বায়তুল মাকদিসে নবীদের সাক্ষাত রূহানীভাবে হয়েছে সশরীরে নয়
ক্যাটাগরিসমূহ
উৎস
Full Description
সম্পাদক: ড. আবু বকর যাকারিয়া মুহাম্মাদ
প্রশ্ন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন বায়তুল মাকদিসে নিয়ে যাওয়া হয়, তিনি সেখানে নবীদের ইমামত করেন, জিজ্ঞাসা হচ্ছে সালাতের জন্য নবীদেরকে কি তাদের কবর থেকে জীবিত করা হয়েছিল?
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ,
প্রথমত: সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মাকদিসের সফরে তার ভাই নবীদের ইমামতি করেছেন।
১. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«... وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الأَنْبِيَاءِ فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّى فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ قَائِمٌ يُصَلِّي أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ قَائِمٌ يُصَلِّى أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ يَعْنِي: نَفْسَهُ فَحَانَتِ الصَّلاَةُ فَأَمَمْتُهُمْ»
“... আমি আমাকে নবীদের জামা'আতে উপস্থিত দেখলাম। সহসা লক্ষ্য করলাম মুসা দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছেন। তিনি হলেন একজন প্রবাদতুল্য পুরুষ, কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট, যেন সে শানুআ গোত্রের কোনো পুরুষ। দেখলাম ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছেন, তার সাথে অধিক সামঞ্জস্যশীল উরওয়াহ ইবন মাসউদ সাকাফী। আরো দেখলাম ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছেন, মানুষের মাঝে তোমাদের সাথীই তার সাথে অধিক সামঞ্জস্যশীল, তিনি নিজেকে উদ্দেশ্য করেন। অতঃপর সালাতের সময় হলো, আমি তাদের ইমামতি করলাম"।[1]
২. ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«فَلَمَّا دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَسْجِدَ الْأَقْصَى قَامَ يُصَلِّي فَالْتَفَتَ ثُمَّ الْتَفَتَ فَإِذَا النَّبِيُّونَ أَجْمَعُونَ يُصَلُّونَ مَعَهُ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে আকসায় প্রবেশ করলেন, দাঁড়িয়ে সালাত পড়তে লাগলেন, তিনি দেখলেন, অতঃপর দেখলেন, নবীগণ সবাই তার পশ্চাতে সালাত পড়ছে"।[2]
দ্বিতীয়ত: আলেমগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন যে, এ সালাত আসমানে আরোহণ করার পূর্বে ছিল, না সেখান থেকে অবতরণ করার পর ছিল? প্রথম মতটি অধিক বিশুদ্ধ।
হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেন, ইয়াদ বলেন, সম্ভাবনা আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল নবীগণের সাথে বায়তুল মাকদিসে সালাত পড়েছেন, অতঃপর তাদের থেকে কতক নবী আসমানসমূহে আরোহণ করেন, যাদেরকে তিনি দেখেছেন বলা হয়েছে। আবার সম্ভাবনা আছে সালাতের ঘটনাটি ঘটে তার ও তাদের আসমান থেকে অবতরণ করার পর... বাহ্যত বুঝা যায়, তাদের সাথে তার সালাতটি ছিল ঊর্ধ্ব গমনের পূর্বে"।[3]
তৃতীয়ত: মুসলিম হিসেবে বিশ্বাস করা জরুরি যে, বারযাখী জীবন তথা কবরের জীবনের ওপর দুনিয়াবী জীবনের রীতি-নীতি প্রযোজ্য হয় না। শহীদদের বারযাখী জীবন তাদের রবের নিকট পরিপূর্ণ। অতএব, নবীদের জীবন আরো পরিপূর্ণ বলাই বাহুল্য। বারযাখী জীবনের প্রতি ঈমান রাখা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য, তবে তার প্রকৃতি ও ধরণ কী, বাস্তবরূপ কী ইত্যাদি বিষয় নির্ভুল অহী ব্যতীত ব্যাখ্যা দেওয়া বৈধ নয়।
আল্লাহ তাআলা শহীদদের জীবন সম্পর্কে বলেন:
﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ ١٦٩ فَرِحِينَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ وَيَسۡتَبۡشِرُونَ بِٱلَّذِينَ لَمۡ يَلۡحَقُواْ بِهِم مِّنۡ خَلۡفِهِمۡ أَلَّا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ١٧٠ ۞يَسۡتَبۡشِرُونَ بِنِعۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضۡلٖ وَأَنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجۡرَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١٧١﴾ [ال عمران: ١٦٩، ١٧١]
“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত, তাদেরকে রিযক দেওয়া হয়। আল্লাহ তাদের যে অনুগ্রহ করেছেন, তাতে তারা খুশি। আর তারা উৎফুল্ল হয়, পরবর্তীদের থেকে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি তাদের বিষয়ে। এ জন্য যে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হয় না। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নি'আমত ও অনুগ্রহ লাভে খুশি হয়। আর নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান নষ্ট করেন না"। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭১]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ»
“নবীগণ তাদের কবরে জীবিত, তারা সালাত পড়ে"।[4]
আউনুল মা'বুদ: (৩/২৬১) গ্রন্থে রয়েছে: “ইবন হাজার মাক্কী বলেন: “আর যেসব হাদীস থেকে নবীদের জীবন প্রমাণিত হয়, যে জীবনসহ তারা তাদের কবের ইবাদাত করেন ও সালাত আদায় করেন, যদিও ফিরিশতাদের ন্যায় তাদেরও পানাহার করার প্রয়োজন নেই, এটা এমন এক বিষয় যাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইমাম বায়হাকী এ বিষয়ে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন।
শহীদদের সম্পর্কে আল্লাহর কিতাবে স্পষ্ট বর্ণনা আছে যে, তারা জীবিত, তাদেরকে রিযক প্রদান করা হয়। এ কথাও সুবিদিত যে তাদের জীবন শরীরের সাথে সম্পৃক্ত: তাহলে নবী ও রাসূলদের জীবন কেমন হবে?" সমাপ্ত।
শাইখ আলবানী রহ. বলেন, “অতঃপর জান যে, অত্র হাদীস নবীদের যে জীবন প্রমাণ করে সেটা বারযাখী জীবন, কোনো ক্ষেত্রেই তা দুনিয়ার জীবনের মতো নয়। তাই আমাদের চিরাচরিত দুনিয়াবী জীবন দিয়ে তার উদারণসহ বর্ণনা করা, কিংবা তার পদ্ধতি ও নমুনা পেশ করার চেষ্টা করা ছাড়াই তার ওপর ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব।
এটাই সঠিক অবস্থান, যা প্রত্যেক মুমিন আঁকড়ে ধরবে: হাদিসে যেভাবে এসেছে তার উপর ঈমান রাখা, ধারণা ও গবেষণা দ্বারা তার ওপর বৃদ্ধি না করা। যেমন, কতক বিদ'আতীর দাবি গিয়ে ঠেকেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাস্তবিক জীবনের ন্যায় কবরে জীবিত! তারা বলে: তিনি খান, পান করেন ও স্ত্রী সহবাস করেন!! অথচ এটা বারযাখী জীবন, যার প্রকৃতি ও অবস্থা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না"।[5] সমাপ্ত
চতুর্থত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় ভাই অন্যান্য নবীদের সাথে শরীর ও রূহের সাথে সাক্ষাত করেছেন, না শুধু রূহানীভাবে সাথে সাক্ষাত করেছেন? আহলে-ইলমদের এ সম্পর্কে দু'টি বক্তব্য।
হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেন: “আসমানে নবীদের সাক্ষাতের বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করেছে, যেহেতু তাদের শরীর তাদের কবরে মাটির সাথে মিলিত। উত্তরে বলা হয়: তাদের রূহ তাদের শরীরের আকৃতি ধারণ করেছে অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান ও মর্যাদার জন্য সে রাতে তাদের শরীরকে উপস্থিত করা হয়েছিল"।[6] সমাপ্ত
সঠিক কথা হচ্ছে, নবীদের রূহ তাদের শরীরের আকৃতি ধারণ করেই সাক্ষাত করেছে, শুধু ঈসা আলাইহিস সালাম ব্যতীত, যেহেতু তাকে শরীর ও রূহসহ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইদরীস আলাইহিস সালামকে নিয়েও ইখতিলাফ রয়েছে, বিশুদ্ধ মতে তিনিও তার ভাই অন্যান্য নবীদের মতো, ঈসা আলাইহিস সালামের মতো নয়।
নবীদের শরীর তাদের কবরে তবে রূহ আসমানে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাতের যে সক্ষমতা আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন সেটা ছিল রূহানীভাবে, তাদের রূহ বাস্তবিক শরীরের রূপ ধারণ করেছিল। এ মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ, হাফিয ইবন রজব ও অন্যান্য মনীষীগণ।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ বলেন: “আর তার প্রত্যক্ষ করা অর্থাৎ মিরাজের রাতে মুসা আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য নবীদের আসমানে সাক্ষাৎ লাভ করা, যেমন তিনি দুনিয়ার আসমানে আদমকে, দ্বিতীয় আসমানে ইয়াহইয়াহ ও ঈসাকে, তৃতীয় আসমানে ইউসুফকে, চতুর্থ আসমানে ইদরিসকে, পঞ্চম আসমানে হারূনকে, ষষ্ঠ আসমানে মুসাকে ও সপ্তম আসমানে ইবরাহীমকে দেখেছেন অথবা তার বিপরীত (ইবরাহীমকে ষষ্ঠ ও মুসাকে সপ্তম আসমানে দেখেছেন): এ কথার অর্থ হচ্ছে তিনি তাদের রূহকে দেখেছেন শরীরের আকৃতিতে। আর কতক লোক বলেন, সম্ভবত তিনি কবরে দাফনকৃত তাদের শরীরকেই দেখেছেন, এটা কোনো কথা নয়"।[7] সমাপ্ত
হাফেয ইবন রজব হাম্বলী রহ. বলেন, “আর তিনি আসমানে যেসব নবীদের দেখেছেন সেটা তিনি দেখেছেন তাদেরকে রূহানীভাবে, একমাত্র ঈসা আলাইহিস সালাম ব্যতীত। কারণ, তাকে শরীরসহ আসমানে উঠানো হয়েছে"।[8]
এ মতকেই আবুল ওফা ইবন আকীল প্রাধান্য দিয়েছেন, যেমন হাফেয ইবন হাজার বর্ণনা করেছেন। স্পষ্টত বুঝা যায় এটা হাফেয ইবন হাজারের নিজের কথা। তিনি তার সেসব শাইখদের প্রতিবাদ করেছেন, যারা দ্বিতীয় মতকে গ্রহণ করেছে। যেমন, তিনি বলেন, ইসরার রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অন্যান্য নবীদের সাক্ষাৎ সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাতের জন্য তাদেরকে কি শরীরসহ হাযির করা হয়েছিল অথবা তাদের শুধু রূহ সেখানে অবস্থান করছিল যেখানে তাদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাক্ষাৎ করেছেন, রূহগুলো তাদের শরীরের আকৃতির রূপ ধারণ করেছিল। যেমন, আবুল ওফা ইবন আকীল নিশ্চিত ধারণা পোষণ করেন?
