أحباء الرسول أم أعداؤه ؟

أعرض المحتوى باللغة الأصلية anchor

translation লেখক : আলী হাসান তৈয়ব
1

রাসূলের মহব্বতকারী নাকি তাঁর শত্রু

2.2 MB DOC
2

রাসূলের মহব্বতকারী নাকি তাঁর শত্রু

616 KB PDF

مقالة باللغة البنغالية، تناولت حقيقة بعض المتصوفة في بنغلاديش الذين يدعون أنهم يحبون النبي - صلى الله عليه وسلم - وهم في الحقيقة ليسوا كذلك؛ فهم يقيمون الموالد ويفعلون الشركيات باسم السنة، ويرمون الآخرين الذين يريدون تطبيق السنة ونبذ البدعة بأنهم أعداء الرسول، وهم دائمًا يساندون العلمانيين وأصحاب الملل والنحل المخالفة للإسلام.

    রাসূলের মহব্বতকারী নাকি তাঁর শত্রু?

    আলী হাসান তৈয়ব

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    أحباء الرسول أم أعداؤه؟

    (باللغة البنغالية)

    علي حسن طيب

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    সংক্ষিপ্ত বর্ণনা............

    বাংলাদেশে একটি বিভ্রান্ত গোষ্ঠী নবীপ্রেমের জিগির তুলে হাজার হাজার মানুষের ঈমান হরণ করছে। নিজেদের আশেকে রাসূল দাবি করে মুসলিমদের নিয়োজিত করছে বিদ‘আত ও শির্কের মতো আত্মঘাতী কাজে। এ নিবন্ধে সাম্প্রতিক কিছু দৃষ্টান্ত দিয়ে তাদের স্বরূপ উন্মোচন করা হয়েছে এবং তাদের ব্যাপারে সকল ঈমানদারকে সতর্ক করা হয়েছে।

    রাসূলের মহব্বতকারী নাকি তাঁর শত্রু?

    একবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় দাঁড়িয়ে যখন নিত্যনতুন বাদ-মতবাদের আঘাত একেরপর এক আছড়ে পড়ছে ইসলামের কূলে, তখন ভ্রান্ত বিদআতী গোষ্ঠী নতুন করে মাঠে নেমেছে মানুষের ঈমান হরণে। সময়ের দাবি হয়ে পড়েছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুসলিম ভাই-বোনদের রক্ষা করা। বিষয়টি মাথায় রেখে ভাবলাম স্বতন্ত্র একটি ছোট্ট হলেও নিবন্ধ লেখা যায় কি না। বলাবাহুল্য সে ক্ষুদ্র প্রয়াসই এই লেখা।

    যুগে যুগে মানুষের ঈমানহরণে এমন বহু চেষ্টা হয়েছে। কোনোকালেই এ চেষ্টা থেমে ছিল না। আজও থেমে নেই। বরং নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও মিডিয়ার বদৌলতে তাদের প্রচারে যেন গতি সঞ্চারিত হয়েছে। ১২ রবিউল আউয়ালকে সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবের দিন বানাতে হালুয়া-রুটি আর ওরসের মান্নতি মহিষের গোশত খাওয়া মুসলিম ভাইদের কী উৎকট চেষ্টা! আরে ভাই, রাসূলের অনিশ্চিত জন্মদিবস আর নিশ্চিত মৃত্যদিবসে কীভাবে উৎসব করেন? সাহাবীদের মতো নবীর প্রিয়পাত্রগণ এ দিন তো ব্যথায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মতো বিদ্বান ও মনীষী সাহাবী কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। রাসূলের মৃত্যুদিনে তো খুশি প্রকাশ করেছিল অভিশপ্ত ইয়াহূদী আর কুচক্রী মুনাফিকরা।

    সারা বিশ্বের তাবৎ ইসলামিক স্কলারদের বিস্তর লেখালেখি, অসামান্য দাওয়াত ওনারা গায়ে মাখেন না। অথচ নির্বোধ কিছু পেটওয়ালা সুবেশধারী ভণ্ডের ভেলকিতে হন বিভ্রান্ত। সেই তো প্রকৃত রাসূলের ভালোবাসাপোষণকারী যে রাসূলের অপমান-অবমাননা মেনে নিতে পারে না। অথচ এই ভোগসম্রাট তথাকথিত পেটুক পীররা রাসূলের অবমাননার প্রতিবাদ করে না। রাসূলের ‘খতমে নবুওয়াত’কে চ্যালেঞ্জকারী কাদিয়ানী সম্প্রদায় যখন জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র ছেপে প্রকাশ্যে জাহান্নামের দাওয়াত দেয়, তখনও এই সর্বভুক অর্থগৃধ্নুরা বানোয়াট মিলাদ নিয়ে ব্যস্ত!

