×
বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে জাহেলিয়্যাত, ফাসেকী, ভ্রষ্টতা ও রিদ্দাত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।

    জাহেলিয়্যাত, ফাসেকী, ভ্রষ্টতা ও রিদ্দাত: অর্থ, প্রকারভেদ ও আহকাম

    الجاهلية-الفسق-الضلال-الردة: أقسامها، وأحكامها

    <بنغالي>

    ড. সালেহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান

    د. صالح بن فوزان الفوزان

    —™

    অনুবাদক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: د/ محمد منظور إلهي

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    জাহেলিয়্যাত, ফাসেকী, ভ্রষ্টতা ও রিদ্দাত: অর্থ, প্রকারভেদ ও আহকাম

    এক. জাহেলিয়্যাত:

    আল্লাহ, তাঁর রাসূলগণ ও দীনের আইন-কানুন সম্পর্কে অজ্ঞতা, বংশ নিয়ে গর্ব-অহংকার ও বড়াই প্রভৃতি যে সকল অবস্থার উপর আরবের লোকেরা ইসলাম পূর্ব যুগে ব্যাপৃত ছিল, সে সকল অবস্থাকেই জাহেলিয়্যাত নামে অভিহিত করা হয়।

    জাহেলিয়্যাত ‘জাহল’ শব্দের প্রতি সম্পর্কিত, যার অর্থ জ্ঞানহীনতা বা জ্ঞানের অনুসরণ না করা।

    শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: যার হকের জ্ঞান নেই সে এক প্রকার অজ্ঞতায় নিমজ্জিত। যদি কেউ হক সম্পর্কে জেনে কিংবা না জেনে হকের পরিপন্থী কথা বলে সেও জাহেল...। উপরের কথাগুলো স্পষ্ট হবার পর জানা দরকার যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে লোকেরা এমন জাহেলিয়্যাতেই নিমজ্জিত ছিল, যা আক্ষরিক অর্থেই ‘জাহেল’ তথা অজ্ঞতার প্রতি সম্পর্কিত। কেননা তাদের মধ্যে যে কথা ও কাজের প্রচলন ছিল, তা ছিল জাহেল ও অজ্ঞ লোকেরই সৃষ্ট এবং অজ্ঞ লোকেরাই তা করে বেড়াত। অনুরূপভাবে বিভিন্ন যুগে নবী রাসূলগণ যে শরী‘আত নিয়ে এসেছিলেন যেমন ইয়াহূদী ধর্ম ও খ্রিস্টান র্ধম, তার বিপরীত সব কিছুই জাহেলিয়্যাতের অন্তর্গত। একে বলা চলে ব্যাপক ও মহা জাহেলিয়্যাত।

    তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তির পর জাহেলিয়্যাতের সেই ব্যাপকতা আর নেই; বরং কোথাও তা আছে, কোথাও নেই। যেমন, ‘দারুল কুফুর’ বা কাফিরদের রাষ্ট্রে তা আছে, আবার কারো মধ্যে নেই। যেমন, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে যে কোনো ব্যক্তি জাহেলিয়্যাতের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে, যদিও সে ‘দারুল ইসলাম’ বা ইসলামী রাষ্ট্রে অবস্থান করে। তবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়্যাত প্রাপ্তির পর অবাধভাবে কোনো যুগকে জাহেলিয়্যাতে নিমজ্জিত বলা যাবেনা। কেননা কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক যুগে উম্মাতে মুহাম্মদীর একদল লোক হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। অবশ্য কিছু কিছু মুসলিম দেশে বহু মুসলিম ব্যক্তির মধ্যেই সীমিত আকারে জাহেলিয়্যাত পাওয়া যেতে পারে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «أرْبَعٌ فِيْ أمَّتِيْ مِنْ أمْرِ الجَاهِلِيَّةِ«

    “আমার উম্মাতের মধ্যে চারটি বস্তু জাহেলিয়্যাতের অন্তর্গত।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৩৪)

    একবার তিনি আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন,

    «إنَّكَ امْرُؤٌ فِيْكَ جَاهِلِيَّةٌ«

    “তুমি এমন এক ব্যক্তি যার মধ্যে (এখনও) জাহেলিয়্যাত রয়ে গেছে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৫০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৬১)

    অনুরূপ আরো অনেক দলীল রয়েছে।

    সারকথা: জাহেলিয়্যাত ‘জাহল’ বা অজ্ঞ শব্দের প্রতি সম্পর্কিত। এর অর্থ জ্ঞানহীনতা। জাহেলিয়্যাত দু‘ভাগে বিভক্ত:

