আল-ইসলাম স্বভাবজাত, যৌক্তিক ও সৌভাগ্যের ধর্ম
এ আইটেমটি নিম্নোক্ত ভাষায় অনূদিত
- Русский - Russian
- العربية - Arabic
- ไทย - Thai
- অসমীয়া - Assamese
- Hausa - Hausa
- ગુજરાતી - Unnamed
- English - English
- Wikang Tagalog - Tagalog
- Tiếng Việt - Vietnamese
- සිංහල - Sinhala
- አማርኛ - Amharic
- Кыргызча - Кyrgyz
- español - Spanish
- italiano - Italian
- فارسی دری - Unnamed
- azərbaycanca - Azerbaijani
- Mõõré - Mõõré
- тоҷикӣ - Tajik
- português - Portuguese
- svenska - Swedish
- नेपाली - Nepali
- čeština - Czech
- български - Bulgarian
- Deutsch - German
- 中文 - Chinese
- Bahasa Indonesia - Indonesian
- magyar - Hungarian
- Türkçe - Turkish
- فارسی - Persian
- Kurdî - Kurdish
- bosanski - Bosnian
- bamanankan - Bambara
- हिन्दी - Hindi
- Nederlands - Dutch
- മലയാളം - Malayalam
- پښتو - Pashto
- ქართული - Georgian
- Српски - Serbian
- Wollof - Wolof
- Kinyarwanda - Kinyarwanda
- polski - Polish
- Malagasy - Malagasy
- Lingala - Unnamed
- اردو - Urdu
- ئۇيغۇرچە - Uyghur
- română - Romanian
- Ўзбек - Uzbek
ক্যাটাগরিসমূহ
Full Description
আল-ইসলাম
স্বভাবজাত, যৌক্তিক ও সৌভাগ্যের ধর্ম
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে
তুমি কী নিজেকে এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছ:
আসমান-জমিন এবং এর মাঝে বড় বড় যেসব সৃষ্টজীব আছে সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন? কে এত সূক্ষ্ম ও নিপুণ ব্যবস্থা তৈরি করেছেন?
বছরের পর বছর ধরে তার সুনিপুণ সূক্ষ্ম সূত্রসমূহে এ মহাবিশ্বকে তিনি কীভাবে সুশৃঙ্খল ও স্থির রেখেছেন?
এ বিশ্ব কি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে? নাকি এটি কোনো অস্তিত্বহীন বস্তু থেকে এসেছে? নাকি এটি হঠাৎ করে এমনিতেই অস্তিত্বে এসে গেছে?
কে তোমাকে সৃষ্টি করেছে?
তোমার দেহসহ সকল জীবন্ত প্রাণীর দেহের মধ্যকার এ প্রণালীসমূহ (System) এর এ সূক্ষ্ম-সুনিপুণ ব্যবস্থা কে তৈরি করেছেন?
কেউ এ বাড়িটি তৈরি না করলেও বাড়িটি এমনিতেই অস্তিত্বে এসেছে অথবা যদি বলা হয় যে, এ বাড়িটিকে কোন অনস্তিত্বে থাকা ব্যক্তি তৈরি করেছে, এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। তাহলে কিছু মানুষ কীভাবে এটা বিশ্বাস করতে পারে যে, এ মহাবিশ্ব একজন সৃষ্টিকর্তা ব্যতীতই অস্তিত্বে এসেছে? একজন বিবেকবান মানুষ কীভাবে এ কথা গ্রহণ করতে পারে যে, সৃষ্টিজগতের এসব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রক্রিয়াসমূহ এমনিতেই হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়ে গেছে?