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীদের যুগে যা ছিল না তাকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করলে হয় বিদ‘আত। মিলাদ, কিয়াম ও হালুয়া-রুটির মুহাব্বত প্রদর্শনী সে উত্তম যুগে ছিল না বলে তা শুধু বিদ‘আতই নয়; এসবের সঙ্গে নবীকে হাযির-নাযির মনে করা ছাড়াও বেশ কিছু শির্কী চেতনা জড়িয়ে আছে। আলেম না হয়ে আলেমের বেশ ধরা কিছু আশেকে জিলাপীর রাগ তাই আমাদের ওপর। আমরা যাই করি তা বিদ‘আত! গাড়ি-বিমানে ওঠা বিদ‘আত! উপায়ান্তর হয়ে প্রতিবাদের প্রচলিত পদ্ধতি লং...মার্চ করাও বিদ‘আত!

    এই পেটুক দালালচক্রকে কে প্রশ্ন করবে বিদ‘আতের সংজ্ঞা কী? গাড়ি-বিমানে আরোহণকে কোনো পাগলও কি ইবাদত ভাবে? বিদ‘আতের সংজ্ঞা বলবে কোত্থেকে এরা দালালি সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে নিজেদের নাম ও শিরোনামই তো শুদ্ধভাবে লিখতে পারে না! ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি এরা ‘বাবা’ কিংবা ‘হুজুরে কিবলা বলেছেন’ এর বাইরে কোনো প্রমাণ পেশ করতে পারে না। এদের লেখা বইয়ের রেফারেন্স বলতে হয় মঊদূ বানোয়াট বা জাল হাদীছ নয়তো কুরআন-হাদীছের অপব্যাখ্যা। এই মিথ্যুক প্রজাতিকে প্রকাশ্য বিতর্কের চ্যালেঞ্জ করলে এরা প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে। ছলে-বলে-কৌশলে বিতর্ক ভণ্ডুল করে দেয়। এই প্রতারকচক্র হাজার হাজার মানুষের ঈমান নষ্ট করার পর এখন চিরনিন্দিত ও অভিশপ্ত ‘দরবারি আলেম’ সেজে রাষ্ট্রের কাঁধে ভর করেছে।

    বিদ‘আতীদের সম্পর্কে উলামায়ে কিরাম অনেক বলেছেন এবং লিখেছেন। এবার সাধারণ জনগণের সামনে পরিষ্কার হয়েছে এরা কতটা পেটপূজারী? এরা নবীর কেমন আশেক[1]! যে নবীর সম্মানে আঘাত নিয়েও নিজেদের পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির ধান্দায় ব্যস্ত থাকে! চট্টগ্রামের লাল দীঘির ময়দানে দেশের সর্বশ্রেণির উলামায়ে কিরাম যখন মুরতাদ-নাস্তিক বিরোধী আন্দোলন করছেন তখন তার বিপরীতে চট্টগ্রাম মুসলিম হলে বিদ‘আতীরা তাদের বিরুদ্ধে মিটিং করছে। ঢাকার নির্ভেজাল ভণ্ড পীরের দরবার থেকে নাস্তিকদের শাস্তির দাবিতে আহুত লংমার্চের বিরুদ্ধে হুংকার দেওয়া হয়েছে।

    মজার ব্যাপার হলো, এরা নিজেদের ‘হক্কানী আলেম’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কোটি কোটি মুসলিম ও দেশের সকল আলেমকে নসীহতও করেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামাকেও বেদম নসিহত খয়রাত করেছে। বাম-রামদের সুমতি ফিরতে শুরু করেছে কিন্তু এদের সুমতির কোনো লক্ষণ দেখছি না!

