হিদায়াতের আলোকরশ্মি
ক্যাটাগরিসমূহ
Full Description
হিদায়াতের আলোকরশ্মি
نور الهداية
< بنغالي >
আহমদ ইবন আব্দুর রহমান আস-সুইয়ান
أحمد بن عبد الرحمن الصويان
অনুবাদক: চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ترجمة: أبو الكلام أزاد
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
হিদায়াতের আলোকরশ্মি
মুমিন যত পাপই করুক না কেন, তার অন্তরে সর্বদা হিদায়াতের আলো লুকায়িত থাকে। সময় সুযোগে তাকে সজাগ করতে পারলে ঠিকই সে ভালো আমল করার জন্য তৈরি হয়ে যায়। আমার জীবনের বাস্তব একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি, যা থেকে মুমিন বান্দাগণ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ঘটনাটি নিম্নরূপ:
কোনো এক কাজে দূরে কোথাও সফরে গিয়েছিলাম। দীর্ঘ সময় ভ্রমনের পর একদিন বাড়িতে ফিরছিলাম। ফেরার পথে বিমানে আরোহন করলাম। বিমানে বসার জায়গা হলো কতিপয় ভ্রান্ত ও বখাটে যুবকের পাশে। তাদের সিগারেটের ধোঁয়ার বিমানের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, তাদের হাসি-তামাশায় পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো। বিমানটিও ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ। ফলে সিট পরিবর্তন করতে পারলাম না। ভাবছিলাম কিভাবে এ দুরাবস্থা থেকে নিস্কৃতি পাওয়া যায়। অনেক ভেবে-চিন্তে কুরআনে কারীম হাতে নিয়ে মৃদু আওয়াজে পাঠ করতে শুরু করলাম। অল্প সময়ের মধ্যে যুবকদল থেমে গেল। কেউ কেউ নিদ্রা যেতে লাগল। আবার কেউবা খবরের কাগজ পাঠ করতে আরম্ভ করল। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই আমার ডান পার্শ্ব থেকে এক যুবক উচ্চস্বরে বলে উঠল, যথেষ্ট হয়েছে, এবার রাখুন। মনে করলাম আমার আওয়াজে হয়ত তার কষ্ট হচ্ছে। তাই ক্ষমা চেয়ে আবার নিঃশব্দে পড়া শুরু করলাম, যাতে কারো ডিস্টার্ব না হয়। দেখতে পেলাম ছেলেটি মাথা নিচু করে গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে। শুধু তাই নয়, সিটে বসে রীতিমত হেলতে আরম্ভ করেছে। অতঃপর আমার নিকট এসে অত্যন্ত হিট দিয়ে বলল, অনুগ্রহপূর্বক এই পর্যন্ত ক্ষান্ত করুন, আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
কিছুক্ষণ পর ছেলেটি সিট ছেড়ে দিয়ে কাছে এসে আমার সাথে মুসাফাহা করল এবং বলল, আমি ক্ষমা চাচ্ছি, আমি ক্ষমা চাচ্ছি। একথা বলে সে চুপ হয়ে গেল।
কী জবাব দেব ভাবতে পারলাম না। অশ্রু ভরা চোখে বলল, হায় আফসোস বিগত তিন বছর যাবত আল্লাহর জন্য একটি সাজদাও করি নি। আর তার কালামের একটি আয়াতও পাঠ করি নি। গত এক মাস ধরে ভ্রমনে আছি। এমন কোনো অপরাধ নেই যা আমি করি নি। যখন আপনাকে দেখতে পেলাম, তখন মনে করলাম দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, দুঃশ্চিন্তায় ভেঙ্গে পড়লাম। শাসরুদ্ধকর অবস্থা হয়ে গেল। আমার মনে হলো প্রতিটি আয়াত আমার ওপর তীরের মতো বিধছে।
মনে মনে বললাম, আর কতদিন বোকা হয়ে বসে থাকব? এ অন্ধকার থেকে কী করে মুক্তি পাওয়া যাবে? মিথ্যে ও পাপের পরিণাম কী হবে? বিশ্রামাগারে চলে গেলাম। আপনি কী জানেন কেন গিয়েছি? তা এ জন্য যে, আমি দুঃশ্চিন্তায় ভেঙ্গে পড়ে চিৎকার করতে চাইলাম। কিন্তু ঐ রুমটি ছাড়া মানুষের দৃষ্টি থেকে আড়াল হওয়ার মতো আর কোনো জায়গা পেলাম না।
লেখক (আহমদ ইবন আব্দুর রহমান) বলছেন, আমি তাকে তওবা ও আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের কথা বললাম। সে চুপ রইল। যখন বিমান অবতরণ করল তখন সে আমাকে তার বন্ধুদের থেকে একটু আড়ালে নিয়ে বলল, আপনি কী মনে করছেন আল্লাহ তা‘আলা আমার তওবা কবুল করবেন? জবাবে বললাম, যদি তুমি সত্যিকারার্থে তওবা কর, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন। এবার সে বলল, আমি অনেক বড় বড় অপরাধ করেছি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কী আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণী শ্রবণ কর নি?
﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [الزمر: ٥٣]
“তুমি বল: হে আমার ঐসকল বান্দা, যারা নিজেদের ওপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় তিনি সব গুণাহ ক্ষমা করে দিবেন। কেননা তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৩]
একথা শুনে সে খুশি হয়ে মৃদু হাসল। এদিকে তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। কাঁদতে কাঁদতে সালাম দিয়ে চলে গেল।
হে আমার মুসলিম ভাই, মানুষ বক্র পথে গিয়ে যত পাপই করুক না কেন, অবশ্যই তার অন্তরে একটি কল্যাণের বীজ সুপ্ত থাকে। যখন আমরা সে বীজ পর্যন্ত পৌঁছে তাতে পানি সেচন করে ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারব, তখন তা গজিয়ে উঠবে। অতএব, গুণাহের আবরণে আচ্ছন্ন হয়ে গেলেও প্রত্যেকের অন্তরে; কিন্তু কল্যাণের বীজ সুপ্ত থেকে যায়, আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো বান্দার মঙ্গল কামনা করেন তখন তার আত্মাকে হিদায়াতের রশ্মি দ্বারা আলোকিত করে সরল পথের সন্ধান দেন। আল-কুরআনে এসেছে:
﴿وَمَا جَعَلَهُ ٱللَّهُ إِلَّا بُشۡرَىٰ لَكُمۡ وَلِتَطۡمَئِنَّ قُلُوبُكُم بِهِۦۗ وَمَا ٱلنَّصۡرُ إِلَّا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَكِيمِ ١٢٦﴾ [ال عمران: ١٢٦]
“আল্লাহ তা‘আলা তা (ফিরিশতাদের মাধ্যমে সাহায্য) কেবল তোমাদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ পাঠিয়েছেন এবং যাতে তোমাদের আত্মা শান্তনা পায়। মূলতঃ সাহায্য তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাপূর্ণ আল্লাহর পক্ষ থেকেই।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৬]
সমাপ্ত