সুতরাং নিশ্চিতভাবেই একজন মহান ইলাহ (প্রভু) রয়েছেন, যিনি এ মহাবিশ্ব ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, সেগুলোর সৃষ্টিকর্তা ও পরিচালক, আর তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা।
আর রব (আল্লাহ) সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের নিকটে অসংখ্য রাসূল পাঠিয়েছেন এবং তাদের ওপর ইলাহী কিতাবসমূহ (অহী) নাযিল করেছেন, আর সেগুলির সর্বশেষ কিতাব হচ্ছে আল কুরআন, যা আল্লাহ সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মাদের ওপর নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা'আলা তার রসূল ও কিতাবসমূহের মাধ্যমে-
⦁ তিনি আমাদেরকে তাঁর নিজের সম্পর্কে, তাঁর সিফাত, সম্পর্কে এবং আমাদের ওপর তাঁর হক সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, এবং আমাদের জন্য তাঁর নিজের হকও বর্ণনা করেছেন।
⦁ আর তিনি আমাদেরকে এ মর্মে পথনির্দেশ করেছেন যে, তিনিই রব, যিনি সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টি করেছেন, তিনি চিরঞ্জীব যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। প্রতিটি সৃষ্টিই তাঁর মুঠোর মধ্যে এবং তাঁর ক্ষমতা ও পরিচালনার অধীন।
তিনি আমাদেরকে আরো জানিয়েছেন যে, তাঁর সিফাতসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি সিফাত হচ্ছে 'আল-ইলম', আর তিনি তাঁর জ্ঞানের দ্বারা সকল কিছুকে পরিবেষ্টন করেছেন। আর তিনিই সবকিছু শ্রবণকারী, সবকিছুর দ্রষ্টা, আসমান-জমিনের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন থাকে না।
আর তিনিই মহান চিরঞ্জীব (الحي), মহাপরিচালক/রক্ষণাবেক্ষণকারী (القيوم) রব, যে মহাপবিত্র সত্তার কাছ থেকে সকল মাখলূক জীবন প্রাপ্ত হয়েছে, আর তিনিই মহাপরিচালক/রক্ষণাবেক্ষণকারী, যে মহাপবিত্র সত্তার কাছ থেকেই সকল মাখলুক পরিচালিত হয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿اللَّهُ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَلا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ﴾ اللَّهُ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَلا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ "আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। তাঁর জন্যই আসমানসমূহে যা রয়েছে তা এবং জমিনে যা আছে তা। কে সে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তিনি জানেন যা আছে তাদের সামনে এবং যা আছে তাদের পেছনে। আর তারা তাঁর জ্ঞানের সামান্য পরিমাণও আয়ত্ত করতে পারে না, তবে তিনি যা চান তা ছাড়া। তাঁর কুরসী আসমানসমূহ ও জমিন পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং এ দুটোর সংরক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ, মহান।"[সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৫]।
⦁ তিনি আমাদেরকে আরো সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনিই হচ্ছেন রব, যিনি সকল পূর্ণতার গুণে গুণান্বিত, তিনিই আমাদেরকে বিবেক ও ইন্দ্রিয় শক্তি দান করেছেন, যার মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টিজগতের আশ্চর্য বিষয়াদিসহ তাঁর ক্ষমতা উপলব্ধি করা যায়, যার মধ্যে রয়েছে এমন বিষয়াদি যা আমাদেরকে তাঁর বড়ত্ব ও গুণের পূর্ণতার দিকে ইঙ্গিত করে। এবং তিনি আমাদের মধ্যে এমন ফিতরাত রোপণ করে দিয়েছেন, যা তাঁর পূর্ণতার প্রতি ইঙ্গিত করে এবং এটাও ইঙ্গিত করে যে, কোন অপূর্ণতার গুণে গুণান্বিত হওয়া তার জন্য প্রযোজ্য নয়।
⦁ আর তিনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে, রব (আল্লাহ) তাঁর আসমানসমূহের উপরে রয়েছেন, আর তিনি জগতের কোন অংশ নন এবং জগতও তাঁর মধ্যে মিশ্রিত হয় না।
⦁ তিনি আমাদেরকে আরো সংবাদ দিয়েছেন যে, সেই মহাপবিত্র সত্তার কাছে আত্মসমর্পণ করা আমাদের জন্য আবশ্যক; কেননা তিনিই আমাদের সৃষ্টিকর্তা, জগৎসমূহের সৃষ্টিকর্তা এবং সেগুলোর পরিচালক।