    গুটিকয় নির্ভেজাল পেটপূজারী ভণ্ড আর জনবিচ্ছিন্ন নষ্ট বামরা ছাড়া পুরো বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ আজ এক মোহনায় এসে দাঁড়িয়েছে। দলকানারা ছাড়া লীগ, বিএনপি, জামাত, জাতীয় ও কল্যাণ পার্টি এবং বিকল্পধারা থেকে নিয়ে কেউ বাদ নেই। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ পড়া হেন কোনো মানুষ নেই যিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নবীর শানে বেয়াদবিকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সমর্থক নন। অথচ এই আশেকে জিলাপী, গোলামে হালুয়া-রুটিরা নিজেদের সু্ন্নি বলে নবীর শত্রুদের দালালি করেছে। কষ্টে মরে যেতে ইচ্ছে করে, যারা নিজের আরবী নামটিও শুদ্ধ আরবীতে লিখতে বা বলতে পারে না আজকাল মিডিয়ার বদৌলতে তারাও ‘আল্লামা’ হয়ে যাচ্ছে।

    বাংলাদেশে ইসলামের জন্য দরদী এত দল গোষ্ঠী আছে তা জানা ছিল না। জানতাম বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকায় বিশাল একটি গোষ্ঠী আছে যারা হালুয়া-রুটির মিলাদ আর গরু-মহিষ খাওয়ার ওরস[2]কেই নিজেদের ঈমান-আকীদা, রাসূলের উম্মত, রাসূলের প্রতি ভালোবাসা লালন ও প্রকাশের একমাত্র কর্তব্য মানতো। যতোই প্রমাণিত শরীয়তবিরুদ্ধ আর অযৌক্তিক হোক তাদের মৌসুমী ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাদের সবাইকে সরাসরি জাহান্নামে পাঠাতে ‘কাফের’ বলে ফাতওয়া দিত।

    এতদিন এরা দেশের বৃহত্তর আলেমসমাজ কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের কাতারে না এসে কেবল এসব ফতোয়া নিয়েই ব্যস্ত ছিল। ইসলাম গোল্লায় গেলে কিংবা রাষ্ট্র রসাতলে গেলেও তাদের কখনো টু শব্দটি পর্যন্ত করতে দেখা যায় নি। রাসূল ও ইসলাম অবমাননার প্রতিবাদে যখন সারা দেশের সব দলের মুসলিম এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে তখন তারা হঠাৎ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে ইসলাম গেল রব তুলে অবস্থান নিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ অরাজনৈতিক ধর্মীয় স্রোতের বিপক্ষে। নিত্যনতুন দল আর ব্যানারে তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করার এজেন্ডায় মিডিয়ার সামনে এসেছে। তাদেরকে বাইরের আলোয় এনে জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ায় ইস্যুটিকে ধন্যবাদ দিতেই হয়।

    দেশের মানুষ কিংবা মিডিয়া কি কখনো নামগুলো শুনেছে? -বাংলাদেশ ইমাম-উলামা সমন্বয় ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামি জোট, ইসলামি ফ্রন্ট, ইসলামি যুক্তফ্রন্ট, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতসহ আরও কত নাম। এদের চেহারা ও পোশাক যেমন অশিষ্ট, তেমনি ভাষাও চরম অশুদ্ধ। নিজেরা আলেম আর আল্লামা দাবি করলেও এরা নিজেদের নাম, সম্মেলনের ব্যানারটিও শুদ্ধভাবে লিখতে পারেন না।

    এরা উলামায়ে কিরামের বিরোধিতা করতে গিয়ে ইসলামের বিভিন্ন বিধান ও দৃষ্টিভঙ্গির যেসব ভ্রান্ত ও বিভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন তা অতীতের সকল দরবারি ও অভিশপ্ত তথাকথিত আলেমদের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বাদশা আকবরের জগাখিচুড়ি ধর্মের পক্ষ নেওয়া গোলাম পথভ্রষ্ট আলেমদেরও হার মানিয়েছে। ইসলামের শান্তির বাণীর তারা এমন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রায় সিকিশত অভিযান মিথ্যা ছিল। ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করার খ্রিস্টধর্মীয় মতবাদকেও তারা ইসলামের অংশ বানিয়ে ফেলছে।

    নীতি-বিবেক না থাকলেও অনেকের লজ্জাটুকু থাকে, এদের তাও নেই। কয়েকদিন আগে বাইতুল মুকাররমের সামনে থেকে মোবাইলে ধারণ করা একটি ছবি দেখলাম। সেখানে একটি এমনই দলের বিশাল সমাবেশের চিত্র দেখে আমার মনে হলো এদের অন্তত লজ্জা থাকলেও মাঠে নামত না। না দেখলে কারও বিশ্বাস হবে না হয়তো, ট্রাকে বানানো একটি মঞ্চে গলা ফাটিয়ে নাস্তিকবিরোধী আন্দোলনকে ‘ফেতনা’ আখ্যায়িত করে এর কাণ্ডারী আলেমের গ্রেফতার দাবিকারী বক্তার আশেপাশে দ্বিতীয় কোনো কাকপক্ষীও নেই! আর যাদের সামনে তিনি হাত নাড়িয়ে কোমর দুলিয়ে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন সেই বিশাল জনসমাগমেও শ্রোতা কেবলই একজন! তাকে আবার শ্রোতা জ্ঞানে ভুল বুঝবেন না, তিনি মূলত ওই মাইকের মালিক বা অপারেটর।

