×
আমাদের পূর্ব পুরুষগণ জানতেন, রমযান হচ্ছে কর্ম, জিহাদ ও আমলের মাস, ঘুম-কর্মহীনতা কিংবা অলসতার মাস নয়। তারা জানতেন আল্লাহর জমিনে তার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইবাদত, তাহাজ্জুদ ও জিহাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু পরবর্তী যুগে আমরা এ রমযানকে ছুটি, অবসর ও অলসতার মাসে পরিণত করেছি। আমাদের অনেকে এ মাসের রাতে জাগ্রত থাকে আর দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমায়, যা কখনোই সমীচীন নয়। এ মাসে বহু যুদ্ধ সংগঠিত হয় ও মুসলিমগণ তাতে বিজয় লাভ করেন। বক্ষ্যমান নিবন্ধে সম্মানিত লেখক এসব বিষয় নিয়ে সার্থক আলোচনার প্রয়াস পেয়েছেন।

    ইবাদত ও কর্ম ইসলামের দু’টি শাখা, যা কখনো পৃথক হয় না, বরং একে অপরের সাথে ওতপ্রোত জড়িত। মূলত যে ইবাদতের মাধ্যমে মুসলিম তার রবের সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করে, সে ইবাদত এক প্রকার কর্ম বা আমল। এ ইবাদত হচ্ছে মানুষ সৃষ্টির মূল ও চূড়ান্ত লক্ষ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ ٥٧ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ ٥٨﴾ [الذاريات: 56-58]

    “আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই ‎সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত ‎করবে।‎ আমি তাদের কাছে কোন রিয্ক চাই ‎না; আর আমি চাই না যে, তারা ‎আমাকে খাবার দিবে।‎ নিশ্চয় আল্লাহই রিয্কদাতা, তিনি ‎শক্তিধর, পরাক্রমশালী”। সূরা যারিয়াত: (৫৬-৫৮)

    আবার কর্ম এক প্রকার ইবাদত, যা কারো নিকট অস্পষ্ট নয়। কারণ এ কর্মের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর জমিনে তার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে, যা মানুষ সৃষ্টির বড় লক্ষ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿هُوَ أَنشَأَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ وَٱسۡتَعۡمَرَكُمۡ فِيهَا فَٱسۡتَغۡفِرُوهُ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِۚ إِنَّ رَبِّي قَرِيبٞ مُّجِيبٞ ٦١﴾ [سورة هود:61]

    “তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে ‎এবং সেখানে তোমাদের জন্য আবাদের ‎ব্যবস্থা করেছেন ‎। সুতরাং তোমরা তাঁর কাছে ‎‎ক্ষমা চাও, অতঃপর তাঁরই কাছে তাওবা কর। ‎নিশ্চয় আমার রব নিকটে, সাড়াদানকারী”।‎ [সূরা হুদ: (৬১)]

    কর্ম ও ইবাদত যেহেতু ইসলামের দু’টি শাখা, একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গী জড়িত, তাই আল্লাহ তা‘আলা ইবাদত হিসেবে যেমন সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন, অনুরূপ তিনি কর্মেরও নির্দেশ দিয়েছেন ইবাদত হিসেবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٠﴾ [الجمعة :10]

    “অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন ‎‎তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর ‎অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে ‎‎বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল ‎হতে পার”। [সূরা জুমু‘আ: (১০)]

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কর্মের সাথে সওমের সংযোগ স্থাপন করেছেন, যে সওম নিরেট ইবাদত:

    , فعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِىُّ , قَالَ : حَدَّثَنِى أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ : قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَمْ أَرَكَ تَصُومُ شَهْرًا مِنَ الشُّهُورِ مَا تَصُومُ مِنْ شَعْبَانَ قَالَ ذَلِكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيهِ الأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِى وَأَنَا صَائِمٌ. أخرجه أحمد 5/201(22096) , و\"النَّسائي\" 4/201.

