×
কুরআনুল কারিমে সম্পদ ও নফসের জিহাদ একসাথে উল্লেখ করার হিকমত : কুরআনুল কারিমের দশ জায়গায় নফস ও সম্পদের জিহাদ একসাথে উল্লেখ করা হয়েছে। এক স্থান ব্যতীত সবখানেই সম্পদের জিহাদের আলোচনা আগে এসেছে। লেখক মুফাসসিরদের বাণী ও লিখনির আলোকে এর কতক হিকমত ও রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছেন এ নিবন্ধে।

    কুরআনুল কারিমে সম্পদ ও নফসের জিহাদ একসাথে উল্লেখ করার হিকমত

    [বাংলা - bengali - البنغالية]

    ড. তাওফিক আলী যাবাদী

    অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    2011- 1432

    ﴿ اقتران الجهاد بالمال بالجهاد بالنفس في القرآن ... حِكَم وأسرار ﴾

    « باللغة البنغالية »

    د. توفيق علي زبادي

    ترجمة: ثناء الله نذيرأحمد

    مراجعة: د. أبوبكرمحمد زكريا

    2011 - 1432

    কুরআনুল কারিমে সম্পদ ও নফসের জিহাদ একসাথে উল্লেখ করার হিকমত

    কুরআনুল কারিমের দশ জায়গায় নফস ও সম্পদের জিহাদ একসাথে উল্লেখ করা হয়েছে। নয় জায়গাতেই সম্পদের জিহাদের বর্ণনা আগে শুধুমাত্র এক জায়গা ব্যতীত। এর অনেক হিকমত ও রহস্য বিদ্যমান, মুফাস্‌সিরগণ –রাহিমাহুমুল্লাহ- যা বর্ণনা করেছেন।

    ইব্‌নুল কাইয়্যিম -রাহিমাহুল্লাহ- কুরআন বুঝার ক্ষেত্রে মানুষের বিভিন্ন স্তর বর্ণনা করে উল্লেখ করেন : “কেউ আছেন এক আয়াত থেকে একটি বা দুইটি হুকুম বুঝেন, আর কেউ আছেন সে আয়াত থেকে দশটি বা তার চেয়েও অধিক হুকুম বুঝেন। কেউ আছেন আয়াতের শুধু শব্দই বুঝেন, বর্ণনাপ্রসঙ্গ, ইঙ্গিত, ইশারা, সতর্কবার্তা ও উপদেশ বুঝেন না। এর চেয়েও আরো সূক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এক আয়াতের সাথে অপর আয়াতের সম্পর্ক দেখা, অতঃপর উভয়ের সমন্বয়ে আরো অতিরিক্ত কিছু বুঝা, যা এককভাবে শুধু এক আয়াত থেকে বুঝা যায় না। কুরআন বুঝার এ এক আশ্চর্য পদ্ধতি, খুব কম আলেম এর গূঢ় রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হোন। কারণ কতক মানুষ এক আয়াতের সাথে অপর আয়াতের সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা খুজে পান না”। {“ইলামুল মুয়াক্কিয়িন আন রাব্বিল আলামিন” : (১/৪৮৪)}

    সম্পদের জিহাদ যেসব আয়াতে নফসের জিহাদের আগে এসেছে তার তালিকা :

    ১. আল্লাহ তাআলা বলেন :

    انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالاً وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ. (التوبة : 41)

    “তোমরা হালকা ও ভারী উভয় অবস্থায় যুদ্ধে বের হও এবং তোমাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর। এটা তোমাদের জন্য ‎উত্তম, যদি তোমরা জানতে”[সূরা তাওবা: ৪১]

    ২. আল্লাহ তাআলা বলেন :

    تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ. (الصف: 11)

    “তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধনÑসম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে ‎জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে”[সূরা সাফ্‌ফ: ১১]

    ৩. আল্লাহ তাআলা বলেন :