    সেদিন এক সহকর্মীর কম্পিউটারে মজার এক ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। দিগন্ত টিভির সেই ক্লিপটি যে কেউ দেখতে পাবেন ফেসবুকে। বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামি জোটের নেতা সাংবাদিকদের উদ্দেশে কথা বলতে গিয়ে বলছেন, ...‘এর জন্যই মাওলানা শফীর গ্রেফতার দাবি করছে বাংলাদেশ সম্মিলিত ‘...(একটি রাজনৈতিক দলের)’ মাফ করবেন ইসলামি জোট’। আল্লাহ এভাবেই জনসম্মুখে মাঝেমধ্যে মুখ ফসকে দালালদের চেহারা মানুষের সামনে উন্মোচন করে দেন। আর বিজ্ঞ ওই ‘আল্লামা’দের বাংলা উচ্চারণের দুয়েকটি নমুনা তুলে না ধরলেও অন্যায় হয়ে যায়। গ্রেফতার উচ্চারণ করলেন ‘গেরেফতার’ আর প্রতিবাদকে ‘পরতিবাদ’। আপনি আর যাই হোক এদের বক্তব্যে বিনোদনের কিছু খোরাক অবশ্যই পাবেন।

    আশেকে জিলাপী সুন্নীদের কথা না বললেও অনুচিত হবে। সারা বছর সব অনুষঙ্গে যেখানে একজন নবীপ্রেমিকের অনুগামী হবার কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের (যেমন, আদেশ করা হয়েছে কুরআন এবং হাদীসের ভাণ্ডারে) সেখানে তাদের নবী প্রেমের নমুনা দেখা যায় কেবলই বিভ্রান্তচিন্তার মিলাদে। নবী নাকি হাযির হন তাদের মিলাদে! অথচ যেমনটি আমরা পূর্বেও বলেছি, সর্বত্র বিরাজমান[3] এই আকীদাটিই ত্রুটিপূর্ণ। মজার ব্যাপার হলো, ইয়াহূদীরা যেমন নিজেদেরকে একমাত্র স্বর্গের হকদার এবং আল্লাহর মনোনীত মনে করে, তারাও তেমনি মাজার পূজা না করায় বিপক্ষ সব গোষ্ঠী, দল, দেশ এমনকি সৌদি আরবের সকল আলেম ও সরকারকেও বিভ্রান্ত কিংবা একধাপ এগিয়ে কেউ ‘কাফের’ বলেও আখ্যায়িত করে! আর নিজেদেরকে মনে করে একমাত্র সহীহ এবং জান্নাতের আদি উত্তরাধিকারী।

    গত বছর দুয়েক আগে একটি দেওয়াল লিখন সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। লাল সবুজ রঙে বিশাল বিশাল হরফে বিরাট জায়গাজুড়ে যেখানে সেখানে লেখা দেখা যেত বিশ্ব আশেকে রাসূল সম্মেলনের বিজ্ঞাপন। গত তত্ত্বাবধায়ক আমলে একজন নিষ্ঠাবান ধার্মিক ভাইয়ের তৎপরতায় সেনা সরকার এই বিজ্ঞাপনের কিছুটা লাগাম টেনে ধরে। এখন তারা বিশাল বিশাল তোরন বানিয়ে এই বিজ্ঞাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আশেকে রাসূলরাও মিলাদ আর ওরশ নিয়ে ব্যস্ত। না তারা নিজেরা রাসূলের কোনো সুন্নাত অনুযায়ী আমল করেন না তা কায়েম করেন সমাজে। বরং যে বিদ‘আত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার সতর্ক করেছেন তারা সেই বিদ‘আত কায়েমেই সর্বদা সচেষ্ট।

    এরা নানা কিচ্ছা-কাহিনী বলে ইলমহীন অশিক্ষিত মানুষের আবেগ স্পর্শ করেন। তাদেরকে নবীর আশেক! হবার দাওয়াত দেন ভণ্ড বাবার মুরীদ হয়ে। এরা নবীকে ভালোবাসার অপরিহার্য দাবির বিষয় তুলে ধরেন হাদীস-কুরআন থেকে অথচ কিভাবে ভালোবাসতে হবে সে ব্যাপারে কুরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও তা ব্যাখ্যা করেন না।

