كيف نربي أولادنا
أعرض المحتوى باللغة الأصلية
مقالة باللغة البنغالية، تبين أهمية تربية الأبناء، ومغبة التهاون في هذا الأمر المهم، وتشير إلى طرقها، ووسائلها بإيجاز واختصار.
কীভাবে আমরা সন্তানদের লালন-পালন করব
আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
كيف نربي أولادنا
(باللغة البنغالية)
أختر الزمان محمد سليمان
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা.............
বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে সন্তান লালনের গুরুত্ব, এ বিষয়ে উদাসীনতার বিরূপ পরিণতি, সন্তান লালনের পথ ও পদ্ধতি সংক্ষেপে আলোচিত হয়েছে।
কীভাবে আমরা সন্তানদের লালন-পালন করব
সন্তানের প্রতি সকলের মায়া মমতা স্বভাবতই বেশি থাকে। তাই বলে তারা যেন বিপথগামী না হয় সেদিকে সকলের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا﴾ [التحريم: ٦]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিজনদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৬৬]
মাতা-পিতা, শিক্ষক তথা সমাজের সকলেরই আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে সন্তানদের গঠন করার ব্যাপারে। যদি তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তবে সন্তানরা সুখী হবে এবং অন্যরাও দুনিয়া ও আখিরাতে সুখী হবে যদি তাকে উত্তমভাবে গড়ে না তোলা হয় তবে সে দুর্ভাগা হবে। ফলে, তার পাপের ভার অন্যদের ওপরও বর্তাবে। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«كلُّكُم رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ»
“তোমরা প্রত্যেকেই দেখাশুনাকারী, আর এ দেখাশুনার ব্যাপারে প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে”।[1]
হে শিক্ষক! আপনার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেওয়া সুসংবাদ শ্রবণ করুন,
«فَوَاللَّهِ لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا، خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ»
“যদি তোমার দ্বারা কোনো একজন ব্যক্তিও হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, তবে তা তোমার জন্য একটি লাল উটনী পাওয়ার চেয়েও উত্তম”।[2]
আর হে অভিভাবকগণ! আপনাদের জন্যও কতই না উত্তম সুসংবাদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: صَدَقَةٌ جَارِيَةٌ، وَعِلْمٌ يُنْتَفَعُ بِهِ، وَوَلَدٌ صَالِحٌ يَدْعُو لَهُ»
“যখন কেউ মারা যায়, তখন তিন ধরনের আমল ব্যতীত অন্যান্য সমস্ত আমলের সাওয়াব বন্ধ হয়ে যায়; সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম এবং নেককার সন্তান, যে তার জন্য দো‘আ করে”।[3]
তাই হে আমার মুরব্বী! প্রথমে নিজের সংশোধনে সচেষ্ট হউন, অন্যান্য কর্মের আগেই। সন্তানদের সম্মুখে আপনি যে ভালো কাজ করবেন তাই উত্তম। যা খারাপ তা পরিত্যাগ করুন। যদি শিক্ষক ও পিতামাতা তাদের সন্তানদের সম্মুখে উত্তম চরিত্র ও ব্যবহারে আদর্শবান হন, তবেই তারা উত্তম শিক্ষা পাবে। তাই নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের ব্যাপারে আমাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখা অতীব প্রয়োজন।
১। প্রথমে বাচ্চাদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তথা তাওহীদ শিক্ষা দেওয়া। অতঃপর যখন তারা বড় হবে, তখন তাদের এই কালেমার অর্থ শিক্ষা দেওয়া।
