×
একটি নিবন্ধে প্রকাশ করা হয়েছে যে, “আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা: ১. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত এবং তাকে সর্বদা চাক্ষুষভাবে দেখা যায়। ২. তিনি সবকিছু জানেন ও আল্লাহর মখলুক পর্যবেক্ষণ করেন। ৩. একই সময়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় দৃশ্যমান ও উপস্থিত হতে পারেন”। তাদের বক্তব্য কি সঠিক? এ ফতোয়াতে তার উত্তর প্রদান করা হয়েছে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জীবিত, তিনি কি এখনো পৃথিবীতে বিদ্যমান?

﴿هل الرسول صلى الله عليه وسلم حي وحاضر في الأرض الآن﴾

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জীবিত, তিনি কি এখনো পৃথিবীতে বিদ্যমান?

আমি একটি নিবন্ধ পড়েছি, যা প্রমাণ করে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহ সর্বদা সকল স্থানে বিদ্যমান, নিম্নে তার অধিকাংশ অংশ দলিলসহ পেশ করছি, বক্তব্যটি সঠিক কি-না দয়া করে বলুন?

উক্ত নিবন্ধের দাবী হচ্ছে, ১. নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত, তাকে সর্বদা চাক্ষুষভাবে দেখা যায়। ২. তিনি সবকিছু জানেন ও আল্লাহর মখলুক পর্যবেক্ষণ করেন। ৩. তিনি বিভিন্ন জায়গায় একই সময়ে দৃশ্যমান ও উপস্থিত হতে পারেন। এবার দলিল দেখুন: আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ إِنَّآ أَرۡسَلۡنَٰكَ شَٰهِدٗا ٤٥ ﴾ [الاحزاب : ٤٥]

“হে নবী, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতারূপে"[1] অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿ فَكَيۡفَ إِذَا جِئۡنَا مِن كُلِّ أُمَّةِۢ بِشَهِيدٖ وَجِئۡنَا بِكَ عَلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِ شَهِيدٗا ٤١ ﴾ [النساء : ٤١]

“অতএব কেমন হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের উপর সাক্ষীরূপে ?"[2]

লক্ষ্য করুন, আল্লাহ যেসব মখলুক এ জমিনে সৃষ্টি করেছেন, তাদের সবার উপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাহিদ তথা প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন। এ জন্য বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মের আগেও উপস্থিত ছিলেন, মারা যাওয়ার পর এখনো তিনি জীবিত আছেন, অন্যথায় কোনোভাবে বলা সম্ভব নয় যে, তিনি দুনিয়ার চলমান ঘটনাপ্রবাহের উপর শাহিদ বা প্রত্যক্ষদর্শী। এ ছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে, যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাহিদ বলা হয়েছে।

আরও একটি সূক্ষ্ম তথ্য: নিম্নের আয়াতটি দেখুন:

﴿ وَمَا كُنتَ لَدَيۡهِمۡ إِذۡ يُلۡقُونَ أَقۡلَٰمَهُمۡ أَيُّهُمۡ يَكۡفُلُ مَرۡيَمَ ٤٤ ﴾ [ال عمران: ٤٤]

“আর তুমি তাদের নিকট ছিলে না, যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করেছিল, তাদের মধ্যে কে মারইয়ামের দায়িত্ব নেবে ?"[3]

এ আয়াত প্রমাণ করে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মের পূর্বে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না, যে শরীর কথা বলে"। নিবন্ধের বক্তব্য এখানে শেষ।

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ,

সন্দেহ নেই, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিপূর্ণ ও সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশী প্রিয় ও সম্মানিত তিনি, এ কথার অর্থ তার থেকে মনুষ্য বৈশিষ্ট্য দূরীভূত করা নয়, অথবা তাকে আল্লাহর কোনো কর্তৃত্ব সোপর্দ করাও নয়। তিনি মানুষ ছিলেন, অন্যান্য মানুষ যেরূপ অসুস্থতা ও মৃত্যুর সম্মুখীন হয়, তিনিও সেরূপ হয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ إِنَّكَ مَيِّتٞ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ ٣٠ ﴾ [الزمر: ٣٠]

“নিশ্চয় তুমি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল"[4] অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿وَمَا جَعَلۡنَا لِبَشَرٖ مِّن قَبۡلِكَ ٱلۡخُلۡدَۖ أَفَإِيْن مِّتَّ فَهُمُ ٱلۡخَٰلِدُونَ٣٤﴾ [الانبياء:٣٤]

“আর তোমার পূর্বে কোনো মানুষকে আমি স্থায়ী জীবন দান করিনি, সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি অনন্ত জীবনসম্পন্ন হয়ে থাকবে ?"[5]

রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন, তাকে কবরে দাফন করা হয়েছে, এ জন্য আবুবকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বলেছেন:

من كان يعبد محمدا فإن محمدا قد مات ومن كان يعبد الله فإن الله حي لا يموت.

“যে মুহাম্মদের ইবাদত করত, [সে জেনে নিক] নিশ্চয় মুহাম্মদ মারা গেছেন, আর যে আল্লাহর ইবাদত করত, [সে জেনে নিক] নিশ্চয় আল্লাহ জীবিত আছেন, কখনো মারা যাবেন না"

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাহিদ তথা সাক্ষী বা প্রত্যক্ষদর্শী এবং মুবাশশির, সতর্ককারী ও কিয়ামতের দিন সাক্ষীর অর্থ এ নয় যে, তিনি সকল উম্মতের সময় উপস্থিত ছিলেন, কিংবা তার জীবন কিয়ামত পর্যন্ত প্রলম্বিত, আবার এ অর্থও নয় যে, তিনি কবরে থেকে সবকিছু দেখছেন, কারণ সাক্ষীর জন্য উপস্থিত থাকতে হবে এরূপ জরুরি নয়, বরং তিনি আল্লাহর সংবাদের উপর ভিত্তি করে সাক্ষী দিবেন, কারণ তিনি গায়েব জানেন না। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ ١٨٨ ﴾ [الاعراف: ١٨٨]

“আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম"[6]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় উপস্থিত হতে সক্ষম নন, বরং তিনি এক স্থানেই আছেন, অর্থাৎ তার কবরে। সকল মুসলিম এ মত পোষণ করেন।

সমাপ্ত



[1] সূরা আহযাব: (৪৫)

[2] সূরা নিসা: (৪১)

[3] সূরা আলে-ইমরান: (৪৪)

[4] সূরা যুমার: (৩০)

[5] সূরা আম্বিয়া: (৩৪)

[6] সূরা আরাফ: (১৮৮)