×
এ প্রবন্ধে কারামতের সংজ্ঞা ও আল্লাহর ওলীগণের কারামত যে একটি বাস্তব সত্য বিষয় তা তুলে ধরা হয়েছে এবং এর কিছু বাস্তব নমূনা পেশ করা হয়েছে। তাছাড়া কারামত ও শয়তানের কারসাজির মধ্যেও পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে।

ওলীগণের কারামতি

كرامة الأولياء


 অলিদের কারামতি ও চাঁদে কোনো ব্যক্তিকে দেখতে পাওয়া

 কারামত কি?

কারামত হল, অসাধারণ কোনো ঘটনা যা আল্লাহ্ তাঁর নেক বান্দাগণের মাধ্যমে তাদের জীবিতাবস্থায় অথবা তাদের মৃতু্র পর তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ঘটিয়ে থাকেন, এর মাধ্যমে তিনি তাঁর বান্দাকে কোনো অনিষ্টতা থেকে হেফাযত করেন, অথবা তাঁর বান্দার কোনো কল্যাণ সাধন করেন, অথবা তিনি এর মাধ্যমে হকের সাহায্য করে থাকেন। (সৌদী আরবের ফতোয়া বোর্ডের লাজনা দায়েমার ফাতওয়া ১/৩৮৮)

কারামতের সংজ্ঞায় সুলাইমান বিন আবদুল্লাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন, কারামত এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ্  তাঁর মুমিন এবং মুত্তাকী বান্দার মাধ্যমে প্রকাশ করেন, হয় তার দো‘আর কারণে অথবা তার কোনো সৎ আমলের কারণে, আর এতে অলীর কোনো হাত বা শক্তি নেই। (তাইসিরুল আযীযিল হামীদ, ৪১৩)

 অলীগণের মাধ্যমে কারামত সংঘটিত হতে পারে তার দলীলঃ

নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদেরকে রক্ষা করেন তাদের দুশমন থেকে, তিনি কোনো বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না। (সূরা হাজ্ব-৩৮)

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হাদীস কুদসী আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন,

«مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالحَرْب»

যে ব্যক্তি আমার অলীর (প্রিয় বান্দার) সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। (বুখারী, ৬৫০২)

 অলী কে?

 যে আল্লাহর প্রিয় বিষয়সমূহ পালনের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করে এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে চেষ্টা করে।

 কারামত কেন সংঘটিত হয়?

 কারামত সংঘটিত হওয়ার মাঝে অনেক কল্যাণ এবং হিকমত রয়েছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে,

ক) আল্লাহর অসীম ক্ষমতা এবং তাঁর ইচ্ছা বাস্তবায়নের বহিঃপ্রকাশ এবং তিনি যা চান তা করতে পারেন, এমনিভাবে আমরা সচরাচর আল্লাহর দেওয়া বিষয়সমূহের যা কিছু দেখছি তার বাহিরেও আরো অনেক কিছু আছে যার কিছু বহিঃপ্রকাশ এই কারামাত, যে বিষয়ে মানুষ অবগত নয়।

খ) কোনো বান্দার মাধ্যমে কারামত সংঘটিত হওয়া তা তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ যা তাকে আল্লাহ্ পৃথিবীতে দিয়ে দিলেন। এ সুসংবাদ তাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা বলে প্রমাণ করে এবং তার সুভ পরিণতির পূর্বাভাস।

গ) যার মাধ্যমে তা সংঘটিত হয় সে নবীর সঠিক অনুসারী বলে প্রমাণিত।

 ইতোপূর্বে সংঘটিত কিছু কারামতঃ

১) সূরা কাহাফে উল্লেখিত আসহাবে কাহাফের ঘটনা, যেখানে তারা আল্লাহর কৃপায় তিনশত বছরের অধিক সময় যাবৎ ঘুমিয়ে ছিলেন, অথচ এই দীর্ঘসময়ে তাদের শরীরের কোনো ক্ষতি হয় নি।

২) মারইয়াম বিনতে ইমরানের নিকট মেহরাবে খাবার উপস্থিত হওয়া যা দেখে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম আশ্চার্য হতেন।

