×
বাবার নিকট সন্তানই সবচেয়ে দামি, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। অতএব, স্নেহময় বাবা যখন সন্তানকে উপদেশ দেয়, চূড়ান্ত সত্য কথাই বলে পরিপূর্ণ নিষ্ঠার সাথে, যা তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিংড়ানো। এমন এক স্নেহময় পিতা মিসরের আলী আত-তানতাওয়ী। তিনি নিজের ছেলে-মেয়ের উদ্দেশ্যে দু’টি উপদেশ প্রদান করেন: ‘হে আমার মেয়ে’ ও ‘হে আমার ছেলে’ নামক দু’টি প্রবন্ধে, যেন তারা শয়তানি ফাঁদে প্রতারিত না হয়, নিজের করণীয় ও সফলতা সম্পর্কে সজাগ থাকে এবং অপরের জন্য হয় আলোকবর্তিকা। এখানে ‘হে আমার মেয়ে’ প্রবন্ধটি অনুবাদ করে পেশ করা হয়েছে।

    হে আমার মেয়ে

    আলী আত-তানতাওয়ী আল-মিসরী

    অনুবাদক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    بنتي

    ]باللغة البنغالية[

    علي الطنطاوي المصري

    ترجمة: ثناء الله نذير أحمد

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    সংক্ষিপ্ত বর্ণনা.............

    বাবার নিকট সন্তানই সবচেয়ে দামী, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। অতএব, স্নেহময় বাবা যখন সন্তানকে উপদেশ দেয়, চূড়ান্ত সত্য কথাই বলে পরিপূর্ণ নিষ্ঠার সাথে, যা তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিংড়ানো। এমন এক স্নেহময় পিতা মিসরের আলী আত-তানতাওয়ী। তিনি নিজের ছেলে-মেয়ের উদ্দেশ্যে দু’টি উপদেশ প্রদান করেন: ‘হে আমার মেয়ে’ ও ‘হে আমার ছেলে’ নামক দু’টি প্রবন্ধে, যেন তারা শয়তানি ফাঁদে প্রতারিত না হয়, নিজের করণীয় ও সফলতা সম্পর্কে সজাগ থাকে এবং অপরের জন্য হয় আলোকবর্তিকা। এখানে ‘হে আমার মেয়ে’ প্রবন্ধটি অনুবাদ করে পেশ করা হয়েছে।

    অনুবাদকের কথা

    আল-হামদুলিল্লাহ ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ।

    মানুষ যদি তার জরুরি করণীয়গুলোর ফর্দ তৈরি করে, অনেক লম্বা হবে; কিন্তু সে যদি গুরুত্ব ও প্রথম করণীয় হিসেবে তার দায়িত্বগুলো ক্রম-বিন্যাস করে, তাহলে শীর্ষেই থাকবে সন্তান। আপন সন্তান সম্পদের চাইতেও দামী, বরং নিজের আরাম, ইচ্ছা, প্রবৃত্তি এমন কি দুনিয়ার সব চাওয়া-পাওয়া থেকেও দামী। প্রিয় সন্তান অসুস্থ হলে রাত জাগে, সুস্থতার জন্য এখানে-সেখানে তদবীর করে, সময় ও সম্পদ ব্যয় করে অকাতরে, কখনো ঋণ করে -এসব প্রমাণ করে যে, বাবার নিকট সন্তানই সবচেয়ে দামী, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। অতএব, স্নেহময় বাবা যখন সন্তানকে উপদেশ দেয়, চূড়ান্ত সত্য কথাই বলে পরিপূর্ণ নিষ্ঠার সাথে, যা তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিংড়ানো। এমন এক স্নেহময় পিতা মিসরের আলী আত-তানতাওয়ী। তিনি নিজের ছেলে-মেয়ের উদ্দেশ্যে দু’টি উপদেশ প্রদান করেন: ‘হে আমার মেয়ে’ ও ‘হে আমার ছেলে’ নামক দু’টি প্রবন্ধে, যেন তারা শয়তানি ফাঁদে প্রতারিত না হয়, নিজের করণীয় ও সফলতা সম্পর্কে সজাগ থাকে এবং অপরের জন্য হয় আলোকবর্তিকা। এখানে আমরা ‘হে আমার মেয়ে’ প্রবন্ধটি অনুবাদ করে পেশ করছি, আশা করছি প্রত্যেক বাবা মা প্রকৃত সত্য জেনে সন্তানদের কল্যাণে ব্রতী হবেন এবং সন্তানরাও বাবা-মা ও কল্যাণকামীদের উপদেশ-অভিজ্ঞতা ও হুশিয়ারি থেকে নিজের জীবনকে সার্থক করার প্রয়াস গ্রহণ করবে, আশ্রয় দিবে না কোনো প্রকার প্রবৃত্তি, প্রলোভন ও ক্ষণিক সুখ-ভোগকে। আল্লাহ সহায়।

    সানাউল্লাহ ইবন নজির আহমদ

    ভূমিকা

    بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

    সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাত বর্ষিত হোক তাঁর রাসুলের ওপর।