    আবু সায়িদ মাকবুরি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: উসামা ইব্ন যায়েদ আমাকে বলেছেন: “আমি বলেছি হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কেন শাবানে এতো সওম পালন করেন, অথচ অন্যান্য মাসে আপনাকে এতো সওম পালন করতে দেখি না। তিনি বলেন রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মাস, অধিকাংশ মানুষ এর থেকে গাফেল ও ভ্রুক্ষেপহীন থাকে, এ মাসে আল্লাহর নিকট কর্ম ও আমল পেশ করা হয়, আমি চাই আমার কর্মগুলো সওম অবস্থায় তার নিকট পেশ করা হোক”। আহমদ: (৫/২০১), হাদিস নং: (২২০৯৬), নাসায়ি: (৪/২০১)

    এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‎ সওমকে কখনো অলসতা বা কর্ম পরিত্যাগ করার অজুহাত বা কারণ হিসেবে দাঁড় করানোর সুযোগ দেন নি, বরং সওম ও রমযানকে তিনি কষ্ট ও পরিশ্রমের মৌসুম বানিয়েছেন। জাবের ইব্‌ন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

    خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى مَكَّةَ ، عَامَ الْفَتْحِ ، فِي رَمَضَانَ ، فَصَامَ حَتَّى بَلَغَ كُرَاعَ الْغَمِيمِ ، فَصَامَ النَّاسُ ، فَبَلَغَهُ أَنَّ النَّاسَ قَدْ شَقَّ عَلَيْهِمُ الصِّيَامُ ، فَدَعَا بِقَدَحٍ مِنَ الْمَاءِ بَعْدَ الْعَصْرِ فَشَرِبَ ، وَالنَّاسُ يَنْظُرُونَ ، فَأَفْطَرَ بَعْضُ النَّاسِ ، وَصَامَ بَعْضٌ ، فَبَلَغَهُ أَنَّ نَاسًا صَامُوا ، فَقَالَ : أُولَئِكَ الْعُصَاةُ. أخرجه \"مسلم\" 3/141(2579) و\"النَّسائي\" 4/177 ، وفي \"الكبرى\" 2583.

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে মক্কার অভিযানে বের হন, তিনি সওম অবস্থায় ‘কুরাল গামিম’ নামক স্থান পর্যন্ত পৌঁছান, সাহাবিরাও সওম রেখে ছিল, তার নিকট সংবাদ পৌঁছলে যে, সাহাবিদের পক্ষে সওম খুব কষ্টকর হয়ে গেছে, তিনি আসরের পর পানির একটি পাত্র তলব করে পানি পান করেন, লোকেরা তাকে দেখতে ছিল। অতঃপর কেউ সওম ভঙ্গ করল, কেউ ভঙ্গ করল না। তার নিকট খবর পৌঁছল যে, কতক লোক সওম ভঙ্গ করেনি, তিনি বললেন: তারা হচ্ছে গুনাহগার”। মুসলিম: (৩/১৪১), হাদিস নং: (২৫৭৯), নাসায়ি: (৪/১৭৭), নাসায়ি ফিল কুবরা: (২৫৮৩)

    মুসলিমরাই মূলত রমযানকে ছুটি, অবসর ও অলসতার মাসে পরিণত করেছে, এ মাসের রাতে তারা জাগ্রত থাকে, দিনে ঘুমায়। যদি তারা প্রকৃত পক্ষে সওম পালন করত, আর সওমের মূল ও মহান উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে চেষ্টা করত, তাহলে এ মাসের মধ্যে মুসলিম জাতির ভাগ্যে এমন বহু সফলতা ধরা দিত, যা তাদের অবশিষ্ট বছরের জন্য যথেষ্ট হত।

    মুসলিমদের দীর্ঘ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, এ মাস হচ্ছে কর্ম, পরিশ্রম ও উৎপাদন করার মাস। এ মাস বিজয়ের মাস, এ মাসে অর্জিত হয়েছে মহান ও ঐতিহাসিক একাধিক বিজয়। মুসলিমদের অন্তরে যখন বয়ে যাবে ঈমানের বাতাস, হিল্লোলিত হবে তাদের হৃদয়ে তাকওয়ার স্পন্দন, “আল্লাহু আকবার ধ্বনি”তে তারা প্রকম্পিত করে তুলবে আকাশ-বাতাস, তখনই তাদের নিকট সাহায্য অবতরণ করবে আল্লাহর তরফ থেকে, যদিও তাদের সংখ্যা হয় কম, সামর্থ্য হয় অপ্রতুল। নিম্নে রমযান মাসে সংগঠিত কয়েকটি যুদ্ধ ও তার ফলাফল উল্লেখ করা হল:

    বদর যুদ্ধ: (২য়-হি.)

    দ্বিতীয় হিজরির রমযান মাসে সংগঠিত হয় বদর যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মুসলিমরা বিরাট সফলতা অর্জন করে, যা ছিল ইসলামী ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। সন্দেহ নেই এ যুদ্ধ ছিল ইসলামের প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। এ যুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহ সত্য ও মিথ্যা পৃথক করেন। এর ফলে আল্লাহর দ্বীন হয়েছে সম্মানিত আর বাতিল হয়েছে ভূলুণ্ঠিত। এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ, এটা ছিল ইসলামী রাষ্ট্রসমূহের প্রথম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে যদি আল্লাহ তার দ্বীন, নবী ও বাহিনীকে বিজয়ী না করতেন, তাহলে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যেত, সে কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হত না, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‎ তার রবকে সম্বোধন করে বলেন:

    " اللهم إن تهلك هذه العصابة، فلن تعبد في الأرض " .

    “হে আল্লাহ, তুমি যদি এ বাহিনীকে ধ্বংস কর, তাহলে জমিনে কখনো তোমার ইবাদত করা হবে না”। তাফসির ইব্ন কাসির, সূরা আনফাল: আয়াত: (১৭)

    মক্কা বিজয়: (৮ম-হি.)

    অষ্টম হিজরির রমযান মাসে কুরআনে ঘোষিত ‘ফাতহে মুবিন’ তথা মক্কার স্পষ্ট বিজয় লাভ করে মুসলিম জাতি। এ বছর তারা মক্কার পবিত্র ভূমিকে মূর্তি, মুশরিক ও নাপাক থেকে মুক্ত করেন, ফলে আল্লাহর পবিত্র জায়গায় আল্লাহর দ্বীন বুলন্দ হয়। মদিনাতে দীর্ঘ আট বছর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ও দ্বীন প্রচারে নিরত থেকে এ বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় ফিরে আসেন।

    বুওয়াইব যুদ্ধ: (১৩-হি.)

    ১৩-হি. রমযান মাসে আমীরুল মুমিনিন ওমর ইব্নুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুর জমানায় পারস্যের ফুরাত নদীর উপকূলে "البويب" বুওয়াইব যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এটা ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলিফা আবু বকরের নির্দেশ। মুসলিমদের সেনাপতি ছিল মুসান্না ইব্‌ন হারেসা, মুসলিমগণ পারস্যের উপর জয়ী হয়ে সেখানে ইসলামের ঝাণ্ডা উড্ডিন করেন।

    স্পেন বিজয়: (৯২-হি.)

    ৯২হি. রমযান মাসে তারেক ইব্ন যিয়াদের হাতে স্পেন বিজিত হয়। ‘রডারিক’ এর নেতৃত্বাধীন স্পেন বাহিনী তার নিকট আত্মসমর্পণ করে।

    আম্মুরিয়া বিজয়: (২২৩-হি.)

    ২২৩-হি. রমযান মাসে আম্মুরিয়া বিজিত হয়। আম্মুরিয়া ছিল সে যুগের রোমীদের মজবুত ও শক্তিশালী ঘাঁটি। আব্বাসি খলিফা মুতাসেম বিল্লার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী এ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। এ যুদ্ধের কারণ ছিল রোমীরা বার বার মুসলিমদের উপর আক্রমণ করে তাদের অনেককে বন্দি করে নিয়ে যায়। সেখানে এক নারী মুতাসিমবিল্লার নিকট وامعتصماه" " বলে সাহায্যের আবেদন জানায়। এ আওয়াজ মুতাসিম বিল্লা পর্যন্ত পৌঁছালে সে এক বিরাট বাহিনী তৈরি করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। আল্লাহর মেহের বাণীতে এ যুদ্ধে রোমীরা পরাজিত হয় এবং মুসলিমরা আম্মুরিয়া লাভ করে।

    আইন-জালুত যুদ্ধ: (৬৫৮-হি.)

    আমাদের প্রিয় ভূমি ফিলিস্তিনে ৬৫৮-হি. রমযান মাসে আইন-জালুত যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সেনাপতি মুযাফফর কুতয এর নেতৃত্বে মুসলিম ও তাতারীদের মাঝে সংগঠিত হয় এ যুদ্ধ। কারণ তাতারীরা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় প্রচুর ফেতনা, ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে তাদের অন্তরে ভয় ও ভীতির সঞ্চার করেছিল, তাই সেনাপতি মুযাফফার কুতয অভিযান পরিচালনা করে মোগল সৈন্যদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন।

    এন্টাকিয়া বিজয়: (৬৬৬-হি.)

    ৬৬৬-হি. রমযান মাসে এন্টাকিয়া রাজ্য বিজিত হয়, যা ছিল শাম দেশের ক্রুসেডদের রাজধানী। এ মহান বিজয়ে মুসলিমদের সেনাপতি ছিল সুলতান জাহের বিবারস, তার হাতে ক্রসেডদের পরাজয় হয়।

    শাকহাব যুদ্ধ: (৭০২-হি.)

    ৭০২-হি. রমযান মাসে শাকহাব যুদ্ধ সংগঠিত হয়। শায়খুল ইসলাম ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লার উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় মুসলিমরা এ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। সিরিয়ার বিখ্যাত শহর দামেস্কের নিকট মুসলিম ও তাতারীদের মাঝে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ যুদ্ধের কারণ ছিল তাতারীরা দ্বিতীয়বার মুসলিম শহরসমূহে হামলা চালায়। তখন শাইখুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ কসম দিয়ে আল্লাহর নিকট যুদ্ধ জয়ের সাহায্য প্রার্থনা করে ছিলেন। অতঃপর তিনি মুসলিমদের সওম ভঙ্গের নির্দেশ দেন, যেন শত্রুদের বিপক্ষে তারা দুর্বল না হয়ে পড়ে। অধিক ইবাদতকারী, মর্দে-মুজাহিদ ইব্ন তাইমিয়ার কসম আল্লাহ রক্ষা করেছেন। সত্যের বাহিনী মুসলিম বীরগণ এ যুদ্ধে তাতারীদের পরাজিত করে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করে।

    দশই রমযান: (১৩৯৩-হি.)

    ১৩৯৩-হি. মোতাবেক ৬-অক্টোবর ১৯৭৩-ই. মিসর ও আরবের মুসলিমরা সিনাই ভূ-খণ্ডে ইহুদিদের মোকাবিলা করে, যাদের অভ্যাস ছিল নবী ও নেককার লোকদের হত্যা করা। এ যুদ্ধে মিসরিরা ইহুদিদের পরাজিত করে তাদের থেকে সিনাই উপত্যকা উদ্ধার করে, ইতিপূর্বে কয়েক বছর যাবত যা ক্রসেডদের দখলে ছিল।

    আমাদের পূর্বপুরুষ, প্রথম যুগের মুসলিমগণ জানতেন, রমযান হচ্ছে কর্ম, জিহাদ ও আমলের মাস, ঘুম-কর্মহীনতা কিংবা অলসতার মাস নয় রমযান। তারা জানতেন আল্লাহর জমিনে তার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইবাদত, তাহাজ্জুদ ও জিহাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

    আব্দুল্লাহ ইব্ন মুবারক রহ. যখন তার বিখ্যাত কবিতা ফুজায়েল ইব্ন আয়াজের নিকট প্রেরণ করেন, ফুজায়েল রহ. আব্দুল্লাহ ইব্ন মুবারকের কবিতা পাঠ করে ক্রন্দন করতে থাকেন, অতঃপর বলেন: আবু আব্দুর রহমান সত্য কথাই বলেছেন, তিনি আমাকে সঠিক উপদেশ দিয়েছেন। ফুজায়েল হারাম শরিফ খেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হতেন না, কারণ সেখানে এক সালাত অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাতের সমান। আর আব্দুল্লাহ ইব্ন মুবারক থাকতেন জিহাদের ময়দানে। দেখুন: সিয়ারে আলামিন নুবালা: (৮/৪১২)

    নিচে আব্দুল্লাহ ইব্ন মুবারকের কবিতার কিছু অংশ তুলে ধরা হল:




    অতএব রমযান মাস আমরা অলসতা, কর্মহীনতা বা বেকারত্বসহ অতিবাহিত করব না। এতে আমরা আমাদের প্রতিটি কাজ-কর্ম ও আমল দৃঢ় ও সুন্দরভাসে সম্পন্ন করব, কারণ কোন কাজ সুন্দর করা তাকওয়ার দলিল, আর তাকওয়ার অনুশীলন হচ্ছে সওমের প্রধান উদ্দেশ্য ও অন্যতম লক্ষ্য।