×
একটি প্রশ্নের উত্তরে ফতোয়াটি প্রদত্ত হয়। প্রশ্নটি হল: আমার ভাই বৈদ্যুতিক খুটির পাশে দাড়িয়েঁছিল, ফলে বৈদ্যুতিক তার তার শরীর স্পর্শ করে, আর সে শর্ট খেয়ে সাথে সাথে মারা যায়। তাকে কি শহীদ গণ্য করা হবে ? দাফন করার জন্য আমরা জানাযার নামাজ পড়ি, তখন এতো বেশী মানুষ জড়ো হয়েছিল যে মসজিদে পর্যন্ত তাদের সংকুলান হয়নি। তাকে মাটি দেয়ার জন্য আমাদের যে গ্রুপটি কবরস্থান পর্যন্ত যায়, তাও বেশ দীর্ঘ ও বড় ছিল। কারণ, সে আমাদের সবার কাছেই প্রিয় ছিল। কিয়ামতের দিন এরা কি তার জন্য সুপারিশ করবে ? অধিকন্তু সে ছিল যুবক, ভদ্র ও নামাযি।

    বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যে ব্যক্তি মারা গেল সে কি শহীদ?

    الذي يموت بالصعق الكهربائي هل يعد شهيدا؟

    < بنغالي- Bengal - বাঙালি>

    ইসলাম কিউ এ

    موقع الإسلام سؤال وجواب

    —™

    অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: ثناء الله نذير أحمد

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যে ব্যক্তি মারা গেল সে কি শহীদ?

    প্রশ্ন: আমার ভাই বৈদ্যুতিক খুটির পাশে দাঁড়িয়েছিল, ফলে বৈদ্যুতিক তার তার শরীর স্পর্শ করে, আর সে শর্ট খেয়ে সাথে সাথে মারা যায়। তাকে কি শহীদ গণ্য করা হবে? দাফন করার জন্য আমরা যখন তার ওপর সালাত পড়ি, তখন এতো বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিল যে, মসজিদে পর্যন্ত তাদের সংকুলান হয় নি। তাকে মাটি দেওয়ার জন্য আমাদের যে গ্রুপটি কবরস্থান পর্যন্ত যায়, তাও বেশ দীর্ঘ ও বড় ছিল। কারণ, সে আমাদের সবার কাছেই প্রিয় ছিল। কিয়ামতের দিন এরা কি তার জন্য সুপারিশ করবে? অধিকন্তু সে ছিল যুবক, ভদ্র ও সালাত আদায়কারী।

    উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ

    জাবের ইবন আতীক রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «مَا تَعُدُّونَ الشَّهَادَةَ؟ قَالُوا: الْقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ تَعَالَى . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الشَّهَادَةُ سَبْعٌ سِوَى الْقَتْلِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ: الْمَطْعُونُ شَهِيدٌ، وَالْغَرِقُ شَهِيدٌ ، وَصَاحِبُ ذَاتِ الْجَنْبِ شَهِيدٌ، وَالْمَبْطُونُ شَهِيدٌ، وَصَاحِبُ الْحَرِيقِ شَهِيدٌ، وَالَّذِي يَمُوتُ تَحْتَ الْهَدْمِ شَهِيدٌ، وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهِيدٌ»

    “তোমাদের নিকট শাহাদাত কী? তারা বলল: আল্লাহর রাস্তায় মারা যাওয়া। তিনি বললেন: আল্লাহর রাস্তায় মারা যাওয়া ছাড়াও সাত প্রকার শাহাদাত রয়েছে: প্লেগ বা মহামারিতে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, ফুসফুসে রোগাক্রান্ত মৃত ব্যক্তি শহীদ, পেটের রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, ধ্বংস স্তুপের নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, আর যে নারী পেটে বাচ্চা নিয়ে মারা যায় সেও শহীদ। (আহমদ, হাদীস নং ২৩৮০৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১১১; নাসাঈ, হাদীস নং ১৮৪৬। সহীহ আবু দাউদে আলবানী হাদসটিকে সহীহ বলেছেন।)

    হাদীসে উল্লিখিত শব্দের ব্যাখ্যা:

    (المطعون) প্লেগ বা মহামারিতে মৃত ব্যক্তি।

    (والغرق شهيد) পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি। পানি পথের যাত্রায় মৃত ব্যক্তির শাহাদাতের জন্য সফরটি বৈধ বা সাওয়াবের উদ্দেশ্যে হওয়া জরুরি।

    (وصاحب ذات الجنب) প্লিরসি। ফুসফুসে ঘাঁ জনিত রোগ, যা এক সময় ফেটে গেলে ব্যথা কমে যায়, তারপরই রোগীর মৃত্যু ঘটে। এর লক্ষণ হচ্ছে, পাঁজড়ের নিচে ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, উপরন্তু জ্বর ও শর্দি তো আছেই। এটা নারীদের মধ্যে বেশি হয়। এ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন মোল্লা আলী ক্বারি রহ.।

