ইয়াযিদ সম্পর্কে আমাদের অবস্থান
ক্যাটাগরিসমূহ
Full Description
ইয়াযিদ সম্পর্কে আমাদের অবস্থান
[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]
আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
2014 - 1435
﴿ موقفنا من يزيد بن معاوية ﴾
« باللغة البنغالية »
عبد الله المأمون الأزهري
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
2014 - 1435
ইয়াযিদ সম্পর্কে আমাদের অবস্থান
প্রশ্ন: একজন দা‘য়ীর কাছে শুনেছি, ইয়াযিদ ইবন মু‘আবিয়া মুসলমানের একজন খলিফা ছিলেন। তিনি মাতাল ও ধর্ষকামী ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি মুসলমান ছিলেন না। তার এ কথা কি সঠিক? অনুগ্রহ করে এ সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানাবেন।
জবাব:
সব প্রশংসা আল্লাহর।
তার নাম: ইয়াযিদ ইবন মু‘আবিয়া ইবন হরব ইবন উমাইয়াহ আল-উমাবী আদ-দামেস্কী। ইমাম যাহাবী রহ. তার সম্পর্কে বলেন, কনস্টান্টিনোপলের যুদ্ধের সেনাপতি ছিলেন। সে যুদ্ধে আবূ আইয়ুব আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মত বিজ্ঞ সাহাবীও উপস্থিত ছিলেন। তার পিতা মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে খিলাফতে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি পিতার মৃত্যুর পরে ৬০ হিজরীর রজব মাসে শাসনভার গ্রহণ করেন। তখন তার বয়স ছিল তেত্রিশ বছর। তার রাজত্ব চার বছরের কম সময় স্থায়ী ছিল। ইয়াযিদ এমন সব লোকদের মধ্যে একজন যাদেরকে আমরা গালাগালিও করব না আবার ভালোও বাসবনা। উমাইয়া ও আব্বাসী শাসনে এবং অন্যান্য যুগেও তার মত বা তার চেয়েও জঘন্য শাসক বিদ্যমান ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর মাত্র ঊনচল্লিশ বছর পরে অনেক যোগ্য সাহাবী জীবিত থাকা সত্বেও তিনি জোরপূর্বক শাসনভার গ্রহণ করায় তার ব্যাপারে এত সমালোচনা। সে সময় আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সহ অনেক সাহাবী জীবিত ছিলেন। অথচ আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইয়াযিদ ও তার বাপ-দাদার তুলনায় মুসলমানের আমির হওয়া অধিক যোগ্য ছিলেন। হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাতের মাধ্যমে তার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব শুরু হয় এবং হাররার যুদ্ধের[1] দ্বারা তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি বেশি দিন বয়স পাননি। হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাতের পরে তার বিরুদ্ধে অনেকেই যুদ্ধে বের হয়েছিলেন, যেমন মদীনাবাসী ও আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তার অনুসারীরা।[2]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ইয়াযিদ ইবন মু‘আবিয়া সম্পর্কে বলেন:
ইয়াযিদ সম্পর্কে মানুষ তিনভাগে বিভক্ত: দু’দল অতি বাড়াবাড়ি করে আরেকদল মধ্যপন্থী। সীমাহীন বাড়াবাড়ি দলের একদল মনে করেন, তিনি কাফির ও মুনাফিক ছিলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রতিশোধ নিতে সর্বদা প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেন। তার মধ্যে দাদা ‘উতবা, দাদার ভাই শাইবা, খালু ওয়ালিদ ইবন উতবা ও অন্যান্য যাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও অন্যান্যরা বদরের যুদ্ধে হত্যা করেছিল সে হত্যার প্রতিশোধ নিতে সর্বদা কাজ করত। এ ধরণের আক্বিদা শিয়া (রাফেদী) সম্প্রদায়ের লোকেরা পোষণ করে থাকে। এ শিয়ারা [যারা বর্তমানে ইরান-ইরাকে ক্ষমতাশীল, তারা] আবূ বকর, ‘উমর ও ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের মতো সাহাবীদেরকে কাফির বলে থাকেন। সুতরাং ইয়াযিদকে কাফির বলা তাদের জন্য আরো অধিক সহজ।
দ্বিতীয় সীমালঙ্ঘনকারী দল মনে করেন তিনি একজন সৎ, ন্যায়পরায়ণ ইমাম ছিলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোলে নিয়েছেন ও তার জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন। এমনকি তাদের কেউ কেউ তাকে আবূ বকর ও ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার উপরে মর্যাদা দিয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ তাকে নবী পর্যন্ত বলে থাকেন। [যার অনুসারীরা বর্তমানে ইয়াযিদিয়্যাহ ফির্কা নামে ইরাকে বিখ্যাত]
যাদের সামান্য আক্বল, জ্ঞান ও পূর্বসূরীদের সম্পর্কে ধারণা আছে তারা সবাই জানেন যে, এ দু’দলই গোমরাহ ও বাতিল আক্বিদা পোষণকারী। এ কারণেই যাদের সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞান আছে ও জ্ঞানী গুণীগণ এ ধরণের মত পোষণ করেন না।
তৃতীয় দল: তারা মনে করেন যে, তিনি মুসলিম রাজা-বাদশাহদের একজন, তার দোষ-গুণ দু’টোই ছিল। তিনি উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খিলাফতকালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কাফির ছিলেন না। তবে তার কারণেই হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু শহীদ হন এবং মাদীনার আহলে হাররার সাথে যা ঘটেছিল তার জন্য তিনিই দায়ী। তিনি সাহাবী বা আল্লাহর অলী ছিলেন না। এটা আক্বল, ইলম, সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞাত ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সর্বসম্মত রায়।
আহলে সুন্নাত তার ব্যাপারে আবার তিন দলে বিভক্ত। কেউ তাকে লা‘নত দিয়ে থাকে। আবার কেউ তাকে গালিও দেন না আবার ভালও বাসেন না। এটা ইমাম আহমদ রহ. এর মত। এ রায়ের সাথে তার অনুসারী ও অন্যান্য অধিকাংশ মুসলমান একমত পোষণ করেছেন। ইমাম আহমদ রহ. এর ছেলে সালিহ একদা পিতাকে জিজ্ঞেস করলেন, কতিপয় লোক বলছে যে, তারা ইয়াযিদকে ভালবাসে। তখন তিনি বললেন, হে প্রিয় বৎস! যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে সে কি তাকে ভাল বাসতে পারে? তখন তিনি (ছেলে) বললেন, হে পিতা তাহলে আপনি কেন তাকে লা‘নত দেন না? তিনি বললেন, হে প্রিয় বৎস! তুমি কি কখনও তোমার বাবাকে কাউকে লা‘নত দিতে দেখেছ?
আবূ মুহাম্মদ মাকদিসী রহ. কে ইয়াযিদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার কাছে এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, তাকে গাল মন্দও করা যাবে না আবার ভালোও বাসা যাবে না। আমার কাছে আরো সংবাদ পৌঁছেছে যে, আমার পূর্বপুরুষ আবূ আব্দুল্লাহ ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. কে ইয়াযিদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছেন, আমরা তার সম্পর্কে বেশি বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি কোনোটাই করব না। এটাই ন্যায় সঙ্গত ও উত্তম কথা।[3]