الغش في الأطعمة جريمة كبيرة

أعرض المحتوى باللغة الأصلية anchor

translation লেখক : আলী হাসান তৈয়ব
1

ঘৃণ্য অপরাধ খাদ্যে ভেজাল

3.1 MB DOC
2

ঘৃণ্য অপরাধ খাদ্যে ভেজাল

748.2 KB PDF

مقالة باللغة البنغالية، تبيّن أن الغش عمومًا والغش في الأطعمة والمأكولات خصوصًا جريمة كبيرة في الإسلام، ومع ذلك فهو شائع بين كثير من التجار الذين يريدون ربحًا عاجلاً ولا يخشون الله في معاملاتهم، وفيها إشارة إلى سبيل النجاة من هذه المشكلة، وما ينبغي على كل مسلم عمله تجاهه.

    ঘৃণ্য অপরাধ খাদ্যে ভেজাল

    আলী হাসান তৈয়ব

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    الغش في الأطعمة جريمة كبيرة

    (باللغة البنغالية)

    علي حسن طيب

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    সংক্ষিপ্ত বর্ণনা............

    সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে খাদ্যসামগ্রীতে ভেজাল অতীতের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ নিবন্ধে সে প্রেক্ষাপট সামনে রেখে ইসলামের দৃষ্টিতে ভেজাল পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও সংরক্ষণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং ভেজাল মিশিয়ে পণ্য বিক্রিলবদ্ধ উপার্জন অবৈধ সে বিষয়টি সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।

    ঘৃণ্য অপরাধ খাদ্যে ভেজাল

    অফিস থেকে ফিরে খানিকটা জিরিয়েই ফ্রিজ খুলি। মুখে চালান করি লাল টকটকে এক ফালি মিষ্টি তরমুজ। অসহ্য গরম আর অসহনীয় তাপে পোড়া দেহে জাগে স্বস্তির অনুভূতি। এদিকে খাওয়া শুরুর আগেই তিন বছরের ফুটফুটে মেয়েটি এসে হাযির। বাবা, আমি তোমার হাতে ‘তম্মুজ’ খাব। নিজের মুখে দেওয়ার আগে আত্মজার মুখে তরমুজ পুরে দিই। মেয়ের নিষ্পাপ চেহারায় আনন্দের দীপ্তি দেখে মুহূর্তে উবে যায় সারাদিনের ক্লান্তি আর জ্যামে লবেজান বাসজার্নির অমানুষিক যাতনা। এপ্রিলের গ্রীষ্মকালীন তপ্ত দিনগুলোয় এ যেন অভ্যাসে পরিণত হয়।

    সেদিন সংবাদটি দেখে থমকে দাঁড়ালাম। ২০ এপ্রিল ২০১৪ মিডিয়ায় একযোগে প্রচারিত কুষ্টিয়ায় তরমুজ খেয়ে শিশু মৃত্যুর সংবাদ কানে আসতে প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে উঠল মেয়ের মুখের সেই অতুলনীয় দীপ্তির কথা। রসে টইটুম্বর লোভনদর্শন ফলটি কেন যেন বাচ্চাদের খুবই প্রিয়। আমার মতো পরিচিত অনেককেই দেখি শিশুর জন্য প্রায়ই তরমুজ কিনছেন। আসলে ভেজালের রমরমা আর বিবেক প্রতিবন্ধিতার এই দূষিত সময়ে ক্ষতিকর রাসায়নিকের ভয়ে অনেক খাদ্যের মতো মৌসুমী ফলগুলো নিয়ে আমরা বিপাকে। না পারি শিশুর জন্য কিনতে আর না পারি এসবের অমৃত স্বাদ থেকে তাদের বঞ্চিত করতে। উপায়ন্তর গ্রীষ্মের তাপদাহে ডাব ও তরমুজই ছিলো ভরসা। মৌসুমের শুরু থেকেই তরমুজ কিনছিলাম নির্ভরতার সঙ্গে। এমন সংবাদের পর তরমুজ কেনা বন্ধ, ফ্রিজের তরমুজটির ঠাঁই হয়েছে ময়লার ঝুড়িতে। শুধু আমি কেন অনেকেই এমন করেছেন।