সৃষ্টিকর্তার মহত্ত্বের কতিপয় গুণ থাকা আবশ্যক, তাঁর জন্য কোন প্রয়োজন অথবা অপূর্ণতার গুণে গুণান্বিত হওয়া কখনোই শোভনীয় নয়। সুতরাং রব (প্রতিপালক) কোন কিছু ভুলে যাবেন না, তিনি ঘুমাবেন না, তিনি কোন খাদ্যও গ্রহণ করবেন না। তাঁর কোন স্ত্রী অথবা পুত্র থাকবে তাও সম্ভব নয়। আর যে সমস্ত ঐশীবাণীতে সৃষ্টিকর্তার মহত্ত্বের গুণাবলীর বিপরীত যা কিছু আছে, তার কোনটিই আল্লাহর রাসূলগণ আলাইহিমুস সালামের নিয়ে আসা বিশুদ্ধ অহী বা প্রত্যাদেশের অন্তর্ভুক্ত নয়।
মহিমান্বিত কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ * قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ "বলুন , 'তিনি আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয়, *ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ * ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ 'আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন স্বয়ংসম্পুর্ণ, (সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী)। *لَمۡ یَلِدۡ وَلَمۡ یُولَدۡ * لَمۡ یَلِدۡ وَلَمۡ یُولَدۡ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁর থেকে জন্মগ্রহণও করেনি। *وَلَمۡ یَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ﴾ وَلَمۡ یَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ আর কেউই তাঁর সমকক্ষ নয়।"[সূরা আল-ইখলাস ১-৪]।
তুমি যখন সৃষ্টিকর্তা মহান রবের উপরে ঈমান আনবে ... তখন তুমি কী একদিনও তোমাকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছ? এবং আল্লাহ আমাদের থেকে কী চান? আর আমাদের অস্তিত্বের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই বা কী?
এটা কি হতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সৃষ্টি করে অনর্থকভাবে ছেড়ে দিয়েছেন? এটাও কি হতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলা এ সব মাখলুক তৈরি করেছেন কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাড়াই?
প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে যে, মহান রব, সৃষ্টিকর্তা "আল্লাহ" আমাদেরকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন আর তা হচ্ছে: একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা। তিনি আমাদের কাছ থেকে কী চান? তিনি আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনিই একমাত্র ইবাদাতের হকদার। আমরা কীভাবে তাঁর ইবাদাত করব, তিনি তাঁর রসূলদের মাধ্যমে আমাদেরকে তা বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন আমরা কীভাবে তাঁর আদেশ পালন ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য হাসিল করব, কীভাবে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করব এবং তাঁর শাস্তি থেকে দূরে থাকতে পারব। এছাড়াও তিনি আমাদেরকে মৃত্যুর পরে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন।
তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, এ দুনিয়ার জীবন শুধু একটি পরীক্ষা, আর প্রকৃত পূর্ণাঙ্গ জীবন হবে মৃত্যুর পরে আখিরাতে।
তিনি আমাদেরকে আরো সংবাদ দিয়েছেন যে ,যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার আদেশ অনুযায়ী ইবাদাত করবে এবং তাঁর নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকবে; তার জন্য দুনিয়াতে উত্তম জীবন রয়েছে এবং আখিরাতে রয়েছে স্থায়ী নি'আমাত। আর যে ব্যক্তি তাঁর অবাধ্য হবে এবং তাঁর সাথে কুফুরী করবে, তার জন্য দুনিয়াতে লাঞ্ছনা রয়েছে এবং আখিরাতে রয়েছে স্থায়ী আযাব।
কেননা আমরা জানি যে, ভালো হোক অথবা মন্দ হোক, আমাদের মধ্যকার কোন ব্যক্তি তার কৃত কাজের বিনিময় না পেলে এ জীবনের মধ্য দিয়ে আমরা যেতে পারি না; [বিনিময় না থাকলে] তাহলে জালিমরা কোন শাস্তি এবং ভালোকাজ সম্পাদনকারীরা কী কোন পুরস্কার পাবে না?
আমাদের রব আমাদেরকে আরো জানিয়েছেন যে, দীন ইসলামে প্রবেশ করা ব্যতীত তাঁর সন্তুষ্টির লাভে সফল হওয়া এবং তাঁর শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না। যার অর্থ হচ্ছে: তাঁর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করে একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা, তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে বশ্যতা স্বীকার করা, তা গ্রহণ ও সন্তুষ্টচিত্তে পালন করা। তিনি আমাদেরকে আরো জানিয়েছেন যে, মানুষের কাছ থেকে অন্য কোন দীন (ধর্ম) গ্রহণ করা হবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:(وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ) وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ "আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।"[সূরা আলে-ইমরান : ৮৫]।
আজকের দিনে অধিকাংশ মানুষ যাদের ইবাদাত (উপাসনা) করে, তাদের দিকে কোন ব্যক্তি তাকালে দেখতে পাবে, কেউ কেউ মানুষের ইবাদাত করে, আবার কেউ কেউ মূর্তির ইবাদাত করে, কেউ কেউ আবার নক্ষত্রের ইবাদাত করে এভাবে আরো অনেক কিছু। কিন্তু কোন বিবেকবান মানুষের জন্য এটা শোভনীয় নয় যে, সে মহাবিশ্বের রব আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করবে, যিনি (প্রশংসিত) গুণাবলীতে পূর্ণ। সুতরাং সে ব্যক্তি কিভাবে তার মত অথবা তার চেয়ে নিম্ন শ্রেণির কোন মাখলূকের ইবাদাত করতে পারে! কেননা মা'বূদ (ইবাদাতের প্রকৃত হকদার) কোন মানুষ, মূর্তি, গাছ অথবা কোন প্রাণী হতে পারে না।
ইসলাম ব্যতীত, আজকে মানুষ যেসব ধর্মের মাধ্যমে ইবাদাত করছে, সেগুলোকে আল্লাহ তা'আলা গ্রহণ করবেন না; কেননা সেগুলো হচ্ছে হয়তো মানুষের তৈরি অথবা প্রথমে তা ইলাহী ধর্ম হিসেবে থাকলেও মানুষ নিজ হাতে তা নষ্ট করে ফেলেছে। আর ইসলাম হচ্ছে মহাবিশ্বের রব আল্লাহর (মনোনীত) ধর্ম, যার কোন বদল বা পরিবর্তন হয় না। এ ধর্মের কিতাবের নাম হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, এটি আজ পর্যন্ত মুসলিমদের হাতে অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে, ঠিক যেভাবে ও যে ভাষায় আল্লাহ তা'আলা তাঁর শেষ রাসূলের উপর তা নাযিল করেছিলেন।
ইসলামের মূলনীতির মধ্যে রয়েছে আল্লাহ যাদেরকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন তাদের সবার উপরে ঈমান আনতে হবে। তাদের সকলেই মানুষ ছিলেন, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে মু'জিযা ও নিদর্শনের মাধ্যমে শক্তিশালী করেছিলেন, আর তাঁর (আল্লাহর) কোন শরীক নেই এর ভিত্তিতে একমাত্র তাঁর ইবাদাতের দিকে আহ্বান করার জন্য তাদেরকে প্রেরণ করেছিলেন।সকল রসূলদের শেষ রসূল হচ্ছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তাকে ইলাহী সর্বশেষ শরী'আত সহকারে প্রেরণ করেছেন, যে শরী'আত তার আগের রসূলগণের শরী'আতের বিধানকে রহিতকারী। আল্লাহ তাকে সম্মানজনক নিদর্শনসমূহের মাধ্যমে শক্তিশালী করেছিলেন, যার মধ্যে সবচেয়ে মহিমান্বিত হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, যা রব্বুল আলামীনের কালাম বা বাণী। মানবজাতির কাছে পরিচিত সবচেয়ে উত্তম কিতাব এটি, যা তার বিষয়বস্তু, শব্দ ও গাথুনী ও হুকুমের দিক থেকে স্বয়ং মুজিযা। এতে রয়েছে সত্যের হিদায়াত, যা দুনিয়া ও আখিরাতে সৌভাগ্যের প্রতি ধাবিত করে। আর এটি আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে।
এ ব্যাপারে অসংখ্য এমন যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে যা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, এই কুরআন সুমহান সৃষ্টিকর্তার বাণী এবং এটি মানুষের তৈরি হতে পারে না।
আর ইসলামের মৌলিক নীতির মধ্যে রয়েছে ফেরেশতা ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস, যেদিন আল্লাহ কিয়ামাতের দিন তাদের কবর থেকে পুনরুত্থিত করবেন তাদের কৃতকর্মের হিসাব নেওয়ার জন্য। সুতরাং যে ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করবে, সে জান্নাতে চিরস্থায়ী সুখ পাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কুফুরী (অবিশ্বাস) করবে ও মন্দ কাজ করবে তার জন্য জাহান্নামে রয়েছে কঠিন শাস্তি। ইসলামের ভিত্তিগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে যে, আল্লাহ যা ভালো বা মন্দ নির্ধারণ করেছেন তাতে তুমি বিশ্বাস করবে।
