×
আলেমদের করণীয় কী? দাওয়াত ও তরবিয়তের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বর্তমানযুগে, তাদের দায়দায়িত্ব কী? এসব বিষয়ে উক্ত প্রবন্ধে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা স্থান পেয়েছে।

    নবীন আলেমদের প্রতি আহ্বান

    رسالة إلى العلماء

    < بنغالي >

    আখতারুজ্জামান মুহাম্মাদ সুলাইমান

    أختر الزمان محمد سليمان

    —™

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    নবীন আলেমদের প্রতি আহ্বান

    প্রিয় বন্ধুগণ! মাশাআল্লাহ, আপনারা আলেম হিসেবে স্বীকৃত। জনগণ আপনাদেরকে আলেম হিসেবে দেখে থাকেন। এটা আল্লাহ তা‘আলার অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি আমাদেরকে যোগ্যতা ছাড়াই আলেমদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সুতরাং সকল প্রশংসা ও শোকর মহান আল্লাহর জন্যই।

    তবে একটি বিষয়ে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয় আর তা হলো, আমাদের কারো মাঝে যেন এ ধারণা জন্ম না নেয় যে, আমি একজন আলেম। কেননা আলেম হওয়া কোনো সাধারণ বিষয় নয়। প্রকৃত আলেমগণ ফকীহ হন। আর ফকীহর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে হাসান বসরী রহ. বলেছেন, যিনি ফকীহ তিনি হবেন দুনিয়াবিমুখ, আখেরাতের প্রতি আকৃষ্ট এবং আল্লাহ তাআলার ইবাদতে সদা নিমগ্ন। নবীদের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। উক্ত সংজ্ঞার আলোকে আলেম কারা? সিদ্দিকে আকবর, উমার ফারুক, উসমান গণী, আলী মুরতাযা, ইবন মাসউদ, ইবন আব্বাস, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম, উমার ইবন আব্দুল আযীয, ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম রহ. প্রমুখের মতো ব্যক্তিত্বকে আলেম বলা যায়।

    উক্ত মনীষীদের জীবন ও কর্ম, ইখলাস ও লিল্লাহিয়াত, সরলতা ও আত্মবিমুখতা, পরকালীন ভাবনা ও দুনিয়া বিমুখতা, উম্মতের জন্য ব্যাকুলতা ও কল্যাণকামিতা, ইলমি গবেষণা ও সাধনা, দীনের সংরক্ষণের প্রচেষ্টা ও উম্মতকে ফিতনা থেকে বাঁচানোর আকুলতায় ভরপুর। যদি আমরা উল্লিখিত মনীষীদের জীবন, সাধনা ও মহৎ গুণাবলী প্রত্যক্ষ করি আর আমাদের ত্রুটিপূর্ণ জীবনের দিকে তাকাই, তাহলে নিজেদেরকে আলেম বলতে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। ভয় লাগে যে, আমাদের সালাফ সম্পর্কে অনবহিত মানুষ, আমাদের আমল, আখলাক ও কার্যক্রম দেখে উল্লিখিত আলেমদের সম্পর্কে কোনো ভুল ধারণা না করে বসে।

    যা হোক, আল্লাহ তা‘আলা বাহ্যিকভাবে আমাদেরকে আলেমদের দলে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এক মহাপুরস্কার। তাঁর সুপ্ত গুণের একটি প্রকাশ। আর এ শোকরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবী হচ্ছে, আমরা যেমনিভাবে আল্লাহওয়ালা আলেম হওয়ার চেষ্টা করব তেমনিভাবে তাদেরকে নিজেদের জন্য উত্তম আদর্শ বানাব। কেননা এটিই হচ্ছে আম্বিয়ায়ে কিরামের প্রকৃত উত্তরাধিকার। আল্লাহ আমাদেরকে সে তাওফীক দান করুন।

    আলেমগণ উম্মতের তত্ত্বাবধায়ক:

    আমি সামনে যে কথাটি বলব এর পূর্বে ভূমিকাস্বরূপ একটি বিষয় আলোকপাত করতে চাই। বিষয়টি হলো, উম্মতের দৃষ্টান্ত হলো বকরির মতো। অর্থাৎ উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তিকে যদি বকরি হিসেবে গণ্য করা হয় তাহলে শয়তান তাদের জন্য হিংস্র বাঘস্বরূপ। শয়তানরূপী এ হিংস্র বাঘ মানুষের রূহানী জীবন ধ্বংস করতে সর্বদা তৎপর থাকে। বিভিন্ন পন্থায় হামলা করে। আর আলেমগণ হলেন এসব বকরিপালের তত্ত্বাবধায়ক বা রাখাল। একজন আলেমের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল, তার বকরিপালের প্রতি সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখা। আপনারা দেখবেন রাখাল বকরিপালকে কত সতর্কতার সাথে সার্বক্ষণিক চোখে চোখে রাখে। বকরি অবুঝ, আত্মভোলা ও জেদী প্রকৃতির হয়ে থাকে। এতদসত্ত্বেও রাখাল নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে। বকরিপালকে সামলানোর চেষ্টা করে। রাখালের এত আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার কারণ হলো, সে পালের বকরিগুলোর মুল্য বুঝে। সে আশঙ্কায় থাকে, চেষ্টা ও আন্তরিকতার ঘাটতি থাকলে মূল্যবান এ সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। এজন্য রাতেও সে বকরিগুলোর উপর নজর রাখে। বকরিগুলোর সংরক্ষণে সে সব সময় সতর্ক ও হুশিয়ার থাকে। তার আশঙ্কা হয় না জানি কোন দিক থেকে বাঘ এসে হঠাৎ হামলা করে বসে। বাঘের কবল থেকে বকরিগুলো হিফাযতের জন্য নানা ফন্দি-ফিকির আঁটে। বকরিগুলো ভুল পথে যেন না যায়, কোনো বকরি যেন পাল থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায়- ইত্যাদি ভাবনা তাকে সব সময় তাড়িত করে। মোটকথা, রাখাল তার বকরিপালের মূল্য বুঝে বলেই এগুলোর সংরক্ষণের ব্যাপারে সবসময় নিজেকে আত্মনিয়োগ করে রাখে। নিজের দায়িত্ববোধ থেকে সে এক মুহূর্তের জন্যও গাফেল হয় না।

    আমার প্রিয় বন্ধুগণ! উলামায়ে কিরাম উম্মতের রাখাল। তাদের প্রত্যেকের মধ্যে এ দরদ থাকা উচিত যে, তারা তাদের মুসল্লী, শাগরেদ, লোকালয়ে বসবাসকারী প্রতিটি মুসলিম বরং উম্মতে মুসলিমার প্রতিটি সদস্যকে অমূল্য সম্পদ জ্ঞান করে তাদের হিফাজতে সর্বদা নিয়েজিত থাকে। এটি আমাদের পরকালের অনেক বড় সম্পদ। যেমনিভাবে একজন রাখাল বকরি থেকে দুধ, গোশত, চামড়া, পশম ইত্যাদি দ্বারা বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়। তেমনি উম্মাহর সদস্যদেরকে পরিচর্যা-পরিচালনা-সমালোচনার দ্বারা ওলামায়ে কেরামেরও অগণিত ফায়দা হাসিল হয়। ইলম ও তাকওয়ার মাঝে সমৃদ্ধি ঘটে। নেকির পাল্লা ভারি হয়। আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভে সহায়ক হয়। প্রতিটি ব্যক্তি আমাদের আখেরাতের অমূল্য সম্পদ। এজন্য তাদের দেখাশোনায় সর্বোতভাবে নিয়োজিত হওয়া উচিত। সব সময় এ প্রচেষ্টায় থাকতে হবে যে, উম্মতের কোনো সদস্যকে শয়তানরূপি বাঘ তার লোকমা বানাতে না পারে। আম্বিয়ায়ে কিরামের উত্তরাধিকারীদের সরদার সিদ্দীকে আকবার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, আমার শরীরে প্রাণ থাকতে দীনের কোনো ক্ষতি সাধন হবে? না, তা হতে পারে না। রাখালের উপস্থিতিতে কোনো একটি বকরিরও ন্যূনতম কোনো ক্ষতি হতে পারে না। আলেমের উপস্থিতিতেও একজনমাত্র উম্মতেরও যেন কোনো ক্ষতি না হয়।

