×
জীবিকা নির্বাহের জন্য হালাল উপার্জনের কোনো বিকল্প নেই। বেঁচে থাকার তাগিদে অবশ্যই আমাদের হালাল রুযীর অন্বেষণ করতে হয়। ইসলাম মানুষকে এ কথা কখনো বলে নি যে, তোমরা মসজিদে বসে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ কর, চেষ্টা ও মেহনত করার কোনো প্রয়োজন নেই; বরং ইসলামের নির্দেশনা হলো, সালাত আদায় করা, সাওম পালন করা এবং হজ করা যেমন ইবাদত, হালাল রুযী কামাই করাও অনুরূপ ইবাদত। সালাত, সাওম ও হজ করা যেমন ফরয, হালাল ও বৈধ পন্থায় কামাই-উপার্জন করাও ফরয। উক্ত প্রবন্ধে হালাল রুজি অন্বেষণের পদ্ধতি আলোজনা করা হয়েছে।

    সর্বোত্তম হালাল রিযিক

    জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    أطيب الأرزاق

    (باللغة البنغالية)

    ذاكر الله أبوالخير

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    সংক্ষিপ্ত বর্ণনা.............

    জীবিকা নির্বাহের জন্য হালাল উপার্জনের কোনো বিকল্প নেই। বেঁচে থাকার তাগিদে অবশ্যই আমাদের হালাল রুযীর অন্বেষণ করতে হয়। ইসলাম মানুষকে এ কথা কখনো বলে নি যে, তোমরা মসজিদে বসে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ কর, চেষ্টা ও মেহনত করার কোনো প্রয়োজন নেই; বরং ইসলামের নির্দেশনা হলো, সালাত আদায় করা, সাওম পালন করা এবং হজ করা যেমন ইবাদত, হালাল রুযী কামাই করাও অনুরূপ ইবাদত। সালাত, সাওম ও হজ করা যেমন ফরয, হালাল ও বৈধ পন্থায় কামাই-উপার্জন করাও ফরয। উক্ত প্রবন্ধে হালাল রুজি অন্বেষণের পদ্ধতি আলোজনা করা হয়েছে।

    সর্বোত্তম হালাল রিযিক

    জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য হালাল উপার্জনের কোনো বিকল্প নেই। রুযী-রোজগার ছাড়া দুনিয়ার জীবনে বেঁচে থাকা অসম্ভব। বেঁচে থাকার তাগিদে অবশ্যই আমাদের হালাল রুযীর অন্বেষণ করতে হয়। ইসলাম মানুষকে এ কথা কখনো বলে নি যে, তোমরা মসজিদে বসে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ কর, তোমাদের দায়িত্ব আল্লাহই গ্রহণ করবে এবং জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য কামাই-রুযী করা, চেষ্টা ও মেহনত করার কোনো প্রয়োজন নেই; বরং ইসলামের নির্দেশনা হলো, সালাত আদায় করা, সাওম পালন করা এবং হজ করা যেমন ইবাদত, হালাল রুযী কামাই করাও অনুরূপ ইবাদত। সালাত, সাওম ও হজ করা যেমন ফরয, হালাল ও বৈধ পন্থায় কামাই-উপার্জন করাও ফরয। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

    ﴿فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ ١٠﴾ [الجمعة: ١٠]

    “সালাত শেষ হওয়ার পর তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর ফযল (রিযিক) অন্বেষণ কর”[সুরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ৯]

    মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির জন্য জমিনে বিভিন্নভাবে রিযিকের ব্যবস্থা করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে, ক্ষেত-খামার, চাকুরি, ফল-মূল ইত্যাদির মানব জাতির রিযিকের ব্যবস্থার বিভিন্ন উপকরণ। এ সবের মাধ্যমেই মানুষ তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করে থাকে। আল্লাহ জমিন যেমন বিস্তৃত তার জমিনের কর্মেরও কোনো অভাব নেই। মানুষের ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকলে সে অবশ্যই কোনো না কোনো কর্ম খুঁজে পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَلَقَدۡ مَكَّنَّٰكُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَجَعَلۡنَا لَكُمۡ فِيهَا مَعَٰيِشَۗ قَلِيلٗا مَّا تَشۡكُرُونَ ١٠﴾ [الاعراف: ١٠]

    “আর অবশ্যই আমরা তো তোমাদেরকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তোমাদের জন্য তাতে রেখেছি বিভিন্ন ধরনের জীবনোপকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞ হও”[সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১০]