ইসলাম ধর্ম হল জীবনের একটি সামগ্রিক পদ্ধতি, যা সহজাত প্রকৃতি এবং যুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যাকে অবিকৃত আত্মা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে থাকে। এটি মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টিজগতের জন্য আইন হিসেবে প্রণয়ন করেছেন। এটি দুনিয়া ও আখিরাতে সকল মানুষের জন্য কল্যাণ ও সুখের ধর্ম। এটি একটি জাতিকে অন্য জাতী থেকে আলাদা করে না, একটি রঙের উপর অন্য রঙের পার্থক্য করে না বরং এতে মানুষ পরস্পরে সমান। ইসলামে কেউ তার ভালো কাজের পরিমাণ ব্যতীত কারো থেকে বেশী মর্যাদা পায় না।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:(مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِن فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰة طَيِّبَة وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ) مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ "মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, অবশ্যই আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর অবশ্যই আমরা তাদেরকে তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেব।"[সূরা আন-নাহল: ৯৭]।
আর যে সমস্ত বিষয়ে কুরআনে কারীমে আল্লাহ গুরুত্ব প্রদান করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে, আল্লাহকে রব ও মাবুদ হিসেবে বিশ্বাস করা, ইসলামকে দীন হিসেবে এবং মুহম্মাদকে রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করা। ইসলামে প্রবেশ করার বিষয়টি একটি বাধ্যতামূলক বিষয়, যে ব্যাপারে কোন মানুষের অন্য কোন এখতিয়ার নেই; কিয়ামাতের দিনে হিসাব ও প্রতিদান দেওয়া হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সত্যবাদী মুমিন (বিশ্বাসী) হবে, তার জন্য রয়েছে মহা সফলতা ও কামিয়াবী আর যে ব্যক্তি কাফির তথা অবিশ্বাসী হবে তার জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট ক্ষতি।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:(... وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰت تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ، وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰت تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ"এসব আল্লাহ্র নির্ধারিত সীমা। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করলে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তারা সেখানে স্থায়ী হবে আর এটাই হলো মহাসাফল্য।"وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَٰلِدا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَاب مُّهِين) وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَٰلِدا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَاب مُّهِين"আর কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হলে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লংঘন করলে তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন; সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।"[সূরা আন-নিসা: ১৩-১৪]।
আর যে ব্যক্তি ইচ্ছা করবে যে, সে ইসলামে প্রবেশ করবে, তার কর্তব্য হবে বিশ্বাস ও অর্থের জ্ঞান রেখে এ কথা বলা: أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدًا رسول الله তথা: 'আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।' আর এভাবে সে মুসলিম হয়ে যাবে; এরপরে একের পর এক শরী'আতের বিধি-বিধানগুলো শিখতে থাকবে, যাতে করে আল্লাহ তার উপরে যা আবশ্যক করেছেন তা সে পালন করতে পারে।
স্বভাবজাত, যৌক্তিক ও সৌভাগ্যের ধর্ম