×
রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে ঈদের আনন্দ উৎসবের আকার-প্রকৃতি, ধরন-ধারণের উপর সাজানো হয়েছে বর্তমান প্রবন্ধটি। আশা করি পাঠক মাত্রই উপকৃত হবেন।

নবী ঘরে ঈদ

العيد في بيت النبوة

< بنغالي >

খালেদ ইবন আব্দুর রহমান আশ-শায়ে

خالد بن عبد الرحمن الشايع

—™

অনুবাদ: চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ

সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

ترجمة : أبو الكلام أزاد

مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

নবী ঘরে ঈদ

(আল্লাহ তা'আলা আমাদের ও আপনাদের সাওম, তারাবীহর সালাত ও অন্যান্য সকল নেক আমল কবুল করুন আর আপনারা সারাটি বছর সুখে থাকুন।)

মদীনার ইতিহাসে একটি আলোকোজ্জল দিন তথা ঈদের দিন সকাল বেলায় নবীঘর ও আশে পাশের সবকয়টি জায়গায় ঈদ উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছিল। আর এ সব কিছুই হচ্ছিল মানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখের সামনে। প্রত্যেকে ঈদ উৎসবে নিজ নিজ অনুভূতি ব্যক্ত করছিল। তারা সকলেই চাইত তাদের নিজ নিজ অনুষ্ঠান সম্পর্কে যাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবগত হন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা ও সম্মানের খাতিরেই তারা এসব করেছিল।

এদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরের অবস্থা সম্পর্কে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহার বর্ণনা হলো: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন আমার ঘরে আগমন করলেন, তখন আমার নিকট দু'টি ছোট মেয়ে গান গাইছিল। তাদের দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লেন।

ইতোমধ্যে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু 'আনহু ঘরে প্রবেশ করে এই বলে আমাকে ধমকাতে লাগলেন যে, নবীজির কাছে শয়তানের বাঁশি?

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা শুনে বললেন, মেয়ে দু'টিকে গাইতে দাও। অতঃপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যমনস্ক হলেন তখন আমি মেয়ে দুটিকে ইশারা করলে তারা বের হয়ে গেল।

হুজরা শরীফের খুবই নিকটে আরেকটি অনুষ্ঠান চলছিল, যেটির বর্ণনা দিয়েছেন স্বয়ং আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহা। তিনি বলেন, ঈদের দিন আবিসিনিয়ার কিছু লোকজন লাঠি-শোঠা নিয়ে খেলা-দুলা করছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহাকে ডেকে বললেন, আয়েশা তুমি কী দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আমাকে তাঁর পিছনে দাড় করিয়ে দিলেন, আমার গাল তাঁর গালের উপর রাখলাম। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, হে বনী আরফেদা! তোমরা শক্ত করে নিক্ষেপ কর।

এরপর আমি যখন ক্লান্ত হয়ে গেলাম তখন তিনি বললেন, তোমার দেখা হয়েছে তো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে এবার যাও। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

নবীজির হুজরার সন্নিকটে আরেকটি স্পটে ঈদ উপলক্ষে আরেকটি অনুষ্ঠান শুরু হলো। কতগুলো বালক নবীর শানে উচ্চাঙ্গের ও মানসম্পন্ন কবিতা আবৃতি করতে লাগল।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা ছিলেন, ইত্যবসরে আমরা বাচ্চাদের চেচামেচি শুনতে পেলাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দেখলেন, হাবশিরা খেলা-ধুলা করছে আর ছোট ছোট শিশুরা তাদের চারদিকে হৈ চৈ করছে। তিনি বললেন, আয়েশা এদিকে এসে দেখে যাও। অতঃপর আমি এসে আমার থুতনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গর্দানের উপর রেখে তার পিছনে থেকে তাকাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন, তুমি পরিতৃপ্ত হও নি? তুমি কী এখনও পরিতৃপ্ত হও নি? আমি তখন তার নিকট আমার অবস্থান পরীক্ষা করার জন্য বলছিলাম, না এখনও হয় নি। হঠাৎ উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহুর আগমন ঘটল। সাথে সাথে লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন্তব্য করলেন, আমি দেখলাম জিন্ন ও মানুষ শয়তানগুলো উমারকে দেখে পালিয়ে গেল। (তিরমিযী)

ওরা যে কবিতাগুলো আবৃতি করছিল সেগুলো অর্থ বুঝা যাচ্ছিলনা, কেননা সেগুলো ছিল তাদের নিজস্ব ভাষায়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কবিতাগুলোর অর্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। মুসনাদ ও সহীহ ইবন হিব্বানে আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, হাবশিরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমন কিছু পাঠ করছিল যা তিনি বুঝছিলেন না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ওরা কী বলছে? সাহাবীগণ বললেন, ওরা বলছে: মুহাম্মাদ সৎ ও নেককার বান্দা।

উল্লিখিত আলোচনা থেকে আলেমগণ কয়েকটি বিষয় উদঘাটন করেছেন:

১. পরিবারের দেহ ও মন যেভাবে উৎফুল্ল হয় ঈদ মৌসুমে উদারতার সাথে তার আয়োজন করা শরী'আতসম্মত। সম্মানিত ব্যক্তি তার বয়স ও স্ট্যাটাসের দরুন যদিও সে নিজে আনন্দ উৎসবে জড়িত হতে পারে না বটে। তার জন্য যা মানানসই সে তাতে যোগ দেবে। কিন্তু পরিবারের যে সব সদস্যের বয়স কম তারা স্বভাবগতভাবেই ঐসব খেল-তামাশার দিকে ধাবিত হয়. তাদের জন্য শরী'আতের সীমার ভিতর থেকে খেলা-ধুলা ও আনন্দ-ফুর্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

২. ঈদ উৎসবে আনন্দ প্রকাশ করা দীনের একটি প্রতীক। এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'টি বালিকাকে গান গাইতে দেখে বারণ করেন নি। শুধু তা-ই নয়, যখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু 'আনহু তাদের বাধা দিতে চাইলেন তখন তিনি আবু বকরকে নিষেধ করলেন।

অপর একটি বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতির ঈদ আছে, আর এটি আমাদের ঈদের দিন।

অন্য একটি বর্ণনায় আছে, ইয়াহূদীরা যাতে বুঝতে পারে, আমাদের ধর্মেও আনন্দ উৎসবের সুযোগ আছে। আর নিশ্চয় আমি উদার ও ভারসাম্যপূর্ণ আদর্শ নিয়ে প্রেরিত হয়েছি।

৩. স্ত্রীর প্রতি সদয় আচরণ এবং তাকে ভালোবেসে কাছে টেনে আনার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কেননা নারী জাতিকে নরম হৃদয় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তার প্রকৃতিগত স্বভাবের প্রতি কেউ সাড়া দিলে সে সহজেই তার দিকে ঝুকে পড়ে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের ভালোবেসে কাছে টানার উত্তম দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। তার ঘর ছিল মুহাব্বত, ভালোবাসা, অনুগ্রহ ও পরস্পর শ্রদ্ধাবোধের উজ্জল নমুনা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহার বর্ণনা, (আমার চোয়াল নবীর চোয়ালের সাথে মিশে গেল) দ্বারা স্ত্রীর প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কতটুকু আন্তরিকতা ছিল তা প্রকাশ পাচ্ছে, যা ঈদ উপলক্ষে বাস্তবায়িত হয়েছে।

৪. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুউচ্চ মর্যাদা, তার ব্যক্তিত্ব ও সুমহান দায়িত্ববোধ থাকা সত্ত্বেও তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহার মনে তৃপ্তিদানের জন্য দাড়িয়ে থাকার মাঝে পিতা-মাতা, ভাই-বন্ধু ও স্বামীদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। স্বামীগণ স্ত্রীদের আর পিতা-মাতা সন্তানদের মনোবাসনা পূরণ করার ব্যাপারে যদি এগিয়ে না আসে তাহলে স্ত্রী ও সন্তানদের মনে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়ে। যা তাকে মানসিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলে।

