ছবি ও মূর্তির ব্যাপারে ইসলামের হুকুম
ক্যাটাগরিসমূহ
Full Description
ছবি ও মূর্তির ব্যাপারে ইসলামের হুকুম
حكم الصور والتماثيل في الإسلام
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা.............
ছবি ও মূর্তির হুকুম কী? ইসলামি শরী‘আতের দৃষ্টিতে ছবি ও মূর্তির মাঝে কোনো পার্থক্য আছে কি না। ছবি ও মূর্তির ক্ষতিকারক দিক কী কী? বর্তমান প্রবন্ধে এসব বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। ছবি ও মূর্তির মাঝে যারা পার্থক্য করেন, স্পষ্ট যুক্তির নিরিখে তাদের যুক্তি খণ্ডনের চেষ্টা করা হয়েছে।
ছবি ও মূর্তির ব্যাপারে ইসলামের হুকুম
ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমস্ত মানুষকে এক আল্লাহর দিকে ডাকার জন্য। আর সাথে সাথে আউলিয়া কিংবা অন্যান্য নেককারদের অথবা গাইরুল্লাহর ইবাদত করা থেকে বিরত রাখার জন্য। এদের পূজা করা হয় মূর্তি, ভাস্কর অথবা ছবি বানিয়ে। এই দাওয়াত বহু পূর্ব থেকে চালু হয়েছে, যখন আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হিদায়াতের জন্য তাঁর রাসূলদের প্রেরণ করা শুরু করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ﴾ [النحل: ٣٦]
“আর অবশ্যই আমরা প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি এই বলে যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, আর তাগুত (তাগুত হচ্ছে ঐ সমস্ত ব্যক্তি বা জিনিস যাদের ইবাদত করা হয় আল্লাহকে ছেড়ে, আর তাতে তারা রাজী খুশী থাকে) থেকে বিরত থাক।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]
এ সমস্ত মূর্তির কথা সূরা নূহ-তে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সবচেয়ে বড় দলীল হলো, ঐ মুর্তিগূলি ছিল ঐ যমানার সর্বোত্তম নেককারগণের। এ হাদীস ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ তা‘আলার ঐ কথার ব্যাখ্যায়:
﴿وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣ وَقَدۡ أَضَلُّواْ كَثِيرٗاۖ ٤﴾ [نوح: ٢٣، ٢٤]
“আর তারা বলল. তোমরা কোন অবস্থাতেই তোমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ কর না, আর ওদ্দা, সূয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাসরাকে কখনই পরিত্যাগ কর না। আর তারা তো অনেককেই গোমরাহ করেছে।” [সূরা নূহ, আয়াত: ২৩-২৪]
তিনি বলেন,
«أَسْمَاءُ رِجَالٍ صَالِحِينَ مِنْ قَوْمِ نُوحٍ، فَلَمَّا هَلَكُوا أَوْحَى الشَّيْطَانُ إِلَى قَوْمِهِمْ، أَنِ انْصِبُوا إِلَى مَجَالِسِهِمُ الَّتِي كَانُوا يَجْلِسُونَ أَنْصَابًا وَسَمُّوهَا بِأَسْمَائِهِمْ، فَفَعَلُوا، فَلَمْ تُعْبَدْ، حَتَّى إِذَا هَلَكَ أُولَئِكَ وَتَنَسَّخَ العِلْمُ عُبِدَتْ»
“তারা ছিলেন নূহ আলাইহিস সালামের কাওমের নেককার বান্দা। যখন তারা মৃত্যুমুখে পতিত হন, তখন শয়তান তাদের গোপনে কুমন্ত্রনা দেয় যে, তারা যে সমস্ত স্থানে বসত সেখানে তাদের মূর্তি বানিয়ে রাখ আর ঐ মূর্তিদেরকে তাদের নামেই পরিচিত কর। তখন তারা তাই করল; কিন্তু তখনও তাদের ইবাদত শুরু হয় নি। তারপর যখন ঐ যামানার লোকেরাও মারা গেল তখন তাদের পরের যমানার লোকেরা ভুলে গেল যে, কেন ঐ মূর্তিগুলির সৃষ্টি করা হয়েছিল। তখনই তাদের পুজা শুরু হয়ে গেল।”[1]
এ ঘটনা থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, গাইরুল্লাহর ইবাদতের কারণগুলির একটি হলো, জাতীয় নেতাদের মূর্তি তৈরী করা। অনেকেরই ধারনা এ সময় মূর্তি, বিশেষ করে ছবি হারাম নয়; বরঞ্চ হালাল। কারণ, বর্তমানে কেউ ছবি বা মূর্তির পূজা করে না; কিন্তু এটা কয়েকটি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়:
বর্তমান যমানায়ও মূর্তি ও ছবির পূজা হয়ে থাকে। যেমন গির্জাসমূহে আল্লাহকে ছেড়ে ইসা আলাইহিস সালাম ও তার মাতা মারইয়াম আলাইহাস সালামের ছবির পূজা হয়। এমনকি ক্রুশের সামনে তারা রুকুও করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র তৈরি করা হয়েছে ইসা আলাইহিস সালাম ও তার মায়ের ওপর, যা খুবই উচ্চ মুল্যে বিক্রি করা হয়। আর উহা ঘরে ঝুলিয়ে রাখা হয় তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও ইবাদত করার জন্য।
এ সমস্ত ভাস্কর যা দুনিয়ার দিক দিয়ে উন্নত ও রুহানী দিক দিয়ে অনগ্রসর জাতি কিংবা জাতীয় নেতারা সম্মান প্রর্দশন করেন তাদের মস্তক হতে টুপি খুলে অথবা তাদের সম্মুখ দিয়ে যাবার সময় তাদের মাথা ঝুকিয়ে অতিক্রম করে। যেমন, আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটনের ভাস্কর্য, ফ্রান্সে নিপোলিয়ানের মূর্তি, রাশিয়ায় লেলিন ও স্টালিনের ভাস্কর্যের সম্মুখে এবং এ জাতীয় ভাস্কর্য বড় বড় রাস্তায় স্থাপন করা হয়েছে। তাদের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমের সময় পথচারিরা মস্তক ছুকিয়ে সালাম দেয়। এমনকি এ ধরনের ভাস্কর্যের চিন্তা ভাবনা অনেক আরব দেশে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবেই তারা কাফেরদের অনুসরণ করতে উদ্যোগী হয়েছে আর আস্তে আস্তে রাস্তা ঘাটে এ রকম ভাস্কর্যের সৃষ্টি করেছে। এই সমস্ত ভাস্কর্য ও মূর্তি আরবের মুসলিম দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও ওয়াজিব ছিল এ চাতীয় ভাস্কর্য তৈরি না করে ঐ ধন-দৌলত মসজিদ-মাদরাসা, হাসপাতাল, সাহায্যসংস্থা ইত্যাদি তৈরির জন্য ব্যয় করা, যাতে এ উপকার সকলের নিকট পৌঁছে। যদিও তারা এটা তাদের নামে নামকরণ করুক না কেন তাতে কোনো ক্ষতি নেই।
আর এমন একদিন আসবে, যখন এই ভাস্কর্যগুলোর সম্মুখে মস্তক অবনত করে সম্মান প্রদর্শন করা হবে এবং তাদের ইবাদত করা হবে। যেমনভাবে ইউরোপ, তুর্কী এবং অন্যান্য দেশে হচ্ছে। আর তাদের পূর্বে নূহ আলাইহিস সালামের কাওম তা করেছিল। তারা তাদের নেতাদের ভাস্কর্য তৈরি করেছিল; অতঃপর তাকে সম্মান করত ও ইবাদত করত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে হুকুম করে বলেন:
«لا تَدَعْ تِمْثَالاً إلاَّ طَمَسْتَهُ ولا قَبْرًا مُشْرِفًا إلاَّ سَوَّيْتَهُ».
