×
ইখলাসপূর্ণ ইবাদত : ইখলাসপূর্ণ ইবাদত বান্দার কাছে আল্লাহর প্রাপ্য একটি অধিকার। সকল ইবাদত-আরাধনা অদ্বিতীয় আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হতে হবে এ-বিষয়টি তাওহীদের মূল দাবি। ইখলাসপূর্ণ ইবাদত প্রব্ন্ধনে সংক্ষেপে এই বিষয়টির নান্দনিক উপস্থাপন হয়েছে বলে বিশ্বাস ।

    ইখলাসপূর্ণ ইবাদত

    إخلاص العبادة لله عز وجل

    تأليف: ثناؤ الله نذير أحمد

    مراجعة: محمد شمس الحق الصديق

    ইখলাসপূর্ণ ইবাদত

    ইখলাসপূর্ণ ইবাদত বান্দার কাছে আল্লাহর প্রাপ্য একটি অধিকার। সকল ইবাদত-উপাসনা অদ্বিতীয় আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হতে হবে এ-বিষয়টি তাওহীদের মূল দাবি। ইবাদত আরাধনার কোনো ক্ষেত্রেই আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোনো সত্ত্বার সমীপে নিজেদেরকে আরোপিত করা যাবেনা। আদেশ-নিষেধের অনুবর্তীতা, আনুগত্ব ও ইতায়াত পাওয়ার অধিকার একমাত্র রাব্বুল আলামীনের। তবে ইবাদত-আনুগত্ব শুষ্ক প্রাণহীন হৃদ্যতাবিবর্জিত হলে চলবেনা। ইবাদত হতে হবে ইখলাসপূর্ণ প্রাণবন্ত ও ঐকান্তিক। ইবাদত হতে হবে রিয়া ও লোকদেখানোর ভাব থেকে মুক্ত। শিরকের সামান্যতম ছোঁয়া থেকেও পবিত্র। জীবন-মৃত্যু দুআ আরাধনার সবটুকুই সমর্পিত করতে হবে একমাত্র আল্লাহর সমীপে। কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা যাবেনা। মনোজগত ও বাহ্যিক আচরণের সকল দিক সোপর্দ করতে হবে আল্লাহর আদেশ নিষেধের আওতায়।

    এরশাদ হয়েছে –

    قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿162﴾ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ (سورة الأنعام : 161-162)

    বলুন: আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্বপ্রতিপালকের জন্য সমর্পিত। তার কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আত্মসমর্পনকারী।

    (আল আন আম-১৬১-৬২)

    আরো ইরশাদ হয়েছে-

    إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ (سورة الزمر : 2)

    আমি আপনার উপর এ কিতাব যথার্থরূপে নাযিল করেছি। অতএব আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করুন। (আয যুমার:২)

    সহীহ হাদীসে কুদসীতে এসেছে আল্লাহ তাআলা বলেন-

    أنا أغنى الشركاء عن الشرك , من عمل عملا أشرك فيه غيري فهو للذي أشرك به وأنا منه بريئ.

    (আমি সমস্ত অংশীদারদের ভিতর বেশী অমুখাপেক্ষী, যে এমন আমল করল যার ভিতর সে আমার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করেছে সে আমল ঐ অংশীদারের জন্য, আর আমি তা থেকে মুক্ত।)

    মুয়ায ইবনে জাবাল রা. বলেন, আমি একটি গাধার পিঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের সঙ্গী ছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করে বললেন –

    يا معاذ هل تدري حق الله على عباده, وما حق العباد على الله؟ قلت: الله ورسوله أعلم, قال: (فإن حق الله على العباد أن يعبدوه ولا يشركوا به شيئا , وحق العباد على الله أن لايعذب من لايشرك به شيئا فقلت: يارسول الله, أفلا أبشر الناس؟ قال :لاتبشرهم فيتكلوا (رواه البخاري ومسلم)

    (হে মুয়ায, তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লাহর কি কি হক রয়েছে? এবং আল্লাহর উপর বান্দার কি কি হক রয়েছে? আমি উত্তর করে বললাম আল্লাহ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক হল, তারা তার এবাদত করবে, তার সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না। আল্লাহ তায়ালার উপর বান্দার হক হল, যে ব্যিক্তি তার সাথে কাউকে শরীক করবে না, তাকে তিনি শাস্তি দিবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি মানুষদেরকে এ-বিষয়ে সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন , সুসংবাদ দিওনা, কেননা তারা অকর্মন্য হয়ে বসে থাকবে। (বুখারী ও মুসলিম )

    আরেকটি হাদীসে এসেছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

    -إن الله لا ينظر إلى أجسامكم, ولا إلى صوركم, ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم, وقال: إذا جمع الله الناس يوم القيامة ليوم لا ريب فيه, نادى مناد من كان أشرك في عمله لله أحدا فليطلب ثوابه من عند غير الله, فإن الله أغنى الشركاء عن الشرك ( رواه الترمذي)

    আল্লাহ তায়ালা তোমাদের শরীর ও চেহারার দিকে তাকান না। তবে তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে তাকান। তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা যখন সমস্ত মানুষকে একত্রিত করবেন, একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিয়ে বলবে, যে ব্যক্তি তার আমলে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করেছে, সে যেন তার সওয়াব আল্লাহ তায়ালা ছাড়া যাকে শরীক করেছে তার কাছ থেকে চেয়ে নেয়। কারণ আল্লাহ তায়ালা সমস্ত শরীকদের থেকে অমুখাপেক্ষি। ( তিরমিযী )

    ইবাদতের ক্ষেত্রে ইখলাস একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইবাদতের সবটুকু, ভয়-ভক্তি-ভালোবাস-আসা-ভরসার সর্বশেষ বিন্দুটুকু, নিবেদিত করতে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে। অংশীবাদী চেতনার লঘু থেকে লঘুতম স্পর্শ থেকে ঊর্ধে উঠাতে হবে নিজেদের। তবেই তো আমরা বান্দার ওপর আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ হক ইখলাসপূর্ণ ইবাদতে নিজেদেরেক আরোপিত করতে সমর্থ হব।

    mgvß