×
সৎ ব্যক্তিরা কীভাবে রমজান যাপন করতেন। আমল কবুল হওয়ার আলামত কি-কি, আমরা কীভাবে মাহে রমজান শেষ করব, ঈদের রাতের আমল কি? এসব বিষয়ে বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।

    রমযানকে বিদায় জানানো

    [ বাংলা – Bengali – بنغالي ]

    আবদুর ইব্রাহীম ইবনে মুহাম্মদ আল-হুকাইল

    অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ

    সম্পাদনা : আবুল কালাম আজাদ

    আলী হাসান তৈয়ব

    2012 - 1433

    ﴿ توديع رمضان ﴾

    « باللغة البنغالية »

    إبراهيم بن محمد الحقيل

    ترجمة: ثناء الله نذير أحمد

    مراجعة: أبو الكلام أزاد

    علي حسن طيب

    2012 - 1433

    রমযানকে বিদায় জানানো

    এক সময় আমরা রমযানের অপেক্ষা করেছি, এখন আমরা রমযানকে বিদায় দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এভাবেই আমাদের জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবে। মানুষ বলতেই কয়েকটি দিনের সমষ্টি। একটি দিন অতিবাহিত হয় তার জীবনের একটি অংশ খসে পড়ে। এ রমযানও চলে যাবে, যেমন আসতে ছিল। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি রাত-দিন, মাস-বছর অতিবাহিত করেন। এতে রয়েছে মুত্তাকিদের নসিহত, উপদেশ গ্রহণকারীর জন্য উপদেশ।

    এ রমযানও অন্যান্য বছরের ন্যায় চলে যাবে। সে তার আমলনামা বন্ধ করে ফেলবে, যা কিয়ামতের দিন ছাড়া খোলা হবে না। আগামী রমযান পাব কিনা আমরাও তা জানি না। আল্লাহ সাহায্যকারী।

    রমযানের জন্য কাঁদা উচিত। একজন মুমিন রমযানের জন্য কিভাবে না কাঁদবে, অথচ এ রমযানে জান্নাতের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করা হয়। একজন গোনাগার কি জন্য রমযানের জন্য আফসোস না করবে, অথচ রমযানে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। কেন শয়তান রমযানের কারণে জ্বলে পুড়ে না মরবে, অথচ তাতে সে আবদ্ধ থাকে। হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা এতে কাঁদো। হে মুত্তাকীগণ, তোমরা এতে উপার্জন কর।

    রমযানে নেককারদের অবস্থা :

    রমযানে তারা আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান থাকে, তার শাস্তিকে ভয় করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

    ﴿ يَحۡذَرُ ٱلۡأٓخِرَةَ وَيَرۡجُواْ رَحۡمَةَ رَبِّهِۦۗ ﴾ [الزمر: ٩]

    ‘তারা আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজ রবের রহমত প্রত্যাশা করে’। (যুমার : ৯)

    তারা আল্লাহর এবাদতে নিমগ্ন থাকে, দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাদের অন্তরে আল্লাহর চিন্তা ভিন্ন কোন চিন্তা বিরাজ করে না। তারা প্রকৃত পক্ষে দাউদ তায়ীর বাণীর অনুকরণ করে। একদিন তিনি আল্লাহর সঙ্গে কথপোকথনে বলতে ছিলেন, ‘তোমার চিন্তা আমার সমস্ত চিন্তা দূর করে দিয়েছে। তোমার চিন্তা আমার আনন্দ-বিনোদন শেষ করে দিয়েছে। তোমার সাক্ষাত ইচ্ছা আমার স্বাদ বিস্বাদ করে দিয়েছে এবং প্রবৃত্তির আড়াল হয়ে গেছে’। (লাতায়েফুল মাআরেফ : ৩৪৮)

    এ হচ্ছে রোজাদারের অবস্থা। তাদের স্থান মসজিদ ও লক্ষ নির্জনতা। তারা লম্বা কেরাত পড়ে, কুরআন তিলাওয়াত করে, আল্লাহর সামনে রোনাজারি করে। তারা আল্লাহমুখি হওয়ার প্রতিজ্ঞা করে এবং রহমানের সঙ্গে মোনাজাত করে। অথচ অন্যরা তখন শয়তানের আসরে বসে থাকে, গোনাগারদের সঙ্গে আড্ডা দেয়।

    তারা কি জন্য আমল করে ?