২। সর্বদা সন্তানের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে আন্তরিক হওয়া। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, রিযিক প্রদান করেন, বিপদ থেকে উদ্ধার করেন এবং তিনি এক ও তাঁর কোনো শরীক নেই তিনিই মা‘বূদ এবং ইবাদত পাওয়ার যোগ্য।
৩। সন্তানদের জান্নাতে প্রবেশের ব্যাপারে উদ্ধুদ্ধ করা এবং জানিয়ে দেওয়া যে, যারা সালাত আদায় করবে, সাওম পালন করবে, মাতা-পিতার বাধ্য থাকবে, আর আল্লাহ যাতে রাযী খুশী হন সে সব কাজ করবে, তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাথে সাথে তাদেরকে জাহান্নামের ব্যাপারে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে হবে। আর তাদের উপদেশ দিয়ে বলতে হবে- যারা সালাত আদায় করে না, মাতা পিতার অবাধ্য আচরণ করে, আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে, আল্লাহ প্রদত্ত শরী‘আতী ব্যবস্থা ত্যাগ করে মানুষের তৈরি আইন দ্বারা বিচার কাজ সম্পন্ন করে আর অন্যদের ধন-দৌলত ধোঁকা দিয়ে, মিথ্যা কথা বলে, সুদের মাধ্যমে অথবা অন্যান্য উপায়ে আত্মসাৎ করে- তারাই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
৪। সর্বদা বাচ্চাদের এ শিক্ষা দিতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নিকট দো‘আ করতে হবে এবং একমাত্র তাঁরই নিকট সাহায্য চাইতে হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচাতো ভাই ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে বলেছেন,
«إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ»
“যদি কোনো দো‘আ কর, একমাত্র আল্লাহর নিকটই কর, যদি কোনো সাহায্য চাও, একমাত্র তাঁরই নিকট চাও”।[4]
সন্তানদের সালাত শিক্ষা দেওয়া
১। অল্প বয়সেই ছেলে মেয়েদেরকে সালাত শিক্ষা দেওয়া ওয়াজিব, যাতে বড় হলে সর্বদা তা আদায় করতে সচেষ্ট হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্বন্ধে বলেছেন,
«مُرُوا صِبْيَانَكُمْ بِالصَّلَاةِ ، إِذَا بَلَغُوا سَبْعًا وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، إِذَا بَلَغُوا عَشْرًا، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ»
“যখন সন্তানরা সাত বছরে পদার্পন করে তখনই তাদেরকে সালাতের আদেশ কর। আর দশ বছর অতিক্রান্ত হলে সালাতের জন্য প্রহার কর জন্য আলাদা আলাদা বিছানার ব্যবস্থা কর”।[5]
তা‘লীমের মধ্যে আছে -তাদের অযু শিক্ষা দেওয়া ও তাদের সম্মুখে সালাত আদায় করা, যা দেখে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তাদেরকে সাথে নিয়ে মসজিদে গমন করা। আর তাদের ঐ সমস্ত কিতাব পড়তে উদ্বুদ্ধ করা যাতে সালাতের সহীহ নিয়মাবলি লিপিবদ্ধ আছে, যেন পরিবারের সকলে সালাতের নিয়মাবলি শিক্ষা করতে পারে। এটা শিক্ষক ও পিতামাতা উভয়েরই দায়িত্ব। যদি এতে কোনো গাফিলতি করা হয়, তাহলে এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
২। সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দান করা। প্রথমে সূরা ফাতিহা এবং তার বাংলা অর্থ ও অন্যান্য ছোট সূরাসমূহ শিক্ষা দিতে হবে। সালাতের জন্য আত্তাহিয়্যাতু, দুরূদ এবং অন্যান্য দো‘আ শিক্ষা দিতে হবে। তাদের তাজবীদ ও কুরআন হিফয ও হাদীসের শিক্ষা দানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
