عبرة موسم الربيع
أعرض المحتوى باللغة الأصلية
مقالة باللغة البنغالية تتحدَّث عن موسم الربيع وما يتركه لنا من عبرة ذهبية ألا وهي سقوط الحياة مثل سقوط أوراق الأشجار.
বসন্তের না বলা কথা
عبرة موسم الربيع
< বাংলা - بنغالي - Bengali >
আলী হাসান তৈয়ব
علي حسن طيب
সম্পাদক: ড. আবু বকর মহাম্মাদ যাকারিয়া
مراجعة:د/ أبو بكر محمد زكريا
বসন্তের না বলা কথা
শীতের মৌনতা ভেঙে বাতাসে খেলছে বসন্তের দোলা। দিকে দিকে রঙিন ফুলের সমারোহ আর দক্ষিনের বাতাস জানান দিচ্ছে বসন্তের দাপুটে উপস্থিতি। সর্বশেষ মধ্যদুপুরে শহরের পিচঢালা পথে চৈত্রের বিদায় পক্ষে গ্রীষ্মের আগুনের তাপ গায়ে লাগতে শুরু করেছে। বসন্তের নয়ন জুড়ানো প্রকৃতির উৎসবে শামিল হতে কে না চায়! বসন্তের দ্বিতীয়পক্ষে সপরিবারে ছুটে গিয়েছিলাম বসন্তের রঙ গায়ে মাখতে ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে। শুকনো নদীর গুদারা ঘাটে গিয়েই টের পেলাম প্রকৃতির নতুন সাজ। নৌকা দিয়ে মরা নদী পার হতেই ওপারের ঘাটে অভ্যর্থনা জানাল রক্তলাল শিমুল। শিমুলের এ রক্তরূপ চোখে মায়াঞ্জন ছড়িয়ে দিল। গ্রামের মেঠোপথ বেয়ে যতই সামনে চলি ততই প্রতিটি পদক্ষেপে কানে আসে ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি। একদিকে পুরনোকে বিদায়ের সুর, অন্যদিকে নতুনের আগমনবার্তা চারদিকে। কবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায়
পুরানো বিরহ হানিছে, নবীন মিলন আনিছে,
নবীন বসন্ত আইল নবীন জীবন ফুটাতে।
আমার ভাড়া বাসার সামনের তুলনামূলক নিরিবিলি পথটিও ফাল্গুনজুড়ে ছেয়ে ছিল ঝরাপাতায়। পা ফেলতেই মর্মর ধ্বনি কানকে সচকিত করেছে। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার পথে রাজধানীর বনানীর পথে পথেও চোখে পড়েছে ঝরাপাতার মিছিল। চৈত্রের দ্বিতীয়ার্ধে এসে এখন নতুনের আগমনী শোভা। নৌবাহিনীর প্রধান কার্যালয়ের সম্মুখের ঘন সবুজের বেষ্টনী এখন নতুন কিশোর সবুজে আরও সজীব হয়ে উঠেছে। সবুজ বনানীগুলো তরুণ পাতায় চোখে সুখের আবেশ তৈরি করছে।
বসন্তের এ ঝরাপাতার মিছিল আর নতুনের আগমনী শ্লোগান কতভাবেই না চিত্রিত হয়েছে কাব্যে ও কথায়। বলা হয় নি শুধু এর এক সাঙ্কেতিক দিক। সেটি পুরানের ঝরে যাওয়া আর নতুনের আগমনের শিক্ষা। অন্তরের চোখ মেললে গাছের পাতার মতো আমাদের জীবনবৃক্ষেও ঝরে পড়ার গান শোনা যায়। ঈমানের কান খাড়া করলে নতুনের আগমন ধ্বনিতে ওপারের ডাক শোনা যায়।
নতুন-পুরানের পালাবদলের এ ইতিহাস সর্বজনস্বীকৃত সত্য। শুধু প্রকৃতি নয়; জগৎ-সংসারেও একই নিয়ম। যত সফল ক্যারিয়ারই হোক না কেন বয়সের চাকা ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে চাকরি থেকে রিটায়ার্ড করতে হয়। এই সেদিন ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেট সমাপ্তিতেও দেখা গেল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সফল অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক গর্বের ট্রফি উন্মোচনের পাশাপাশি ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বললেন। শ্রীলঙ্কার সর্বকালের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান ও ক্রিকেটের বিস্ময়কর প্রতিভা কুমার সাঙ্গাকারা থেকে নিয়ে চিরতরুণ বুমবুম আফ্রিদিও বিদায় জানালেন ওয়ানডে ক্রিকেটকে। শুধু ক্রিকেট বা ফুটবল কেন বিশ্বজয়ী সব অঙ্গনের তারকাকেই এ পথে চলতে হয়। নতুনদের জন্য পুরনোদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়।
তাই পরকালে বিশ্বাসী প্রত্যেকের উচিৎ ঝরার আগেই পরকালের অনন্ত জীবনের জন্য প্রস্তুত হওয়া। আল্লাহর ভাষায়,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلۡتَنظُرۡ نَفۡسٞ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٖۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ ١٨ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ نَسُواْ ٱللَّهَ فَأَنسَىٰهُمۡ أَنفُسَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ١٩﴾ [الحشر: ١٨، ١٩]
“হে ওইসব লোক যারা ঈমান এনেছ, তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করো। আর প্রত্যেক ব্যক্তির উচিৎ, আগামীকালের জন্য সে কী প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন। তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছেন। তারাই অবাধ্য।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১৮-১৯]
কিসের মায়ায়, কোন সে ধোঁকায় আমরা অমোঘ সত্য ভুলে আছি? পরকালের অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতায় উন্নাসিকতা দেখাচ্ছি? মহান আল্লাহ কত পরিষ্কার ভাষায় আমাদের বুঝিয়ে বলছেন। দেখুন,