“যেখানে যত মুর্তিই দেখ না কেন, তাকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে ফেল। আর যত উচুঁ কবর দেখবে, তাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে।”[2] অন্য বর্ণনায় আছে, যত ছবি দেখবে তাকে টুকরা টুকরা করে ফেলবে।
ছবি ও মূর্তির ক্ষতিকর দিকসমূহ:
ইসলামে যত জিনিসকেই হারাম করা হয়েছে তা দীনের ক্ষেত্রে কিংবা চরিত্রের ক্ষেত্রে কিংবা সম্পদ অথবা অন্যান্য কোনো ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই করা হয়েছে। আর সত্যিকারের মুসলিম সর্বদা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুমের কাছে নিজেকে অবনত করে। যদিও সে ঐ হুকুমের হাকীকত নাও জানতে পারে তথাপিও। মূর্তি ও ছবির অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। ঐগুলো হচ্ছে:
১। আকীদা ও দীনের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই যে, ছবি মূর্তি বহু লোকেরই আকীদা নষ্ট করে ফেলেছে। কারণ, খ্রিষ্টানরা ঈসা ও মারইয়াম ‘আলাইহিমাস সালাম এবং ক্রুশের ছবির পূজা করে। ইউরোপ ও আমেরিকায় তাদের নেতাদের মূর্তির পূজা করা হয়।
আর ঐ মূর্তিগুলোর সামনে নিজেদের মস্তক সমূহকে অবনত করে সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে। তাদের সাথে পা মিলিয়ে চলছে কোনো কোনো মুসলিম ও আরব দেশ। তারাও তাদের নেতাদের মূর্তি ও ভাস্কর্য স্থাপন করেছে। তারপর কোনো কোনো সূফি পীরদের মধ্যে এর প্রবনতা দেখা দিয়েছে। তারা তাদের পীর মাশায়েখদের ছবি, সালাত আদায় করার সময়, তাদের সম্মুখে স্থাপন করে এই নিয়তে যে, এতে তাদের মধ্যে খুশু বা আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়। আর তাদের মাশায়েখরা যখন যিকির করতে থাকে, তখন তাদের ছবি উত্তোলন করে। ফলে তাদের মুরাকাবা ও মুশাহাদা দেখাতে বিঘ্ন ঘটায়। কোনো কোনো স্থানে তাদের ছবিকে সম্মান দেখিয়ে লটকিয়ে রাখে এ ধারনা করে যে, এতে বরকত হয়।
সেই রকম অনেক গায়ক-গায়িকা ও শিল্পীদের ছবি তাদের অনুসারীরা ভালোবাসে। তারা তাদের ছবি সংগ্রহ করে সম্মান এবং পবিত্রতা দেখানোর জন্য ঘরে অথবা অন্যত্র ঝুলিয়ে রাখে। ১৯৬৭ সালে ইয়াহূদীদের সাথে যুদ্ধে এ জাতীয় কাজ ঘটেছিল। ফলে তাদের পরাজয় ঘটে। কারণ, তাদের সাথে গায়করা ছিল, আল্লাহ ছিলেন না। ফলে ঐ গায়ক গায়িকারা কোনো উপকার করতে পারে নি। বরঞ্চ এদের কারণেই তাদের পরাজয় ঘটেছিল। হায়! যদি আরবগণ এ ঘটনা হতে শিক্ষা গ্রহণ করে সর্বান্তকরণে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করত, তবে তারা আল্লাহর সাহায্য পেত।
২। ছবি ও মূর্তি যে কীভাবে যুবক, যুবতিদের স্বভাব চরিত্র নষ্ট করছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাস্তাঘাট বাড়িঘর পূর্ণ হয়ে আছে এই ধরণের তথাকথিত শিল্পীদের ছবিতে যারা নগ্ন, অর্ধ নগ্ন অবস্থায় ছবি উঠিয়েছে। ফলে যুবকরা তাদের প্রতি আশেক হয়ে পড়েছে। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নানা ধরনের ফাহেশা কাজে তারা লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাদের চরিত্র ও অভ্যাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা না দীন সম্বন্ধে চিন্তা করছে আর না বাইতুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার চিন্তা-ভাবনা করছে। না সম্মান, আর না জিহাদের চিন্তা ভাবনা করে। আজকের যামানায় ছবির প্রচার খুবই বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে মহিলা ও শিল্পীদের ছবি। এমনকি জুতার বাক্স, পত্রিকা, পাক্ষিক, বই পুস্তক, টেলিভিশন ইত্যাদিতেও। বিশেষ করে যৌন উত্তেজক সিনেমা, ধারাবাহিক নাটক এবং ডিটেকটিভ চলচিত্রসমূহে। অনেক ধরনের কার্টুন ছবিতেও, যাতে আল্লাহ পাকের সৃষ্টিকে বিকৃত করা হচ্ছে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা লম্বা নাক, বড় কান কিংবা বিরাট বিরাট চোখ সৃষ্টি করেন নি, যা তারা এই ছবিসমূহে অংকন করে থাকে। বরঞ্চ আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে অতি উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছেন।