৩। সন্তানদের জুমু‘আ ও মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা। যদি মসজিদে গিয়ে তারা কোনো ভুল-ত্রুটি করে তবে মিষ্টি ভাষায় তাদের ভুল সংশোধন করে দেওয়া। তাদের কোনো ধমক বা ভর্ৎসনা না করা, যে কারণে ঐ অজুহাতে তারা সালাতকে পরিত্যাগ করে। ফলে উক্ত কারণে আমরা অপরাধী হয়ে যাব। যদি আমরা আমাদের শৈশবের ভুল-ত্রুটি ও খেল-তামাশার কথা স্মরণ করি, তাহলে সহজেই তাদের ক্ষমা করতে পারব।
হারাম কাজ থেকে নিবৃত্ত রাখা
১। সন্তানদের সর্বদা কুফুরী কালাম, গালি দেওয়া, অভিশাপ দেওয়া এবং আজে-বাজে কথা বলা থেকে উপযুক্ত উপদেশের মাধ্যমে নিবৃত্ত রাখতে হবে। আর মিষ্টি ভাষায় তাদের এটা শিক্ষা দিতে হবে যে, কুফুরী কাজ হারাম; এর ফলে চিরস্থায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। তাদের সম্মুখে সর্বদা আমাদের জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে, যাতে আমরা তাদের সম্মুখে উত্তম আদর্শ হতে পারি।
২। সন্তানদের সর্ব প্রকার জুয়া খেলা থেকে নিবৃত্ত রাখতে হবে। যেমন- তাস, পাশা, দাবা, লুডু, কেরাম ইত্যাদি। যদিও শুরুতে সাধারণভাবেই সময় কাটানোর জন্য খেলা করা হোক না কেন, পরিণামে তা জুয়ায় রূপান্তরিত হয়। ফলে একে অন্যের সাথে শত্রুতার সৃষ্টি হয়। তা তাদের ব্যক্তিগত টাকা-পয়সা ও সময়কে নষ্ট করে এবং সাথে সাথে সালাত নষ্টকারী কাজও বটে।
৩। সন্তানদের আজেবাজে পত্রিকা পড়া থেকে নিবৃত্ত রাখতে হবে। সাথে সাথে অশ্লীল ছবি, ডিটেকটিভ ও যৌন গল্প পড়া থেকে নিবৃত্ত রাখতে হবে এবং ঐ জাতীয় সিনেমা, টেলিভিশন, ভিডিও দেখা থেকেও নিষেধ করতে হবে। কারণ, ঐ জাতীয় ছবিসমূহ তাদের চরিত্রকে কলুষিত ও ভবিষ্যতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে।
৪। সন্তানকে ধূমপান ও মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ব্যাপারে নিষেধ করতে হবে। আর তাকে বুঝাতে হবে যে, সমস্ত চিকিৎসকগণের মিলিত মতামত হলো, ঐ সমস্ত জিনিস শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে এবং যক্ষ্মা ও ক্যান্সারের প্রধান কারণ। ধূমপান দাঁতকে নষ্ট করে, মুখে দুর্গন্ধ আনয়ন করে এবং বক্ষ ব্যাধির কারণ হয়। এতে কোনো উপকারিতাই নেই। তাই তা পান করা ও বিক্রয় করা হারাম। এর পরিবর্তে কোনো ফল বা লবণাক্ত কোনো দ্রব্যাদি খেতে পরামর্শ দেওয়া উচিৎ।
৫। সন্তানদের সর্বদা কথায় ও কাজে সত্যবাদী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাদের সম্মুখে কখনো মিথ্যা কথা বলা যাবে না, যদিও তা হাসি ঠাট্টাচ্ছলে বলা হোক না কেন। তাদের সাথে কোনো ওয়াদা করলে তা পালনে সচেষ্ট হতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ قَالَ لصَبِيٍّ تَعالَ هَاكَ (خُذْ) ثُمَّ لَمْ يُعْطِهِ فَهِيَ كِذْبَةٌ»
“যে ব্যক্তি কোনো বাচ্চাকে বলে, এসো তোমাকে কিছু দিব। তারপর যদি তাকে না দেওয়া হয় তবে সে মিথ্যাবাদী”।[6]
৬। সন্তানদের কোনো হারাম মাল, যেমন- ঘুষ, সুদ, চুরি-ডাকাতি, ধোঁকার পয়সায় আহার করালে এবং লালন পালন করলে সেসব সন্তানরা অসুখী, অবাধ্য ও নানা ধরনের পাপে লিপ্ত হবে।
৭। সন্তানদের উপর ধ্বংসের বা গযবের দো‘আ করা উচিৎ নয়। কারণ দো‘আ ভালো ও মন্দ উভয় অবস্থাতেই কবুল হয়ে যায়। ফলে তারা আরো বেশি গোমরাহ হয়ে যাবে। বরং এ কথা বলা উত্তম যে, আল্লাহ তোমার সংশোধন করুন।
৮। আল্লাহর সাথে শির্ক করা থেকে সাবধান করতে হবে। তাদেরকে জানাতে হবে যে, মৃত কোনো ব্যক্তির নিকট দো‘আ চাওয়া, তাদের নিকট কোনো সাহায্য ভিক্ষা করা শির্ক, তারাও আল্লাহর বান্দা, কারো কোনো ভালো কিংবা মন্দ করার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦ ﴾ [يونس: ١٠٦]