﴿إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنفَطَرَتۡ ١ وَإِذَا ٱلۡكَوَاكِبُ ٱنتَثَرَتۡ ٢ وَإِذَا ٱلۡبِحَارُ فُجِّرَتۡ ٣ وَإِذَا ٱلۡقُبُورُ بُعۡثِرَتۡ ٤ عَلِمَتۡ نَفۡسٞ مَّا قَدَّمَتۡ وَأَخَّرَتۡ ٥ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡإِنسَٰنُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ ٱلۡكَرِيمِ ٦ ٱلَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّىٰكَ فَعَدَلَكَ ٧ فِيٓ أَيِّ صُورَةٖ مَّا شَآءَ رَكَّبَكَ ٨ كَلَّا بَلۡ تُكَذِّبُونَ بِٱلدِّينِ ٩ وَإِنَّ عَلَيۡكُمۡ لَحَٰفِظِينَ ١٠ كِرَامٗا كَٰتِبِينَ ١١ يَعۡلَمُونَ مَا تَفۡعَلُونَ ١٢ إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ لَفِي نَعِيمٖ ١٣ وَإِنَّ ٱلۡفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٖ ١٤ يَصۡلَوۡنَهَا يَوۡمَ ٱلدِّينِ ١٥﴾ [الانفطار: ١، ١٥]
“যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, যখন নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে, যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে এবং যখন কবরগুলো উন্মোচিত হবে, তখন প্রত্যেকে জেনে নেবে সে কি অগ্রে প্রেরণ করেছে আর কি পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে। হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম রব সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। যিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামতো আকৃতির গঠন করেছেন। কখনও বিভ্রান্ত হয়ো না; বরং তোমরা দান-প্রতিদানকে মিথ্যা মনে করো। অবশ্যই তোমাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছেন সম্মানিত ‘আমল লেখকরা। তারা জানে যা তোমরা করো। সৎকর্মশীলরা থাকবে জান্নাতে এবং পাপীরা থাকবে জাহান্নামে; তারা বিচার দিবসে তথায় প্রবেশ করবে।” [সূরা ইনফিতার, আয়াত: ১-১৫]
পার্থিব জীবনই শেষ নয়। পরকালের ক্যারিয়ারও যেন সমৃদ্ধ হয় সব সফল মানুষের এখনই সে বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। শাদ্দাদ ইবন আউছ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ، وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ، وَالْعَاجِزُ، مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا، ثُمَّ تَمَنَّى عَلَى اللَّهِ»
“প্রকৃত বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যু-পরবর্তী সময়ের জন্য (আখেরাতের সফলতা এবং কামিয়াবির জন্য) ‘আমল করে। পক্ষান্তরে বোকা ও ব্যর্থ ঐ ব্যক্তি, যে নিজেকে নিজের নফসের (প্রবৃত্তির) অধীন বানিয়ে নেয় (অর্থাৎ আল্লাহর আহকাম ছেড়ে দিয়ে নিজের নফসের চাহিদা অনুযায়ী চলে)। এতদসত্ত্বেও সে আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করতে থাকে।” (তিরমিযী, হাদীস নং ২৪৫৯)[1]
পৃথিবীর সহস্র মায়াজাল, অযুত ব্যস্ততা আর সব দায়িত্বকে একদিন বিদায় জানাতেই হবে। কোনো অজুহাতই আমাদের এ জগতে অমর করতে পারবে না। একদিন সবাইকেই দাঁড়াতে হবে বিচারদিবসের মালিক রবের সামনে। হিসেব দিতে হবে তাঁর দেওয়া সব নি‘আমতের। রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,
﴿إِنَّ إِلَيۡنَآ إِيَابَهُمۡ ٢٥ ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا حِسَابَهُم ٢٦﴾ [الغاشية: ٢٥، ٢٦]
“নিশ্চয় আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর নিশ্চয় তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্বে।” [সূরা আল-গাশিয়া, আয়াত: ২৫-২৬]
আবূ বারযা আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ القِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمُرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ، وَعَنْ عِلْمِهِ فِيمَ فَعَلَ، وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ، وَعَنْ جِسْمِهِ فِيمَ أَبْلَاهُ»
“কিয়ামতের দিন ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার দুই পা নড়বে না, যতক্ষণ:
১. সে তার জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, কোথায় তা শেষ করেছে?
২. তার জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, কীসে তা কাজে লাগিয়েছে?
৩. তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে?
৪. আর কোথায় তা ব্যয় করেছে?
৫. তার দেহ (দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ/যৌবন/সুস্থতা) সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, কোথায় তা ক্ষয় করেছে?” (তিরমিযী, হাদীস নং ২৪১৭)
কিয়ামতের পরীক্ষায় কী প্রশ্ন হবে? -তা ফাঁস হয়ে গেছে। পরীক্ষার কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার আগে নিশ্চিতভাবেই জেনে যাচ্ছি কী প্রশ্ন হবে। কাজেই উত্তর প্রস্তুত করা সহজ। আমরা কি তা প্রস্তুত করেছি? সে দিনের পরীক্ষায় যে কোনো নকল চলবে না। হাই ডেফিনেশন ভিডিও ফুটেজে পুরো ‘আমলনামা তুলে ধরা হবে। ভুলভাল উত্তর দিয়ে পার হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। কোনো ঘুষ-বখশিশ দিয়ে পার পাওয়ার রাস্তা নেই। নেই ক্ষমতার অপব্যবহারে পাস নম্বর দিতে বাধ্য করার কোনো সুযোগ। নেই স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে উদ্দেশ্য সিদ্ধির অবকাশ।
সমাপ্ত
[1] শায়খ আলাবনী হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন।