ভাষা ও মাতৃভাষা : আল্লাহর বিশেষ দান
ক্যাটাগরিসমূহ
Full Description
ভাষা ও মাতৃভাষা : আল্লাহর বিশেষ দান
[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]
আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
2013 - 1434
نعمة اللغة واللغة الأم
« باللغة البنغالية »
علي حسن طيب
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
2013 - 1434
ভাষা ও মাতৃভাষা : আল্লাহর বিশেষ দান
মানুষের প্রতি আল্লাহর যেসব নিয়ামত ও দানের কথা প্রাতস্মরণীয় ভাষা তার অন্যতম। বৈচিত্র্যময় ভাষা আর নিরূপম বাক প্রতিভার গুণে মানুষ অন্য সব প্রাণী থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। গণমাধ্যমের চরমোৎকর্ষের এ যুগে নিত্যনতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। বাকপ্রতিভা থাকাতেই মানুষ সেসব কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারছে। আল্লাহ মানুষকে বাকশক্তি দিয়েছেন বলেই এত সব আবিষ্কার স্বার্থক হচ্ছে। বাকশক্তির বদৌলতে মানুষ গান গেয়ে আমোদিত হয়। কবিতা আবৃত্তি করে নিজে তৃপ্ত হয়। বক্তব্য দিয়ে শ্রোতাকে মুগ্ধ ও বিনোদিত করে। তাই ভাষার এ নেয়ামতের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন,
﴿ ٱلرَّحۡمَٰنُ ١ عَلَّمَ ٱلۡقُرۡءَانَ ٢ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ ٣ عَلَّمَهُ ٱلۡبَيَانَ ٤ ﴾ [الرحمن: ١، ٤]
‘পরম করুণাময়, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে শিখিয়েছেন ভাষা।’ {সূরা আর-রহমান, আয়াত : ১-৪}
নিপুণ শিল্পকুশলতায় আল্লাহ যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বসুন্ধরা সৃষ্টি করেছেন, তেমনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনি নানা বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক বানিয়ে। মানুষের গোত্র ও গাত্রবর্ণ, স্বরের রুক্ষ্মতা-কোমলতা, দৈহিক উচ্চতা-খর্বতা আর রুচি-অভিরুচির ভিন্নতার মতো তার ভাষায়ও দিয়েছেন নান্দনিক বিভিন্নতা। আল-কুরআনুল কারীমে তাই মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি আর রকমারি সৃষ্টির মতো ভাষার বিভিন্নতাকেও আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ خَلۡقُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفُ أَلۡسِنَتِكُمۡ وَأَلۡوَٰنِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّلۡعَٰلِمِينَ ٢٢ ﴾ [الروم: ٢٢]
‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে। {সূরা আর-রূম, আয়াত : ২২}
পৃথিবীতে ঠিক কতগুলো ভাষা রয়েছে তা অনুমান করা খুব কঠিন। তবে ধারণা করা হয় এর সংখ্যা প্রায় ৩০০০ থেকে ৮০০০ হবে। ঈথনোলোগ (Ethnologue) নামের ভাষা বিশ্বকোষের ২০০৯ প্রকাশিত ১৬তম সংস্করণের হিসেব মতে জীবিত ভাষার সংখ্যা প্রায় ৬৯০৯। ইউকিপিডিয়ার তথ্যমতে, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ৭৩৩০টি ভাষার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এতগুলো ভাষার মধ্যে প্রত্যেক জাতির কাছেই নিজ মাতৃভাষা অতুলনীয়। মাতৃভাষার গুরুত্ব সব জাতির কাছেই আলাদা। মাতৃভাষার প্রতি আবেগই অন্যরকম। মাতৃভাষায় যেভাবে মানুষ মনের কথা তুলে ধরতে পারে অন্য ভাষায় তা পারে না। আমাদের হাসি-কান্না আর আনন্দ-বেদনা কিংবা বৈরিতা-মিত্রতা আর আশা-হতাশার সবই প্রকাশ করে মাতৃভাষা। শিশুর প্রতি মা জননীর তুলনারহিত স্নেহ, মায়ের প্রতি শিশুর অস্ফূট ভালোবাসা আর তরুণ-তরুণীর নন্দিত-নিন্দিত সব ভালোবাসারই দূতিয়ালি করে এই মাতৃভাষা। পৃথিবীর প্রত্যেক জাত-বর্ণের লোকই তাই মায়ের মতোই ভালোবাসে তার মাতৃভাষাকে।
মাতৃভাষার গুরুত্ব শুধু ভৌগলিক বা ঐতিহাসিক কারণ অবধি সীমিত নয়; ধর্মীয়ভাবেও মাতৃভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। যুগে যুগে মানুষকে সুপথ দেখাতে আসা সব মহামানবই গুরুত্ব দিয়েছেন মাতৃভাষার প্রতি; কেননা স্বজাতির হৃদয় স্পর্শ করতে এরচে উত্তম ভাষা আর হয় না। সেহেতু তাঁরা আল্লাহর দেয়া নবুওয়তের দায়িত্ব পালনে মাতৃভাষাকেই বাহন হিসেবে করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهِۦ لِيُبَيِّنَ لَهُمۡۖ فَيُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٤ ﴾ [ابراهيم: ٤]
‘আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে বর্ণনা দেয়, সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৪}
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ পয়গম্বর তথা আল্লাহর দূত মুহাম্মদ রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাই মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করেন নি। আল্লাহর বিশেষ হিকমতের কারণে উম্মী তথা নিরক্ষর থাকা এই নবীও দেখা যায় দাওয়াত তথা স্বজাতির কাছে রবের বার্তা প্রচারে মাতৃভাষার প্রতি গুরুত্বের ইঙ্গিত করেছেন। অন্যসব ক্ষেত্রের মতো তিনি বরং মাতৃভাষায়ও শ্রেষ্ঠ আরব ছিলেন। এ কোনো কবি-সাহিত্যিক বা ঐতিহাসিকের দাবি নয়। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবাদী লোকটিই ভাষা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তিনি নিজে আরবদের মধ্যে সবচে শুদ্ধভাষী ব্যক্তি ছিলেন; কারণ, তিনি কুরাইশ বংশীয় সন্তান আর তিনি বেড়ে উঠেছিলেন ভাষার দিক থেকে প্রসিদ্ধ আরবের তৎকালীন সা‘দ ইবন বকর গোত্রে।
যত্নসহ ভাষা লালন তথা শুদ্ধভাবে জানা এবং চর্চা করা মাতৃভাষার গুরুত্বের অপরিহার্য দাবি। শুদ্ধভাবে মাতৃভাষা বলতে ও লিখতে পারা যে কোনো দায়িত্বসচেতন নাগরিকের কর্তব্য। আর মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বানকারী মুবাল্লিগ ও দীন প্রচারক আলিমদের জন্য এর গুরুত্ব আর সবার চেয়ে বেশি। সব ভাষাই আল্লাহর নেয়ামত বা দান হিসেবে কোনোটাই অকারণ পূজনীয় বা বর্জনীয় নয়। কেবল পবিত্র কুরআন ও হাদীসের ভাষা এবং ইসলামী জ্ঞানের সবচে বড় ও বিশ্বস্ত ভাণ্ডার হিসেবে আরবিই যা আলাদা গুরুত্ব ও মর্যাদার অধিকারী সকল মুসলিমের কাছে। কিন্তু আরবীর গুরুত্ব যদি হয় ইসলামী জ্ঞান আহরণের