সালাতের আহকাম ও পদ্ধতি
ক্যাটাগরিসমূহ
উৎস
Full Description
সালাতের আহকাম ও পদ্ধতি
أحكام الصلاة وصفتها
< بنغالي- Bengal - বাঙালি>
গবেষণা পরিষদ, আল-মুনতাদা আল-ইসলামী
اللجنة العلمية بالمنتدى الإسلامي
অনুবাদক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
ترجمة: ذاكر الله أبو الخير
مراجعة: د/ محمد منظور إلهي
সালাতের আহকাম ও পদ্ধতি-১
আল-হামদুলিল্লাহ ওয়াসসলাতু ওয়াসসালামু 'আলা রাসূলিল্লাহ.....
সালাতের শর্তাবলি
সালাতের শর্ত নয়টি। যথা:
এক. মুসলিম হওয়া:
সালাত ছাড়াও অন্যান্য যে কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রেই মুসলিম হওয়া পূর্বশর্ত। মুসলিম বলতে উদ্দেশ্য হল, যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব হিসেবে বিশ্বাস করে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা'আলার রাসূল বলে স্বীকৃতি প্রদান করে। আর ইসলামকে একমাত্র দীন বলে মনে-প্রাণে গ্রহণ করে। অবিশ্বাসীর যাবতীয় ইবাদত প্রত্যাখ্যাত। অবিশ্বাসীদের কোনো ইবাদতই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়, যদিও তারা জমিনভর স্বর্ণ কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنثُورًا ٢٣﴾ [الفرقان: ٢٢]
“আমরা তাদের কৃতকর্মগুলো বিবেচনা করবো, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলি-কণায় পরিণত করবো।" [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৩]
দুই. বুঝার বয়সে উপনীত হওয়া:
বুঝার মতো বয়সে উপনীত হওয়া হলো শরীয়তের বিধানাবলী উপলব্ধি ও গ্রহণ করার একমাত্র উপায়। জ্ঞানহীন ব্যক্তির ওপর শরী'আতের কোনো বিধানই ওয়াজিব নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ، وَعَنِ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَعْقِلَ»
“তিন ব্যক্তি দায়মুক্ত, তাদের কোনো গুনাহ লিখা হয় না। ক. ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত। খ. ছোট বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। খ. পাগল সুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।"[1]
তিন. ভালো মন্দের বিচার করা:
ভালো মন্দ বিচারের উপযুক্ত বয়সে উপনীত হওয়া। অবুঝ বা ছোট শিশু, যে নিজের জন্য কোনোরূপ ভালো-মন্দ চিহ্নত করতে সক্ষম নয়, তার ওপর সালাত ওয়াজিব নয়। শিশু যখন ভালো মন্দের পার্থক্য করতে পারে এবং সুন্দর ও অসুন্দর চিনতে পারে, তখন বুঝতে হবে যে, সে বিচার বিশ্লেষণ বা তাময়ীয করার মতো বয়সে পৌঁছে গেছে। সাধারণত সাত বছর বয়সে বাচ্চারা ভালো-মন্দ বুঝতে পারে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ»
“তোমরা সাত বছর বয়সে তোমাদের বাচ্চাদের সালাতের আদেশ দাও। আর সালাত না পড়লে দশ বছর বয়সে তাদের হালকা মার-ধর কর। আর তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।"[2]
চার. পবিত্রতা :
নির্দিষ্ট বিধান অনুযায়ী অযু দ্বারা পবিত্রতা অর্জন হয়।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِۚ﴾ [المائدة: ٦]
“হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের ইচ্ছা করো তখন তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলোকে কনুইসহ ধুয়ে নাও। আর মাথা মাসেহ কর এবং পাগুলোকে টাখনুসহ ধুয়ে ফেল।" [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬]
পাঁচ. না-পাকী দূর করা:
তিনটি স্থান হতে সালাতের পূর্বে না-পাকী দূর করতে হবে।
ক) শরীর পাক হতে হবে।
খ) পোশাক পাক হতে হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤﴾ [المدثر: ٤]
“তুমি তোমার কাপড় পাক কর।" [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৪]
গ) সালাতের স্থান পাক হতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ، وَلَا الْقَذَرِ»
“নিশ্চয় মসজিদ গুলোতে পেশাব পায়খানা করা কোনো ক্রমেই সঙ্গত নয়।"[3]
ছয়. সতর ঢাকা:
পুরুষের সতর নাভি হতে হাটুর নীচ পর্যন্ত।
আর মেয়েদের ক্ষেত্রে শুধু চেহারা ও দু-হাতের কবজি ছাড়া সবই সতর। তবে অপরিচিত লোকের সামনে পড়লে চেহারা ও হাতের কবজিও ঢেকে রাখতে হবে।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿ يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ ﴾ [الاعراف: ٣١]
“হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পরিচ্ছেদ পরিধন কর।" [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: 31]
সাত. সময় হওয়া:
দিবারাত্রের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় নির্ধারিত আছে। এবং সময়ের শুরু আছে এবং শেষও আছে।
সময়ের বিস্তারিত আলোচনা নিম্নরূপ:
ফযরের সালাতের সময়: সুবহে সাদেক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত।
যোহরের ওয়াক্ত: সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলা থেকে আরম্ভ করে প্রতিটি বস্তুর ছায়া একগুণ হওয়া পর্যন্ত।
আছরের সালাতের সময়: প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ তথা একগুণ হওয়া থেকে আরম্ভ করে দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।
মাগরিবের সময়: সূর্যাস্ত থেকে আরম্ভ করে পশ্চিম আকাশের লালিমা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত।
ইশার সালাতের সময়: লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পর অর্ধরাত্রি পর্যন্ত।
ওয়াক্ত শর্ত হওয়ার প্রমাণ, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا ١٠٣﴾ [النساء: ١٠٣]
“নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত।" [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করার প্রমাণ: হাদীসে এসেছে, জিবরীল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রথম দিন সালাত আদায় করা শেখান প্রত্যেক সালাতের শুরু ওয়াক্তে, আর পরের দিন সালাত আদায় করা শেখান প্রত্যেক সালাতের শেষ ওয়াক্তে। অতঃপর বলেন,
«يَا مُحَمَّدُ، هَذَا وَقْتُ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِكَ، وَالْوَقْتُ مَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ»
“হে মুহাম্মাদ! এটি তোমার পূর্ববর্তী নবীদের ওয়াক্ত। এ সময়দ্বয়ের মধ্যবর্তী সময়ই হলো সালাতের সময়।"[4]
আট. কিবলামুখী হওয়া:
কিবলা বা কা'বা শরীফকে সামনে রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা সালাত আদায়কারীর ওপর ওয়াজিব। কা'বা শরীফ যদি সরাসরি সামনে হয় তবে তাকে অবশ্যই পুরো শরীর দ্বারা কিবলামুখী হতে হবে। আর যদি দূরে হয়, তবে কিবলার দিককে সামনে রাখা তার ওপর ওয়াজিব। বিভিন্নভাবেই কিবলা চেনা যেতে পারে।
v সূর্য উদয় হওয়ার দিক।
v রাত্রের বেলা সূর্য অস্ত যাওয়ার দিক। রাত্রে ধ্রুবতারা দ্বারা, মসজিদের মেহরাব, কম্পাস দ্বারা অথবা কাউকে জিজ্ঞাসা করার দ্বারা। কিবলা নির্ধারণের চেষ্টা করা সালাত আদায়কারীর ওপর ওয়াজিব।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿قَدۡ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجۡهِكَ فِي ٱلسَّمَآءِۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبۡلَةٗ تَرۡضَىٰهَاۚ فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۚ وَحَيۡثُ مَا كُنتُمۡ فَوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ شَطۡرَهُۥ﴾ [البقرة: ١٤٤]
“নিশ্চয় আমি আকাশের দিকে তোমার মুখমণ্ডল উত্তোলন অবলোকন করছি। তাই আমি তোমাকে ঐ কিবলামুখীই করবো যা তুমি কামনা করছো। অতএব, তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও এবং তোমরা যেখানেই আছ তোমাদের মুখ সে দিকেই প্রত্যাবর্তিত কর।" [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪৪]
নয়. নিয়ত:
নিয়ত হল, কোনো কাজ করার উদ্দেশ্যে দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়া, মুখে কোনো কথা না বলা। ফরয সালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে তার মন ও অন্তর উপস্থিত থাকবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى ...»
“বান্দার সমস্ত আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক মানুষ তার নিয়ত অনুসারেই তার বিনিময় পাবে।"[5]
সালাতের বিধানাবলী
আল্লাহ তা'আলা কুরআনে করীমে সালাতের আদেশ দিলেও এর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন নি। তবে হাদীসে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ ﴾ [النحل: ٤٤]
“আর তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানুষকে বুঝিয়ে দাও যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে।" [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৪৪]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«َصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي»
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছো ঠিক সেভাবে সালাত আদায় করো।"[6]
একজন মুসলিম যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন তার অন্তরে এমন একটি অনুভূতি থাকা উচিৎ যে, সে এখন মহান আল্লহর সম্মুখে দণ্ডায়মান, তিনি তার চোখের ইশারা অন্তরের অন্তস্থলের বিরাজমান সব কিছুই জানেন। মনের চিন্তা চেতনা আকুতি-মিনতি সবই তার জ্ঞাত। যদি মানুষের মধ্যে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত থাকে তবেই তার অন্তর সালাতে একমাত্র আল্লাহর দিকেই নিমগ্ন থাকবে। যেমনিভাবে তার দেহ-শরীর কিবলার দিকে থাকে অনুরূপভাবে তার মনও কিবলামুখী থাকবে। একজন সালাত আদায়কারীর কর্তব্য হল, যখনই সে সালাতে দাঁড়াবে, তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, সে এখন আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত, আর যখন সালাত আরম্ভ করে তখন বিশ্বাস করবে যে, এখন সে আল্লাহর সাথেই কথোপকথন করছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ، فَإِنَّهُ يُنَاجِي رَبَّهُ»
“যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায় তখন সে আল্লাহর সাথেই নিভৃতে আলাপ করে।"[7]
অতঃপর সালাতে যখন বলে, 'আল্লাহু আকবর' তখন সে বিশ্বাস করে যে আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ, তার ওপর আর কেউ শেষ্ঠ নেই।
আর জাগতিক সবকিছুই সালাত আদায়কারীর নিকট তুচ্ছ। কারণ, সে দুনিয়াকে পশ্চাতে ফেলে সালাতে নিমগ্ন হয়। তাকবীর বলার সাথে সাথে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠায়, ডান হাতকে বাম হাতের বাহুর ওপর রাখে, মাথাকে অবনত করে, উপরের দিকে চক্ষু উঠায় না এবং ডানে বামে তাকায় না। অতঃপর সে সালাত শুরুর দো'আ পড়বে,
«سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، تَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ»
“সমস্ত মর্যাদা ও গৌরব আপনারই হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা কেবল আপনারই জন্য, আপনার নামেই সমস্ত বরকত ও কল্যাণ এবং আপনার মর্যাদা অতি উচ্চে। আর আপনি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা'বুদ নেই।"[8]
এছাড়া ও আরো যেসব দো'আ বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, তাও পাঠ করা যেতে পারে।
তারপর (أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ) ও (بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ) পড়বে।
তারপর সূরা আল-ফাতিহা পড়বে আর সূরা আল-ফাতিহার অর্থের মধ্যে গভীরভাবে চিন্তা করবে।
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমি সালাতকে আমার ও বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি; অর্ধেক আমার জন্য, আর অর্ধেক আমার বান্দার। আর বান্দা আমার নিকট যা চায় তাই সে পায়। যখন সে বলে, (ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ) 'আলহামদু লিল্লাহি রব্বি 'আলামীন' তখন আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে'। আর যখন বলে (ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ) 'আররাহমানির রাহীম' তখন আল্লাহ বলেন, 'আমার বান্দা আমার গুনগান করেছে'। আর যখন বলে (مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ) 'মালিকি ইয়াও মিদ্দীন' তখন আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'আমার বান্দা আমার মাহত্ব ঘোষণা করেছে'। আর যখন বলে (إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ) 'ইয়্যাকানা'বুদু ওয়াইয়্যাকানাসতাঈ'ন' তখন আল্লাহ তা'আলা বলেন, এটি আমার এবং আমার বান্দার মাঝে সীমাবদ্ধ। আর বান্দা লাভ করে যা সে প্রার্থনা করে। আবার যখন সে বলে ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ...)) 'ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম ...' তখন আল্লাহ তা'আলা বলেন, এ শুধু আমার বান্দার এবং সে লাভ করে যা সে প্রার্থনা করে।"[9]
আর সূরা ফাতিহা শেষ করে সে آمِيْن)) বলবে অর্থাৎ, 'হে আল্লাহ! আপনি আমার দো'আ কবুল করুন'।
সূরা ফাতিহা শেষ করার পর কুরআনের যে কোনো অংশ থেকে সহজ কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করবে। তারপর দু'হাত তুলে আল্লাহ আকবর বলে রুকু করবে। রুকুতে দু'হাত হাঁটুর ওপর রাখবে। আঙ্গুলগুলো খোলা থাকবে আর দুই বাহুকে দুই পার্শ্ব থেকে দূরে রাখবে। মাথা ও পিঠ সমান রাখবে, বাঁকা করবেনা। রুকুতে গিয়ে কমপক্ষে তিনবার (سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ) 'সুবাহানা রব্বিয়াল আযীম' বলবে এবং বেশি বেশি করে আল্লাহর মাহত্ব বর্ণনা করবে। যেমন সাজদায় গিয়ে বলবে,
«سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي»
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলী।" অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাদের প্রভু তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তোমার প্রশংসা সহকারে, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর।"[10]
অতঃপর 'আল্লাহু আকবর' বলে মাথা উঁচু করবে এবং দু'হাত কাঁধ পর্যন্ত অথবা দু কানের লতী পর্যন্ত উঠাবে, ডান হাত বাম হাতের বাহুর ওপর রাখবে এবং বলবে, (رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ) অথবা (رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ) অথবা (اللهم رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ) উল্লিখিত দো'আগুলো এক এক সময় এক একটি করে পড়া উত্তম। আর যদি সালাত আদায়কারী মুক্তাদি হয় তবে তাকে (سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ) বলতে হবে না, বরং সে উঠার সময় শুধু উল্লিখিত দো'আগুলো পড়বে। এছাড়া সে এ দো'আও পড়তে পারে (رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ)
তারপর সাজদায় যাওয়ার জন্য তাকবীর বলবে। সাজদায় যাওয়ার সময় দুই হাত উঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই। সাজদায় যাওয়ার সময় হাত উঠানো বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। প্রথমে দুই হাঁটু জমিনে রাখবে তারপর দুই হাত তারপর কপাল তারপর নাক। মোটকথা, সাতটি অঙ্গের ওপর সাজদা করবে কপাল নাক দুই ক্ববজি দুই হাঁটু দুই পায়ের আঙ্গুলি। আর বাহুদ্বয়কে খাড়া করে রাখবে, মাটির সাথে মেশাবে না এবং হাঁটুর ওপরেও রাখবে না, আর দুই বাহুকে দুই পার্শ্ব হতে এবং পেটকে দুই উরু হতে আলাদা রাখবে। পিঠ উঁচু করে রাখবে, বিছিয়ে দিবে না। সাজদারত অবস্থায় তিনবার বলবে, (سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى) এবং (سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ)বলারও বিধান রয়েছে।[11]
আর সাজদায় বেশি বেশি করে আল্লাহর নিকট র্প্রাথনা করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ، وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ»
“বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে যখন সে সাজদারত থাকে। সুতরাং তোমরা সাজদারত অবস্থায় বেশি বেশি প্রার্থনা কর।"[12]
কিন্তু মুক্তাদির জন্য দীর্ঘ দো'আ করার অযুহাতে ইমামের চেয়ে বেশি দেরী করা; কোনো ক্রমেই তা ঠিক নয়। কারণ, ইমামের অনুকরণ করা ওয়াজিব ও অধিক গুরুত্বর্পূণ বিষয়। তারপর তাকবীর বলে সাজদা হতে উঠবে এবং দুই সাজদার মাঝে 'মুফতারেশ' বসবে।
এর নিয়ম হল, বাম পা বিছিয়ে দিবে আর ডান পা ডান পার্শ্বে খাড়া করে রাখবে। আর দুই হাতের মধ্যে ডান হাত ডান উরুর উপর অথবা হাঁটুর মাথায় এবং বাম হাত বাম উরুর উপর অথবা হাঁটুকে মুষ্টি করে আঁকড়ে ধরবে। ডান হাতের কনিষ্ট, অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলীগুলো মিলিয়ে রাখবে। তর্জণী খোলা রাখবে শুধু দো'আর সময় নড়াচড়া করতে থাকবে। যেমন, رَبِّ اغْفِرْلِيْ বলার সময় উঠাবে এবং وَارْحَمْنِيْ বলার সময় উঠাবে। দুই সাজদার মাঝে বসা অবস্থায় এ দো'আ পড়বে,
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَعَافِنِي وَارَزُقْنِي وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِيْ»
''আল্লাহুম্মাগফির্লী ওয়ার্হামনী ওয়া আফিনী ওয়ারযুকনী ওয়াহদিনী ওয়াজবুরনী''। অর্থাৎ ''হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, নিরাপদে রাখুন, জীবিকা দান করুন, সরল পথ দেখান, শুদ্ধ করুন।"[13]
প্রথম রাকাতে যা যা করেছে দ্বিতীয় রাকাতেও তাই করবে। তবে দ্বিতীয় রাকাতে دُعَاءُ الْاسْتِفْتَاحِ পড়তে হবে না। দ্বিতীয় রাকাত আদায় করা শেষ হলে তাশাহুদ পড়ার জন্য দুই সাজদার মাঝে যেভাবে দুই হাত ও পা রেখেছিল ঠিক একইভাবে হাত পা রেখে বসবে। তার পর তাশাহুদ পড়বে
«التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ»
“যাবতীয ইবাদত ও অর্চনা মৌখিক শারীরিক ও আর্থিক সমস্তই আল্লাহর জন্য হে নবী আপনার ওপর আল্লাহর শান্তি রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক আমাদের ওপর এবং নেক বান্দাদের ওপর শান্তি অবতীর্ণ হোক আমি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।"[14]
আর যদি সালাত তিন রাকাত অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট হয় তা'হলে তাশাহুদ পড়ার পর তাকবীরে তাহরীমের সময় যেভাবে হাত ইঠায় সে ভাবে হাত উঠিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে এবং বাকী সালাত আদায় করবে। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতে শুধু সূরা আল-ফাতিহা পড়বে।
তারপর তিন রাকাত অথবা চার রাকাতের পর শেষ তাশাহুদের জন্য বসবে। এবং 'তাওয়াররুক' করে বসবে। অর্থাৎ ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং বাম পা নলার নিচ দিয়ে বের করে দিবে এবং নিতম্বদ্বয় জমিনে বিছিয়ে দিবে। অতঃপর শেষ তাশাহুদ পড়বে এবং দুরূদ শরীফ পড়বে
«اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ»
“হে আল্লাহ তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরদের প্রতি রহমত নাযিল কর যেমনটি করেছিলে ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের প্রতি, নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীত। হে আল্লাহ তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরদের প্রতি বরকত নাযিল কর যেমনটি বরকত দিয়েছিলে ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের প্রতি, নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীত।"[15]