    আমি গত ষাট বছর যাবত বয়ান-বক্তৃতা করছি ও লিখছি। আমার কোনো লেখার ভাগ্যে এতটা প্রসার ও প্রসিদ্ধি জোটেনি, যতটা প্রসার ও প্রসিদ্ধি জোটেছে এ দু’টি[1] প্রবন্ধের, বিশেষভাবে ‘হে আমার মেয়ে’ প্রবন্ধটির। আমি যখন পঞ্চাশ বছরে পদার্পণ করছিলাম তখন প্রবন্ধটি লিখেছি, আজ আমি আশি বছরে পদার্পণ করছি। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি তিনি আমাকে সারাক্ষণ সুস্থতা ও সুন্দর পরিসমাপ্তি দান করুন। হে আল্লাহ, সে পাঠককেও উত্তম প্রতিদান দিন যে দু’হাত তুলে এবং বলে: আমীন।

    যতটুকুন আমি জানি, ‘হে আমার মেয়ে’ প্রবন্ধটি চৌষট্টি বার প্রকাশিত হয়েছে। হয়তো আরও প্রকাশিত হয়েছে যা আমার জানা নেই। প্রবন্ধটি প্রকাশ করার অনুমতি আমি তাকেও দিয়েছি যে, তা বিনামূল্যে বিতরণ করতে চায় বা সামান্য লাভে বিক্রি করার ইচ্ছা করে।

    বর্তমান আমরা দু’দিক থেকে হামলার শিকার:

    ১. দীনের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে অশিক্ষিত ও কম শিক্ষিত মানুষকে দীন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার পায়তারা।

    ২. নফস ও প্রবৃত্তিকে উসকে দিয়ে মুসলিম যুবক-যুবতীদেরকে বিপথগামী করার ষড়যন্ত্র। প্রথমটি বেশি ভয়াবহ ও অধিক ক্ষতিকর, তবে খুব ধীর গতিতে তা অগ্রসর হয়। কারণ, দীন সম্পর্কে কোনো সন্দেহ পেশ করা হলে সবাই একবাক্যে তা গ্রহণ করবে -এরূপ নয়। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় হামলা তার বিপরীত, প্রবৃত্তি যদি যুবকদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকে তাতে তারা সাড়া দেয় খুব দ্রুত। এ রোগটি অধিক প্রসারমাণ ও দ্রুত ছোঁয়াচে। যদিও রোগটি ব্যক্তিকে অসুস্থ করে কিন্তু নিঃশেষ করে না, কষ্ট দেয় কিন্তু মৃত্যু ঘটায় না। প্রথম রোগটি কুফুরী আর দ্বিতীয় রোগটি পাপ ও অবাধ্যতার দিকে নিয়ে যায়।

    ছোট্ট এ বইখানা লেখার পরও আমি বহু লিখেছি, একাধিক বয়ান-বক্তৃতা করেছি, টকশোতে অংশ নিয়েছি এবং অনেক আলোচনা করেছি, কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহে প্রবন্ধটি আজও পাঠক ও পাঠিকার অন্তরকে আকর্ষণ করছে। আল্লাহর নিকট দো‘আ করছি, তিনি বইটি দ্বারা উপকৃত করুন এবং তার সাওয়াব দান করুন আমাকে এবং আমার সন্তান ও জামাতা মুহাম্মাদ নাদির হাতাহাতকে যে আজ তা প্রকাশ করতে যাচ্ছে।

    এ লিখা ও তার অনুরূপ (হে আমার ছেলে) দ্বিতীয় লিখায় একটি হরফও পরিবর্তন করি নি, পরিবর্তন করব কীভাবে যা পাঠ করেছে শাম, জর্ডান, মিসর ও ইরাকের অসংখ্য মানুষ। যতটুকুন জানি বহু প্রসিদ্ধ ও অধিক কথিত ভাষায় তার অনুবাদ হয়েছে। যেমন, উর্দু, ইংরেজি প্রভৃতি ভাষা। পাঠক প্রিয়তা ও অধিক পড়ার কারণে প্রবন্ধ দু’টি মূলত পাঠকদের মালিকানায় চলে গেছে, অতএব আমি তাতে পরিবর্তন করব কীভাবে?! আমি এ কথাগুলো বলছি ও আল্লাহর নিকট ইস্তেগফার করছি।

    আলী আত-তানতাওয়ী

    মক্কা আল-মুকাররামাহ।

    ১২/০৩/১৪০৬ হিজরী

    হে আমার মেয়ে, আজ আমি পঞ্চাশের কোঠায় পা রাখা আধাবয়সী প্রৌঢ়। যৌবন বিদায় নিয়েছে, সাথে বিদায় দিয়েছে তার স্বপ্ন ও আকাঙ্খাকে। অতঃপর আমি বিভিন্ন দেশ ঘুরেছি, মানুষের সাথে সাক্ষাত করেছি এবং দুনিয়াকে পরখ করেছি গভীরভাবে। অতএব, তুমি আমার বয়স ও অভিজ্ঞতা থেকে খাঁটি সুস্পষ্ট কিছু কথা শ্রবণ কর, যা তুমি আমি ব্যতীত কারো থেকে শুনবে না।

    উত্তম চরিত্র প্রতিষ্ঠা, ফ্যাসাদ দূর করা ও প্রবৃত্তিকে রুখে দেওয়ার জন্য আমরা লিখেছি, অনেক আহ্বান করেছি যে, আমাদের কলম ক্লান্ত হয়ে পড়ছে, বিরক্তি বোধ করছে আমাদের মুখ, অথচ আমরা কিছুই করি নি। কোনো অপরাধ দূর করি নি; বরং অপরাধ বেড়ে চলছে, ফ্যাসাদ প্রসারিত হচ্ছে, বেহায়াপনা, অনাবৃতি ও নগ্নতার জোয়ার বইছে এবং দিনদিন তার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। একদেশ থেকে অপর দেশে বিস্তার ঘটছে, এমন কি একটি ইসলামি দেশও তা থেকে মুক্ত নয়, আমি যতটুকু জানি। সিরিয়া রক্ষা পায় নি, যেখানে বোরকার ব্যাপক প্রচলন ছিল, সম্মান সুরক্ষা ও পর্দার ক্ষেত্রে ছিল এক ধরনের কড়াকড়ি, সেখানের নারীরাও নগ্ন বিবস্ত্র ও হাত-গলা বের করে বাইরে বের হচ্ছে...