৩)  ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একটি সেনাদল যুদ্ধের জন্য পাঠলেন, এদলটির নেতৃত্বে যিনি ছিলেন তার নাম ছিল সারিয়া, ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মদীনায় খুতবা দিচ্ছিলেন এমতাবস্থায় তিনি হঠাৎ উচ্চস্বরে বললেনঃ হে সারিয়া, পাহাড় পিছনে রাখ! হে সারিয়া, পাহাড় পিছনে রাখ! যখন সেনাদল ফিরে আসল তখন ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাদেরকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল, তখন তারা বলল, হে আমিরুল মুমেনীন আমরা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যাচ্ছিলাম এমতাবস্থায় আমরা একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম যে, হে সারিয়া, পাহাড় পিছনে রাখ, পাহাড় পিছনে রাখ! তখন আমরা দিক পরিবর্তন করলাম এবং আল্লাহ্ আমাদেরকে বিজয় দান করলেন।

৪) খালেদ ইবন ওলীদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কাফেরদের একটি কেল্লা অবরোধ করে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানালেন। তখন তারা বলল, আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করব না যতক্ষণ না তুমি আমাদের দেওয়া পানীয় পান করবে, অথচ তারা গোপনে সে পানীয়ে বিষ মিশ্রিত করেছিল। কিন্তু খালিদ তা জানতেন না। খালেদ ইবন ওলীদ সে পানীয় পান করলেন এবং আল্লাহর মেহেরবাণীতে এতে তার কোনই ক্ষতি হয় নি।

 জ্বিন বা শয়তানের মাধ্যমেও কি এধরণের অসাধারণ কিছু ঘটনা ঘটতে পারে?

শয়তানও কিছু মানুষের দ্বারা এধরণের অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তবে শয়তান ঐসমস্ত লোকদের মাধ্যমে তা ঘটায় যারা কুরআন এবং হাদীস থেকে দূরে। যেমন, কোনো ব্যক্তি হাওয়ার মধ্যে উড়ে যাচ্ছে, জ্বলন্ত আগুনে হাত দিচ্ছে ইত্যাদি। এটা অবশ্য মানুষ সে ব্যক্তির ঈমান ও চারিত্রিক দিকের তাকিয়েই পার্থক্য করে নিতে পারে।

 কোন ভালো মানুষকে নিয়েও কি জ্বিন বা শয়তান এসমস্ত কিছু করতে পারে?

হ্যাঁ, এটাও সম্ভব, যেমন ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) তিনি তাঁর নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যখন আমি মিসরে জেলে বন্দি ছিলাম, তখন তুর্কির এক অঞ্চলে জ্বিন আমার আকৃতি ধারণ করে মানুষকে বলতে লাগল যে, আমি ইমাম ইবনু তাইমিয়া এবং সে ওখানে আমার আচার আচরণ এবং চাল চলনের মত সব কিছু করতে লাগল, তখন সেখানকার শাসক মারদীন এই বার্তা দিয়ে মিসরের বাদশার নিকট একজন দূত পাঠাল, তারা বিষয়টিকে অলৌকিক কোনো বিষয় বলে মনে করল, ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ আমি তখনো বন্দি অবস্থায় ছিলাম এবং এটা ছিল একজন মুসলিম জ্বিনের কাজ যে আমাকে ভাল জানত এবং তার ভাল জানা থেকে সে তা করেছিল, লোকেরা ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহকে বললঃ এটাকে আপিনি জ্বিন বলছেন কেন? সে তো ফেরেশতাও হতে পারে? উত্তরে ইমাম বললেনঃ না ফেরেশ্তা কখনো মিথ্যার আশ্রয় নেয় না। (মাজমূ ফাতাওয়া,খ.১৩ পৃ.৯২)

 যারা এধরণের সংবাদ প্রচার করে তাদের সত্য মিথ্যা কিভাবে বুঝা যাবে?

প্রথমতঃ যে লোক বলছে তার আমল আখলাক ভাল হওয়া।

দ্বিতীয়তঃ যখন সে এ ধরণের কোনো কথা বলছে তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করে তাকে ঝাড় ফুঁক করা, যদি বিষয়টি শয়তানী হয় তাহলে তা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

 উপসংহার

পরিশেষে প্রিয় পাঠকদেরকে বলতে চাই বিষয়টি জ্বিন, শয়তান বা আধুনিক প্রযুক্তির তেলাসমতিও হতে পারে, তবে এ ক্ষেত্রে বার্তাবাহককে উল্লেখিত পদ্ধতি যাচাই করলে সংশয় দূরীভূত হবে ইনশা আল্লাহ্।

 তথ্য সূত্রঃ

১- আল ফুরকান বাইনা আওলিয়ায়ির রহমান ওয়া আওলিয়ায়িশ-শাইতান।

২- আল আক্বীদা আল ওয়াসেতিয়্যাহ, মাজমূ ফাতাওয়া লি শাইখিল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা।

৩- শাইখ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহর) ওয়েব পেইজ।