রজব সংক্রান্ত প্রচলিত হাদীসসমগ্র : একটি পর্যালোচনা
ক্যাটাগরিসমূহ
Full Description
রজব সংক্রান্ত প্রচলিত হাদীসসমগ্র : একটি পর্যালোচনা
[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]
সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
আলী হাসান তৈয়ব
2012 - 1433
﴿ أحاديث حول رجب : تحقيق وتحليل ﴾
« باللغة البنغالية »
ثناء الله نذير أحمد
مراجعة: شمس الحق صديق
علي حسن طيب
2012 - 1433
রজব সংক্রান্ত প্রচলিত হাদীসসমগ্র : একটি পর্যালোচনা
প্রথমত. রজবের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসের ব্যাপারে ইবন হাজার রহ. এর বক্তব্য মূলনীতির ন্যায়। ইবন হাজার রহ. বলেন, রজব মাসের ফযীলত, রজব মাসের রোযার ফযীলত বা রজব মাসের নির্দিষ্ট কোন দিনের রোযার ফযীলত বা রজবের নির্দিষ্ট কোন রাতে সালাতের ফযীলত সম্পর্কে বিশুদ্ধ কোন হাদীস নেই, যা প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানো যায়। হাফেজে হাদীস আবূ ইসমাইল আল-হিরাবী আমার পূর্বেই এ ব্যাপারে অনুরূপ মত খুব দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন, ইতিপূর্বে বিশুদ্ধ সূত্রে যার বর্ণনা আমরা দিয়েছি।
তিনি আরো বলেছেন, যেসব হাদীস রজবের ফযীলত বা রজবের রোযার ফযীলত বা রজবের নির্দিষ্ট কোন দিনের রোযার ফযীলতের ব্যাপারে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা দুপ্রকার : (ক) দুর্বল (খ) জাল বা বানোয়াট। আমরা এখানে দুর্বল হাদীসগুলোর উলেখ করব আর জাল বা বানোয়াট হাদীসগুলোর প্রতি সামান্য ইঙ্গিত দেব।
[দেখুন : হাফেজ ইবন হাজার রচিত ‘তাবইনুল উজব ফিমা ওরাদা ফী ফাজলে রজব’ (পৃ. ৬ ও ৮) এবং আল্লামা শাকিরী রচিত ‘কিতাবুস সুনান ওয়াল মুবতাদিআত’ (পৃ. ১২৫)]
দ্বিতীয়ত : এখন লক্ষ্য করুন দুর্বল হাদীসগুলো, যা মানুষের মুখে, সভা ও মাহফিলে বারবার উচ্চারিত হয়, অথচ তা বিশুদ্ধ সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। যেমন,
১. হাদীস :
اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ، وَبَارِكْ لَنَا فِي رَمَضَانَ
অর্থ : হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছার তাওফীক দান করুন। হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ তার মুসনাদ গ্রন্থে এবং ইমাম তাবরানী তার আওসাত গ্রন্থে। হায়সামী রহ. বলেন, এ হাদীসটি বাযযার বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের বর্ণনাকারীদের একজন রয়েছেন জায়েদা বিন আবি রাকাদ, তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, মুনকারুল হাদীস। ইবন হাজার রহ. স্বয়ং ইমাম বুখারী থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন, যার ব্যাপারে আমি মুনকারুল হাদীস বলব, তার হাদীস গ্রহণ করা বৈধ নয়।
[দেখুন : ‘আলফায ও ইবারাতুল জারহি ওয়াত-তা‘দিল বাইনাল ইফরাদ ওয়াত-তাকরীর ওয়াত-তারকীব’ : ২৬৭।]
হাদীস বর্ণনাকারীদের বৃহৎ একটি জামাত তাকে অখ্যাত বলেছেন। অখ্যাত বলার অর্থও তার হাদীস দুর্বল। খুব যাচাই বাছাই করে প্রমাণিত হলে গ্রহণ করা যায়।
দেখুন : মাজমাউয-যাওয়ায়েদ : ২/১৬৫, প্রকাশক : দারুর-রাইয়ান, সন : ১৪০৭ হি.)