    আল্লাহর জমিনে কর্মক্ষেত্র আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। যে কোনো কর্মই হোক না কেন তা মানুষের হাতের নাগালেই। মহান আল্লাহই মানুষের জন্য জমিনে রিজিকের বিভিন্ন উপকরণ দিয়েছেন। তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য রিযিকের সব মাধ্যমকে সহজ করেছেন। যাতে মানুষ সহজেই তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। আল্লাহর দেওয়া সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে।

    আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

    ﴿هُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ ذَلُولٗا فَٱمۡشُواْ فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُواْ مِن رِّزۡقِهِۦۖ وَإِلَيۡهِ ٱلنُّشُورُ ١٥﴾ [الملك: ١٥]

    “তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিজিক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান”[সূরা আল-মুলক, আয়াত: ১৫]

    আয়াতে একটি কথা স্পষ্ট করা হয়েছে, দুনিয়াতে তুমি তোমার জীবন পরিচালনার জন্য যত কিছুই করো না কেন, এ দুনিয়াই তোমার শেষ ঠিকানা নয়। যত কামাই-রুযী করো না কেন, তা তোমার স্থায়ী কোনো সম্পদ নয়। তোমাকে অবশ্যই একদিন এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। সেদিন তোমাকে অবশ্যই তোমার কামাই-রুযী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আল্লাহর সামনে হিসাব দিতে হবে কোথায় থেকে উপার্জন করলে এবং কোথায় ব্যয় করলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «لَا تَزُولُ قَدَمُ ابْنِ آدَمَ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ،" وذكر منها "عن ماله من أين اكتسبه وفيما أنفقه »

    “কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া কোনো বান্দা পা নাড়াতে পারবে না। তার মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো, “সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে”[1]

    সুতরাং মনে রাখতে হবে, তোমার উপার্জিত সম্পদ কি বৈধ নাকি অবৈধ তার উত্তর তোমাকে অবশ্যই দিতে হবে। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর তোমাকে দুনিয়াতে থাকতেই তৈরি করতে হবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা কোনটি হালাল আর কোন হারাম তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। হালাল খেতে নির্দেশ দিয়েছেন আর হারাম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ عَلِيمٞ ٥١﴾ [المؤمنون : ٥١]

    “হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র ও ভালো বস্তু থেকে খাও এবং সৎকর্ম কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে সর্ম্পকে আমি সম্যক জ্ঞাত”[সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৫১]

    নু‘মান ইবন বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «إِنَّ الْحَلَالَ بَيِّنٌ، وَإِنَّ الْحَرَامَ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ، وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ، كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى، يُوشِكُ أَنْ يَرْتَعَ فِيهِ، أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى، أَلَا وَإِنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهُ، أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً، إِذَا صَلَحَتْ، صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ، فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ».

    “অবশ্যই কোনটি হালাল, তা স্পষ্ট এবং কোনটি হারাম তাও স্পষ্ট। আর হারাম ও হালালের মাঝে কিছু সংশয়যুক্ত বস্তু রয়েছে, যা হারাম কি হালাল, তা অধিকাংশ মানুষই জানে না। যে ব্যক্তি সংশয়যুক্ত বস্তু থেকে পরহেজ করবে, সে তার দীনদারী ও ইজ্জত সম্ভ্রমের হিফাযত করল। আর যে সন্দেহযুক্ত বিষয়গুলো হতে বেচে থাকল না, সে হারামেই পতিত হলো। যেমন, একজন রাখাল, সে সংরক্ষিত এলাকার পাশে তার পশু চরালে তাতে সমূহ সম্ভাবনা থাকে যে, তার পশুটি সংরক্ষিত এলাকা থেকে ভক্ষণ করবে। আর মনে রাখবে, প্রত্যেক রাজা-বাদশাহরই সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হলো, নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ। আরও স্মরণ করবে, মানবদেহে একটি গোশতের টুকরা রয়েছে। এ টুকরাটি যতক্ষণ ভালো থাকবে, ততক্ষণ তার সমগ্র দেহই ভালো থাকবে। আর গোশতের টুকরাটি যখন খারাপ হয়ে যাবে, তখন পুরো দেহ-ই খারাপ হয়ে যাবে। আর সেটি হলো মানবাত্মা”[2]

    এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস। এ হাদীসে হারাম হালাল সম্পর্কে একটি দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। তবে কিছু বিষয় আছে যেগুলো হারাম কি হালাল তা অধিকাংশ মানুষ জানে না। আল্লাহ তা‘আলা যাদের কুরআন ও হাদীসের গভীর ইলম দিয়েছেন তারাই জানেন। তবে এসব সংশয়যুক্ত বিষয় থেকে বেঁচে থেকে নিরেট হালাল বস্তু ভক্ষণ করার প্রতি হাদীসে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়।

    হালাল উপার্জন ছাড়া হালাল ভক্ষণ কখনোই চিন্তা করা যায় না। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন জীবিকার অন্বেষণ ছেড়ে অলস বসে না থাকে”[3] কুরআন এবং হাদীসের বিভিন্ন ভাষ্যে স্পষ্ট নির্দেশ করা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলার বন্দেগী করার পাশাপাশি নিজের জীবিকা উপার্জনের জন্যও বৈধ সব রকমের চেষ্টা করতে হবে। অব্যাহতভাবে সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। শুধু তাই নয়, বৈধ উপায়ে রুযীর প্রচেষ্টাও ইবাদত। বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «مَا أَكَلَ أَحَدٌ مِنْكُمْ طَعَامًا أَحَبَّ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ»

    “নিজ হাতে উপার্জন করে যে খাদ্য গ্রহণ করা হয়, আল্লাহ তা‘আলার নিকট তার ছেয়ে প্রিয় খাদ্য আর কিছুই নয়”[4]

    আল্লাহর এক প্রিয় নবী দাঊদ আলাইহিস সালাম এ জন্য প্রশংসিত হন যে, তিনি তার নিজের হাতে কামাই করে খেতেন। কারো কামাই খেতেন না। হাদীসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «ما أكل أحد طعامًا قطُّ خيرًا من أن يأكل من عمل يده، وإن نبي الله داود - عليه السلام - كان يأكل من عمل يده»

    “নিজ হাতে কামাই করে খাদ্য গ্রহণ করার চেয়ে উত্তম আর কোনো খাদ্য হতে পারে না। আল্লাহর নবী দাঊদ আলাইহিস সালাম তিনি হাতের কামাই ছাড়া খাদ্য গ্রহণ করতে না”[5]

    আল্লাহ তা‘আলা দাঊদ আলাইহিস সালামের জন্য লোহাকে নরম করে দেন। ফলে তিনি এ লোহা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ও উপকারী বস্তু তৈরি করে তা বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে এ বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে বলেন,

    ﴿وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ مِنَّا فَضۡلٗاۖ يَٰجِبَالُ أَوِّبِي مَعَهُۥ وَٱلطَّيۡرَۖ وَأَلَنَّا لَهُ ٱلۡحَدِيدَ ١٠ أَنِ ٱعۡمَلۡ سَٰبِغَٰتٖ وَقَدِّرۡ فِي ٱلسَّرۡدِۖ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ١١﴾ [سبا: ١٠، ١١]

    “আর অবশ্যই আমরা আমাদের পক্ষ থেকে দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আমি আদেশ করলাম) ‘হে পর্বতমালা, তোমরা তার সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর’ এবং পাখিদেরকেও (এ আদেশ দিয়েছিলাম)। আর আমি তার জন্য লোহাকেও নরম করে দিয়েছিলাম, (এ নির্দেশ দিয়ে যে,) ‘তুমি পরিপূর্ণ বর্ম তৈরি কর এবং যথার্থ পরিমাণে প্রস্তুত কর’। আর তোমরা সৎকর্ম কর। তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয় আমি তার সম্যক দ্রষ্টা”[সূরা সাবা, আয়াত: ১০, ১১]

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

    «لئن يحتطب أحدكم على ظهره، خير من أن يسأل أحدًا فيعطيه أو يمنعه»

    “তোমাদের কেউ পিঠের উপর বোঝা বহন করা, এটি তার জন্য অধিক উত্তম, মানুষের নিকট হাত পাতার তুলনায়। কেউ তাকে কিছু দিল বা না করল”[6]

    আল্লাহর অপর নবী নূহ আলাইহিস সালাম তিনিও কাট মিস্ত্রি কাজ করতেন। আল্লাহর আদেশে তিনি নিজ হাতেই কিস্তি নির্মাণ করেন, যদ্বারা মহা প্লাবন থেকে নাজাত পেলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَيَصۡنَعُ ٱلۡفُلۡكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيۡهِ مَلَأٞ مِّن قَوۡمِهِۦ سَخِرُواْ مِنۡهُۚ قَالَ إِن تَسۡخَرُواْ مِنَّا فَإِنَّا نَسۡخَرُ مِنكُمۡ كَمَا تَسۡخَرُونَ ٣٨﴾ [هود: ٣٨]

    “আর সে নৌকা তৈরি করতে লাগল এবং যখনই তার কাওমের নেতৃস্থানীয় কোনো ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যেত, তাকে নিয়ে উপহাস করত। সে বলল, ‘যদি তোমরা আমাদের নিয়ে উপহাস কর, তবে আমরাও তোমাদের নিয়ে উপহাস করব, যেমন তোমরা উপহাস করছ”[সূরা হুদ, আয়াত: ৩৮]

    আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি আমাদের আদর্শ ও অনুকরণীয় তিনি নিজেও পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতেন। হালাল রুযী উপার্জনের জন্য তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন, ব্যবসায়ী কাজে বিভিন্ন দেশে-বিদেশে সফর করতেন।

    এত বড় মর্যাদার অধিকারী হওয়া আল্লাহর প্রিয় বান্দা তথা নবীরা নিজ হাতে কামাই রুযী করা এবং কর্ম করাকে নিজেদের মর্যাদাহানি মনে করতেন না। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের উপর অর্পিত মহান দায়িত্ব-আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা-পালন সত্ত্বেও তাদের কর্ম করা থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে নি। তারা তাদের নিজ হাতে কামাই করতেন।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরাও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। হালাল উপার্জনের প্রতি তাদের আগ্রহের কোনো কমতি ছিল না। তারা কখনোই বেকার বসে থাকতেন না। অন্যের বোঝা হয়ে থাকতেন না। মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইতেন না। ভিক্ষা চাওয়া খুবই ঘৃণিত কাজ। ভিক্ষা করা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরুৎসাহিত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «لئن يأخذ أحدكم أحبله، ثم يأتي الجبل، فيأتي بحزمة من حطب على ظهره فيبيعها، فيكف الله بها وجهه - خير له من أن يسأل الناس؛ أعطوه أو منعوه»

    “তোমাদের কোনো লোক তার রশি নিয়ে বনে জঙ্গলে বা পাহাড়ে গিয়ে লাকড়ি সংগ্রহ করে, লাকড়ির বোঝা নিয়ে, নিজের প্রয়োজন মিটানো বা হালাল রুযী কামাই করার উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে বিক্রি করা মানুষের ধারে ধারে ভিক্ষা করা (কেউ তাকে দিল আবার কেউ না করল)-এর চেয়ে অধিক উত্তম”[7]

    আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের কর্মস্থলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারি। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। যা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানেই উপকারে আসবে।

    যুবক ভাইয়েরা! আপনারা ঘরে বসে না থেকে বিভিন্ন ধরনের কর্ম শিখুন। বর্তমানে কর্মের অভাব নাই তেমনিভাবে যারা কর্ম করতে পারে তাদের চাহিদারও অন্ত নেই। আপনার কর্ম দ্বারা শুধু আপনি উপকৃত হবেন তা নয়, বরং আপনার দ্বারা পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতি সবাই উপকৃত হবে।

    কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য বর্তমানে আমাদের যুবক ভাইয়েরা কর্ম-বিমুখ। তাদের মধ্যে কর্মের প্রতি অনীহা দেখা যায়। তারা সরকারি চাকুরীর পিছনে ছুটাছুটি করে। তারা মনে করে সরকারি চাকুরি করলে সম্মান বৃদ্ধি পাবে। আসল সম্মান আখিরাতের সম্মান। প্রকৃত সম্মান তো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার মধ্যেই নিহিত। আমরা যে যত বেশি মেহনত করবো, তা আমার দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে কাজে লাগবে।

    সুতরাং যুবক ভাইদের প্রতি আমাদের দাওয়াত হলো, নবী ও রাসূলদের অনুকরণে হালাল উপার্জনের দিকে মনোযোগী হন। হালাল পন্থায় কামাই রুযী করে নিজেরা স্বাবলম্বী হন এবং মানুষের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করুন। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।

    [1] তিরমিযী, হাদীস নং ২৪১৬।

    [2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৯৯।

    [3] কানজুল উম্মাল, খণ্ড ২।

    [4] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭১৮১।

    [5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৭২; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৮১৬০।

    [6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৭১।

    [7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৭৫।