×
একটি প্রশ্নের উত্তরে ফাতওয়াটি প্রদান করা হয়। প্রশ্নটি হলো: নারীদের জন্য কবর যিয়ারত করা কি হারাম, মৃত ব্যক্তি যদিও তাদের আপন কেউ হয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لعن الله المرأة النائحة والمستمعة এ হাদীসে المستمعة শব্দের অর্থ কী? এর দ্বারা কি সে নারী উদ্দেশ্য যে ইনিয়ে-বিনিয়ে মানুষের কথা নকল করে অথবা সে নারী উদ্দেশ্য যে গান-বাজনা শ্রবণ করে অথবা সে নারী উদ্দেশ্য যে টেলিভিশন দেখে ও রেডিও শোনে? আশা করি এর ব্যাখ্যা দেবেন।

    বিলাপ-মাতম ও কবর যিয়ারত

    النياحة وزيارة القبور

    < বাংলা - بنغالي - Bengali >

    আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.

    عبد العزيز بن عبد الله بن باز رحمه الله

    —™

    অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: ثناء الله نذير أحمد

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    বিলাপ-মাতম ও কবর যিয়ারত

    প্রশ্ন: নারীদের জন্য কবর যিয়ারত করা কি হারাম, মৃত ব্যক্তি যদিও তাদের আপন কেউ হয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «لعن الله المرأة النائحة والمستمعة» এ হাদীসে المستمعة শব্দের অর্থ কী? এর দ্বারা কি সে নারী উদ্দেশ্য, যে ইনিয়ে-বিনিয়ে মানুষের কথা নকল করে অথবা সে নারী উদ্দেশ্য যে গান-বাজনা শ্রবণ করে অথবা সে নারী উদ্দেশ্য, যে টেলিভিশন দেখে ও রেডিও শোনে। আশা করি এর ব্যাখ্যা দেবেন। আল্লাহ আপনাদের উত্তম বিনিময় দান করুন।

    উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ

    নারীদের জন্য কবর যিয়ারত করা জায়েয নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «زُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُكُمْ الْآخِرَةَ»

    “তোমরা কবর যিয়ারত কর। কারণ, তা তোমাদের আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়"

    এ হাদীসের ভাষ্য দ্বারা উদ্দেশ্য পুরুষগণ। তিনি সাহাবীগণকে শিক্ষা দিতেন, যেন তারা যিয়ারতের সময় বলে:

    «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ. نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ»

    আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে:

    «يَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ»

    নারীদেরকে কবর যিয়ারত থেকে তিনি নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন। অতএব, তাদের জন্য কবর যিয়ারত করা জায়েয নেই। তবে তাদের জন্য বৈধ রয়েছে, যিয়ারত করা ব্যতীত ঘরে বসে মৃত ব্যক্তিদের মাগফিরাতের দো'আ করা, রহমতের দো'আ করা, জান্নাতে প্রবেশ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য দো'আ করা। অনুরূপ মসজিদে অথবা ঈদগাহে জানাযার সালাত পড়তে তাদের কোনো বাধা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের যুগে যেরূপভাবে নারীরা জানাযার সালাত পড়েছে।

    বাকি রইল, মাতমকারী নারী ও তা শ্রবণকারী নারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতম থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন.

    «أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ لَا يَتْرُكُونَهُنَّ: الْفَخْرُ بِالْأَحْسَابِ، وَالطَّعْنُ فِي الْأَنْسَابِ، وَالْاسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُومِ، وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ. وَقَالَ: النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ»

    “আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলিয়াতের চারটি স্বভাব রয়েছে, যা তারা পরিত্যাগ করবে না: আভিজাত্য নিয়ে গৌরব করা, বংশের ব্যাপারে তিরষ্কার করা, তারকার মাধ্যমে বৃষ্টি অন্বেষণ করা ও মৃত ব্যক্তিদের ওপর বিলাপ করা। বিলাপকারী যদি তাওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে যখন উত্থিত করা হবে, তখন তার উপর থাকবে আলকাতরার তৈরি জামা এবং খোস-পাঁচড়ার বর্ম"(সহীহ মুসলিম)

    অত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, মৃত ব্যক্তিদের ওপর বিলাপ করা, জাহেলিয়াতের নিন্দনীয় স্বভাব। অতএব, তা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। উম্মে আতিয়া রাদিয়াল্লাহু 'আনহা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়'আতের সময় আমাদের থেকে অঙ্গিকার নিয়েছেন, যেন আমরা বিলাপ না করি।

    আবু দাউদ তার সুনানে, আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাপকারী ও তা শ্রবণকারী নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন। এ হাদীসের সনদে দুর্বলতা থাকলেও এর সপক্ষে হাদীস তথা শাওয়াহেদ রয়েছে। কারণ, বিলাপ করা হারাম ও নিষিদ্ধ। অতএব, বিলাপ করা বৈধ নয়, নারীরও নয়, অনুরূপ পুরুষেরও নয়।

    النياحة: উচ্চস্বরে কাঁদা। হায় অমুক... হায় অমুক... হায় অমুক... ইত্যাদি উচ্চস্বরে বলা। উচ্চস্বরে যা বলা হয়, তাই নিয়াহা বা বিলাপ।

    المستمعة: বিলাপকারীর ক্রন্দন শ্রবণকারী। বিলাপকারীর কাছে বসে মনোযোগসহ বিলাপ শোনা, তাকে প্রেরণা দেওয়া ও প্ররোচিত করা। এটাও নিষেধ, কারণ তার কাছে বসা তাকে প্রেরণা দেওয়ারই নামান্তর। তাই তার বিলাপ শোনাও বৈধ নয়। বিলাপকারী যদি চুপ না করে, তবে তাকে ত্যাগ করা, তার সাথে না বসাই শ্রেয়। এটা এক অর্থে তাকে বাধা দেওয়া। অনুরূপ তার বিলাপ শুনতে বসা এক প্রকার প্রেরণা দেওয়া ও তাকে প্ররোচিত করা।

    অতএব, বিলাপকারীর বিলাপ শোনা আপনার জন্য জায়েয নয়; বরং তাকে নিষেধ করুন ও তাকে বাধা দিন। যদি সে মেনে নেয় ভালো কথা, অন্যথায় তাকে ত্যাগ করুন, তার কথা শ্রবণ করার জন্য বসবেন না।

    আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায

    فتاوى نور على الدرب (2/1147)