ইমাম নববী রহ. তার ‘আযকার’ নামক গ্রন্থে এ হাদীসটি দুর্বল বলেছেন। ইমাম যাহাবী রহ. ও তাঁর রচিত মিযান (খ. ৩, পৃ. ৯৬, মুদ্রণ : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, সন : ১৯৯৫ ইং) গ্রন্থে এ হাদীসটি দুর্বল বলেছেন।
২. হাদীস :
فَضْلُ شَهْرِ رَجَبٍ عَلَى الشُّهُورِ كَفَضْلِ الْقُرْآنِ عَلَى سَائِرِ الْكَلامِ
অর্থ : রজব মাসের ফযীলত অন্যসব মাসের তুলনায় তেমন, যেমন কুরআনের ফযীলত অন্যসব কালামের ওপর।
এ হাদীসের ব্যাপারে ইবন হাজার রহ. বলেছেন, এটা জাল ও বানোয়াট।
দেখুন : ‘আজলুনী কর্তৃক রচিত কিতাব ‘কাশফুল খাফা’ (খ. ২, পৃ. ১১০, প্রকাশক : মুআসসাসাতুর-রিসালা, সন : ১৪০৫ হি.) এবং আলী ইবন সুলতান আল-কারী কর্তৃক রচিত, কিতাব আল-মাসনু‘’ (খ. ১, পৃ. ১২৮, প্রকাশক : মাকতাবাতুর রুশদ, সন : ১৪০৪ হি.)
৩. হাদীস :
إِنَّ شَهْرَ رَجَبٍ شَهْرُ اللَّهِ وَشَعْبَانَ شَهْرِي، وَرَمَضَانَ شَهْرُ أُمَّتِي
অর্থ : রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস আর রমযান আমার উম্মতের মাস।
এ হাদীসটি দায়লামী রহ. ও আরো কতক মুহাদ্দিস, সাহাবী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে সরাসরি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইবনুল জাওযী রহ. এ হাদীসটি তার রচিত জাল হাদীস সমগ্র কিতাবে উলেখ করেছেন। তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ হাদীস বর্ণনার বেশ কয়েকটি সূত্র পর্যালোচনা করার পর। তদ্রূপ হাফেজ ইবন হাজার রহ.ও এ হাদীসটি তার রচিত ‘তাবইনুল উজব ফিমা অরাদা ফী রজব’ কিতাবে জাল বলেছেন।
দেখুন : ইমাম মুনাবী রহ. রচিত ‘ফয়যুল কাদীর’ (খ. ৪, পৃ. ১৬২ ও ১৬৬, প্রকাশক : মাকতাবা তিজারিয়া কুবরা, সন : ১৩৫৬ হি.)
৪. হাদীস :
لا تَغْفَلُوا عَنْ أَوَّلِ لَيْلَةٍ فِي رَجَبٍ فَإِنَّهَا لَيْلَةٌ تُسَمِّيهَا الْمَلائِكَةُ الرَّغَائِبَ.
অর্থ : রজবের প্রথম জুমার ব্যাপারে তোমরা উদাসীন থেকো না, কারণ, তা এমন একটি রাত, ফেরেশতারা যার নামকরণ করেছে রাগায়েব হিসেবে ...। এটা দীর্ঘ হাদীস, এর মাধ্যে আরো মিথ্যাচার রয়েছে।
দেখুন : আজলুনী কর্তৃক রচিত ‘কাশফুল খাফা’ গ্রন্থ। (খ. ১, পৃ. ৯৫, প্রকাশক : মুআসসাসাতুর রিসালা, সন : ১৪০৫ হি.) ইমাম ইবনুল কায়্যিম রচিত ‘আল-মানারুল মুনীফ’ গ্রন্থ, (খ. ১, পৃ. ৮৩, প্রকাশক : দারুল কাদেরী, সন : ১৪১১ হি.)
