×
শুধু রমযানে নয় বরং মুমিনের উচিৎ সকল মাসেই আল্লাহর ইবাদত-আরাধনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা শুধু রমযানের নন বরং সকল মাসেরই রব। তাই শুধু রমযান মাসকে ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট করা বোকামী বৈ অন্য কিছু নয়। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে এ বিষয়টিরই আলোচনা স্থান পেয়েছে।

    হয়ো না তুমি রমযানের ‘আবেদ

    لا تكن رمضانياً

    < بنغالي >

    মুহাম্মাদ আল-হামুদ আন-নজদী

    محمد الحمود النجدي

    —™

    অনুবাদক: চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: أبو الكلام أزاد

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    হয়ো না তুমি রমযানের ‘আবেদ

    আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বন্ধু। আমরা সবাই তার প্রিয় বান্দা হতে চাই। কিন্তু কীভাবে? ক্ষণিকের তরে ইবাদত করলে কীভাবে তুমি আল্লাহর প্রিয় হবে? মাহে রমযান ইবাদতের মৌসুম বটে; কিন্তু তার মানে কি রমযান চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইবাদত ফুরিয়ে যাবে? দীর্ঘ এক মাস যাবৎ যে সকল আমলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেছে তা সারা বছরই বাকী থাকে। এমনকি যতদিন জীবিত থাকে ততদিনই অবশিষ্ট থাকে। প্রকৃত মুমিন মৃত্যু পর্যন্ত আমল করতে থাকে।

    জনৈক বুযুর্গকে বলা হলো অনেক মানুষকে শুধুমাত্র রমযানে ইবাদত করতে দেখা যায়। তিনি বলেন: সে জাতি বড়ই হতভাগ্য, যারা কেবলমাত্র রমজানেই আল্লাহর হক সম্পর্কে সচেতন থাকে। যে ব্যক্তি সারা বছর ঠিকমত ইবাদত করে সে-ই প্রকৃত সফল নেককার। আল-কুরআনে এসেছে:

    ﴿وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩ ﴾ [الحجر: ٩٩]

    “তুমি মৃত্যু আসা পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত করতে থাক।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯৯]

    ইমাম ইবন রজব রহ. বলেন: মাস, বছর, দিন-রাত, মৃত্যু ও আমলের সময় নির্ধারক। আস্তে আস্তে এগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে; কিন্তু যে সত্তা এগুলোর অস্তিত্ব দান করেছেন তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। তিনি সর্বযুগে সব সময় একক ও অদ্বিতীয়। বান্দার ইবাদত সম্পর্কে সর্বদা তিনি সচেতন। প্রতিদিন প্রতি মূহুর্তে বান্দা আল্লাহ তা‘আলার কোনো না কোনো নে‘আমতে ডুবে থাকে। মুমিন বান্দার জীবনে এমন কোনো মুহূর্ত অতিবাহিত হয় না, যে সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত কোনো না কোনো দায়িত্ব না থাকে। খাঁটি মুমিন সর্বদা আশা ও ভয়ের মাঝে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে তাঁর নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। আমলের ক্ষেত্রে আল্লাহর সত্যিকার বান্দা কখনও বিরক্ত বোধ করে না। তাছাড়া রবের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য ব্যতীত বান্দার চাওয়া পাওয়ার আর কি-ই-বা থাকতে পারে?

