিপরীত। যেমন বর্ণিত হাদীসটির প্রতি লক্ষ্য করুন! সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন। বলেছেন ‘‘আমাকে বাঁচান...।’’ সকলকে সাথে নিয়ে দো‘আটি করলে বলতেন ‘‘আমাদেরকে বাঁচান।’’

    আরেকটি হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করুন। মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বলেন,

    «يَا مُعَاذُ، وَاللَّهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ، وَاللَّهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ» ، فَقَالَ: أُوصِيكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ تَقُولُ: اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ»

    “হে মু‘আয! আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আল্লাহর কসম আমি তেমাকে ভালোবাসি। তারপর তিনি বলেন, তুমি অবশ্যই প্রত্যেক সালাতের পর বলবে, হে আল্লাহ! আপনার যিকির, আপনার শোকর ও আপনার জন্য উত্তম ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন।’’[4]

    দেখুন! প্রখ্যাত সাহাবী মু‘আয ইবন জাবাল কাওমের ইমাম ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইয়েমেনের গভর্নর, শিক্ষক ও ইমাম হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। তিনি সালাতে ইমামতি করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ দো‘আটি সকলকে নিয়ে করার নির্দেশ দিতে পারতেন; কিন্তু তিনি তা দেন নি। তিনি তাকে একা একা দো‘আটি করার জন্য বলেছেন। হাদীসের ভাষাই তার প্রমাণ।

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলেছেন। তিনি যদি এটা সকলকে নিয়ে করতেন তাহলে ‘নাস্তাগফিরুল্লাহ’ (আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলতেন।

    যারা ফরয সালাত শেষে কোনো যিকির-আযকার না করে উঠে গেল তারা একটা সুন্নত (মুস্তাহাব) ছেড়ে দিল। আবার যারা সালাত শেষে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করে উঠে গেল তারা একটা সুন্নত বাদ দিয়ে সে স্থানে অন্য একটি বিদ‘আত আমল করল।

    তাই সারকথা হলো, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের পর সব সময় জামা‘আতের সাথে মুনাজাত করা একটি বিদআত। যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেন নি, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগণ করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই।

    তবে যদি কেহ জামা‘আতে সালাত আদায়ের পর একা একা দো‘আ মুনাজাত করেন তা সুন্নতের খেলাপ হবে না। এমনিভাবে ইমাম সাহেব যদি সকলকে নিয়ে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে কোনো কোনো সময় দো‘আ-মুনাজাত করেন তবে তা নাজায়েয হবে না।

    ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ, ইবনুল কাইয়্যেম ও মুফতীয়ে আজম ফয়জুল্লাহ রহ.-সহ অনেক আলেম-উলামা এ মত ব্যক্ত করেছেন।

    সালাত শেষে যে সকল দো‘আ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত:

    আমি এখানে সালাত শেষে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সকল দো‘আ ও যিকির আদায় করেছেন ও করতে বলেছেন তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করতে চাই। যাতে পাঠক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ সুন্নতকে আমল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং এ সম্পর্কিত বিদ‘আত পরিহার করেন।

    ১. ছাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    « كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلَاتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلَاثًا وَقَالَ:

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করতেন তখন তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং বলতেন,

    «اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ» قَالَ الْوَلِيدُ: فَقُلْتُ لِلْأَوْزَاعِيِّ: " كَيْفَ الْاسْتِغْفَارُ؟ قَالَ: تَقُولُ: أَسْتَغْفِرُ اللهَ، أَسْتَغْفِرُ اللهَ»

    ‘আল্লাহুম্মা আনতাসসালামু, ওয়ামিনকাসসালামু, তাবারাকতা ইয়া যালযালালি ওয়ালইকরাম’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময় এবং তোমার নিকট হতে শান্তির আগমন, তুমি কল্যাণময়, হে মর্যাদাবান, মহানুভব! ওয়ালীদ বলেন, আমি ইমাম আওযায়ীকে জিজ্ঞেস করলাম (যিনি এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী) ক্ষমা প্রার্থনা কীভাবে করতে হবে? তিনি বললেন, ‘তুমি বলবে, আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি)।”[5]

    ২. মুগীরা ইবন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে লিখেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করে সালাম ফিরাতেন তখন বলতেন,

    «لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ»

    “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, আল্লাহুম্মা লা- মানে‘আ লিমা আ‘তাইতা ওয়ালা মু‘তিয়া লিমা মানা‘তা ওয়ালা ইয়ান ফাউ’ যালজাদ্দি মিনকাল জাদ্দু” অর্থাৎ ‘আল্লাহ ব্যতীত ইবাদাতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং সমস্ত প্রশংসা তার। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ আপনি যা দান করেন তা বাধা দেয়ার কেহ নেই। আর আপনি যা বাধা দিবেন তা দেয়ার মত কেহ নেই। আর আযাবের মুকাবেলায় ধনবানকে তার ধন কোনো উপকার করতে পারে না’।”[6]

    ৩. আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি প্রত্যেক সালাতের শেষে সালাম ফিরানোর পর বলতেন,

    «لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ، وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ» وَقَالَ ابْنُ الزُّبَيْرِ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُهَلِّلُ بِهِنَّ دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ»

    “‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু, লাহুন নি’মাতু ওয়ালাহু ফাযলু ওয়ালাহুছ ছানাউল হাসান, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন ওয়ালাও কারিহাল কাফিরূন’। অর্থাৎ ‘আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তার। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত গুনাহ থেকে বিরত থাকার ও ইবাদত করার শক্তি কারো নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আমরা তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না। সমস্ত অনুগ্রহ ও শ্রেষ্ঠত্ব তারই। সকল সুন্দর ও ভাল প্রশংসা তারই জন্য। তিনি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই। আমরা ধর্মকে একমাত্র তারই জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছি, যদিও কাফেরা তা পছন্দ করে না’। ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাতের শেষে এ বাক্যগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর ইলাহিয়্যাতের ঘোষণা দিতেন’।”[7]

    ৪. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «مَنْ سَبَّحَ اللهَ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَحَمِدَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَكَبَّرَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، فَتْلِكَ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ، وَقَالَ: تَمَامَ الْمِائَةِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ»

    “যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, তেত্রিশ বার ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলবে ও তেত্রিশ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। এরপর ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর’ (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদাতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই। তিনি এক তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তার। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান) বলে একশ পূর্ণ করবে, তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।”[8]

    এ ছাড়াও সালাতের পর আরো অনেক যিকির ও দো‘আর কথা হাদীসে এসেছে। সেগুলো আদায় করা যেতে পারে। যেমন সুরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সুরা নাছ পাঠ করার কথা এসেছে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করার বর্ণনা এসেছে ।

    এ সব দো‘আ একই সাথে আদায় করতে হবে এমন কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। সময় ও সুযোগ মত যা সহজ সেগুলো আদায় করা যেতে পারে। মোটকথা হলো, এ সুন্নতটি যেন আমরা কোনো কারণে ভুলে না যাই সে বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। অনেককে সালাত শেষে এমন কিছু আমল করতে দেখা যায় যেগুলো হাদীসে পাওয়া যায় না, সেগুলো বর্জন করা উচিত। যেমন মাথায় হাত দিয়ে কিছু পাঠ করা বা কিছু পাঠ করে চোখে ফুঁক দেয়া ইত্যাদি।

    [1]. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯২; সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ২৯৮; সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৯২৪

    [2]. মজমু‘ ফাতাওয়া, ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ

    [3]. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭০৯

    [4]. সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫২২

    [5]. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯১

    [6]. সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪৪, ৬৩৩০, ৬৬১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৩।

    [7]. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৪।

    [8]. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৭