    তরমুজ খেয়ে এক শিশুর মৃত্যু এবং কুড়ি শিশুর অসুস্থ হবার খবরে জনসাধারণের তরমুজভীতি ছড়ানোই স্বাভাবিক। কোনো পিতামাতাই সন্তানের বেলায় সামান্য ঝুঁকি নিতে চান না। তরমুজের রঙ টকটকে দেখানোর জন্য তাতে ইনজেকশন পুশ করে রাসায়নিক ঢুকানোর খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দেশের সর্বসাধারণ নাগরিক। এ সম্ভাবনাকে বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ তরমুজ ব্যবসায়ীরা উড়িয়ে দিলেও জনভীতি দূর হচ্ছে না। বিভিন্ন দৈনিক মারফত জানা গেল, এমন খবরে তরমুজ বিক্রি অনেক কমে গেছে। শুধু তরমুজই বা কেন আমাদের মৌলিক চাহিদা বিশেষত খাদ্যসামগ্রীর কোন জিনিসটাই বা ভেজালমুক্ত? ভেজাল যদি হতো মানের তারতম্যে তাও মানা যেত। কিন্তু অধিকাংশ ভেজালই এমন যা বিশেষজ্ঞদের মতে জনস্বাস্থ্যের জন্য এমনকি নাগরিকের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

    বড় লোকদের ফল খ্যাত আপেল, কমলা বা আঙ্গুর না হয় না-ই খেলাম, কিন্তু লোভনীয় মৌসুমী ফলগুলো আর কয়দিন না খেয়ে থাকা যায়। অনেকে যেমন বলেন, আর কত বাছবেন, এভাবে চিন্তা করলে তো না খেয়েই মরতে হবে। আসলে মরণই বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের অবধারিত গন্তব্য। বাকি কেবল সিদ্ধান্ত নেয়া- আমরা খেয়ে মরব নাকি না খেয়ে। জেনে-বুঝে রোজ কষ্টের আয়ে বিষ কেনাই যেন আমাদের নিয়তি। ভেজালবিরোধী এত এত আইন-উদ্যোগ, এত অভিযান-প্রচারণা কিছুতেই যেন কিছু হওয়ার নয়। এক প্রতিকারহীন উদ্ধাররহিত অবস্থা!

    আমরা কেউই মরার আগে মরতে চাই না। সবাই আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। অবশ্য এ চাওয়ায় কার কী আসে যায়। মৃত্যুর মিছিল তো থামে না। মিডিয়ায় চোখ রাখলেই মৃত্যুর খবর। মায়ের আহাজারি, বোনের কান্না, পিতার বুক চাপড়ানি যেন আমাদের ভেতর কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না। অনুভূতিগুলো একেবারে ভোতা হয়ে গেছে। যখন বড় রকমের কোনো দুর্ঘটনা ঘটে কিংবা কোনো সেলিব্রেটি শিকার হন অপঘাত বা দুর্ঘটনার, তখনই কেবল আমাদের থিতিয়ে পড়া অনুভূতিতে খানিকটা তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। মিডিয়া কিছুদিন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে, সচেতন নাগরিকদের মুখে কিছুদিন আলোচনা চলে, তারপর আরেকটি নতুন ঘটনার ভিড়ে সেটি আড়ালে চলে যায়। অথচ ক্ষতির শিকার কিংবা স্বজন হারানো পরিবারের লোকদের বেদনার ক্ষত সারে না। দোষীদের বিচার চাইতে চাইতে এক সময় তারাও ছেড়ে দেন ‘উপরওয়ালার’ হাতে।

    এটা কি কোনো সভ্য দেশের চিত্র হতে পারে? আমরা এ কেমন সভ্যতার দাবিদার যেখানে জেনে বুঝে টাকা দিয়ে বিষ কিনে নিজের সন্তানকে খাওয়াতে হয়? আমরা কেমন শিক্ষিত বাংলাদেশ গড়ছি যেখানে নির্ভেজাল পণ্য কিংবা নির্ভেজাল মানুষ যেন সোনার হরিণ? এ কেমন রাষ্ট্র যেখানে লাখ লাখ মানুষের জীবন বিপন্নকারী দুর্বৃত্তদের কালো হাত গুড়িয়ে দেওয়া যায় না? এ কেমন সমাজ যেখানে সবাই কেবল নিজের অস্থায়ী বর্তমান ভাবনায় সম্মিলিত স্বার্থকে নির্দ্বিধায় বিসর্জন দেয়?

