القرآن الكريم : المعجزة الكبرى
أعرض المحتوى باللغة الأصلية
مقالة مترجمة إلى اللغة البنغالية، تبين أن القرآن الكريم هو المعجزة الكبرى، وهو الدليل الصارخ على وجود الله - تعالى -، وصدق رسالة النبي محمد - صلى الله عليه وسلم -، وما جاء به من الشريعة السمحاء.
আল-কুরআন: একটি মহা মু'জিযা
ড. সা'ঈদ ইবন আলী ইবন ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী
অনুবাদক : মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
القرآن الكريم : المعجزات الكبرى
(باللغة البنغالية)
د/ سعيد بن علي بن وهف القحطاني
ترجمة: أختر الزمان محمد سليمان
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা.............
আল-কুরআনুল কারীম অবিসংবাদিতভাবে সর্ববৃহৎ মু'জিযা। আল্লাহর অস্তিত্ব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত এবং তিনি যে বিশুদ্ধ শরী'আহ নিয়ে এসেছেন তার সত্যতা প্রমাণের জন্য আল-কুরআনই যথেষ্ট। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই আলোচনা সাজানো হয়েছে।
আল-কুরআন: একটি মহা মু'জিযা
আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দুরূদ ও সালামের পর।
হে আল্লাহর বান্দাগণ, মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্যায়ন ও সমর্থনকারী অসংখ্য মু'জিযা দান করেছেন। সেগুলো তাঁর নবুওয়াতকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে।
আরবি পরিভাষায় মু'জিযা বলা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও চ্যালেঞ্জের সময় প্রতিপক্ষ যার উত্তর দিতে অপারগ হয়ে যায়।[1]
মু'জিযা এমন এক আশ্চর্যজনক জিনিস, যা সকল মানুষ সম্মিলিতভাবে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে চেষ্টা করলেও তার মতো আরেকটি জিনিস বানাতে সক্ষম নয়, আল্লাহ তা'আলা নবুওয়াতের জন্য যাকে নির্বাচন করেন কেবল তাকেই তা দান করেন। যাতে সেটি তাঁর নবুওয়াতের দলীল হয় এবং রিসালাতের সঠিকত্ব প্রমাণিত হয়।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর আল্লাহ তা'আলার নাযিলকৃত কালাম। এটিই তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ মু'জিযা, যা সদা সর্বত্র বিদ্যমান, পূর্বের এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত পরের সব সময়ের জন্য মু'জিযা।[2]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنَ الأَنْبِيَاءِ نَبِيٌّ إِلَّا أُعْطِيَ مِنَ الآيَاتِ مَا مِثْلُهُ أُومِنَ، أَوْ آمَنَ، عَلَيْهِ البَشَرُ، وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُ وَحْيًا أَوْحَاهُ اللَّهُ إِلَيَّ، فَأَرْجُو أَنِّي أَكْثَرُهُمْ تَابِعًا يَوْمَ القِيَامَةِ».
“প্রত্যেক নবীকেই তার মতো করে কোনো না কোনো মু'জিযা দেওয়া হয়েছে, তার ওপর লোকেরা ঈমান এনেছে। আর আমাকে যা দেওয়া হয়েছে তা হলো অহী, আল্লাহ তা'আলা আমার ওপর প্রত্যাদেশ দিয়েছেন। আমি আশা করি কিয়ামতের দিন তাদের চেয়ে আমার অনুসারী বেশি হবে।"[3]
এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য এই নয় যে, কুরআনের মধ্যেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু'জিযা সীমাবদ্ধ। এটাও উদ্দেশ্য নয় যে, তাকে এমন কোনো মু'জিযা দেওয়া হয় নি, যা স্পর্শ করা যায়; বরং উদ্দেশ্য হলো কুরআনুল কারীম এমন এক অভিনব মু'জিযা, যা কেবল তাকেই দেওয়া হয়েছে আর কাউকে দেওয়া হয় নি। কেননা প্রত্যেক নবীকে এমন মু'জিযা দেওয়া হয়েছিল যা শুধু তার সাথেই খাস ছিল, তার মাধ্যমে যাদের নিকট তাকে পাঠানো হয়েছিল তাদেরকেই শুধু চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। প্রত্যেক নবীর মু'জিযা তার জাতির অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এ কারণে মূসা আলাইহিস সালামের কওমের মধ্যে যখন জাদু বিদ্যা ছড়িয়ে পড়েছিল তখন তিনি তাদের নিকট লাঠি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলেন এবং লাঠির মাধ্যমে তাই বানাতে লাগলেন, তারা জাদু দিয়ে যা বানাত। কিন্তু মূসা আলাইহিস সালামের জাদু তারা যা বানাল তা খেয়ে ফেলল। অর্থাৎ তার জাদু হুবহু তাদের জাদুর মতো হলো না।
যখন চিকিৎসা বিদ্যা খুবই উন্নতি লাভ করল, তখন ঈসা আলাইহিস সালাম আবির্ভূত হলেন এমন চিকিৎসা বিদ্যা নিয়ে যা দেখে সে সময়ের সকল চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা হতভম্ব হয়ে গেল। কারণ, তিনি দেখালেন তার বিদ্যা দিয়ে তিনি মৃতকে জীবিত করতে পেরেছেন, কুষ্ঠ ও বধির রুগীকে সুস্থ করতে পেরেছেন।
আর কাজগুলোর ধরন তাদের কাজের মতোই ছিল; কিন্তু তাদের ক্ষমতা ঈসা আলাইহিস সালামের ক্ষমতার মতো শক্তিশালী ও কার্যকর ছিল না।
আরবের লোকেরা যখন ভাষার অলংকারের উচ্চ শিখরে পৌঁছে গেল তখন আল্লাহ তা'আলা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মু'জিযাস্বরূপ এমন এক কুরআন দিলেন, যার প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ বলছেন,
﴿لَّا يَأۡتِيهِ ٱلۡبَٰطِلُ مِنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَلَا مِنۡ خَلۡفِهِۦۖ تَنزِيلٞ مِّنۡ حَكِيمٍ حَمِيدٖ ٤٢﴾ [فصلت: ٤٢]
“বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না, না সামনে থেকে, না পিছন থেকে। এটি প্রজ্ঞাময়, সপ্রশংসিতের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।" [সূরা ফুস্সিলাত, আয়াত: ৪২]
কিন্তু কুরআন বিষয়ক মু'জিযা অন্য সমস্ত মু'জিযা থেকে আলাদা। এটি চলমান দলীল, যুগ যুগ ধরে আবহমান থাকবে। অন্যান্য নবীদের প্রমাণাদি তাদের যুগ শেষ হওয়ার সাথে সাথে শেষ হয়ে গেছে। সে সম্পর্কে শুধু সংবাদই জানা যায় বাস্তবে অবশিষ্ট তার কিছুই নেই। আর কুরআন এখনো প্রমাণ হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে শ্রোতা যেন এখনো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ থেকে শুনছে। আর চলমান থাকার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«فأرجو أن أكون أكثرهم تابعاً يومَ القيامة».
“আমি আশা করি কিয়ামতের দিন সকলের চেয়ে আমার অনুসারী বেশি হবে।"[4]
কুরআনুল কারীম স্পষ্ট দলীল, এটি অনেক দিক দিয়ে মু'জিযা। যেমন, শাব্দিক দিক দিয়ে, গাথুনির দিক দিয়ে, বালাগাতের দিক দিয়ে অর্থাৎ শব্দ তার ব্যাপক অর্থের ওপর দালালাত করার দিক দিয়ে। ঐ সমস্ত অর্থের দিক দিয়েও মু'জিযা, যার নির্দেশ আল্লাহ তা'আলা করেছেন এবং সেসব অর্থের বিবেচনায়ও যা দ্বারা আল্লাহ তা'আলা তাঁর নাম ও গুণ সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া হয়েছে।
কুরআনের অলৌকিকত্বের আরও আছে তার ভাষার অলংকার, বর্ণনাভঙ্গি ও বাক্য গঠনপ্রণালী। সমস্ত মানুষ ও জিন্নকে এসব বিষয় দ্বারা চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তারা এর মতো রচনা করতে অপারগ হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨﴾ [الاسراء: ٨٨]
“বলুন, যদি মানুষ ও জিন্ন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না, যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়।" [সূর আল-ইসরা, আয়াত: ৮৮]
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,
﴿أَمۡ يَقُولُونَ تَقَوَّلَهُۥۚ بَل لَّا يُؤۡمِنُونَ ٣٣ فَلۡيَأۡتُواْ بِحَدِيثٖ مِّثۡلِهِۦٓ إِن كَانُواْ صَٰدِقِينَ ٣٤﴾ [الطور: ٣٣، ٣٤]
“তারা কি বলে, সে এটা বানিয়ে বলছে? বরং তারা ঈমান আনে না। অতএব, তারা যদি সত্যবাদী হয় তবে তার অনুরূপ বানিয়ে নিয়ে আসুক।" [সূরা আত-তূর, আয়াত: ৩৩-৩৪]
এ চ্যালেঞ্জের পর অনেকদিন অতিবাহিত হয়েছে তারা কেউ এগিয়ে আসে নি, তাদের রশি আরো ঢিল করে দিয়ে আল্লাহ তা'আলা বললেন,
﴿أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِعَشۡرِ سُوَرٖ مِّثۡلِهِۦ مُفۡتَرَيَٰتٖ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١٣﴾ [هود: ١٣]
“নাকি তারা বলে, সে এটা রটনা করেছে? বলো, তাহলে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা বানিয়ে নিয়ে আসো এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে আন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।" [সূরা হূদ, আয়াত: ১৩]
তারা অপারগ হলো, তখন আল্লাহ তা'আলা তাদের রশি আরও ঢিল করে দিয়ে বললেন,
﴿أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٣٨﴾ [يونس: ٣٨]
“নাকি তারা বলে, সে তা বানিয়েছে? বলো, তবে তার মতো একটি সূরা বানিয়ে নিয়ে আসো এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।" [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩৮]
মদিনায় হিজরতের পর আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে আবার চ্যালেঞ্জ করলেন,
﴿وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّن مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ شُهَدَآءَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٢٣ فَإِن لَّمۡ تَفۡعَلُواْ وَلَن تَفۡعَلُواْ فَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِي وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُۖ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ٢٤﴾ [البقرة: ٢٣، ٢٤]
“আর আমি আমার বান্দার ওপর যা নাযিল করেছি, যদি তোমরা সে সম্পর্কে সন্দেহে থাক, তবে তোমরা তার মতো একটি সূরা নিয়ে আসো এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাক্ষীসমূহকে ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। অতএব. যদি তোমরা তা না কর -আর কখনো তোমরা তা করবে না। তাহলে আগুনকে ভয় কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩-২৪]
আল্লাহ তাআলার কথা فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا“তোমরা অতীতে পার নি এবং ভবিষ্যতেও কখনো পারবে না" -এর মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ প্রমাণিত হয়ে গেছে। তারা পারবে না কুরআনের সূরার মতো একটি সূরা বানিয়ে আনতে পরবর্তী যুগেও। যেমন, ইতোপূর্বে এর সংবাদ দেওয়া হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলেছিলেন যখন তিনি মক্কায় ছিলেন, তিনি বলেছিলেন:
﴿قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨﴾ [الاسراء: ٨٨]
“বল, যদি মানুষ ও জিন্ন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়।" [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৮৮]
আল্লাহ তা'আলা রাসূলকে সাধারণভাবে নির্দেশ করার কারণে তাঁর মাধ্যমে সমস্ত সৃষ্টিজীবকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে তাদের অপারগতার কথা বলা হয়েছে এই বলে যে, এ কাজে তারা সকলে যদি একত্রিতও হয় এবং পরস্পর সাহায্য সহযোগিতা করে তা সত্ত্বেও তারা পারবে না। এই চ্যালেঞ্জ সমস্ত সৃষ্টির জন্য। যারা কুরআন শুনেছে ও বুঝেছে, চাই বিশেষ লোক হোক বা সাধারণ লোক, রাসূলের নবুওয়াত লাভের দিন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কেউ একটিমাত্র সূরাও তার মতো বানিয়ে নিয়ে আসতে পারে নি।
পবিত্র কুরআনে হাজার হাজার মু'জিযা রয়েছে। কেননা, তার সূরার সংখ্যা ১১৪টি। চ্যালেঞ্জ তো দেওয়া হয়েছে একটি সূরা দিয়ে। তার সবচেয়ে ছোট সূরা হলো, সূরা আল-কাউসার। যার আয়াত সংখ্যা মাত্র তিনটি, আয়াত তিনটিও অতি ছোট বটে। ছোট বড় মিলে কুরআনের আয়াত সংখ্যা মোট ছয় হাজার দু'শটি। এ হিসাবে চ্যালেঞ্জ গণনা করলে কত হবে একবার চিন্তা করে দেখুন। এ জন্য কুরআনুল কারীম অন্য সমস্ত মু'জিযা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যে ব্যক্তি অন্তরচক্ষু দিয়ে দেখবে এবং ভালো করে শুনবে তার কাছে এ বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে।
আল-করআন মু'জিয হওয়ার এটিও একটি দিক যে, এর মধ্যে অনেক অদৃশ্য-গায়েবের কথা আছে, যার জ্ঞান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছিল না। আর তাঁর মত মানুষের এগুলো জানারও কোনো রাস্তা ছিল না। এটাই প্রমাণ করে যে, তা আল্লাহ তা'আলার বাণী, বিষয়টি কারো নিকটই অস্পষ্ট নয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةٖ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡأَرۡضِ وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٥٩﴾ [الانعام: ٥٩]
“আর তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না এবং তিনি অবগত রয়েছেন স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে। আর কোনো পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন এবং জমিনের অন্ধকারে কোনো দানা পড়ে না, না কোনো ভিজা এবং না কোনো শুস্ক; কিন্তু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।" [সুরা আল-আন'আম, আয়াত: ৫৯]
গায়েব সম্পর্কে সংবাদের অনেকগুলো প্রকার রয়েছে:
অতীতের অদৃশ্য সংবাদ, যা সুন্দর সুন্দর ঘটনাবলীর মধ্যে ফুটে উঠেছে। আল্লাহ অতীত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সংবাদ দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্তমানকালীন গায়েবী বিষয়সমূহের সংবাদ: যেমন, মুনাফিকদের ভিতরগত অবস্থা, এ সম্বন্ধে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় রাসূলকে অবগত করতেন। সেসব ভুলচুক মুসলিমগণ মাঝে মধ্যে যাতে জড়িয়ে যেতেন আর মহান আল্লাহ সে বিষয়ে রাসূলকে জানিয়ে দিতেন। এছাড়া আরো অনেক বিষয় যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানতেন না, তিনি সেসব বিষয়ে রাসূলকে অবগত করতেন।
গায়েবের আরেকটি দিক, ভবিষ্যতে সংঘটিতব্য বিষয়াবলীর সংবাদ। আল্লাহ তা'আলা সেসব বিষয়াদি সম্বন্ধেও তাঁর রাসূলকে জানিয়ে দিতেন। তিনি যেভাবে সংবাদ দিতেন পরে তা সেভাবে সঙ্ঘটিত হত। এ বিষয়গুলো এ কথারই প্রমাণ বহন করে যে, পবিত্র কুরআন আল্লাহ তা'আলার কালাম, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রাসূল।
কুরআনুল কারীমের অলৌকিকত্বের মধ্যে শরী'আতের বিধান বিষয়ক অলৌকিকত্বও আছে: করআনুল কারীম পরিপূর্ণ হিদায়াত ও দিক-নির্দেশনা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে। সর্বযুগের সর্বস্থানে সকল শ্রেণির মানুষের সকল প্রয়োজন পূরণ করার যাবতীয় দিক নির্দেশনা রয়েছে তাতে। কেননা, যিনি অবতীর্ণ করেছেন তিনি মানবকুলের যাবতীয় প্রয়োজন, সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। তিনি সকলের সৃষ্টিকর্তা, তাদের সুবিধা-অসুবিধা, কিসে তাদের কল্যাণ আর কিসে অকল্যাণ সে বিষয়ে পরিপূর্ণরূপে জানেন। সুতরাং যখন কোনো বিধান তাঁর পক্ষ থেকে এসেছে তা পূর্ণ প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এসেছে।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿أَلَا يَعۡلَمُ مَنۡ خَلَقَ وَهُوَ ٱللَّطِيفُ ٱلۡخَبِيرُ ١٤﴾ [الملك: ١٤]
“যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষ্মদর্শী, পূর্ণ অবহিত।" [সূরা আল-মুলক, আয়াত: ১৪]
মানব প্রণীত আইন-কানূনের দিকে দৃষ্টি দিলে এ বিষয়টি আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে যায়। সে আইন-কানূন মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারে না এবং সর্ব যুগে বা স্থানে চলে না। যার কারণে তার প্রণয়নকারীরা সব সময় তার মধ্যে পরিবর্তন পরিবর্ধন ও বাড়াতে কমাতে থাকে। গতকালের বানানো আইন আজ অচল, আজকের প্রণীতটি আগামীকাল অকেজো, এ হচ্ছে মানব রচিত আইনের অবস্থা। তার কারণ মানুষের মধ্যে ভুল-ত্রুটি-অজ্ঞতা রয়েছে, তারা জানে না কাল পৃথিবীর মধ্যে কি পরিবর্তন আসবে, কোথায় কোন কোন জিনিস তাদের উপযোগী হবে আর কোন কোনটি অনুপযোগী হবে?
আর এটাই হলো মানুষের অপারগ হওয়ার প্রকাশ্য দলীল, তারা এমন অইন বানাতে পারে না যা সকল মানুষের জন্য উপযোগী ও প্রযোজ্য হবে এবং তাদের স্বভাব-চরিত্রকে শুধরাবে। অপর দিকে পবিত্র কুরআন সর্বপ্রকার ত্রুটি থেকে মুক্ত, মানুষের স্বার্থ রক্ষার জিম্মাদার। তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের যুগপৎ কল্যাণের দিকেই পথপ্রদর্শন করে। মানুষ যদি সর্বতোভাবে কুরআনকে আঁকড়ে ধরে এবং কুরআনের হিদায়াতের ওপর চলে তাহলে তাদের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ সুনিশ্চিত।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَمُ وَيُبَشِّرُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ أَجۡرٗا كَبِيرٗا ٩﴾ [الاسراء: ٩]
“নিশ্চয় এ কুরআন এমন একটি পথ দেখায় যা সবচেয়ে সরল এবং যে মুমিনগণ নেক আমল করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।" [সূরা আল-ইসরা. আয়াত: ৯]
মোটকথা, আল্লাহ তা'আলার কিতাব যেসব শর'ঈ বিধি-বিধান দিয়েছে, তার ভিত্তি তিনটি উপকরণের ওপর:
প্রথম উপকরণ:
ছয়টি জিনিসের ওপর থেকে অনিষ্ট দূর করা: সত্তা, জ্ঞান, ধর্ম, বংশ, সম্মান ও সম্পদ হিফাযত করা।
দ্বিতীয় উপকরণ:
উপকার আহরণ করা। কুরআনুল কারীম সব কিছু থেকে উপকার বের করে আনার দরজা খোলা রেখেছে আর ঐ সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে যা ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়।
তৃতীয় উপকরণ:
উত্তম চরিত্রের ওপর চলা এবং ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা।
কুরআনুল কারীম ঐ সমস্ত আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান করেছে যা সমস্ত মানুষ করতে অপারগ হয়েছে।
দুনিয়া ও আখিরাতে মানুষের প্রয়োজন হবে। আর কুরআন তার জন্য নিয়ম-নীতি বলে নি এমনটি কোনো ক্ষেত্রেই হয় নি; বরং আল কুরআন মানুষের জন্য সেসব প্রয়োজনের সবচেয়ে উপযোগী ও সর্বাধিক সুন্দর পদ্ধতি বলে দিয়েছে।
কুরআনের অলৌকিকত্বের মধ্যে বর্তমান যুগের আধুনিক বিজ্ঞানের অলৌকিকত্বও রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿سَنُرِيهِمۡ ءَايَٰتِنَا فِي ٱلۡأٓفَاقِ وَفِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمۡ أَنَّهُ ٱلۡحَقُّۗ أَوَ لَمۡ يَكۡفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُۥ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ ٥٣﴾ [فصلت: ٥٣]
“বিশ্বজগতে ও তাদের নিজেদের মধ্যে আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব যাতে তদের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, এটি (কুরআন) সত্য। তোমার রবের জন্য এটাই যথেষ্ট নয় কি যে, তিনি সকল বিষয়ে সাক্ষী? [সূরা ফুস্সিলাত, আয়াত: ৫৩]
অনেক পরে এসে আমাদের রবের পক্ষ থেকে এ অঙ্গীকারও পূর্ণ হয়েছে, মানুষ সৃষ্টি জীবের মধ্যে সূক্ষ্ম যন্ত্র দ্বারা আল্লাহর নিদর্শন দেখতে পেরেছে। যেমন উড়োজাহাজ, সাবমেরিন ইত্যাদি সূক্ষ্ম যন্ত্র, যেগুলোর মালিক হয়েছে মানুষ মাত্র কিছুদিন আগে।
এ সমস্ত গায়েবী বিষয় সম্পর্কে ১৪৩০ বছর পূর্বে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কে সংবাদ দিয়েছিল? আল-কুরআন আল্লাহর কালাম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সত্য রাসূল এটা তার প্রকৃষ্ট দলীল। আর এ বৈজ্ঞানিক অলৌকিকত্ব প্রমাণিত হয়েছে পৃথিবীতে, আকাশে, সমুদ্রে, মানুষের মধ্যে, জিব-জন্তুতে, বৃক্ষ তরুলতাতে, পোকা-মাকড় ইত্যাদিতে। সব উদাহরণ দিতে গেলে এখানে জায়গা সংকুলান হবে না।
সর্বশেষ কুরআনের সেই বিখ্যাত আয়াতকে স্মরণ করেই লেখার ইতি টানছি যাতে মহান আল্লাহ দাবি করে বলেছেন, জিন্ন-ইনসান সকলে মিলে চেষ্টা করলেও এ কুরআনের অনুরূপ বানাতে পারবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨﴾ [الاسراء: ٨٨]
“বলুন, যদি মানুষ ও জিন্ন এ কুরআনের অনুরূপ কিছু আনয়ন করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ কিছু আনতে পারবে না, যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৮৮]
সমাপ্ত