    আমরা সফল হয় নি, মনে হচ্ছে না আমরা সফল হবো, তুমি কি জান কেন? কারণ, আমরা আজ পর্যন্ত সংস্কারের দরজায় পৌঁছাতে পারি নি এবং তার রাস্তাও জানতে পারি নি। বস্তুতঃ সংস্কারের দরজা তোমার সামনে হে আমার মেয়ে, তার চাবিও তোমার হাতে, যদি তুমি সেটা বিশ্বাস কর এবং তাতে প্রবেশ করার ইচ্ছা কর, তবেই অবস্থার পরিবর্তন হবে।

    এ কথা ঠিক যে, পাপের রাস্তায় পুরুষরাই প্রথম পা বাড়ায়, নারী সেটা প্রথম করে না, কিন্তু তোমার সন্তুষ্টি না হলে পুরুষ সামনে অগ্রসর হয় না, তোমার বিনয়াবনতা না হলে সে দৃঢ়ভাবে এগোয় না, তুমি তাকে খুলে দিয়েছ আর সে প্রবেশ করেছে, যেন তুমি চোরকে বলছ: প্রবেশ কর... যখন চোর তোমাকে চুরি করল, তুমি চিৎকার করছ: হে লোক সকল, আমাকে রক্ষা কর, আমাকে চুরি করা হয়েছে... যদি তুমি জান পুরুষরা সবাই নেকড়ে আর তুমি ভেড়ী, তাহলে অবশ্যই নেকড়ে থেকে ভেড়ীর পলায়ন করার ন্যায় তুমি পলায়ন করতে। যদি তুমি জ্ঞান করতে তারা সবাই ডাকাত, তাহলে অবশ্যই চোর-ডাকাত থেকে কৃপণের সুরক্ষার ন্যায় তুমি সুরক্ষা গ্রহণ করতে।

    নেকড়ে সাধারণত ভেড়ীর গোশত ছাড়া কিছুই চায় না, কিন্তু পুরুষ তোমার থেকে যা চায় সেটা ভেড়ীর নিকট গোশতের চেয়েও বেশি মূল্যবান তোমার কাছে। ভেড়ীর মৃত্যুর চেয়েও সেটা তোমার জন্য বেশি ক্ষতিকর। তোমার কাছে তাই চায়, যা তোমার নিকট সবচেয়ে দামি: তোমার পবিত্রতা, যার কারণে তুমি সম্মানিত, যা তোমার গর্ব এবং যা নিয়েই তুমি বেঁচে থাক। বস্তুতঃ সে নারীর জীবন, যার পবিত্রতা হরণ করে কলঙ্কিত করেছে কোনো পুরুষ, সে ভেড়ীর মৃত্যু থেকে শতভাগ বেশি কঠিন, যার গোশত খেয়ে ধ্বংস করেছে কোনো নেকড়ে... এটাই বাস্তবতা, কোনো সন্দেহ নেই, কোনো যুবক যখন কোনো নারীকে দেখে, অবশ্যই সে তাকে কাপড় খুলে নগ্ন করে কল্পনার জগতে, অতঃপর বস্ত্র-হীনভাবে তাকে কল্পনা করে।

    এরূপই, আল্লাহর শপথ! তোমার জন্য আমি দ্বিতীয়বার শপথ করছি! কতক পুরুষ যা বলে সেটা বিশ্বাস করে না। যেমন, বলে: তারা মেয়ের চরিত্র ও ভদ্রতা ব্যতীত কিছুই দেখে না, তারা মেয়ের সাথে বন্ধুর মতো কথা বলে এবং তাকে বন্ধুর মতো ভালোবাসে। মিথ্যা কথা! আল্লাহর শপথ এসব মিথ্যা কথা। যদি তুমি শ্রবণ কর যুবকরা তাদের একাকী আসরে কী বলে, অবশ্যই অদ্ভুত ও ভয়ানক কিছু শ্রবণ করবে! যদি কোনো যুবক তোমাকে হাসি দেয়, তোমার সাথে নরম বাক্য ব্যয় করে বা তোমাকে কোনো সেবা প্রদান করে, অবশ্যই সেটা করে সে স্বীয় প্রবৃত্তির স্বার্থ পূরণ করার ভূমিকাস্বরূপ অথবা সে নিজেকে প্রবোধ দেয় এটা ভূমিকার ভূমিকা।