প্রথম মতটি আমাদের কতক শাইখ গ্রহণ করেছেন। তারা সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«رأيت موسى ليلة أسري بي قائماً يصلِّي في قبره»
“আমার ইসরার রাতে দেখি মুসা তার কবরে দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছেন"। এ হাদীস প্রমাণ করে মুসা আলাইহিস সালামের কবরের পাশ দিয়ে তার ইসরা হয়েছিল।
আমি (ইবন হাজার) বলি: এটা জরুরি নয়, বরং এটাও সম্ভব যে মাটিতে থাকা মূসার শরীরের সাথে রূহের এক বিশেষ সম্পর্ক বিদ্যমান, যে কারণে সে সালাত আদায় করতে সক্ষম, যদিও তার রূহ আসমানে"।[9]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. স্পষ্ট করেন: মুসা কিংবা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয় এক জায়গা থেকে অপর জায়গায় যাওয়া, বরং এটা রূহের পক্ষেই সম্ভব। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসা আলাইহিস সালামকে তার কবরে সালাত পড়তে দেখেছেন, অতঃপর তাকে বায়তুল মাকদিসে দেখেছেন, অতঃপর তাকে ষষ্ঠ আসমানে দেখেন। এটা মুসার রূহের বিচরণ বৈ শরীর বিচরণ নয়"।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: “এ কথা বিদিত যে, ঈসা ও ইদরীস আলাইহিমাস সালাম ব্যতীত নবীদের শরীর তাদের কবরে বিদ্যমান। মুসা আলাইহিস সালাম তার কবরে দাঁড়িয়ে সালাত পড়তে ছিলেন, অতঃপর ক্ষণিকের মধ্যেই তাকে ষষ্ঠ আসমানে দেখেন। এ অবস্থা কখনো শরীরের হতে পারে না"।[10] সমাপ্ত
শাইখ সালেহ আলে-শাইখ বলেন: দু'টি মত থেকে আমার নিকট স্পষ্ট যে, স্থানান্তর হওয়া রূহের কাজ ছিল শরীরের নয়, একমাত্র ঈসা আলাইহিস সালাম ব্যতীত। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য নবীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন ও তাদের সবাইকে নিয়ে সালাত পড়েন। এ ক্ষেত্রে হয়তো বলা হবে: তিনি তাদের শরীরসহ সালাত পড়েছেন, তাদের শরীরকে তার জন্য কবর থেকে একত্র করা হয়, অতঃপর তাদের শরীর কবরে ফেরত দেওয়া হয় এবং রূহসমূহ আসমানে চলে যায়, অথবা বলা হবে যে এটা শুধু রূহ দ্বারাই ছিল। কারণ, তিনি তাদের রূহের সাথে আসমানে সাক্ষাত করেছেন।
এ কথা বিদিত যে, একমাত্র ঈসা আলাইহিস সালামকে জীবিতাবস্থায় আসমানে উঠানো হয়। পক্ষান্তরে অন্যান্য নবীদেরকে তাদের শরীরসহ আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং মাটিতে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই, এটা এমন এক বক্তব্য যার পক্ষে কোনো দলীল নেই; বরং তার বিপক্ষে অনেক দলিল রয়েছে যে, নবীগণ কিয়ামত পর্যন্ত তাদের কবরেই থাকবেন। তারা মারা গেছেন এবং তাদের শরীর মাটিতে দাফন করা হয়েছে অর্থ তাদের শরীর মাটিতেই বিদ্যমান। এটাই মূল কথা।
আর তার বিপরীত মন্তব্যকারীরা বলেছে: এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাস, তার জন্য অন্যান্য নবীদেরকে সশরীরে উঠানো হয়েছে, ফলে তিনি তাদের সাথে সালাত পড়েন এবং আসমানে তাদের সাথে সাক্ষাত করেন। এ কথার পশ্চাতে অবশ্যই দলীল প্রয়োজন। আমরা পূর্বে বলেছি: চিন্তা করলে দেখা যায় দলীল তার উল্টোটাতেই বেশি। মোদ্দাকথা: পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আলেমগণ এ দু'টি মত পোষণ করেন"।[11] আল্লাহ ভালো জানেন।
[1] মুসলিম, হাদীস নং ১৭২ বা ২৫৬
[2] আহমদ: (৪/১৬৭), এ হাদীসের সনদে আপত্তি রয়েছে, তবে পূর্বের হাদিসটি এটাকে সমর্থন করে।
[3] ফাতহুল বারি: (৭/২০৯)
[4] আবু ইয়া'লা তার 'মুসনাদ': (হাদীস নং ৩৪২৫) গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসনাদের গবেষকগণ হাদীসটি সহীহ বলেছেন। অনুরূপ শাইখ আলবানী 'সহীহ হাদীস সমগ্রে': (হাদীস নং ৬২১) অত্র হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[5] সহীহ হাদীস সমগ্র: (২/১২০)
[6] ফাতহুল বারি: (৭/২১০)
[7] মাজমুউল ফাতাওয়া: (৪/৩২৮)
[8] ফাতহুল বারি: (২/১১৩)
[9] ফাতহুল বারি: (৭/২১২)
[10] মাজমুউল ফাতাওয়া: (৫/৫২৬, ৫৩৭)
[11] শারহুল আকীদা আত-তাহাবিয়্যাহ (ক্যাসেট নং ১৪)