৫. হাদীস :
«رَجَبٌ شَهْرٌ عَظِيمٌ، يُضَاعِفُ اللهُ فِيهِ الْحَسَنَاتِ، فَمَنْ صَامَ يَوْمًا مِنْ رَجَبٍ فَكَأَنَّمَا صَامَ سَنَةً، وَمَنْ صَامَ مِنْهُ سَبْعَةَ أَيَّامٍ غُلِّقَتْ عَنْهُ سَبْعَةُ أَبْوَابِ جَهَنَّمَ، وَمَنْ صَامَ مِنْهُ ثَمَانِيَةَ أَيَّامٍ فُتِحَتْ لَهُ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ، وَمَنْ صَامَ مِنْهُ عَشَرَةَ أَيَّامٍ لَمْ يَسْأَلِ اللهَ شَيْئًا إِلَّا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ، وَمَنْ صَامَ مِنْهُ خَمْسَةَ عَشَرَ يَوْمًا نَادَى مُنَادٍ فِي السَّمَاءِ قَدْ غُفِرَ لَكَ مَا مَضَى فَاسْتَئْنِفِ الْعَمَلَ، وَمَنْ زَادَ زَادَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ، وَفِي رَجَبٍ حَمَلَ اللهُ نُوحًا فِي السَّفِينَةِ فَصَامَ رَجَبًا، وَأَمَرَ مَنْ مَعَهُ أَنْ يَصُومُوا، فَجَرَتْ بِهِمُ السَّفِينَةُ سِتَّةَ أَشْهُرٍ، آخِرُ ذَلِكَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ أُهْبِطَ عَلَى الْجُودِيِّ فَصَامَ نُوحٌ وَمَنْ مَعَهُ وَالْوَحْشُ شُكْرًا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَفِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ أفْلَقَ اللهُ الْبَحْرَ لِبَنِي إِسْرَائِيلَ، وَفِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ تَابَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى آدَمَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَى مَدِينَةِ يُونُسَ، وَفِيهِ وُلِدَ إِبْرَاهِيمُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»
অর্থ : রজব মাস একটি মহৎ মাস। আল্লাহ তা‘আলা এতে নেকীর পরিমাণ খুব বৃদ্ধি করেন। যে ব্যক্তি রজবের একদিন রোযা রাখল, সে প্রায় এক বৎসর রোযা রাখল। যে ব্যক্তি রজবে সাত দিন রোযা রাখবে, তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি রজবের আট দিন রোযা রাখবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা সুসজ্জিত করা হবে। যে ব্যক্তি রজবের দশ দিন রোযা রাখবে, সে যা চাইবে আল্লাহ তাকে তাই দেবেন। যে ব্যক্তি রজবের পনের দিন রোযা রাখবে, তাকে আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী বলবে, আল্লাহ তোমার পিছনের সব কিছু মাফ করে দিয়েছেন, তুমি নতুন করে আমল কর। আর যে আরো বেশি রোযা রাখবে আল্লাহ তাকে আরো বেশি দেবেনে। এ রজব মাসেই আল্লাহ নূহ আ.কে নৌকায় আরোহন করিয়েছেন। তিনি রজব মাসে রোযা রাখেন এবং যারা তার সঙ্গে ছিল তাদেরকেও তিনি রোযা রাখার নির্দেশ দেন। যার ফলে সাত মাস পানিতে নৌকা বিচরণ করে, যার সর্বশেষ দিন হচ্ছে আশুরা। তারা জুদি পাহাড়ে অবতরণ করেন। অতঃপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য নূহ আ. রোযা রাখেন এবং যারা তার সঙ্গে ছিল তারা, এমনকি অন্যান্য জীবজন্তুও। আশুরার দিন আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাইলের জন্য সমুদ্র বিদীর্ণ করেছিলেন। এ আশুরার দিনই আল্লাহ তা‘আলা আদম আ. এর তওবা ও নবী ইউনুস আ.-এর সম্প্রদায়ের তওবা কবুল করেছেন এবং আশুরাতেই ইবরাহীম আ. জন্ম গ্রহণ করেছেন।
যাহাবী রহ. বলেছেন, এ হাদীস বাতিল ও ভ্রান্ত, এর সনদ অস্পষ্ট। হায়সামী রহ. বলেছেন, এ হাদীস তাবরানী তার ‘কাবীর’ গ্রন্থে উলেখ করেছেন। এ হাদীসের সনদে আব্দুল গাফুর নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যে মুহাদ্দিসীনের নিকট পরিত্যক্ত।
দেখুন : ইমাম যাহাবী রচিত ‘মীযান’ গ্রন্থ। (খ. ৫, পৃ. ৬২, প্রকাশক : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, সন : ১৯৯৫ ই.)
