×
এটি মূলত মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের ভালোবাসায় একজন রুশ নারীর ইসলামগ্রহণ ও পবিত্র অনুবাদের এক চমকপ্রদ গল্প, যা ইন্টারনেটে প্রাপ্ত আরবী থেকে ভাষান্তর করা হয়েছে।

    কুরআনের ভালোবাসায় রুশ নারীর ইসলাম গ্রহণ এবং রুশ ভাষায় কুরআনের ভাষান্তর

    [ বাংলা – Bengali – بنغالي ]

    আলী হাসান তৈয়ব

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    2012 - 1433

    ﴿ بسبب حب القرآن اعتنقت الإسلام وترجمت القرآن إلى الروسية ﴾

    « باللغة البنغالية »

    علي حسن طيب

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    2012 - 1433

    কুরআনের ভালোবাসায় রুশ নারীর ইসলাম গ্রহণ এবং রুশ ভাষায় কুরআনের ভাষান্তর

    বিশ বছরের অধিককাল আগে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে তাঁর করা কুরআনের অর্থানুবাদকে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা অন্যতম সেরা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুবাদ হিসেবে গণ্য করছেন। তিনিই এগিয়ে এসেছেন রাশিয়ায় কুরআনুল কারীমের ক্ষেত্রে অনেক গবেষণাকারী ও বিজ্ঞজনদের মৃত্যুজনিত অভাব পূরণে।

    তিনি হলেন রাশিয়ান নারী ভেলেরিয়া বোরোচভা (Valeria Borochva)। নিজের কুরআন অনুবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত আমাকে তার প্রেমিক বানিয়েছে আর এ ভালোবাসাই আমাকে তা রুশ ভাষায় অনুবাদে অনুপ্রাণিত করেছে।’

    ভেলেরিয়া বোরোচভা কিন্তু কোনো আলেমা বা ইসলামবিশেষজ্ঞ নন। ইসলামের আইনশাস্ত্র বা ফিকহ বিষয়েও তিনি কোনো ডিগ্রিধারী নন। হ্যা, তাঁর বিশেষত্ব হলো তিনি রাশিয়ান ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ সমাপ্ত করেছেন। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার ৬০ মিলিয়ন মুসলিমের জন্য যা এক গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি হিসেবে বরিত ও প্রশংসিত হচ্ছে।

    আল-আরাবিয়া ডট নেটকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর রুশ ভাষায় মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অনুবাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী সিরিয়ার দামেস্ক শহরে বসবাসকারী এক আরব। তাঁর সঙ্গে আমি ১০ বছর কাটাই দামেস্কে। ইতোপূর্বে আমি আরবী জানতাম না। সেখানেই আরবী শিখি। আরবী শেখার পর সেখানে আমি একটি আরবী-রুশ অভিধান রচনা করি।’

    তিনি আরও বলেন, ‘আমার শ্বশুর একজন ধার্মিক পুরুষ ছিলেন। তাঁর একটি বড় লাইব্রেরি ছিল। সেখানে নিয়মিত অধ্যয়নের পাশাপাশি আমি পূর্ণ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কুরআন তরজমায় মনোনিবেশ করি। দামেস্ক থেকে ফি বছর মিশরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি গবেষণা একাডেমির উদ্দেশ্যে সফর করতাম। একাডেমিতে ছিল একটি অনুবাদ দপ্তর। দশ পারা অনুবাদ সম্পন্ন করার পর একাডেমির আলেমগণ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন। আরবী ও রুশ ভাষা জানা তিন বিজ্ঞ আরব ও দুই রাশান আলেম সদস্যের এ কমিটি খুব ভালোভাবে আমার তরজমা পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।’

    বোরোচভা উল্লেখ করেন, প্রথমে এ বোর্ড তাঁর তরজমা সম্পর্কে অনেক টীকা যোগ করেন। পাশাপাশি তাঁরা অনুবাদের ভূয়সী প্রশংসাও করেন। তাঁরা বলেন, অনুবাদ হয়েছে প্রথম শ্রেণীর। এ কারণেই আমরা এর অধ্যয়ন ও মূল্যায়ন চালিয়ে যেতে পারছি। এর মধ্যে যদি অনেক ভুল-ভ্রান্তি পেতাম তবে পর্যবেক্ষণে আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারতাম না। প্রতিবারই তাঁরা অনুবাদ সম্পর্কে বৈঠক বসতেন এবং এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতেন।’

    তিনি জানান, তাঁকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে সিরিয়ায় বসবাসের সুবাদে তা সহজেই ডিঙ্গানো সম্ভব হয়েছে। সিরিয়ার সাবেক মুফতী শায়খ আহমদ কিফতারো এবং তার পুত্র শায়খ মাহমুদ কিফতারো সবসময় তাকে সাহায্য করেছেন। প্রেরণা এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিনিয়ত অনেক বিষয়ে তাঁদের জিজ্ঞেস করেছি। প্রয়োজনীয় সব কিছুই তাঁদের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি। তেমনি ড. যুহাইলিরও সাহায্য নিয়েছি, যার কাছে কুরআনুল কারীমের তাফসীর সংক্রান্ত অনেক কিতাব ছিল।’

    তিনি যোগ করেন, ‘বহু আলেম আমাকে সাহায্য করেছেন। ‘আমি ভেলেরিয়া যদি একা একা বসে থাকতাম তাহলে কুরআনের তরজমায় অনেক ভুল হত।’ নিজের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসমানী গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের ভালোবাসাই আমাকে ইসলামে দীক্ষিত হতে প্রেরণা ও চেতনা জুগিয়েছে। আমার বিশ্বাস, খোলা মন নিয়ে যিনিই এ কুরআন শেষ পর্যন্ত পড়বেন, শেষাবধি তাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বলতেই হবে।’

    অনুবাদের মুদ্রণ ব্যয় সংগ্রহ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শেখ যায়েদ ইবন সুলতান (আল্লাহ তার ওপর রহমত করুন) আল-আজহার একাডেমির কাছে একটি চিঠি পাঠান, তরজমা যথার্থ কি-না তিনি তা জানতে চান। নিশ্চিত হবার পর ২৫ হাজার কপি অনুবাদ ছাপার খরচ বহনে আগ্রহ প্রকাশ করেন শেখ যায়েদ। এ পর্যন্ত অর্ধ মিলিয়ন কপি অনুবাদ ছাপা হয়েছে। সৌদি আরবের শায়খ খালেদ কাসেমীও অনেক কপি ছাপিয়েছেন। লিবিয়া ও কাতারে থেকেও এ অনুবাদ ছাপা হয়েছে।’

    সূত্র : ইন্টারনেট