“আল্লাহ ছাড়া এমন কাউকে ডেকো না যে না তোমার কোনো উপকার করতে পারে আর না কোনো ক্ষতি করতে পারে। যদি তা কর তবে নিশ্চয় তুমি যালিমদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে “ [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬]
কাপড় দ্বারা শরীর আবৃত করা ও পর্দা করা
১। বাল্য অবস্থা থেকেই মেয়েদের শরীর আবৃত করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে, যাতে বড় হওয়ার সাথে সাথে সে এর ওপর আরো মজবুত হয়ে চলতে পারে তাকে কখনও ছোট জামা পরিধান করানো ঠিক নয় অথবা প্যান্ট বা শার্ট এককভাবে কোনোটাই পরাতে নেই। কারণ, তা কাফিরদের ও পুরুষদের পোষাকের মতো। ফলে এ কারণে অন্যান্য যুবকরা ফিতনা ও ধোঁকায় পতিত হয়। যখনই তার বয়স সাত বছর অতিক্রম করবে তখন থেকেই সর্বদা তাকে হুকুম করতে হবে রুমাল দ্বারা মস্তক আবৃত করার জন্য। তারপর যখন বালেগা (প্রাপ্তবয়স্কা) হবে, তখন তাকে মুখমণ্ডল ঢাকার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। আর এমন বোরখা পরিধান করাতে হবে যা লম্বা ও ঢিলেঢালা হবে এবং যা তার সম্মানের হিফাযত করবে। পবিত্র কুরআন মুমিনদের উৎসাহিত করছে পর্দা করার জন্য এই বলে,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩ ﴾ [الاحزاب: ٥٩]
“হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের (জিলবাব হচ্ছে এমন পোষাক যা পুরো শরীরকে আচ্ছাদিত করে) কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বাইরে ঘুরাফেরা ও বিনা পর্দায় চলাফেরা করতে নিষেধ করে বলেন,
﴿ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
২। সন্তানদের এ উপদেশ দিতে হবে যে, পুরুষরা পুরুষদের পোষাক ও মহিলারা মহিলাদের পোষাক পরিধান করবে, যাতে তাদের প্রত্যেককে আলাদা করে পার্থক্য করা যায় এবং চেনা যায়। আর তারা যেন সাথে সাথে বিধর্মীদের পোষাক পরিচ্ছদ যেমন টাইট প্যান্ট বা এ জাতীয় পোষাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য যে সব ক্ষতিকারক অভ্যাস রয়েছে তা থেকে তারা যেন বিরত থাকে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَعَنَ النَّبِيُّ صَلي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّساءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ» وفي رواية أخري «وَلَعَنَ الْمُخَنَّثِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ والْمُتَرَجِّلاتِ مِنَ النِّسَاءِ»
“আল্লাহ তা‘আলা পুরষের বেশধারী মহিলা ও মহিলাদের বেশধারী পুরুষদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেন।” অপর বর্ণনায় এসেছে, “পুরুষদের মধ্যে যারা মহিলাদের মতো চলাফেরা করে এবং মেয়েদের মধ্যে যারা পুরুষদের মতো চলাফেরা করে তাদের ওপরও আল্লাহর অভিশাপ”।[7]
অন্যত্র আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ»
“যে ব্যক্তি কোনো কাওমের অনুসরণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত”।[8]
চারিত্রিক গুণাবলী ও আদব কায়দা
১। আমরা বাচ্চাদের এমন অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করব, যাতে তারা কোনো কিছু গ্রহণ করার সময়, প্রদান করার সময়, পান করার সময়, লেখার সময় ও মেহমানদারী করার সময় ডান হাত ব্যবহার করে। আর তাদেরকে এই শিক্ষাও দিতে হবে যে প্রতিটি কাজের পূর্বে যেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। বিশেষ করে খাবার খাওয়ার সময় এবং পান করার সময়। আর খাবার গ্রহণ করবে বসা অবস্থায়। যখন খানাপিনা শেষ হয়ে যাবে তখন যেন বলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’।
২। তাদেরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকায় অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। এতে আছে- হাত পায়ের নখ ছোট করা, খাবার গ্রহণের পূর্বে ও পরে হস্তদ্বয় ধৌত করা, এমনভাবে ইস্তেঞ্জা করতে শিক্ষা দেওয়া যেন তারা প্রশ্রাবের পর টিস্যু কাগজ অথবা ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করে, অথবা পানি দ্বারা ধৌত করে, তাদের সালাত শুদ্ধ হবে এবং তাদের পোশাক পরিচ্ছদেও কোনো নাপাকি স্পর্শ করবে না।
৩। তাদেরকে গোপনে উপদেশ দান করতে হবে। যদি কোনো ভুল ত্রুটি করেও থাকে, তথাপি প্রকাশ্যভাবে অপমান করা ঠিক হবে না।
৪। যখন আযান হয়, তখন তাদের নীরব থাকতে বলা উচিৎ। আর সাথে সাথে মুয়াযযিন যা বলে তার জবাব দেওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত ও সালাম পড়তে হবে এবং উসীলার দো‘আ করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«اَللهم رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةَ وَالفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ»
“হে আল্লাহ, আপনি এ পরিপূর্ণ আহ্বানের ও সালাতের রব। অনুগ্রহ করে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উসীলা ও মর্যাদা দান করুন। আর যে প্রশংসিত স্থানের ওয়াদা আপনি করেছেন, তা তাকে দান করুন”।[9]
৫। যদি সম্ভব হয়, তবে প্রতিটি সন্তানকে আলাদা বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে অথবা গায়ের চাদর আলাদা দিতে হবে। উত্তম হচ্ছে- মেয়েদের জন্য আলাদা এবং ছেলেদের জন্য আলাদা কামরার ব্যবস্থা করা। ফলে, এটা তাদের চরিত্র ও স্বাস্থ্যের হিফাযত করবে।
৬। তাদের এমন অভ্যাস গড়তে হবে যাতে রাস্তা ঘাটে কোনো আবর্জনা না ফেলে। বরঞ্চ এই অভ্যাস করাতে হবে, যাতে সম্মুখে কখনও কোনো আবর্জনা দেখলে তা যেন দূরে সরিয়ে রাখে।
৭। খারাপ বন্ধুদের সাথে উঠাবসার ব্যাপারে সর্বদা সাবধান করতে হবে। আর রাস্তা ঘাটে তাদের অবস্থান করার ব্যাপারে সাবধান করতে হবে।
৮। সন্তানদের বাড়িতে, রাস্তায় এবং শ্রেণিকক্ষে ‘আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ’ বলে সালাম দেওয়ার অভ্যাস করাতে হবে।
৯। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ভাব রাখার ব্যাপারে উপদেশ দিতে হবে এবং তাদের কষ্ট দেওয়া থেকেও তাদেরকে বিরত রাখতে হবে।
১০। বাচ্চাদের এমন অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা মেহমানদের সম্মান করে এবং উত্তমভাবে তাদের মেহমানদারী করে।
জিহাদ ও বীরত্ব
১। মাঝে মাঝে পরিবারের লোকেরা ও ছাত্ররা একত্রে কোনো বৈঠকে বসবে। সেই বৈঠকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনী ও সাহাবীগণের জীবনী পাঠ করে শোনাতে হবে, যাতে তারা বুঝতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন নির্ভীক সেনাপতি। আর তাঁর সাহাবীগণ যেমন- আবূ বকর, উমার, উসমান, আলী, মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ সাহাবীগণ বিশ্বের বহু দেশ জয় করেছিলেন। আর তারা জয়যুক্ত হয়েছিলেন ঈমানের কারণেই এবং যুদ্ধ অবস্থায়ও আমলে সর্বদা তারা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী চলতেন। তাদের চারিত্রিক গুণাবলী ছিল অতি উচ্চ।