    মাঝেমধ্যেই মনে প্রশ্ন জাগে, যারা খাদ্যে বিষ মেশায় কিংবা জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দেয় তারা কি এ সমাজের বাইরের কেউ? তাদের কি শিশু-স্বজন নেই? এতসব কান্না আর বেদনার দৃশ্য কি তাদের এতটুকু স্পর্শ করে না? তারা কি একবারও ভেবে দেখে না, যে খাদ খুড়ছি আমি সাময়িক মুনাফার আশায়, তা হতে পারে আমার জন্যও সর্বনাশা কুয়ো। আমি যদি খাদ্যে ভেজাল দেই, তাহলে আমার অসুখে ঔষুধ যে নকল হবে না তার কী গ্যারান্টি? আর যে ভদ্রলোকেরা সাধুবেশে অসাধু কাজ করেন, তারা কি একবার ভাবেন না, প্রান্তিক অশিক্ষিত লোকেরাও তার জন্য ফরমালিনযুক্ত খাবারের পসরা সাজিয়ে রেখেছে!

    বলাবাহুল্য, রাষ্ট্র এর দায় এড়াতে পারে না। তবে এও সত্য, রাষ্ট্রকে দুষেই বা লাভ কতটুকু। যে সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানোর তদবীর করা হয় তাতে তো ভূত না থাকতে হবে। ভেজালবিরোধী অভিযানের মানুষগুলোকে তো ভেজালমুক্ত হতে হবে। এ দেশে টাকা থাকলে কোন অপরাধটাই না আছে, যা করে পার পাওয়া যায় না? তবে এও ঠিক, রাষ্ট্র ও সরকার পুরো প্রতিকার করতে পারবে না, যদি আমরা শপথ করে বসে থাকি নিজেকে না বদলানোর? রাষ্ট্র আর সরকার তো আমরা বা আমাদের বাদ দিয়ে কিছু নয়। আইন দিয়ে সাধু বানানো যায় না, ভালো মানুষ বানাতে চাইলে দ্বারস্থ হতে হবে ধর্মীয় শিক্ষার। একমাত্র আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়াই পারে সমাজের এ চিত্র বদলে দিতে। যেমন, সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত ও উত্তরণের উপায় খুঁজে পাই আমরা আল্লাহর বাণীতে:

    ﴿وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢﴾ [الطلاق: ٢]

    “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন।” [সূরা আত-তালাক, আয়াত : ২] পরের আয়াতে আল্লাহ বলেন,

    ﴿وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يُكَفِّرۡ عَنۡهُ سَيِّ‍َٔاتِهِۦ وَيُعۡظِمۡ لَهُۥٓ أَجۡرًا ٥﴾ [الطلاق: ٥]

    “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সূরা আত-তালাক, আয়াত : ৫]

    তাই দেখা যায় সমাজের মুষ্টিমেয় ভালো মানুষ তারাই যারা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও হৃদয়ে আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসার অক্সিজেন চালু রেখে নিজেদের জীবিত রেখেছেন। যাদের জন্য আল্লাহ এখনো আলো, বাতাস, পানি ও প্রকৃতি টিকে রেখেছেন। যার ইঙ্গিত মেলে হাদীসে রাসূলে চোখ রাখলে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ عَلَى أَحَدٍ يَقُولُ اللَّهُ اللَّهُ».

    “এমন একটি ব্যক্তি অবশিষ্ট থাকতেও কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে আল্লাহ আল্লাহ বলে।”[1]

    সত্যিকার অর্থে বাঁচতে চাইলে উদ্যোগ নিতে হবে নিজেদেরই। আমাদের শপথ নিতে হবে নিজেকে বদলানোর। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে কুরআনের দেখানো সফলতার পথ মাড়াতে হবে। আল্লাহ বলেন,

    ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ ﴾ [الرعد: ١١]

    “নিশ্চয় আল্লাহ কোনো কাওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ১১]

    আত্মশুদ্ধি ও নিজেকে সংশোধনের তাগাদা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,

    ﴿قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩ وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا ١٠﴾ [الشمس: ٩، ١٠]

    “নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে এবং সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তাকে কলুষিত করেছে।” [সূরা আশ-শামস, আয়াত : ৯-১০]

    আরেক সূরায় আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন বলেন,

    ﴿قَدۡ أَفۡلَحَ مَن تَزَكَّىٰ ١٤ وَذَكَرَ ٱسۡمَ رَبِّهِۦ فَصَلَّىٰ ١٥ بَلۡ تُؤۡثِرُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا ١٦ وَٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ وَأَبۡقَىٰٓ ١٧﴾ [الاعلا: ١٤، ١٧]

    “অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে যে আত্মশুদ্ধি করবে, আর তার রবের নাম স্মরণ করবে, অতঃপর সালাত আদায় করবে। বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী।” [সূরা আল-আ‘লা, আয়াত: ৯-১০]

    শুধু খাদ্যে নয়, সবার সোচ্চার হতে হবে সব ধরনের ভেজাল ও অসাধুতার বিরুদ্ধে। সামাজিকভাবে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে আরও সুসংগঠিত ও কার্যকর উপায়ে। সবখানে জোর আওয়াজ তুলতে হবে ভেজালের বিরুদ্ধে। শুভ কাজে সবাইকে মিলিতকণ্ঠে এগিয়ে আসতে হবে কুরআনের নির্দেশনা মাফিক।

    ﴿سَابِقُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا كَعَرۡضِ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أُعِدَّتۡ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦۚ ذَٰلِكَ فَضۡلُ ٱللَّهِ يُؤۡتِيهِ مَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ ذُو ٱلۡفَضۡلِ ٱلۡعَظِيمِ ٢١﴾ [الحديد: ٢١]

    “তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মতো। তা প্রস্তত করা হয়েছে যারা আল্লাহ ও রাসূলদের প্রতি ঈমান আনে তাদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২১]

    যে কোনো অন্যায় ও অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া তো মুসলিমদের ঈমানী দায়িত্বেরই অংশ। অসৎ কাজে বাধা প্রদান ইসলামের মৌলিক দাবিগুলোর একটি। এমনকি এটাকে শেষ নবীর উম্মতের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ বলেন,

    ﴿كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ وَلَوۡ ءَامَنَ أَهۡلُ ٱلۡكِتَٰبِ لَكَانَ خَيۡرٗا لَّهُمۚ مِّنۡهُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَأَكۡثَرُهُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ١١٠﴾ [ال عمران: ١١٠]

    “তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ঈমানদার। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০]

    মুহাজির সাহাবীদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাঁদের গুণ ও বৈশিষ্ট্য হিসেবে তুলে ধরেন সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّٰهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَمَرُواْ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَنَهَوۡاْ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۗ وَلِلَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٤١ ﴾ [الحج: ٤١]

    “তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।’ [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত : ৪১]

    ভালো কাজে আদেশ এবং মন্দ কাজে বারণ করার ফযীলত অনেক। এর দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। যেমন, আবূ সুলাইমান হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সূত্রে ঘটনা বর্ণনা করেন,

    «أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ - رضى الله عنه - قَالَ أَيُّكُمْ يَحْفَظُ قَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم- فِى الْفِتْنَةِ فَقَالَ حُذَيْفَةُ أَنَا أَحْفَظُ كَمَا قَالَ . قَالَ هَاتِ إِنَّكَ لَجَرِىءٌ . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - «فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِى أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَجَارِهِ تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصَّدَقَةُ وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْىُ عَنِ الْمُنْكَرِ».

    “উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তোমাদের মধ্যে কে ফিতনা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী সংরক্ষণ করেছে? তখন হুযায়ফা বলেন, আমি হুবহু তা সংরক্ষণ করেছি। তিনি বললেন, উপস্থাপন করো, অবশ্যই তুমি এর উপযুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “পুরুষের পরীক্ষা ফিতনা হলো তার পরিবারে, সম্পদে ও প্রতিবেশীতে। আর এসব (পরীক্ষার গুনাহকে) মিটিয়ে দেয় সালাত, সাদাকা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ।”[2]

    আরেক হাদীসে সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধকে রাস্তার হকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوسَ بِالطُّرُقَاتِ». فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَنَا مِنْ مَجَالِسِنَا بُدٌّ نَتَحَدَّثُ فِيهَا . فَقَالَ «إِذَا أَبَيْتُمْ إِلاَّ الْمَجْلِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ». قَالُوا وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ « غَضُّ الْبَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلاَمِ، وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْىُ عَنِ الْمُنْكَرِ».

    “সাবধান, রাস্তায় বসো না। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের তো রাস্তা ছাড়া কোনো গতি নেই। আমরা তো তাতে বসে কথাবার্তা বলি। তিনি বললেন, তোমরা যখন রাস্তায় বসবে, রাস্তাকে তার হক প্রদান করবে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল পথের হক কী? তিনি বলেন, দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, সালামের উত্তর প্রদান, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বারণ করা।”[3]

    অবশ্য এও অনস্বীকার্য যে, ব্যক্তিগত ও সামাজিক এসব পদক্ষেপের পরও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের কর্ণধারদের। কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে। জনমানুষকে ভেজালের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে রাষ্ট্রকে হতে হবে আপোসহীন ও সবচেয়ে সিরিয়াস। কারণ, জনগণের সুখ-দুঃখের ব্যাপারে সরকার তথা প্রত্যেক দায়িত্বশীল সরকারী কর্মকর্তাকেই জবাবদিহি করতে হবে আল্লাহর কাছে।

    «أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالإِمَامُ الَّذِى عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِىَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ، أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ».

    “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর সবাই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে। ইমাম তথা জনতার নেতা একজন দায়িত্বশীল; তিনি তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ দায়িত্বশীল তার পরিবারের; সে জিজ্ঞাসিত হবে তার দায়িত্ব সম্পর্কে। স্ত্রী দায়িত্বশীল তার স্বামীর গৃহ ও সন্তানের; সে জিজ্ঞাসিত হবে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে। মানুষের (দাস) ভৃত্য দায়িত্বশীল মুনিবের সম্পদের, সে জিজ্ঞাসিত হবে তার মুনিবের সম্পদ সম্পর্কে। অতএব, সতর্ক থেকো, তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে।”[4]

    সর্বোপরি একজন দায়িত্বশীল মুসলিম হিসেবে আমাদের কারও ভুলে গেলে চলবে না যে ইসলামের দৃষ্টিতে ভেজাল পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও সংরক্ষণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ভেজাল মিশিয়ে পণ্য বিক্রিলবদ্ধ উপার্জন অবৈধ। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

    ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ إِلَّآ أَن تَكُونَ تِجَٰرَةً عَن تَرَاضٖ مِّنكُمۡۚ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ٢٩﴾ [النساء: ٢٩]

    “হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯]

    কিছু কেনার ক্ষেত্রে একজন ক্রেতা নির্ভরতা ও আস্থা রাখতে চায় বিক্রেতার ওপর। যাতে তার ক্রয়কৃত পণ্য নির্ভেজাল, গুণগত মান সংরক্ষিত এবং সাশ্রয়ী হয়। পণ্যে ভেজাল থাকলে তা বিক্রেতার প্রতি অবমাননা ও অবমূল্যায়নের শামিল। সন্দেহ নেই এও এক ধরনের ধোঁকা ও প্রতারণা। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا».

    “যে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”[5]

    উন্মাদের মতো যেনতেন উপায়ে এবং অন্যায়ভাবে উপার্জন করে উদরপূর্তির জন্য অস্থির হওয়া কোনো মুমিনের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

    ﴿إِنَّ ٱللَّهَ يُدۡخِلُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ يَتَمَتَّعُونَ وَيَأۡكُلُونَ كَمَا تَأۡكُلُ ٱلۡأَنۡعَٰمُ وَٱلنَّارُ مَثۡوٗى لَّهُمۡ ١٢﴾ [محمد: ١٢]

    “কিন্তু যারা কুফুরী করে, তারা ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে এবং জন্তু জানোয়ারের মতো উদরপূর্তি করে; আর জাহান্নামই তাদের নিবাস।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১২]

    সবশেষে প্রার্থনা, রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সব ধরনের ভেজাল ও অসাধুতা থেকে মুক্ত রাখুন এবং সব অসাধু ও ভেজাল কারবারির কবল থেকে রক্ষা করুন। আমীন!

    [1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৩।

    [2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫৮৬।

    [3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২২৯।

    [4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮২৮।

    [5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৪।

    ক্যাটাগরিসমূহ