    নিজের মর্যাদা জানুন

    প্রিয় বন্দ্ধুগণ! নিজের মর্যাদা সম্পর্কে জানুন এবং উম্মতকে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ মনে করুন। যদি এ উপলব্ধি সৃষ্টি হয়ে যায়, একটি মুহূর্তও অলসতায় কাটবে না। জঙ্গলের দিকে যেমন নজর থাকবে, তেমনি বকরি ও বাঘের দিকেও নজর রাখতে হবে। কোনো সময় যদি বাঘের ভয় অনুভূত হয় সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে এবং সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে মোকাবেলা করবে। তাছাড়া বকরিপালকে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে রক্ষা করার পাশপাশি এদের সমূহ প্রয়োজন পূরণেও সচেষ্ট থাকতে হবে।

    সর্বোত্তম আলেম:

    বন্ধুগণ! প্রকৃত অর্থে আমরা আলেম হওয়ার উপযুক্ত তখনই হব যখন আমরা একজন অভিজ্ঞ রাখাল হিসেবে উম্মতকে ভালোভাবে সামলাবো। এজন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হলো নিজেদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া। নিজেদের মাঝ দায়িত্ব অনুভূতি সৃষ্টি করা এবং তদানুযায়ী আমল করা। নিজেকে উম্মতের রাখাল ভেবে তাদের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত থাকা। একথা স্পষ্ট যে, যেই রাখাল তার বকরির কল্যাণ ও উন্নয়নে নজর রাখবে, তার মধ্যে নিজের কল্যাণ ও সাফল্যের ভাবনা অবশ্যই জাগরুক থাকবে। যে ব্যক্তি তার বকরিকে বাঘের কবল থেকে বাঁচানোর ব্যাপারে সতর্ক হবে সে অবশ্যই নিজেকে বাঘের থাবা থেকে রক্ষা করবে, যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার কৌশল অবলম্বন করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ করে কুরআনে বলা হয়েছে,

    ﴿وَجَعَلۡنَا ٱلنَّهَارَ مَعَاشٗا ١١[النبا: ١١]

    “আর আমরা দিনকে করেছি জীবিকার্জনের সময়।” [সূরা আন-নাবা, আয়াত: ১১]

    যে ব্যক্তি বকরির চিন্তায় দিন অতিবাহিত করবে সে নিজের চিন্তা থেকেও উদাসীন হবে না; বরং রাতেও একাকিত্বে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে নিজেকে সমর্পণ করে নিজের কল্যাণের চিন্তায় রত থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর আপনি আপনার রবের নাম স্মরণ করুন এবং একাগ্রচিত্তে তার প্রতি নিমগ্ন হউন।’ ওলামায়ে হক তারাই যাদেরকে হাদীস শরীফে খিয়ারুল ওলামা তথা সর্বোত্তম আলেম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর তারাই হলেন খিয়ারুন নাস তথা সর্বোত্তম মানুষ। হাদীসে এসেছে, আসমানের নিচে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যিনি উলামায়ে কিরামের মাঝে সর্বোত্তম।

    হৃদয়ের তপ্ত আহবান:

    কোনো কোনো আলেম মাদরাসা থেকে পাশ করার পর নিজের রাখাল হওয়ার বোধ হারিয়ে ফেলে। ইলমি জিম্মাদারী ও দীনি খিদমত থেকে দূরে থাকা এবং সাধারণ লোকদের সংশ্রব বেশি হওয়ার কারণে তারা এ অবস্থার শিকার হন। এসব আলেম উম্মতের সাধারণ মানুষের মতো হয়ে যায়। ফলে কোথাও কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখলেও নীরবতা পালন করে। এমনকি কখনও কখনও এ কাজটা যে অন্যায় সে উপলব্ধিটুকু পর্যন্ত তার মধ্যে সক্রিয় থাকে না। শয়তানরূপী বাঘ যখন মানুষের দীনের উপর আক্রমণ করে বসে তখন এসব আলেমও সাধারণ মানুষদের সাথে হামলার শিকার হয়। তখন তারা হক-বাতিল, ভালো-মন্দ এবং সঠিক-ভুলের মাঝে কোনো পার্থক্য করতে পারে না। তারা খুব সহজেই ফিতনায় লিপ্ত হয়ে যায়। আমি আপনাদের প্রতি হৃদয়ের সব আকুলতা ও ব্যাকুলতা দিয়ে আবেদন করছি, আপনারা আত্ম-সমালোচনা করে দেখুন আপনাদের অবস্থান কি? আপনাদের মাঝে যদি এ সব ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে তা থেকে দ্রুত বের হয়ে আল্লাহওয়ালা আলেম হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলুন।

    প্রিয় বন্ধুগণ! নিজেদের মূল্যায়ন করুন

    কোনো এক মনীষী, ছাত্র ও উস্তাদদের উদ্দেশে একটি বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: প্রিয় বন্ধুগণ! নিজের মূল্য বুঝুন। আমিও আপনাদের উদ্দেশে বলতে চাই- প্রিয় বন্ধুগণ! আল্লাহর ওয়াস্তে নিজের মূল্য বুঝুন।

    দীনের বিনিময়ে দুনিয়া উপার্জন

    আলেমদের উল্লিখিত স্তর থেকেও আরো একটি নিম্নতর স্তর আছে। মহান আল্লাহ আমাদের হিফাযত করুন। আমাদেরকে তাঁর একান্ত হিফাযতে রাখুন। এসব লোক হচ্ছে বাঘরূপি রাখাল। তাদের মাঝে এমনও আছে যারা রাখালের রূপ ধারণ করে বকরি থেকে পার্থিব ফায়দা হাছিল করে থাকে। জনসাধারণ থেকে দীনের বিনিময়ে নিজেদের আর্থিক ও বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধার করে। দাওয়াত, হাদিয়া প্রাপ্তি তাদের প্রত্যাশার চূড়ান্ত মনযিল। শত আফসোস, যে ইলম আখেরাতের জন্য ছিল, তা দুনিয়া উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আলেমদের এ দলটি শুধু দুনিয়া উপার্জন করে। আরেকটি দল আছে এদের থেকেও মারাত্মক। তারা রাখালের বেশে মানুষের দীনের ওপর হামলা করে। জায়েযকে নাজায়েয এবং নাজায়েযকে জায়েয বানানোই তাদের কাজ। দীনি ঐতিহ্য, পরম্পরা, পরহেজগারি ও আল্লাহভীতিকে হেয় দৃষ্টিতে দেখে। আর উম্মতকে ‍দীন সহজ, এ টোপ দিয়ে নতুন নতুন ফিৎনায় লিপ্ত করে। কুরআন-হাদীসের বাহ্যিক অর্থগত বর্ণনা দ্বারা লোকদেরকে সিরাতে মুস্তাকীম থেকে দূরে ঠেলে দেয়। উল্লিখিত দু’টি শ্রেণি-ই উলামায়ে ছূ, যাদেরকে হাদীসে শেরারুল উলামা বা নিকৃষ্টতর আলেম হিসেবে তিরস্কৃত করা হয়েছে। আর তারাই হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। হাদীসে এসেছে, ‘তোমাদের মাঝে আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঐ লোক, আলেমদের মাঝে যিনি নিকৃষ্ট।’

