توديع شهر رمضان
أعرض المحتوى باللغة الأصلية
مقالة تحتوي على بيان حال الصالحين في رمضان وحالهم بعده، وبعض علامات قبول العمل، وبماذا نختم شهرنا؟ مع بيان بعض أعمال ليلة العيد .
বিদায় মাহে রমযান...কিছু ভাবনা...
توديع شهر رمضان
< বাংলা - بنغالي - Bengali >
ইকবাল হুছাইন মাছুম
إقبال حسين معصوم
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
বিদায় মাহে রমযান... কিছু ভাবনা...
সম্মানিত ভ্রাতৃবৃন্দ, নিশ্চয় রমযান মাস নৈকট্য লাভ এবং গুনাহ থেকে পবিত্র হবার উত্তম সময়। এটি আপনাদের ও তাদের জন্য সাক্ষ্য হয়ে থাকবে যারা এ সময় নিজ কর্মসমূহ উত্তমরূপে সম্পাদন করে থাকে। যারা সৎ কর্ম সম্পাদন করার সুযোগ পেয়েছে তারা যেন আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করে এবং উত্তম প্রতিদানের সুসংবাদ গ্রহণ করে। নিশ্চয় আল্লাহ উত্তম কর্ম সম্পাদনকারীকে প্রতিদান দান করবেন। আর যে ব্যক্তি পাপ কাজ করে তার তাওবা করা উচিত। কেননা যিনি তাওবা করেন আল্লাহ তার তাওবা কবুল করে থাকেন।
আল্লাহ তা'আলা আপনাদের জন্য রমযানের শেষের দিকে কিছু বাড়তি ইবাদতের বিধান দান করেছেন। সেগুলো তাঁর নৈকট্য লাভের পথকে সুগম করবে এবং আপনাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করবে।
আল্লাহ তা'আলা আরো নির্দেশ দিয়েছেন, সাদকাতুল ফিতর, তাকবীর ও ঈদের সালাত-এর। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ﴾ [البقرة: ١٨٥]
“আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর আর যাতে তোমরা শোকরিয়া আদায় কর।" [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
তাকবীরের বাক্য হলো,
اللهُ أكْبَرُ اللهُ أكْبَرُ لاَ إلَهَ إَلاَّ الله ُ اللهُ أكْبَرُ اللهُ أكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
এ তাকবীর পুরুষদের জন্য উচ্চস্বরে পড়তে বলা হয়েছে। তাই তারা মসজিদে, বাজারে এবং নিজ বাড়ীতে উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করবে। তাকবীর পাঠের সময় অবশ্যই অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব, তাঁর মর্যাদার কথা স্মরণে রাখবে। আরও স্মরণ করবে তাঁর অসংখ্য নি'আমতকে এবং সে সব নি'আমতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে সে তাকবীর পাঠ করছে। নারীরা তাকবীর পাঠ করবে অনৈচ্চস্বরে।
মানুষের অবস্থা বড়ই চমৎকার। প্রতি মুহূর্তে এবং প্রতিটি স্থানে যথাযথ সম্মানের সাথে তারা আল্লাহর বড়ত্ব ও মর্যাদা প্রকাশ করে থাকে। রমযান শেষ হওয়ার সময় তাঁর বড়ত্ব প্রকাশার্থে তাকবীর পাঠ করে থাকে। তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীলের গুঞ্জরণের মাধ্যমে আকাশ পর্যন্ত পৃথিবী মুখরিত করে তুলে। তারা আল্লাহ তা'আলার রহমত কামনা করে ও তাঁর 'আযাবকে ভয় করে।
মহান আল্লাহ ঈদের দিন নিজ বান্দাদের ওপর ঈদের সালাতের বিধান দান করেছেন। আল্লাহর মহত্ব প্রকাশের এটি সর্বোত্তম পন্থা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন সকল মুসলিমকে ঈদের সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আরো নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশের। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَٰلَكُمۡ ٣٣ ﴾ [محمد: ٣٣]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর রাসূলের। আর তোমরা তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করো না।" [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে ঈদের দিন ঈদগাহে যাবার অনুমতি দিয়েছেন। এটি ঈদের সালাতের গুরুত্ব প্রমাণ করে উম্মে আতীয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন বের হতে বলেছেন। তবে গোলাম, ঋতুবর্তী ও অসুস্থদের কথা ভিন্ন। ঋতুবর্তীরা সালাতের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করবে। তারা মুসলিমদের ভালো কাজের সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের যাদের পরিধেয় বস্ত্র নেই তারা কী করবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এক বোন অপর বোন থেকে নিয়ে পরিধান করবে। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের সালাতে যাওয়ার পূর্বে খেজুর খাওয়া সুন্নত। ১টি, ৩টি, ৫টি এমনিভাবে বেজোড় সংখ্যায় আরো বেশি খেতে পারে।
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন সর্বপ্রথম খেজুর আহার করতেন। আর খেজুর তিনি বেজোড় সংখ্যায় খেতেন। (আহমাদ ও সহীহ বুখারী)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থতা, দূরত্ব বা এ জাতীয় কোনো ওযর না থাকলে ঈদের মাঠে পায়ে হেঁটে যেতেন। বাহনে চড়ে যেতেন না। যেমন আলী ইবন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বলেছেন, ঈদের সুন্নত হলো পায়ে হেটে ঈদগাহে যাওয়া। (তিরমিযী, হাসান)
পুরুষদের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া ও উত্তম পোষাক পরিধান করা সুন্নত। সহীহ বুখারীতে ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু চাকচিক্যময় ঝলমলে একটি রেশমি পোষাক বাজার থেকে ক্রয় করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে বললেন, আমি এটি ঈদের দিন পরিধান জন্য খরিদ করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি তোমার জন্য বানানো হয় নি। কাপড়টি রেশমি হওয়াতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি বলেছেন। কারণ, রেশমি কাপড় ও স্বর্ণ ইসলামে পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে।
ঈদের দিন নারীরা সুগন্ধি ব্যবহার ও সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে অর্থাৎ যথাযথ পর্দার সাথে সালাতের জন্য বের হতে পারবে। কেননা, নারীরা পর্দার ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছে এবং সুগন্ধি লাগিয়ে, সৌন্দর্য্য প্রকাশ করে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।
সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে আল্লাহভীতি ও তিনি আল্লাহর সামনে উপস্থিত আছেন এমন মন নিয়ে সালাত আদায় করবে। বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করবে। তাঁর কাছে দো'আ করবে। তাঁর রহমতের আশা ও শাস্তিকে ভয় করবে।
সকল মানুষের সাথে একত্রে মসজিদে উপস্থিত হবে। মনে করবে যেন কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে উপস্থিত হচ্ছে। কিয়ামতের কথা স্মরণ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে। নিজ পাপের জন্য ক্ষমা চাইবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿ٱنظُرۡ كَيۡفَ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ وَلَلۡأٓخِرَةُ أَكۡبَرُ دَرَجَٰتٖ وَأَكۡبَرُ تَفۡضِيلٗا ٢١﴾ [الاسراء: ٢١]
“ভেবে দেখো, আমি তাদের কতককে কতকের ওপর কীভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। আর আখিরাত নিশ্চয়ই মর্যাদায় মহান এবং শ্রেষ্ঠত্বে বৃহত্তর। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২১]
আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিটি নি'আমতে মুসলিমদের আনন্দিত হওয়া উচিত। রমযান মাস আল্লাহ প্রদত্ত নি'আমতের মাঝে শীর্ষ পর্যায়ের একটি নি'আমত। তাই এ রমযান প্রপ্তির কারণে তাদের খুশি হওয়া উচিত। আরো খুশি হওয়া উচিত, কারণ তারা রমযানের বদৌলতে সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, সদকাসহ অন্যান্য ইবাদত করার সহজ সুযোগ পেয়েছে। এ খুশির পাশাপাশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করা উচিত। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ هُوَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ ٥٨﴾ [يونس: ٥٨]
“বলো, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।" [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৮]
রমযান মাস ছিল মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহর বড় একটি নি'আমত। তাদের জন্য তাঁর দেওয়া বড় একটি সুযোগ। ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় সম্পাদিত দিনের সাওম ও রাতের সালাত ছিল কৃত গুনাহের কাফফারা ও ভবিষ্যতে পাপ থেকে মুক্ত থাকার প্রশিক্ষণস্বরূপ।
রমযানের পর করণীয়:
প্রিয় ভাইসব, যদিও রমযান মাস শেষ হয়ে গেছে কিন্তু মুমিন ব্যক্তির আমল মৃত্যুর পূর্বে শেষ হবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩﴾ [الحجر: ٩٩]
“আর মুত্যু আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।" [সূরা আল-হিজর: ৯৯]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ال عمران: ١٠٢]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর। আর (পরিপূর্ণ) মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।" [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তাই মুমিন ব্যক্তি সময় থাকতেই আমল-ইবাদত অব্যহত রাখে।
সুতরাং রমযান মাস শেষ হয়ে গেলেও প্রকৃত মুমিন ব্যক্তির সাওমের ইবাদত শেষ হবে না। এটি সারা বছর চলতে থাকবে। যেমন,
শাওয়াল মাসের ছয়টি সাওম:
আবু আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমযান মাসের সাওম পালন করল অতঃপর শাওয়াল মাসে ৬টি সাওম রাখল, সে যেন সারা জীবনই রোযাসাওম পালন করল। (সহীহ মুসলিম)
প্রতি মাসে তিন দিনের সাওম:
এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমযান মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম পালন করা সারা জীবন সাওম রাখার ন্যায়। (সহীহ মুসলিম)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার বন্ধু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম রাখার উপদেশ দিয়েছেন।
এ তিন দিনের সাওম আইয়ামে বীযে রাখা উত্তম। আইয়ামে বীয হলো, প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। (সহীহ মুসলিম)
এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, হে আবু যর! তুমি প্রতি মাসের তিন দিন সাওম পালন করলে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সাওম পালন করবে। (নাসায়ী)
আরাফার দিনের সাওম:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে 'আরাফার দিন সাওম পালনের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ দিনে সাওম পালন করলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
আশুরার দিনের সাওম:
আশুরার দিনের সাওমের ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, এ দিনের সাওম পালন করলে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রমযান মাসের পর কোন সাওম সবচেয়ে উত্তম? উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহরম মাসের সাওম।
সাপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবারের সাওম:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার সাওম পালনের গুরুত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে বললেন, এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দান করা হয়েছে। অর্থাৎ এদিনেই আমার ওপর কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে অপর একটি বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবারের সাওম নিয়মিত পালন করতেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়। তাই আমি ভালো মনে করি যে, আমার আমলটা সাওম পালনকারীর অবস্থায় আল্লাহর নিকট পেশ করা হোক। (তিরমিযি)
শাবান মাসের সাওম:
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান মাসের সাওম ছাড়া আর কোনো মাসে পূর্ণ মাস সাওম পালন করতে দেখি নি। আর শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোনো মাসে এত বেশি পরিমাণে সাওম পালন করতে দেখি নি।
রমযানের পর সালাত
রমযান মাসে দিনের সাওমের মতো রাতের সালাতও আল্লাহ তা'আলার বিশেষ নি'আমত। রমযান শেষ হয়ে গেলে যেমন প্রকৃত মুমিন বান্দাদের সাওমের ধারা শেষ হয়ে যায় না; বরং বিভিন্নভাবে অব্যাহত থাকে। অনুরূপভাবে রমযানের রাতগুলো শেষ হয়ে গেলেও প্রকৃত মুমিন বান্দাদের রাতের ইবাদত তথা সালাত, দো'আ, যিকির ইত্যাদি শেষ হয়ে যায় না; বরং তাও অব্যাহত থাকে। কেননা বছরের প্রতিটি রাতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য ও আমলের মাধ্যমে নফল সালাত পড়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
রাতের সালাত
সহীহ বুখারীতে মুগীরা ইবন শো'বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এমনভাবে নফল সালাত পড়তেন যে, তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত। তাঁকে এ ব্যাপারে বলা হলে তিনি বলেন, আমি কি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবো না?
আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে লোকসকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, মানুষদেরকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চল এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত পড় আর শান্তি ও নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ কর। (তিরমিযি)
সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত।
রাতে অনেক নফল সালাত আদায় করা যায়। দুই দুই রাক'আত করে আদায় করবে। অতঃপর ভোর হয়ে যাবার আশঙ্ক্ষা দেখা দিলে এক রাক'আত যুক্ত করে বিতর সালাত আদায় করবে।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হন। আর এ বলে বান্দাদের ডাকতে থাকেন, কে আছ আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছ আমার কাছে কিছু চাইবে? আমি তাকে তা দান করব। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।
বারো রাকা'আত সুন্নাত সালাত:
উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, যদি কোনো মুসলিম বান্দা প্রত্যেহ ফরয সালাত ছাড়াও বারো রাক'আত সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। (সহীহ মুসলিম)
সালাত আদায়ান্তে আল্লাহর যিকির করা একটি উত্তম আমল। আল্লাহ তা'আলা এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন একান্ত উৎসাহ। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿فَإِذَا قَضَيۡتُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِكُمۡۚ﴾ [النساء: ١٠٣]
“অত:পর যখন তোমরা সালাত আদায় করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর যিকির করবে।" [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩]
সালাতের পরে যিকির করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষে সালাম ফিরাতেন, তিনবার ইস্তেগফার পড়তেন। আর বলতেন,
«اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ».
“হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময়, তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি আবর্তিত হয়। হে মহান সম্মান ও মহত্বের মালিক, তুমি আমাদের প্রতি বরকত নাযিল করেছ।"
এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ ও ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলবে। তাহলে ৯৯ বার হলো। অতঃপর ১০০ পূর্ণ করার জন্য একবার বলে,
«لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِير»ٌ.
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তার জন্যই, তার জন্যই সকল প্রশংসা। আর তিনি সকল বস্তুর ওপর ক্ষমতাবান।" তাহলে সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গুনাহ হলেও তা ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহীহ মুসলিম)
সম্মানিত ভাইয়েরা, আল্লাহর আনুগত্য প্রদর্শনে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালান। আর সকল প্রকার ত্রুটি ও গুনাহ থেকে দূরত্বে অবস্থান গ্রহণ করুন। তাহলে দুনিয়াতে উত্তম জীবন লাভ করবেন। আর মৃত্যুর পর লাভ করবেন অনেক পুরষ্কার। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٧﴾ [النحل: ٩٧]
“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিব।" [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৭]
হে আল্লাহ আমাদেরকে ঈমান ও সৎ আমলের ওপর অটল থাকার তাওফীক দিন। উত্তম জীবন যাপন করার সুযোগ দান করুন। আর আমাদেরকে সৎকর্মশীল মানুষের সাথে সঙ্গ লাভ করার তাওফীক দান করুন। আমিন।
সমাপ্ত