    তারা কেন আমল করে? কি তাদের উদ্দেশ? কেন তাদের এতো লম্বা কেরাত? কেন তাদের এতো রাত জাগা ও পরিশ্রম করা? উত্তর : তারা লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করে। যে রাত হাজার রাতের তুলনায় উত্তম। যদি মসজিদের মুখ থাকতো, সে বলে উঠত, হে লাইলাতুল কদর, তোমায় ইবাদতকারীদের দেখে নাও। হে সালাত আদায়কারী, তুমি রুকু কর, সেজদা কর। হে প্রার্থনাকারী, এ রাতে তুমি খুব প্রার্থনা কর’। (লাতায়েফ : ৩৪৯)

    এ রমযান চলে যাবে, তবে এর রাতসমূহ এতে ক্রন্দনকারী, তওবাকারী, ইস্তেগফাকারী, তিলাওয়াতকারী ও সদকাকারীদের চেনে নেবে। তারা আল্লাহর রহমত প্রত্যাশা করে, তারা জানে যে, আল্লাহ ক্ষমাকারী, তাই তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে।

    গোনাহগাররা যদি আল্লাহর মাগফেরাত সম্পর্কে না জানতো, তবে তাদের অন্তর জ্বলে যেত, তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যেত। কিন্ত তারা যখন আল্লাহর ক্ষমার কথা স্বরণ করে, তাদের অন্তর তৃপ্তিতে ভরে যায়। তাদের কেউ বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের গোনাহ অনেক, কিন্তু তোমার মাগফেরাত খুব বড়। হে আল্লাহ, আমার গোনাহ ও তোমার মাগফেরাতের মধ্যে তুলনা করে দেখ’। (লাতায়েফ : ৩৭০)

    এ হচ্ছে নেককারদের দোয়া। তারা এভাবেই রমযান অতিবাহিত করেন। তাদেরই শোভা পায় এর সমাপ্তিতে ক্রন্দন করা। কারণ, এর মর্যাদা তারা বুঝে। এতদসত্ত্বেও তারা ভীত থাকে, কবুল না হওয়ার ভয়ে শঙ্কিত থাকে। তারা জানে আসল বিষয় হচ্ছে কবুল হওয়া, পরিশ্রম করা নয়। অন্তরের পবিত্রতাই আসল পবিত্রতা, শরীরের পবিত্রতা নয়।

    মাহরুম কত রাত জাগরণকারী, মাহরুম কত ঘুমন্ত ব্যক্তি। কত ঘুমন্ত অন্তর আল্লাহর জিকিরে মশগুল, কত জাগ্রত অন্তর আল্লাহর অপরাধে লিপ্ত। কিন্তু বান্দাদের উচিত নেককাজের জন্য চেষ্টা করা এবং তার কবুলের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা। এটাই নেককারদের অভ্যাস।

    ইয়াহইয়া ইবনে কাসির বলেছেন, ‘আল্লাহর কতক নেক বান্দাদের দোয়া ছিল, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে রমযানের নিকট সোপর্দ কর ও রমযানকে আমার নিকট সোপর্দ কর। এবং রমযানকে আমার কাছ থেকে কবুল করে নাও’। (হুলইয়াতুল আউলিয়া : ৩/৬৯)

    ইবনে দিনার বলেন, ‘কবুল না হওয়ার ভয়, আমল করার চেয়েও বেশি কষ্টের’। আব্দুল আজিজ আবু দাউদ বলেন, ‘আমি তাদের খুব আমল করতে দেখেছি, তবুও আমল শেষে তারা কবুল না হওয়ার শঙ্কায় ভীত থাকত’। (লাতায়েফ : ৩৭৫)

    আমল কবুল হওয়ার আলামত :

    রমযানের পরেও ধারাবাহিক আমল করে যাওয়া আমল কবুল হওয়ার সব চেয়ে বড় আলামত। কেউ বলেছেন, ‘নেকির সওয়াব হচ্ছে, নেকির পর নেকি করা। এক নেক আমলের পর দ্বিতীয় নেক আমল করা, প্রথম আমলটি কবুল হওয়ার আলামত। যেমন নেক আমল করার পর গোনা করা, নেক আমল কবুল না হওয়ার আলামত’।

    রমযান পেয়ে ও তাতে সিয়াম-কিয়াম করে, রমযানের পর গুনাহ করা মূলত আল্লাহর নিয়ামতকে গোনাহের মোকাবেলায় দাঁড় করানোর শামিল। যদি কেউ রমযানেই রমযান পরিবর্তী গোনা করার ইচ্ছা করে থাকে, তবে তার রোজা তার ওপরই পতিত হবে এবং তওবা না করা পর্যন্ত তার জন্য রহমতের দরজা বন্ধ থাকবে।