২। সন্তানদের গড়ে তুলতে হবে বীর মনোভাবাপন্ন হিসেবে। তারা সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ করবে। আর আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবে না। কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা গল্প ও গুজব কাহিনী দ্বারা তাদের ভীত করা ঠিক হবে না।
৩। তাদের মধ্যে এমন চেতনা জাগ্রত করতে হবে, যাতে তারা অন্যায়কারী ও যালেমদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। আমাদের যুবকরা সমাজকে যাবতীয় আবিলতা থেকে মুক্ত করতে পারবে, যদি তারা ইসলামের শিক্ষার ওপর চলে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। ইনশাআল্লাহ সফল তারা হবেই।
৪। তাদের উত্তম ইসলামি চরিত্র গঠন মূলক বই পুস্তক কিনে দিতে হবে। যেমন, কুরআনের কাহিনীসমূহ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী, সাহাবীদের ও মুসলিমদের বীরত্বগাঁথা। যেমন, শামায়েলে মুহাম্মাদীয়া, আল-আকীদা আল-ইসলামীয়া, আরকানুল ঈমান ওয়াল ইসলাম, মিনহাজ ফিরকাতুন নাজিয়াহ, ধূমপানের ব্যপারে ইসলামের হুকুম, তাওজীহাত আল ইসলামিয়াহ, দীনের জরুরী জ্ঞানসমূহ, অদ্ভুত কাহিনীসমূহ, যা হক ও বাতিলকে আলাদা করে- ইত্যাদি বই পড়তে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।
সন্তানের মাতা পিতার প্রতি কর্তব্যসমূহ
দুনিয়া আখেরাতে নাজাত পেতে হলে, নিম্নোক্ত উপদেশগুলো পালন করতে হবে-
১। মাতা পিতার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলবে। তাদেরকে উহ্ শব্দটিও পর্যন্ত বলবে না। তাদের ধমক দিবে না। আর তাদের সংগে নম্র ব্যবহার করবে।
২। সর্বদা মাতাপিতার আদেশ নিষেধ পালন করতে তৎপর হবে, তবে কোনো পাপের কাজ ব্যতীত। কারণ, স্রষ্টার সাথে কোনো পাপের কাজে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না।
৩। তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবে। কখনও তাদের সম্মুখে বেয়াদবি করবে না। কখনও তাদের প্রতি রাগের সাথে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে না।
৪। সর্বদা মাতাপিতার সুনাম, সম্মান ও ধনসম্পদের হিফাযতে সচেষ্ট হবে। আর তাদের অনুমতি ব্যতীত তাদের কোনো টাকা-পয়সা ধরবে না।
৫। এমন কাজে তৎপর হও, যাতে তারা খুশি হন, যদিও তারা সেসবের হুকুম নাও করে থাকেন। যেমন তাদের খেদমত করা এবং তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে দেওয়া। আর সব সময় ইলম অর্জনে সচেষ্ট হবে।
৬। তোমার সর্ববিধ কাজে তাদের সাথে পরামর্শ করবে। আর যদি কোনো অবস্থায় তাদের বিরোধিতা করতে করতেই হয়, তবে সেজন্য তাদের নিকট নিজের ওযর পেশ করবে।
৭। সর্বদা তাদের ডাকে হাসিমুখে উপস্থিত হবে।
৮। তাদের বন্ধু বান্ধবদের ও আত্মীয় স্বজনদের সম্মান করতে হবে তাদের জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও।
৯। তাদের সাথে ঝগড়া করবে না এবং তাদের ভুল ভ্রান্তি খুঁজতে তৎপর হবে না। বরঞ্চ আদবের সাথে তাদেরকে সঠিক জিনিস জানাতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে।
১০। তাদের অবাধ্য হবে না। তাদের সম্মুখে উচ্চস্বরে কথা বলবে না। তাদের কথাবার্তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবে। তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে। মাতাপিতার সম্মানে তোমার কোনো ভাই-বোনদের কষ্ট দিবে না।
১১। যখনই তাদের কেউ তোমার সম্মুখে উপস্থিত হন তখনই তাদেরকে সসম্মানে অভ্যর্থনা জানাবে।