৫. খেলা-ধুলায় ব্যস্ত হওয়ার সময় অবশ্যই শরী'আতের সীমারেখার ভিতর থাকতে হবে। কোনো গুনাহে লিপ্ত হয়ে অথবা আল্লাহর বিধান নষ্ট করে কখনও খেলাধুলা করা যাবে না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহার বক্তব্য বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন: আমি হাবশিদের খেলা দেখার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আড়াল করে ছিলেন। বর্ণনা থেকে বুঝা গেল যে মেয়ে দু'টি গাচ্ছিল তারাও ছিল নাবালেগা। তাই উপযুক্ত প্রাপ্তবয়স্কা মেয়েদের গাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া গান গাওয়া তাদের পেশা ছিল না। তারা শুধু কবিতা আবৃতির মাধ্যমে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছিল যা শরী'আত বহির্ভূত ছিল না।

ইসলামে ঈদ কোনো ব্যক্তি কেন্দ্রীক আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়। তাই কিছু মানুষের আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে এর হক আদায় হবে না; বরং ঈদ হলো সমগ্র মুসলিম জাতির আনন্দ। শরীয়ত বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দিয়েছে। সবচেয়ে কাছের মানুষ পিতা-মাতা থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সকলে মিলে আনন্দ উপভোগ করবে। এটাই শরী'আতের দাবী। ঈদুল ফিতরের দিন সকাল বেলা সকল মুসলিমের জন্য খাবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি আরো পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর ঈদুল আযহার দিন কুরবানির ব্যবস্থা করেও তিনি ব্যাপারটি ফুটিয়ে তুলেছেন। পৃথিবীতে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো রীতি আদর্শ ফকির মিসকিনদের জন্য এমন ব্যাপকভাবে খাবার দাবারের আয়োজন করতে সক্ষম হয় নি।

তাই তো মুসলিমদের মধ্য থেকে মহান দানশীল ব্যক্তিবর্গ মানুষের প্রয়োজন মিটানোর ব্যাপারে খুবই গুরুত্ব দিতেন। ঈদ হলো আনন্দ, দয়া, ভালোবাসা ও মিল মুহাব্বতের আদান প্রদানের নাম। ইতিহাস সাক্ষ্য বহন করে, ঐ সকল মহামানবগণের আনন্দ পরিপূর্ণ হত না যতক্ষণ না তারা তাদের চারি পাশের ফকির ও অভাবী মানুষের প্রয়োজন মেটাতে না পারতেন। তাই তারা গরীব-দুঃখীকে খাবার খাওয়াতেন, তাদের মাঝে পোশাক বিতরণ করতেন এবং তাদের পাশে এসে দাড়াতেন।

সবচেয়ে বড় কথা হলো অমুসলিমদেরকে দাওয়াত দেওয়া ও তাদের ইসলামের হাকীকত সম্পর্কে অবগত করানোর জন্য ঈদ একটি বড় ধরণের মাধ্যম। আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কালামে এর প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন।

﴿ لَّا يَنۡهَىٰكُمُ ٱللَّهُ عَنِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يُقَٰتِلُوكُمۡ فِي ٱلدِّينِ وَلَمۡ يُخۡرِجُوكُم مِّن دِيَٰرِكُمۡ أَن تَبَرُّوهُمۡ وَتُقۡسِطُوٓاْ إِلَيۡهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُقۡسِطِينَ ٨ ﴾ [الممتحنة: ٨]

“আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে ঐ সকল লোকের সাথে ভালো ব্যবহার করতে ও তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে নিষেধ করেন না যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নি এবং তোমাদেরকে ঘর থেকে বের করে দেয় নি।" [সূরা আল-মুমতাহিনাহ, আয়াত: ৮]