    আল্লাহর আনুগত্য ব্যতীত যে সময়টুকু অতিবাহিত হয়েছে তা বিফল। তাঁর যিকির থেকে বিমুখ থাকার সময়টুকু আক্ষেপ ও অনুশোচনার কারণ। শত আফসোস ঐ সময়ের ওপর, যা আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে নষ্ট হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো আমল শুরু করলে, তা রীতিমত করার চেষ্টা করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও অন্যান্য মাসে রাত্রিকালীন সালাত এগার রাকা‘আতের বেশি পড়তেন না। অতএব, বুঝা গেল, তিনি অন্যান্য মাসেও কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন।

    মাহে রমযানে কোনো আমল বা অযীফা ছুটে গেলে তা শাওয়ালে ক্বাজা করে নিতেন। একবার তিনি রমযানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করতে পারেন নি। পরে তা শাওয়াল মাসের প্রথম দশ দিনে আদায় করে নিয়েছেন।

    বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ সহীহ মুসলিমে আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি রমযান মাসের সাওম পালনের পর শাওয়াল মাসে ৬টি সাওম রাখবে, সে যেন সারা বছরই সাওম পালন করলো।”

    মাহে রমযানের পর সাওম রাখার তাৎপর্য:

    আল্লামা ইবন রজব রহ. বলেন, শাওয়াল মাসে সাওম পালন করার তাৎপর্য অনেক। রমযানের পর সাওম পালন রমযানের সাওম কবুল হওয়ার আলামতস্বরূপ। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কোনো বান্দার আমল কবুল করলে তাকে পরেও অনুরূপ আমল করার তৌফিক দিয়ে থাকেন। নেক আমলের প্রতিদান বিভিন্নরূপ। তার মধ্যে একটি হলো পুনরায় নেক আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করা। তাই সালাত, সাওম ও অন্যান্য ইবাদত বাকি এগার মাসেও চালু রাখা চাই। কেননা যিনি রমযানের রব, বাকি এগার মাসের রব তিনিই।

    তিনি আরো বলেন, তবে ইবাদতের মোকাবেলায় গুনাহের কাজ করলে নি‘আমতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়। অতএব, কোনো ব্যক্তি রমযানের পরপরই হারাম ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে, তার সিয়াম স্বীয় মুখের উপর নিক্ষেপ করা হয় এবং রহমতের দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

    গুনাহের পর ভালো কাজ করা কতই না উৎকৃষ্ট আমল। কিন্তু তার চেয়ে আরো উৎকৃষ্ট আমল হলো নেক কাজের পর আরেকটি নেক কাজে মশগুল হওয়া। অতএব, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর, যাতে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত হকের ওপর অটল থাকার তৌফিক দান করেন। সাথে সাথে অন্তর বিপথে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ চাও। কেননা আনুগত্যের সম্মানের পর নাফরমানির বেইজ্জতি কতইনা নিকৃষ্ট।

    হে তওবাকারী যুবসমাজ!

    গুনাহ একবার ছেড়ে দিয়ে আবার সেদিকে ফিরে যেও না। যদি তোমরা ভালো কাজের ওপর ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পার, তাহলে প্রবৃত্তির অস্থায়ী আনন্দের পরিবর্তে স্থায়ী ঈমানি স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোনো পার্থিব স্বার্থ পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তা‘আলা বিনিময়ে তাকে তার চেয়েও উত্তম বস্তুর দ্বারা পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহ বলেন,

    ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّمَن فِيٓ أَيۡدِيكُم مِّنَ ٱلۡأَسۡرَىٰٓ إِن يَعۡلَمِ ٱللَّهُ فِي قُلُوبِكُمۡ خَيۡرٗا يُؤۡتِكُمۡ خَيۡرٗا مِّمَّآ أُخِذَ مِنكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ﴾ [الانفال: ٧٠]

    “হে নবী আপনি আপনার আয়ত্বাধীন কয়েদিদেরকে বলুন, আল্লাহ তা‘আলা যদি তোমাদের অন্তরে কল্যাণের আলো দেখতে পান, তাহলে তোমাদের হারানো বস্তুর চেয়েও উত্তম জিনিস দান করবেন। শুধু তা-ই নয়, সাথে সাথে তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৭০]

    হে অন্তর পরিবর্তনকারী রব, তুমি আমাদের আত্মাসমূহ তোমার মনোনীত দীনের ওপর অটল রাখো। আমীন।

    সমাপ্ত