১২। বাড়িতে মাতাকে তার কাজে সর্বদা সহযোগিতা করবে। আর পিতার কাজে সহযোগিতা করতে কখনও পিছপা হবে না।
১৩। মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত কোথাও বের হবে না, যদিও সে কাজ যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন। যদি বিশেষ অসুবিধার কারণে বের হতে হয়, তা হলে তাদের নিকট ওযর পেশ করবে। আর দেশের কিংবা শহরের বাইরে গেলে, সর্বদা তাদের সাথে চিঠি-পত্র/মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখবে।
১৪। অনুমতি ব্যতীত কক্ষণো তাদের কক্ষে প্রবেশ করবে না। বিশেষ করে তাদের ঘুম কিংবা বিশ্রামের সময়।
১৫। যদি তোমার ধূমপানের বদ অভ্যাস থাকে, তবে কক্ষণো তাদের সম্মুখে তো তা করবেই না, বরং জেনে রাখবে যে, ধুমপান শরী‘আতে বৈধ নয়।
১৬। তাদের পূর্বে খাবার গ্রহণ করবে না। খানাপিনার সময় তাদেরকে আদর আপ্যায়ন করতে সচেষ্ট হবে।
১৭। তাদের সম্মুখে কখনও মিথ্যা কথা বলবে না। তাদের কোনো কাজ তোমার পছন্দ না হলে তাদের দোষ বের করতে তৎপর হবে না।।
১৮। তাদের সম্মুখে তোমার স্ত্রী বা সন্তানদের প্রাধান্য দিবে না। সর্ব অবস্থাতেই তাদের রাযী খুশি রাখতে তৎপর হবে। তাদের রাযী খুশিতেই আল্লাহপাক রাযী হবেন। আর তাদের নারাযীতে আল্লাহ তা‘আলা নারায হবেন।
১৯। তাদের সম্মুখে কোনো উঁচু স্থানে উপবেশন করবে না। তাদের সম্মুখে কক্ষণোই অহংকারের সাথে পদদ্বয়কে লম্বা করে দেবে না।
২০। কখনও পিতার সম্মুখে নিজের বড়ত্ব দেখাবে না, তুমি যত বড় উর্দ্ধতন কর্মচারী/কর্মকর্তাই হও না কেন। তাদের কোনো ভালো কাজকে খারাপ বলবে না কিংবা তাদের কোনো কষ্ট দিবে না, যদিও তা মুখের কথার দ্বারাই হোক না কেন।
২১। তাদের জন্য খরচের ব্যাপারে কক্ষণও এত কৃপণতা করবে না, যাতে তারা কোনো অভিযোগ উত্থাপন করে। এটা তোমার জন্য অত্যন্ত লজ্জাস্কর ব্যাপার। পরে তোমার সন্তানদের মধ্যেও তা দেখতে পাবে। তাই তোমার সন্তানদের ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা কর।
মাতাপিতার সাথে যে ব্যবহার করবে, সন্তানদের নিকট হতে সে ব্যবহার আশা করতে পার।
২২। বেশি বেশি মাতাপিতার দেখাশোনা করবে এবং তাদের সর্বদা হাদিয়া উপহার দিতে তৎপর হবে তারা যে কষ্ট করে তোমাকে প্রতিপালন করেছেন তজ্জন্য তাদের শুকরিয়া আদায়ে তৎপর হবে। তুমি যেমন আজ তোমার সন্তানদের আদর কর এবং তাদের জন্য কষ্ট কর, একদা তারাও তোমার জন্য ঐ রকমই কষ্ট করতেন।
২৩। তোমার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত ও হকদার হলেন তোমার মাতা। তারপর তোমার পিতা। মনে রেখ, মায়ের পায়ের কাছে সন্তানের জান্নাত (হাসান সনদে মুসনাদে ইমাম আহমাদ)।
২৪। মাতা পিতার অবাধ্যচরণ ও তাদের সাথে রাগারাগি করা থেকে বিরত থাকবে। অন্যথায় তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে দুঃখ কষ্টের মধ্যে পড়বে। আজ তুমি তোমার মাতাপিতার সাথে যে ব্যবহার করবে, ভবিষ্যতে তোমার সন্তানরাও তোমার সাথে একই রকম ব্যবহার করবে।
২৫। যদি তাদের নিকট কোনো কিছু চাও, তবে নম্রভাবে তা চাও। আর যখন তুমি তা তাদের নিকট হতে পাবে, তখন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। আর যদি তারা তা দিতে অপারগ হন, তবে তাদের ওজর গ্রহণ করবে। তাদের নিকট এমন অনেক কিছু দাবী করবে না, যা দিতে তাদের কষ্ট হয়।
২৬। যখন তুমি রিযক উপার্জনক্ষম হবে, তখন হতেই রিযক অন্বেষণে তৎপর হও। আর সাথে সাথে মাতাপিতাকে সাহায্য করতে চেষ্টা কর।