    মুসলিম মাত্রেই আমরা জানি আল্লাহর প্রিয় রাসূলকে ভালোবাসা আমাদের ঈমানের অপরিহার্য দাবি। রাসূলকে ভালো না বেসে কেউ মুমিনই হতে পারে না। যেমন আনাস রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»

    “তোমাদের কেউ সে পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যাবৎ আমি তার প্রিয় হই নিজ পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষের চেয়ে।”[4]

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু জীবিত নেই তাই তাঁর ভালোবাসা প্রমাণের সবচে বড় উপায় প্রতিটি মুহূর্তে এবং কর্মকাণ্ডে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করা। তাঁর সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপন করা। যুক্তির দাবিও তাই। তেমনি তাঁর জন্য অবমাননাকর যে কোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়ানো। পার্থিব জীবনে আমরা দেখি, কেউ কাউকে ভালোবাসলে সে তার অনুগামী হয়। তার পছন্দনীয় বিষয়গুলো বেশি বেশি করে এবং অপছন্দের বিষয়গুলো সর্বতোভাবে বর্জন করে। আল্লাহ তা‘আলাও আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তাঁকে ভালোবাসতে হলে রাসূলের অনুসরণ করতে। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

    ﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٣٢ ﴾ [ال عمران: ٣١، ٣٢]

    “বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১-৩২]

    আরেক জায়গায় আল্লাহ সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন রাসূল যা করেছেন তা করতে এবং তিনি যা বারণ করেছেন তা না করতে। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

    ﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ ﴾ [الحشر: ٧]

    “রাসূল তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে তিনি তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭]

    হে আল্লাহ, হিদায়াত দিন অন্যথায় আপনিই এদের ব্যাপারে ফয়সালা নিন। আর এদের খপ্পর থেকে রক্ষা করুন এদেশের লাখ-কোটি মুমিন-মুসলিমকে। আমীন!

    [1] ‘এশক’ শব্দটির অর্থ প্রেম। আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে তা একান্ত বেমানান। কারণ, এটি বিপরীত লিঙ্গ বা ক্লীবলিঙ্গের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়। তাই তো দেখি কেউ মাকে বলে না ‘মা আমি তোমাকে ‘এশক’ করি’। বা মেয়ে বাবাকে বলে না, বাবা আমি তোমার সাথে প্রেম করি। তাহলে এসব বেকুবরা কীভাবে আল্লাহ বা তাঁর নবীর জন্য এ খারাপ শব্দটি ব্যবহার করে?। সম্ভবত আমাদের লেখক এখানে তাদের মুখে প্রচলিত হওয়ায় তা বর্ণনার জন্যই শব্দটি নিয়ে এসেছেন। নতুবা লেখক নিজে এ শব্দটি ব্যবহারে পক্ষে নয়। [সম্পাদক]

    [2] ওরস শব্দের অর্থ বিয়ে অনুষ্ঠান। তারা মনে করে যে এ দিন (মৃত্যু দিবস) তাদের তথাকথিত পীর বাবা!র বিয়ে হয়েছে। সে বিয়ে তারা কার সাথে দিয়েছে? আল্লাহর সাথে! না‘উযুবিল্লাহ। যদি তা না হয়, তাহলে কিসের বিয়ে অনুষ্ঠান? তাদের কাছে ব্যাপারটির কোনো সদুত্তর নেই। এ শব্দটি তার অনুষ্ঠানের মতই গর্হিত ও নিষিদ্ধ। সম্ভবত আমাদের লেখক তাদের কাছে বিষয়টি প্রচলিত থাকায় তা নিয়ে বর্ণনা করেছেন, নতুবা তিনি এতে বিশ্বাসী হওয়ার প্রশ্নই আসে না। [সম্পাদক]

    [3] সর্বত্র বিরাজমান এ কথাটি আল্লাহর জন্যও ব্যবহার করা জায়েয নেই। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরশের উপর রয়েছেন। আর আরশ রয়েছে সাত আসমানের উপর। তবে সেখান থেকেই তিনি জ্ঞান ও ক্ষমতায় সকল স্থানের বিষয়টি তার সামনে। ইমাম আবূ হানিফা রহ. বলেছেন, কেউ যদি বলে আমি জানি না আল্লাহর ‘আরশ কোথায়, সেটি আসমানে নাকি যমীনে, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। কারণ, তাঁর ‘আরশ হচ্ছে আসমানের উপর, আর আল্লাহ হচ্ছেন ‘আরশের উপর। [সম্পাদক]

    [4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৪।

    ক্যাটাগরিসমূহ