    (والمبطون) পেটের রোগ। যেমন, ডায়রিয়া, শোথ রোগ ও পেটের ব্যথা ইত্যাদি।

    (وصاحب الحريق) আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি।

    (تحت الهدم) ধ্বংস স্তুপের নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি। যেমন, দেয়াল ইত্যাদি।

    (والمرأة تموت بجُمع) খাত্তাবি বলেন, এর অর্থ পেটে বাচ্চাসহ মৃত নারী। নিহায়া গ্রন্থে রয়েছে, পেটে বাচ্চাসহ মৃত নারী, আর কেউ কেউ বলেছেন, কুমারী অবস্থায় মৃত নারী।

    অতএব, যে ব্যক্তি বৈদ্যুতিক শর্টে পুড়ে মারা যায় সে শহীদ। কিন্তু যে শুধু শর্টে মারা যায় সে নয়।

    জানাযায় অধিক লোক উপস্থিত হওয়া এবং মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করা, এটা মৃত ব্যক্তির জন্য শুভ সংবাদ।

    আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «مَا مِنْ مَيِّتٍ يُصَلِّي عَلَيْهِ أُمَّةٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ يَبْلُغُونَ أَنْ يَكُونُوا مِائَةً يَشْفَعُونَ إِلَّا شُفِّعُوا فِيهِ»

    “যে কোনো মৃত ব্যক্তির ওপর মুসলিমদের বৃহৎ একটি জামাত জানাযা পড়ে, যাদের সংখ্যা একশত পর্যন্ত পৌঁছে আর তারা সবাই তার জন্য সুপারিশ করে, তবে অবশ্যই তার ব্যাপারে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (নাসাঈ, হাদীস নং ১৯৯১; তিরমিযী, হাদীস নং ০২৯। আলবানী সহীহ নাসাঈতে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)

    কুরাইব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ مَاتَ ابْنٌ لَهُ بِقُدَيْدٍ أَوْ بِعُسْفَانَ، فَقَالَ : يَا كُرَيْبُ ، انْظُرْ مَا اجْتَمَعَ لَهُ مِنْ النَّاسِ؟ قَالَ : فَخَرَجْتُ فَإِذَا نَاسٌ قَدْ اجْتَمَعُوا لَهُ فَأَخْبَرْتُهُ، فَقَالَ : تَقُولُ هُمْ أَرْبَعُونَ، قَالَ : نَعَمْ . قَالَ : أَخْرِجُوهُ ، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : مَا مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ يَمُوتُ فَيَقُومُ عَلَى جَنَازَتِهِ أَرْبَعُونَ رَجُلًا لَا يُشْرِكُونَ بِاللَّهِ شَيْئًا إِلَّا شَفَّعَهُمْ اللَّهُ فِيهِ».

    “আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত, তাঁর এক পুত্র সন্তান কুদাইদ নামক স্থানে কিংবা উসফান নামক স্থানে মারা যায়, তিনি বললেন, হে কুরাইব, দেখ তো কি পরিমাণ মানুষ তার জন্য জমায়েত হযেছে? সে বলল: আমি বের হয়ে দেখলাম তার জন্য অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে। আমি তাকে সংবাদ দিলাম। তিনি বললেন: তুমি বলছ তারা চল্লিশ জন হবে। সে বলল: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তাকে বের কর। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: কোনো মুসলিম ব্যক্তি যখন মারা যায়, অতঃপর তার জানাযার জন্য এমন চল্লিশ জন লোক দাঁড়ায়, যারা কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করে না। তবে আল্লাহ তার ব্যাপারে তাদের সুপারিশ অবশ্যই গ্রহন করবেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪৮)

    আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «مَرُّوا بِجَنَازَةٍ فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا خَيْرًا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَبَتْ ثُمَّ مَرُّوا بِأُخْرَى فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا شَرًّا فَقَالَ وَجَبَتْ فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مَا وَجَبَتْ ؟ قَالَ : (هَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ خَيْرًا فَوَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَهَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ شَرًّا فَوَجَبَتْ لَهُ النَّارُ أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللَّهِ فِي الْأَرْضِ».

    “লোকেরা একটি জানাযা নিয়ে গেল, অতঃপর তারা মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অবধারিত হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর তারা আরেকটি জানাযা নিয়ে গেল, এবার তারা মৃত ব্যক্তির দুর্নাম করল। তিনি বললেন: অবধারিত হলে গেল। উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বললেন, কী অবধারিত হলো? তিনি বললেন: এ ব্যক্তির তোমরা প্রশংসা করেছ, তাই তার জন্য জান্নাত অবধারিত হলো। আর তার তোমরা দুর্নাম করেছ, তাই তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হলো। এ পার্থিব জগতে তোমরা আল্লাহর সাক্ষ্যি। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪৯)

    আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি তোমার ভাইকে ক্ষমা করুন। তার ওপর রহম করুন এবং কিয়ামতের দিন তাকে নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও নেককার লোকদের সাথে উত্থিত করুন।

    সমাপ্ত