×
রমাজনের রোজা ফরজ রোজা। এ রোজার বাইরেও আরো রোজা রয়েছে যেগুলো বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক ; যেমন শাওয়ালের ছয় রোজা, আরাফা দিবসের রোজা, আশুরার রোজা, শাবান মাসের রোজা, প্রতি মাসে তিন দিন করে রোজা, প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা অথবা দাউদ আ. এর অনুসরণে একদিন রোজা রাখা ও একদিন ভঙ্গ করা। হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এসব রোজা নিয়েই বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে।

    নফল রোযা

    [ বাংলা – Bengali – بنغالي ]

    আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

    সম্পাদনা : মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক

    আলী হাসান তৈয়ব

    2012 - 1433

    ﴿ صوم التطوع ﴾

    « باللغة البنغالية »

    عبد الله شهيد عبد الرحمن

    مراجعة: محمد شمس الحق صديق

    علي حسن طيب

    2012 - 1433

    নফল রোযা

    রমজানের রোযা ফরজ রোযা। রমজান ব্যতীত অন্য আরো রোযা আছে যেগুলো সুন্নত। তবে রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান ব্যতীত অন্য সময় মাসব্যাপী রোযা পালন করেন নি। হাদিসে এসেছে—

    عَنْ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لاَ يُفْطِرُ وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لاَ يَصُومُ فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلاَّ رَمَضَانَ وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ.

    আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে নফল রোযা পালন করতেন যে আমরা ধরে নিতাম তিনি আর বিরতি দেবেন না। আবার এমনভাবে রোযা পরিত্যাগ করতেন যে আমরা মনে করতাম তিনি আর রোযা পালন করবেন না। রমজান ব্যতীত অন্য কোন মাসে তাকে পূর্ণ মাস রোযা পালন করতে দেখিনি। আর শাবান মাস ব্যতীত অন্য মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোযা পালন করতে দেখিনি। (বুখারী : ১৯৬৯)

    এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে নফল রোযা পালন করতেন। তিনি কি কি ধরনের নফল রোযা পালন করতেন তা নিম্নে আলোচনা করা হল :

    শাওয়াল মাসের রোযা

    « مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ ».

    আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোযা পালন করল অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা আদায় করল সে যেন সাড়া বছর রোযা পালন করল।’ (মুসলিম : ২৮১৫)

    উলামায়ে কেরাম সাড়া বছর রোযা পালনের সওয়াবের ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেন যে, প্রত্যেক নেক আমলের সওয়াব দশগুণ দেয়া হয়, সে হিসেবে রমজানের এক মাস রোযা পালনে দশ মাস রোযা পালনের সওয়াব পাওয়া যায়। আর শাওয়ালের ছয় রোযা পালনে দু’মাস রোযা পালনের সওয়া মেলে। এভাবে পুরো বছর রোযা পালনের সওয়াব পাওয়া যেতে পারে শাওয়ালের ছয়টি রোজ পালনের মাধ্যমে। যদি কারো দায়িত্বে রমজানের কাজা রোযা থেকে থাকে তবে তাকে প্রথমে কাজা রোযা আদায় করে নিতে হবে, তারপর শাওয়ালের ছয় রোযা পালন করবে। শাওয়ালের ছয় রোযা একাধারে আদায় করা যায়, আবার বিরতি দিয়েও আদায় করা সম্ভব। তবে শাওয়াল মাস চলে যাওয়ার পর এ ছয় রোযা কাজা হিসেবে পালনের বিধান নেই।

    আরাফা দিবসের রোযা

    রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আরাফা দিবসের (জিলহজ মাসের নবম তারিখে) রোযা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন :

    « صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهُ ».

    ‘আরাফা দিবসের রোযা সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আশা করি যে, তা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের পাপের কাফফারা হবে।’ (মুসলিম : ২৮০৩)

    তবে যারা হজ পালন অস্থায় থাকরে তারা এ দিন রোযা রাখবে না।

    মহররম মাসের রোযা

    عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ - رضى الله عنه - قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ ».

    ‘রমজান মাসের পর সর্বোত্তম রোযা হল আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হল রাতের নামাজ।’ (মুসলিম : ২৮১২)

    শাবান মাসের রোযা

    হাদিসে এসেছে—

    عَنْ عَائِشَةَ - رضى الله عنها - قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لاَ يُفْطِرُ ، وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لاَ يَصُومُ . فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلاَّ رَمَضَانَ ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِى شَعْبَانَ .

    আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনে : আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাবান মাস ব্যতীত অন্য মাসে অধিক পরিমাণে নফল সিয়াম পালন করতে দেখিনি। (বুখারী : ১৯৬৯)

    তিনি শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোযা পালন করতেন। এর কারণ সম্পর্কে উসামা বিন যায়েদ রা. বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল ! নফল রোযার ব্যাপারে আমি তো শাবান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে আপনাকে এত বেশি রোযা পালন করতে দেখি না। তিনি বললেন: ‘শাবান’ রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস যাতে মানুষ রোযা সম্পর্কে উদাসীন থাকে।

    প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা

    হাদিসে এসেছে—

    عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ - رضى الله عنه - قَالَ أَوْصَانِى خَلِيلِى - صلى الله عليه وسلم - بِثَلاَثٍ صِيَامِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ، وَرَكْعَتَىِ الضُّحَى ، وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَنَامَ .

    আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেন, আমার বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন : প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা রাখা, দ্বি-প্রহরের পূর্বে দু’রাকাত নামাজ আদায় করা ও নিদ্রার পূর্বে বিতিরের নামাজ আদায় করা। (বুখারী : ১৯৮১)

    এ তিনটি রোযা আদায় করলে পূর্ণ বছর নফল রোযা আদায়ের সওয়াব লাভের কথা এসেছে। একটি নেক আমলের সওয়াব কমপক্ষে দশগুণ দেয়া হয়। তিন দিনের রোযার সওয়াব দশগুণ করলে ত্রিশ দিন হয়। যেমন আবু কাতাদা রা. হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে—

    « صَوْمُ ثَلاَثَةٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَمَضَانَ إِلَى رَمَضَانَ صَوْمُ الدَّهْرِ ».

    ‘প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা ও এক রমজানের পর পরবর্তী রমজানে রোযা পালন পূর্ণ বছর রোযা পালনের সমান’। (মুসলিম : ২৮০৪)

    মাসের যে তিন দিন রোযা রাখা হবে সে তিন দিনকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয় ‘আইয়ামুল বিয’। এ তিন দিন হল চান্দ্র মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখ। বিয শব্দের অর্থ আলোকিত। এ তিন দিনের রাতগুলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাঁদের আলোতে আলোকিত থাকে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রোযা গুরুত্বসহকারে আদায় করতেন। হাদিসে এসেছে—

    عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يُفْطِرُ أَيَّامَ الْبِيضِ فِي حَضَرٍ وَلاَ سَفَرٍ.

    ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাফির ও মুকিম কোন অবস্থাতেই এ রোযা ত্যাগ করতেন না। (নাসায়ী : ২৩৪৫)

    সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযা

    সপ্তাহে দু’দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা পালন সুন্নত। হাদিসে এসেছে—

    عن أبي قتادة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم الاثنين، فقال : ذلك يوم ولدت فيه ويوم بعثت فيه أو أنزل علي فيه ( رواه مسلم(

    عَنْ أَبِى قَتَادَةَ الأَنْصَارِىِّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ قَالَ « ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ ».

    আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবারে সিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দেয়া হয়েছে বা আমার উপর কোরআন নাজিল শুরু হয়েছে। (মুসলিম : ২৮০৪)

    হাদিসে এসেছে :—

    عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِى وَأَنَا صَائِمٌ ».

    আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই আমি পছন্দ করি যখন আমার আমল পেশ করা হবে তখন আমি রোযা অবস্থায় থাকব।’ (তিরমিযী : ৭২৫)

    একদিন পর পর রোযা পালন

    রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—

    أحب الصيام إلى الله صيام داود، وكان يصوم يوما ويفطر يوما. (رواه مسلم(

    عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو - رضى الله عنهما - قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِنَّ أَحَبَّ الصِّيَامِ إِلَى اللَّهِ صِيَامُ دَاوُدَ وَكَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا ».

    ‘আল্লাহর কাছে (নফল রোযার মধ্যে) সবচেয়ে প্রিয় রোযা হল দাউদ আ.-এর রোযা। তিনি একদিন রোযা রাখতেন ও একদিন ভঙ্গ করতেন।’ (মুসলিম : ১১৫৯)

    আশুরার রোযা

    হাদিসে এসেছে—

    عَنْ أَبِى قَتَادَةَ الأَنْصَارِىِّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- سُئِلَ وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ فَقَالَ « يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ ».

    আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আশুরার রোযা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, তিনি বললেন : ‘তা বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা।’ (মুসলিম : ২৮০৪; তিরমিযী : ২৮০৯)

    অন্য বর্ণনায় এসেছে—

    عن أبي قتادة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : . . . . . صيام يوم عاشوراء احتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله ( رواه مسلم(

    عَنْ أَبِى قَتَادَةَ قَالَ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ ».

    ‘আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ...আশুরা দিনের রোযাকে আল্লাহ তাআলা বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করবেন বলে আশা।’ (মুসলিম : ২৮০৩)

    হাদিসে আরো এসেছে— আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

    حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

    ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোযা পালন করলেন ও অন্যকে পালন করার নির্দেশ দিলেন তখন সাহাবাগণ বললেন : ‘এটা তো এমন এক দিবস যাকে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সম্মান করে থাকে।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ‘আগামী বছর এলে আমরা ইনশাআল্লাহ নবম তারিখে রোযা পালন করব।’ ইবনে আব্বাস রা. বলেন : ‘পরবর্তী বছর আসার পূর্বেই রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করলেন।’ (মুসলিম : ১১৩৪)

    হাদিসে এসেছে—

    عَنْ دَاوُدَ بْنِ عَلِيٍّ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ جَدِّهِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ ، وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا ، أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا.

    ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘তোমরা আশুরা দিবসে রোযা পালন করো ও এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের বিরোধিতা করো। তোমরা আশুরার একদিন পূর্বে অথবা একদিন পরে রোযা পালন করবে। (আহমদ : ২১৫৪)

    আশুরার রোযা পালনের পদ্ধতি

    (ক) মহররম মাসের নবম ও দশম তারিখে রোযা রাখা। এ পদ্ধতি অতি উত্তম। কারণ রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই আশুরার রোযা পালনের সংকল্প করেছিলেন। ইতিপূর্বে আলোচিত ইবনে আব্বাস রা.-এর হাদিস এর প্রমাণ।

    (খ) মহররম মাসের দশম ও একাদশ দিবসে রোযা রাখা। এ পদ্ধতিও হাদিস দ্বারা সমর্থিত। যদি কেউ নবম তারিখে কোন কারণে রোযা রাখতে না পারে তা হলে সে এ পদ্ধতিতে রোযা রাখবে।

    (গ) শুধু মহররম মাসের দশম তারিখে রোযা রাখা। এ পদ্ধতি মাকরূহ। কারণ এটা ইহুদিদের আমলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। (ইকতেজাউ সিরাতিল মুস্তাকীম: ইমাম তাইমিয়া)(রদ্দুল মুহতার : ইবনে আবেদীন)

    নিষিদ্ধ সিয়াম :

    রোযা রাখার নিষিদ্ধ দিনগুলো হল

    এক. ঈদুল ফিতরের দিন।

    দুই . ঈদুল আজহার দিন (জিলহজ মাসের দশ তারিখ)

    তিন. জিলহজ মাসের এগারো তারিখ।

    চার. জিলহজ মাসের বার তারিখ।

    পাঁচ. জিলহজ মাসের তেরো তারিখ।