ইমাম হায়সামী রচিত ‘মাজমাউয-যাওয়ায়েদ’ গ্রন্থ। (খ. ৩, পৃ. ১৮৮, প্রকাশক : দারুর রাইয়ান, সন : ১৪০৭ হি.)
৬. (ক) রজবের প্রথম জুমার রাতে প্রচলিত সালাতে রাগায়েবের ব্যাপারে যত হাদীস রয়েছে, তা সব বাতিল ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর মিথ্যাচার।
(খ) রজবের রোযা বা রজবের কতক রাতের নির্দিষ্ট রোযার ব্যাপারে যেসব হাদীস রয়েছে, তার সব মিথ্যা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যাচার।
আরো হাদীস যেমন, (গ) রজব মাসের প্রথম রাতে মাগরিবের পর যে ব্যক্তি বিশ রাকাত সালাত পড়বে, সে নাপাকবিহীন পুলসিরাত পার হবে।
(ঘ) যে ব্যক্তি রজবের কোন একদিন রোযা রাখল এবং তাতে দুরাকাত সালাত আদায় করল, যার প্রথম রাকাতে একশতবার আয়াতুল কুরসী পড়ল ও দ্বিতীয় রাকাতে একশত বার সুরায়ে ইখলাস পড়ল, সে জান্নাতে তার স্থান না দেখে মারা যাবে না।
(ঙ) যে রজব মাসে রোযা রাখল, সে ..., সে ...।
ইমাম ইবনুল কায়্যিম (মৃত : ৬৯১ হি.) বলেন, এসব হাদীস মিথ্যা ও বানোয়াট।
দেখুন : ইবনুল কায়্যিম রচিত ‘আল-মানারুল মুনীফ’ (খ. ১, পৃ. ৮৩-৮৪, প্রকাশক : দারুল কাদেরী, সন : ১৪১১ হি.)