    কর্মপদ্ধতি

    প্রিয় বন্ধুগণ! নিকৃষ্ট আলেম হওয়া থেকে প্রত্যেকের মহান আল্লাহর দরবারে পানাহ চাওয়া উচিত। আমাদেরকে যেন তিনি সর্বোৎকৃষ্ট আলেমদের মাঝে গণ্য করেন সে প্রচেষ্টাও থাকা দরকার। কিন্তু এর পদ্ধতি কী? এর জন্য প্রয়োজন হলো নিজকে সংশোধন করা। এখনই সিদ্ধান্ত নিন, নিজের জীবনকে বদলাতে হবে এবং নিজেকে সর্বোৎকৃষ্ট আলেম হিসেবে গণ্য করাতে হবে। চিন্তিত হবেন না, সাহস হারা হবেন না। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে সামনে অগ্রসর হোন, আল্লাহ সহায় হবেন।

    আশঙ্কা:

    উল্লিখিত বিষয় থেকে উদাসীন হলে উলামায়ে ছু হিসেবে গণ্য হওয়ার আশঙ্কা আছে। কোনো এক বড় আলেম বলতেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজ আমাদের মাদরাসাগুলো থেকে উলামায়ে ছূ তৈরী হওয়া শুরু হয়েছে। একথাও বলতেন, কিছুকাল যাবৎ আমাদের মাদরাসাসমূহ বন্ধা হয়ে আছে। মাওলানা তো তৈরি হচ্ছে; কিন্তু মৌলভী তৈরি হচ্ছে না অর্থাৎ আল্লাহওয়ালা উলামায়ে রব্বানী তৈরি হচ্ছে না।

    নবুওয়াতী কর্মসূচি নিয়ে বের হোন:

    আমি আপনাদেরকে কি বলব! আপনাদের শত্রুর উপর যখন নজর ফেলি, চিন্তার জগতে আপনাদের অবস্থান নিয়ে যখন ভাবি, দীনি খেদমতে আপনাদের অল্পে তুষ্টির অবস্থা যখন পর্যবেক্ষণ করি তখন অন্তরে এত কষ্ট অনুভব করি যে যা বর্ণনাতীত। আপনাদের বর্তমান যোগ্যতা দেখে এভাবে বলার কথা ছিল যে, আমাদের অমুক ছেলে এ কাজ করবে, তার দ্বারা দীনের এ উপকার হবে। আপনাদের দ্বারা সম্পাদিত দীনি খেদমতের একটা নকশা চোখের সামনে এসে যাওয়া ছিল কাঙ্খিত। কিন্তু এখন দেখছি আপনাদের কারো কারো সামর্থ্যে এ যোগ্যতা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ছোট ছোট দীনি খেদমতে সন্তুষ্ট হয়ে বসে আছেন অনেকেই। নিজেদেরকে সামান্য খেদমতে সীমিত করে নিয়েছেন এর দ্বারা বিবি-বাচ্চাদের যেমন দীনি কোনো ফায়দা হচ্ছে না, তেমনি খান্দান ও উম্মতও কোনো উপকার পাচ্ছে না। এজন্য এসব দেখে অন্তরে এমন ব্যাথা অনুভব করি যা কোনো ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

    প্রিয় বন্ধুগণ! এখান থেকেই নবুওয়াতী কর্মসূচি নিয়ে বের হোন। সিদ্দিকে আকবরের ঘোষণা, আমি জীবিত থাকব আর দীনের ক্ষতি হবে? এ চেতনা নিয়ে বের হোন। পবিত্র কুরআনে নবুওয়াতী কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে,

    ﴿هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلۡأُمِّيِّ‍ۧنَ رَسُولٗا مِّنۡهمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٢﴾ [الجمعة: ٢]

    “তিনিই উম্মীদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে যে তাদের কাছে তিলাওয়াত করে তাঁর আয়াতসমূহ, তদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত। যদিও ইতোপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহিতে ছিল।” [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ২]

    আমার বন্ধুগণ! একটু ভাবুন, মহান আল্লাহ আপনাদেরকে আম্বিয়ায়ে কিরামের ওয়ারিসদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন, নেতৃত্বদানের জন্য নির্বাচিত করেছেন। আর এটা কতই না বড় দুর্ভাগ্যজনক কথা যে, আপনারা এ মহান দায়িত্ব থেকে সরে পড়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে পঁচনের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন

    সমাপ্ত