    ১. ব্যাপক ও অবাধ জাহেলিয়্যাত:

    এ প্রকার জাহেলিয়্যাত দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের আগের যুগ ও অবস্থা বুঝানো হয়েছে। নবুওয়াত প্রাপ্তির সাথে সাথে এ প্রকার জাহেলিয়্যাতের অবসান হয়েছে।

    ২. নির্দিষ্ট ও সীমিত জাহেলিয়্যাত:

    এ প্রকারের জাহেলিয়্যাত সব যুগেই কোনো না কোনো দেশে, কোনো না কোনো শহরে এবং কতেক ব্যক্তির মধ্যে বিরাজমান থাকতে পারে। একথা দ্বারা ঐ সব লোকের ভূল স্পষ্ট হয়ে উঠে যারা বর্তমান যুগেও অবাধ ও ব্যাপক জাহেলিয়্যাতের অস্তিত্ব আছে বলে মনে করে এবং বলে ‘এই শতাব্দীর জাহেলিয়্যাত’ ইত্যাদি নানা কথা। অথচ সঠিক হলো এ রকম বলা: ‘এ শতাব্দীর কতেক লোকদের বা এ শতাব্দীর অধিকাংশ লোকদের জাহেলিয়্যাত’ অতএব, ব্যাপক জাহেলিয়্যাতের অস্তিত্ত্বের ধারণা সঠিক নয় এবং এরকম বলাও জায়েয নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তি দ্বারা ব্যাপক জাহেলিয়্যাত অবসান হয়েছে।

    দুই. ফাসেকী:

    অভিধানে ‘ফিসক’ শব্দের অর্থ হল বের হওয়া। আর শরী‘আতের পরিভাষায় তাহলো আল্লাহর আনুগত্য হতে বের হয়ে যাওয়া। পুরোপুরি বের হয়ে যাওয়াও যেমন এতে শামিল রয়েছে, এজন্য কাফিরকেও ফাসিক বলা হয়, আবার আংশিকভাবে বের হওয়াও এর অন্তর্ভূক্ত। তাই কবীরা গুনাহে লিপ্ত মুমিন ব্যক্তিকেও ফাসিক বলা হয়।

    ফিসক দু‘ভাগে বিভক্ত:

    ১. এ প্রকারের ফিসক বান্দাকে ইসলামী মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। এধরনের ফিসক মূলতঃ কুফুরী। এজন্য কাফিরকে ফাসিক নামে অভিহিত করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা ইবলিসের ব্যাপারে বলেন,

    ﴿فَفَسَقَ عَنۡ أَمۡرِ رَبِّهِۦٓۗ﴾ [الكهف: ٥٠]

    “অত:পর সে স্বীয় প্রভুর নির্দেশ অমান্য করল।” [সূরা আল-কাহফ, আয়াত: ৫০]

    আয়াতে বর্ণিত ইবলিশের এ ফিসক ছিল মূলতঃ কুফুরী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿ وَأَمَّا ٱلَّذِينَ فَسَقُواْ فَمَأۡوَىٰهُمُ ٱلنَّارُۖ ﴾ [السجدة: ٢٠]

    “আর যারা ফাসেকী করে, তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ২০]

    এ আয়াতে কাফিরদের অবস্থা বর্ণনাই আল্লাহর উদ্দেশ্য ।এর দলীল হলো আয়াতের পরের অংশটুকু:

    ﴿كُلَّمَآ أَرَادُوٓاْ أَن يَخۡرُجُواْ مِنۡهَآ أُعِيدُواْ فِيهَا وَقِيلَ لَهُمۡ ذُوقُواْ عَذَابَ ٱلنَّارِ ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ٢٠﴾ [السجدة: ٢٠]

    “যখনই তারা জাহান্নাম হতে বের হতে চাইবে তখনই তাদেরকে তথায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের যে আযাবকে মিথ্যা বলতে, তার স্বাদ আস্বাদান কর।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ২০]

    ২. গোনাহগার বান্দাদেরকেও ফাসেক বলা হয়। তবে তার ফাসেকী তাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿ وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَأۡتُواْ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَ فَٱجۡلِدُوهُمۡ ثَمَٰنِينَ جَلۡدَةٗ وَلَا تَقۡبَلُواْ لَهُمۡ شَهَٰدَةً أَبَدٗاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤ ﴾ [النور: ٤]

    “যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে। অতঃপর স্বপক্ষে চারজন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করেনা, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবেনা। এরাই ফাসিক (নাফরমান ও অবাধ্য)।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪]

    আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

    ﴿ ٱلۡحَجُّ أَشۡهُرٞ مَّعۡلُومَٰتٞۚ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ ٱلۡحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي ٱلۡحَجِّۗ ﴾ [البقرة: ١٩٧]

    “হজ নির্দিষ্ট মাসসমূহে, অতঃপর যে কেউ হজের এ মাসগুলোতে হজ করার নিয়ত করবে, তার জন্য হজের সময় স্ত্রী সম্ভোগ, ফাসেকী ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৭]

    আয়াতে ফাসেকী শব্দের ব্যাখ্যায় উলামাগণ বলেন: এর অর্থ পাপাচার তথা গোনাহের কাজ।

    তিন. দলাল: (ভ্রষ্টতা)

    আরবীতে ভ্রষ্টতার প্রতিশব্দ হল الضلال যার অর্থ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া। এটি হিদায়াতের বিপরীত শব্দ।

    আল্লাহ তায়ালা বলেন,

    ﴿مَّنِ ٱهۡتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهۡتَدِي لِنَفۡسِهِۦۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيۡهَاۚ﴾ [الاسراء: ١٥]

    “যারা সৎপথে চলে, তারা নিজেদের মঙ্গলের জন্যই সৎপথে চলে। আর যারা পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজেদের অমঙ্গলের জন্যই পথভ্রষ্ট হয়।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৫]

    ভ্রষ্টতার অনেকগুলো অর্থ রয়েছে:

    ১. কখনো তা কুফুরীর অর্থে ব্যবহৃত হয়।

    আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلَۢا بَعِيدًا ١٣٦﴾ [النساء: ١٣٦]

    “যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফিরেতাশগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং রাসূলগণ ও আখেরাত দিবসকে অস্বীকার করবে, সে ভীষণ ভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩৬]

    ২. কখনো তা শির্কের অর্থে ব্যবহৃত হয়।

    আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلَۢا بَعِيدًا ١١٦ ﴾ [النساء: ١١٦]

    “যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৬]

    ৩. কখনো তা কুফুরী নয়, এমন পর্যায়ের বিরোধিতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, বলা হয় ভ্রষ্ট ফির্কাসমূহ অর্থাৎ হক-বিরোধী ফির্কাসমূহ।

    ৪. কখনো তা ভুল-ত্রুটি করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন মূসা ‘আলাইহিস সালামের কথা কুরআনের ভাষায় এভাবে বর্ণিত হয়েছে,

    ﴿قَالَ فَعَلۡتُهَآ إِذٗا وَأَنَا۠ مِنَ ٱلضَّآلِّينَ ٢٠﴾ [الشعراء: ٢٠]

    “মূসা বললেন: আমি তো সে কাজটি করেছিলাম তখন, যখন ছিলাম অনবধান।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২০]

    ৫. কখনো তা বিস্মৃত হওয়া ও ভুলে যাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, আল্লাহ বলেন,

    ﴿أَن تَضِلَّ إِحۡدَىٰهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحۡدَىٰهُمَا ٱلۡأُخۡرَىٰۚ﴾ [البقرة: ٢٨٢]

    “যাতে মহিলাদের একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেবে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮২]

    ৬. কখনো ضلال (ভ্রষ্টতা) শব্দটি অগোচর হওয়া ও হারিয়ে যাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, আরবগণ বলে ضالة الإبل অর্থাৎ হারানো উট।

    চার: রিদ্দাত (মুরতাদ হওয়া) এর প্রকারভেদ ও বিধান:

    অভিধানে রিদ্দাত শব্দটির অর্থ ফিরে যাওয়া।

    আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿ وَلَا تَرۡتَدُّواْ عَلَىٰٓ أَدۡبَارِكُمۡ فَتَنقَلِبُواْ خَٰسِرِينَ ٢١ ﴾ [المائ‍دة: ٢١]

    “আর পেছনে দিকে ফিরে যেও না।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ২১]

    আর ফিকহের পরিভাষায় ইসলাম গ্রহণের পর কুফুরীর দিকে ফিরে যাওয়াকে রিদ্দাত বলা হয়।

    আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿ وَمَن يَرۡتَدِدۡ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَيَمُتۡ وَهُوَ كَافِرٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢١٧ ﴾ [البقرة: ٢١٧]

    “এবং তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের দীন থেকে ফিরে যাবে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত হবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হলো জাহান্নামী, তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১৭]

    রিদ্দাতের প্রকারভেদ: ইসলাম বিনষ্টকারী কোনো কাজ করলে ব্যক্তির মধ্যে রিদ্দাত পাওয়া যায় অর্থাৎ সে মুরতাদ হিসাবে গণ্য হয়।

    আর ইসলাম বিনষ্টকারী বস্তু অনেকগুলো, যাকে মূলতঃ চারভাগে ভাগ করা যায়:

    ১. কথার রিদ্দত: যেমন, আল্লাহ তা‘আলাকে বা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিংবা তার ফিরিশতাগণকে অথবা পূর্ববর্তী কোনো নবী-রাসূলকে গালি-গালাজ করা অথবা গায়েব জানার দাবী করা কিংবা নবুওয়াতের দাবী করা কিংবা নবুওয়াতের দাবীদারকে সত্যবাদী বলে মেনে নেওয়া অথবা গায়রুল্লার কাছে দো‘আ করা কিংবা যে বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ সক্ষম নয় সে বিষয়ে গায়রুল্লাহর সাহায্য চাওয়া ও আশ্রয় প্রার্থনা করা।

    ২. কাজের রিদ্দত: যেমন, মূর্তি, গাছ-পালা, পাথর এবং কবরের উদ্দেশ্যে সাজদাহ করা ও কুরবানী করা, নিকৃষ্ট স্থানে কুরআন মাজীদ রাখা, যাদু করা এবং তা শিখা ও অন্যকে শিখানো, হালাল ও জায়েয মনে করে আল্লাহর অবতারিত শরী‘আতের পরিবর্তে অন্য আইন-কানূন দ্বারা ফয়সালা করা।

    ৩. আকীদার রিদ্দাত: যেমন, এরূপ আকীদা পোষণ করা যে, আল্লাহর শরীক আছে কিংবা যিনা, মদ ও সূদ হালাল অথবা রুটি হারাম অথবা সালাত পড়া ওয়াজিব নয় প্রভৃতি এ ধরনের আরো যেসব বিষয়ের হালাল বা হারাম হওয়া কিংবা ওয়াজিব হওয়ার উপর উম্মাতের অকাট্য ইজমা সাধিত হয়েছে এবং এরূপ লোকের তা অজানা থাকার কথা নয়।

    ৪. উপরোক্ত কোনো বিষয়ে সন্দেহ পোষণ রিদ্দাত: যেমন, শির্ক হারাম হওয়ার ব্যাপারে কিংবা যিনা ও মদ হারাম হওয়ার ব্যাপারে অথবা রুটি হালাল হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোনো নবীর রিসালাতে বা সত্যতায় সন্দেহ রাখা, অথবা ইসলামের ব্যাপারে কিংবা বর্তমানে যুগে ইসলামের উপযোগিতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা।

    রিদ্দাত সাব্যস্ত হওয়ার পর এর হুকুম:

    ১. মুরতাদ ব্যক্তিকে তাওবা করার আহ্বান জানানো হবে। যদি সে তিন দিনের মধ্যে তাওবা করে ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তবে তার তওবা কবুল করা হবে এবং তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

    ২. যদি সে তাওবা করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে, তবে তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوه »

    “যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে পরিবর্তন করে তাকে হত্যা কর।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০১৭, ৬৯২২; সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৫১)

    ৩. তাওবার দিকে আহ্বানকালীন সময়ে তাকে তার সম্পদে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত রাখা হবে। যদি সে পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে, তবে সে সম্পদ তারই থাকবে। অন্যথায় রিদ্দাতের ওপর তার মৃত্যু হলে কিংবা তাকে হত্যা করা হলে, তখন থেকে সে সম্পত্তি মুসলিমদের বায়তুল মালে ‘ফাই’ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। কারো কারো মতে মুরতাদ হওয়ার সাথে সাথেই তার ধন-সম্পদ মুসলিমদের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হবে।

    ৪. মুরতাদ ব্যক্তির উত্তরাধিকার স্বত্ব বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ সে তার আত্মীয় স্বজনের ওয়ারিস হবে না। এবং তার কোনো আত্মীয়ও তার ওয়ারিস হবে না।

    ৫. যদি সে মুরতাদ অবস্থায় মারা যায় কিংবা নিহত হয়, তবে তাকে গোসল দেওয়া হবে না, তার ওপর জানাযার সালাত পড়া হবে না এবং তাকে মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না; বরং তাকে কাফিরদের সমাধিস্থলে দাফন করা হবে কিংবা মুসলিমদের কবরস্থান ছাড়া অন্য কোথাও মাটির নিচে তাকে সমধিস্থ করা হবে।

    সমাপ্ত