    لا يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْـمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُوْلِي الضَّرَرِ وَالْـمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فَضَّلَ اللَّهُ الْـمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِينَ دَرَجَةً وَكُلاًّ وَعَدَ اللَّهُ الْـحُسْنَى وَفَضَّلَ اللَّهُ الْـمُجَاهِدِينَ عَلَى الْقَاعِدِينَ أَجْرًا عَظِيمًا. (النساء: 95)

    “বসে থাকা মুমিনগণ, যারা ওযরগ্রস্ত নয় এবং নিজদের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীগণ এক সমান নয়। নিজদের জান ও ‎মাল দ্বারা জিহাদকারীদের মর্যাদা আল্লাহ বসে থাকাদের উপর অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ প্রত্যেককেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি ‎দিয়েছেন এবং আল্লাহ জিহাদকারীদেরকে বসে থাকাদের উপর মহা পুরস্কার দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন”।‎ [সূরা নিসা: ৯৫]

    ৪. আল্লাহ তাআলা বলেন :

    إنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوا وَّنَصَرُوا أُوْلَئِكَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يُهَاجِرُوا مَا لَكُم مِّن وَلايَتِهِم مِّن شَيْءٍ حَتَّى يُهَاجِرُوا وَإنِ اسْتَنصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ إلاَّ عَلَى قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُم مِّيثَاقٌ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ. (الأنفال: 72)

    “নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে আর যারা আশ্রয় দিয়েছে ও ‎সহায়তা করেছে, তারা একে অপরের বন্ধু। আর যারা ঈমান এনেছে, কিন্তু হিজরত করেনি, তাদেরকে সাহায্যের কোন দায়িত্ব তোমাদের ‎‎নেই, যতক্ষণ না তারা হিজরত করে। আর যদি তারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের নিকট কোন সহযোগিতা চায়, তাহলে সাহায্য করা ‎‎তোমাদের কর্তব্য। তবে এমন কওমের বিরুদ্ধে নয়, যাদের সাথে তোমাদের একে অপরের চুক্তি রয়েছে এবং তোমরা যে আমল কর, তার ‎ব্যাপারে আল্লাহ পূর্ণ দৃষ্টিমান”[সূরা আনফাল: ৭২]

    ৫. আল্লাহ তাআলা বলেন :

    وَالَّذِينَ آمَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ آوَواْ وَّنَصَرُواْ أُولَـئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَّهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ. (سورة الأنفال : 74)

    “আর যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং ‎আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা আশ্রয় ‎দিয়েছে ও সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন, ‎তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিয্‌ক”[সূরা আনফাল: ৭৪]

    ৬. আল্লাহ তাআলা বলেন :

    لا يَسْتَئْذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَن يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْـمُتَّقِينَ. (التوبة: 44)

    “যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তারা তোমার কাছে তাদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করা থেকে বিরত থাকার অনুমতি চায় ‎না, আর আল্লাহ মুত্তাকীদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত”[সূরা তাওবা: ৪৪]

    ৭. আল্লাহ তাআলা বলেন :

    {إنَّمَا الْـمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ. (الحجرات: 15)

    “মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি। আর নিজদের সম্পদ ‎ও নিজদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে, এরাই সত্যনিষ্ঠ”[সূরা হুজুরাত: ১৫]

    ৮. আল্লাহ তাআলা বলেন :

    فَرِحَ الْـمُخَلَّفُونَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلافَ رَسُولِ اللَّهِ وَكَرِهُوا أَن يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَالُوا لا تَنفِرُوا فِي الْـحَرِّ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا لَّوْ كَانُوا يَفْقَهُونَ. (التوبة: 81)

    “পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসূলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হল, আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর ‎রাস্তায় জিহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না’। বল, ‘জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত”[সূরা তাওবা: ৮১]

    ৯. আল্লাহ তাআলা বলেন :

    لَكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ جَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ وَأُوْلَئِكَ لَهُمُ الْـخَيْرَاتُ وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْـمُفْلِحُونَ. (التوبة: 88)

    “কিন্তু রাসূল ও তার সাথে মুমনিরা তাদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করে আর সে সব লোকের জন্যই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ এবং তারাই ‎সফলকাম”[সূরা তাওবা: ৮৮]

    নফসের জিহাদ যে আয়াতে সম্পদের জিহাদের আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হচ্ছে :

    ১০. আল্লাহ তাআলা বলেন :

    إنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْـمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْـجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالإنجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ. (التوبة: 111)

    “নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে ‎লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর ‎‎চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সংগে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য”।‎ [সূরা তাওবা : ১১১]

    আলেমদের দৃষ্টিতে জিহাদের ক্ষেত্রে নফসের আগে সম্পদের উল্লেখ করার হিকমত :

    আল্লামা আলুসি –রাহিমাহুল্লাহ- বলেন : “হয়তো নফসের আগে সম্পদের জিহাদ উল্লেখ করার কারণ এই যে, সচরাচর সম্পদের জিহাদই বেশী সংঘটিত হয়, সম্পদের দ্বারাই জিহাদের অধিক প্রয়োজন মিটানো হয়, যেমন সম্পদের জিহাদ ব্যতীত নফসের জিহাদ কল্পনা করা যায় না। কেউ বলেছেন : বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য করেই এসব আয়াতে আগে সম্পদ ও পরে নফসের জিহাদ উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন জিহাদের প্রস্তুতির জন্য সম্পদের প্রয়োজন আগে হয়, অতঃপর হয় নফসের প্রয়োজন”। {আল-আলুসি : (৭/১৪১)}

    আবূ হাইয়ান –রাহিমাহুল্লাহ- বলেছেন : “নফসের আগে সম্পদ উল্লেখ করার কারণ এই যে, জিহাদকারী তথা মুজাহিদ হচ্ছে বিক্রেতা, {সে নিজের সম্পদ ও জান বিক্রি করে আল্লাহর সন্তুটি ও জান্নাত লাভকারী} তাই নফসের উল্লেখ পরে করা হয়েছে, যেহেতু নফসের খরচে রয়েছে অধিক কষ্ট ও কঠিন পরীক্ষা, যা একজন বিক্রেতা সর্বশেষ তদবির ব্যতীত হাত ছাড়া করতে চায় না। আর ক্রেতা {আল্লাহ তাআলা} কেনার সময় প্রথম নফসের উল্লেখ করেছেন, {সূরা তাওরা : ১১১} এ দিকে ইঙ্গিত করার জন্য যে, তার আগ্রহ নফসের দিকেই অধিক ও প্রচুর, কারণ ক্রেতা সব সময় উত্তম ও উৎকৃষ্ট বস্তুর প্রতিই আগ্রহী থাকে”। {আল-বাহরুল মুহিত : (৪/২৪২)}

    (আল্লামা যারকাশী) সাহেবুল বুরহান –রাহিমাহুল্লাহ- বলেছেন : “সম্পদের উল্লেখ আগে করার কারণ এই যে, জিহাদ সর্ব প্রথম সম্পদের ত্যাগ চায়, এ হিসেবেই সম্পদের উল্লেখ নফসের আগে করা হয়েছে”। {আল-বুরহান : (৩/২৫৬)}

    ইব্‌নুল কাইয়্যিম –রাহিমাহুল্লাহ- নফসের আগে সম্পদের জিহাদ উল্লেখ করার হিকমত সম্পর্কে বলেন: “প্রথমত : এটা প্রমাণ করে যে, সম্পদের মাধ্যমে জিহাদ করা ওয়াজিব, যেরূপ ওয়াজিব নফসের দ্বারা জিহাদ করা। শত্রু ঝাঁপিয়ে পড়লে সক্ষম ব্যক্তির উপর নিজের নফস নিয়ে বের হওয়া ওয়াজিব, আর যদি অক্ষম হয় তাহলে তার উপর ওয়াজিব সম্পদ দ্বারা সৈন্য ভাড়া করা।

    যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থা, সাহাবীগণের জীবনী ও জিহাদের সময় তাদের সম্পদ খরচ করার অবস্থা চিন্তা ও গবেষণা করবেন, তারা এ কথার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন। অধিকন্তু সম্পদের উল্লেখ আগে করে তাদের ধারণাও খণ্ডন করা হয়েছে— যারা বলে, নফসের জিহাদে অক্ষম ব্যক্তি সম্পদের জিহাদে অংশ গ্রহণে সক্ষম হলে তার উপর তা ওয়াজিব নয়। তাই যেখানে জিহাদের উল্লেখ করা হয়েছে সম্পদের কথা আগে বলা হয়েছে। তাই কীভাবে বলা হয় : নফসের জিহাদে অক্ষম ব্যক্তি সম্পদের জিহাদের সাড়া দেবে না?

    যদি বলা হয় : নফসের জিহাদের চেয়ে সম্পদের জিহাদ বড় ও মহান, তাহলে এটাও তাদের কথার চেয়ে অধিক বিশুদ্ধ— যারা বলে নফসের জিহাদে অক্ষম ব্যক্তির উপর সম্পদের জিহাদ ওয়াজিব হবে না। তাদের ভ্রান্তি স্পষ্ট।

    এভাবেই আমাদের সামনে নফসের আগে সম্পদ উল্লেখ করার অনেক ফায়দা স্পষ্ট হয়।

    দ্বিতীয় ফায়দা : সম্পদ নফসের প্রিয়তম ও প্রেমাষ্পদ বস্তু। এ সম্পদ অর্জন করার জন্য ব্যক্তি নিজেকে ব্যয় করে, ঝুকি নেয়, কখনো মৃত্যুর সম্মুখীন হয়— যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সম্পদই তার প্রিয়তম ও প্রেমাষ্পদ বস্তু। তাই আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় মুজাহিদদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা তার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে জিহাদে তাদের প্রিয়মত ও প্রেমাষ্পদ বস্তু ব্যয় করে। কারণ তাদের নিকট আল্লাহর নৈকট্য এবং তার প্রিয় হওয়াই সবচেয়ে বেশী পছন্দ, তাদের জন্য আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রিয় বস্তু এ জগতে আর নেই। যখন তারা আল্লাহর মহব্বতে তাদের প্রিয় বস্তু খরচ করল, তাদেরকে এর চেয়ে উন্নত পরবর্তী স্তরে উন্নীত করল, অর্থাৎ তার জন্যে তাদের নফস ত্যাগ করা, এটাই মহব্বতের সর্বশেষ স্তর। কারণ মানুষের নিকট তার নফসের চেয়ে অধিক প্রিয় বস্তু আর নেই। যখন সে কোন জিনিস পছন্দ করে, তার জন্য সে নিজের প্রিয় বস্তু সম্পদ ও নফস খরচ করে। যখন নফস ত্যাগ করার প্রয়োজন হয়, সে তার প্রিয় বস্তুকে প্রধান্য দিয়ে নফস পর্যন্ত ত্যাগ করে। সাধারণত এমনই ঘটে, এটাই মানুষ ও প্রাণীর স্বভাব। এ জন্য দেখি মানুষ তার সম্পদ, স্ত্রী ও সন্তানের পক্ষ থেকে প্রতিহত ও মোকাবিলা করে, যখন সে পরাজয় অনুভব করে, তার জীবন ও নফসের আশঙ্কা করে, তখন সে পলায়ন করে ও তাদেরকে ত্যাগ করে। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের থেকে এটা পছন্দ করেন না, বরং তাদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তারা তাঁর জন্য নিজেদের নফস পর্যন্ত ত্যাগ করে, প্রিয় বস্তু তথা সম্পদ ত্যাগ করার পরবর্তী ধাপে। অধিকন্তু নফস ত্যাগ করা সর্বশেষ স্তর, কারণ বান্দা প্রথমে সম্পদ খরচ করে জান রক্ষা করে, যখন সম্পদ শেষ হয়ে যায় তখন নিজের নফসই ত্যাগ করে। তাই জিহাদের ক্ষেত্রে নফসের আগে সম্পদের উল্লেখ করা বাস্তবতারই প্রতিধ্বনি। আর আল্লাহ তাআলার বাণী :

    إنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْـمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم. (التوبة: ١١١)

    “নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন”[সূরা তাওবা: ১১১] এখানে আগে নফস উল্লেখ করাই যুক্তিযুক্ত, কারণ এটাই মূল পণ্য, এর উপরই বেচাকেনার চুক্তি; এ পণ্যই তার রব গ্রহণ করতে চান; এ পণ্যই তিনি নিজের জন্য কেনার প্রস্তাব করেছেন; যার মূল্য নির্ধারণ করেছেন তিনি নিজের সন্তুষ্টি ও স্বীয় জান্নাত। অতএব বেচাকেনার চুক্তি দ্বারা এ নফসই মূল উদ্দেশ্য, আর সম্পদ হচ্ছে তার অনুগামী। ক্রেতা যখন নফসের মালিক হবে, তখন সে এমনিতেই তার সম্পদের মালিক বনে যাবে। কারণ গোলাম ও তার সম্পদের মালিক তার মুনিব, তার কোন অধিকার নেই এতে। অতএব সত্যিকার মালিক যখন নফসের মালিক হবেন, তখন তিনি তার সম্পদ ও যাবতীয় বস্তুর মালিক হবেন”। {বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ : (পৃ.৮৬)}

    আল্লামা শানকিতি –রাহিমাহুল্লাহ- বলেছেন : “জিহাদের মূল হচ্ছে প্রচেষ্টা ও শক্তি ব্যয় করা, আর সম্পদ হচ্ছে যুদ্ধের মেরুদণ্ড, সৈন্যবাহিনীর নির্ভরতার প্রতীক। এটা অস্ত্র দ্বারা জিহাদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। সম্পদের দ্বারা অস্ত্র কেনা যায়, ভাড়া করা যায় সৈন্য;, যেমন শত্রু দেশের সাথে যুদ্ধের সময় বন্ধু দেশ থেকে সৈন্য ভাড়া করা হয়। সেনাবাহিনী তৈরী করার জন্যও সম্পদের প্রয়োজন হয়। এ জন্যই যখন জিহাদের নির্দেশ আসে তখন আল্লাহ তাআলা অসুস্থ ও দুর্বলদের থেকে তা মওকুফ করে দেন, অনুরূপ মওকুফ করে দেন গরিবদের থেকে, যারা নিজেদের প্রস্তুত করার মত সামান্য অর্থ-সম্পদের অধিকারী ছিল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাদের ক্ষমা করেন, কারণ তার কাছেও তাদের সজ্জিত করার কোন সামর্থ ছিল না। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন :

    لَيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلا عَلَى الْمَرْضَى وَلا عَلَى الَّذِينَ لا يَجِدُونَ مَا يُنْفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِنْ سَبِيلٍ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ** وَلا عَلَى الَّذِينَ إذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لا أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوْا وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلاَّ يَجِدُوا مَا يُنفِقُونَ. (التوبة : 91-92)