    কত সুন্দর! গোনাহর পর নেকি করা, তাতে গোনাহ মিটে যায়, আর নেকির পর নেকি করা আরো সুন্দর! খুবই খারাপ নেকির পর গোনাহ করা, যার কারণে নেকি নষ্ট হয়ে যায়। তওবা করার পর একটি গোনাহ করা, তওবার পূর্বে সত্তরটি গোনাহর চেয়েও খারাপ। তওবার করার পর তাওবা ভঙ্গ করা খুবই খারাপ। ইবাদতের সম্মান লাভ করে গোনার অসম্মান মাথায় নেয়া বড়ই লজ্জাকর।

    হে তওবাকারীরা, রমযানের পর তোমরা গোনাতে ফিরে যেয়ো না। তোমরা ঈমানের স্বাদের ওপর গোনার প্রবৃত্তি প্রধান্য দিয়ো না। তোমরা আল্লাহর জন্য ধৈর্য ধারণ কর। তিনি তোমাদের উত্তম জিনিস দান করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

    ﴿ إِن يَعۡلَمِ ٱللَّهُ فِي قُلُوبِكُمۡ خَيۡرٗا يُؤۡتِكُمۡ خَيۡرٗا مِّمَّآ أُخِذَ مِنكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٧٠ ﴾ [الانفال: ٧٠]

    ‘যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তরে কোন কল্যাণ আছে বলে জানেন, তাহলে তোমাদের থেকে যা নেয়া হয়েছে, তার চেয়ে উত্তম কিছু দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (আনফাল : ৭০)

    হে ইবাদত গোজার বান্দারা, যে সব এবাদতের মাধ্যমে তোমরা রমযানে আল্লাহর ইবাদত করেছো, সে ইবাদত এখনো বিদ্যমান। রমযানের সঙ্গে সঙ্গে তা চলে যায়নি। হয়তো তোমরা তা পুরোপুরি করতে পারবে না, কিন্তু একেবারে ছেড়ে দিয়ো না। বিশর হাফিকে বলা হয়েছে, ‘কতক লোক রযেছে, যারা রমযানে খুব ইবাদত ও পরিশ্রম করে। তিনি বলেন, তারা খুবই খারাপ, যারা রমযান ছাড়া আল্লাহকে চিনে না। নেককার সে ব্যক্তি যে সব সময় আল্লাহর ইবাদত করে। (লাতায়েফ : ৩৯৬)

    এ নীতিই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জারি করে গেছেন। তিনি বলেন,

    «أَحَبُّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ تَعَالَى أَدْوَمُهَا، وَإِنْ قَلَّ»

    ‘কম হলেও, ধারাবাহিক আমল আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয়’। (বুখারি : ৪৩, মুসলিম : ৭৮২)

    আয়েশা রা. বলেন,

    « وَكَانَ أَحَبَّ الدِّينِ إِلَيْهِ مَا دَاوَمَ عَلَيْهِ صَاحِبُهُ»

    ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ধারাবাহিক আমলই বেশি প্রিয় ছিল’। (বুখারি : ৪৩; মুসলিম : ৭৮৫)

    রমযানের রব, সব মাসেরই রব, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুমিনের আমলের শেষ নেই। হাসান রহ. বলেন,

    ‘আল্লাহ তাআলা মৃত্যু ছাড়া মুমিনদের আমলের জন্য কোন সময় নির্ধারণ করেন নি’। আল্লাহ তাআলা বলেন,

    ﴿ وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩ ﴾ [الحجر: ٩٩]

    ‘মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর’। (হিজর : ৯৯)

    তাদের কি লজ্জা হয় না, রমযানের সঙ্গে সঙ্গে তারা মসজিদ, কুরআন তিলাওয়াত ত্যাগ করে দেয় এবং পুনরায় গোনাতে লিপ্ত হয়। আল্লাহ, তোমার কাছে পানাহ চাই। আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো না। এ উপদেশ হচ্ছে তাদের জন্য যারা রমযানে রোজা রাখে ও ইবাদত করে অতিবাহিত করেছে, কিন্তু যারা রমযান পেয়েও গান-বাদ্য এবং আল্লাহর অবাধ্যতায় অতিবাহিত করেছে, তাদের জন্য কি বলব?