৩। ছবি ও মূর্তির ক্ষেত্রে যে ধন-দৌলত নষ্ট হয়, প্রকাশ্যভাবে তা সকলেরই গোচরীভূত হয়। এ জাতীয় ভাস্কর মূর্তিসমূহ সৃষ্টি করার জন্য হাজার হাজার, লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হয় শয়তানের রাস্তায়। বহু লোক এ জাতীয় ঘোড়া, উট, হাতি, মানুষের মূর্তি ইত্যাদি ক্রয় করে তাদের ঘরে নিয়ে কাঁচের আলমারীতে সাজিয়ে রাখে। আবার অনেকে তাদের মাতা-পিতা বা পরিবারের লোকদের ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখে। এ সমস্ত কাজে যে ধন-দৌলত তারা ব্যয় করে তা যদি গরীব মিসকীনদের মাঝে দান সদকা করত, তবে মৃতের রূহ তাতে শান্তি পেত। এর থেকেও লজ্জাকর ঘটনা হলো, কেউ কেউ বাসর রাতে স্ত্রীর সাথে যে ছবি তোলে তা ড্রইং রুমে ঝুলিয়ে রাখে অন্যদের দেখানোর জন্য। মনে হয় যেন তার স্ত্রী তার একার নয়; বরঞ্চ তা সকলেরই।
ছবি ও মূর্তির কি একই হুকুম:
অনেকে এ ধারণা করে যে, জাহেলিয়াত যমানায় যে সমস্ত মূর্তি তৈরি করা হত একমাত্র ঐগুলোই হারাম। এতে বর্তমান যামানার আধুনিক ছবি অর্ন্তভুক্ত নয়। এটা বড়ই আবাক হওয়ার কথা। মনে হচ্ছে, তারা যেন ছবিকে হারাম করে যে সমস্ত হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে তা শ্রবণই করে নি। তার মধ্য থেকে কয়েকটি হাদীস নিম্নে বর্ণিত হলো:
«أَنَّهَا اشْتَرَتْ نُمْرُقَةً فِيهَا تَصَاوِيرُ، فَلَمَّا رَآهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ عَلَى البَابِ فَلَمْ يَدْخُلْ، فَعَرَفَتْ فِي وَجْهِهِ الكَرَاهِيَةَ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَتُوبُ إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ، مَاذَا أَذْنَبْتُ؟ قَالَ: «مَا بَالُ هَذِهِ النُّمْرُقَةِ» فَقَالَتْ: اشْتَرَيْتُهَا لِتَقْعُدَ عَلَيْهَا وَتَوَسَّدَهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَيُقَالُ لَهُمْ: أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ " وَقَالَ: «إِنَّ البَيْتَ الَّذِي فِيهِ الصُّوَرُ لاَ تَدْخُلُهُ المَلاَئِكَةُ»
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা একটি ছোট বালিশ ক্রয় করেছিলেন। তাতে ছবি আঁকা ছিল। ঘরে প্রবেশের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৃষ্টি এতে পতিত হলে তিনি আর ঘরে প্রবেশ করলেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর মুখমণ্ডল দেখেই তা বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন: আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট তাওবা করছি। আমি কি গোনাহ করেছি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: এ ছোট বালিশটি কোথায় পেলে? তিনি বললেন: আমি এটা এ জন্য খরিদ করেছি যাতে আপনি এতে হেলান দিয়ে বিশ্রাম করতে পারেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যারা এ সমস্ত ছবি অংকন করেছে কিয়ামতের মাঠে তাদেরকে ‘আযাব দেওয়া হবে। তাদের বলা হবে: তোমরা যাদের সৃষ্টি করেছিলে তাদের জীবিত কর। অতঃপর তিনি বললেন: যে ঘরে ছবি আছে সে ঘরে ফিরিশতাগণ প্রবেশ করেন না।”[3]
তিনি আরো বলেছেন:
«أشَدُّ النَّاسِ عَذابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِيْنِ يُضَاهُوْنَ بِخَلْقِ اللهِ».
