×
আত্মীয়তার সম্পর্ক : আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক যে সমাজে যথাযথ আদর পায় না, সে সমাজ মানবিক চেতনা রহিত বললে ভুল বলা হবে না। আত্ময়তার সম্পর্ক রক্ষা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বহু কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক সঠিক উপায়ে কীভাবে যত্ন পেতে পারে তার বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটিতে।

    আত্মীয়তার সম্পর্ক

    আখতারুজ্জান মুহাম্মাদ সুলাইমান

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    صلة الرحم

    (باللغة البنغالية)

    أختر الزمان محمد سليمان

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    সংক্ষিপ্ত বর্ণনা.............

    আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক যে সমাজে যথাযথ আদর পায় না সে সমাজ মানবিক চেতনা রহিত বললে ভুল বলা হবে না। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বহু কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক সঠিক উপায়ে কীভাবে যত্ন পেতে পারে তার বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটিতে।

    আত্মীয়তার সম্পর্ক

    আল্লাহ তা‘আলা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَٱلَّذِينَ يَصِلُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ﴾ [الرعد: ٢١]

    “এবং যারা বজায় রাখে ঐ সম্পর্ক, যা বজায় রাখতে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন।” [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ২১] তিনি নিকটাত্মীয়দের অধিকার আদায়ে উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ বলেন,

    ﴿وَءَاتِ ذَا ٱلۡقُرۡبَىٰ حَقَّهُۥ﴾ [الاسراء: ٢٦]

    “আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দিয়ে দাও।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৬] আল্লাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে ‘সম্পর্ক’-কে লক্ষ্য করে বলেন,

    «من وصلك وصلته ومن قطعك قطعته».

    “যে ব্যক্তি তোমার সাথে সম্পর্ক মিলিয়ে রাখবে, আমি তার সাথে সম্পর্ক মিলিয়ে রাখব, আর যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব।”[1] আর সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে খুব সতর্ক করেছেন এবং একে পৃথিবীতে বিশৃংখলা সৃষ্টি বলে সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ বলেন,

    ﴿فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢﴾ [محمد: ٢٢]

    “অতঃপর ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২]

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «لا يدخل الجنة قاطع».

    “আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”[2]

    আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ফযীলত:

    আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার অনেক ফযীলত রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু উল্লেখ করা হলো:

    ১. সম্পর্ক বজায় রাখা রিযিক বৃদ্ধি এবং দীর্ঘজীবী হওয়া এবং উভয়ের মাঝে বরকতের কারণ। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন,

    «من أحب أن يبسط له فى رزقه وينسأ له فى أثره فليصل رحمه».

    “যে ব্যক্তি তার রিযিক প্রশস্ত হওয়া এবং মৃত্যুর সময় পিছিয়ে দেওয়া কামনা করে, তার উচিৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।”[3]

    ২. এ কাজ জান্নাতে প্রবেশের কারণ হবে। আবূ আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তখন রাসূল বললেন:

    «تعبد الله ولا تشرك به شيئاً وتقيم الصلوة وتؤتي الزكاة وتصل الرحم».

    “আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কোনো কিছু শরীক করো না, সালাত আদায় কর, যাকাত প্রদান কর এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখ।”[4]

    ৩. দুনিয়া এবং আখেরাতে সৌভাগ্য এবং তাওফীক পাওয়ার কারণ হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।

    ৪. সম্পর্কের স্তর: এ সম্পর্ক বজায় রাখার কিছু স্তর রয়েছে। সর্বোচ্চ স্তর হলো: জান-মাল দ্বারা সাহায্য করা এবং কল্যাণ কামনা করা। আর সর্বনিম্ন স্তর হলো, সালাম দেওয়া। এ দু’টির মাঝে আরো অনেক স্তর রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «بلوا أرحامكم ولو بالسلام».

    “সালাম-এর মাধ্যমে হলেও তোমরা তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ।”[5]

    আর অপরদিকে এর উঁচু স্তর হলো, যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, তুমি তার সাথে সম্পর্ক জুড়ে দিবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «ليس الواصل بالمكافئ ولكن الواصل الذي إذا قطعت رحمه وصلها».

    “সমান সমান আচরণ দ্বারা সম্পর্ক স্থাপনকারী হওয়া যায় না; কিন্তু তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলে তখনও যদি সে সম্পর্ক ঠিক রাখে, তাহলেই তাকে প্রকৃত সম্পর্ক স্থাপনকারী বলা যাবে।”[6] অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক পূর্ণ বজায় রাখা তখনই হবে, যখন কোনো সম্পর্ক ছিন্ন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক জুড়ে রাখা হবে।

    সম্পর্কের সীমারেখা বা সংজ্ঞা:

    আত্মীয়তার সম্পর্কের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা বা সংজ্ঞা নেই। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তা নির্ধারিত হয়। প্রচলিত রীতি যেটাকে সম্পর্ক বজায় রাখা মনে করে সেটা ধর্তব্য। আর যেটাকে সম্পর্ক ছিন্ন করা মনে করে সেটা বর্জনীয়।

    আত্মীয়তার পার্থক্য ও মর্যাদা অনুযায়ী সম্পর্কের মাঝে পার্থক্য হয়ে থাকে, পিতার সম্পর্ক আর দূর সম্পর্কের চাচাত ভাইয়ের সম্পর্ক এক হয় না।

    অবস্থানুযায়ী এ সম্পর্কের পার্থক্য ঘটে। রোগী ও মুখাপেক্ষীর সম্পর্ক ধনী এবং সুস্থের সমান হয় না। বড়-ছোটর সম্পর্কও এক হয় না। অনুরূপভাবে স্থান অনুযায়ী সম্পর্কের মাঝে পার্থক্য ঘটে। যে দেশের মাঝে আছে আর যে দেশের বাইরে আছে, তাদের সম্পর্ক এক রকম হয় না।

    সম্পর্কের নিদর্শন হলো পরস্পর সাক্ষাৎ এবং অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া, সালাম দেওয়া, ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা, পত্র লেখা ইত্যাদি।

    সমাপ্ত

    [1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫২৯।

    [2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫২৫।

    [3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫২৭।

    [4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩০৯।

    [5] শু‘আবুল ঈমান, হাদীস নং ৭৬০২, ৭৬০৩।

    [6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৩২।