২৭। মনে রেখ তোমার ওপর তোমার মাতাপিতার হক আছে। তেমনিভাবে তোমার স্ত্রীরও। তাই প্রত্যেকের হককে সঠিকভাবে আদায় করতে সচেষ্ট হবে। আর তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য দেখা দিলে তা দূর করতে চেষ্টা করবে এবং গোপনে গোপনে উভয়কেই হাদিয়া দিবে।
২৮। যদি কক্ষণও তোমার স্ত্রীর সাথে তোমার মাতা পিতার কোনো মনোমালিন্য হয়, তবে তার উত্তম বিচারে সচেষ্ট হবে এবং স্ত্রীকে এটা ভালোভাবে বুঝিয়ে বলবে যে, তুমি তার পক্ষে আছ যদি সে হকের ওপর থাকে। কিন্তু মাতা পিতাকে খুশি করাও তোমার জন্য অত্যন্ত জরুরী।
২৯। যদি বিয়ে কিংবা তালাকের ব্যাপারে তোমার মাতাপিতার সাথে তোমার কোনো মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে শরী‘আতের আইনের আশ্রয় গ্রহণ কর, এটাই হবে তোমাদের জন্য উত্তম সাহায্যকারী।
৩০। ভালো বা মন্দ উভয় ক্ষেত্রেই মাতা পিতার দো‘আ কবুল হয়। তাই তোমার ওপর তাদের বদ-দো‘আ থেকে বাঁচতে সচেষ্ট হও।
৩১। অন্যদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে সচেষ্ট হও। যে অন্যদের গালি দেয়, সে নিজেও গালি খায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مِنَ الْكَبَائِرِ شَتْمُ الرَّجُلِ وَالِدَيْهِ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَهَلْ يَشْتِمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟ قَالَ: «نَعَمْ يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ فَيَسُبُّ أُمَّهُ»
“কবীরা গুনাহের মধ্যে কেউ তার পিতামাতাকে গালি দেওয়াও অন্তর্ভূক্ত সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, কেউ কি তার মাতা পিতাকে গালি দেয়? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, কেউ অন্য কোনো ব্যক্তির পিতাকে গালি দেয় তখন সেও তার পিতাকে গালি দেয় আর কেউ কারো মাতাকে গালি দিলে সেও তার মাতাকে গালি দেয়”।[10]
৩২। মাতাপিতার সাথে সাক্ষাত করতে থাক তাদের জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও। তাদের পক্ষ থেকে দান খয়রাত করতে থাক। সর্বদা তাদের জন্য এই বলে বেশি বেশি করে দো‘আ করতে থাক।
﴿ رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ ﴾ [نوح: ٢٨]
“হে আমার রব! আমাকে এবং আমার মাতাপিতাকে এবং ঈমানসহ যারা আমার ঘরে প্রবেশ করে তাদেরকে এবং অন্যান্য মুমিন নারী পুরুষদেরকে ক্ষমা করে দাও।” [সূরা নুহ, আয়াত: ২৮]
অন্যত্র আছে,
﴿ رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٤]
“হে আমার রব, তুমি আমার মাতা পিতার ওপর দয়া কর যেমনিভাবে তারা আমাকে ছোট অবস্থায় লালন-পালন করেছেন।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৪]
সমাপ্ত
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২৯।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭০১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৬।
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৩১।
[4] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ২৫১৬, হাদীসটি হাসান, সহীহ।
[5] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ৬৬৮৯।
[6] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ৯৮৩৬।
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৮৫ ও ৫৮৮৬।
[8] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪০৩১।
[9] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৪।
[10] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯০