الظلم: دمعة المظلوم وهلكة الظالم

أعرض المحتوى باللغة الأصلية anchor

translation লেখক : আলী হাসান তৈয়ব
1

জুলুম : পীড়িতের অশ্রু পীড়কের পরাজয়

2.8 MB DOC
2

জুলুম : পীড়িতের অশ্রু পীড়কের পরাজয়

561.2 KB PDF

تحدثت المقالة عن وبال الظلم، وأنه لابد لإقامة السلام في المعمورة من ممارسة العدل والإنصاف والبعد عن الظلم في حياتنا الفردية والاجتماعية.

    জুলুম : পীড়িতের অশ্রু পীড়কের পরাজয়

    [ বাংলা – Bengali – بنغالي ]

    আলী হাসান তৈয়ব

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    2014 - 1435

    ﴿الظلم : دمعة المظلوم وهلكة الظالم﴾

    « باللغة البنغالية »

    علي حسن طيب

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    2014 - 1435

    জুলুম : পীড়িতের অশ্রু পীড়কের পরাজয়

    পৃথিবীর সবাই শান্তি চায়। তাবৎ রাষ্ট্রই চায় সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন করতে। কিন্তু সুখ নামের সোনার হরিণটি কেন জানি অধরাই থেকে যায়! কারণ কী? কারণ হলো শান্তি কামনা করলেও অধিকাংশই পারে না শান্তির পথ অবলম্বন করতে। সুখ ও শান্তির দেখা পেতে হলে আবশ্যক মানুষের মধ্যে অধিকার ও ইনসাফ নিশ্চিত করা। পরস্পরে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির চর্চা করা। অধিকার ও ইনসাফ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবল প্রশান্তি ছড়ায়। নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা পায়। সমাজে একে অপরের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় হয়। ধনী-গরিবের মধ্যে আস্থা গড়ে ওঠে। সম্পদ উন্নত ও রাষ্ট্র সমৃদ্ধ হয়। স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায় এবং অস্থিতির পরিবর্তে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তখন কেউ অস্থিরতায় পতিত হয় না। সর্বোপরি উন্নয়ন-উৎপাদনে আমির-ফকির ও মালিক-শ্রমিক প্রত্যেকেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে ধাবিত হয়। পথ-পরিক্রমায় এমন কিছুর সৃষ্টি হয় না যা কারো কর্মস্পৃহাকে ভোতা কিংবা উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করে।

    পক্ষান্তরে জুলুম এসবকে সুদূর পরাহত করে। সমাজের শান্তি ও স্থিতি এবং মানুষের সুখ ও সমৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। ইসলাম তাই মানুষকে ইনসাফে উদ্বুদ্ধ করেছে। সতর্ক করেছে জুলুম ও অনাচার থেকে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহের অসংখ্য জায়গায় বিবিধ প্রসঙ্গে নানা উপায়ে ইনসাফের উপদেশ দেয়া হয়েছে। নিষেধ করা হয়েছে জুলুম ও বেইনসাফি থেকে। মানুষের কল্যাণে উদ্বুদ্ধ এবং অনিষ্ট সাধন থেকে সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহ কারও প্রতি যেমন জুলুম করেন না, তেমনি তিনি কারও কাছে তা প্রত্যাশাও করেন না। পবিত্র কুরআনে তিনি বলেন,

    ﴿ وَمَا ٱللَّهُ يُرِيدُ ظُلۡمٗا لِّلۡعِبَادِ ٣١ ﴾ [غافر: ٣١]

    ‘আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি কোনো জুলুম করতে চান না।’ {সূরা আল-মু’মিন, আয়াত : ৩১}

    আবূ যর গিফারী রাদিআল্লাহ আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

    «يَا عِبَادِى إِنِّى حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِى وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلاَ تَظَالَمُوا».

    ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং একে তোমাদের মাঝেও হারাম করেছি। অতএব তোমরা পরস্পর জুলুম করো না।’ [মুসলিম : ৬৭৩৭]

    মানবেতিহাসের পরতে পরতে ইনসাফ নির্মূল হয়েছে। শেকড় গেড়েছে জুলুম ও অত্যাচার। শাসকরা যুগে যুগে জুলুম-অত্যাচার করেছে প্রজাদের ওপর। সবল নিপীড়ন চালিয়েছে দুর্বলের ওপর। বস্তুত পূর্ববর্তী জাতিগুলো ধ্বংস হয়েছে কেবল তাদের জুলুম ও উদ্ধত আচরণের কারণেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

    ﴿ وَلَقَدۡ أَهۡلَكۡنَا ٱلۡقُرُونَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَمَّا ظَلَمُواْ ﴾ [يونس: ١٣]

    ‘আর অবশ্যই আমি তোমাদের পূর্বে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি, যখন তারা জুলুম করেছে।’ {সূরা ইউনুস, আয়াত : ১৩}

    আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,

    ﴿ فَتِلۡكَ بُيُوتُهُمۡ خَاوِيَةَۢ بِمَا ظَلَمُوٓاْۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ ٥٢ ﴾ [النمل: ٥٢]

    ‘সুতরাং ওসব তাদের বাড়ি-ঘর, যা তাদের জুলুমের পরিণতিতে বিরান হয়ে আছে’। {সূরা আন-নামল, আয়াত : ৫২}

    নমরুদ-ফিরাউনের প্রেতাত্মা সর্বকালেই চেষ্টা করেছে শাসক ও পরিচালকদের কাঁধে সওয়ার হতে। তাই পূর্ব থেকেই সতর্ক করা হয়েছে জুলুমের এই অপরিদর্শী পথ থেকে। কিন্তু ইতিহাসের সবচে বড় শিক্ষা কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। পৃথিবীর ধ্বংসপ্রাপ্ত বহুজাতির ইতিহাস রোমন্থনও পারে না তাই মানুষকে নিপীড়ন-নিষ্পেষণের নিন্দিত পথ থেকে বিরত রাখতে। অত্যাচারীরা সব সময়ই নিজের শক্তির মরীচিকার ধন্দে পড়ে অত্যাচার চালিয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিচ্ছেন,

    ﴿ وَأَنذِرۡهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡأٓزِفَةِ إِذِ ٱلۡقُلُوبُ لَدَى ٱلۡحَنَاجِرِ كَٰظِمِينَۚ مَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ حَمِيمٖ وَلَا شَفِيعٖ يُطَاعُ ١٨ ﴾ [غافر: ١٨]

    ‘আর তুমি তাদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করে দাও। যখন তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে দুঃখ, কষ্ট সংবরণ অবস্থায়। অত্যাচারীদের জন্য নেই কোনো অকৃত্রিম বন্ধু, নেই এমন কোনো সুপারিশকারী যাকে গ্রাহ্য করা হবে। {সূরা আল-মু’মিন, আয়াত : ১৮}

    আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِن نَّصِيرٖ ٧١ ﴾ [الحج: ٧١]

    ‘আর যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই’। {সূরা আল-হজ, আয়াত : ৭১}

    শুধু শাসক বা উপরস্থ পর্যায়েই নয়, আমাদের ব্যক্তি জীবন থেকে নিয়ে প্রতিটি স্তরে জুলুম পরিহার করতে হবে। যে কোনো ধরনের অনাচার থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় সবাইকে একদিন এমন বিচারকের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে যার কাছে কোনো কারচুপি বা দুর্নীতি করে বাঁচার সুযোগ নেই। যিনি সব শাসকের শাসক এবং সব বিচারকের নির্ভুল বিচারক। কিয়ামতের সেই দিনটির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক হাদীসে। জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

    « اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ».

    ‘তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাকো, কারণ জুলুম কিয়ামতের দিন অনেক অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’ [মুসলিম : ৬৭৪১]

    অত্যাচারী যখন অন্যের প্রতি অনাচার চালায় তখন তার মনে হয় সেই বুঝি সর্বেসর্বা। তার শক্তি ও ক্ষমতা বুঝি চিরস্থায়ী। সে ভুলে যায় যে ওই অসহায় লোকটির পক্ষে আর কেউ না থাকুক, সর্বদ্রষ্টা ও সর্বশ্রোতা আসমানের অধিপতি রয়েছেন। মানুষের অক্ষমতা ও শক্তির দৌড় কতটুকু তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

    ﴿وَلَا تَمۡشِ فِي ٱلۡأَرۡضِ مَرَحًاۖ إِنَّكَ لَن تَخۡرِقَ ٱلۡأَرۡضَ وَلَن تَبۡلُغَ ٱلۡجِبَالَ طُولٗا ٣٧﴾ [الاسراء: ٣٧]

    ‘আর যমীনে বড়াই করে চলো না; তুমি তো কখনো যমীনে ফাটল ধরাতে পারবে না এবং উচ্চতায় কখনো পাহাড় সমান পৌঁছতে পারবে না।’ {সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ৩৭}

    ঘুড়ি যেমন আকাশে ওড়ার সময় নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে। মনে হয় পুরো আকাশই যেন তার। তাকে আর কারো হাতে বন্দি কিংবা কারো অধীন হতে হবে না। বাতাসের তালে তালে ইচ্ছে মাফিক কেবল সে ডানে-বামে উড়তে থাকে। অথচ তখন সে বেমালুম ভুলে যায় যে তার সুতোর গোড়া বাঁধা সেই নাটাইয়ে। তার স্বাধীনতা মূলত ঘুড়ি চালকের ইচ্ছার অধীন। মানুষও তেমনি জুলুম করার সময় নিজের অক্ষমতা ও ক্ষণস্থায়ীত্বের কথা বিস্মৃত হয়ে যায়। দয়াময় আল্লাহ মানুষকে বারবার সুযোগ দেন জুলুম-অত্যাচার থেকে নিজেকে শুধরে নিতে। জুলুমের পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে। তারপরও যদি সে ফিরে না আসে তখন তার ও সব কিছুর স্রষ্টা আল্লাহ তাকে পাকড়াও করেন। তখন অত্যাচারীর কোনো শক্তি বা ফন্দিই আর কাজে আসে না।

    আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    « إِنَّ اللَّهَ لَيُمْلِى لِلظَّالِمِ حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ » .

    ‘আল্লাহ জালেমকে অবকাশ দেন। অবশেষে যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তার পলায়নের অবকাশ থাকে না।’ [বুখারী : ৪৬৮৬]

    আর যদি দুনিয়াতে কোনো কারণে সে পারও পেয়ে যায়, আখেরাতে কিন্তু তার পার পাওয়ার সুযোগ নেই, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱللَّهَ غَٰفِلًا عَمَّا يَعۡمَلُ ٱلظَّٰلِمُونَۚ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمۡ لِيَوۡمٖ تَشۡخَصُ فِيهِ ٱلۡأَبۡصَٰرُ ٤٢ مُهۡطِعِينَ مُقۡنِعِي رُءُوسِهِمۡ لَا يَرۡتَدُّ إِلَيۡهِمۡ طَرۡفُهُمۡۖ وَأَفۡ‍ِٔدَتُهُمۡ هَوَآءٞ ٤٣ ﴾ [ابراهيم: ٤٢، ٤٣]

    “আর আপনি কখনো মনে করবেন না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ গাফিল, তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু হবে স্থির। ভীত-বিহ্বল চিত্তে উপরের দিকে তাকিয়ে তারা ছুটোছুটি করবে, নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে উদাস”[সূরা ইবরাহীম, ৪২-৪৩]

    বস্তুত সামাজিক শান্তি ও রাষ্ট্রীয় অগ্রগতি অর্জন কেবল তখনই সম্ভব, যখন ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের প্রতি ইসলামের অনুপম সাম্যের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবে রূপায়িত হবে। ইসলামে শ্রম যদি হয় ব্যক্তির দায়িত্ব, তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব আগ্রহী প্রতিটি ব্যক্তির জন্য কর্মের সংস্থান করা। ব্যক্তির যদি দায়িত্ব হয় কাজে নিষ্ঠার পরিচয় দেয়া, তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পদ ও মালিকানার সুষম বণ্টন করা। কাজ যদি হয় উৎপাদনের প্রধান স্তম্ভ তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো, যারা কাজের মান বাড়াবে এবং তার প্রতি যত্ন নেবে। শ্রমিক যদি হয় প্রকৃত সম্পদ, তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব খেটে খাওয়া লোকগুলোর ওপর চলমান জুলুম বন্ধ করা। তাদের মজুরি বৃদ্ধি এবং সমান সুযোগ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের জুলুম ও অনাচার থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।

    ক্যাটাগরিসমূহ