التفسير الموجز للقرآن الكريم: الجزء الأول [ سورة البقرة، الآيات من 1 إلى 20 ]
أعرض المحتوى باللغة الأصلية
التفسير الموجز للقرآن الكريم - الجزء الأول - مترجم إلى اللغة البنغالية، يهتم هذا التفسير بعرض ترجمات معاني الآيات القرآنية بلغة بنغالية سلسلة مع الإشارة إلى أهم التعاليم والدروس التي تحتوي عليها الآيات، وقد اعتمد في الترجمة على كتاب " روائع البيان في ترجمة معاني القرآن الكريم باللغة البنغالية " وقد احتوت هذه المقالة على تفسير سورة البقرة من الآية رقم (1) إلى الآية رقم (20).
আল-কুরআনের সংক্ষিপ্ত তাফসীর: ১ম পর্ব
[সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১-২০]
التفسير الموجز للقرآن الكريم: الجزء الأول
سورة البقرة: الآيات (1-20)
< بنغالي- Bengal - বাঙালি>
কতিপয় উলামা
مجموعة من العلماء
সম্পাদক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
مراجعة: د/ محمد منظور إلهي
আল কুরআনের সংক্ষিপ্ত তাফসীর: ১ম পর্ব
সূরা আল-বাকারা
১ থেকে ২০ আয়াতের অর্থসহ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে
﴿الٓمٓ ١﴾ [البقرة: ١]
১. আলিফ লাম মীম১।
১. আল-কুরআনের বেশ কয়েকটি সূরার শুরুতে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন হরফ রয়েছে। এগুলোর সঠিক মর্মার্থ একমাত্র মহান আল্লাহ তা‘আলাই জানেন।
﴿ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ﴾ [البقرة: ٢]
২. এটি (আল্লাহর) কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত।২
২. ‘হূদা’ অর্থ হিদায়াত তথা সঠিক পথ বা দিক-নির্দেশনা। তবে এ গ্রন্থ থেকে পথ-নির্দেশ পেতে মানুষকে প্রথমে হতে হবে মুত্তাকী। অর্থাৎ তাদেরকে অন্তর্যামী মহান আল্লাহকে ভয় করে সবসময় মন্দ থেকে বেঁচে থাকতে ও ভালোকে গ্রহণে আগ্রহী হতে হবে।
﴿ٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِٱلۡغَيۡبِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ٣﴾ [البقرة: ٣]
৩. যারা গায়েবের৩ প্রতি ঈমান, আনে সালাত কায়েম করে এবং আমরা তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।
৩. এখানে গায়েব তথা অদৃশ্য অর্থ মহান আল্লাহর অস্তিত্ব, ফিরিশতা, অহী, জান্নাত, জাহান্নাম ও যা কিছু ইন্দ্রিয়ানুভূতির বাইরে অবস্থিত অথচ আল-কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে তার বর্ণনা এসেছে, ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে –এসবের ওপর অকুন্ঠ বিশ্বাস ও প্রত্যয় এ কুরআন থেকে সঠিক পথ লাভের পূর্ব শর্ত।
﴿وَٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ وَبِٱلۡأٓخِرَةِ هُمۡ يُوقِنُونَ ٤﴾ [البقرة: ٤]
৪. এবং যারা ঈমান আনে, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে তৎপ্রতি। আর আখিরাতের প্রতি তারা ইয়াকীন রাখে।
﴿أُوْلَٰٓئِكَ عَلَىٰ هُدٗى مِّن رَّبِّهِمۡۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥﴾ [البقرة: ٥]
৫. তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াতের ওপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।৪
৪. এ আয়াতগুলোর সারমর্মে বুঝা যায় যে, আল-কুরআন থেকে হিদায়াত লাভ করার জন্য ৬টি পূর্ব শর্ত রয়েছে:
ক. মুত্তাকী তথা তাকওয়ার গুণ অর্জন করা, অর্থাৎ কুরআন যা মানতে বলে তা মানা আর যা ছাড়তে বলে তা ছাড়ার জন্য প্রস্তুত থাকা।
খ. গায়েব বা অহী কর্তৃক নির্দেশিত সব অদৃশ্যে বিশ্বাস রাখা।
গ. সালাত কায়েম তথা যথার্থরূপে আদায় করা।
ঘ. আল্লাহর দেওয়া রিযিক থেকে তাঁরই পথে ব্যয় করা।
ঙ. পূর্ববর্তী নবীদের প্রতি অহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত সব আসমানী কিতাবে ঈমান রাখা।
চ. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আখিরাত সম্পর্কে যা বলেছেন তাতে সম্পূর্ণ সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস রাখা।
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ سَوَآءٌ عَلَيۡهِمۡ ءَأَنذَرۡتَهُمۡ أَمۡ لَمۡ تُنذِرۡهُمۡ لَا يُؤۡمِنُونَ ٦﴾ [البقرة: ٦]
৬. নিশ্চয় যারা কুফুরী করেছে, আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন কিংবা না করুন, উভয়ই তাদের জন্য বরাবর,৫ তারা ঈমান আনবে না।
৫. অর্থাৎ আল-কুরআন থেকে হিদায়াত লাভ করার জন্য উল্লিখিত ৬টি শর্তের সবগুলোকে বা কোনোটিকে যারা মানতে অস্বীকার করেছে এবং শর্তগুলোকে পূর্ণ করেনি, তাদেরকে আখিরাতের ভয় দেখানো আর না দেখানো সমান কথা।
﴿خَتَمَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ وَعَلَىٰ سَمۡعِهِمۡۖ وَعَلَىٰٓ أَبۡصَٰرِهِمۡ غِشَٰوَةٞۖ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٧﴾ [البقرة: ٧]
৭. আল্লাহ তাদের অন্তরে এবং তাদের কানে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের চোখসমূহে রয়েছে পর্দা ৬; আর তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব।
৬. এর অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়ার কারণেই তারা ঈমান আনতে পারে নি; বরং এর মর্মার্থ হলো, এ হতভাগ্যরা যখন উপরোক্ত ৬টি মৌলিক বিষয়কে অস্বীকার করেছে এবং কুরআনের দেখানো পথের বিপরীতে চলতে পছন্দ করেছে, তার সক্রিয় বিরোধিতা করতেও দ্বিধা করছে না, তখন আল্লাহ তা‘আলাও তাদের অন্তর ও ইন্দ্রিয়ের সত্যানুসন্ধিৎসু শক্তি ও আলোকিত জীবনের প্রতি মানুষের স্বভাবজাত আকর্ষণকে বিকল করে দেন। তাদের হৃদয়ের দরজা রুদ্ধ করে দেন তথা মহর লাগিয়ে দেন।
‘কান, চোখ ও অন্তঃকরণ’ মানুষের জন্য আল্লাহর দেওয়া এ ৩টি অমূল্য নি‘আমতের যথাযথ ব্যবহার অপরিহার্য, এগুলো হাশরে জিজ্ঞাসিত হবে (দেখুন: সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৩৬; আল-মুমিনূন, আয়াত: ৭৮)।
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَمَا هُم بِمُؤۡمِنِينَ ٨﴾ [البقرة: ٨]
৮. আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’ অথচ তারা মুমিন নয়।৭
৭. এরা মুনাফিক। মুসলিমদের সাথে মুসলিম পরিচয়ে আর কাফিরদের সাথে ঘনিষ্ট থাকে কাফির হিসেবে। মহান আল্লাহ সুবিধাবাদী এ নিকৃষ্টদের প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ করে দিয়েছেন। সর্বকালে ও সব এলাকায় এ চরিত্রের মানুষ ছিল, আছে এবং থাকবে।
﴿يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَمَا يَخۡدَعُونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمۡ وَمَا يَشۡعُرُونَ ٩﴾ [البقرة: ٩]
৯. অথচ তারা নিজদেরকেই ধোঁকা দিচ্ছে এবং তারা তা অনুধাবন করে না। তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি। অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন।৮
৮. সব মানুষকে কিছু সময়ের জন্যে অথবা কিছু মানুষকে সব সময়ের জন্য ধোঁকা দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু সব মানুষকে চিরদিনের জন্য ধোঁকায় ফেলে রাখা যায় না। তাই মুনাফিকদের লাভবান হওয়া এক নিশ্চিত দূরাশা। এ জগতে যেমন সমাজে বিশ্বস্ততা ও প্রকৃত সম্মান হারিয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তেমনি আখিরাতে তো তাদের দাঁড়াতে হবে অন্তর্যামী মহাবিচারকের সামনে।
﴿فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ فَزَادَهُمُ ٱللَّهُ مَرَضٗاۖ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمُۢ بِمَا كَانُواْ يَكۡذِبُونَ ١٠﴾ [البقرة: ١٠]
১০. তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি।৯, অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন।১০; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। কারণ তারা মিথ্যা বলত।
৯. এ ব্যাধিটিই হল মুনাফিকী বা কপটতা।
১০. আল্লাহ কপটদেরকে তাৎক্ষণিক শাস্তি দেন না - এটি তাঁর নিয়ম বা বিধিও না; বরং অবকাশ দেন, ফলে তাদের মুনাফিকীর বোঝা ভারী হতে থাকে -রোগ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَا تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ قَالُوٓاْ إِنَّمَا نَحۡنُ مُصۡلِحُونَ ١١﴾ [البقرة: ١١]
১১. আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা যমীনে ফাসাদ করো না, বলে, ‘আমরা তো কেবল সংশোধনকারী’।
﴿أَلَآ إِنَّهُمۡ هُمُ ٱلۡمُفۡسِدُونَ وَلَٰكِن لَّا يَشۡعُرُونَ ١٢﴾ [البقرة: ١٢]
১২. জেনে রাখ, নিশ্চয় তারা ফাসাদকারী; কিন্তু তারা বুঝে না।
﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ ءَامِنُواْ كَمَآ ءَامَنَ ٱلنَّاسُ قَالُوٓاْ أَنُؤۡمِنُ كَمَآ ءَامَنَ ٱلسُّفَهَآءُۗ أَلَآ إِنَّهُمۡ هُمُ ٱلسُّفَهَآءُ وَلَٰكِن لَّا يَعۡلَمُونَ ١٣﴾ [البقرة: ١٣]
১৩.আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা ঈমান আন যেমন লোকেরা ঈমান এনেছে’, তারা বলে, ‘আমরা কি ঈমান আনব যেমন নির্বোধরা১১ ঈমান এনেছে’? জেনে রাখ, নিশ্চয় তারাই নির্বোধ; কিন্তু তারা জানে না।
১১. মুনাফিকদের দৃষ্টিতে এই ‘নির্বোধেরা (?)’ হলো সেই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব যারা নিষ্কলুশ হৃদয়ের নিষ্ঠাবান মুমিন - সত্যের পথে চলতে গিয়ে যদি কখনো কষ্ট, বিপদ, উৎপীড়ন, নির্যাতন, শত্রুতা বা সাময়িক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, তা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তাঁরই অনুগ্রহে বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্য্যের সাথে মোকাবিলা করে আলোর পথে থাকে অবিচল; কিন্তু মুনাফিকদের দৃষ্টিতে এটি নিরেট বোকামী (!), কারণ তারা মনে করে সত্য ও মিথ্যার বিতর্কে না জড়িয়ে আল্লাহর বিধান পালনের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও নিজেদেরকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ -যা দিয়ে সাময়িকভাবে মানুষকে প্রতারিত করা যেতে পারে তবে তা নিঃসন্দেহে আল্লাহকে ধোঁকা দেয়ার নিষ্ফল প্রচেষ্টা, বরং এ হতভাগ্যরা নিপুণভাবে ধোঁকা দেয় তাদের নিজেদেরকেই।
﴿وَإِذَا لَقُواْ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قَالُوٓاْ ءَامَنَّا وَإِذَا خَلَوۡاْ إِلَىٰ شَيَٰطِينِهِمۡ قَالُوٓاْ إِنَّا مَعَكُمۡ إِنَّمَا نَحۡنُ مُسۡتَهۡزِءُونَ ١٤﴾ [البقرة: ١٤]
১৪. আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি এবং যখন গোপনে তাদের শয়তানদের১২ সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তো কেবল উপহাসকারী’।
১২. ইমাম তাবারির মতানুযায়ী প্রত্যেক সীমালংঘনকারী ও দাম্ভিককেই শয়তান বলা হয়। মানুষ ও জিন্ন উভয়ের ক্ষেত্রেই এ শব্দটি প্রযোজ্য। কুরআনের অধিক স্থানে এটি জিনদের প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে শয়তান প্রকৃতির মানুষের জন্যে। বিশেষ করে যারা দুষ্কর্মে নেতৃত্ব দেয় তাদের জন্য। আলোচনার প্রসঙ্গ বিচারে ‘শায়াতীন’ বলতে এখানে মুশরিকদের সেই নেতৃস্থানীয়দের বুঝানো হয়েছে যারা তখন ইসলামের বিরোধিতায় ছিল কর্ম-তৎপর।
﴿ٱللَّهُ يَسۡتَهۡزِئُ بِهِمۡ وَيَمُدُّهُمۡ فِي طُغۡيَٰنِهِمۡ يَعۡمَهُونَ ١٥﴾ [البقرة: ١٥]
১৫. আল্লাহ তাদের প্রতি উপহাস করেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরার অবকাশ দেন।
﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱشۡتَرَوُاْ ٱلضَّلَٰلَةَ بِٱلۡهُدَىٰ فَمَا رَبِحَت تِّجَٰرَتُهُمۡ وَمَا كَانُواْ مُهۡتَدِينَ ١٦ ﴾ [البقرة: ١٦]
১৬. এরাই তারা, যারা হিদায়াতের বিনিময়ে পথভ্রষ্টতা ক্রয় করেছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা লাভজনক হয় নি এবং তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না।
﴿مَثَلُهُمۡ كَمَثَلِ ٱلَّذِي ٱسۡتَوۡقَدَ نَارٗا فَلَمَّآ أَضَآءَتۡ مَا حَوۡلَهُۥ ذَهَبَ ٱللَّهُ بِنُورِهِمۡ وَتَرَكَهُمۡ فِي ظُلُمَٰتٖ لَّا يُبۡصِرُونَ ١٧﴾ [البقرة: ١٧]
১৭. তাদের উপমা ঐ ব্যক্তির মতো, যে আগুন জ্বালাল। এরপর যখন আগুন তার চারপাশ আলোকিত করল, আল্লাহ তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিলেন১৩ এবং তাদেরকে ছেড়ে দিলেন অন্ধকারে। তারা কিছু দেখছে না।
১৩. যেসব মুনাফেক বাহ্যত ঈমান আনে অথচ অন্তরে থাকে অবিশ্বাসী তারা অবচেতনভাবে অন্ধাকরে হাতড়ে বেড়ায়, আলোতে বের হওয়ার কোনো পথ খোঁজে পায় না। ঠিক ওই লোকদের মতো যাদের কেউ আধার রাতে আলো জ্বালাল, এবং সে আলোয় চারদিক উদ্ভাসিত হলো, ঠিক সেসময় আলো নিবে গেল; ফলে সবাই অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো। বের হওয়ার কোনো পথ পেল না। আসলে যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে সত্যের আলোর প্রত্যাশী নয়, হিদায়াতের পরিবর্তে গোমরাহীকে নিজের বুকে আঁকড়ে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর, আর সত্যের আলোকোজ্জ্বল চেহারা দেখার কোনো আগ্রহই যার নেই, সে হতভাগাই হারিয়ে বসে তার অন্তর্দৃষ্টির আলো -যা আল্লাহপ্রদত্ত এক অমূল্য নি‘আমত।
﴿صُمُّۢ بُكۡمٌ عُمۡيٞ فَهُمۡ لَا يَرۡجِعُونَ ١٨﴾ [البقرة: ١٨]
১৮. তারা বধির-মূক-অন্ধ। ১৪; তাই তারা ফিরে আসবে না।
১৪. হক কথা শোনার সময় কানে শোনে না, হক কথা বলার ক্ষেত্রে বোবা, আর সত্য ও সুন্দরের আলোকোজ্জ্বল পথে চলার প্রশ্নে চোখে দেখে না; এদের আল্লাহর পথে ফিরে আসার আর কোনো সম্ভাবনা নেই, ধ্বংস অবধারিত। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে হিফাযত করুন! আমীন।
﴿أَوۡ كَصَيِّبٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ فِيهِ ظُلُمَٰتٞ وَرَعۡدٞ وَبَرۡقٞ يَجۡعَلُونَ أَصَٰبِعَهُمۡ فِيٓ ءَاذَانِهِم مِّنَ ٱلصَّوَٰعِقِ حَذَرَ ٱلۡمَوۡتِۚ وَٱللَّهُ مُحِيطُۢ بِٱلۡكَٰفِرِينَ ١٩﴾ [البقرة: ١٩]
১৯. কিংবা আকাশের বর্ষণমুখর মেঘের ন্যায়, যাতে রয়েছে ঘন অন্ধকার, বজ্রধ্বনি ও বিদ্যুৎচমক। বজ্রের গর্জনে তারা মৃত্যুর ভয়ে তাদের কানে আঙুল দিয়ে রাখে।১৫ আর আল্লাহ কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করে আছেন।
১৫. এটি নিশ্চিত ধ্বংস থেকে বাঁচার এক ব্যর্থ চেষ্টা। কারণ, ধোঁকাবাজদের অবস্থান সর্বশক্তিমান আল্লাহর পাকড়াও-এর মধ্যে।
﴿يَكَادُ ٱلۡبَرۡقُ يَخۡطَفُ أَبۡصَٰرَهُمۡۖ كُلَّمَآ أَضَآءَ لَهُم مَّشَوۡاْ فِيهِ وَإِذَآ أَظۡلَمَ عَلَيۡهِمۡ قَامُواْۚ وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ لَذَهَبَ بِسَمۡعِهِمۡ وَأَبۡصَٰرِهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٢٠﴾ [البقرة: ٢٠]
২০. বিদ্যুৎচমক তাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়ার উপক্রম হয়। যখনই তা তাদের জন্য আলো দেয়, তারা তাতে চলতে থাকে। আর যখন তা তাদের উপর অন্ধকার করে দেয়, তারা দাঁড়িয়ে পড়ে। আর আল্লাহ যদি চাইতেন, অবশ্যই তাদের শ্রবণ ও চোখসমূহ কেড়ে নিতেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।১৬
১৬. এ উপমাটি সেই সব দোদুল্যমান ব্যক্তিদের ব্যাপারে, যারা প্রকৃত সত্য সুস্পষ্ট হয়ে পড়ার পরও অবিরাম সন্দেহ, দ্বিধা-দ্বন্দ ও বিশ্বাসের দুর্বলতায় ভোগে। তারা অনুকূল পরিবেশে সুবিধাজনক সত্যগুলোকে স্বীকার করে নিলেও অবস্থার প্রেক্ষিতে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-আপদের সম্মুখীন হলে তা থেকে সরে পড়ে।