×
ঈমান: মুসলিম হিসেবে একজন ব্যক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়, সে মুমিন বান্দা। আত্মায়-কলবে, মানবীয় আচরণের যাবতীয় অনুষঙ্গে যে ব্যক্তি ঈমান আনয়ন ও রূপায়নে অভিলাষী, তার প্রথমে ঈমানের যাবতীয় দিক সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ অবগতি প্রয়োজন। প্রবন্ধটি এমন অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন্য আল্লাহর ওপর ঈমান, ফিরিশতাদের ওপর ঈমানের নিয়ম-পদ্ধতি ও উপকারিতা তুলে ধরেছে।

ঈমান : বুনিয়াদ ও পরিণতি (১)

الإيمان (1)

< বাংলা - بنغالي - Bengali >

—™

অনুবাদক: কামাল উদ্দীন মোল্লা

সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

ترجمة: كمال الدين ملا

مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

ঈমান : বুনিয়াদ ও পরিণতি (১)

ঈমান : বুনিয়াদ ও পরিণতি

পরিভাষায় ঈমান হলো, আত্মার স্বীকৃতি, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আত্মা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল। আর ভালো কাজে ঈমান বৃদ্ধি পায়, মন্দ কাজে ঈমান হ্রাস পায়।

ঈমানের রুকনসমূহ:

যে সকল ভিত্তির ওপর ঈমান প্রতিষ্ঠিত তার সংখ্যা মোট ছয়টি বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الإيمان: أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الأخر ونؤمن بالقدر خيره وشره»

১. আল্লাহর ওপর ঈমান আনা। ২. তাঁর ফিরিশতাদের ওপর ঈমান আনা। ৩. তাঁর কিতাবসমূহের ওপর ঈমান আনা। ৪. তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলগণের ওপর ঈমান আনা। ৫. শেষ দিবসের ওপর ঈমান আনা। ৬. তাকদীরের ভালো ও মন্দের ওপর ঈমান আনা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯)

ঈমানের শাখাসমূহ:

ঈমানের ৭৭ টির বেশি শাখা রয়েছে। সর্বোত্তম শাখা এ স্বীকৃতি প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই। আর ঈমানের নিকটতম শাখা হলো কষ্টদায়ক বস্তু পথ থেকে অপসারণ করা এবং লাজুকতা ঈমানের অংশ। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

সালাফে সালেহীনের নিকট ঈমানের মৌলিকতা:

প্রথমত: আল্লাহর ওপর ঈমান আনয়ন।

আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন চারটি বিষয় দ্বারা পূর্ণাঙ্গ হয় বলে সালাফে সালেহীন মনে করেন:

১. আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস।

২. আল্লাহর রুবুবিয়্যাতে বিশ্বাস। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহই সবকিছুর সষ্ট্রা। তিনি সব কিছুর প্রকৃত মালিক, সব কিছুর প্রতিপালন তিনিই করেন।

৩. আল্লাহর উলুহিয়্যাতে বিশ্বাস। অর্থাৎ আল্লাহই একমাত্র ইলাহ বা উপাস্য। এ ক্ষেত্রে কোনো মর্যাদাবান ফিরিশতা বা আল্লাহ প্রেরিত কোনো নবী-রাসূলের অংশিদারিত্ব নেই।

৪. আল্লাহর পবিত্র নাম ও গুণাবলীর ওপর বিশ্বাস স্থাপন। এর ধরণ হলো, কুরআনুল কারীম এবং হাদীসে বর্ণিত আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলী বান্দা শুধু তার জন্যই নির্ধারণ করবে। বর্ণনার অবিকল বিশ্বাস স্থাপন করবে, ঐভাবেই তাকে ডাকবে। কোনো প্রকার ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধনের আশ্রয় নিবে না এবং তার কোনো প্রতিচ্ছবির কল্পনাও সে করবে না।

আল্লাহ তা'আলা বলেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ﴾ [الشورا: ١١]

“তার মতো কিছু নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা"[সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১১]

আল্লাহর ওপর ঈমান স্থাপনের ফলাফল:

চারটি নীতিমালার আলোকে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা যাবতীয় কল্যাণ ও সৌভাগ্যের মূল এবং ঈমানের অবশিষ্ট রুকনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বিষয়টি পূর্ণতা পায়। উল্লিখিত নিয়মাবলী অনুসারে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা কর্তব্য। যখনই কোনো জাতি বা গোষ্ঠি আল্লাহর ওপর ঈমানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এ চারটি মৌলিক নীতিমালার প্রতি দৃকপাতে অবহেলা প্রদর্শন করেছেন, তখনই তাদের অন্তর নিমজ্জিত হয়েছে গহীন অন্ধকারে। তারা পথভ্রষ্ট ও লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে এবং ঈমানের অপরাপর ভিত্তির ক্ষেত্রে ও সত্যের অনুসরণ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

দ্বিতীয়ত: ফিরিশতাগণের ওপর ঈমান:

ফিরিশতাগণ গায়েবী জগতের অধিবাসী। আল্লাহ তাদেরকে নূর বা জ্যোতি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে তার আদেশের প্রতি পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যের যোগ্যতা এবং তার আদেশ বাস্তবায়নের শক্তি-সামর্থ্য দান করেছেন। প্রভু অথবা উপাস্য হওয়ার নূন্যতম কোনো বৈশিষ্ট্য তাদের নেই। তারা হলেন সৃষ্ট। আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করেছেন এবং মর্যাদা দিয়েছেন তার সম্মানিত বান্দা হিসেবে। বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে মানুষের সাথে তাদের কোনো মিল নেই। তারা পানাহার করেন না, ঘুমান না, বিবাহের প্রয়োজন নেই তাদের। যৌন চাহিদা থেকে তারা মুক্ত, এমনকি যাবতীয় পাপাচার থেকেও। মানুষের নানা আকৃতিতে আত্মপ্রকাশে তারা সক্ষম।

চারটি বিষয়ের মাধ্যমে ফিরিশতার ওপর ঈমান পূর্ণ হয়:

১. আল্লাহ তাদের যে সকল গুণাবলীর বর্ণনা দিয়েছেন সে অনুসারে তাদের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন।

২. কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা তাদের যে সকল নাম আমরা জেনেছি, সেগুলো বিশ্বাস করা, যেমন জিবরীল, ইসরাফীল, মিকাঈল, মালিক, মুনকার, নাকীর এবং মালাকুল মাউত ফিরিশতাবৃন্দ এবং তাদের মধ্য থেকে যাদের নাম আমাদের জানা নেই তাদের ওপরও সাধারণভাবে বিশ্বাস করা।

৩. তাদের মধ্য থেকে যার বৈশিষ্ট্যের কথা কুরআনে এবং বিশুদ্ধ হাদীসে আমরা জেনেছি, তার প্রতি বিশ্বাস পোষণ করা। যেমন, জিবরীল আলাইহিস সালামের বৈশিষ্ট্য -তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখেছেন, যে আকৃতিতে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন অবিকল সে আকৃতিতে। যিনি তার ছয়শত ডানায় আচ্ছাদিত করেছিলেন দিগন্ত। এমনিভাবে 'আরশ বহনকারী ফিরিশতার বৈশিষ্ট্য এই যে তার এক কান হতে অপর কানের দূরত্ব হলো সাতশত বছরের পথ। সুবহানাল্লাহ!

৪. তাদের মধ্য থেকে যাদের দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা অবগতি লাভ করেছি, তা বিশ্বাস করা। যেমন, ক্লান্তিহীনভাবে দিনরাত তারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠে নিমগ্ন থাকেন। কোনো প্রকার অবসাদ তাদের স্পর্শ করে না। তাদের মধ্য রয়েছেন, আরশবহনকারী, জান্নাতের প্রহরী এবং জাহান্নামের রক্ষী। আরো আছেন এক ঝাক ভ্রাম্যমান পবিত্র ফিরিশতা, যারা আল্লাহর আলোচনা হয় এমন স্থানসমূহকে অনুসরণ করেন।

কতিপয় ফিরিশতার বিশেষ কাজ:

• জিবরীল: অহী আদান প্রদানের দায়িত্বশীল এবং নবী রাসূলের নিকট অহী নিয়ে অবতরণের দায়িত্ব তার প্রতি ন্যস্ত করা হয়েছে।

• ইসরাফীল: পুনরুত্থান দিবসে সিংগায় ফূৎকারের দায়িত্ব তার প্রতি ন্যস্ত হয়েছে।

• মিকাঈল: বৃষ্টি ও উদ্ভিদ উৎপন্নের দায়িত্বশীল।

• মালিক: জাহান্নামের দায়িত্বশীল।

• মুনকার এবং নাকীর: তাদের উভয়ের প্রতি কবরে মৃত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করার দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে।

• মালাকুল মাউত: রূহ কবজের দায়িত্ব তার।

• আল মু'য়াক্কিবাত: বান্দাদের সর্বাবস্থায় রক্ষার দায়িত্ব তাদের।

• কাতিবুনে কিরাম: আদম সন্তানদের দৈনন্দিন আমল লেখার কাজে তারা নিয়োজিত।

এছাড়া আরো অনেক ফিরিশতা আছেন, যাদের আমল সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

﴿وَمَا يَعۡلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَۚ وَمَا هِيَ إِلَّا ذِكۡرَىٰ لِلۡبَشَرِ ﴾ [المدثر: ٣١]

“আপনার প্রভুর বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। এ তো মানুষের জন্য উপদেশ মাত্র"[সূরা আল-মু্দ্দাসসির, আয়াত: ৩১]

ফিরিশতাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপনে রয়েছে মুসলিমদের ব্যক্তি জীবনের নানা উপকারিতা:

তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:

১. আল্লাহর বড়ত্ব এবং শক্তি সম্পর্কে জানা। কারণ সৃষ্টির বড়ত্ব সষ্ট্রার বড়ত্বের প্রমাণ বহন করে।

২. আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহের জন্য কায়মনোবাক্যে এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করা যে, তিনি ফিরিশতা নিয়োজিত করে মানুষকে রক্ষা করেছেন বিভিন্ন আপদ-বিপদ থেকে; তাদের আমলগুলো লিপিবদ্ধ করা, 'আরশে তাদের দো'আ পৌঁছে দেওয়া, তাদের জন্য ইস্তেগফার, পুরস্কারের সংবাদ দান ইত্যাদি দায়িত্বগুলো তাদের কাঁধে অর্পণ করেছেন।

৩. তারা আল্লাহর একান্ত অনুগত ও ইবাদতগুজার-এজন্য তাদের মুহাব্বাত করা।

৪. আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে তাদের প্রিয় হওয়া। কারণ, তাদের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তার প্রিয় বান্দাদের দৃঢ় মনোবল প্রদান করেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

﴿ إِذۡ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ أَنِّي مَعَكُمۡ فَثَبِّتُواْ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْۚ﴾ [الانفال: ١٢]

(ঐ মুহূর্তকে স্মরণ করুন) যখন আপনার প্রভু ফিরিশতাদের নির্দেশ করলেন আমি তোমাদের সাথে রয়েছি। সুতরাং ঈমানদারদের চিত্তসমূহকে ধীরস্থির রাখ। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ১২]

৫. সর্বাবস্থায় আল্লাহর পর্যবেক্ষণের আওতায় এবং পরিপূর্ণ সজাগ থাকা; যেন মানুষের কাছ থেকে বৈধ এবং নেক আমল ব্যতীত কোনো গুনাহ প্রকাশ না পায়। কারণ মানুষের আমলসমূহ লেখার জন্য আল্লাহ তা'আলা সম্মানিত ফিরিশতা নিয়োজিত করেছেন। তারা মানুষের সকল কর্মকাণ্ড বিষয়ে অবগত হোন। তারা সর্বাবস্থায় তাদের রক্ষণ ও পর্যবেক্ষণে সক্ষম।

৬. ফিরিশতাদের কষ্ট হয় এ ধরণের কাজ হতে বিরত থাকা। গুনাহের কাজ হলে তারা কষ্ট পায়। এ জন্য তারা কুকুর এবং প্রাণীর ছবি আছে এমন ঘরে প্রবেশ করে না। দুর্গন্ধ বস্তু তাদের কষ্টের উদ্রেক করে। যেমন, মসজিদে পেঁয়াজ, রসুন খাওয়া অথবা খেয়ে মসজিদে যাওয়া।

তৃতীয়ত: কিতাবসমূহের ওপর ঈমান:

কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য এমন সব কিতাব, যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য এবং যা আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টিকূলের প্রতি রহমত ও পরকালে তাদের জন্য নাজাত ও কল্যাণস্বরূপ জিবরীলের মাধ্যমে রাসূলদের ওপর অবতীর্ণ করেছেন।

কিতাবসমূহের ওপর ঈমান আনার অর্থ:

১. এমন বিশ্বাস পোষণ করা যে, সকল কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে আলোকবর্তিকা, হিদায়াতের আকর হিসেবে, সত্য ধর্ম নিয়ে।

২. বিশ্বাস করা যে এ হলো আল্লাহর কালাম বা কথা। কোনো সৃষ্টির কালাম নয়। জিবরীল আল্লাহর নিকট থেকে শ্রবণ করেছেন আর রাসূল শ্রবণ করেছেন জিবরীল থেকে।

৩. বিশ্বাস করা যে, সকল কিতাবে বর্ণিত যাবতীয় বিধি-বিধান ঐ জাতির জন্য অবশ্যই পালনীয় ছিল, যাদের ওপর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে।

৪. বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর সকল কিতাব একটি অপরটিকে সত্যায়ন করে। পরস্পর কোনো বিরোধ নেই। তবে বিধি বিধানের ক্ষেত্রে ভিন্নতা তাৎপর্যপূর্ণ বিশেষ কোনো কারণে হয়ে থাকে, যা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।

৫. কিতাবসমূহ হতে যেগুলোর নাম আমারা জানি সেগুলো বিশ্বাস করা। যেমন,

• আল কুরআনুল কারীম: যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।

• তাওরাত: যা মুসা আলাইহিস সালামের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।

• ইঞ্জিল: যা ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।

• যাবূর: যা দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।

• ইবরাহীম এবং মূসা আলাইহিমাস সালামের ওপর সহীফাহসমূহ।

এছাড়া সাধারণভাবে ঐ সকল আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস করা যার নাম আমাদের জানা নেই।

৬. বিশ্বাস করা আসমানী সকল কিতাব এবং তার বিধান রহিত হয়েছে কুরআনুল কারীম অবতীর্ণের মাধ্যমে। রহিত সে কিতাবগুলোর বিধান অনুসারে আমল কারো জন্য বৈধ নয়; বরং সকলের প্রতি কুরআনের অনুকরণ, অনুসরণ ফরয। এ একমাত্র কিতাব, যার কার্যকারিতা কিয়ামত অবধি অব্যাহত থাকবে। অন্য কোনো কিতাব কুরআনুল কারীমের বিধানকে রহিত করতে পারবে না।

৭. নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত অন্যান্য ঐশী গ্রন্থগুলো বাণী-বক্তব্যের সত্যতার প্রতি কুরআনের মতো-ই বিশ্বাস স্থাপন করা।

৮. এ মত পোষণ করা যে পূর্বের সকল কিতাবে পরিবর্তন-বিকৃতি ঘটেছে। কেননা যে জাতির নিকট কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল, রক্ষার দায়িত্বও তাদের হাতে দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু কুরআনুল কারীম যাবতীয় বিকৃতি থেকে সুরক্ষিত। কেননা এর রক্ষার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ আপন দায়িত্বে রেখেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩﴾ [الحجر: ٩]

“নিশ্চয় আমরা এ কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই তার সংরক্ষক। [সুরা আল-হিজর, আয়াত: ৯]

মুসলিম জীবনে আসমানী কিতাবসমূহের ওপর ঈমানের উপকারিতা:

আল্লাহ তা'আলা তার একান্ত অনুগ্রহে পৃথিবীর তাবৎ জাতির কাছে তাদের জন্য অশেষ মঙ্গলজনক কিতাব অবতীর্ণ করেছেন -এ ব্যাপারে পূর্ণ অবগতি ও জ্ঞান লাভ করা জরুরি।

১. আমাদের এ ব্যাপারে পূর্ণ অবগতি লাভ করতে হবে যে, আল্লাহ তা'আলা আপন প্রজ্ঞায় প্রতিটি জাতির জন্য উপযুক্ত বিধান প্রণয়ন করেছেন, এ তার পূর্ণ প্রজ্ঞারই পরিচায়ক।

২. আল্লাহ যে যাবতীয় সংশয় হতে মুক্ত বিধান সম্বলিত কুরআন আমাদের নবীর ওপর অবতীর্ণ করেছেন, সে জন্য তার শোকর আদায় করা। এ কুরআন হলো কিতাবসমূহের অনন্য শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী এবং এ কুরআন অন্য সকল কিতাবসমূহের প্রকৃত বিধানাবলীর রক্ষক।

৩. কুরআনের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং তার তিলাওয়াত করা, অর্থ বোঝা, মুখস্থ করা, গবেষণা, বিশ্বাস, আমল এবং এ অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা পরিচালনায় আত্মনিয়োগ করা।