এ দুরূদ শরীফকে শেষ তাশাহুদের সাথে যোগ করবে।
এছাড়াও যে কোনো দুরূদ, যা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, পড়তে পারবে।
তারপর এ দো'আটি পড়বে:
«اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُورُ الرَّحِيمُ»
“হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের ওপর অনেক বেশি যুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া কেউই আমার গুনাহসমূহ মাফ করতে পারে না। সুতরাং আপনি আপনার নিজ গুনে আমাকে মার্জনা করে দিন এবং আমার প্রতি রহম করুন। আপনিতো র্মাজনাকারী ও দয়ালু।"[16]
এ দো'আটিও পড়বে:
«اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ»
“হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি জাহান্নাম থেকে, আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, আশ্রয় চাচ্ছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেতে এবং মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা থেকে।"[17]
এরপর দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যানের জন্য দো'আ করবে।
যেমন, হাদীসে বর্ণিত:
«ثُمَّ يَدْعُو لِنَفْسِهِ بِمَا بَدَا لَهُ»
“তারপর তার নিজের কল্যাণের জন্য যে কোনো দো'আ করবে।"[18]
সালামের পূর্বে বেশি বেশি করে দো'আ করা উচিত। বিশেষ করে পুর্বোক্ত হাদীসে উল্লিখিত চারটি বিষয়ে আল্লাহর নিকট বেশি করে প্রার্থনা করবে। তারপর হাদীসে উল্লিখিত অন্যান্য দো'আ করতে পারে। অতঃপর «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ» বলে ডানে ও বামে সালাম ফিরাবে।
উল্লিখিত র্কাযাবলী সুন্নাতানুসারে সম্পাদনের পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অন্তরকে হাজির রাখা এবং শয়তানের প্রবঞ্চনা, যা দ্বারা ছাওয়াব বিনষ্ট হয়, তা হতে অন্তরকে মুক্ত রাখা। কারণ, শয়তানের সাথে তার যুদ্ধ ততক্ষণ পর্যন্ত শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের সুন্দর পরিণতি কামনা করি।
সালাতের রুকুনসমূহ
সালাতে অনেকগুলো রুকুন আছে যেগুলো আদায় করা ছাড়া সালাত শুদ্ধ হয় না।
এক. সক্ষম ব্যক্তির জন্য ফরয সালাত দাঁড়িয়ে আদায় করা:
অর্থাৎ ফরয সালাত দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকা অবস্থায় দাঁড়ানোর স্থানে দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরয।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨ ﴾ [البقرة: ٢٣٨]
“তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়ের সাথে দাঁড়িয়ে আদায় করো।" [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: 238]
দুই. তাকবীরে তাহরীমা:
সালাতের প্রারম্ভে 'আল্লাহু আকবার' বলবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ، وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ»
“সালাতের শুরু হলো তাকবীর আর শেষ হলো সালাম।"[19]
তিন. সূরা ফাতিহা পড়া:
ইমাম ও মুক্তাদি সকলের জন্য প্রতি রাকাতে সূরা আ-ফাতিহা পড়া ওয়াজিব।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
«لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ»
“যে ব্যক্তি সূরা আল-ফাতিহা পড়ে না, তার সালাত হয় না।"[20]
চার. রুকু করা।
পাঁচ. রুকু থেকে উঠা।
ছয়. প্রতি রাকাতে দুইবার সাজদাহ করা।
সাত. দুই সাজদার মাঝে বসা:
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱرۡكَعُواْ وَٱسۡجُدُواْۤ ﴾ [الحج: ٧٧]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকু কর এবং সাজদাহ করো।" [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৭৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَعْتَدِلَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا»
“তারপর ভালোভাবে রুকু করো। অতঃপর রুকু হতে মাথা উঠাও এবং সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়াও। তারপর ভালোভাবে সাজদাহ করো। অতঃপর সাজদাহ হতে মাথা উঠাও এবং ভালোভাবে বস। তারপর পুনরায় ভালোভাবে সাজদাহ করো।"[21]
মনে রাখতে হবে, সাজদাহ অবশ্যই সাতটি অঙ্গের উপর করতে হবে; কপাল-নাক, দুই কবজি, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের তালু।
আট. শেষ তাশাহুদ:
নয়. শেষ বৈঠক:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ''যখন সে সালাত পড়বে শেষ বৈঠকে বলবে,[22]
«التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ»
দশ. সালাম ফিরানো:
ডান দিকে বলবে السلام عليكم ورحمة الله এবং বাম দিকে বলবে السلام عليكم ورحمة الله রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ، وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ»
“সালাতের শুরু হলো তাকবীর আর শেষ হলো সালাম।"[23]
এগার. সালাতে সকল রুকুনকে ধীরস্থিরভাবে আদায় করা।
বার. সমস্ত রুকনগুলো ধারাবাহিকভাবে আদায় করা।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ المَسْجِدَ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ المَسْجِدِ، فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ، فَقَالَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، فَارْجِعْ فَصَلِّ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَقَالَ فِي الثَّانِيَةِ، أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا: عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: «إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَأَسْبِغِ الوُضُوءَ، ثُمَّ اسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا»
“এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে সালাত আদায় করে তাঁকে এসে সালাম করল। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়া'আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কেননা তুমি সালাত আদায় করনি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বললেন, ওয়া'আলাইকাস সালাম' তিনি বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কেননা তুমি সালাত আদায় কর নি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে তাঁকে সালাম করল। তখন সে দ্বিতীয় বারের সময় অথবা তার পরের বারে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমাকে সালাত শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবার ইচ্ছা করবে, তখন প্রথমে তুমি যথাবিধি অযু করবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকু করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর তুমি সাজদাহ করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর সাজদাহ্ করবে প্রশান্তভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাতের সকল কাজ সম্পন্ন করবে।"[24]
সালাতের ওয়াজিবসমূহ
সালাতের ওয়াজিব নয়টি
1. তাকবীরে তাহরীম ছাড়া অন্যান্য তাকবীর বলা।
2. রুকুতে «سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ» বলা। (কেউ কেউ এটাকে রুকন বলেছেন।)
3. ইমাম ও মুনফারেদ (একা সালাত আদায়কারী) এর জন্য রুকু হতে উঠার সময় «سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ» বলা।
4. ইমাম মুক্তাদি ও একা সালাত আদায়কারীর জন্য «رَبَّنَا وَلَكَ الحَمْدُ» বলা।
5. সাজদায় «سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى» বলা। ( কেউ কেউ এটাকে রুকন বলেছেন।)
6. দুই সাজদার মাঝে «رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي» বলা।
7. প্রথম বৈঠক।
8. প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া।
9. শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়া। ( কেউ কেউ এটাকে রুকন বলেছেন।)
রুকন ও ওয়াজিবের মধ্যে প্রার্থক্য
রুকন আদায় না করলে সালাত হয় না। যদি কোনো মুসাল্লী ইচ্ছা করে কোনো রুকন ছাড়ে তবে তার সালাত বাতিল হয়ে যায়, আর অনিচ্ছায় ছাড়লে তা স্মরণ করার পর আদায় করতে হবে এবং সালাতের বাকী কার্যাদি সম্পন্ন করে সাজদাহ সাহু করবে। আর যদি মুসল্লী ইচ্ছা করে ওয়াজিব ছেড়ে দেয়, তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি ভুলে ছেড়ে দেয় সাজদাহ সাহুর মাধ্যমে ক্ষতি পুরণ দিবে।
সালাতের সুন্নাতসমূহ
সালাতের ওয়াজিব ও আরকান ছাড়া বাকী অন্যান্য র্কাযাবলী সুন্নাতের অর্ন্তভুক্ত।
সুন্নাত দুই প্রকার:
এক: কথ্য সুন্নাত
যেমন, সালাত শুরুর দো'আ বা সানা পড়া
আমীন বলা। সকল সালাতে প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার পর কুরআনের যে কোনো স্থান হতে তিলাওয়াত করা, সালাতে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করা, বিশেষ করে সাজদায় বেশি বেশি করে দো'আ করা এবং শেষ বৈঠকে বেশি বেশি করে প্রার্থনা করা।
মাগরিব, ইশার প্রথম দুই রাকাত ফরযে আর জুমু'আ ও ঈদের সালাতে ইমামের জন্য ক্বিরাত উচ্চস্বরে পড়া আর মুক্তাদির জন্য সব সময় ক্বিরাত নিম্নস্বরে পড়া।
দ্বিতীয় প্রকার সুন্নাত
অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কার্যাদি
১- তাকবীরে তাহরীমার সময় দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠানো। এছাড়া রুকুতে যাওয়া, রুকু হতে উঠা এবং প্রথম তাশাহুদের পর তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠার সময় দু'হাত উঠানো।
২- দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাতকে বাম হাতের পিঠের ওপর মিলিয়ে রাখা।
৩- সাজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখা।
৪- রুকুতে দুই কব্জিকে দুই হাঁটুর ওপর রাখা।
৫- সাজদার সময় প্রথমে দুই হাঁটু, তারপর দুই হাত, তারপর চেহারা মাটিতে রাখা। (কারো কারো মতে প্রথমে দুই হাত, তারপর দুই হাঁটু, তারপর চেহারা মাটিতে রাখা।)
৬- দুই সাজদার মাঝে প্রথম তাশাহুদ ও শেষ তাশাহুদে বসা অবস্থায় দুই হাতকে দুই উরুর ওপর রাখা।
৭- বৃদ্ধা আঙ্গুল ও মধ্যমা দ্বারা বৃত্ত বানানো এবং তাশাহুদে দো'আর সময় আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা।
৮- প্রথম সালামে ডান দিক আর দ্বিতীয় সালামে বাম দিক মাথা ঘুরানো।
৯- প্রথম রাকাত ও তৃতীয় রাকাত শেষ করার পর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বসা।
আযান ও ইকামতের প্রচলন ও বিধান:
আযানের উদ্দেশ্য হল, সালাতের সময় সম্পর্কে মানুষদের অবহিত করা। ইকামতের উদ্দেশ্য হল, উপস্থিত লোকদের সালাত আরম্ভ হওয়া সম্পর্কে অবহিত করা। আযান ও ইকামত বিশেষভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমার সালাতেই হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য সালাত যেমন দুই ঈদের সালাত, ইস্তেসকার সালাত, কুছফের সালাত এবং তাহাজ্জুদের সালাতে আযান ও ইকামত হয় না।
আযান ইকামতের বিধান হলো মুকীম বা স্থানীয় পুরুষের ক্ষেত্রে ফরযে কেফায়া, তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে নয়।
যদি উপযুক্ত কোনো ব্যক্তি আযান ইকামত দেয় তবে অন্যরা দায়িত্বমুক্ত হবে।
আযানের বাক্য:
আযানের বাক্য ১৫টি। তা হলো, চার বার اللهُ أَكْبَرُ দুই বার أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، দুই বার أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ» দুই বার حَيَّ عَلَى الصَّلَاة দুই বার حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ দুইবার اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ » এবং একবার لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُবলা। ফযরের সালাতের আযানে حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ বলার পর الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ বৃদ্ধি করে বলবে।
ইকামতের বাক্য:
ইকামতের বাক্য ১১টি।
اللهُ أَكْبَرُ দুই বার أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ এক বার َشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ এক বার حَيَّ عَلَى الصَّلَاة এক বার حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ এক বার قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ দুই বার اللهُ أَكْبَرُ দুই বার لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ একবার।[25]
আযান ও ইকামত শুনার সময় মুয়াযযিনের সাথে সাথে আযান ও ইকামতের বাক্যাবলী বলা সুন্নাত। তবে حَيَّ عَلَى الصَّلَا এবং حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ বলার সময় لَاحَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إلَّا بِاللهِ বলা সুন্নাত। তারপর নবী করিম সাল্লাল্লাহু 'আলিইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর দরূদ পড়বে এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে।
«اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةَ وَالفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ»
“হে আল্লাহ, এ পরিপূর্ণ আহ্বান এবং আগত সলাতের প্রভু, আপনি প্রদান করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওসীলা (নৈকট্য) এবং মহা মর্যাদা এবং তাকে পাঠান সম্মানিত অবস্থানে, যার ওয়াদা আপনি তাকে দিয়েছেন।"[26]
সুন্নত সালাত
রাতদিনে মোট দশ রাকাত সালাতের পাবন্দী করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ নিজেও এসব সালাতের বিশেষ পাবন্দী করতেন। দশ রাকাত সালাতের বিবরণ:
অর্থাৎ যোহরের সালাতের পূর্বে দুই রাকাত এবং পরে দুই রাকাত, মাগরিবের সালাতের পরে দুই রাকাত, এশার সালাতের পরে দুই রাকাত এবং ফযরের সালাতের পূর্বে দুই রাকাত।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«حَفِظْتُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ رَكَعَاتٍ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ المَغْرِبِ فِي بَيْتِهِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ العِشَاءِ فِي بَيْتِهِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الصُّبْحِ»
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলিইহি ওয়াসাল্লাম হতে দশ রাকাত সালাত সংরক্ষণ করি; যোহরের পূর্বে দুই রাকাত এবং পরে দুই রাকাত, মাগরিবের সালাতের পর দুই রাকাত, ইশার সালাতের পর নিজ গৃহে দুই রাকাত। আর ফযরের সালাতের পূর্বে দুই রাকাত।"[27]
যোহরের সালাতের পূর্বে চার রাকাত এবং পরে দুই রাকাতের কথাও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তখন দিবারাত্রে মোট সালাত হবে বার রাকাত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলিইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا، غَيْرَ فَرِيضَةٍ، إِلَّا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، أَوْ إِلَّا بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ»
“কোনো মুসলিম যদি ফরয সালাত ছাড়া প্রতিদিন বার রাকাত সালাত আদায় করে আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর তৈরী করেন।"[28]
অনুরূপভাবে যোহরের পরে ও চার রাকাত পড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলিইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ وَأَرْبَعًا بَعْدَهَا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى النَّارِ»
“যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে চার রাকাত এবং তার পরে চার রাকাত সালাত আদায় করে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।"[29]
ফযরের দুই রাকাত সুন্নাত সালাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলিইহি ওয়াসাল্লাম সফরে এবং বাড়িতে কখনোই ছাড়তেন না।
সালাত আদায়ের মাকরূহ সময়
বিশেষ কয়েকটি সময়ে সালাত পড়া মাকরূহ আর তা হলো নিম্ন রূপ:
- ফযরের সালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত। তবে যে ব্যক্তি ফযরের দুই রাকাত পড়তে পারেনি, সে অবশ্যই দুই রাকাত ফযরের সুন্নাত পরে আদায় করে নিবে।
- সূর্যোদয়ের সময় হইতে সূর্য এক ধনুক পরিমান উঁচু হওয়া পর্যন্ত।
- সূর্য আকাশের মধ্যভাগে অবস্থানকাল থেকে পশ্চিম আকাশের দিকে ঢলে পড়া পর্যন্ত। (অর্থাৎ যোহরের সালাতের সামান্য পূর্বে)
- আছরের সালাতের পর সূর্যাস্ত র্পযন্ত।
- সূর্যাস্তের মুহূর্তে।
সালাতের পর আযকার ও দো'আসমূহ
সালাতের সালাম ফিরানোর পর সুন্নত হলো তিন বার أستغفرالله বলবে।
তারপর নিম্নবর্ণিত দো'আগুলো পড়বে:
«اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ»
“হে আল্লাহ! আপনি শান্তিদাতা, আর আপনার কাছ থেকেই শান্তি, আপনি বরকতময়, হে মর্যাদাবান ও কল্যাণময়!''[30]
«لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ، وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الجَدِّ مِنْكَ الجَدُّ»
“আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো মা'বুদ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব ও র্কতৃত্ব একমাত্র তাঁরই এবং সকল প্রশংসা এক মাত্র তাঁরই, তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ, আপনি যা প্রদান করেছেন তাতে বাধা দেওয়ার আর কেউ নেই আর আপনি যা দিবেন না তা প্রদান করার মতো আর কেউ নেই। আপনার আযাব হতে কোনো বিত্তশীল পদর্মযাদার অধিকারীকে তার ধন সম্পদ বা পদর্মযাদা রক্ষা করতে পারে না।"[31]
«لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ، وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ»
“আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো মা'বুদ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব ও র্কতৃত্ব একমাত্র তাঁরই। আর সকল প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই, তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। কোনো পাপকাজ, রোগ-শোক, বিপদ-আপদ হতে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় এবং সৎ কাজ করার কোনো ক্ষমতা নেই আল্লাহর তাওফীক ছাড়া কারোই নেই। আল্লাহ ছাড়া ইবাদতযোগ্য কোনো মা'বুদ নেই, আমরা তারই ইবাদত করি। সকল নি'আমত তার, সকল অনুগ্রহ এবং সকল উত্তম প্রশংসা তাঁরই। তিনি ছাড়া আর কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই। আমরা তার দেওয়া জীবন বিধান একমাত্র তার জন্যই একনিষ্টভাবে মান্য করি। যদিও কাফিরদের নিকট এটা অপ্রীতিকর।"[32]
«اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ»
“হে আল্লাহ! আপনার যিকির, আপনার শুকরীয়া এবং আপনার ইবাদত বন্দেগী সুন্দর ও সঠিকভাবে আদায় করতে আপনি আমাকে তাওফীক দান করুন।"[33]
«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ العُمُرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ».
“হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় র্প্রাথনা করছি কাপুরুষতা হতে। আর আশ্রয় র্প্রাথনা করছি বার্ধক্যের চরম দুঃখ কষ্ট হতে আরো র্প্রাথনা করছি দুনিয়ার ফিৎনা-ফাসাদ এবং কবরের আযাব হতে।"[34]
«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ»
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কুফর হতে এবং কবরের আযাব হতে।"[35]
তারপর سُبْحَانَ اللهِ ৩৩ বার, اَلْحَمْدُ لِلهِ ৩৩ বার এবং اَللهُ أَكْبَرُ ৩৪ বার।
সূরা নাছ, ফালাক, এখলাছ প্রত্যেক সালাতের পর একবার করে আর মাগরিব ও এশার সালাতের পর তিন বার করে।
এছাড়া প্রত্যেক সালাতের পর আয়াতুল কুরছি পড়া সুন্নাত।
সমাপ্ত
[1] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৩৪; সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪০৪
[2] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ৬৪৬৭
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৯
[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৭১
[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং 631
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯০
[8] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৯
[9] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৯
[10] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪২৯৩
[11] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫২
[12] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭৯
[13] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯৩
[14] সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1202
[15] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৭০
[16] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৫১
[17] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮8
[18] সুনান নাসাঈ, হাদীস নং 1310
[19] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৬১; সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৩, ২৩৮
[20] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৪
[21] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫৭, ৭৯৩,৬২৫১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৭
[22] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৩১, ৮৩৫, ১২০২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০২
[23] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৬১; সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৩, ২৩৮
[24] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬২৫১, ৬৬৬৭
[25] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৭
[26] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৪
[27] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১80
[28] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২৮
[29] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৩৯৩; সুানান নাসাঈ, হাদীস নং ১৮১৪
[30] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯১
[31] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৭
[32] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৪; সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ১৩৪০
[33] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫২২; সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ১৩০৩
[34] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮২২, ৬৩৬৫
[35] সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ১৩৪৭