    এর চেয়ে ভাল কথা আর তাদের বলতে পারি না যে, তোমরা তোমাদের রবের নিকট তওবা কর। আল্লাহ তাআলা বলেন,

    ﴿ ۞قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ ﴾ [الزمر: ٥٣]

    ‘বল, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (যুমার : ৫৩)

    তুমি রমযান নষ্ট করেছ, তাই তোমার পুরো জীবন তুমি নষ্ট কর না। তওবা কর, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করতে পারেন। কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।

    আমরা কিভাবে রমযানকে বিদায় জানাবো?

    ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. তার গভর্নরদের লিখে পাঠান যে, তোমরা রমযান মাস ইস্তেগফার ও সদকার মাধ্যমে খতম কর। কারণ, সদকা রোজাদারের জন্য পবিত্রতা স্বরূপ আর ইস্তেগফার রোজার জন্য পবিত্রতা স্বরূপ। আর এ জন্য কেউ বলেছেন, ‘সদকাতুল ফিতর হচ্ছে সেজদায়ে সাহুর ন্যায়। ‘আব্দুল আজিজ তার পত্রে বলেন, ‘তোমরা আবু বকরের ন্যায় বল,

    ﴿ قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٢٣ ﴾ [الاعراف: ٢٣]

    ‘তারা বলল, হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলক করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব’। (আরাফ : ২৩)

    ﴿ وَإِلَّا تَغۡفِرۡ لِي وَتَرۡحَمۡنِيٓ أَكُن مِّنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٤٧ ﴾ [هود: ٤٧]

    আর যদি আপনি আমাকে মাফ না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (হুদ : ৪৭)

    ﴿ وَٱلَّذِيٓ أَطۡمَعُ أَن يَغۡفِرَ لِي خَطِيٓ‍َٔتِي يَوۡمَ ٱلدِّينِ ٨٢ ﴾ [الشعراء: ٨٢]

    ‘আর যিনি আশা করি, বিচার বিদসে আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেবেন’। (শুআরা : ৮২)

    ﴿ قَالَ رَبِّ إِنِّي ظَلَمۡتُ نَفۡسِي فَٱغۡفِرۡ لِي ﴾ [القصص: ١٦]

    ‘হে আল্লাহ, আমি আমার ওপর যুলক করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর’। (কাসাস : ১৬)

    ﴿ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنتَ سُبۡحَٰنَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٨٧ ﴾ [الانبياء: ٨٧]

    আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম। (আম্বিয়া : ৮৭)

    ঈদের রাতের আমল :

    রমযানের মাগফেরাত যেহেতু রোজা ও কিয়ামের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তাই আল্লাহ তাআলা রমযান শেষে তার শুকরিয়া আদায় ও তাকবির বলার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলেন,

    ﴿ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

    ‘তার জন্য তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। (বাকারা : ১৮৫)

    এর ব্যাখ্যায় ইবনে মাসউদ বলেন, আল্লাহর পরিপূর্ণ তাওয়া অর্জন করা। অর্থাৎ তার ইবাদত করা গোনাহ না করা। তার স্মরণ করা তাকে না ভোলা এবং তার শুকরিয়া আদায় করা তার কুফরি না করা’। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম : ২/৪৪৬)

    ঈদের দিনের সূর্যাস্ত থেকে ঈদের সালাত আদায় পর্যন্ত তাকবির বলা বিধেয়। পুরুষরা মসজিদে, বাজারে ও ঘরে জোরে জোরে তাকবির বলবে।

    ঈদের দিনের সুন্নত :

    সালাতে যাওয়ার আগে ঈদের দিন খেজুর খাওয়া। বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া সুন্নত। আনাস রা. বলেন,

    «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَغْدُو يَوْمَ الفِطْرِ حَتَّى يَأْكُلَ تَمَرَاتٍ» «وَيَأْكُلُهُنَّ وِتْرًا»

    ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর না খেয়ে ঈদের সালাতের জন্য বের হতেন না, তিনি বিজোর সংখ্যায় খেজুর খেতেন’। (বুখারি : ৯৫৩)

    নারীরাও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে ঈগগাহে যাবে। তারা সালাতে ও জিকিরে অংশ গ্রহণ করবে। আমাদের অনেকেই নিজ সন্তানদের পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে উদাসীন থাকি, এটা মোটেও ঠিক নয়। বরং তাদের ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক পোশাক-আষাক পড়তে বাধ্য করা।

    আবার অনেককে দেখা যায়, ঈদ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বের হয়ে যায়, গান-বাদ্যতে রাত কাটিয়ে দেয়, এটা কখনো ঠিক নয়। বরং ইবাদত, ইস্তেগফার ইত্যাদির মাধ্যম ঈদ অতিবাহিত করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে তওফিক দান করুন।

    সমাপ্ত