    অতঃপর কী? হে মেয়ে, বল কি? একটু চিন্তা কর।

    তোমরা দু’জনে ক্ষণিক আনন্দে অংশ গ্রহণ করবে, অতঃপর সে তোমাকে ভুলে যাবে আর তুমি তার যন্ত্রণা গলাধঃকরণ করবে আজীবন। সে পুনরায় অপর অসতর্ক নারীকে অন্বেষণ করবে, তার ইজ্জত চুরি করার উদ্দেশ্যে। আর তুমি ন্যুব্জে পড়বে তোমার পেটে নিক্ষেপ করা তার বীর্য উৎপাদিত সন্তান নিয়ে! তোমার মাথায় চিন্তা, তোমার কপালে কলঙ্কের ছাপ, এ বে-ইনসাফ সমাজ তাকে ক্ষমা করবে এবং বলবে: যুবকটি বিপথগামী ছিল, তাওবা করে শুধরে গেছে; কিন্তু তুমি লাঞ্ছনা ও অপমানের নীচে থাকবে সারা-জীবন, সমাজ তোমাকে ক্ষমা করবে না।

    আর পুরুষের সাক্ষাতকালে যদি তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াও, তোমার চোখ তার থেকে ফিরিয়ে নাও এবং তোমার অনীহা ও অনমনীয়তা তাকে প্রদর্শন করাও, তুমি ঠিক কাজটি করবে। তোমার থেকে এ বাধা যদি তাকে বিরত না করে; বরং মুখ বা হাত দিয়ে সে তোমার অসম্মান করে, তুমি নিজের পা থেকে জুতা খুল এবং তার মাথায় মেরে দাও। যদি তুমি এরূপ কর দেখবে রাস্তা দিয়ে যে যাচ্ছে সবাই তোমার সাহায্যকারী, পরবর্তীতে কোনো পাপী এরূপ করার সাহস করবে না। আর যদি সে ভালো হয় তাওবা করে তোমার নিকট আসবে হালাল সম্পর্কের আর্জি নিয়ে এবং তোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিবে তোমার পরিবারের নিকট।

    মেয়ে যত পদ-পদবী, অর্থ-সম্পদ, প্রসিদ্ধি ও সুখ্যাতি লাভ করুক, বিয়ে ব্যতীত কিছুতেই সে নিজের হক ও জীবনের সার্থকতা পাবে না। এজন্য তাকে নেককার স্ত্রী বা সম্মানিত গৃহিণী হতেই হবে; হোক সে রাণী, রাজকুমারী, খ্যাতি ও ক্যামেরার আকর্ষণ হলিউড নায়িকা, যা অনেক নারীকে প্রতারিত করে, বিয়ে ব্যতীত তাদের কারোরই প্রশান্তি নেই। আমি মিসর ও সিরিয়ার দু’জন প্রথিতযশা সাহিত্যিক নারীকে জানি, যারা সম্পদ ও সম্মান অর্জন করেছে অনেক, কিন্তু স্বামী অর্জন করে নি, ফলে বর্তমানে তারা উভয়ে মস্তিষ্ক বিকৃত পাগল, তাদের নাম সম্পর্কে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস কর না, কারণ তারা অনেক প্রসিদ্ধ!!!

    বিয়ে নারীর অভীষ্ট লক্ষ্য, যদিও সে পার্লামেন্টের সদস্য ও সম্রাজ্ঞী বনে যায়। সম্মানহীন পাপী নারীকে কেউ বিয়ে করে না; এমন কি খোদ প্রতারণাকারীও তাকে বিয়ে করে না, যাকে সে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারিত করেছে। পুরুষ পতিতা নারী থেকে প্রস্থান করে। আর যখন বিয়ের ইচ্ছা করে তাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় কোনো ভদ্র নারীকে গ্রহণ করে। কারণ, তার ঘরের গৃহিণী ও তার মেয়ের মা হবে কোনো পতিতা সেটা সে চায় না!

    পুরুষ যদি বদ ও পাপী হয় এবং বিনোদনের বাজারে কোনো নারীকে না পায় যে তার পায়ের নিচে নিজের সম্মান লুটাবে ও তার হাতের খেলনায় পরিণত হবে, যদি সে পাপী বা অসতর্ক নারী না পায় যে তার সাথে শয়তান ও বানরের প্রথা মোতাবেক বিয়েতে রাজি হবে, তখন সে অবশ্যই এমন নারী অন্বেষণ করবে যে তার সাথে ইসলামের সুন্নত মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে।

    হে মেয়েরা, তোমাদের বিয়ের বাজার মন্দা পড়ে গেছে, যদি তোমাদের মাঝে পাপী নারীরা না হত বিয়ের বাজার মন্দা হত না এবং পাপের বাজারও গরম হত না...। অতএব, কেন তোমরা উদ্যোগ গ্রহণ কর না, ভদ্র মেয়েরা কেন এসব নষ্টামির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় না? আমাদের তুলনায় তোমরাই তোমাদের বোনদের বেশি হকদার এবং তাদের ওপর অধিক ক্রিয়াশীল। কারণ, তোমরা নারীদের ভাষা বুঝ ও তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম, যেহেতু ফ্যাসাদের স্বীকার তোমরাই, অর্থাৎ ভদ্র, নিরাপদ, পবিত্রা ও দীনদার নারীগণ।

    সিরিয়ার প্রত্যেক ঘরেই বিয়ে-বয়সী নারীর উপস্থিতি বিদ্যমান, অথচ তারা স্বামী পাচ্ছে না। কারণ, যুবকরা মেয়ে-বন্ধুদের থেকে যা পায় তা তাদেরকে হালাল বিয়ে থেকে বিমুখ করেছে, হয়তো সিরিয়া ব্যতীত অন্যান্য দেশেও এরূপ আছে...

    অতএব, তোমাদের অবশ্যই উচিত প্রচুর লেখা-লিখি করা, হোক সে সাহিত্যিক, শিক্ষিকা, কলেজের প্রফেসর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিপথগামীদের খারাপ পথ থেকে ভালো পথে নিয়ে আসার জন্য তাদেরকে আল্লাহর ভীতি প্রদর্শন কর, যদি তারা আল্লাহকে ভয় না করে রোগের (এইডসের) বিভীষিকার কথা বল, যদি তারা তাতেও সতর্ক না হয়, বস্তুনিষ্ঠ ভাষায় তাদের সম্বোধন কর এবং বল: হে তরুণী, হে সুন্দরী, তোমাদের সৌন্দর্য ও তারুণ্যের কারণেই যুবকরা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট, তোমাদের চারপাশে ঘুরে। প্রশ্ন হচ্ছে, তোমাদের কৈশোর ও সৌন্দর্য কি স্থায়ী? বল, এ দুনিয়ায় কি স্থায়ী যে তরুণীর তারুণ্য ও সুন্দরীর সৌন্দর্য স্থায়ী হবে? কেমন হবে, যখন তোমরা বুড়ো হবে ও শরীর বেঁকে-ঝুঁকে পড়বে, চেহারার চামড়ায় ভাঁজ পড়বে?! কে তোমাদের দেখা-শুনা করবে? কে তোমাদের খোজ-খবর নিবে? তুমি জান বৃদ্ধাকে কে যত্ন করে, তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করে কে? তার সন্তান ও মেয়েরা, নাতী ও নাতনীরা। বস্তুত একজন নারী স্বীয় নাতী-নাতনী নামক প্রজাদের মাঝে প্রকৃত রাণীতে পরিণত ও মর্যাদার সিংহাসনে সমাসীন হয়, যখন অপর নারী (যার সন্তান-সন্ততি নেই) কিরূপ জীবন অতিবাহিত করে তোমরাই সেটা ভালো জান...![2]

    ক্ষণস্থায়ী এ স্বাদ ও ভোগ কি সেই দুঃখের সমান? তুমি কি উন্মাদনার যৌবনের বিনিময় করুণ বার্ধক্য ক্রয় করত চাও?

    এ জাতীয় কথা কেউ তোমাদের স্মরণ করিয়ে দিবে তার প্রয়োজন নেই, তোমাদের বিপথগামী বোনদের সৎ পথে আনার পদ্ধতির অভাব নেই, যদি তাদেরকে বিপদ থেকে ফিরাতে অপারগ হও ভালোদেরকে তাদের ব্যাধি থেকে রক্ষা কর এবং অসচেতন উঠতি বয়সী মেয়েদের হাত ধর, যেন তারা নষ্টদের পথ অনুসরণ না করে।

    আমি তোমার নিকট আকাশ-চুম্বী আশা করছি না যে, মুহূর্তে বিপথগামী মুসলিম নারীদেরকে সত্যিকার মুসলিম নারী হিসেবে গড়ে তোল। না, আমি অবশ্যই জানি মুহূর্তে সংস্কারের বিস্ফুরণ ঘটানো সম্ভব নয়[3], তবে তোমরা ধাপেধাপে কল্যাণের দিকে অগ্রসর হও, যেভাবে তোমরা পা পা করে বিপদের দিকে এগিয়েছ: তোমরা কাপড় এক এক চুল ছোট করেছ, ধীরে ধীরে মোটা হিজাব থেকে পাতলা হিজাব গ্রহণ করেছ এবং এ পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় বৈর্য্যধারণ করেছ, কিন্তু একজন ভদ্র লোক সেটা টের পায় না। অশ্লীল ম্যাগাজিনগুলো তার প্রতি উৎসাহ দেয়, পাপীরা তাতে খুশি হয়, অবশেষে আমরা এমন অবস্থায় পৌঁছেছি যা ইসলাম পছন্দ করে না, খৃস্টানরাও তা পছন্দ করে না, এমনকি অগ্নিপূজকরাও এরূপ করে নি, ইতিহাসে আমরা যাদের সম্পর্কে পড়েছি, এমন অবস্থা, যা পশুদের নিকটও গ্রহণযোগ্য নয়।

    দু’টি মোরগ যখন একটি মুরগিকে কেন্দ্র করে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, উভয়ে তারা মুরগিটি আয়ত্বে নিতে চায় এবং অপর মোরগকে তার থেকে প্রতিহত করে। একসঙ্গে দু’টি মোরগ একটি মুরগি ভোগ করে না কিংবা নিজের আয়ত্বে থাকা মুরগি অপর মোরগের নিকট সোপর্দ করে না, অথচ আলেক্সান্দ্রিয়া ও বৈরুতের সমুদ্র তীরে অনেক মুসলিম পুরুষ রয়েছে, তারা বহিরাগতদের থেকে মুসলিম নারীদের সুরক্ষা দেয় না। বহিরাগতরা শুধু তাদের চেহারা, হাত ও গলদেশ দেখছে না, বরং তাদের প্রত্যেক অঙ্গই দেখছে!! সব কিছুই দেখছে তবে সে অঙ্গ ব্যতীত যা ঢেকে রাখাই সৌন্দর্য, খুলে রাখা ঘেন্নার বিষয়, আর তা হচ্ছে দু’টি গুপ্তাঙ্গ ও দুই স্তনের বোটা[4]...

    বিভিন্ন সংঘ ও উন্নত নাইট ক্লাবগুলোয় মুসলিম পুরুষরা তাদের মুসলিম নারীদের এগিয়ে দেয় বহিরাগতদের নিকট, যেন তাদের সাথে নাচ করে, তাদের জড়িয়ে ধরে এমনকি বুকের সাথে বুক, পেটের সাথে পেট ও গালের সাথে মুখ মেলায়, আর হাত থাকে শরীরের উপর প্রসারিত, কেউ তাতে বাধ সাধে না। আর বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে নগ্ন খোলা মুসলিম যুবতীদের সাথে উঠবস করে মুসলিম যুবকরা, কোনো মুসলিম বাবা কিংবা কোনো মুসলিম মা তা নিষেধ করে না!!!

    এ জাতীয় ঘটনা অনেক আছে, যা এক লম্ফ বা এক দিনে দূর করা সম্ভব নয়; বরং আমরা ধীরে ধীরে সত্যের রাস্তায় ফিরে যাব, যেখান থেকে আমরা বাতিল পথে পা ফেলেছি, যদিও সেটা অনেক লম্বা পথ অনুভূত হচ্ছে। বস্তুত যার সামনে লম্বা পথের বিকল্প নেই, সে যদি তাতে চলা আরম্ভ না করে কখনো মঞ্জিলে পৌঁছতে পারবে না। আমরা নারী-পুরুষের সহাবস্থানের সাথে বিদ্রোহ করা আরম্ভ করি, পর্দাসহ সহাবস্থানকে সমাজ থেকে দূর করি, তবে মুখ খোলার কারণে যদি মেয়ের ক্ষতি ও তার পবিত্রতার ওপর সীমালঙ্ঘনের আশঙ্কা না হয় তাহলে বিষয়টা সহনীয়[5]; বরং এটা অনেক সহনীয় বর্তমান সিরিয়ায় আমরা যাকে হিজাব বলি তার চেয়ে। সিরিয়ার হিজাব তো এখন শুধু লজ্জা ঢাকা, সৌন্দর্যকে পোশাক পড়িয়ে শ্রী-বৃদ্ধি করা এবং দর্শককে প্রলুব্ধ করা মাত্র।

    পর্দা না করা যদি মুখেই সীমাবদ্ধ থাকে, যেরূপ আল্লাহ (সাজ-সজ্জাহীন) চেহারা সৃষ্টি করেছেন, তাহলে সেটা সবার দৃষ্টিতে হারাম নয়, যদিও আমরা ঢেকে রাখাই উত্তম জানি, তবে ফিতনার আশঙ্কা হলে সবার নিকট ঢেকে রাখা ওয়াজিব। তবে নারী-পুরুষের সহাবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়, সেটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয় যেভাবেই হোক। চেহারা খোলার অর্থ এটা নয় যে, যুবতী নারীর পরপুরুষের সাথে উঠবস করা, কিংবা স্বামীর বন্ধুকে পর্দাহীন স্ত্রীর নিজের ঘরে অভ্যর্থনা জানানো, কিংবা ভিড় বা রাস্তায় দেখা হলে তাকে সালাম আদান-প্রদান করা, বা রাস্তায় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে বন্ধুর সাথে মেয়ের মুসাফা (করমর্দন) করা বা ছেলে-মেয়ের পরস্পর আলাপ-চারিতা অব্যাহত রাখা বা একসাথে ছেলে-মেয়ের রাস্তায় হাঁটা এবং ছেলে-মেয়ের একসাথে পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কঠিনভাবে নারী মাসুল দিবে যদি ভুলে যায় আল্লাহ তাকে নারী এবং বিপরীত লিঙ্গকে পুরুষ বানিয়েছেন এবং সৃষ্টি করেছেন একের প্রতি অপরের প্রবল আকর্ষণ। এ আকর্ষণ নারী কিংবা পুরুষ কেউ বিলুপ্ত করতে পারবে না, কারণ এটা সৃষ্টি, আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন আনা, কিংবা নারী-পুরুষ উভয়কে সমান[6] করা কিংবা তাদের অন্তর থেকে এ আকর্ষণকে দূর করা দুনিয়ার সবাই মিলে চেষ্টা করলেও সম্ভব নয়।

    এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সভ্যতার দোহাই দিয়ে সমান অধিকার ও নারী-পুরুষ সহাবস্থানের দিকে আহ্বানকারীরা দু’দিক থেকে মিথ্যাবাদী: অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী। কারণ, এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য নিজেদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুখ দেওয়া, প্রবৃত্তিকে সন্তুষ্ট করা, নফসকে নারীদের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার স্বাদ আস্বাদন করানো এবং অন্যান্য চাহিদা পূরণ করা, যা কলম দ্বারা প্রকাশ করাও লজ্জার বিষয়; কিন্তু তারা বিনা ভূমিকা ও স্পষ্ট ভাষায় এসব বলার সাহস পায় না, তাই তাদের প্রবৃত্তির উদ্দেশ্যকে তারা এসব অন্তঃসারশূন্য শব্দের সাথে মিশ্রণ করেছে, যার পশ্চাতে নেই কিছুই: প্রগতি, সভ্যতা, শিল্প, সামাজিক জীবন ও বিনোদন এসব শব্দ যেন ঢোলের বাড়ি।

    তারা মিথ্যাবাদী তার আরেকটি প্রমাণ, যে ইউরোপ এ মতবাদের অনুসারী, তার আদর্শে আদর্শিক এবং তাকে মাপকাঠি জ্ঞান করেই সত্যকে চিনে, তাদের সত্য সত্য নয় এবং তাদের সত্য মিথ্যারও বিপরীত নয়, বরং তাদের নিকট সত্য হচ্ছে: প্যারিস, লন্ডন, বার্লিন ও নিউইয়র্ক থেকে আমদানিকৃত কালচার, যদিও সেটা হয় নাচ-গান, নগ্নতা, ভার্সিটিতে ছেলে-মেয়ের সহাবস্থান, স্টেডিয়ামে উলঙ্গপনা ও সমুদ্র তীরে বস্ত্রহীনতা[7]!! আর তাদের নিকট মিথ্যা হচ্ছে: আল-আযহার, মক্কা-মদিনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পশ্চাতের মাদ্রাসা, ইসলামিক সেন্টার ও মসজিদ থেকে প্রচার করা আদর্শ!! যদিও সেগুলো হয় সম্মান, আদর্শ, সচ্চরিত্র এবং অন্তর ও শরীরের পবিত্রতা।

    ইউরোপ ও আমেরিকা সম্পর্কে আমরা যেরূপ পড়েছি এবং যেরূপ শুনেছি তাদের নিকট যারা সেখানে গিয়েছে, অনেক পরিবার ছেলে-মেয়ের সহাবস্থান পছন্দ করে না এবং তার সুযোগও দেয় না নিজের পরিবারে। প্যারিসে অনেক বাবা-মা রয়েছে, যারা তাদের মেয়েদেরকে ছেলেদের সাথে সফর করা বা পরপুরুষসহ সিনেমায় যাওয়ার অনুমতি দেয় না; বরং তারা মেয়েদেরকে সেসব গল্প-উপন্যাসও পড়তে দেয় না, যা তাদের পরিচিত নয় এবং যার সম্পর্কে তাদের জানা নেই যে তা বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা থেকে মুক্ত কি না?। আফসোস, মুসলিম সমাজ আজ সেসব নোংরামি থেকে মুক্ত নয়, বরং তার থেকে অজ্ঞতাই যেন দোষের, অথচ দীন সম্পর্কে অজ্ঞতা দোষ মানা হয় না!

    তারা বলে: সহাবস্থান প্রবৃত্তির জোয়ারকে ভেঙ্গে দেয়, চরিত্র ভালো করে এবং নফস থেকে লিঙ্গ কেন্দ্রিক পাগলপনা দূর করে। আমি তার উত্তরে বলি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সহাবস্থান সম্পর্কে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, বিশেষ করে রাশিয়া, যারা কোনো ধর্ম মানে না, কোনো শাইখ ও পাদরির কথায় কর্ণপাত করে না, তারা কি এ অভিজ্ঞতার সর্বনাশা অনিষ্টতা দেখে পশ্চাতে ফিরে নি?

    আর আমেরিকা, তোমরা কি পড় নি আমেরিকার একটি সমস্যা হচ্ছে ছাত্রীদের গর্ভধারণ?[8] অতএব, কে পছন্দ করে মিসর, সিরিয়া ও অন্যান্য ইসলামি দেশে তাদের সমস্যা আমদানি হোক?!

    আমি যুবকদের সম্বোধন করছি না, আর আমি চাচ্ছিও না তারা আমার কথায় কান দিক, আমি জানি তাদের কেউ আমার প্রতিবাদ করবে ও কেউ আমাকে বেকুব বলবে। কারণ, আমি তাদেরকে এমন কিছু স্বাদ থেকে বিরত রাখছি, যার নাগাল তারা পেয়ে গেছে বলেই তাদের বিশ্বাস, তবে আমি সম্বোধন করছি তোমাদেরকে হে আমার মেয়েরা। হে আমার দীনদার মুমিন মেয়েরা, হে আমার উত্তম চরিত্রের অধিকারী ভদ্র মেয়েরা, তোমরা ব্যতীত কেউ তার শিকার হবে না, অতএব তোমরা নিজেদেরকে ইবলিসের কসাইখানায় বলির পাঠা হিসেবে পেশ কর না। তোমরা তাদের কথা শ্রবণ কর না, যারা স্বাধীনতা, সভ্যতা, প্রগতি, শিল্প ও সামাজিক জীবনের নামে তোমাদের সামনে সহাবস্থানকে সুন্দর করে পেশ করে, কারণ তাদের অধিকাংশই স্ত্রী ও সন্তানহীন অভিশপ্ত, তোমাদের থেকে ক্ষণস্থায়ী স্বাদ ভোগ করা ব্যতীত তাদের কোনো মতলব নেই। আর আমি, আমি একজন বাবা, মেয়েদের বাবা, আমি তোমাদের থেকে সর্বনাশা বিপদকে প্রতিহত করছি তার অর্থ আমি আমার নিজের মেয়ের থেকেই তা প্রতিহত করছি। আমি তোমাদের জন্য কল্যাণ কামনা করি যেমন কল্যাণ কামনা করি আমার মেয়ের জন্য।

    তারা যা নিয়ে প্রফুল্ল তা এমন কোনো বস্তুই নয়, যা নারীকে তার হারানো ইজ্জত ফিরিয়ে দিবে অথবা ছিনিয়ে নেওয়া সম্মান পুনরুদ্ধার করবে, আর না নারীদের বিলুপ্ত ইজ্জতকে প্রতিস্থাপন করবে। বস্তুতঃ নারী যখন আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে তাদের কেউ এসে তার হাত ধরবে না অথবা গর্ত থেকে তাকে টেনে তুলবে; বরং তারা সবাই তার সৌন্দর্যের প্রত্যাশী, যাবত তার মধ্যে সৌন্দর্য রয়েছে; যখন সৌন্দর্য ক্ষয় হবে তারাও তার থেকে প্রস্থান করবে। যেমন, মৃত জানোয়ার থেকে কুকুর প্রস্থান করে, যখন তাতে কোনো গোশত না থাকে!

    হে আমার মেয়ে, তোমার প্রতি আমার উপদেশ এটাই, এটাই সত্য। অতএব, তুমি ভিন্ন কিছু শ্রবণ কর না। জেনে রেখ, তোমার হাতেই তোমার নিয়ন্ত্রণ, আমাদের পুরুষদের হাতে নয়, তোমার হাতেই রয়েছে সংস্কারের চাবি, যখন তোমার ইচ্ছা হয় নিজেকে সংশোধন কর এবং তোমার সংশোধন দ্বারা পুরো উম্মতকে সংশোধন কর। ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!

    আলী আত-তানতাওয়ী

    [1] লেখকের অধিক প্রসিদ্ধ দ্বিতীয় প্রবন্ধ হচ্ছে: “হে আমার ছেলে”

    [2] আমি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের দু’রাস্তার মাথায় দেখেছি: যখন পথচারীদের পারাপারের সিগনাল পড়েছিল, জনৈক বৃদ্ধা নারী, বৃদ্ধাই সে, তার পা তাকে বহন করতে অক্ষম ছিল। বার্ধক্যের কারণে তার অঙ্গগুলো থরথর কাঁপছিল, সে রাস্তা অতিক্রম করছে আর তার পাশের গাড়িগুলো তাকে পিষে দেওয়ার উপক্রম, তার হাত ধরবে এমন কেউ নেই। আমার পাশে থাকা যুবকদের আমি বললাম: তোমাদের কেউ তাকে সাহায্য কর, আমাদের সাথে বন্ধু প্রফেসর নাদিম জাবইয়ানও ছিল। তিনি ব্রাসেলসে চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় বাস করছেন, তিনি বললেন: জানেন এই বৃদ্ধাই এক সময় দেশের সুন্দরী নারী ও মানুষের ফেতনার কারণ ছিল। যুবকরা তাদের ভালোবাসা ও পকেটের অর্থ তার পায়ের নিচে লুটিয়ে দিত তার দৃষ্টি বা স্পর্শের আশায়, যখন তার যৌবন চলে গেল ও সৌন্দর্যে ভাটা পড়ল, তখন তার হাত ধরার কেউ নেই!!

    [3] রাত কালো অন্ধকার, দ্বি-প্রহর আলোকিত ও জ্যোতির্ময়, কিন্তু আমরা মুহূর্তে অন্ধকার থেকে আলোয় বেরোই নি; বরং আল্লাহ দিনকে রাতের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটান। ঘড়ির উপর বসে থাকা ছোট বিচ্ছুর মতো তুমি ঘড়ির গতি দেখ না, তুমি বাহ্যত স্থির দেখ যে, নড়াচড়া করে না, কিন্তু দু’ঘণ্টা পর এসে দেখ ঠিকই সে প্রস্থান করেছে। এভাবে মানুষ শৈশব থেকে কৈশোরে এবং যৌবন থেকে বার্ধক্যে পদার্পণ করে, এভাবে উম্মত এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় পদার্পণ করে।

    [4] আমাদের নিকট সংবাদ এসেছে যে, তারা সেটাও খুলে ফেলছে তাই পুরো বক্ষই এখন উন্মুক্ত।

    [5] এটা লেখকের ব্যক্তিগত মত। বস্তুতঃ মুখ খোলা রাখার বিপদ অনেক। শরী‘আতের বিধান হচ্ছে মুখ ঢেকে রাখা। [সম্পাদক]

    [6] আমার বেশ কিছু প্রবন্ধ ও বক্তব্য রয়েছে, যেখানে আমি সমানাধিকারের অর্থ স্পষ্ট করেছি যে, সমানাধিকার হয় হক ও ওয়াজিব তথা প্রাপ্যের ক্ষেত্রে এবং সাওয়াব ও শাস্তির মাসআলায়, কিন্তু দায়িত্ব ও কাজের ক্ষেত্রে সমানাধিকার হয় না। অতএব, নারীর পরিবর্তে কোনো পুরুষ গর্ভ ধারণ বা দুগ্ধ পান করাবে না, অনুরূপ পুরুষদের পরিবর্তে নারীরা যুদ্ধ ও কঠিন কর্ম আঞ্জাম দিবে না। আর না সেসব কর্ম আঞ্জাম দিবে যা তাকে হারামের দিকে নিয়ে যায়।

    [7] উল্লেখ্য, ইসরাইল নামক রাষ্ট্রও সেখান থেকে আসা।

    [8] এ জন্য তারা স্কুল ও কলেজে যৌন শিক্ষা সংযুক্ত করেছে, বস্তুত এভাবে তারা আগুনের উপর আলকাতরা ঢালার ব্যবস্থা করেছে, অর্থাৎ যৌন শিক্ষার মাধ্যমে একজন অনভিজ্ঞ নারীকে পুরুষের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে এবং নারীর সাথে একাকী হলে কী করবে তার জ্ঞান দিচ্ছে। এতে তাদের সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না; অধিকন্তু তারা মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীদেরকে গর্ভ রোধক বড়ি ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ দেয়। আমাদের মধ্যেও কতক শয়তান জন্মেছে, যারা চায় আমরাও তাদের ন্যায় করি।