    “কোন দোষ নেই দুর্বলদের উপর, অসুস্থদের উপর ‎ও যারা দান করার মত কিছু পায় না তাদের উপর ... আর তাদের উপরও কোন দোষ নেই, যারা ‎‎তোমার কাছে আসে, যাতে তুমি তাদের বাহন ‎‎জোগাতে পার। তুমি বললে, ‘আমি তোমাদেরকে ‎বহন করানোর জন্য কিছু পাচ্ছি না, তখন তারা ‎ফিরে গেল, তাদের চোখ অশ্র“তে ভেসে যাওয়া ‎অবস্থায়, এ দুঃখে যে, তারা পাচ্ছে না এমন কিছু ‎যা তারা ব্যয় করবে”[সূরা তাওবা : ৯১-৯২]

    আরো একটি বিবেচনা : যারা অস্ত্র দ্বারা যুদ্ধ করতে পারে না, যেমন নারী ও দুর্বলরা তারা সম্পদ দ্বারা যুদ্ধ করবে, যেমন যায়েদ ইব্‌ন খালেদ –রাদিয়াল্লাহ আনহু- থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

    مَنْ جَهَّزَ غَازِياً فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَقَدْ غَزَا، وَمَنْ خَلَفَ غَازِياً فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِخَيْرٍ فَقَدْ غَزَا.

    “আল্লাহর রাস্তায় কোন মুজাহিদকে যে সজ্জিত করল, যে জিহাদে অংশ গ্রহণ করল, যে কোন মুজাহিদের পারিবারকে সুন্দরভাবে দেখাশোনা করল, সে জিহাদে অংশ গ্রহণ করল”। {সহিহ আল-বুখারি : হাদিস নং-(২৬৩১)}

    আর দ্বিতীয় আয়াত (সূরা তাওবা-১১১) : এটা হচ্ছে অদল-বদল, পেশ করা ও গ্রহণ করার স্থান অথবা বলা যায় দরাদরির স্থান, তাই নফস আগে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ জীবিত ব্যক্তির নিকট এটাই সবচেয়ে মূল্যবান, তার মোকাবিলায় রাখা হয়েছে জান্নাত, কারণ বিনিময় হিসেবে যা দেয়া যায়, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে মূল্যবান। এ বিষয়ে খুব সুন্দর বলা হয়েছে নিচের কবিতায় :

    أُثامِـــنُ بالنفس النفيسةِ ربَّها ... وليس لها في الخَلْقِ كلِّهـم ثمن

    بها تملك الأخرى؛ فإن أنا بعتُها ... بشيء من الدنيا؛ فذاك هو الغبـن

    لئن ذهبتْ نفسٌ بدنيــا أصيبها ... لقد ذهبت نفسي وقَدْ ذهب الثمَن

    আমি মূল্যবান নফসের মূল্য নির্ধারণ করেছি তার রবের সাথে,

    পুরো সৃষ্টিকুল যে নফসের মূল্য হতে পারে না;

    এর দ্বারা সে আখেরাতের মালিক হবে, আর আমি যদি নফস বিক্রি করি

    দুনিয়ার কোন জিনিসের মোকাবিলায়, তাহলে এটাই তো ক্ষতি;

    যদি একটি নফস অর্জিত দুনিয়ার কারণে চলে যায়,

    তাহলে আমার নফস গেল, গেল আমার মূলধনও।

    এখানে আল্লাহর সাথে ব্যবসা হচ্ছে, তার উপর ও তার রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করা এবং সম্পদ, নফস ও নেক আমল দ্বারা জিহাদ করা। যেমন বলা হয়েছে :

    فاعمل لنفسك قبل الموت مجتهداً؛ ... فإنما الربح والخسران في العملِ

    তুমি মৃত্যুর পূর্বে নিজের জন্য যথাসাথ্য আমল কর,

    কারণ লাভ বা ক্ষতি আমলের মধ্যেই।

    {আদওয়াউল বায়ান : (৮/২৪৮)}

    আবু বকর জাযায়েরি বলেন : “আল্লাহ তাআলা প্রথমে সম্পদের জিহাদের প্রতি উৎসাহী করেছেন, যেহেতু সম্পদের জিহাদই আগে হয়, পরবর্তীতে হয় নফসের জিহাদ”। {আয়সারুত তাফাসির: (১৩৪)}