“কিয়ামতের মাঠে ঐ সমস্ত লোকেরা (যারা ছবি আঁকে তারা আল্লাহর সৃষ্টির মতোই কিছু করতে উদ্যত হয়।) সবচেয়ে বেশি ‘আযাব ভোগ করবে যারা আল্লাহর সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করে।”[4]
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে:
«أنَّ النَّبيَّ صلي الله عليه وسلم لَمَّا رأي الصُّوَرَ في البيتِ لَمْ يَدْخُلْ حتّي مُحِيَتْ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো ঘরে ছবি দেখলে, তা সরিয়ে না ফেলা পর্যন্ত ঐ ঘরে প্রবেশ করতেন না।”[5]
«نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصُّورَةِ فِي البَيْتِ، وَنَهَى عَنْ أَنْ يُصْنَعَ ذَلِكَ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ীতে ছবি ঝুলাতে নিষেধ করেছেন আর অন্যদের তা আঁকতে কিংবা তোলতে নিষেধ করেছেন।”[6]
যে সমস্ত ছবি বা মূর্তি জায়েয:
গাছপালা, চন্দ্র, তারকা, পাহাড় পর্বত, পাথর, সাগর, নদনদী, সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, পবিত্র স্থানের ছবি যেমন কাবাঘর মদীনা শরীফ, বাইতুল মোকাদ্দাস, বা অন্যান্য মসজিদের ছবি, যা কোনো মানুষ বা প্রাণী নয় তার ছবি উঠানো কিংবা ভাস্কর বানানো জায়েয। দলীল: এ সম্বন্ধে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন: যদি তোমাকে ছবি বা মূর্তি বানাতেই হয়, তবে কোনো বৃক্ষ বা এমন জিনিসের ছবি আঁক যাদের জীবন নেই।
পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা এ জাতীয় কাজে এটা জায়েয অতিশয় প্রয়োজনের খাতিরে।
হত্যাকারী বা অপরাধীদের ছবি তোলা জায়েয, যাতে করে তাদের ধরে শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়। সেইরকম বিজ্ঞানের প্রয়োজনে যা তোলা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছবি, যে সম্বন্ধে কিছু আলেম জায়েযের ফাতওয়া দিয়েছেন।
যেরকম ছোট বাচ্চা মেয়েরা যদি ঘরে বানানো কাপড় দিয়ে পুতুল খেলে তা জায়েয যা পোশাক পরিহিত হবে পাক পরিস্কার হবে, যাতে করে কীভাবে শিশুকে পালন করতে হয় তা বাচ্চারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। ফলে, বড় হয়ে মা হলে তা তাদের উপকারে আসবে।
দলীল: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,
«كُنْتُ أَلْعَبُ بِالْبَنَاتِ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আমার পুতুল মেয়ে নিয়ে খেলা করতাম।”[7]
তবে বাচ্চাদের জন্য বিদেশী কোনো পুতুল খরিদ করা জায়েয নেই। বিশেষ করে ঐ সমস্ত পুতুল যা নগ্ন কিংবা বেপর্দা অবস্থায় আছে। যদি এটা দ্বারা বাচ্চারা খেলাধূলা করে তবে তা থেকে তারা অনুকরণ করে সেই মতো চলতে তারা উদ্যাগী হবে। আর এভাবেই সমাজকে নষ্ট করে দিবে। অধিকন্ত এ টাকা পয়সা কাফিরদের দেশে ও ইয়াহূদীদের নিকট পৌঁছবে।
ছবির মাথা যদি কেটে দেয়া হয় তবে তা ব্যবহার করার অনুমতি আছে। কারণ, ছবির মূল হলো মাথা। তাই যদি ছেদ করে দেয়া হয় তবে আর রুহ থাকল না। তখন তা জড় পদার্থের পর্যায়ে পড়ে। এ সম্বন্ধে জিবরীল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন:
«مُر برأسِ التِّمْثَالِ يَقْطَعُ فَيَصِيْرُ عَلي هَيئَةِ الشَّجَرَةِ وَمُرْ بِالسَّتْرِ فلْيَقْطَعْ فليَجْعَلْ مِنْهُ وِسَادَتَيْنِ تَوطأنِ».
“আপনি মূর্তির মাথা কেটে দিতে বলেন, ফলে উহা গাছের মত কিছু একটাতে পরিবর্তিত হবে। আর পর্দার কাপড়কে দু’টুকরা করে তা দ্বারা দু’টি বালিশ বানাতে বলেন।”[8]
সমাপ্ত