ইসলামে ঈদ একটি সুউচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পরিপূর্ণ প্রতীক। যা দেহ ও মনের প্রয়োজন মিটিয়ে দেয়। মাহে রমযান ও হজের মাসসমূহের ইবাদাত বন্দেগীর বাহক হিসাবে ঈদের আগমন ঘটে। ঐ সকল মাসের সব কয়টি ইবাদতই রূহের খোরাক যোগায়। কুরআনে বলা হচ্ছে,

﴿ قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ ﴾ [يونس: ٥٨]

“তুমি বল আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত, এ নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ।" [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৮]

আর শরীরের প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে খেলা-ধুলা ও আনন্দ ফুর্তি ইসলামে বৈধ করা হয়েছে। আর এ কারণেই ঈদের দিনগুলোতে সিয়াম সাধনা হারাম করা হয়েছে। কেননা সাওম রেখে খানা-পিনা ছেড়ে দিয়ে ঈদ উদযাপন করা আদৌ সম্ভব নয়। আনাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহু-এর বর্ণনায় এর ইঙ্গিত বহন করে, তিনি বলেন,

«قدِمَ رسولُ الله صلى الله عليه وسلم المدينةَ ولهم يومان يلعبون فيهما، فقال: "قد أبدَلكم الله خيراً منهما: يوم الأضحى ويوم الفطر».

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখলেন, ইহুদিরা দু'টি দিন খেলা-ধুলা ও আনন্দ ফুর্তি করে। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্য এর চেয়েও উত্তম দু'টি দিন নির্ধারণ করেছেন, তা হলো ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন।" (আবু দাউদ, নাসা'ঈ)

ইবনে জারির রাহিমাহুল্লাহ দ্বিতীয় হিজরিতে সংঘটিত ঘটনাবলির মাঝে ঈদের সালাতের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বছরই মানুষদেরকে নিয়ে ঈদগাহে গমন করলেন এবং ঈদের সালাত আদায় করেন আর এটিই ছিল প্রথম ঈদের সালাত। আর এভাবেই মুসলিম উম্মাহ পরিপূর্ণ নি'আমত কামেল শরী'আত নিয়ে স্বয়ংসম্পূন্ন হয়েছে। কুরআনে এসেছে,

﴿وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلۡحَقِّۚ لِكُلّٖ جَعَلۡنَا مِنكُمۡ شِرۡعَةٗ وَمِنۡهَاجٗاۚ﴾ [المائدة: ٤٨]

“আপনার নিকট যে হক এসেছে তা বাদ দিয়ে আপনি তাদের অনুসরণ করবেন না, কেননা আমরা তোমাদের সকলকে শরী'আত ও বিধান দান করেছি।" [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৮]

নবী জীবনের প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মূহুর্তই ছিল যেন ঈদের দিন, যারা তার সাথে উঠা-বসা ও চলাফেরা করতেন এবং তাঁর শরী'আতের আলোকরশ্মি দ্বারা আলোকিত হতেন তাদের জন্য। আর এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আশে পাশে সর্বদাই বিভিন্ন বয়সের ও বিভিন্ন প্রকৃতির লোকজনের ভিড় লেগে থাকত। বৈদেশিক প্রতিনিধি দল, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন, আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা এমনকি নারীরা পর্যন্ত তার নিকট শিক্ষা অর্জন করতে আসত। প্রত্যেকেই নিজ নিজ অংশ বুঝে নিতেন হিদায়াত ও নি'আমতের ভাণ্ডার থেকে।

কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য এ নি'আমতের ধারা অবশ্যই চালু থাকবে। যে ব্যক্তি নবী আদর্শের উপর অটল থাকবে এবং তাঁর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে সেই দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হবে।

আল্লাহ তা'আলা বলেন,

﴿لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤﴾ [ال عمران: ١٦٤]

“আল্লাহ তা'আলা মু'মিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন তাদের মাঝে তাদের থেকেই একজন রাসূল প্রেরণের মাধ্যমে, যিনি তাদেরকে আয়াত পাঠ করে শুনান এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে প্রকাশ্য ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিল।" [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪]

সমাপ্ত