৭. হাদীস :
«مَنْ صَامَ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ شَهْرٍ حَرَامٍ الْخَمِيسَ وَالْجُمُعَةَ وَالسَّبْتَ كُتِبَتْ لَهُ عُبَادَةُ سَبْعِمِائَةِ سَنَةٍ»
অর্থ : যে ব্যক্তি সম্মানিত মাসে (যিলকদ, যিলহজ, মুহাররম ও রজব) বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার তিনটি রোযা রাখবে, আল্লাহ তাকে সাত শত বৎসরের ইবাদত দেবেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তাকে ষাট বৎসরের ইবাদত দেবেন।
তাবরানী তার আওসাদ (খ. ২, পৃ. ২১৯, প্রকাশক : দারুল হারামাইন, সন : ১৪১৫ হি.) গ্রন্থে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি মাসলামা থেকে একমাত্র ইয়াকুব বর্ণনা করেছে এবং তার থেকে শুধু মুহাম্মদ ইবন ইয়াহইয়া বর্ণনা করেছে।
হায়সামী রহ. বলেছেন, এ হাদীসটি তাবরানী তার আওসাত গ্রন্থে ইয়াকুব বিন মুসা আল-মাদানি থেকে বর্ণনা করেছেন, সে বর্ণনা করেছে মাসলামা থেকে। বর্ণনাকারী ইয়াকুব মুহাদ্দিসীনের নিকট অখ্যাত। আর মাসলামার পুরো না হচ্ছে মাসলামা বিন রাশেদ আল-হামানি। তার ব্যাপারে ইমাম হাতেম বলেছেন, সে হাদীসের ব্যাপারে দুদোল্যমান। ইমাম আযদী বলেছেন, সে হাদীসের ব্যাপারে খুবই দুর্বল, তার হাদীস দলিলের উপযুক্ত নয়।
দেখুন : মাজমাউজ জাওয়ায়েদ (খ. ৩, পৃ. ১৯১, প্রকাশক : দারুর রাইয়ান, সন : ১৪০৭)
ইবন জাওযী রহ. তাঁর রচিত ‘আল-‘ইলাল আল-মুতানাহিয়াহ’ (খ. ২, পৃ. ৫৫৪, প্রকাশক : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, সন : ১৪০৩ হি.) গ্রন্থে এ হাদীসটি বিশুদ্ধ নয় বলে প্রমাণ করেছেন।
৮. হাদীস :
صَوْمُ أَوَّلِ يَوْمٍ مِنْ رَجَبٍ كَفَّارَةُ ثَلاَثِ سِنِينَ، وَالثَّانِي كَفَّارَةُ سَنَتَيْنِ، وَالثَّالِثِ كَفَّارَةُ سَنَةٍ ثُمَّ كُلِّ يَوْم شَهْراً
অর্থ : রজব মাসের প্রথম রোযা তিন বৎসরের কাফ্ফারা স্বরূপ। দ্বিতীয় দিনের রোযা দুই বছরের কাফ্ফারা স্বরূপ। অতঃপর প্রত্যেক দিনের রোযা এক মাসের কাফ্ফারা স্বরূপ।
দেখুন : মুনাবী রচিত ‘ফায়জুল বারী’ গ্রন্থ। (খ. ৪, পৃ. ২১০, প্রকাশক : মাকতাবা তিজারিয়া কুবরা, সন : ১৩৫৬ হি.)
৯. ইমাম ‘আজলুনী রহ. বলেন, আরেকটি বানোয়াট হাদীস হচ্ছে, রজবের প্রথম জুমার রাতে বানোয়াট সালাত। যার নামকরণ করা হয়েছে সালাতে রাগায়েব হিসেবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও মুহাদ্দিসীনের নিকট এর কোন ভিত্তি নেই।
দেখুন : তার রচিত ‘কাশফুল খাফা’ (খ. ২, পৃ. ৫৬৩, প্রকাশক : মুআসসাসাতুর রিসালা, সন : ১৪০৫ হি.)
১০. হাফেযে হাদীস আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন আবূ বকর দিমাশকী (মৃত : ৬৯১ হি.) বলেছেন, রজব মাসে রোযার ব্যাপারে ও তার বিশেষ রাতের সালাতের ব্যাপারে যে হাদীস রয়েছে, তা সব মিথ্যা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অপবাদ। তার মধ্যে একটি হাদীস যেমন, যে ব্যক্তি রজবের প্রথম রাতে বিশ রাকাত সালাত আদায় করবে, সে নাপাকবিহীন পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।
দেখুন : ‘আল-মানার আল-মুনিফ গ্রন্থ। (খ. ১, পৃ.৯৬, প্রকাশক : মাকতাবা মাতবুআতুল ইসলামিয়া, সন : ১৪০৩ হি.)
আল্লাহ ভাল জানেন। সমস্ত প্রসংশা তার জন্য এবং সালাত ও সালাম নাজিল হোক তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর ওপর, তার বংশধর, সাহাবা ও সবার ওপর।
সমাপ্ত