স্বনির্ভর ঠিকানা বলে তবে সেই জ্ঞান প্রচারের অপরিহার্য দায়িত্ব ও দাওয়াতে দীনের জিম্মাদারির কারণে অনন্য গুরুত্বের দাবি রাখে মাতৃভাষা। আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক ফেরাউনের কাছে অমোঘ সত্যের বাণী পৌঁছানোর দায়িত্ব পেয়ে তাই মুসা আলাইহিস সালাম আপন ভাই হারুনকে চাইলেন সহযোগী হিসেবে। নিজের ভাষায় কিছুটা জড়তা আর ভাইয়ের ভাষা উন্নততর হওয়ায় তিনি এ আবেদন জানান। চলুন কুরআন খুলে দেখি :
﴿ وَأَخِي هَٰرُونُ هُوَ أَفۡصَحُ مِنِّي لِسَانٗا فَأَرۡسِلۡهُ مَعِيَ رِدۡءٗا يُصَدِّقُنِيٓۖ٣٤ ﴾ [القصص: ٣٤]
‘আর আমার ভাই হারূন, সে আমার চেয়ে স্পষ্টভাষী, তাই তাকে আমার সঙ্গে সাহায্যকারী হিসেবে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সমর্থন করবে।’ {সূরা আল-কাসাস : ৩৪}
প্রাসঙ্গিকভাবে বলতে হয়, বাঙালী নাকি হুজুগে জাতি। কথাটার ঐতিহাসিক ভিত্তি জানি না। তবে কথাটা যে অমূলক নয় তার প্রমাণ আমার ছোট্ট জীবনে ঢের মিলেছে। জাতীয় দিবসগুলোয় আমরা পথে নেমে আসি। দেশের প্রতি ভালোবাসা আর আবেগ উথলে ওঠে সবার চেতনা এবং শ্লোগানে। কিন্তু ভালোবাসার ব্যাকরণের কঠিন নিয়ম হলো, এ কোনো দাবি বা প্রদর্শনের বিষয় নয়। ভালোবাসা চর্চা ও অনুশীলনের বিষয়। লালন ও প্রমাণের বিষয়। স্ববিস্ময়ে ভাবি, যে জাতি ১৬ ডিসেম্বর আর ২৬ মার্চে এমন বিপুল উন্মাদনায় আলোড়িত-আন্দোলিত হয় সে জাতি কিভাবে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়! দেশমাতৃকার জন্য যে জাতি অকাতরে প্রাণ কোরবান করে তারা কিভাবে কানাকড়ির জন্য দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়! তারা কিভাবে দেশের স্বার্থ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে দেখেও নির্বিকার থাকে!
ভাষার জন্য জীবন দান করে আমরা সারা বিশ্বে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছি। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ এখন আর কেবল আমাদের শহীদ দিবস নয়; বিগত কয়েক বছর যাবৎ তা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের সব সদস্যরাষ্ট্রে। ফেব্রুয়ারি এলেই সারা দেশে প্রবলভাবে ভাষাজ্বর শুরু হয়। মাতৃভাষার ভালোবাসা তখন মুখের শ্লোগান আর বিজ্ঞাপনের ভাষায় পরিণত হয়। এসব আবেগকে নেতিবাচক ভাবার উপায় ছিল না যদি না উচ্ছল তারুণ্যের টি-শার্ট আর বাংলার নারীর চিরায়ত শ্যামল সৌন্দর্যের শাড়িতে এই ভাষাপ্রেম আটকে থাকত। যে দেশের ক্ষুদে কিশোর থেকে নিয়ে অবুঝ শিশুরা পর্যন্ত ভাষার টানে কিংবা মাতৃভাষার প্রেমে শহীদ মিনারে! গিয়ে তৃপ্তি পায়। সে দেশেই আবার কিভাবে মাতৃভাষা না জানা প্রজন্ম গড়ে ওঠার সুযোগ পায় ইংলিশমিডিয়াম স্কুলের অপশাসনে! কেন সেদেশের কোনো অনুষ্ঠান জমবে না অপসংস্কৃতির জোয়ার তুলে নিজেই ক্রমাগত আতলে হারিয়ে যেতে থাকা হিন্দিগান ছাড়া! স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশেই কেন ভাষাসচেতনদের লড়তে হবে বাংলিশ নামের অশিষ্ট ভাষার বিরুদ্ধে!
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাতৃভাষা ভাষা ছিল আরবী। তিনি সারা জীবনে নিজ মাতৃভাষায় একটি অশুদ্ধ বাক্যও উচ্চারণ করেন নি; বরং অন্যদের মাতৃভাষা বিশুদ্ধভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে জ্ঞানের পথ উন্মুক্ত করেছেন। আবার কখনও কখনও তিনি যুদ্ধবন্দীদেরকে ভবিষ্যত প্রজন্ম সন্তান-সন্তুতিদের জন্য নিছক ভাষার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে, ভাষা শিক্ষা প্রদানের বিনিময়ে তাদেরকে মুক্তও করে দিয়েছেন। [তাবাকাতে ইবন সা‘দ]
অথচ আমাদের দেশে এখন কোনো পরিবারে মাতৃভাষা না জানা কৃতিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেরা অশুদ্ধ ইংরেজি বলার বদ অভ্যাসের সঙ্গে নিজেদের সন্তানদেরও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে দিয়ে মাতৃভাষা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আরও দুঃখের বিষয় হলো, এমন অনেক শিক্ষিত আছেন, যারা মাতৃভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা তো দূরের কথা, শুদ্ধ উচ্চারণে মাতৃভাষায় কথা বলতে পর্যন্ত পারেন না।
এদিকে এফএম রেডিও আর কিছু ক্ষ্যাপাটে অর্বাচীন তরুণ-তরুণী টিভি উপস্থাপনায় বাংলিশ তথা বাংলা-ইংরেজির জগাখিচুরি রসায়নে বাংলার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। এদের উৎপাত-অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের ভাষাবিদ, কবি-সাহিত্যিক থেকে নিয়ে সচেতন রাজনীতিবিদরা পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ-সমালোচনামুখর না হয়ে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রীও দু’ বছর আগে ২১ শে বইমেলা উদ্বোধন করতে গিয়ে বিজাতীয় ভাষার আগ্রাসন থেকে বাংলাকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু কোন শক্তি আর ক্ষমতাবলে যে এফএম প্রজন্মের জনকরা অব্যাহতভাবে মাতৃভাষা বাংলার সৌন্দর্য হরণ করছে তা বোধগম্য নয়। মনে হয় রাষ্ট্রের প্রধান দুই স্তম্ভ তথা সংসদ ও আদালতের দৃঢ় হস্তক্ষেপ ছাড়া এদের খামখেয়ালি বন্ধ হবে না।
দয়াময় আল্লাহ যার মুখে লালিত্যপূর্ণ ভাষা দিয়েছেন, মনের ভাব শব্দে প্রকাশে বাকশক্তি দিয়েছেন সে বড় ভাগ্যবান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই বলেছেন,
«إِنَّ مِنَ البَيَانِ لَسِحْرًا»
“নিশ্চয় ভাষাশৈলিতে জাদু রয়েছে”। [বুখারী, ৫১৪৬] অর্থাৎ ভাষার যে জাদুকরি প্রভাব রয়েছে তা অনস্বীকার্য।
তাই মানুষকে আল্লাহর সব নেয়ামতের সঙ্গে ভাষার নেয়ামতেরও যথার্থ মূল্যায়ন করা উচিত। ভাষার নেয়ামতের কদর করা মানে অশুদ্ধ শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ না করা, মিথ্যা বাক্য ব্যবহার না করা, শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা, মাতৃভাষায় সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজে নিষেধ করা এবং ভাষার অপপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকা। মাতৃভাষায় সুন্দর ও শুদ্ধ উচ্চারণে মার্জিতভাবে কথা বলাকে যদি বলা হয় স্বর্ণ, আর সে কথাই যদি হয় সৎ কাজের আদেশ, অসৎকাজের বারণ এবং অপরের কল্যাণ কামনা, তবে তা হয় হীরের চেয়েও দামি।
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুকাল থেকেই বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলতেন। তিনি জীবনে একটি মিথ্যা বাক্যও উচ্চারণ করেন নি। বচনে, আচরণে, পোশাকে, আখলাকে পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ থাকাই ছিল তাঁর বৈশিষ্ট্য। তাঁর ভাষা ছিল শুদ্ধ এবং উচ্চারণ ছিল সুস্পষ্ট। তিনি দ্রুত বাক্য বলতেন না। তাঁর প্রতিটি বাক্যই শুধু নয়, প্রতিটি অক্ষরও অন্যরা বুঝতে পারতেন। তাঁর ভাষণ পদ্ধতি এমন ছিল যে, যত বড় মাহফিল হতো, তাঁর স্বর তত উচ্চ হতো। যার ফলে বিদায় হজে আরাফার ময়দানে (মাইক ছাড়া) লাখ লাখ মানুষের তাঁর ভাষা বুঝতে অসুবিধা হয় নি।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মাতৃভাষা মতো নেয়ামতের যথার্থ কদর করার তাওফীক দান করুন। ভাষার অপপ্রয়োগ ও অপভাষা থেকে বেঁচে বলার তাওফীক দান করুন। আমীন।