    সম্পদের জিহাদ দু’প্রকার :

    প্রথম প্রকার : মুজাহিদ ও তাদের পরিবারে অনুদান দিয়ে জিহাদে অংশ গ্রহণ করা।

    দ্বিতীয় প্রকার : দখলদার সীমালঙ্ঘনকারীদের অর্থনৈতিকভাবে ও সম্পদ ব্যয় করে বয়কট করা, এটাও অর্থনৈতিক জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ মানুষ যদি কৃপণ অথবা অক্ষম অথবা দুর্বল হয়, তাহলে সে সম্পদ ব্যয় করে এসব পবিত্র ভূমি মুক্ত করার জিহাদে অংশ গ্রহণ করতে পারে না। অতএব কমপক্ষে দখলকারীদের সুযোগ-সুবিধা ও অনুদান বন্ধ করে জিহাদে অংশ গ্রহণ করা জরুরি”। {শাইখ মুহাম্মদ হাসান আদ্দাদাও শানকিতি, ‘আল-জাজিরা’কে দেয়া “শরিয়ত ও হায়াত প্রোগ্রামে”-র সাক্ষাৎকার, তারিখ: ২১/৪/২০০২ই.}

    শাইখ ইবন উসাইমিন –রাহিমাহুল্লাহ-কে জনৈক প্রশ্নকারী বলেন : আমরা দেখি যে, আল্লাহ তাআলা জিহাদের অধিকাংশ আয়াতেই নফসের আগে সম্পদের উল্লেখ করেছেন, এর হিকমত কি?

    তিনি উত্তরে বলেন : -আল্লাহ ভাল জানেন- স্পষ্টত বুঝে আসে যে, মুসলিম সেনাবাহিনী ব্যক্তির চেয়ে সম্পদের মুখাপেক্ষী বেশি হয়, কারণ নফসের তুলনায় সম্পদ দ্বারা জিহাদ করা সহজ”। {মাজমুউ ফাতাওয়া ও রাসায়েল ইবন উসাইমিন : (২৫/৩১২)}

    জিহাদের হাদিসেও সম্পদের উল্লেখ আগে এসেছে :

    عَنْ أَنَسٍ - رضي الله عنه - قال: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم : جَاهِدُوا الـمُشْرِكِينَ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ وَأَلْسِنَتِكُمْ.

    আনাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “তোমরা মুশরিকদের সাথে জিহাদ কর, তোমাদের সম্পদ, নফস ও জবান দ্বারা”। {মুসনাদ ইমাম আহমদ, মুসনাদে আনাস ইব্‌ন মালেক : (১১৭৯৮)}

    অনিষ্ট প্রতিহত করার জন্যই জিহাদ :

    মুজাহিদ যদি ঋণী হয়, আর অনিষ্ট প্রতিহত করার জন্য জিহাদ যদি অপরিহার্য হয়ে পড়ে, তাহলে সম্পদের জিহাদের সর্বপ্রথম খাত হচ্ছে মুজাহিদের ঋণ পরিশোধ করা। ইব্‌ন তাইমিয়া –রাহিমাহুল্লাহ- বলেন : “অনিষ্ট প্রতিহত করার জন্য যদি জিহাদ অপরিহার্য হয়ে পড়ে, যেমন তার সামনে শত্রু উপস্থিত হয়, অথবা সে যুদ্ধের ব্যূহ ও সাড়িতে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে সম্পদ দ্বারা আগে তার ঋণ পরিশোধ করা হবে”। {ফাতাওয়া আল-কুবরা : (৫/৫৩৭)}

    বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্পদ দ্বারা জিহাদের কিছু নমুনা :

    প্রথমত : মুজাহিদকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করার জন্য সম্পদ খরচ করা :

    প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, তাদের আমির ও শাসকের নিকট নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ জমা করা, যারা আকিদা, শরিয়ত, কথা ও কাজে জিহাদের জিম্মাদার। এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীতে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। প্রথম যুগের সাহাবা ও মুসলিমগণ যুদ্ধের জন্য মুজাহিদদের সজ্জিত করার মর্যাদা লাভের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করত।

    وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْـمُتَنَافِسُونَ. المطففين: (26)

    “আর প্রতিযোগিতাকারীদের উচিত এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা”। মুতাফফিফিন:(২৬)

    কোন এক যুদ্ধে মুজাহিদদের সজ্জিত করার জন্য আবু বকর ও ওমর প্রতিযোগিতা করেছিলেন, সেটাও আমাদের জন্য একটি নমুনা, যার অনুসরণ করা আমাদের অবশ্য জরুরী।

    দ্বিতীয়ত : মুজাহিদদের পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করা, যারা সন্তান ও নারীদের পিছনে রেখে জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে :

    নিশ্চয় এসব পরিবার তাদের বৈষয়িক চাহিদা, যেমন পানাহার ও বাসস্থানের প্রয়োজন মিটানোর জন্য সম্পদের অধিক মুখাপেক্ষী। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী কাফেরদের মোকাবিলায় জিহাদে অবতীর্ণ মুজাহিদদের এভাবে নিশ্চিন্ত করাও এক প্রকার জিহাদ যে, আমাদের কতক ভাই রয়েছেন যারা আমাদের পরিবারের জন্য তাদের সম্পদ ব্যয় করে জিহাদে অংশ গ্রহণ করবে।

    তৃতীয়ত : শহীদদের সন্তানের জন্য সম্পদ ব্যয় করা, যারা ইসলাম ও তার সুরক্ষার জন্য নিজেদের রক্ত প্রবাহিত করেছেন :

    সম্পদশালীদের সম্পদে রয়েছে তাদের অধিকার, কারণ আল্লাহর রাস্তায় জান কুরবানকারী মুজাহিদ তোমার কাছে নিদেন পক্ষে এতটুকু কামনা করে যে, তোমার সামান্য সম্পদ দিয়ে তুমি তাদের সন্তান ও স্ত্রীদের সহযোগিতা করবে, যেন তারা বড় হয়ে তাদের পূর্বসূরীদের পতাকা হাতে তুলে নিতে পারে।

    নিশ্চয় শহীদদের সন্তানেরা মুসলিম ধনীদের নিকট তাদের অধিকার চায়, এটা তোমরা অনুগ্রহ অথবা অনুদান মনে কর না, এটা তাদের জন্য বরাদ্দ নির্দিষ্ট হক, যা আল্লাহ তার এ বাণীতে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

    وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ * لِلسَّائِلِ وَالْـمَحْرُومِ. (المعارج:24-25)

    “আর যাদের সম্পদে রয়েছে নির্ধারিত হক, যাঞ্চাকারী ও বঞ্চিতদের জন্য”[সূরা মাআরেজ: ২৪-২৫]

    চতুর্থত : মুসলিমদের ধ্বংস প্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর নির্মাণের জন্য সম্পদ ব্যয় করা:

    কারণ ইয়াহূদি, কাফের ও তাগুতের স্বভাব হচ্ছে ধ্বংস ও ক্ষতি করা এবং মুসলিমদেরকে গৃহহীন ও ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা। ফিলিস্তিন ও আফগানিস্তান আমাদের থেকে বেশি দূরে নয়। ইয়াহূদিরা ফিলিস্তিনে কি করেছে? রুশরা আফগানিস্তানে কি করেছে? আমেরিকা সোমালিয়ায় কি করেছে? হে আল্লাহ সম্পদ ও জান দ্বারা জিহাদ করার রাস্তা আমাদের জন্য সুগম ও সহজ কর, তোমার অনুগ্রহ ও দয়ায়.. হে কারিম ! দয়ালু !

    সমাপ্ত